#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪৯+৫০+৫১+৫২
🍁
বিকালে তানভীর লাবিবাকে নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে । এবারেও বিদায়ের সময় লাবিবা এলোপাথাড়ি কান্না শুরু করেছে আর থামার নাম নেই বললেই চলে । মাঝ রাস্তায় তানভীর গাড়ি থামিয়ে দেয় । লাবিবা চমকে উঠে কান্না অফ করে দেয় । তানভীর রাগে লাবিবার দিক ঘুরে বসে ধমক দিয়ে বলে –থামলে কেনো ? ভ্যা ভ্যা বন্ধ হলে তো চলবে না? এই ভ্যা ভ্যা শুনেই তো তোমাকে চেনা যায় যে তুমি মিসেস তানভীর খান ,চার দিন হয়েছে তোমার বিয়ের, নতুন বউ তুমি , না জানি আর কত দিন নতুন থাকবে আর এভাবে ভ্যা ভ্যা করে যাবে ।
লাবিবা ভয়ে অসহায় লুক দিয়ে ভেজা চোখ দুটো পিট পিট করছে বার বার । ঐ দু চোখের পিট পিটানি চাহনি দেখে নিমেষেই রাগ চলে যায় । তবুও রাগ দেখিয়ে বলে –আর একবার যদি ভ্যা ভ্যা করছো সোজা একটা অচেনা রাস্তায় ফেলে রেখে যাবো । আর যদি চুপ করে বসে থাকো তাহলে ..তাহলে গিফ্ট পাবে । লাবিবা আচ্ছা বলে সামনের দিকে তাকায় । বাকিটা সময় আর কিছুই বলে না । একদম চুপ হয়ে যাওয়াতে তানভীরের খারাপ লাগছে । বেশি বকা দেওয়া হয়ে গেলো নাকি! লাবিবাকে একহাতে টেনে জড়িয়ে ধরে বুকে । কপালে চুমু একে দেয় । লাবিবা অভিমানী স্বরে বলে –কেউ ভালুপাসেনা ।
তানভীরের হাসি পেয়ে যায় এমন আল্হাদি স্বরে । আরো চেপে ধরে বলে — কই আমিতো তোমাকে অনেক ভালুপাসি । অনেকগুলা ভালুপাসা দিতে চাই তুমি নাওনা কেনো গো ?
–গিফ্ট পেলেই চলবে ।
–এর জন্য বক বক স্টপ করেছো ।
–পরে যদি বলেন দুষ্টু পুতুল তুমি কথা বলেছো তোমাকে আর গিফ্ট দিবো না তখন কি হপ্পে?
তানভীর আর কথা বাড়ায় না । একটা বড়ো হোটেলে এসে গাড়ি থামে । এতোক্ষন খেয়াল করেনি লাবিবা শ্বশুর বাড়ি না গিয়ে যে ও হোটেলে চলে আসছে । তানভীর গাড়ি পার্কিং করে লাবিবার হাত ধরে লিফটে উঠে যায় । রিসিপসন থেকে রুমের চাবি নিয়ে একটা রুমে চলে আসে। লাবিবা হা করে তাকিয়ে আছে রুমের দিকে । তানভীরকে জিজ্জাসা করে –আমরা কি আজ এখানে থাকবো ?
–অনলি টু আওয়ারস ।
–দেন?
–দেন সিক্সথ ফ্লোরে পার্টিতে এটেন্ড করবো ।
–কিসের পার্টি?
— কনগ্রাচুলেশনস পার্টি । তোমার আমার নিউ লাইফ স্টার্টিং এর জন্য আমার কলিগরা স্পনসার করেছে । আফটার টু আওয়ারস লেটার আমরা পার্টিতে যাচ্ছি । রেডি হয়ে নাও । একটু বাইরে যাচ্ছি চলে আসবো এক্ষুনি ।
লাবিবা এখনো হা হয়ে আছে । তানভীর বেরিয়ে যেতেই মিররের সামনে এসে দাড়ায় । ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজেকে দেখছে । কেনো দেখছে তার কোন কারন নেই । খাটের উপর গিয়ে বসে পড়ে । রুমটাকে হানিমুনে এলে কাপলদের জন্য যেমন সাজানো থাকে তেমনি সাজানো । অনেক সুন্দর । এখানে আজ থাকলে কি হতো ? যেতেই তো ইচ্ছা করছে না । এই বেডে ফুলের মাঝে ঘুমাতাম স্যার আর আমি 😍 আল্লাগো কি শরম🙈। দরজায় নক শুনে দরজা খুলে লাবিবা । একটা ছেলে দাড়িয়ে দুটো প্যাকেট হাতে। লাবিবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে–ম্যাম স্যার পাঠিয়েছেন আপনার জন্য । লাবিবা মাথা নেড়ে প্যাক দুটো নিয়ে দরজা লক করে দেয় । একটা প্যাকেট খুলে কিছু সাজগোজের জন্য কসমেটিক্স পায় । আরেকটা প্যাকেট খুলতেই একটা ব্লাক শাড়ি পায় সাথে ডিজাইনার ব্লাউজ পেডিকোট । একটা চিরকুট ও আছে । সেখানে লেখা ” তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে নাও । হাতে আর একঘন্টা টাইম । আমি একটু কাজে আছি একটু পরে আসছি । ”
লাবিবা চিরকুট রেখে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নেয় । মিররের সামনে এসে বসে পড়ে সাজতে । অনেক কিছু থাকলেও লাবিবা মুখে পাউডার দেয় । চোখে কাজল দিয়ে ডার্ক আই শেডো দেয় । তার পর নুড লিপিস্টিক দিয়ে নেয় । চুল গুলো আচড়ে নেয় ভালো করে । কাটা দিয়ে বেধে শাড়ির প্যাকেট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় । ব্লাউজ পেডিকোট পরার পর শাড়ি পড়তে গিয়ে মনে পড়ে সেতো শাড়িই পড়তে জানে না । মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে । এবার কি হপ্পে ?? কেউতো নেই হেল্প করার জন্য । লাবিবা টেনশনে অবস্থা খারাপ । এখন কি আর পার্টিতে যেতে পারবেনা ? তানভীর এসে কি মারবে লাবিবাকে ? কি জোরেই না চড় দেয় আল্লাহ যে না খেয়েছে সে বুঝবেনা । নিজের গালে নিজে চড়াতে ইচ্ছা করছে । মেরিড় মেয়ে তাও শাড়ি পড়তে পারে না । কান্না চলে আসছে এবার কিন্তু কাদতেও পারতেছেনা যদি পরে গিফ্ট না দেয় তখন কি হপ্পে??
তানভীর রুমে এসে লাবিবাকে না পেয়ে ওয়াশরুমে ভেবে ডাক দেয় –পুতুল বউ তুমি রেড়ি ?
লাবিবা তানভীরের গলার আওয়াজ শুনেই লাফ দিয়ে উঠে । দরজার কাছে এসে দরজা খুলে মুখটা বের করে বলে –স্যার…
তানভীর পেছন দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায় মুখ টা দেখে । একটু সাজলেই মারাত্মক সুন্দরী লাগে লাবিবাকে । লাবিবা চোখ নামিয়ে বলে
–স্যার. আমি পার্টিতে যাবো না ।
–কেনো ? প্রবলেম কি?
–আমি তিন নাম্বার কাপড়টা পড়তে পারি না কুচি দিতেও পারিনা ।
তানভীর কি বলবে ভেবে পায় না ।
–এক আর দুই নাম্বার কাপড় পড়ে বেরিয়ে আসো তিন নাম্বার টা আমি পড়িয়ে দিচ্ছি ।
লাবিবাকে ওভাবেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবার বলে –সময় বসে থাকে না মনে রেখো ।
লাবিবা হাত শাড়িটা নিয়ে দরজা খুলে একপা দুপা করে এগিয়ে আসে । লাবিবাকে এই অবস্থায় দেখে তানভীর চোখ বন্ধ করে নেয় । এক পলকের দেখায় মাথা পুরো নষ্ট হয়ে যায় । লাবিবা নিচ দিকে তাকিয়ে তানভীরের সামনে এসে দাড়ায় । তানভীর মাথা থেকে মুখ হাত বুলিয়ে লাবিবার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে পড়াতে থাকে । কুচি ধরে লাবিবার হাতে দেয় । লাবিবা গুজার আগেই ছেড়ে দেয় হাত ফসকে । তানভীর রাগ না দেখিয়ে আবারো কুচি করে একহাতে কোমড়টা নিজের কাছে টেনে গুজে দিয়েই উঠে বেড়িয়ে যায় । বেড়োনোর সময় বলে –বাকিটা তুমি করো আর তাড়াতাড়ি এসো । লাবিবা থরথর করে কাপছে এখনো । চুল গুলো খুলে দেয়। নিজেকে ঠিক করে তানভীরের সাথে পার্টিতে চলে আসে । এক হাতে ফোন আরেক হাতে তানভীরের হাত জড়িয়ে হাটতে থাকে । তানভীরকে আড় চোখে দেখতে দেখতে পা বাড়ায় । তানভীর কে পুরোপুরি গেট আপ চেঞ্জ করেছে এটি খেয়াল ই করেনি । খুব মিস করছে গাউন কে । যদি এখন গাউন পড়া থাকতো তাহলে হুবুহু জ্যাক আর রোজ লাগতো তাদেরকে । আর এই হোটেলটা টাইটানিক হয়ে গেলে অনেক ভালো হতো ।
তানভীর লাবিবাকে সবাই ওয়েলকাম জানায় ফুল দিয়ে । এর মধ্যে লাবিবা বেশির ভাগ প্রফেসরদের কেই দেখতে পায় আর তাদের ফ্যামেলি । সবাই এসে কথা বলছে তাদের সাথে গিফট দিচ্ছে । চারিদিকের আলো ফুল দেখে লাবিবার এত্তো আনন্দ হচ্ছে যা বলার মতো না । তানভীর না থাকলে এতোক্ষনে একশটার উপর লাফ দেওয়া হয়ে যেতো । লাবিবাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানভীর বলে –লাফ দিতে ইচ্ছা করছে ? লাবিবা হা করে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । তানভীর হেসে বলে –সব ই বুঝি । চলো ডিনার করবো । পার্টিতে ডিনার শেষে তানভীর লাবিবাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে । লাবিবা আঙুল কামড়া তে কামডাতে বলে –গিফট গুলো রেখে চলে এলেন ?কতো গুলো গিফট । তানভীর হাসে কিছু না বলে । লাবিবার মুখ থেকে আঙুল নিয়ে নিজের মুখে পুড়ে দেয় । লাবিবার মুখ আবারো হা হয়ে যায় । লাবিবাকে নিয়ে নেমে দারোয়ানকে বলে পার্কিং করতে । লাবিবা এবারো অবাক হয়ে যায় । বিষ্ময়ের যেনো শেষ নেই । তানভির লাবিবাকে নিয়ে একটা ফ্ল্যাটের দরজার সামনে চলে আসে । একটা হাত চাবি দিয়ে বলে –টেক ইউর গিফট মাই কুইন । নিউ ফ্ল্যাট অনলি ফর ইউ।
লাবিবা কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না । ডোর আনলক করে ভিতরের দিকে পা বাড়ায় । তানভীর রুমের লাইট গুলো জালিয়ে দেয় । সামনে পার্টির গিফট গুলো দেখে লাফিয়ে উঠে লাবিবা । তানভীর হেসে বলে –যতো ইচ্ছা লাফাও এবার । লাবিবা দৌড়ে এসে তানভীরের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে ভিতরে চলে যায় । ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে আর আনন্দে লাফাতে থাকে । দেখতে দেখতে বেডরুমে ঢুকে । তানভীর লাইক জালিয়ে দিতেই লাবিবা থমকে যায় । পুরো রুম দেখে চোখ ধাধিয়ে যায় । পুরো রুম কালো গোলাপ সাজানো । পেছন ঘুরে তানভীরের দিক তাকায় । তানভীরের ঠোটের কোনে মিটি মিটি হাসি অবাক নয়নে দেখতে থাকে । তানভীর এগিয়ে এসে পেছন থেকে দু হাত সামনে এনে লাবিবার সামনে ধরে । আনন্দে লাবিবার চোখ থেকে পানি বেরিয়ে আসে । লাবিবার একহাত উঠিয়ে দিয়ে বলে — টেক দিজ । #একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ। ইউর অনলি লাভ । লাবিবা কাপা হাতে ফুলগুলো হাতে নেয় । সাথে সাথে উপর থেকে কালো গোলাপের পাপড়ির বর্ষন শুরু হয় । লাবিবা চোখ বন্ধ করে উপর দিকে তাকিয়ে বসে পড়ে। তানভীর লাবিবার আরো কাছে এসে বলে — তুমি এতোদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যে সপ্নটা দেখছিলে আমি তা আজ রিয়েলিটিতে দেখছি । একটা ব্লাক ফেয়ারি একটা ফ্লাউয়ার ব্যাকের মাঝে বসে । তার এরাউন্ডে অজস্র ব্লাক রোজ । পাশে দাড়িয়ে তার ডেবিল তার উপর ব্লাক রোজের বর্ষন সৃষ্টি করছে ।
লাবিবা চোখ খুলে তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে –একটু বসবেন আমার পাশে ?
তানভীর বসে পড়ে। তানভীর বলে –আমার ব্লাক রোজ ট্রি টা আজ থেকে তোমার পুতুল বউ। যানো আমি ছাড়া ঐ গাছটা কাউকে ধরতে দিতাম না । ফুল গুলো দেখে আমার মনে হতো আমার জীবনের ই একটা অংশ এই ফুল গুলো । টুটালি ইউনিক এই ফুল গুলো । তুমি খেয়াল করে দেখবে অনান্য কালো গোলাপের মতো এই কালো গোলাপ ছোট আকৃতির নয় । বরং বড় আকৃতির ইন্ডিয়ার রেড় রোজের মতো । তুমি খেয়াল করে দেখবে এর স্থায়িত্বকাল একটু বেশি সময় । আমি যখন দু তিন বছরের তখন এই গাছ লাগানোর সময় নিজের হাতে লাগিয়েছি । আজ সেই গাছের বয়স প্রায় ত্রিশ বছর অথচ এখনো বেচে আছে আর একি ভাবে ফুল দিয়ে আসছে । এজন্যই এতো স্পেশাল আমার কাছে । আমি তোমাকে ফুল দেইনি কেনো জানো ? আমি ভেবেছিলাম তুমি এর অধিকার পাবে না । আমার যে অর্ধাঙ্গিনী সেই পাবে এর অধিকার । তাকেই দিবো আমি #একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ। তুমি যখন লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যথা পেতে হাত পা কাটা দিয়ে ছিলে ফেলতে আমার খুব কষ্ট হতো । আজ আমি সেই ফুল তোমার হাতে দিলাম । দেখো একটা কাটাও পাবে না । তোমার আর ব্যথা লাগবেনা কখনো সব কাটা আমি সরিয়ে দিবো। তুমি আমার কাছে একগুচ্ছ কালো গোলাপ চেয়েছো আমি তোমাকে অজস্র গোলাপে ভরিয়ে দিলাম এরপর ও বলবে তোমাকে ভালুপাসি না ?
লাবিবা চোখ মুছে মাথা নেড়া না করে । তানভীরের কোলে এসে বসে পড়ে । হাত দিয়ে দাড়ি ছোয়ে বলে
— আমার ব্লাক রোজ না পেয়ে মন খারাপ হতো । আর যে ব্লাক রোজ না পেয়ে মন খারাপ হতো তার মলিক কে না পেয়ে প্রচুর কষ্ট হতো । আব্বু বলে আমি বড় কপাল করে জন্মেছি । আমি সত্যিই বড় কপাল করে জন্মেছি । আজ সবটা আমার এই গোলাপ আর গোলাপের মালিক দুটোই আমার ।
তানভীর তিনটা গোলাপ নিয়ে কানের পাশে গুজে দিয়ে বলে
–এতো গুলো গিফট দিলাম তোমাকে এবার আমাকে কি গিফট দিবে পুতুল বউ?
লাবিবার গলা শুকিয়ে যায় । ঢুক গিলে বলে –কি কি কি দিবো?
To be continue ____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৫০
🍁
তানভীর লাবিবাকে আরেকটু জোরে নিজের কাছে চেপে ধরতেই লাবিবা লাফিয়ে উঠে পাশে বসে পড়ে । চোখ গুলো বড় বড় করে বলতে থাকে
–ও আমার আল্লাহ আমাকে ঐভাবে ধরতে বলবেন না প্লীজ। আপনার ডলফিনের মতো শরীরটা আমার উপর পড়লে আমি সেখানেই চিপকাইয়া শহীদ খাইয়া ফেলমু । আপনি যদি আমাকে একটা গুতা দেন সেখানেই আমি শেষ । বেশি কিছুনা আমার পেটের উপর একটা পা উঠিয়ে দিলেই আমি পেট ফেটে ব্রাস্ট হয়ে যামু । আমাকে ধরলে মনে হয় আমি ছাগল ভর্তা মুরগী ভর্তা চানাচুর ভর্তা হইয়া যাই । যখন আমার একেবারে সামনে আসেন আমার শ্বাস কষ্ট শুরু হয় মনে হয় হার্ট এট্যাক করে তখনি শহীদ খামু । কিন্তু আমার এতো তাড়াতাড়ি শহীদ খাওয়ার কোন শখ নাই । আমার এখনো বিয়ে হয় নাই থুক্কু আমার এখনো টুইনস ,টুইনসের ঘরের নাতি, নাতির ঘরের পুতি ,পুতির ঘরের হুতি , হুতির ঘরের মুতি, মুতির ঘরের গুতির মুখ দেখা হয় নাই । তাই আমি আপনার কাছে আসি না । আবার যখন আসি তখন আর দুরে যেতে ইচ্ছা করে না । তাই আমি আর যাই না । আমি তো আমার ডেবিলের কাছেও যায়না । আপনি তো এখন আমার হাব্বি । ওমাগো হাব্বি তো আরেক ডেবিল । ডেবিল মানেই তো কতো কি । শারমিন যে বলেছিলো হাব্বি নিশ্বাস বন্ধ চু____
বলেই জিহবায় কামড় দেয় । আরো বড় বড় চোখ করে তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে । মনে মনে ইয়া খোদা ইয়া খোদা বলতে থাকে । না জানি এখন লাবিবার উপরে কি বিষ্ফোরন ঘটাবে । কিন্তু তানভীর মুচকি মুচকি হাসছে । এক পর্যায়ে জোরে জোরে হাসতে থাকে । লাবিবা আরো অবাক হয়ে হাসি দেখতে থাকে । কোন মতে হাসি থামিয়ে বলে
–পুতুল বউ..কি বললে এসব ? কোন সেনটেসের সাথে কোন সেনটেসের মিল ই পেলাম না । সব আওলা -ঝাওলা কথা । কোথা থেকে শিখলে এসব ?
লাবিবা অসহায় মুখ করে বলে –জানিনা ।
–আমার গিফট টা কি তুমি নিজের থেকে দিবে নাকি আমি চেয়ে নিবো ?
–কি কি কি গিফট চাই আপনার ?
তানভীর মুখটা লাবিবার মুখের সামনে এনে নাক টিপে দিয়ে বলে —মোরবা করবে আমার জন্য ।
–এখন? কেনো? আপনিতো বলেছিলেন আমার ডান্স করা যাবে না আর ।
–আমিতো বলেছিলাম অন্য কারো সামনে না করতে । শুধু আমার সামনে করতে । এখন তোমার পার্টনার তো আমি । হুমম । বিলিভ মি ।
–আ আ আমি মোরবা করবো না । আমার শরম করে।
–আসলে তুমি পারো না তাই করবেনা । আগেই বললে হতো । আমি তো জানতাম তুমি সব পারো । আচ্ছা বাদ দাও পারোনা যখন কি আর বলবো ।
–আমি পারি ।
–একটুও পারো না । পারলে অনেক আগেই বলা মাত্র দেখাতে ।
–আমি পারি ।
–কচু পারো ।
–আমি সত্যিই পারি । গান প্লে করুন । মোরবার জন্য বিশেষ কয়েকটা গান আছে ওগুলো প্লে করুন ।
–কি কি গান ?
— হিন্দি গান প্লে করুন । সাচ এস –দিলবার দিলবার, ঘুঙুরু, ঝামাক ঝাম পায়েল বাজে, মুহে রাঙ দে, নেশা এ দিল, জারা জারা বে হেকতিহে ,লাহুমে চারগায়া এর মধ্যে যে কোন একটা দিলেই হলো ।
–এর থেকেও বেটার গান প্লে করবো আমি । এবার তুমি উঠে দাড়াও ।
লাবিবা উঠে দাড়িয়ে আবার বসে পড়ে । অসহায় লুক নিয়ে বলে –না করলে হয় না ? মোরবা করলে আমি অন্যরকম হয়ে যাই ।
–পারো না যখন থাক । আমি না হয় বেবিকে বলবো দেখাতে । বেবি অনেক বার দেখিয়েছে ইংল্যান্ডে জানো । যা সুপার লাগে না …. তুমি বরং ওর দেখে শিখে নিও ।
–ঐ সাদা বিলাই টা তাইনা ?
–হুম । ও যখন মোরবা করে যা জোস লাগেনা ..উফফ কি বলবো তোমাকে ..শাড়ি পড়ে চিকন কোমড়টা
–কিহহ আপনি দেখেছেন এসব ?
–হুম । এত্তো হট মেয়ে আমি জিবনে একটাই দেখেছি জানো ..চোখ ফেরানো যায় না । কোথায় ও আর কোথায় তুমি ।
–আমাকে ইনসাল্ট করছেন ?
–ইনসাল্ট কেনো করবো ? তুমি তো আর তার মতো নও..হতেও পারবেনা । উফ যা হট ..স্লিম বেলি উম উম…
লাবিবা মুখ চেপে ধরে । রাগি লুকে তানভীরের চোখে চোখ রেখে বলে
–আমার হাজবেন্ড হয়ে অন্য মেয়ের মোরবা দেখা তাইনা ? আরো তার চিকন কোমড় ও দেখা .. স্লিম বেলি তাইনা ? তানভীরের একহাত নিজের বেলিতে রেখে আমি না তাদের মতো না আর হতেও চাই না । নিচের দিকে আর যেই নামুক মিসেস তানভীর খান কখনোই নামবে না ।
তোড়া থেকে একটা গোলাপ মুখে নিয়ে দু কদম পিছিয়ে শাড়ির আচলটা হাতের মুঠোয় চিকন করে নেয় । যা দেখে তানভীরের হার্ট স্ট্রোক করা অবস্থা । এরোকম মুটিভেশন দেখার ই ট্রাই করছিলো এতোক্ষন কিন্তু এতোটা যে আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যাবে ধারনার ও অতীত । নেক্সট স্টেটমেন্ট কি হবে তা ভেবেই পা দিয়ে ফ্লোরে পা ঘামচে ধরে তানভীর । লাবিবা কারিনা কাপুর ভঙিতে কোমড়ে হাত রেখে বলে — নাউ ইউ কেন প্লে মিউজিক । লাইফের বেস্ট মোরবাটা আজি দেখবেন আপনি । পার্টনার হতে চাইলে আসতে পারেন ।
তানভীর কোর্ট টা খুলে বাকা হেসে গান প্লে করে । মিউজিক শুনে লাবিবা মুখে দুষ্টুমির হাসি হেসে স্টার্ট না করেই দাড়িয়ে থাকে । তানভীর শার্টের উপর বোতাম খুলতে খুলতে এগিয়ে যায় । লাবিবার একহাত তুলে শব্দ করে একটা চুমু দেয় । লাবিবাকে ঘুরিয়ে দিয়ে পার্টনারের স্থান টা দখল করে নেয় । লাউডলি গান বাজতে থাকে আর লাবিবার নাচে তানভীর মুগ্ধ হতে থাকে ।
🎶আঙ্গে লাগা দে রে.. মোহে রাঙ্গ লাগা দে রে !!
মেতো তো তেরি জগানিয়া তু জগ লাগা দে রে
জগ লাগা দে রে ..প্রেমকা রগ লাগা দে রে
মেতো তো তেরি জগানিয়া তু জগ লাগা দে রে
রাম রাতান ধান,লাগাউ মাগান মান তাউ মোরে চান্দান রে…
উজলি করি প্রিত পায়াসাত রাঙ্গ লাগা দে রে
আঙ্গে লাগা দে রে.. মোহে রাঙ্গ লাগা দে রে
মেতো তো তেরি জগানিয়া তু জগ লাগা দে রে
রাত বানজার সি হে ..কালি খাঞ্জার সি হে..!!
তেরে সিনে কি লো ..মেরে আন্দার সি হে
তু হামা দে তেসে,তু মেরা তান জালে
জ্বলা দেরে সাং জ্বলা দে রে ,মোহে আঙ্গ লাগা দে রে
মেতো তো তেরি জগানিয়া তু জগ লাগা দে রে
রাস হি রাত মে..তেরি হার বাত মে !!
বল মে কেয়া কারু ..এসে হালাত মে
হু মে তেরি মালাং তুহি মেরি নেশা
চান্দা দে রে ভাং চান্দা দে রে প্রেম কি ভাং চান্দা দে রে
মেতো তো তেরি জগানিয়া তু জগ লাগা দে রে
জগ লাগা দে রে ..প্রেমকা রগ লাগা দে রে
মেতো তো তেরি জগানিয়া তু জগ লাগা দে রে
রাম রাতান ধান,লাগাউ মাগান মান তাউ মোরে চান্দান রে…!!!🎶
আকাশে পূর্ণ চাদ ধরা দিয়েছে । দখিনের খোলা জানালা দিয়ে হিমেল হাওয়া হিম নিয়ে আসছে । হিমেল হাওয়ায় বার বার শরীর কেপে উঠছে । সাথে গলার নিচে তানভীরের তপ্ত নিশ্বাস সারা শরীরে শিহরন বইয়ে দিচ্ছে । পেটের উপর তানভীরের দুষ্টু হাতের দুষ্টু ছোয়া পাগল করে দিচ্ছে । শরীরে এক বিন্নু যেনো শক্তি পাচ্ছে না । এ কেমন অনুভুতি ? কাপা স্বরে তানভীরের দিকে তাকিয়ে কোন মতে ডাক দেয় –তানভীর…..
চমকে তাকায় তানভীর । পুতুল বউয়ের মুখে নিজের নাম শোনা এটা কখনো আশাও করেনি । অথচ আজ সে শোনেই ফেললো । লাবিবা তানভীরের চোখ তাকিয়ে চমকে উঠে । অসম্ভব লাল হয়ে আছে চোখ দুটো । এ চাহনি একেবারে অন্যরকম যার সাথে কখনো দেখা হয়নি লাবিবার । তানভীর হুট করে লাবিবাকে কোলে তুলে নেয় । লাবিবা গলা জড়িয়ে ধরে । লাবিবা আস্তে করে বলে –তোমাকে অন্যরকম লাগছে তানভীর । এমন কেনো দেখাচ্ছে ? কিভাবে হচ্ছে ?
–যেভাবে তোমার মুটিভেশন এক্সপ্রেশন বডি ল্যাংগুয়েজ মাউথ ল্যাংগুয়েজ চেঞ্জ হচ্ছে । আমার তোমাকে চাই বউ । হবে তুমি আমার ?
লাবিবা বুঝতে পেরে কোলেই লাফালাফি শুরু করে । শরীরে শক্তি না থাকায় তানভীর সামলে নেয় । লাবিবা চিল্লাতে থাকে –ও মা গো ।।।আপনার এই চাওয়া .. আমি তো বুঝতেই পারি নি । আমি থাকবোনা আপনার সাথে । এক্ষুনি চলে যাবো । তাই তো বলি আপনি শুধু শুধু মোরবা দেখতে চাইবেন কেনো?
তানভীর বিছানার উপরে উঠে বলে –লাফালে ফেলে দিবো কিন্তু ? লাবিবা মাথা নাড়িয়ে না করে । তানভীরের শার্ট জোরে ধরে বলে –ব্যথা পাবো তো । পরে বলবেন কোমড় ভাঙা ব্যথাওয়ালা বউ কিচ্ছু পারে না । তানভীর সুন্দর ভাবে হাত ফসকে দেয় । লাবিবা এক চিৎকারে বিছানায় পড়ে যায় । হুস ফিরতেই দেখে তানভীর পকেটে হাত হাত রেখে একটি একটি করে শার্টের বোতাম খুলছে । শার্টটা ছুড়ে ফেলে বলে
–কিহ ব্যথা পেলে তো ? হা হা আমি কি তোমাকে ব্যথা দিতে পারি পুতুল বউ? এই বিছানা সো সফট বাট নট মোর দেন ইউ । ইউ আর সুপার সফট ওমেন।
লাবিবার উপরে আসতেই লাবিবা বুকে হাত দিয়ে আটকে দেয় । এই মুহুর্তে কি হতে চলছে ভেবেই মাথা ঘুরাচ্ছে । হাত দিয়ে তানভীরকে ঠেলতে চাচ্ছে । না পেরে বলে –উফফ আপনি এতো হার্ড কেনো ?
–তুমি এতো সফট তাই । হাত সরাও পুতুল বউ । তোমার এই দুর্বল শরীরের নরম হাত দুটো দিয়ে আমাকে না ঠেলে গলা জড়িয়ে ধরো । লাবিবা হাত ছেড়ে উল্টো ঘুরে যায় । তানভীর কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বলে –তুমি চাইলেও সরে যেতে পারবেনা । নাউ ইউ আর আউট অফ কন্ট্রোল । তোমার টুকি ধা খেলার সময় শেষ বউ পাখি । তুমি দুষ্টু পুতুল থেকে আমার পুতুল বউ হয়ে গেছো । একরাশ প্রেম দিয়ে বেধেছি তোমায় আমি । মাতাল পরী আমার একরাশ প্রেমে ডুব দিয়ে মাতাল করে দাও আমায় । আমি তোমার প্রেমে বেডলি নেশাগ্ৰস্থ। কানে কামড় বসাতেই ঘুরে তাকায় লাবিবা । লাবিবার কপালে ঠোটের ছোয়া দিতেই কেপে উঠে লাবিবা । গালে নাকে ঠোটে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে । দু হাতে পিঠ জড়িয়ে ধরে ।গলায় মুখ গুজে তানভীর । এলোপাথাড়ি চুমুতে পাগল করে দেয় । পেটের উপর দিয়ে হাত নিয়ে শাড়ির কুচি খুলে দিতেই তানভীরের হাতের উপর হাত রাখে । চোখে চোখ পড়ে দুজনের । লাবিবা বলে –আমার শাড়ির কুচি কেনো খুলছেন ? একটু আগেই তো পড়িয়ে দিলেন তাহলে এখন খুলে দিচ্ছেন কেনো?
— এমনি এমনি তো পড়াইনি । খুলার জন্যই পড়িয়েছি । আমি পড়িয়েছি আমিই খুলবো ।
–তাহলে আমি পরে পড়বো কিভাবে ?
–আমি কেনো আছি ?
আর একটাও কথা বলেনি লাবিবা । তানভীর নাকে নাক ঘষে দিয়ে বলে –আরেকবার যদি হাত এদিক সেদিক ঘুরে বেধে রাখবো তাহলে ।
{ স্টোরির ক্যাটাগরি যেহেতু রোমান্টিক সেহেতু রোমান্স থাকবেই । আজকের পার্টে ফুল স্টোরির হাইস্ট রোমান্স দেওয়া হয়েছে । আমার ভাবনার থেকে অনেকটা কন্ট্রোল করে লিখার ট্রাই করেছি। আমার পার্সোনালি মনে হচ্ছিলো এরকম না লিখলে গল্পটায় কিছুটা অপূর্নতা থাকবে। যদি কারো মনে হয় লেখিকা এরকম না দিলেও পারতো তাহলে প্লিজ ক্ষমার চোখে দেখবেন🙏 ।
— ইতি লাবিবা🍁 }
To be continue____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৫১
🍁
ফুপানো কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তানভীরের । কিছুক্ষন হলো ঘুমিয়েছে এখনি ঘুমের ডিস্টাব । সকালের রোদের আলো সরাসরি চোখে পড়ছে ।খুব কষ্টে চোখ খুলে দেখে লাবিবা বিছানায় পা দুটো ভাজ করে বসে বসে ফুপিয়ে কাদছে । পড়নে শুধু কাল রাতের পড়া তানভীরের শার্ট উরু পর্যন্ত এসে ইতি ঘটিয়েছে । সদ্য গোছল করা ভেজা চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে । অর্ধেক শার্ট ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে। মুখের উপর ভেজা ছোট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে । নিমেষেই তানভীরের ঘুম চলে যায় । লাফ দিয়ে উঠে বসে । লাবিবাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে –পুতুল বউ..কাদছো কেনো তুমি ? কি হয়েছে তোমার ? বলো আমাকে ।
লাবিবা ফুপাতে ফুপাতে বলে –আমি নড়াচড়া করতে পারছি না । আপনি কেনো আমাকে চিপকাইয়া ধরলেন ? আই এম নো নডিং নো চড়িং করতে পারছি । কোন মতে গোছল টা সেডে নিয়েছি ।
তানভীর
তানভীরের মাথা ব্যথা করছে এবার । লাবিবাকে কিছু না বলে উঠে বাথরুমে চলে যায় । শাওয়ার নিয়ে টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে । লাবিবাকে পাজাকোলে নিয়ে বেলকনিতে এসে ডিভানে বসে । টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে থাকে । হাত পা মুছতে মুছতে বলে –তুমি তো দেখছি গা না মুছেই শার্ট পড়েছো । শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছো । ঠান্ডা লেগে যাবে তো । ক্যবিনেট ভর্তি শাড়ি রেখে শার্ট পড়েছো কেনো ?
— আমি শাড়ি পড়তে পারি নাতো । আপনি তো ঘুমাচ্ছিলেন । তাহলে কে পড়িয়ে দিবে আমাকে ?
–গাউন তো আছে অনেকগুলা । দেখোনি তুমি?
–শার্ট পড়ে ভালোলাগছে । জানেন আপনার শার্ট প্যান্ট পড়তে আমার খুব ভালো লাগে । মনে হয় আপনি নিজেই আমাকে জড়িয়ে আছেন।কাধে ছুতেই লাবিবা ব্যথা পেয়ে আহ করে উঠে । তানভীর সফটলি ধরে বলে
–খুব ব্যথা করছে ? কোথায় ব্যথা করছে দেখি ?
–এখানে ওখানে এদিকে সেদিকে সেথায় যেথায় ..।
সারা অঙ্গে ব্যথা , মলম লাগাবেন কোথা ?
— সারা অঙ্গেই লাগাবো । প্রচুর মাথা ধরেছে । কিচেনে চলো। কিছু খেয়ে ট্যাবলেট খেয়ে নাও দেখবে ব্যথা কমে যাবে ।
তানভীর লাবিবাকে কোলে নিয়ে কিচেনে চলে আসে ।ডাউন ক্যবিনেটের উপর বসিয়ে দেয় । কফি ম্যাকারে কফি বানিয়ে লাবিবার দিকে আসে । লাবিবা বসে বসে পা দুলিয়ে খেলা করছে । এক কাপ লাবিবাকে দিয়ে আরেক কাপ খেতে খেতে পাসতা রেড়ি করে ফেলে। লাবিবা বসে বসে পাসতা বানানো দেখে । আস্তে করে নেমে দাড়িয়ে হেটে হেটে ড্রয়িং রুমে চলে আসে । টিভি অন করে বসে পড়ে । কার্টুন চ্যেনেল দিয়ে ওগি দেখতে থাকে । তানভীর প্লেটে পাসতা এনে টি টেবিলে রেখে সোফায় বসে লাবিবাকে কোলে বসিয়ে দেয় । প্লেট নিয়ে কার্টুন দেখতে দেখতে দুজনেই খাওয়া শেষ করে । লাবিবাকে ট্যাবলেট খাইয়ে দেয় । ফোনের আওয়াজ পেয়ে লাবিবাকে কোল থেকে নামিয়ে বেডরুমে চলে যায় । কথা শেষ করে এসে বলে –বউপাখি তুমি কার্টুন দেখো আমি একটু শোব নয়তো ভালো লাগছে না । তিনটার দিকে বের হবো তোমাকে বাসায় দিয়ে রাতেই আমাকে ঢাকা যেতে হবে একটা অফিসিয়াল কাজে ।
তানভীর এসে শুয়ে পড়ে । লাবিবা কিছুক্ষন কার্টুন দেখে আর ভালো লাগে না । উঠে চলে আসে বেড রুমে । তানভীরের পাশে শুয়ে কম্বল টেনে নেয় গায়ে । দু হাতে তানভীরকে জাপটে ধরে । তানভীরের মতো একটু জোরেই ধরে । একমনে তানভীরের ঘুমন্ত মুখটা দেখতে থাকে । খোচা খোচা দাড়ি গুলো একটু বড়ই হয়ে গেছে । এতেই যেনো আরো সুন্দর লাগছে । হাত দিয়ে হালকা ছুয়ে দিতেই তানভীর নড়ে উঠে । লাবিবা মুচকি হাসে । নাকে হাত দিয়ে টিপে দেয় যেভাবে কাল তাকে টিপে দিয়েছিলো । তানভীর ঘুমের ঘোরেই হা সরিয়ে দিয়ে বলে –প্লিজ কলিজাটা ঘুমোতে দাও । লাবিবার খুব ভালো লাগে ঘুমু ঘুমু ভয়েজটা । নাক ছেড়ে হাত দুটো বুকে নিয়ে আসে । লোমস বুকে পিপড়ার কামড়ের মতো চিমটি কাটতে থাকে । তানভীরের রেসপন্স না পেয়ে কামড় বসিয়ে দেয় । তানভীর বিরক্তি স্বরে উবু হয়ে শোয়ে বলে
–প্লিজ লিভ মি ।আই ওয়ানা স্লিভ ।
তানভীরের বিরক্তি স্বরে লাবিবা মুখ টিপে হাসে । আলতো করে তানভীরের পিঠের উপরে উঠে সটান শোয়ে পড়ে । দুহাতে জড়িয়ে ধরে । কানের কাছে এসে চুমু খায় । ঘাড়েও চুমু খায় । পিঠের উপর ও চুমু খেতে থাকে । পুরো পিঠ চুমু খাওয়ার পর মুখ গুজে দেয় পিঠে । তানভীর ঘুরে শোয়ে লাবিবাকে বুকে টেনে নেয় । কপালে চুমু খেয়ে বলে –কি হয়েছে আমার বউটার?
–আপনাকে মিস করবো ভুরি ভুরি । না গেলে হয় না ? জব বাদ দিয়ে বাসাতেই থাকুননা আমার সাথে ।
–এত্তো প্রেম ? তুমি তো পালিয়ে বেড়াও । আমি না থাকলেই তো তোমার ভালো । এখন আবার এতো প্রেম দেখানো হচ্ছে যে ..
— প্রেম আছে তাই দেখাই আপনার কি ?
–ঢাকা থেকে এসে প্রেম দেখবো কেমন ? এবার কলিজাটা সুন্দর করে ঘুমিয়ে পড়ো তো । আমি যতোক্ষন ঘুমোবো ততোক্ষন ঘুমোবে ।
ঠোটে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে দুজনে ।
___________________
ক্যবিনেট থেকে একটা গাউন বের করে পড়ে নেয় লাবিবা । প্রবলেম হলো স্কার্ফ নেই এখানে । তানভীর শার্টের হাতা ফ্লোড করতে করতে রুমে ডুকে দেখে লাবিবা মিররের সামনে দাড়িয়ে আছে চুপ চাপ। তানভীর এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আপেলের মতো গালটায় টুপ করে চুমু খায় । লাবিবা মাথা ঘুরিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে –স্কার্ফ কিনতে ভুলে গেছেন আপনি । এখন কি আপনার বউ এভাবেই বাইরে যাবে ? তানভীর লাবিবাকে এক নজর দেখে হাত ছেড়ে দেয় । ক্যাবিনেট থেকে জিন্সের একটা কটি বের করে আনে । লাবিবার হাতে দিয়ে বলে –এটা পরে দেখতে পারো। লাবিবা পড়ে নেয় । লুকিং পারফেক্ট। গাল ফুলিয়ে বলে –আপনার জন্য আমার চুলগুলো সবাই দেখে নিচ্ছে । –বাসায় যাও । আজকের পর থেকে আমি ছাড়া আর কেউ দেখবেনা।
এবার চলো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে ।
ফ্ল্যাট লক করে নিচে নেমে আসে লিফটে । গেইটের সামনে লাবিবা দাড়ায় । তানভীর গাড়ি নিয়ে আসে পার্কিং থেকে । লাবিবা উঠে বসলেই তানভীর গাড়ি স্টার্ট দেয় । লাবিবা চুল গুলো হাত খোপা করে জানালার বাইরে তাকায় । তানভীর পকেট থেকে চকলেট বের করে লাবিবার সামনে ধরতেই লাবিবা খুশিতে হাতে নিয়ে খেতে থাকে । তানভীর বার বার তাকিয়ে লাবিবার খাওয়া দেখতে থাকে ।
–এটা ছাড়া অপূর্ণ লাগছিলো ।
–চকলেট খেতে খেতে চকলেটের জমজ বোন হয়ে যাবো তারপর দেখবো আপনি কিভাবে আমাকে ছেড়ে বাইরে থাকেন ।
–আপনি চকলেট হন আর হরলিক্স হন আপনাকে ছেড়ে থাকা আমার কর্ম নয় । তবে বাধ্যবাধ্যকতায় তো থাকতেই হবে । এতো মন খারাপ করলে আমি কি থাকতে পারবো ? দুটো দিন প্লিজ । চলে আসবো তো।
–এতো কিছু রেখে আমাকে ফ্ল্যাট কেনো গিফট করলেন ? কিভাবে জানলেন আমি ফ্ল্যাট লাইক করি?
–মুইনের থেকে । তুমি আর নুপুর নাকি ফ্ল্যাট লাইক করো ..তার জন্য বাবাকে বলে নুপুরের জন্য ফ্ল্যাট ও কিনে ফেলেছিলো মুইন । সেই ফ্ল্যাটে আজো থাকা হয়নি তার নুপুরকে নিয়ে থাকবে বলে ।
–রাজিব ভাইয়াই পারে ওদেরকে এক করতে । বড় জামাইয়ের কথা আংকেল ফেলতে পারবে না । আপনি হেল্প করেন না একটু প্লিজ ।
–ওকে আসার সময় রাজিবের সাথে কথা বলে আসবো ।
বাসায় আসতেই সোহানা মমতা নতুন বউকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । তানিয়ার কথা জিজ্জাসা করতেই সোহানা বলে গতকাল তানিয়ার শ্বশুর শাশুড়ি ননাশ ননদাই এসে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে চলে গেছে । তানভীর সাথে সাথেই তানিয়াকে ফোন দেয় । একবার রিং হতেই তানিয়া কল রিসিভ করে ।
–হ্যালো ভাইয়া ।
–আমাকে না জানিয়েই চলে গেলি !
— আরে বাবা আসবো তো । একঘন্টার হাটার রাস্তা মাত্র ওয়ান টু ব্যপার ।
— মানুষ শ্বশুর বাড়ি গেলে বাপের বাড়ির কেউ ফোন দিলেই মন খারাপ করে, কাদে ,চলে আসতে চায় আর আমার বোন দিব্যি হাসি খুশি আছে ।
–ভাবির মতো কাদবো নাকি ?
–একদম না ।তোর ভাবির সাথে তোর তুলনা নয় । তোর ভাবির দিক থেকে তোর ভাবি ঠিক আর তোর দিক থেকে তুই ঠিক । সারাজীবন এরোকম হাসি খুশি থাকিস । রাখছি । মাত্র আসলাম । পরে কথা হবে ।
–ওকে ভাইয়া ।
রাতে বের হবার সময় লাবিবা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। রুম থেকে সোহানা মমতা চলে গেলে ফোনটা পকেটে নিয়ে এক হাত বাড়িয়ে দেয় লাবিবার দিকে । লাবিবা রুমের বাইরে একবার দেখেই দৌড়ে এসে তানভীরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে । দুহাতে লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে বলে –সাবধানে থেকো হুম ?? কালো গোলাপের গাছটা কিন্তু তোমার । ছাদে উঠে হাত দিয়ে ফুল নিতে পারবে । আবার কাটা ফুটিয়ে বসো না ।
–আমার জন্য কি নিয়ে আসবেন ?
–তুমি বলো ।
–কাচের চুড়ি ।
–আর?
–আপনার যা যা ইচ্ছা ।
–ওকে । আসি। আমি ফোন না দিলে আবার গাল ফুলিয়ে বসো না । পাকা টমেটোতে কিন্তু সত্যি সত্যি কামড় বসাবো । পরে আবার ফ্যাস ফ্যাস করে কাদতে পারবে না । এটা কিন্তু ট্যাবলেটে কাজ করবে না ।
–হুম। মিস ইউ ভুরি ভুরি।
–মিস ইউ অনেকমাচ।
যেতে নিয়ে আবার ঘুরে এসে ঠোটে গাঢ করে একটুখানি সময় চুমু খেয়ে বাই বলে বেড়িয়ে যায় ।
কিচেনে মমতাকে রান্নায় হেল্প করছে লাবিবা। মমতার ফোন বেজে উঠাতে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তানিয়া ফোন দিয়েছে । লাবিবাকে বলে –তানিয়া ফোন দিয়েছে । আমি কথা বলে আসছি । মমতা চলে যাওয়ার পর লাবিবা ওভেন থেকে পপকর্ন বের করে । মোডা এনে বসে বসে পপকর্ন খেতে থাকে । জানালা দিয়ে একটা সাদা বিডাল উকি দেয় । লাবিবা সাদা বিড়াল দেখে খুশি হয়ে যায় । এরা কি বিডাল পোষে? কই আগে তো জানতাম না । নতুন মনে হয় পোষে । আমার তুতুটাকে কতদিন দেখি না । আম্মুনি ঠিক ঠাক খাবার দিচ্ছে কিনা কে জানে ।শুকিয়ে গেছে মনে হয় । বিড়াল জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে । ঢুকেই মিও মিও বলতে বলতে ক্যবিনেটের উপর দিয়ে হাটতে থাকে । জগে যে দুধ ছিলো তা জানতো না লাবিবা । বিডাল জগে মুখ দিতেই দুধ দেখে চিল্লিয়ে উঠে লাবিবা । শয়তান বিডাল বলে দুধ সরাতে গেলেই বিড়াল রেগে লাফ দিয়ে নামতেই লাবিবার পায়ে আচড় লাগে । লাবিবা সাথে সাথে চিল্লিয়ে উঠে । পা ধরে বসে পড়ে । মমতা সোহানা দৌড়ে আসে । পা দেখে ছাল উঠে গেছে একটু কিন্তু ব্লাড বের হয়নি । ফিরোজ মাত্র ই ফিরেছে । সাথে সাথেই ডক্টরকে ফোন দেয় । লাবিবাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসানো হয় । কাজের লোক ইতো মধ্যে বিডাল টাকেও ধরে ফেলে । লাবিবা ঝুড়িতে বিড়াল দেখে চিল্লানি দিয়ে বলে ঐ বিল্লির মুন্ডু কাটা হোক । আমাকে ব্যথা দিয়েছে ওর মৃত্যু অনিবার্য । শয়তান বিল্লি আমার এতোসুন্দর নরম পা দেখে তুই আচড়ে দিলি..স্যার ও তো আমায় আচড়ে দেই নি কখনো শুধু বাইট দেয়। আর তুই আমার স্যার উম উম…..
সোহানা মুখ চেপে ধরে কানে কানে বলে –আম্মুটা এসব বলতে নেই । চুপ কর। সামনে তোর পাপা আর ডক্টর আংকেল আছে তো । মান সম্মান আকাশে তুলিশ না ।
ডক্টর ইনজেকশন বের করে বলে ভাবি বউমাকে ধরুন । নড়া চড়া করা যাবে না । বিষ কাটাতে ছয়টা ইনজেকশন দিতেই হবে মা
লাবিবা লাফিয়ে উঠে–ওমাগো ছয়টা 😫আমি ইনজেকশন দিবো না ব্যথা । স্যার…কোথায় আপনি…আমাকে ইনজেকশন দিচ্ছে.. তানভীর..😭
ফিরোজের ইশারায় শক্ত করে ধরতে বললে সোহানা মমতা লাবিবার চোখ সহ শক্ত করে ধরে । ডক্টর ইনজেকশন পোস্ট করে দেয় ।
To be continue____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৫২
🍁
তানিয়া এসে লাবিবার কান্ডকারখানা দেখে শুনে তানভীরকে সবটা জানায় । তানভীরের মাথা পুরো খারাপ হয়ে যায় । এমনিতেই ভার্সিটির নিউ বিল্ডিং এর কন্সট্রাকশনের কাজের পারমিশন আর কেশ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে । তার উপর আবার লাবিবার অবস্থা । ইচ্ছা করছে বিড়ালটাকে ধরে কুচি কুচি করে ফেলতে । যেখানে সে অযথা একটু কষ্ট ও দিতে পারে না লাবিবাকে সেখানে বিড়ালটার সাহস হয় কি করে লাবিবাকে আচডে দেওয়ার । কাজ সারতে সারতে তিন দিন লেগে যায় । এর মধ্যে সোহানাকে ফোন দিয়ে দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে লাবিবার এটা করো ওটা করো বলে । সোহানা এবার ফোন ধরাই বাদ দিয়েছে । সাথে মিটি মিটি হাসি আর ফিরোজ কে গিয়ে বার বার বলে “তোমার ছেলে তোমার মতোই হয়েছে । তিনটা দিন বাইরে বউএর জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছে । আর আমার মাথা খাচ্ছে । এখনো তো তুমি কয়েকদিনের জন্য বাইরে গেলে অস্থির হয়ে উঠো । মনেই হয় না যে আমাদের সংসার জীবনের চৌত্রিশ বছর কেটে গেছে । ” ফিরোজ দাত বের করে হেসে বলে ” কার ছেলে দেখতে হবে তো । ছেলের বউ ও তো তোমার মতো হয়েছে । একটু পর পর স্যার মিস ইউ ভুরি ভুরি হা হা হা ।” লাবিবা ফোন ধরলেই চুপ চাপ থাকে আর তানভীরের ধমক সহ্য করে নেয় । বাসায় আসলে না জানি কি করে সেটা ভেবেই লাবিবার মাথা ঘুরে । আসার পর লাবিবাকে পেটাবে নাকি আদর করবে সেই ভাবনায় ঢুবে থাকে । একবার তো মাথা ঘুরেই পড়ে যায় । সাথে সাথে তানভীরের কাছে ফোন —
তানভীর..বিয়ের কয়দিন হলো এর মধ্যেই এসব কি ? না হলেও তো এক দুই মাস পর এই সুখবর পাওয়া যায় । এর মধ্যেই কিসের কি 😱 সীতাকুন্ডু গিয়ে কিছু করিস নি তো আবার ? এসব শুনে তানভীর লাবিবার একসাথে মাথা ঘুরতে শুরু করে । তানভীর না পারে কাজ ঠিক ঠাক করতে না পারে লাবিবার কাছে চলে আসতে । উভয় সংকটে দিন যায় তার । অবশেষে পাচ দিন পর তানভীর বাসায় ফিরছে । লাবিবা আলমারি ঘেটে সব থেকে সুন্দর শাড়িটা বের করে নেয় ।টকটকে লাল আর সবুজের মিক্স শাড়িটা আয়নার সামনে দাড়িয়ে গায়ের উপর দিয়ে সিউর হয়ে নেয় ভালো লাগবে নাকি । মনে হাজারো ভয় । শাড়ি নিয়ে মমতার রুমে গিয়ে হাজির । মমতার সামনে গিয়ে বলে –ছোট মাম্মা কি করছো ?
–ফেসবুকিং উইথ তোর ছোট মামা ।
–আমাকে শাড়ি পড়া শিখাবে ?
মমতা ফোন থেকে চোখ তুলে দেখে লাবিবা শাড়ি হাতে দাড়িয়ে । শাড়ি দেখে মমতা খুশি হয়ে যায় । ফোন রেখে শাড়ি হাতে নিয়ে বলে — তুই কিভাবে জানলি এই শাড়িটা আমি তোকে দিয়েছি ? মলে গিয়েই এই শাড়িটা আমার চোখে পড়েছে । একজন তো নিয়েই চলে যাচ্ছিলো কেড়ে কুড়ে নিয়ে আসছি বলতে গেলে । দাড়া এইখানে শিখিয়ে দিচ্ছি ।
লাবিবা সুন্দর করে হাসি দেয় । সেতো জানতোই না এটা মমতা দিয়েছে । শাড়ি দেখেই খুশি হয়ে গেছে । উফ.. লাভলি😍।
মমতা লাবিবাকে হাতে ধরিয়ে ধরিয়ে শিখিয়েও দেয় পড়িয়েও দেয় । আচলটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে সামনে বসিয়ে চুলে চিরুনি করে সব গুলো চুল নিয়ে উপরে লুজ দিয়ে পিঠে খোপা করে দেয় । সকালের তোলা বাগানের কিছু টাটকা লাল গোলাপ মালার মতো করে খোপায় পেচিয়ে দেয় । চোখে মোটা করে কাজল পরিয়ে দেয় । লিপিস্টিক নিয়ে লাবিবার হাতে দেয় । লাবিবা নিজেই ঠোটে লিপিস্টিক পড়ে । মমমতা গাল দুটো ধরে বলে –মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর আমাদের মেয়েটা । লাবিবা মিস্টি হেসে বলে –আমি নিচে মমের কাছে যাচ্ছি তুমি আসো ।
লাবিবা কিচেনে গিয়ে সোহানার পাশে দাড়াতেই সোহানা তাকায় । লাবিবাকে আপাদমস্তক দেখে মুচকি হাসি দেয় । হাতে পিঠার বাটি দিয়ে বলে
— গাউনগুলো সরানোর ব্যবস্থা করে শাড়ি দিয়ে আলমারি ভর্তি করার ব্যবস্থা করছি । আর যেনো শাড়ি ছাড়া না দেখি ।
–মম এটা ঝামেলা লাগে । কিরকম সাপের মতো পেচিয়ে রাখতে হয় সব সময় ।
–পড়তে পড়তে অভ্যাস হয়ে যাবে । শাড়ি পড়ে সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াবে কতো সুন্দর লাগবে । আমাদের ও চোখ জুড়াবে । তানভীরকে বলছি দারাও এবার থেকে শাড়িই পড়াবে তোমায় ।
লাবিবা ঠোট ভেঙে দিয়ে সোহানার দিকে তাকাতেই সোহানা বুকে জড়িয়ে নেয় । মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে –অভ্যাস হয়ে যাবে তো আম্মুটা । সুন্দর করে বউ সেজে থাকবে সব সময় দেখেই মন জুড়িয়ে যাবে । তোমার পাপার সাথে ছোট পাপার সাথে ছোট মমের সাথে গিয়ে কথা বলবে হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিবে কতো ভালোবাসবে ওরা তোমাকে দেখে নিও । বলবে এইতো আমাদের বউমা । তুমি যদি গাউন পড়ে থাকো তাহলে দেখবে তোমাকে দেখে ওদের তেমন ফিলিংস আসবেনা যেমনটা এখন আসবে । বাড়ির মেয়েদের থেকে বউমাদের আদর বেশি হয় সেটা জানো তো ?আর আমি যতদূর জানি তানভীর তোমাকে শাড়িই পড়তে বলবে সব সময় । আগে আমার সাথে সবসময় শপিং এ যেতো । আমার যতো শাড়ী কিনতাম সব ও চয়েজ করে দিতো । তোমার পাপা তো আমাকে দেখার আগে শাড়ি দেখে বলতো ছেলে পছন্দ করেছে তাই না ? ছেলেও বলতো মম তোমাকে শাড়িতে সুন্দর লাগে । এখন আর বলে না । এখন তো তোকে বলবে । বুজলে ?
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে জানান দেয় ।সোহানা লাবিবাকে ছেড়ে কাজে নেমে পড়ে । লাবিবাও হেল্প করে ।
ঠিক ঠাক লাঞ্চ টাইমে তানভীর এসে পৌছায় । সাথে একজন মহিলা দুজন পুরুষ । একজনকে তো দেখেই লাবিবা চিনে ফেলে । এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে বলে
— আরে মুইন ভাই যে । কেমন আছেন ?
–অনেক ভালো । তুমি নাকি ডেইলি একটা করে ইনজেকশন দিচ্ছো শুনলাম । কেউ ভালুপাসেনা আহারে ….।
— মজা করবেন না । এতোটাও ব্যথা পাওয়া যায় না যতটা ভয় পাই । ডেইলি দিচ্ছি এখন আর ভয় লাগে না । পিপড়া কামড়ের মতো লাগে ।
–বাহ । বিয়ে হয়ে ভয় আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাচ্ছে দেখছি। সুবহান আল্লাহ।
লাবিবা আর কথা না বলে মুইনের আম্মুর কাজে যায় । সবাই খাতির যত্ম করে মুইনের বাবা মা আর মুইনকে । তানভীর এসেই রুমে চলে গেছে । সোহানা এসেই লাবিবাকে চোখের ইশারায় উপরে যেতে বলে । লাবিবা রুমের সামনে দাড়াতেই তানভীরের সাথে ধাক্কা খায় । দুজনেই ব্যালেন্স ঠিক রেখে দাড়িয়ে পড়ে । তানভীর মাত্র সাওয়ার নিয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে । ভেজা চুল গুলো সামনে এসে লেপ্টে আছে । লাবিবা হাত দিয়ে ঝেকে ঠিক করে দেয় । তানভীর দুই পকেটে হাত গুজে ঠোট বাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে নিচে চলে আসে । লাবিবার বুকে আবার ভয় জেগে উঠে । কিছু তো বলতে পারতো । একবার জড়িয়ে ধরলে কি হয়? ভাব দেখিয়ে চলে গেলো । আমি কি দোষ করেছি নাকি? পিছু পিছু সেও নেমে আসে । ডাইনিং এ খাওয়া গল্প দুটোই জমে উঠেছে । মুইনের বাবা বলছে –ছেলের বিয়ে টা দিয়েই অআবার ব্যাক করবো । রাজিব ও আসছে আগামীকাল । দেখি আনিসুর কে মানানো যায় কিনা ।
মুইন বলে উঠে –টেনশন নিও না বাবা । আংকেল শুধু জানে মুইনের কাছে বিয়ে দিবে না মেয়েকে । কিন্তু মুইন নাম টা ছাড়া আপাদত কিছুই জানেনা । আমার ভালো না ফাহাদ রহমান ই বলবে ওদেরকে । আরেঞ্জ ম্যারিজ এর মতো ব্যপার টা ঘটবে ।
তানভীর বলে –বাকি টা আমি আর রাজিব ই ম্যানেজ করে নিবো । আংকেল ওসব নিয়ে ভাববেন না ।
–ভাবি কি আর সাধে বাবা ? আনিসুরের মেয়ের সাথে বিয়ে না হলে যে আমার রাজপুত্তুর চিরকুমার হয়ে নির্বাসনে যাবে ঘোষনা দিয়ে দিয়েছে । তখন এই রাজ্যের হাল কে বইবে বলো …রাজপুত্তুর তো আমার একজন ই ।
মুইন নিচের দিক হয়ে হাসছে । তানভীর বলে –তাও ঠিক আংকেল । আজ আমাদের বাসায় থেকেই যান আংকেল ।পাপা আসুক পাপার সাথে কথা বলে যান ।
–তোমার পাপা ব্যস্ত মানুষ । অন্যদিন এসে অবশ্যই দেখা করে যাবো । আমাদের দেশের একজন সম্মানীয় ব্যক্তি উনি । দেশের কাজে কতোইনা শ্রম দিচ্ছেন উনি । তুমার লাঞ্চ অফার টা মিস করতে মন চায়নি তাই আসা । কাছেই তো বাসা যতোদিন আছি আমাদের বাসায় যাবে ।
–তাতো অবশ্য ই আংকেল । বিয়েতে ঘটকালি করছি আমাকে তো যেতেই হবে ।
খাওয়া শেষে মুইনরা চলে যায় । তানিয়া দৌড়ে এসে গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলে –ফাইনালি তুমি এসেছো ভাইয়া । আমি তো ঘুমুচ্ছিলাম তাই জানতেই পারিনি তুমি এসেছো । যা গেলো এই কয়দিন । এর পর তো আবার এমন হবে ।
–এর পর থেকে যেখানে যাবো বউ নিয়েই যাবো । শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। বিড়ালটার কি করেছিস?
–মুন্ডু কেটে রেখে দিয়েছি তোমার জন্য। তুমি কি এখন দেখবে ? তাহলে চলো ।
–এনিমিকে দেখতে চাই না । আপাদত অনেক টায়ার্ড ঘুমোবো ।
লাবিবার দিকে তাকিয়ে বলে –বিছানা রেড়ি করো যাও । ঘুমোবো আমি ।
লাবিবা থ দাড়িয়ে থাকে । ঘুমোনোর জন্য কি বিছানা রেড়ি করতে হয়? স্যার কি বাচ্চা ? সোহানার চোখের ইশারায় টপাটপ চলে আসে রুমে । বিছানার দিকে তাকিয়ে থাকে । এগিয়ে এসে আবার ঝাড়ু দেয় । তারপর বালিশ ঠিক ঠাক রাখে । বিছানার উপরে উঠে দাড়িয়ে দেখে ঠিক ঠাক আছে কি না । তখনি তানভীর রুমে আসে । লাবিবাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে –এতো সেজেছো কেনো ? সুন্দর লাগছে তো ।
–আপনার জন্য ।
ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আনে ।
–ব্যথা পেয়েছিলে বেশি ? দেখি কোথায় কামড় দিয়েছে ?
লাবিবা শাড়িটা একটু উপরে তুলে পা এগিয়ে দেয় । তানভীর একহাতে পা মুঠি করে ধরে আচড়ের দাগটা দেখে । হেচকা টান দিয়ে লাবিবাকে বিছানায় ফেলে দেয় । লাবিবা আআ… করে চিল্লিয়ে উঠে । ফ্রমের বিছানায় ব্যথা পাবে না মাথায় আসতেই চুপ হয়ে যায়। তানভীর আরেকহাতে শাড়ি আরো উপরে তুলে দেয় । আচড়ের দাগে ঠোটের স্পর্শ দিতেই কেপে উঠে লাবিবা । বিছানার চাদর ঘামচে ধরে । পুরো পায়ে ঠোট বুলাতে থাকে তানভীর । পকেট থেকে প্রসার সুন্দর স্টোনের এঙ্কলেট বের করে লাবিবার দু পায়ে পড়িয়ে দেয় । এঙ্কলেট সহ দু পায়ে চুমু দিয়ে উপরের দিক উঠে যায় । লাবিবা হাত দুটো চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে প্যাকেট থেকে কাচের লাল সবুজ চুড়ি বের করে পরিয়ে দেয় । হাত ছেড়ে গলায় মুখ গুজে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ে তানভীরের দুষ্টুমির ছোয়ায় কাপতে কাপতে দু হাত ভর্তি চুড়ি নিয়ে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে ঝুন ঝুন শব্দে হাসতে থাকে । –হুয়াট এ কু এক্সিডেন্ট! আপনি কি করে জানলেন আমি লাল সবুজ শাড়ি পড়বো ? –জানিনিতো। দেখেছি। সব কালারের চুড়ি এনেছি তোমার জন্য । এখন শুধু লাল সবুজ পড়ালাম শাড়ির সাথে মেচ করে।
তানভীর কিছুক্ষন সেই হাসি উপভোগ করে । তারপর হাত ধরে একটা চুড়ি খুলতেই লাবিবা আটকে দিয়ে বলে –খুলছেন কেনো ? সুন্দর লাগছে তো ।
— পরে পড়ে নিও হুম ?? এখন না খুললে দেখবে সব গুলো ভেঙে তোমার হাত নয়তো আমার পিঠ কেটে যাবে । এমনিতেই তোমার নখ বড় হয়ে গেছে দেখছি । আমার পিঠের বারোটা বাজতে যাচ্ছে ।
লাবিবা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে । গাল দুটো লাল হয়ে যায় । লোভ সামলানোর প্রশ্নই উঠে না ভেবেই তানভীর কামড় বসিয়ে দেয় ।
To be continue _____