#একই_সুতোয়_বাঁধা
পর্ব-১৬
সপ্ত শীখা
— স্যার আসব ?
— জান্নাতুল ! আসুন… প্লিজ !
পুষ্প আস্তে আস্তে হেঁটে ঢুকল সায়নের কেবিনে। অসম্ভব লজ্জা লাগছে ওর। কারণ ও আজ সায়নের জন্য কিমা পরটা বানিয়ে এনেছে ধনেপাতার চাটনি সহকারে। কিন্তু দেবে কি করে… সায়ন যদি খুব হাসে ওর ওপর !
— আপনার হাতের এই ব্যাগে কি জান্নাতুল ?
— তেমন কিছু না স্যার… মানে-
— বুঝেছি, দিন আমার হাতে দিন। বাহ… খাবার এনেছেন ? বুভুক্ষুর উপর দয়া হল বুঝি ? হাহা… কি এনেছেন ? বক্স খুলব ?
— আমি খুলছি… দিন আমার হাতে।
— জান্নাতুল ! আপনি কিকরে জেনেছেন আমার প্রিয় খাবার যে কিমা পরটা আর ধনেপাতার চাটনি ? আপনাকে কখনো বলেছি বলে তো মনে পড়েনা। বলুন ?
— আমি…তো… এম্নিই…
— ওহহ এম্নিই এনেছেন ! থ্যাঙ্কস আ লট… শুরু করব ?
— হু… করুন।
— জান্নাতুল… খুব ভাল হয়েছে খেতে! আপনি কিমা পরটার ভেতর সবজিও দিয়েছেন তাইনা ? এম্নি করে আমাদের গ্রামের এক চাচি বানাতেন। পুষ্পির আম্মা… আছিয়া চাচি…
— স্যার আপনি খান আমি একটু আসি। এক মিনিট।
পুষ্প দৌড়ে বেরিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলো। দেয়ালে হেলান দিয়ে হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিছু না ভেবেই সায়নের প্রিয় খাবারটা এনেছে ও… তাও মায়ের রেসিপিতে বানিয়ে। সায়ন কি বুঝে ফেলল !
💛💛💛💛
পুষ্প বেরিয়ে যাওয়ায় সায়নের ও সুবিধা হয়েছে। উত্থিত আবেগ কে দমন করতে হড়বড় করে কত কথাই যে বলল ! আসলে কাউকে এতটা কেয়ার করতে দেখেই ওর মন দ্রবীভূত হয়ে এসেছে। সেই কলেজে পড়তে ঢাকায় আসা… এরপর কেউ এতটা করেনি। আজ কতদিন পর !!
জান্নাতুল আসছে না। সায়ন খেয়ে সেরে ফেলেছে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে শেষে সব বাটি গুছিয়ে তুলে জান্নাতুলের কেবিনে গেল ফেরত দেবে বলে। ঢুকতে ঢুকতেই শুনতে পেল ও ফোনে কথা বলছে…
— আম্মা… জন্মদিন তো কি হয়েছে ? আমি নতুন অফিস ফেলে আসতে পারব না-কি…
আরে আম্মা… তুমি আব্বাকে বুঝিয়ে বলো… আমি কিকরে আসি ? আচ্ছা… প্রমিস কাল্কে ভোরেই প্রথম বাবার সাথে ফোনে কথা বলব… হুম। রাখি ? আল্লাহ হাফেজ…
স্যার আপনি !
— হুম… আপনি তো বাটি-টাটি সব ফেলেই চলে এসেছেন। তাই দিতে এলাম।
— কেন কষ্ট করলেন… আমিই যেতাম।
— রাখুন এটা। বাবাই !
সায়ন মুচকি হাসি দিয়ে বের হল রুম থেকে। পুষ্পর রক্ত জমে গেছে সেই হাসি দেখে… ছোটবেলায় দেখেছে ও যে সায়নের মাথায় দুষ্টবুদ্ধি আসলে ও এম্নিভাবেই হাসে। কি করতে যাচ্ছে সে ?
🖤🖤🖤🖤🖤
এই ভোর সকালে কে বেল বাজাচ্ছে ? অসম্ভব বিরক্ত হয়ে দরজা খুলল হোস্টেলের দারোয়ান আনিস। বাইরে এক সুদর্শন সাহেব দাঁড়িয়ে। আনিস ক্ষেপে বোম…
— আপনে কেডা ! হস্টেলো কোন বেডাছেলের এন্ট্রি নাই।
— জানি ভাই। এই প্যাকেট টা একটু পৌঁছে দেবেন একজন কে…
— আমি পারতাম না ! এইসব বে আইনি কারবার এই আনিছ করে না। যান এইহান থিকা !
— আরে ভাই… শুনেন না ! এইটা রাখেন… পান খাবেন কেমন ?
( ৫০০ টাকা গুজে দেয়ায় দাঁত বের করে ফেলেছে আনিস। চোখ চকচক করছে )
— লাগত না লাগত না…
— আহহা ভাই রাখেন। এইটা দুইশ পনেরর জান্নাতুল ফেরদৌস কে দিয়ে দেবেন।
— জ্বে জ্বে স্যার। সালামালেকুম।
🖤🖤🖤🖤🖤
সকালে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে ফোন রাখতেই আনিস ভাই এসে রুমে একটা প্যাকেট দিয়ে গেল। অবাক হয়ে খুলতেই ভেতর থেকে একটা বার্থডে কার্ড পড়ল। ভেতরে নোট লেখা…
— হ্যাপি বার্থডে জান্নাতুল ! আপনার জন্য একটা ছোট্ট গিফট পাঠালাম। আশা করি রাগ করছেন না? আজকে আমার সাথে ডিনার করবেন ? প্লিজ ?
অদ্ভুত বার্তার শেষে কোন নাম টাম না থাকলেও পুষ্প পরিস্কার বুঝল এ সায়নেরই কাজ। মনের ভেতর অদ্ভুত আশঙ্কা কাজ করছে ওর। ইচ্ছে করছে ডিনারে যেতে… কিন্তু… মুখ দেখলে সায়ন চিনে ফেলবে যে ! আর তাছাড়া একজন বাইরের পুরুষ সে… তার সাথে ডিনারে যায় ই বা কিকরে !
— নীরা… কি করব বল তো ?
— কি আবার ! তোর প্রেমকুমার ডিনার ডেটে ডেকেছে। যাবি কিনা তোর ইচ্ছা।
— নীরা এমন করিস না ! কি করব বলে দে…
— সে ত তোর জন্য পরপুরুষ… পুষ্প। যাওয়াটা ঠিক হবে না। তাকে বুঝিয়ে বলে দে !
পুষ্পর মাথা কুটতে ইচ্ছে করছে… কেন এত পরীক্ষা তার ! ভালবাসার মানুষের আহবান এম্নি করে কাটিয়ে দেয়া কোন মেয়ের পক্ষে কি সম্ভব ! নাহ… আজ পুষ্প ওকে সরাসরিই জিজ্ঞেস করবে এত কনসার্নের মানে কি।
— হ্যালো জান্নাতুল ?
— জি। স্যার…
— হ্যাপি বার্থডে। আরে… ফোপাচ্ছেন নাকি ? কি আশ্চর্য !
— না… স্যার আমি-
— আচ্ছা বুঝেছি। পরপুরুষের সাথে ডিনারে যাবেন না তাই তো ? এতে কান্নার কি আছে ? চোখ মুছুন আর ফোঁপানো থামান তো…
— আপনি কি রাগ করেছেন ?
— না। একটু মন খারাপ হয়েছে। আমি জানতাম আপনি আসবেন না। জান্নাতুল ?
— হু
— আই এম সরি।
— আপনি কেন সরি বলছেন ? আমিই তো…
— জান্নাতুল, আমি যদি আপনার স্পেশাল কেউ হই তবে আমার সাথে ডিনারে যাবেন ?
— স্যার !
— আমি জানি জান্নাতুল… আমি আপনাকে দেখিনি… বেশিদিন চিনিও না। কিন্তু আপনার পবিত্রতা… আপনার সততা আর সরলতায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। একবার চাকচিক্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ধরা খেয়ে আমি বুঝেছি… সিমপ্লিসিটি ইজ দ্য বেস্ট ! আপনার মধ্যে সেই পবিত্রতাটিই পেয়েছি… এতদিন ধরে যার অপেক্ষা করেছি আমি। জান্নাতুল ? আছেন ?
— হু
— আমি আপনাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত ও ভাবতে পারিনা জানেন ? জান্নাতুল… আমি আপনাকে এ নিয়ে একদম বিরক্ত করব না। আপনি বিব্রত হবেন না। আমি যেমন আপনার মেন্টর ছিলাম তেমনি থাকব। জানি আমার মত মানুষের ভালবাসা আপনার মত পবিত্র মেয়ের জন্য নয়। আপনি অনেক বড় কিছু ডিসার্ভ করেন… আচ্ছা, রাখি জান্নাতুল।
— শুনুন…
— জি
— এভাবেই চলবেন ? নাকি এগোবেন ?
— মানে ?
— মানে আবার কি ! কতগুলো ডায়লগ মেরে রাখি বলে চলে যাচ্ছেন… আমাকে তো কিছু জিজ্ঞেস করলেন না ? বলুন… উইল ইউ ম্যারি মি জান্নাতুল ? বলুন !
— ইয়ে… আচ্ছা। উইল ইউ ম্যারি মি জান্নাতুল ?
— ইয়েস… যদি আমাদের বাবা মায়েরা মত দেন… ইনশাল্লাহ !
— আমি আজকেই বাড়ি যাব জান্নাতুল। মাকে বলব আপনার কথা।
— হু। আমার সম্পর্কে যখন সব জানবেন… বড় সারপ্রাইজ পাবেন একটা। বুঝলেন ? আচ্ছা রাখলাম…
সায়ন কিছু বলার আগেই পুষ্প ফোন অফ করে বসে পড়েছে। সারা শরীর ঝিমঝিম করছে ওর। এতটা সাহস কোত্থেকে এলো ওর ভেতরে ! বিয়ের কথা বলে ফেলল নিজ থেকে ! কি লজ্জা কি লজ্জা !