#ঋণশোধ
#পর্ব২
#writer:Sadia Afrin Eva
আবেগ চলে যাওয়ার পরও অথৈ কিছুক্ষন ওভাবেই বসে ছিলো। মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলো না। আর তাছাড়া ব্যাথায় মাথা হ্যাং হয়ে আছে। হয়তো এখন মনে পড়বে না। তাকিয়ে আশেপাশে দেখলো ওর সুটকেস টা কোথায় রয়েছে। দেখলো আলমারির এক সাইডে ই আছে। উঠে গিয়ে সুটকেস থেকে ড্রেস বের করে বাথরুমে গেল। বাথরুমে গিয়ে গতরাতের কথা মনে করে আবার গা গুলিয়ে উঠলো।
একবারে শাওয়ার নিয়ে ই বের হলো। শাওয়ার নেয়ার পর অনেক হাল্কা অনুভব হচ্ছে, ব্যাথাও কম লাগছে। বিছানায় বসে অনুভব করলো অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। নতুন বউ হয়ে তো আর গিয়ে দুম করে বলতে পারে না ক্ষুধা লাগছে। নতুন বউ হওয়ার ঝামেলাও কম না ভেবেই মনে মনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। যারা জোর করে বিয়ে দিয়ে পাঠিয়েছে মনে মনে ভাবলো তাদেরকে সামনে পেলে গলা টিপে দুনিয়া থেকে তুলে দিবে। এইসব ভাবার মধ্যে ই আবেগের ছোটোবোন অনন্যা এসে ডাক দিলো বললো, “ভাবি তোমাকে খেতে ডাকছে”।
অথৈয়ের এত ক্ষিধে পেয়েছিলো যে অনন্যার কথাটা ওর কাছে কোনো মধুর বানি মনে হলো। অনন্যাকে ওর কাছে মনে হলো, “স্বর্গের দূত”। অনন্যার সঙ্গে সঙ্গেই ও খেতে গেলো। খাবার টেবিল অব্দি যেতে যেতে আবেগের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেলো।
আবেগের মা না চাইলেও অথৈ এখন তার ছেলের বউ। তাই তিনি অথৈকে ছেলের বউ হিসেবে মানতে বাধ্য। ব্যাপারটা তিনি নিজেই অনুভব করতে পারছিলেন, তাই মন থেকে ই অথৈকে বউমা হিসেবে মানতে নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করছেন। তাই অথৈ খেতে এলেই তিনি বললেন, এসো বউমা আবেগের পাশের চেয়ারে বসো। আমি নাস্তা দিচ্ছি।”
মায়ের কথাতে আবেগ বাঁধা দিয়ে বললো, “না মা। ওকে অপজিটে বসতে বলো”।
অথৈ চেয়ারটা টেনেছিলো বসেও যাচ্ছিলো সেই মুহূর্তে কথাটা বলেছে। মনে মনে অথৈ ভীষণ অপমানিত ফিল করতে লাগলো। তাই গিয়ে উল্টো দিকেই বসলো। আবেগের আচরণ দেখে তার মা জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি আবেগ? ও ওখানে বসলে কি সমস্যা ছিলো তোমার!”
অথৈ বাধা দিয়ে বললো, “থাক মা আমি এখানে ই ঠিক আছি”।
কিছু ঘটেইনি এমন ভাব করে আবেগ খেতে লাগলো, একজোড়া চোখ যে ওর দিকে তাকিয়ে ওকে মনে মনে গালি দিচ্ছিলো, সেটা যেন ও দেখতেই পেলো না। একমনে খাবারের দিক তাকিয়ে খেতে থাকলো, খাওয়া শেষ হতেই উঠে বেরিয়ে গেলো। অথৈ ও খাবার পেয়ে গপগপ করে গিলতে লাগলো।
খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে রেস্ট নিচ্ছিলো তখন আবেগ রুমে এসেই জট করে হাত ধরে টান দিয়ে ওকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো, “তোমাকে আমি এমন শুয়ে-বসে থাকার জন্য আনিনি, তুমি ঘরের সব কাজ করবে আর আমার মা রেস্ট নিবেন বলে এনেছি। পাটরানী সেঁজে শুয়ে থাকতে আনিনি, বুঝেছো? আজকে প্রথমদিন বলে ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু কাল থেকে ঘরের সব কাজ তুমি করবে।”
কথা বলা শেষ করে তারপর হাত ছেড়ে দিলো, তার আগে অব্দি ধরে রেখেছিলো এবং গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ই ধরে রেখেছিলো।
অথৈ বেশি খেয়ে ফেলেছিলো দেখে নড়তে পারছিলো না ভালো করে। তাই শুয়ে রেস্ট নিয়ে নরমাল হতে চেষ্টা করছিলো।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকায় হাল্কা ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছিলো, আবেগের আচমকা আক্রমণে ও লাফিয়ে উঠে কাপঁতে থাকে। আচমকা ঘুমের মানুষকে ডাক দিলে যেমন টা হয় সেরকম। আর যে জোরে আবেগ হাত ধরেছিলো তাতে ওর ইন্দ্রিয় ব্যাথার জন্য হাত ছাড়াতেই ব্যস্ত ছিলো। তাই প্রথম কিছু কথা ও শুনে নি। তবে মুলভাব বুঝতে পারলো। আর ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো সেটা হচ্ছে ওদের শত্রুতা টা কোন জায়গায়। আবেগ তো বলেছে ওকে মনে করতে যে ও কি পাপ করেছে কিন্তু ওর তো এমন কিছু ই মনে পড়ছে না। আবেগকে তো ও গত ছয়মাস ধরে চিনে আর ওদের মধ্যে এমন কিছু ঘটেছে বলে তো ওর মনে পড়ছে না। গতছয়মাসে তো তেমন একটা কথাও হয়নি..।
ছয়মাস আগের কথা,
অথৈ ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছিলো কিন্তু সেদিন রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো বলে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিলো তখন অটোরিকশা থেকে নেমে হেটে হেটেই বাসায় ফিরছিলো। বাড়ির গলিতে এসে দেখলো রাস্তা টা একদম নির্জন। সব সময় ই অটোতেই বাসার গেট অব্দি আসে। আর এমন এত নির্জন কখনও থাকে না,অবশ্য আসতে এমন সন্ধ্যাও কখনও হয়না। অথৈয়ের ভীষণ ভয় করতে লাগলো, তখন ফোন বের করে বাসায় কল দিলো কিন্তু কেউ ধরলো না। দুইতিন বার ট্রাই করলো কিন্তু ফলাফল একই, কেউ ধরলো না। আর এই অন্ধকার গলিতে একা ঢুকতেও ভীষণ ভয় করে তখন অথৈ ওর দুলাভাই কে কল করে। বাসা থেকে ১০/১৫ মিনিটের দূরত্বে থাকে ওর বোন আর দুলাভাই। তাকে ফোন দিয়ে ওর সমস্যার কথা জানালো তখন সে বললো যে সে বাসায় নেই, বাসা থেকে দূরে রয়েছে।
অথৈদের বাসাটা গলির অনেক ভিতরে, আর ওর দুলাভাইয়ের বাসা মেইন রোডের কাছাকাছি। আর অন্ধকারে একা চলতে ও ভীষণ ভয় পায় তাই জন্য এত কাহিনি। আবার একবার বাসায় কল করলো এবারও কেউ ধরলো না। অথৈয়ের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ও উল্টো দিকে ওর দুলাভাইয়ের বাসার দিকে হাটা দিলো। ভাবলো বাসায় ই যাবে না। ওরা টেনশন করুক। না হেঁটে প্রায় দৌড়ে ই চলে গেলো ওর বোনের বাসায়। জুতো খুলে হাঁপাতে হাঁপাতে কলিং বেল টিপলো। একটা ছেলে এসে দরজা খুলে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু ও তার দিকে না তাকিয়ে গিয়ে দ্রুত সোফায় বসে জোরে জোরে দম নিতে লাগলো। আর ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়েই রইলো।
“আপা, অন্তু এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দে ত”।
অন্তু ওর বোনের ছেলের নাম। ছেলেটা তাকিয়ে থাকা অফ করে এবার অথৈয়ের প্রশ্নের উত্তর দিলো,
” বাসায় কেউ নেই”
এতক্ষণে অথৈয়ের নজর পড়লো ছেলেটার দিকে, দেখে মনে হলো কোথাও একটা দেখেছে। জিজ্ঞেস করলো, “কে আপনি?”
“আমি অনন্ত ভাইয়ার কাজিন”
“ওহ আই সি। বিয়েতে এসেছিলেন?”
“নাহ। একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই আসা হয় নি। এখন মনে হচ্ছে আসা উচিত ছিল”
“এ্যাঁ। আসেন নি? তাহলে কোথায় দেখেছি?”
“কি দেখেছেন?”
“আপনাকে”
“আপনি ই জানেন, আমি তো আপনাকে ফাস্ট টাইম দেখলাম”।
” অ আচ্ছা।”
“জ্বি। ওয়েট আপনাকে ঠান্ডা পানি খাওয়াচ্ছি”
“হ্যাঁ প্লিজ। ভয়ে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে গেছি”
ছেলেটা পানি আনতে আনতে জিজ্ঞেস করলো,
“কি দেখে ভয় পেলেন?”
অথৈ পানিটা পান করে গ্লাসটা টেবিলে রেখে বললো,
“আর বলবেন না। আমি অন্ধকারে ভীষণ ভয় পাই। তাই আরকি ভয় পেয়ে দৌড়ে এখানে এসেছি। ওরা কোথায় গেছে?”
“কারোর একটা বাসায় দাওয়াত আছে সেখানে”
” উফফ! তারমানে সাথে মাও চলে গেছে এজন্যই ফোন রিসিভ করছিলো না কেউ”।
ভেবেই অথৈয়ের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। অথৈ ছেলেটাকে বললো ওকে একটু বাসা অব্দি পৌঁছে দিতে। ছেলেটা রাজি হয়ে গেলো। ওকে বাসা অব্দি পৌঁছে দিয়ে গেল। বাসার ভিতর আসতে বলে নি কারণ বাসায় যেহেতু কেউ নেই তাই একটা ছেলেকে নিয়ে আসাটা যেমন নিরাপদ নয় তেমনি কেউ ভালো চোখেও দেখে না। তাই জন্য ছেলেটাকে থ্যাংকস দিয়ে চলে যেতে বললো। ওর কাছে একটা চাবি আছে সেটা দিয়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে দেখলো মোবাইল টা সোফায় উপর পরে আছে। দেখে আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো..
চলবে….