একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭+৪৮

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪৫+৪৬+৪৭+৪৮

🍁

হটাৎ করেই সাবিনা ফোন করে বাসায় যেতে বলে লাবিবাকে । আর মাত্র একটা পরিক্ষা আছে তার পর তো বাসাতেই চলে যাবে হুট হাট এতো আর্জেন্ট বলার কারনটা কি ? ব্যাগ গুছিয়ে রাখতেই আবার ফোন । কানে ধরেই রাগের সাথে বলে –ব্যপার টা কি আম্মুনি? শেষ পরিক্ষাটাও ভালোভাবে দিতে দিবে না তাইতো ? এইবার ইমপ্রোভ খাইলে তোমার দোষ।
–আরে কাল সকালেই তো চলে যাবি এতো চেতাচেতি করিস কেনো ?
–তাহলে আমি এতো বড় ব্যাগ কেনো গোছালাম?
–গুছিয়েছিস যখন নিয়ে আয় । তিন দিন পর তো চলেই আসবি । তখন আর কষ্ট করে বেশি ব্যাগ আনতে হবেনা ।
–অকা বাই । কামিং সুন ।
বাসায় ঢুকতেই বড় সড় একটা সক খায় । অনেক মানুষে বাসা ভরপুর। বিনা মুক্তাও চলে এসেছে । লাবিবা এগিয়ে গিয়ে নাবিন জেমি দুই ভাইবোনকে চকলেট দেয় । মুক্তা মুখে মিস্টি পুরে দিয়ে এগিয়ে এসে লাবিবার মাথায় গাট্টা মেরে বলে –কবে যে বড় হলি বুঝতেই পারলাম না । এখন আর এখানে এসে তোকে পাবো না বড্ড মিস করবো রে।
–কেনো ? একথা কেনো ? আজ কি আমার বিয়ে নাকি যে চলে যাবো আর পাবে না ।
–নাতো আজ তোর পাকা দেখা । পরিক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই তোর বিয়ে ।
বিনা এসেই লাবিবাকে টেনে রুমে নিয়ে যায় । সামনে একটার পর আরেকটা শাড়ি ধরে দেখতে থাকে কোনটাতে ভালো লাগে ।ফাইনালি শাড়ি চুজ হলে পড়াতে থাকে । লাবিবা কুচি ধরে বলে –আপু আমাকে তো সবাই আগে দেখেছেই । আবার কেনো দেখতে হবে ? আমি করবোনা বিয়ে এখনি । বড় হয়ে করবো ।
–তোর বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে সেই ছোটবেলায় । এখন শুধু অনুষ্টান করে তুলে দেওয়া ।
— ও আমার আল্লাহ সবাই এক কথাই কেনো বলে ? আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে অথচ আমিই জানলাম না ।
শাড়ি পড়িয়ে সাজাতে বসে । এরি মধ্যে খবর আসে মন্ত্রীসাহেবরা চলে আসছে । বিনা এবার তাড়াতাড়ি সাজানো শুরু করে । এদিকে লাবিবার কান্না আসছে । বিয়ে করবেনা এখুনি । সবাইকে জানাতেই হবে ও এখন বিয়ে করবেনা । সাজানো শেষে বিনা ছোট্ট করে কপালে চুমু দেয় । –মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর লাগছে । এবার তুইও আমার মতো পরের বাড়ির বউ হয়ে যাবি । দু বোন একসাথে বেড়াতে আসবো ।
বিনা চলে যায় । লাবিবা কোন কথা বলে না । এদিকে ডিজাইনার শাড়ি পড়ানো হয়েছে উল্টো ভাবে । সামলাতেও এক পালা গান । আয়নার সামনে হেটে হেটে দেখছে হাটতে পারে নাকি । এইসব ভেজাল কেন্ডি শাড়ি একটুও পড়বেনা বিয়ের পর । মানুষ কিভাবে যে সাপের মতো পেচিয়ে পড়ে থাকে ভাবাগো ভাবা ভাবা যায় এগ্লা?
খান বাড়ির সকলেই এসেছে । সাথে অনেক গুলো গিফ্টের প্যাকেট । মন্ত্রী সাহেবের আপ্পায়নে ত্রুটি রাখেনি ইসমাইল । একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা যা আছে সব তো মেয়ের ই । সবাই বসে গল্প করছে ইসমাইল মুক্তা বিনার সাথে । সাবিনা সখিনা রান্নাঘরে ব্যস্ত। জেমিকে কোলে বসিয়ে আদর করছে মমতা । তানিয়া সেলফি নেওয়াতে ব্যস্ত। ফিরোজ এবার বললো –ইসমাইল এবার আমার ঘরের লক্ষীকে একবার ডাকো । সেই কবে দেখেছিলাম ভুলেই গেছি প্রায় । ইসমাইল লাবিবাকে আনতে বলে বিনাকে । সামনে টি টেবিলে নাস্তাও এসে গেছে । হরেক রকম পিঠা , পায়েস, চাইনিজ আইটেম , জুস,ফ্রুটস, চিপস আরো অনেক কিছু । সবাই একটু একটু করে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে । লাবিবাকে নিয়ে বিনা ড্রয়িংরুমে আসতেই তানিয়া চিৎকার উঠে ” ওয়াও মাই ভাবি ইজ সো সো সো সো মাচ বিউটিফুল। উম্মাহহহহ…😘”।
তানিয়ার পাগলামি দেখে হেসে ফেলে লাবিবা। সেই হাসিতে সদ্য দরজায় পা রাখা দইয়ের হাড়ি নিয়ে আসা তানভীরের হাত থেকে হাড়ি পড়ে যায় । হাড়ির দিকে খেয়াল নেই তার খেয়াল লাবিবার হাসির দিকে হা করে তাকিয়ে । এই দৃশ্য দেখে সবাই শব্দ করে হেসে ফেলে । বেচারা তানভীর লজ্জা পেয়ে যায় । কিন্তু মেয়ে হয়ে লাবিবার লজ্জার কোন খবর ই নেই । একদৌড়ে তানভীরের কাছে গিয়ে হাত ধরে টেনে তানভীরকে সরিয়ে দাড় করিয়ে বসে পড়ে উবু হয়ে ।
— এ মা ছি ছি পায়ে তো দই পড়ে জুতো নষ্ট হয়ে গেলো । জেমি একটু পানি আন না ..আচ্ছা পানি আনতে হবে না । স্যার আপনি জুতো খুলুন এমনিতেই খুলতেই হবে এখন । তানভীর জুতো খুলে দিতেই লাবিবা জুতো নিয়ে বাথরুমে চলে যায় । ময়নার মা দরজা পরিষ্কার করে ফেলে । তানভীর ভিতরে ঢুকতেই আবার সবাই এক বার হেসে নেয় । তানভীর নিজেও মুখ টিপে হাসছে । লাবিবা জুতো এনে বাইরে রেখে আসে । লাবিবাকে ইশারায় ডেকে ফিরোজ বলে –এবার আমার কাছে এসে বসতো মা । তোর মতো লক্ষী পেয়ে আমি ধন্য মা । আমার তানভীরকে নিয়ে সোহানার আর কোন চিন্তায় থাকলো না কি বলো সোহানা ?
সোহানা উঠে এসে লাবিবার হাতে নিজের হাতের বালা পড়িয়ে দিতে দিতে বলে –সে আর বলতে..আমার ছেলের খেয়াল রাখতে পারবে জন্যই তো আমি আগেই ছেলে বউ হিসেবে মেনে নিয়েছি । ফিরোজের পাশে বসিয়ে ফিরোজ অনেক কথা বলে লাবিবার সাথে । কথার মাঝে যখন ফিরোজ বলে –পাচ ছয়দিন পর আমার বাড়িতে চলে আসবে তুমি । আমার মা যাবে আমার বাসায় । এদিক ওদিক তাকিয়ে লাবিবা বলে –আমি এখনি বিয়ে করবোনা । অনার্সটা শেষ হোক প্লিজ ।
তানভীর বা ইসমাইলকে বলতো কথাটা মেনে নেওয়া যেতো যে ছেলেমানুষী করছে । কিন্তু ফিরোজের সামনে বলবে এটা কেমন বেয়াদবি ! সবাই কে কি এক মনে করে নাকি ? ফিরোজ সহ সবাই অবাক হয় এই মুহুর্তে এমন ধাচের কথায় । ইসমাইল সাবিনা তানভীর রাগে লাল হয়ে গেছে । তানভীর উঠে দাড়িয়ে বলে –সমস্যা কি ?
— আর একটু বড় হই তারপর ।
–তুমি বড় হতে হতে যে আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি সেই খেয়াল আছে ? দাদার বয়সে বাবা হবো আমি ?
–আমি সেইটা বলিনি । আসলে …
— আসলে কি ? ফাজলামি পেয়েছো ? ওকে বাস তোমাকে বিয়ে করতে হবে না । আমি অন্যকাউকে বিয়ে করে নিচ্ছি । তুমি এক বছর পর একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নিও । না পারলে আমাকে বলো আমি খুজে দিবো ।
টেবিলে লাথি দিয়ে বেড়িয়ে যায় তানভীর । লাবিবা কান্না শুরু করে দেয় । ফিরোজ লাবিবাকে শান্তনা দিয়ে বলে –আহা আমার মা টা কাদে না । তুমিতো মজা করছো আমরা জানি কিন্তু ছেলেটা মজা না বুঝে চলে গেলো । কথায় কথায় রাগ করে জানোইতো কতো জিদ ওর । বিয়ে পচিশ তারিখেই হবে ।
লাবিবা কেদেই চলেছে । তার কান্নার কারন হলো অন্যকাউকে কেনো বিয়ে করতে চাইবে ..।
________________
পরিক্ষা শেষ আজ । মুক্ত হাওয়া খেতে খেতে হোস্টেলে গিয়েই মনটা খারাপ হয়ে যায় লাবিবার । হোস্টেলের একটা কাজে স্বয়ং প্রিন্সিপাল এসেছে । অফিস রুমে দাড়িয়ে মেডামের সাথে কথা বলছে । লাবিবা গিয়ে সাথেই দাড়িয়ে ছিলো কিন্তু লাবিবাকে কিছু না বলেই তানভীর চলে যায় ।রাতে ডিনারের পর উশখুশ করতে থাকে লাবিবা । সত্যিই কি তাহলে ভুল বুঝলো তানভীর ? বিয়ে করবেনা আর তাকে ? বাড়িতে তো আয়োজন ঠিক ই করা হচ্ছে । এবার যদি বলে দেয় সে অন্য আরেকজন কে বিয়ে করবে রাগ করে ? তখন কি হপ্পে?😥 বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । রাত এগারোটার দিকে এক সপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় । সপ্নটা অনেকদিন থেকেই দেখে । তানভীরকে সাথে নিয়ে সপ্নটা পূরন করতে চায় । তার জন্য ই হয়তো সপ্ন গুলো পূরন করতে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইছে তানভীর । জানালার গ্রীল ধরে চুপ চাপ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে । হটাৎ ই এক বুদ্ধি আসে মাথায় । শারমিনকে মেসেজ দিতেই শারমিন চলে আসে । শারমিনকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়েই হাত ধরে টেনে নিচে নামায় । বাম দিকের নিচু দেয়ালের দিকে যেখানে বসার বেঞ্চি রয়েছে সেই দিকে যায় । শারমিন অবাক হয়ে বলে –এতো রাতে এখানে কেনো নিয়ে এলি কুত্তি ? ময়নুল মামা দেখলে চুর বলে আচ্ছা পেটানি দিবে ।
–চল বাইরে যাবো দোস্ত।
–মানে কি ?
— কাল চলে গেলে আবার দুই তিন মাস পর আসা হবে । চিন্তা করে দেখ একবার ..জীবনে আর কি আছে যদি ইনজয় না করতে পারিস । এখন এই দেয়াল টপকাবো আর সারারাত বাইরে ঘুরে বেড়াবো ।
–পাগল নাকি আমি যাবো না ।
–তুই না গেলেও আমি যাবো । দেয়াল টপকানো দেখেছিস কখনো?
–না দেখিনি ।
–দেখ তাহলে এইভাবে দেয়াল টপকাতে হয় । বলেই লাবিবা বেঞ্চিতে উঠে দেয়ালে পা দিয়ে দেয় এক লাফ । শারমিন চেচিয়ে উঠে দুই হাতে মুখ চেপে ধরে ।
–দোস্ত কই যাবি তুই একা একা ? বিপদ হবে তো ।
–রাস্তায় পার্টি করবো । একা । ভিতরটা সামলে নিস। বাই বাই ।
লাবিবা রাস্তায় চলে যায় । এদিকে শারমিনের কান্না চলে আসে টেনশনে টেনশনে ।

রাস্তার একপাশ ধরে হাটছে লাবিবা । একা সব শুনশান ঠান্ডা বাতাশ সব মিলে রোমাঞ্চকর পরিবেশ । ইশ যদি এখানো কোন গাছে জিন থাকতো একটু দেখতে পারতাম । লোকজনের জালায় ভুত গুলো কোথায় যে চলে গেছে আহারে ..। সামনে কোন জানি পুজো আছে । এই এলাকায় হিন্দু বেশি তাই চারিদিক লাইটিং করা । উফফ আলো ফুল.. জাস্ট অস্থির কিন্তু ব্লাক রোজের থেকে নয় । সামনে একটা ছায়া দেখতে পায় । না দাড়িয়ে হাটতে থাকে । সাথে ছায়াটাও । লাবিবা গলা বাড়িয়ে বলে –জানিতো একটা ডলফিনের মতো লোক আমাকে একা একা হাটতেও দিবে না । নিশ্চয় আমার দোস্তের ফোন পেয়ে আমার পিছু পিছু হাটছে ।
— পাগলের ডাক্তার কখনো পাগলকে পাগলামী করতে সাহায্য করে না । বরং পাগলামী কমাতে সাহায্য করে ।
–আমার অসস্তি হচ্ছে । পাশে দেখতে চাই ।
–পাশেই তো হাটতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা এখন ।
–খবরদার অন্যকারো কথা বলবেন না ।
তিন পা পিছিয়ে এসে হাটতে লাগলো ।
এখন দুজন একসাথে পা ফেলছে । লাবিবা চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলে
— অনেক বছর থেকে একটা সপ্ন দেখি জানেন …..
একটা ফেয়ারি আর একটা ডেভিল । ফেয়ারিটা এরকম আলো ফুলের নিচে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বেড়ায় একা একা । একদিন সে একটা ডেভিলের দেখা পায় । ডেভিল টা ফেয়ারি কে আর কখনো একা একা মুগ্ধতা ছড়িয়ে বেড়াতে দেয় না । সেই মুগ্ধতা মুঠি করে নিয়ে নিজের মাঝে নিয়ে নেয় আর পাশাপাশি সব সময় থাকে ।
–তার জন্য বুঝি আমাকে নিয়ে এসেছো এই রকম টেকনিক করে ।
–আপনি কি ডেভিল নাকি ? অন্যকাউকে না বিয়ে করবেন ?
তানভীর পকেট থেকে হাত বের করে একটানে পাজা কোলে তুলে নিয়ে হাটতে থাকে । লাবিবা দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরে । কলেজ পুকুরের সিড়িতে এসে নামায় । পানিতে পা ঝুলিয়ে বসে লাবিবা । তানভীর লাবিবার গা ঘেসে সিড়িতে বসে । পানিতে পা দিতেই আবার তুলে ফেলে ।
–এতো ঠান্ডা পানিতে কিভাবে পা ভিজিয়ে আছো বলোতো ?
–যাতে আপনিও পা রাখেন । আর এই ঠান্ডা পা দিয়ে শিরশির করে আপনার মাথায় উঠে আপনার রাগের আগুনের তাপ কমিয়ে দিবে ।
পা ধরে পানি থেকে তুলে নিজের দু পায়ের মাঝে নিয়ে নেয় । সিড়ি থেকে তুলে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় । ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে থুতনি রাখে ।
–এবার চটপট করে বলোতো কি হয়েছে ?
লাবিবা চুপ ।
–দুষ্টু পুতুল বলো কি হয়েছে ? বড় হয়ে নি মানে কি ? তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো ।
লাবিবা চুপ ।
তানভীর উত্তর না পেয়ে শারমিনকে কল দেয় । শারমিন কল রিসিভ করেই বলে — স্যার পেয়েছেন এলিজাকে ?
— হা পেয়েছি ।এবার বলোতো লাবিবা কেনো বিয়ে করতে চাইছেনা এখন ?
— বিয়ে কেনো করতে চাইবেনা ? ওই তো বিয়ে করার জন্য লাফাতো । আমাকে কত কি জিজ্জাসা করে জেনে নিতো আর এখন বলছে বিয়ে করবে না ।
— বাই এনি চান্স শারমিন তুমি কোন ভয় টয় দেখাওনিতো ?
শুনেই শারমিন বিষম খায়। কাশতে কাশতে কথাই বলতে পারে না ।
— শারমিন পানি খাও রাখছি । কেসটা কি আর অজানা নয় আমার ।
লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে । ঘুরিয়ে বসিয়ে বুকের সাথে পিঠ লাগিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ।
— দুষ্টু পুতুল ..
— হুম ।
— দেখো ঐ চাদ তোমার আমার আর তুমি আমার । অনেক ভালুপাসি ।
— সত্যি ?
— হাজার বার । আর আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । পৃথিবীতে তোমার সবথেকে আপন বাবা মা । তারপর হাজবেন্ড। বিয়েটা হক দেখবে কোন ভয় থাকবেনা । আমার ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবো তোমায় কখনো আঘাত দিবো না । প্রমিজ ।
–একটা জিনিস চাইবো দিবেন ?
— আমার সব তোমার ।
–#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপে আমার দুহাত ভরিয়ে দিবেন ?
— উহু কালো গোলাপে তুমাকে পুরোটাই ভরিয়ে দিবো আমি । ঢুবে থাকবে তুমি ।
— আপনাকে সাথে নিয়ে ঢুবতে চাই । এক হয়ে ঢুবতেই চাই ।
— হা হা হা তুমি কি ভেবেছো আমি ছাড়াই তোমাকে ঢুবতে দিবো ? আলাদা হওয়ার কথাও ভেবো না।
লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় লাবিবা । বুকের মাঝে মিশিয়ে নিয়ে পুকুরের জলে ঢেউ খেলানো চাদে চোখ রাখে তানভীর ।

To be continue___

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪৬

🍁
সকাল বেলা বাসার উদ্দ্যেশে রওনা দিয়ে দুপুরে পৌছে যায় । নিজের বাসার সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে পড়ে । কতো রকমের ডেকোরাশন দিয়ে যে ডেকোরাটেড করা হচ্ছে..একটু পর তো বোঝায় যাবে না এটা লাবিবার বাসা । বিয়ে হলে নাকি বাবার বাড়িই পরের বাড়ি হয়ে যায় আর পরের বাড়ি নিজের বাড়ি হয়ে যায় । আমারো কি তাই হবে ? একদমি তা না । আমার বাবার বাড়ি তো আমারি । আমার তো আর কোন ভাই বোন নেই যে তাদের দিয়ে আমি চলে যাবো । এটাও আমার ওটাও আমার । আমার শ্বশুর আব্বুর নাকি আরো চারটা বাড়ি আছে ঐগুলো তো আমারি হবে । উফফ লাভলিই..। ইসমাইল মেয়েকে বাসার সামনে দাড়িয়ে একা একাই হাসতে দেখে এগিয়ে আসে । লাবিবা দৌড়ে ইসমাইলের কাছে যায় ।
–একা একা হাসছে কেনো আমার মা টা?
— আব্বু জানো আমার এখন ছয়টা বাড়ি । আগে তো এই বাড়িই ছিলো শুধু । এখন এই বাড়িটাও আমার দাদা শ্বশুরের বানানো খান বাড়িও আমার । শ্বশুর বাবার বানানো চারটা বাড়িও আমার । মোট ছয়টা বাড়ি । স্যার যদি ফ্ল্যাট কিনে ফিউচারে সেটাও তো আমারি হবে ।
আনন্দে চোখে জল চলে আসে ইসমাইলের । লাবিবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । কপালে চুমু দিয়ে বলে –চাদ কপাল নিয়ে আমার ঘরে জন্মেছিস রে মা । সামান্য চ্যেয়ারম্যানের মেয়েকে মন্ত্রীর ছেলে বিয়ে করছে চারটা খানি কথা এটা! অনেক সুখী হ মা । আমার কাছেই থাকবি সারাজীবন । দুরে তো বিয়ে হচ্ছে না । বাসায় গিয়ে রেস্ট নে ।
বাসায় আসতেই নুপুর আখি বিনা কোলে তোলে নেয়।
লাবিবা আআ করে চিৎকার শুরু করে । নুপুর আখি জেমি চিল্লাতে থাকে কনে এসেছে কনে এসেছে বলে । লাবিবা কোন মতে ছাড়া পেয়ে এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে । ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নাঈম বিছানায় বসে পা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে লাবিবার চকলেট বক্স থেকে চকলেট খাচ্ছে । লাবিবা তেড়ে এসে বক্স নিয়ে নিতেই নাঈম কেড়ে নিয়ে বলে –দোস্ত কি চকলেট খাস রে তুই…এত্তো ইয়াম্মি..আগে জানলে তো তোর একটা বক্স ও থাকতো না । লাবিবা হেসে ফেলে । তানভীরের দেওয়া জমানো চকলেট গুলোও বের করে । নুপুর নাঈম জেমি লাবিবা মিলে খায় । নাঈম তানিয়াকে ভিডিও কল করে । তানিয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে আর বলছে –বুঝলে জানু..তুমিও একটু চকলেট খাও না গো। একদম লাবিবার মতো চকলেট হয়ে যাও । আই লাভ চকলেট । লাবিবা রাগ দেখিয়ে বলে
–ঐ কি বলিস রে ?
–এমন করিস কেনো ? আজকেই তো জালাবো তোকে । বিয়ে হয়ে তো চলেই যাবি শশ্বুর বাড়ি ।
–আর আমার শশ্বুর বাড়ি আমাকে জালাতে যাওয়ার লাইন যে আগেই সাফ করে রেখেছো তাতে ?
তানিয়া মুচকি মুচকি হাসছে আর নাইম বত্রিশ পাটি খুলে হাসছে । নুপুরের ফোন বেজে উঠে । ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায় । নাঈম বলে- কিরে! নুপুরিও আবার বারান্দায় যায় কথা বলার জন্য । ব্যপারটা কি ? পেছন পেছন এসে ফোন ছো মেরে নিয়ে বলে –ছেলেটা কে ? নুপুর রাগ দেখিয়ে বলে –নাঈম আমার ফোন দে । লাইনে আছে মনে হয় ।
–আগে বল ছেলেটা কে ? এ হে লাইন কেটে দিয়েছে ।
লাবিবা হাসতে হাসতে বলে –জানু বলে দেই ? নুপুর নিচের দিকে চোখ নামিয়ে লজ্জায় হাসতে থাকে ।
— শোন নাঈম । মুঈন ভাইয়ার কথা মনে আছে ?
–কোন মুঈন ?
–আরে নুপুরির পিছু পিছু যে ঘুরতো । পেটের নুপুর মাথার নুপুর নাকের নুপুর…
–ও মাই গড । ঐ যে চিঠি দিতো আর আর সারা গায়ে নুপুর পরে স্কুলে আসতো ? হা হা হা..
নুপুরকে আর কথা বলতে দেয় না । সারাক্ষন নুপুরের পিছু লেগে নুপুরকে চেতায় মুইন মুইন করে । রাতে শারমিন চলে আসে সাথে নাজমুল ও । কাল গায়ে হলুদ তাই সবাই কাজে ব্যস্ত। বন্ধু দের নিয়ে লাবিবার ভালোই সময় কাটছে । রাতে বারোটার দিকে সবাই ঘুমোতে যায় । চোখে ঘুম লেগে আসছে তখনি ফোন টুন করে বেজে উঠে । হাতে নিয়ে দেখে তানভীর এসএম এস দিয়েছে ।
“সারাদিনের ব্যস্ততায় ফোন দেওয়ার সময় পায় নি । রাগ করো না তার জন্য ।তোমার কথা সবসময় মাথায় ছিলো । গুড নাইট ।”
লাবিবা মাথায় হাত রেগে জিহবায় কামড় দেয় । সেতো ভুলেই গিয়েছিলো ডলফিনের কথা অথচ ডলফিনটাই মনে রেখেছিলো । লাফ দিয়ে বারান্দায় গিয়ে কল দিতেই ওপাশ থেকে রিসিভ করে । ঘুমু ঘুমু ভয়েজে তানভীরের মুখে আই লাভ ইউ শুনে কেপে উঠে শশরীরে । লাবিবার কোন আওয়াজ না পেয়ে তানভীর আবার বলে — দুষ্টু পুতুল.. একটু ভিডিও কলে আসবে এক্ষুনী । জাস্ট একবার দেখবো খুব ইচ্ছা করছে । লাবিবা হু বলতেই ফোন কেটে ভিডিও কল করে । লাবিবা অপ্রস্তুত হাতে রিসিভ করে । তানভীরকে দেখেই লাবিবা মাথা নিচু করে ফেলে । কি বজ্জাত ছেলে ..উদাম শরীরের ভিডিও কল করে নাকি কেউ ! আগে না হয় হা করে দেখতাম এখন তো লজ্জা করছে প্রচুর । এদিকে এলোমেলো চুলে এশ কালার গেঞ্জিতে এতো স্মিগ্ধ লাগছে যে তানভীর চোখ সরাতে পারছে না । নিশ্বব্দে দেখে যাচ্ছে । লাবিবাই বলে উঠে –দেখা শেষ এবার রাখি ।
–পুতুল বউ একটু আসি ?
— কোথায় ?
— তোমার কাছে । বারান্দায় থাকো । যেতে যতটুকু টাইম লাগে ।
–না আসবেন না । আপনি অনেক ক্লান্ত । এবার ঘুমোন । গুডু গুডু নাইট ।
বলেই ফোন কেটে দেয় । বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
_________
পরদিন দুপুরে পার্লার থেকে তিন জন মেয়ে আসে । এসেই লাবিবাকে সামনে বসিয়ে ঠাট্টা মসকরা করতে থাকে । একেকটা দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে হাসাহাসি করছে আর লাবিবা লজ্জায় মরে যাই যাই অবস্থা । সাজানোর পালা আসলে কনের আগে কনের বান্ধুবীদের সাজানো হয় আগে ।তাদের দেখে সবাই বলবে তাদের ই গায়ে হলুদ আজ । সালমা নামের মেয়েটি লাবিবাকে সাজাতে আসে এবার । লাবিবা বিছানা থেকে বিনার রেখে যাওয়া প্যাকেট গুলো হাতে নেয় । বড় প্যাকেট থেকে টকটকে হলুদ রংয়ের লেহেংগাটা বের করে চোখ ধাধিয়ে যায় । টিস্যু নেট কাপড়ে সিকুয়েন্সের কাজের উপর স্টোন বসানো মাঝে মাঝে আবার জরির ও কাজ । হাতে তুলে দেখে গর্জিয়াসের তুলনায় অনেক হালকা । সালমা মিস্টি হেসে বলে –বাহহ অনেক সুন্দর চয়েজ তো আমাদের প্রিন্সিপাল সাহেবের । আয়েশা নাদিয়া নুপুরদের সাজিয়ে ভিতরে আসতে আসতে বলে –নয়তো কি এতো মিস্টি পরীকে চোখে লাগে ? লাবিবা গাল লাল করে বলে –দেখুন আপুরা ..আপনারা কিন্তু আমাকে শুধু শুধু এতো লজ্জা দিচ্ছেন । এটা একদমি ঠিক না ।
আয়েশা হেসে বলে –তাইতো ভারী অন্যায় করছি । সব লজ্জা যদি আমাদের সামনেই পেয়ে যায় তাহলে প্রিন্সিপালের সামনে কি পাবে । সরি গো । লাবিবা আর কথা বাড়ায় না । এরা লজ্জার উপর লজ্জা দিয়েই যাবে । বাই দ্যা রাস্তা আমি এতো লাজুক হলাম কোথা থেকে 🤔। লেহেংগার ফিতা বাধতে বাধতে সালমা বলে –সাজার আর দরকার কি ? এখনি চোখ ফেরানো যাচ্ছে না । লাবিবা খাটের উপর বসে বলে –আপুরা আপনারা কি মেরিড নাকি আনমেরিড ?
সালমা বলে আমি মেরিড আর ওরা আনমেরিড । জানো আমার হলুদের সময় কি হয়েছিল ? আমি তখন নতুন পার্লার দিয়েছি । অনেক মেয়ে আসতো । একটুও সময় পেতাম না । আমিও আসক্ত ছিলাম আমার কাজে। মা তাই বিয়ের জন্য আমাকে আটক করেছিলো । পার্লার বন্ধ করে দিয়েছিলাম । তোমার ভাইয়া একটা মেয়েকে দিয়ে ফোন দিয়ে আসতে বলে আমাকে । আমি তো না করে দিই । তারপর বলে একঘন্টায় কমপপ্লিট হয়ে যাবে ডাবল টাকা দিবে । আমিও ভাবলাম ডাবল টাকা পাবো এখনো অনুষ্টানের দেড়ি আছে মাত্র এক ঘন্টার ই কাজ । তাই লুকিয়ে পার্লারে চলে এলাম । এসে দেখি তোমার ভাই দাড়িয়ে । আমাকে পেছনের গলিতে নিয়ে গিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে বলে আমার বউয়ের প্রথম হলুদ টা আমিই দিলাম । আমার সেকি লজ্জা । কিছু না বলেই চলে এসেছি । এরেঞ্জ ম্যারেজ ছিলো আমাদের তাই হয়তো এমন হয়েছে ।
কথা বলতে বলতে লাবিবার সাজানোও শেষ ।ওরা চলে যেতেই লাবিবা ফোন হাতে নেয় । তানভীরকে কল দিতেই রিসিভ করে । লাবিবা মন খারাপ করে বলে –হ্যালো ।
–হা বলো।
— জানেন একটা পার্লারের আপু কি বললো ?
–কি বললো ?
— আপুর গায়ে হলুদের সময় তার হাজবেন্ড নিজে প্রথম হলুদ লাগিয়েছে । অনেক ভালুপাসে আপুটাকে । আজকাল এমন ভালুপাসা খোজে পাওয়া যায়না তাই না ?
–এর থেকেও বেশি ভালুটাসা খুজে পাওয়া যায় । বাসার পেছনের দরজা খুলো চুপিচুপি আমি দাড়িয়ে আছি ।
লাবিবা লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলে –কিহ? কোথায় ? কিভাবে ?
— দরজা খুলো তারপর বলছি ।
লাবিবা বেরিয়ে দেখে কেউ নেই এদিকে । দরজা খুলতেই তানভীর লাবিবাকে নিয়ে তারাহুরো করে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় । কি থেকে কি হলো এখনো মাথা ঘুরছে লাবিবার । তানভীর দরজায় হেলান দিয়ে তার হলুদ পরীটাকে দেখছে । মারাত্মক সুন্দরের উপর যদি কিছু থাকতো তাহলে তাই বলা যেতো । আপাদতো কিছুই বলতে চাইছে না তানভীর শুধু হলুদ বউ ছাড়া । লাবিবা আগা গোড়া হলুদ তানভীর কে দেখে বলে উঠে –ওমা হলুদ ডলফিন😱 উফফ লাভলি🤩 তানভীর একটানে নিজের কাছে এনে লাবিবার কোমড় জড়িয়ে ধরে । লাবিবার গালে নিজের হলুদ মাখানো গাল ঘসে হলুদ লাগিয়ে দেয় । লাবিবা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয় । হাতের হলুদ গুলো লাবিবার পিঠে লাগাতেই লাবিবা শক্ত করে হলুদ পাঞ্চাবী খামচে জড়িয়ে ধরে । আস্তে আস্তে হাতেও লাগিয়ে দেয় । হাত পা গাল পিঠ হলুদে মাখামাখি হয়ে গেলে তানভীর লাবিবার কানে চুমু দিয়ে বলে –ঐ ভালুপাসার থেকে আমার ভালুপাসা হাজার গুনে বেশি । মিলিয়ে নিও ।
–আপনি এতো ফাস্ট কেনো ?
— আমার বউকে আমার গায়ের হলুদ লাগাবো তাই। আমার গায়ের হলুদ নামে যেগুলো আসছে সেগুলো তো বাটা হলুদ আমার গায়ের তো নয় । এবার ছাড়ো যেতে হবে ।
–আরেকটু থাকুন না । ছাড়তে ইচ্ছা করছে না ।
–ধরা পড়ে যাবো তো ।
–গেলে যাবেন তো কি হয়েছে ?
বারান্দা থেকে ফিস ফিস শব্দ আসছে । লাবিবা তানভীর ভয় পেয়ে যায় । কেউ বারান্দায় আছে। ধরা পড়ে গেলে লজ্জায় পড়ে যেতে হবে । লাবিবা তানভীর কে দাড়াতে বলে গুটি পায়ে বারান্দায় আসে । এসেই শক খায় । হাতের ইশারায় তানভীরকে ডাকতেই তানভীর ও এসে শক । তানিয়া দেয়ালে লেগে দাড়িয়ে আর নাঈম এক হাত দেয়ালে রেখে তানিয়ার মুখোমুখি দাড়িয়ে । দুজনের মুখ হলুদে ভরপুর । এ দৃশ্য দেখে তানভীর আর লুকিয়ে না থেকে সামনে এসে গলা খাকারি দিতেই দুজন দুদিকে ছিটিয়ে যায় । তানভীর গম্ভীর গলায় বলে –আমার তো মনে হচ্ছে আমার আগে তদের ই তাড়া বেশি । বিয়েটা আমার না হয়ে তদের হলে বেশি ভালো হতো । লাবিবা চেচিয়ে বলে উঠে –কিহ এবার কি আপনি আমাদের রেখে ওদের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন ? মানি না মানবোনা । হরতাল হরতাল । বাইরে থেকে চেচানো শুনে লোকজন চলে এসে দেখে বারান্দায় নতুন বর দাড়ানো । তানভীর রাগ চেপে বলে –আস্তে চেচানো কি যায় না ? গলার ভয়েজ সব সময় ফুল ভলিয়মে থাকে তোমার ।
এদিকে নতুন জামাই আসার খবর শুনে ইসমাইল বেলাল মুক্তা চলে আসে । তার পর সিদ্ধান্ত নেয় লাবিবা তানভীরের একসাথে গায়ে হলুদ করাবে । তানিয়া হেসে বলে –ভাইয়া তোর দুইবার হলুদ হবে ভাবীর একবার হি হি ।
দুজনকে বসিয়ে একে একে সবাই হলুদ লাগায় । হলুদ লাগানো শেষে দুজনকেই গোসল করানো হয় । খান বাড়ী থেকেও একসাথে হলুদের কথা শুনে সবাই চলে এসেছে । তানভীর মেজেন্টা কালার শার্ট আর ডেনিম প্যান্ট পড়ে । জামাইয়ের জন্য এনে রাখা ড্রেস বিয়ের পরে না দিয়ে আগেই পড়ানো হয় । লাবিবাকে মেজেন্টা রংয়ের হলুদ পাড়ের শাড়ি পড়ানো হয়েছে । সাথে ফুলের অরনামেন্টস। গোল হয়ে বসে সবাই মেহেন্দি লাগানোর জন্য । যারা মেহেন্দি লাগিয়ে নিয়েছে তারা সংগীতে নাচ করছে । সবাই বসে এই অনুষ্টান ইনজয় করছে । লাবিবাকে মেহেন্দি পড়ানোর সময় হুট হাট তানভীর গিয়ে পাশে বসে পড়ে । সালমা হেসে বলে –কি ব্যপার প্রিন্সিপাল সাহেব আপনিও হাতে মেহেদি লাগাবেন নাকি ? তানভীর হাত থেকে মেহেদিটা নিয়ে বলে –উহু ..লাগিয়ে দিবো, আমার পুতুল বউয়ের হাতে ‌ । সবার মুখ হা হয়ে যায় । তানভীর লাবিবার হাত নিজের উরুর উপর রেখে মনযোগ দিয়ে মেহেন্দি দিতে থাকে । লাবিবা অবাক হয়ে বলে –উফফ লাভলি😍 স্যার. আপনি এতো সুন্দর করে মেহেদি পরাতে পারেন😱।
–শিখেছিলাম তোমাকে পড়াবো বলে । হেপি টারমারিক সিরিমনি পুতুল বউ।অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় । তোমার এই সৌন্দর্য মিস করবোনা বলেই চলে আসছি । যে যা ভাবার ভাবুক । আই ডোন্ট কেয়ার । আমি শুধু তোমাকেই দেখতে চাই । তোমাকে হলুদে কেমন লাগে সেটাই দেখতে চাই। জানো এইটা শুধু মেহেদি পড়ানো নয় । এইটা আমার একটা ইচ্ছা একটু ভালুপাসার বহিপ্রকাশ । লোকে বলে এই মেহেদির রং যতো গাঢ় হবে ততো স্বামী ভালোবাসবে । আর তোমার কি ভাগ্য দেখো মেহেদি স্বামীর হাতেই পড়ছো । আমার জন্য এতোবছর অনেক কষ্ট পেয়েছো দুষ্টু পুতুল । অবুঝ মনে আমার জন্য বাসা বানিয়েছো। দিনের পর দিন চোখের জল ফেলেছো । আমাকে না দেখে না শুনে আরো বেশি ভালোবেসেছো । জানো কবুল বললে মন থেকে টান চলে আসে । আখি রাজিবের বিয়ের দিন খেলার ছলেই তোমার থেকে কবুল বলিয়ে নিয়ে ছিলাম আমি । খেলার ছলে তুমি বললেও আমি মন থেকেই বলেছিলাম । সেদিন রাতে তানিয়ার রুমে আমার বুকে সারারাত ঘুমিয়েছিলে তুমি । আর আমি তাকিয়ে ছিলাম তোমার নিষ্পাপ মুখটির দিকে । সেদিন ঘুমিয়ে ছিলাম তোমার গায়ের তিব্র সুমিষ্ঠ সুগন্ধে। এই সাতটা বছর আমি সেই দিনের কথা ভেবেই অপেক্ষা করে এসেছি । আমার সেই অপেক্ষার অবশান হতে যাচ্ছে দুষ্টু পুতুল । আমি আমার সবটুকু দিয়ে তোমায় ভালোবাসবো । এতোটাই ভালোবাসবো যে সেই চোখের পানি গুলোকে তুমি স্বার্থক ভাববে । ভালুপাসি অনেকমাচ পুতুল বউ।

To be continue_____

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪৭

🍁
তানিয়া নাঈম ভিষন জগড়া করছে তাও আবার খান বাড়ির গেইটে দাড়িয়ে । তানিয়ার পাপা আর বড় পাপা দুতলা থেকে দাড়িয়ে দেখছে । ছেলে মেয়ের ভেজালে যাওয়া উচিত নয় জন্য তানভীরকে ডাক পাঠায় । তানভীর গেইটে এসে দাড়াতেই তানিয়া নাঈম বিচার দিতে দৌড়ে আসে তানভীরের কাছে । তানিয়া তানভীরের হাত ধরে বলে — ভাইয়া নাঈম আমার বি এফ হয়ে কনের বাড়ির লোক কেনো হবে ? এ বাড়ির হবু জামাই সে । বর পক্ষ হয়ে থাকবে তা নয় কনে পক্ষ হয়ে যাবে । ও দুদিন থেকে কনে বাড়িতে কি করছে এখানে না থেকে ।
নাঈম তানভীরের আরেক হাত ধরে বলে –ভাইয়া আপনি বুঝান এই পাগলী টাকে । এ বাড়িতে এসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ? তানিয়া আমার জীবনে আসার আগে লাবিবা আমার জীবনে এসেছে ।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ও ।ওর বাসায় অনেক রাত থেকেছি আমি । আমার ফেমেলিও বিয়েতে কনে পক্ষ হয়ে আছে । আমি কিভাবে এখানে থাকবো ?
তানিয়া রাগ নিয়ে বলে –কেনো থাকতে পারবেনা শুনি ? এ বাড়ির হবু জামাই তুমি । তুমি আলবাদ থাকবে। তোমার বড় শেলকের বিয়েতে তুমি বর পক্ষ হবে । এই নিয়ে আবার দুজনের জগড়া লেগে যায় । তানভীর দুজনকে থামিয়ে বলে –রাস্তায় দাড়িয়ে এসব কি হচ্ছে ? নাঈম হবু জামাই..জামাইতো নয় । বাংলাদেশ এখনো এতো ডিজিটাল হয়ে উঠেনি যে হবু জামাই হবু শশ্বুর বাড়ি এসে থাকবে । বিয়ে বাড়ি অনেকেই আসে থাকে নাঈম থাকলেও কেউ কিছুই ভাববে না । কিন্তু তার একটা আত্মসম্মান আছে তাই ও থাকবেনা ।
তানিয়া মন খারাপ করে বলে –ওও আমার বেলায় যতো যা..ভাবির বেলায় তো হয়নি । ভাবি তো অনেক দিন ই থেকেছে এখানে। তুমি লন্ডনে থাকতেও তো ভাবী এখানে এসে থেকেছে।
–হা থেকেছে কিন্তু সে তোমার ভাবী হবার পর ই থেকেছে হবু ভাবী হয়ে নয় । এখন তুমি যদি নাঈমকে রাখতে চাও তাহলে হয় বিয়ের পর রাখবে নয়তো ভাই হিসেবে রাখবে । নাউ ইউর চয়েজ ।
–কিহহহ ও আমার ভাই হবে কোন সুখে ? আমার তো একটা মাত্র ভাই তুমি আর একটা মাত্র জামাই ও ।
–পাগলামী অনেক করেছিস এখন বাসায় যা । হাতে কি রে তোর?
তানিয়া ব্যাগটা আরো পিছু লুকিয়ে বললো –নাঈম দিয়েছে। আজ পরবো । আমাকে কেমন লাগে পরে দেখতে চায় ।
নাঈম লজ্জা পেয়ে বলে –ভাইয়া আমি তাহলে আসি । বিকালে দেখা হচ্ছে । নাঈম চলে যেতেই তানিয়া এক দৌড়ে বাসার ভিতরে চলে আসে ।
রাজীবের গাড়ি এসে ঢুকে খান বাড়িতে । রাজীব আর রাজন এসেছে । রাজীব এসেই সরি সরি বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে । সবার একটাই অভিযোগ আগে কেনোএলো না । সবাইকে সরি বলতে বলতে নাজেহাল অবস্থা । রাজন রাজিবের পিছু পিছু চুপটি করে ঘুরছে।তানভীর রাজনের পিঠে দু থাপ্পর দিয়ে বলে –এই যে হ্যান্ডসাম । হাউ আর ইউ ? অনেক দিন পর..মনে আছে তো আমাকে ? রাজিব হেসে বলে –তোকে ভুললেও তোর পাঞ্চটা কখনো ভুলেনি । এমন ঐষধ দিয়েছিস আজ পর্যন্ত একটা প্রেম ও করে নি । পাপা মেয়ে ঠিক করেছে ওর জন্য । তার সাথেই একটু আধটু চলে আর কি ।
–বাহহ গুড বয় ।
–হুম । তুই না করেছিলি তাই আসতে চায়নি খুব জোর করে ধরে এনেছি ।
দুজনে হেসে ফেলে । রাজন এখনো লজ্জা পাচ্ছে । সোহানা কফির মগ হাতে এনে বলে –রাজীব তুমি তো ছেলে পক্ষ কিন্তু আখি তো কনে পক্ষ হয়ে গেলো। দুইজন দুই দিকে এটা কেমন ব্যপার বলোতো ?
রাজীব হাতে মগ নিয়ে বলে –ও আন্টি আপনি আখির কথা বলছেন ? ও তো এখন আমার সুন্দরী বেইয়ান । ইনজয় হপ্পে খুব । সোহানা কান মলে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায় ।
লাবিবা বিয়ের লেহেংগা গহনা হাতে নিয়ে লাফাচ্ছে । এসবের জন্য ই তো বিয়ে করতে চেয়েছিলো 😉। সবাই কতো কতো গিফ্ট দিয়ে যাচ্ছে ..উফ লাভলি😍 আই লাভ গিফ্ট। দরজায় একের পর এক নক করেই যাচ্ছে । দরজা খুলে দিতেই সাবিনা সখিনা ঢুকে হাতে খাবার নিয়ে । ব্যপারটা কি বুঝতে পারে না । অনান্য দিন বকেই একবারে খাটের নিচে ঢুকিয়ে দিতো আর আজ কিছুই বললো না । খাটে বসিয়ে সাবিনা একের পর এক লোকমা খাইয়ে দিচ্ছে । সখিনা মাথায় হাত বুলিয়ে আদর দিচ্ছে । মাঝে মাঝে আচল দিয়ে আঢ়ালে মুখ মুঝছে । এতোক্ষন না বুঝলেও এবার লাবিবা ঠিক ই বুঝে নিয়েছে । তার চোখ থেকেও দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে । সাবিনা চোখ মুছিয়ে দিয়ে পানি খাইয়ে চলে যায় । অনেককিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু কিছুই বলতে পারলো না । বাইরে এসে দেখে সবার মুখে হাসি হৈ হুল্লোড় লেগেই আছে শুধু নিজের মানুষ গুলোর ই নেই । তবে মুখ জুড়ে আছে তৃপ্ত ভাব। লাবিবা ইসমাইলের পাশে গিয়ে বসে । বাবার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে অশান্ত তৃপ ভেজা মুখটি । ইসমাইল লাবিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে –আম্মু খেয়েছো ?
–হুম । আচ্ছা আমাকে কি এখনি বিদায় করে দিচ্ছো তোমরা ? সবাই এমন মুখ করে থাকলে আমি কিন্তু কাদবো এখনি পরে বিয়েই করবো না ।
ইসমাইল কিছু বলতে পারে না কথা আটকে আটকে আসছে । না পেরে কেদেই দেয় লাবিবাকে বুকে নিয়ে । বাবা মেয়ের কান্না শুনে অনেকেই দৌড়ে আসে । বেলাল লাবিবাকে আলাদা করে ইসমাইলকে বকতে থাকে এমন করার জন্য অথচো তার দু চোখ ও ভেজা ‌ । শারমিন নুপুর লাবিবাকে নিয়ে রুমে চলে আসে । লাবিবা কাদতে থাকে । একে চুপ করানো বড্ড দায় । সাজানোর জন্য মেয়েরাও চলে আসে । অথচ লাবিবাকে চুপ করানো যায় না । উপায় না পেয়ে আখি রাজিবকে ফোন দেয় । রাজিব ফোন ধরতেই বলে –তানভীর ভাইয়াকে দাও তো ।
–ও এখন বর সাঝছে । কি বলবে আমাকে বলো ।
–তুমি ভাইয়াকে দাও তো । বর পরে সাঝবে আগে কথা আছে ।
তানিয়া রেড়ি হয়ে তানভীরের রুমে এসে দেখে তানভীর শেরওয়ানি পড়ছে । তানিয়া বলে উঠে –ভাইয়া তোমার এখনো শেরওয়ানি পড়া হয়নি ..পরে দেখবে বড় পাপা চিল্লাবে নাম নাম বলে । তানভীর তানিয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক । পুরো বউয়ের সাজে আছে তানিয়া । হাতে দোপাট্টা ভাজ করে নেওয়া । তানভীর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঢ়াথায় ঘোমটা দিয়ে দেয় । ভ্রু উচিয়ে বলে –বরের বোনের সাজ নয় এটা কনের সাঝ এটা । বউ সেজেছিস তুই 🧐
তানিয়া রাজিব তানভীরের দিক তাকিয়ে কাচু মাচু করতে থাকে । তানভীর ধমক দিয়ে বলে –অমন করবিনা আমার সামনে । এই ড্র্যাস নাঈম দিয়েছে সকালে ? কেনো ?
— ভাবি বউ সাঝবে সুন্দর লাগবে । আমাকেও বউ সাঝলে কেমন লাগে দেখতে চায় ও। মিনমিনিয়ে বলে।তানভীরকে রাজিব ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে
–ধমকা ধমকি পরে কর আগে কথা বল আখি কি জানি বলবে।
তানভীর ফোন ধরে হ্যালো বলতেই আখি বলে উঠে –আপনি বর সাজছেন আর এদিকে আপনার বউকে সাজানোই যাচ্ছে না । কন্টিনিউয়াসলি কেদে যাচ্ছে ।
তানভীর মুচকি হেসে তানিয়ার মাথায় হাত রেখে বলে
–কাদতে দাও ওকে । আজকেই তো কাদবে । যতো ইচ্ছা কাদুক । ওইভাবেই সাজাও।ওকে ফোনটা দাও তো ।
আখি অবাক হয়ে যায় । যাকে ফোন দিলো কান্না থামানোর জন্য সেই বলছে কাদতে । কাদলে মেকাব করবে কিভাবে মাথা কাজ করছে না । লাবিবা ফোন নিয়ে কানে ধরতেই তানভীর বলে উঠে –তুমি নাকি কাদছো ? যত ইচ্ছা কাদো কোন প্রবলেম নেই বাট কাদতে কাদতে বউ সাজতে হবে আর ওরা যখন মেকাব করবে তখন চোখের পানি স্টপ করতে হবে পারবেনা ?
— হুম ।
–তাহলে ওদের সাজাতে দাও কেমন ? রাখছি ।
লাবিবাকে ওভাবেই সাজানো হলো । মেকাবের সময় লাবিবা চুপ চাপ ছিলো দেখে সবাই হেসে ফেলে ।
বর যাত্রীকে নামানোর জন্য ছেলেদের থেকে মেয়েরাই আগে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা আদায় করে ফিতা কেটে ঢুকতে দেয় । রাজিব তো এসছে থেকে আখিকে জালিয়ে মারছে । বেইনি বেইনি করে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে । মাঝে মাঝে বেজায়গায় চিমটিও দিচ্ছে । আখি প্রানপন দূরে থাকার ট্রাই করছে । কেউ এসব দুষ্টু মি দেখে ফেললে কান কাটা যাবে লজ্জায় । রাজিব একদমি পিছু ছাড়ছে না । মুইন এসেছে বিয়েতে । তানভীরের পাশে বসে এক ধ্যানে নুপুরের দিকে তাকিয়ে । আনিস থাকায় ধারে কাছে ঘেসতে সাহস পাচ্ছে না অথচ দুজনের চোখে দুজনে আটকে আছে । কাজী সাহেব এসেছে বিয়ে পড়ানোর জন্য । কনেকে আনতে বললে শারমিন জেমি বিনা যায় লাবিবাকে আনতে । লাবিবাকে নিয়ে এসে তানভীরের পাশে বসিয়ে দেয় । সবাই দেখে মাশাআল্লাহ বলে নতুন জুটির জন্য দোয়া করে । তানভীর এক ধ্যানে লাবিবার দিকে তাকিয়ে । লাবিবার চোখে চোখ পড়তেই বলে– মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর আমার বউটা । লাবিবা লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকায় । দুজনের বিয়ে পড়াতে বসে কাজী সাহেব । উকিল বাবা হন বেলাল সাহেব । তানভীর এক মিনিট বলে উঠে । আখিকে জিজ্জাসা করে তানিয়া কোথায় ? আশে পাশে তানিয়াকে দেখা যায় না । খেয়াল করে নাইম ও নিরুদ্দেশ। তানভীর ফোন দেয় তানিয়ার ফোনে । কিছুক্ষনের মধ্যেই নাঈম তানিয়া মাথা নিচু করে এসে দাড়ায় কারন সবার দৃষ্টি তাদের দিকেই । তানভীর বলে –আমার বোন এসে গেছে । কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান আপনি । কাজী তানভীরের থেকে কবুল নিয়ে লাবিবাকে কবুল বলতে বলে । লাবিবা ইসমাইলের দিকে তাকিয়ে ঠোট ভেঙে কাদে । ইসমাইল ভিড় ঠেলে লাবিবার পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না বন্ধ করতে বলে । কান্না বন্ধ করে কবুল বলে আবারো কেদে দেয় । কাজী সাহেব উঠতে নিলে তানভীর আটকে দিয়ে বলে –কাজী সাহেব আরেকটা বিয়ে পড়াতে হবে আপনাকে এখন । সবাই অবাক হয়। আবার কাকে বিয়ে পড়াবে ? তানভীর আসন থেকে উঠে লাবিবাকেও উঠিয়ে দেয় । তানিয়া নাঈমকে বলে বসে পড়তে । দুজনেই অবাক হয় তানভীরের এমন কাজে । বসতেই তানভীর খান ফেমেলি আর নাঈমের ফ্যামিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে
— আমি জানি সবাই আমার কথায় অবাক হয়েছেন । তানিয়া আর নাঈম দুজন দুজনকে ভালোবাসে গত চার বছর ধরে । আমাদের দুই পরিবার ই ওদের সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছেন। ওরা নেহাত ছোট কিন্তু বিবাহযোগ্য । আমি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে ওদের বিয়ের দেরি করতে চাই না । দুবছর পর সময় টা কম মনে হলেও তাদের কাছে কতটা বিশাল তা আমি ভালো ভাবেই জানি । তাই আরসময় নষ্ট করতে চাই না । ভাই হিসেবে আমি আমার বোনকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে চাই । আশা করি আপনারা সবাই অমত করবেন না ।
সবাই ভাবনায় পড়ে যায় । তানিয়া নাঈম মনে মনে দোয়া পড়তে থাকে যেনো কেউ না না বলে দেয় । নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ফিরোজ সায় দেয় বিয়ে পড়ানোর জন্য । তানিয়া নাঈম দু দুজনের দিক তাকিয়ে হাসে । তাদের বর কনের গেট আপ নেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো তানভীরের চোখে পড়ার । তানভীর ই পারে তাদের এক করে দিতে । বছরের পর বছর দুরে থাকা খুবই কষ্টের হয়ে যাচ্ছে ।
কাজী নাঈম তানিয়ার বিয়ে পড়ায় ।
মুইন এসে ভিড়ের মধ্যে নুপুরের হাত ধরে । নুপুর চিল্লাতে গিয়ে পাশে ফিরে দেখে মুইন দাড়িয়ে । মুইন চুপ চাপ শক্ত করে নুপুরের হাত ধরে দাড়িয়ে থাকে। কেউ কোনো কথা বলে না । মুইন আনিসকে না দেখতে পেয়ে সাহস পায় অনেক । নুপুর ও কিছুক্ষন পর শক্ত করে ধরে মুইনের হাত । মুইনের ঠোটে মিস্টি হাসি রেখা ফুটে উঠে যা দৃষ্টিগোচর হয় না নুপুরের ।

To be continue_____

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪৮

🍁

শ্বশুর বাড়িতে ড্রয়িং রুমে বসানো হয়েছে লাবিবাকে। আশে পাশে অনেকেই আছেন । সবাই লাবিবার দিকে তাকিয়ে লাবিবার কান্না দেখছে । আসার সময় আব্বু আম্মুকে ধরে যে কি পরিমান কান্না করেছে তার রেস এখনো বিন্দু মাত্র কমে নি । সবাই হা হয়ে সেই কান্না সিক্ত মুখটাই দেখছে । তবে একটু আগের হৃদয় বিদারক কান্না একটু সফটলি হয়েছে । সবাই বুঝাচ্ছে লাবিবাকে মেয়েদের একদিন পরের বাড়ি আসতেই হয় । আর সে তো কাল আব্বুর আম্মুর কাছে যাচ্ছেই। পাশাপাশি এলাকা ইচ্ছা হলেই চলে যেতে পারবে ।
কারো কোন কথাই কান দিয়ে যাচ্ছে না লাবিবার । তানিয়া আর লাবিবা দুজনেই নতুন বউ অথচ লাবিবা বসে বসে কাদছে আর তানিয়া খুশি মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।তানিয়ার বাসর রাতের আয়োজন এখানেই করা হয়েছে । তানভীর নাঈম তাদের ফ্রেন্ডদের সাথে দাড়িয়ে গল্প করছে । তানিয়া কিছুক্ষন পর পর কুক , জুস, কফি পাঠিয়ে দিচ্ছে । আনন্দ যেনো আর ধরে না । লাফাতে লাফাতে ছেলেদের আড্ডাতেই চলে এলো । পেছন থেকে তানভীরের গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে –থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া । আই লাভ ইউ ভুরিভুরি । তানভীর কিছু না বলে মুচকি হাসে । গলায় তানিয়ার হাতে হাত রেখে দাড়িয়ে গল্প করে । নাঈম তানয়িরা কান্ড দেখে মুচকি হেসে বলে পাগলি আমার একটা । সব শেষে লাবিবাকে তানভীরের রুমে আনা হয় । রুমের অবস্থা দেখে লাবিবা আরো কেদে ফেলে । পুরো রুম অর্কিডে সাজানো । বেডের মাঝখানে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তানভীর❤লাবিবা লেখা । লাবিবা মস্তিস্ক জানান দিয়ে উঠে লাব্বু আজ তোর আর ডলফিনের বাসর রাত । এতো স্পেশাল একটা রাত তাও এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে রুমটা অথচ এগুলোর কিছুই চায় না লাবিবা । একগুচ্ছ কালো গোলাপ চেয়েছিলো দিলো না ডলফিনটা । কাদতে কাদতেই বলে সকাল হোক তোর গাছ যদি আমি না কেটেছি তাহলে আমিও রানী এলিজাবেথ না হুহ..। বাই দ্যা রাস্তা এলিজাবেথ কি বিয়ে করেছে ? তার কি ছেলে মেয়ে আছে ? তিনি কি নাতির ঘরের পুতি ,পুতির ঘরের হুতি , হুতির ঘরের মুতি, মুতির ঘরের গুতির মুখ দেখেছে ? না দেখলে নাইবা দেখবে কিন্তু আমি তো দেখবোই ‌। আমার রেডিমেট বাচ্চা চাই । ঐ স্যারের কাছে তো যাবোই না একদম । যে ভারি আল্লাগো আল্লাহ যেভাবে চিপকাইয়া ধরে মনে তো হয় মরেই গেছি অলরেডি । আমার আবার মরার শখ নাই । আমার বিয়ে হয়ে গেছে । জামাইকে এখনি বিধবা করতে চাই না । বিছানার মাঝখানে বসেই ফোন হাতে নেয় । ফোনের ওয়ালপেপারে ফেমেলি ফটো দেখে লাবিবা আবার কান্না শুরু করে আব্বু…আম্মুনি.. আব্বু .. বলে । লাবিবাকে নিয়ে তানভীরের আর কোন চিন্তা নেই । লাবিবা এখন থেকে তানভীরের বুকেই থাকবে । পুতুল বউটা বাচ্চাদের মতো করে কাদছে । তানিয়া এসে তানভীরকে হাত ধরে টেনে বাসর ঘরে নিয়ে যায় । এভাবে ফ্রেন্ড দের সামনে দিয়ে আনাতে তানভীর ভাবে কাজ টা ঠিক হলো না তাই বিরক্ত প্রকাশ করে । কিন্তু ফ্রেন্ডরা সাথে সাথেই আসে । দরজার সামনে দাড়াতেই কয়েকজন পথ আটকায় । সবাই হাসতে শুরু করে । একজন বলে –টাকা ছাড়া কিভাবে ঢুকছেন ভাইয়া ? এতো সুন্দর করে বাসরঘর সাজালাম এতো কষ্ট করলাম অথচো আমাদের টা না বুঝিয়ে দিয়েই বউয়ের কাছে চলে যাবেন তা কি করে হয় ? তানভীর ভিতরে উকি দিয়ে দেখে বেশ ভালোই সাজিয়েছে এরা বেডের মাঝখানে লাবিবা কাদছে আর ফোনে কথা বলছে । তানভীর সিউর আব্বু আম্মুনির সাথে কথা বলছে । কাউকে কিছু না বলেই তানভীর চলে যেতে নেয় । সবাই অবাক হয়ে পিছু দৌড়িয়ে আটকে দেয় তানভীরকে । তানভীর হেসে বলে –তোমরা শুধু শুধু সাজিয়েছো। আজকে তো আমার বাসর হবে না । আজ ঘুম হবে । তোমরা যদি নাও ঢুকতে দাও তাহলে আমি অন্যরুমে ঘুমিয়ে নিচ্ছি । সবাই রাগ দেখিয়ে বলে –টাকা না দেওয়ার ধান্দা তাই না ? তানভীর হেসে বলে –আজ আমার বোনের বাসর রাত । চলো তাকে বাসর ঘরে পৌছে দিয়ে আসি । তানিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেলো । তানভীর হো হো করে হেসে বলে –তোকে আপেলের মতো লাগছে । কিন্তু তুই লাল হচ্ছিস কেনো টমেটোর মতো ? টমেটো শুধু তোর ভাবিই অন্য কেউ হবে না মনে রাখিস । চল রুমে চল ।
তানিয়া তানভীর খাটে বসে, নাঈম রাজিব আখি সোফায় বসে । রাজিব একপ্রকার রেগেই বললো –এটা কি শুরু করেছিস তানভীর ? লাবিবা কাদছে ওকে চুপ না করিয়ে তুই এদিক সেদিক করে ঘুরছিস ?
আখি বললো –এতোদিনের ভালোবাসা কই গিয়ে একসাথে টাইম স্পেন্ড করবে তা না বলে অন্য রুমে ঘুমোবে ।
তানিয়া গাল ফুলিয়ে বলে –তুমি টাকা দিবেনা জন্য অমন করছো তাই না ?
তানভীর পকেট থেকে কার্ড বের করে তানিয়ার হাতে দিয়ে বলে –যতো ইচ্ছা ততো খরচ করিস । আজ তোর ভাবি কেদেই রাত পার করবে । বাসরের কথা মাথাতেও আনা যাবে না ।
–কেনো যাবেনা ?
–বুঝিস না তোরা ? মান সম্মান খোয়াতে চাস নাকি আমার । অন্য কোথাও হলে ভাবা যেতো বাট এই বাড়িতে দুষ্টু পুতুলের সাথে বাসর আমার ভাবনারো উপরে । আখি আমার রুমে কয়েক প্যাকেট টিস্যু বক্স পাঠানোর ব্যবস্থা করো । যে মেয়ে রোমান্স করার ভয়ে এতো ভালোবাসার পরও বলে বিয়ে করবেনা তাকে …ছাড় ওসব কথা ।
কেউ কিছু বললোনা । কারন লাবিবা সম্পর্কে সবাই অবগতো । সে যদি না চায় তাহলে তার ধারে কাছে যাওয়া মুশকিল । চিল্লিয়ে পুরো খান বাড়ি তুলে ফেলা তার জন্য কিছুই না । তানভীরের জন্য মায়া লাগছে । তানভীর উঠে দাড়িয়ে কলার ঠিক করে বললো –আমার ঘুম পাচ্ছে । আমি আসছি প্লিজ । তানভীর নিজের রুমে আসতেই আখি কয়েক প্যাকেট টিস্যু বক্স দিয়ে যায় । তানভীর অবলিলায় টিস্যু বের করে লাবিবার সামনে ধরে । লাবিবা নিয়ে চোখ নাক সহ মুছে ফেলে দেয় । তানভীর আবারো বের করে সামনে ধরে । এভাবে একের পর এক টিস্যু বক্স খালি হতে থাকে । তানভীরের মুখে মৃদু হাসি । সে একমনে তার কান্না কুমারিকেই দেখতে ব্যস্ত । কাদলে যে কাউকে এতো কিউট লাগে লাবিবাকে না দেখলে জানাই হতো না । বিয়ের সাজে এত্তো সুন্দর কাদতে পারো তুমি পুতুল বউ.. । তোমার এই রুপ দেখেই রাতের পর রাত কাটাতে পারি আমি । আর কিচ্ছু চাই না তোমাকে ছাড়া । তোমার হাসিটা যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর তোমার কান্না । আমার মাঝে মাঝে এই কিউট কান্নাটা দেখতে ইচ্ছা হলে কিন্তু তোমাকে কাদাবো । কোন অভিযোগ রাখতে পারবে না ।
লাবিবা শুনে বলে –এতো কেনো ভালুপাসেন আমায় ?
–ভালুপাসার কারনে ভালুপাসি আর কিছুই জানিনা।
–থ্যাংকু । আমি এখন কাদবো স্যার । আব্বুকে দেখতে ইচ্ছে করছে । একটু কাদি ?
তানভীর লাবিবার কোলে মাথা রেখে লাবিবার হাত দুটো নিজের মাথায় রেখে দেয় । যার অর্থ চুল টেনে দিতে দিতে কাদো। লাবিবা তাই করে । তানভীরের চুল টেনে দেয় আর আব্বু আব্বু করে কাদে । তানভীর লাবিবার চোখ মুছে দেয় বার বার । চোখে ঘুম চলে আসে । আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে ।
সকালে সোহানা এসে ঢেকে গেছে একবার । ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হচ্ছে তাই মমতা আসে ঢাকতে । একের পর এক দরজা ধাক্কাতে থাকে । তানভীর জেগে যায় । আসি বলে উঠতে নিলে দেখে লাবিবার কোলে শোয়ে আর লাবিবা ওভাবেই সোজা হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে । উঠে একবার লাবিবার ঘুমন্ত মুখটা দেখে নেয় । কতো নিষ্পাপ লাগছে দেখতে । দরজা খুলে দিয়ে বলে –ওহ ছোট মাম্মা আসো ভিতরে আসো । মমতা ভিতরে না গিয়ে দরজা থেকেই লাবিবিকে দেখে চোখ উপরে । তারাহুরো করে ভিতরে ঢুকে বলে –একি লাবিবা এখনো বিয়ের সাজেই আছে ! এতো ভারি ড্রেস গহনায় মেয়েটা ঘুমোতেও পারেনি হয়তো ভালোকরে । বালিশ ছাড়া কিভাবে ঘুমুচ্ছে দেখো । লাবিবার পাশে বসে লাবিবাকে ঘুম থেকে উঠায় । ঠেলে বাথরুমে পাঠিয়ে দেয় । যত্ম করে শাড়ি পড়িয়ে নিচে নিয়ে আসে । সবার সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে । সবাই খুব মজা করে ব্রেকফাস্ট টেবিলে নতুন দুই দম্পতিকে নিয়ে । একে একে সব আত্মীয় স্বজন চলে যায় । মমতা শুধু ভাবছে আর ভাবছে । ভাবুক মুখটা সোহানা অনেকবার খেয়াল করেছে । এবার কিচেন ফাকা পেয়ে জিজ্জাসা করেই বসলো –মমতা কি হয়েছে ? তোকে খুব টেন্টস লাগছে। মমতা ফিস ফিস করে বলে –আপু গো আমাদের মেয়ের তো বাসর হয়েছে সিউর কিন্তু ছেলের তো বাসর হয়নি । সকালে দেখি বিয়ের সাজেই আছে । একথা শুনে সোহানা একদম হেসে নিলো । মমতাকে ঠোকা দিয়ে বলে –তো কি হয়েছে ? তোর কি নিজের বাসর রাতের কথা মনে পড়ে গেছে ?আজ হয়নি তো কাল হবে । মমতা লজ্জা পেয়ে কিচেন ছেড়ে পালায় । তার নিজের বাসর রাতেও বাসর হয়নি । হয়েছিলো পরের রাতে । মনে হতেই একা একা হাসতে থাকে ।
দুপুরে ইসমাইল বেলাল আসে মেয়ে আর জামাইকে নিয়ে যেতে । লাবিবা ইসমাইলকে দেখেই খুশিতে ইসমাইলের পাশে পাশেই থাকে যতোক্ষন খান বাড়িতে ছিলো । বিকাল দিকে লাবিবা তানভীরকে নিয়ে ইসমাইল বাড়ি চলে আসে । মুক্তা তানভীরের যত্মাতিতে কোন ত্রুটি রাখে না সাবিনা সখিনা। মেয়েদের জামাইদের নাতি নাতনীদের নিয়ে মোল্লা বাড়ি জমে উঠেছে । রাতে শোয়ার সময় লাবিবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । লাবিবা ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকেই বালিশ নিয়ে দৌড় । কিন্তু তানভীর ঠিক ধরে ফেলে । দু হাত ধরে দরজায় পিঠ লাগিয়ে দাড়ায় । ভ্রু কুচকে জিজ্জাসা করে
–কোথায় যাচ্ছ?
–আম্মুনির সাথে ঘুমোবো । আম্মুনি আমার জন্য অপেক্ষা করছে । ছাড়ুন আমাকে যেতে হবে ।
তানভীর মুচকি হেসে লাবিবার গালে নিজের গাল দিয়ে ঘসা দেয় । লাবিবা দাড়ি দিয়ে হালকা ব্যথা পেয়ে আহ করে উঠে ।
–বিয়ে পর হাজবেন্ডের সাথে থাকতে হয় । পুতুল বউ পালিয়ে বেড়াচ্ছো কেনো ? এমন করো না প্লিজ ।আম্মুনি অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে ।
–আরে আপনি তো জানেন না ব্যপার টা । কাল তো চলেই যাবো । একটা রাত আম্মুনির সাথে থাকি । কাল সারা রাত তো আপনার সাথেই ছিলাম ।
— ঐটাকে থাকা বলে ?
লাবিবা পেছন দিকে তাকিয়ে বলে –দেখুন বারান্দায় আম্মুনি । তানভীর ফট করে পিছে তাকায় । ততোক্ষনে লাবিবা পগারপার । তানভীর ধরতে গেলেও ধরতে পারে না । সারারাত ছটফট করে কাটায় । আরেকটা রাত থাকতে হয় এ বাড়িতে তানভীর লাবিবাকে । লাবিবা সারাদিন কাছে আসেনি । তার আগের লাইফের মতোই খেলে খেলে বেড়াচ্ছে । রাতে শোবার সময় লাবিবার মুখটাও দেখতে পায় না । লাবিবা থাকতে চলে গেছে পাশের বাসায় মুন্নির কাছে । অনেকদিন পর মুন্নি এসেছে বেড়াতে তাই জিদ মুন্নির কাছে নাকি তাকে থাকতেই হবে। তানভীরকে নিয়ে যেতে বললে না নিয়েই চলে যায় । লাবিবা যে ইচ্ছে করে এমন করছে তানভীরের বুঝতে বাকি নেই । এরোকম পাগলামী কে করে ..তানভীর হো হো করে হেসে উঠে । শুয়ে পড়ে মাথায় হাত রেখে বলে –আই নিড ইউ পুতুল বউ । তোমাকে চাই চায়ই আমার ।

To be continue_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here