একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-৫৩+৫৪+৫৫ শেষ

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৫৩+৫৪+৫৫(last)

🍁
ভোরের দিকে ঘুম ভাঙে লাবিবার । উঠে বিছানায় তানভীরকে না দেখে জানালা দিয়ে উকি দিয়ে মন খারাপ করে ফেলে । এতো সকালে উঠেও দেখা পায় না মানুষটার । ফোন খুজে হাতে নিয়ে লক খুলে দেখে নয়টা এগার এ.ম. টাইম । সময় দেখে নিজের কপালে নিজের চড়াতে ইচ্ছা করে । এই গরমকালেও শীতকালের মতো আবহাওয়া হওয়ায় একদমি বেলা বুঝা যায় না । ঘুম তো ভাঙেই না । ভাগ্যিস ভালো একটা শ্বশুর বাড়ি পেয়েছিলো নয়তো জীবন হয়ে যেতো তেনা তেনা । শুধু কি ভালো শ্বশুর বাড়ি ? কিছুক্ষন চুপ থেকে জোর গলায় বলে উঠলো –হাব্বিটাও অনেক ভালো । বকে ঠিক আছে । বকা খাওয়ার মতো কাজ করলে তো বকবেই । কিন্তু আফসোস একটা সকালেও জনাবের মুখটা দেখতে পারি না । ঘুম কমাতে হবে । এতো কেনো ঘুমাই আমি ?
ওদিকে তানভীর আছে নুপুরের বাসায়। সাথে রাজিব আখি মুইন ও তার ফেমেলি সবাই । আনিস মানতে নারাজ এই প্রস্তাব । যেখানে তার বড় জামাই কোটিপতি সেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারে ছোট মেয়ের বিবাহ কিভাবে দিবে সে ? বড় মেয়ের তুলনায় ছোট মেয়েই বা কম কিসে ? শুশীল মোলিয়েম ঔ চাঁদবদন চেহারা দেখে বলিউডের হিরোও তাকিয়ে থাকবে আনিসের ধারনা । সেখানে এই পাত্র কোম্পানি চাকুরিজীবি যেখানে বড় জামাই বেশকয়েক কোম্পানির মালিক । বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘটক সহ মুইনের ফেমেলি উঠে পড়ে লেগেছে । সাথে রাজিব ও মত দিয়ে দিয়েছে । তানভীর বড় মুখ করে এই প্রস্তাব এনেছে । এদিকে নুপুরের সাথে কথা বলেও জেনে নেয় এই বিয়েতে তার আপত্তি নেই । সব দিক বিবেচনা করে আনিস একবার ভাবে বিয়েতে রাজি হবে আবার আরেকবার ভাবে না এর থেকে ভালো জামাই সে ডিজার্ব করে । এদিক ওদিক করতে করতে বড় চাপ পরে যায় । ফাইনালি কাল রাতে রাজিবকে একবার বলেছে সে রাজি । কিন্তু সকালেই মত পাল্টে দেয় । রাজিব তানভীরকে ডেকে এনে অনেক বুঝানোর পর আবার রাজি করাতে সক্ষম হয় । সাথে সাথেই মুইনের ফ্যামিলিকে আসতে বলা হয় । মুইনের ফ্যমিলিকে দেখে আনিসের আবার মত অমতে পরিণত হওয়া ভাব ফুটে উঠে । যে কোন মুহুর্তে না না করে বসে । তানভীর কাজীর কাছে ফোন দিয়ে আসতে বলে । সবার আগে কাবিনটা সেরে নেওয়া উচিত ।
রাতে বাবার হ্যা শব্দ শুনে নুপুর যে পরিমান খুশি হয়েছিলো সকালে না শব্দ শুনে সেই পরিমান ভেঙে পড়ে । বুক চিরে কান্না চলে আসে কিন্তু এই কান্না কাউকে দেখাতে পারে না । বুক চিরে কান্নাটা মা বাবার সামনে এলেই সব শেষ হয়ে যাবে যে টুকুনি আশা বেচে আছে । সকালে রাজিব তানভীরকে দেখে অসহায় চোখে নিজের অবস্থাটার জানান দিয়েছে । সেই অবস্থা বুঝতে ন্যানো সেকেন্ড ও লাগে নি রাজিব তানভীরের । কারন তারা দুজনেই সেইম পরিস্থিতি ভোগ করে এসেছে । ভালবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার ভয় যে কতোটা মারাত্মক তা হয়তো প্রত্যেক প্রেমিক প্রেমিকার ই বোধ রয়েছে ।
পাকা কথা বলতে এসেছে মুইনের পরিবার সাথে মুইন ও । সেই অনুযায়ী মেয়েকে আংটি তো পরিয়েই যাবে । ঘরে বসে রেডি হচ্ছিলো নুপুর । আখি সাজিয়ে দিচ্ছে নুপুরকে । টেনশনে বিভোর শুকনো মুখটা দেখে একদমি ভালো লাগছে না আখির । কিছুক্ষন পর পর বুক কেপে উঠছে নুপুরের । ভেতরের চাপা কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে । শেষ মেষ না পেরে দু ফোটা চোখের জল বের করে বলে –আপু..মুইনকে না বিয়ে করতে পারলে আমাকে অন্য কোথাও রেখে আসিস যেখানে আমি ভালো থাকবো । কেউ আমাকে বিয়ে করার জন্য বলতে পারবে না ,কেউ বলবেনা মেয়েটা অবিবাহিত, কেউ বলবেনা বয়স হয়ে গেছে অথচ বিয়ে করেনি অপয়া মেয়ে কথাকার ।
আখি মুখ চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলে –চুপ থাক তুই । এতো কিসের টেনশন তোর ? তোর স্যার , ভাইয়া আছে না ? সব ম্যানেজ করে নিবে । আপাদতো মুখটা হাসি হাসি রাখ আর ভাব কিভাবে তোকে সুন্দর দেখাবে । এই প্যাচামুখ নিয়ে তোর শ্বশুর বাড়ির লোকের সামনে গেলে অপছন্দ করে দেখবি ওরাই বিয়ে ভেঙে চলে যাবে । কথাটা শুনে নুপুর স্বাভাবিক হবার ট্রাই করে । দরজায় টোকা পড়তেই দেখে তানভীর দাড়িয়ে । ভেতরে আসতে আসতে বলে –সাঝগোজ শেষ ? এটা কি পড়েছো ? থ্রি পিচ কেনো ? এই প্যাকেটে যা আছে পড়ে নাও । মুইন দিয়েছে ।
নুপুর প্যাকেট হাতে নিয়ে খুলে দেখে ভিতরে একটি শাড়ি আর একটি দোপাট্টা । একটা গহনার বক্স ও আছে । খুলে দেখে একটা সোনার নেকলেজ আর একজোড়া ঝুমকো । নুপুর তানভীরের দিকে তাকাতেই তানভীর বলে –পাকা দেখাতে এর থেকে বেশি কিছু সম্ভব নয় । একটু বেশি হলেই তোমার আব্বু রেগে যাবে । তা কেমন ফিলিংস হচ্ছে নুপুর ?
–অনেক ভয় হচ্ছে । আব্বু যদি আবার না করে দেয় ?
— হা হা হা । বোকা মেয়ে । এখনো সেই হ্যা না তেই পড়ে আছো ? আজ তোমার পাকা দেখা নয় নুপুর । আজ তোমার রেজিট্রি হতে যাচ্ছে । এককথায় বিয়ে হতে যাচ্ছে । ফিলিংসটা সেই দিকেই ঘুরিয়ে নাও ।
নুপুরের চোখ জলে টলমল করে উঠে । ঠোটের কোনে হাসির রেখা খেলে । অবিশ্বাসের স্বরে বলে –সত্যি?
তানভীরের হাসি দেখে সিউর হয়ে বলে –আপনি আমার ভাই হলে একটু জড়িয়ে ধরতাম । এখনো ধরতে পারতাম । কিন্তু ধরবোনা । আপনার মালকিং এর পারমিশন নেই ।
–এই বুদ্ধিটা কিন্তু আমার সেই বোকা সোকা দুষ্টু পুতুল বউটাই দিয়েছে ।
–কোথায় ও ? আসেনি কেনো এখনো ? ফোন দেই ?
–তোমার ফোনের অপেক্ষাতেই আছে ।
নুপুর ফোন দিতেই লাবিবা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই নুপুর বলে –জানু এখনো আসিস নি কেনো ? রেড়ি হয়ে এক্ষুনি বের হ । তারাতারি চলে আয় আমার বাসায় ।
— আধা ঘন্টা দুই মিনিট তেত্রিশ সেকেন্ড থেকে তোর বাসাতেই আমি ।
–আমার রুমে এলি না কেনো ?
–আমি এখন কিচেনে । আন্টি গুড়ো দুধ দিয়ে চমচম বানাতে দিয়েছে আমাকে ।
–হারামি দারা আসতেছি আমি । আমাকে ছাড়াই একা একা খাচ্ছিস 😠।
–তুই বিয়ের কনে । তোর এসব খাওয়া যাবে না । ড্রেস নষ্ট করে ফেলবি । ফোন রাখ । আই এম বিজি টু ইটিং গুড়ো দুধ ।
–ধরা পড়বি তুই দেখিস । বদদোয়া দিলাম আমি । আম্মু অনেক হিসাবি মানুষ । চমচম কম পড়লে ধরা খাবি ।
–নো চান্স । আন্টি ক্যান দিয়েছে একটা আমি আরেকটা পেড়ে নিয়েছি ।
নুপুর ফোন রেখে তানভীরের দিক তাকিয়ে বলে –আপনার পুতুল বউ আস্ত একটা বিড়াল ।
তানভীর হেসে চলে যেতেই নুপুর রেড়ি হতে থাকে ।
লাবিবার রান্নার কাজে হেল্প করা শেষ হলে নুপুরের রুমে এসে নুপুরকে আপাদমস্তক দেখে নেয় একবার । গোলাপী শাড়ি কুচি করে পড়া , কানে গলায় সোনার গহনা , হাত ভর্তি চুড়ি , কালজ কালো চোখ , পিঠে ছাড়া চুল সব মিলিয়ে অমাইক লাগছে । নুপুর লাবিবাকে দেখেই জানু বলে জড়িয়ে ধরতে যায় । লাবিবা এক লাফে পিছিয়ে পড়ে । শাড়ি ধরে বলে –দেখেছিস কতো নোংরা ? দেখে নে । না দেখেইতো বুকাবুকি করতে যাচ্ছিলি ।
–এগুলো তো গুড়া দুধ 😋।
–কেউ শুনে ফেলবে চুপ থাক । গোছল করে আসছি আমি । লাবিবা ব্যাগ থেকে শাড়ি বের করে বাথরুমে চলে যায় । ফিরে এসে শাড়িটা ঠিকঠাক করে হালকা সাজে । এরপর নুপুরের সামনে এসে বলে –জানু আয় বুকাবুকি করি । দুজন দুজনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে । এমনভাবে ধরে যেন একজন আরেকজনের মধ্যে ঢুকে পড়বে । মিনিটের পর মিনিট চলে যায় তাদের ছাড়াছাড়ির না নেই । মাঝখানে রাজিব নুপুরকে ডাকতে এসে বসে বসে এদেরকেই দেখছে । ছাড়ার নাম নেই দেখে বলে উঠে –তোদের হাগাহাগি শেষ হলে এবার কি রুম থেকে বের হতে পারবি ? নুপুর লাবিবা ছেড়ে দাড়ায় । রাজিব আয় বলে চলে যায় । লাবিবা ব্যাগ থেকে একজোড়া বালা বের করে নুপুরের হাতে পড়িয়ে দিয়ে বলে –তোর বিয়ের গিফট ।
ড্রয়িং রুমে তুমুল কথা কাটা কাটি হচ্ছে । আনিসুর কিছুতেই মানবেনা এটা । বড় মেয়ের বিয়ে চুপিচুপি হয়েছে দেখে ছোট মেয়েঋ বিয়েও এইভাবে চুপি চুপিই হবে নাকি । অসম্ভব । ইতিমধ্যে কয়েকজন আত্মীয় ও চলে এসেছে । আখি খবর দিয়েছে সবাইকে । ইসমাইল ও এসেছে । তারপর সবাই মিলে বুঝালো আনিসকে ‌।এখন শুধু কাবিনটাই হচ্ছে আর তো কিছু হচ্ছে না । তার পর না হয় বড় করে অনুষ্টান করে মেয়ে তুলে দেওয়া যাবে । মেয়েতো নিয়ে যাচ্ছে না শুধু রেজিস্ট্রি করিয়ে এখানেই রেখে যাবে । তারপর দু পরিবার মিলে একজোত হয়ে দিন তারিখ ঠিক করে ঘটা করে বিয়ে দেওয়া যাবে । দরজায় দাড়িয়ে নুপুর সব শুনছিলো । অবশেষে আনিস রাজি হলে নুপুরকে ভিতরে এনে বসানো হয় সোফায় মুইনের পাশে । লাবিবা দৌড়ে রুম থেকে দোপাট্টা টি এনে নুপুরের মাথায় দিয়ে দেয় । রেজিস্ট্রি সহ কাজী বিয়েটাও পরিয়ে দেয় । পুরোপুরি স্বামী স্ত্রী তারা এখন । সবার বুকের উপর দিয়ে বয়ে চলা ঝড়টা ধপ করে শেষ হয়ে গেলো । মুইনের পরিবার নতুন বউকে বাড়ি নিয়ে যিওয়ার কথাটা তুলার সাহস মাত্র পেলেন না । কিন্তু মনে মনে খুব করে চাইলেন । মুইন কি পারবে একমুহুর্ত এবার নুপুরকে ছেড়ে থাকতে ? ভেবেই কেপে উঠে মুইন । এতোদিন তো নিজেকে মানানো গেছে নুপুর তার নয় বলে বলে । কিন্তু এখন যে নুপুর তার । নিজের জিনিসটাকে কিভাবে ফেলে থাকবে সে ? নুপুরের দিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিয়ে একমনে এটিই ভাবছে সে । অবশেষে যাওয়ার আগ মুহুর্তে তানভীর আনিসের কাছে একটা প্রস্তাব রাখে –আংকেল একটি অবদার ছিলো । ওরা দুজন কি একটু একান্তে কয়েকমিনিট কথা বলতে পারবে যদি অনুমতি দেন ।
আনিস আর কি অনুমতি দিবে । মেয়ের সাথে মেয়ের জামাই কথা বলবে এখানে তার অনুমতির প্রয়োজন নেই বললেই চলে । এখন তাদের বিয়ে হয়ে গেছে । জামাই যদি থাকতে চায় তাতেও খুশি আনিস ।
–নুপুরের রুমে নিয়ে যাও । বলে বেয়াই বেইনির সাথে কথা বলতে লাগলো । তানভীর রুমের সামনে মুইনকে এনে রেখে চলে যায় । মুইন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখে নুপুর খাটের উপর বসে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে । মুইনকে দেখে উঠে দাড়িয়ে পরে । মুইন এগিয়ে এসে সামনে দাড়ায় নুপুরের । নুপুর নিচের দিকে তাকিয়ে ফ্লোরের টাইলস দেখছে । দুই পকেটে হাত দিয়ে গোটা কয়েকটা কালো গোলাপ বের করে একসাথে করে নুপুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে ডাকে –“বউ”।
চমকে তাকায় নুপুর । গোলাপগুলো নুপুরের হাতে গুজে দিয়ে বলে –একগুচ্ছ কালো গোলাপের অভিনন্দন তোমাকে আমার জীবনে আসার জন্য । অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে । শাড়ী গহনাটা আমিই কিনেছি । পছন্দ হয়েছে তোমার ?
– “হু”।
–ধন্যবাদ আমার __
–পেটের কোমড়ের মাথার নুপুর তাইতো ?
স্মিত হেসে একটা হাত টেনে বুকের উপর চেপে ধরে বলে — উহু..। ধন্যবাদ আমার ভালোবাসার বুকের নুপুর ।

To be continue_____

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৫৪

🍁
দেখতে দেখতে লাস্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হয় । এতোদিন লাবিবার জন্য তানভীরকে ভার্সিটি থেকে বাসা এতোদূর কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়েছে । বাড়ির লোক নতুন বউকে আসতে দিতে চায়নি । এখন তারা চাইলেও রাখতে পারবেনা । লাবিবাকে সাথে নিয়ে রওনা হয় তানভীর । এতোদিন পর ভার্সিটির দেখা মিলবে বলে খুবই খুশি । তানভীর চুপচাপ লাবিবার হাসি মুখ দেখে যায় । লাবিবা তানভীরের বুকে মাথা রেখে ঘাড় উচিয়ে তানভীরের গালের খোচা খোচা দাড়ি নিয়ে খেলতে থাকে । তানভীর ড্রাইভ করতে করতে বার বার লাবিবার চোখে চোখ রাখে । লাবিবা মুখ উচিয়ে গালে চুমুও দিয়ে দেয় । ঠোটের কোনে দুষ্টুমির হাসি রেখা ফুটিয়ে তুলে । তানভীর চোখে চোখ রেখে বলে –এক্সিডেন্ট হলে ?? তখন কাকে চুমু দিবে ? সামনের দিকে তাকাও আর চুপটি করে বসে থাকো ।
লাবিবা কিছু না বলে গলা জড়িয়ে ঘাড়ে মাথা রেখে চুপটি করে থাকে । ভার্সিটির এরিয়া তে ডুকেই তানভীর জিজ্জাসা করে –হোস্টেলে উঠবে তো ? নাকি কোয়ার্টারে ? –হোস্টেলে ম্যারিড দের তো থাকতে দেয় না। কিভাবে থাকবো তাহলে ?
–প্রিন্সিপালের অনারে থাকবে ।
–প্রিন্সিপালকে সাথে নিয়ে একবিছানায় থাকতে পারবো তো ? যদি সেই ব্যবস্থা করে দেন তাহলে থাকতে পারি ।
–আপনি কোয়ার্টারে থাকতে পারেন । একরুমে একবিছানায় । কেউ মানা করবে না ।
–আমিতো আপনার পাওয়ার দেখতে চাইছি । চলেন হোস্টেলেই থাকি দুজন । একটা রুম নিয়ে নেন ।
গাড়ি থামিয়ে লাবিবার দিকে ঘুরে বসে তানভীর । চোখ উচিয়ে বলে –হোস্টেলের রুম নিবো নাকি হোটেলের ? কোনটা?
লাবিবা লজ্জায় টমেটো হয়ে সামনের দিকে মুখ করে সোজা হয়ে বসে । তানভীর হা হা করে হেসে ফেলে । নাকটা টেনে দিয়ে বলে –যাবো ? তাহলে হোটেলে থাকছি নাকি আজ ?
–না থাক কোয়ার্টারেই থাকবো । এটাই বা হোটেলের থেকে কম কি ? সাজিয়ে রাখলে এটাও বেস্ট।
–হোটেলের প্রতি এতো প্রেম কই থেকে আসলো ?
–আসল প্রেমটাতো সেখানেই ধরা দিয়েছিলো তাই আর কি ।
–কোথায় ? কিভাবে?
–আপনার সাথে অনেকসময় হোটেলে টাইম স্পেন্ড করা হয়েছে। সেই মুহুর্তে আপনার উপস্থিতি , ব্যবহার,লাভ, কেয়ারিং গুলো একটু একটু করে দানা বেধে আমার হৃদপৃন্ডে জমা হয়েছে । ভুলবার নয় কোনকিছু ।
তানভীর মুচকি হেসে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে । লাবিবাও নেমে পড়ে । ঝালমুড়ি মামা সেখান দিয়েই যাচ্ছিলো । লাবিবাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে । ঠোট প্রসস্ত করে বলে –আরে মামুনিযে । অনেক দিন পর । ক্লাস শুরু হয়ে গেছে । এবার মা আমার ঝালমুড়ি মিস করবে না ।
–মামা আজ থেকে ডেইলি বিশ টাকার ঝালমুড়ি নিবো । একটা আমি খাবো আরেকটা আপনাদের প্রিন্সিপাল খাবে । টাকাও প্রিন্সিপাল দিবে ।
–হ মা আমি শুনছি । তুমি প্রিন্সিপালের মিসেস এখন । দোয়া করি অনেক সুখি হও । তোমাদের জন্য ঝালমুড়ি বানাই ।
দুজনে ঝালমুড়ি খেতে খেতে কোয়ার্টারে ঢুকে যায় । লাবিবা নিজের মতো করে পুরো কোয়ার্টার গুছিয়ে নেয় ।তানভীর অবশ্য বাইরে যায় খাবার আনার জন্য। পরদিন থেকে শুরু হয় রেগুলার ক্লাস আর ডিউটিস ।লাবিবা রেড়ি হয়ে গুটি গুটি পায়ে ভার্সিটির দাড় গোড়ায় এসে দাড়ায় । সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই একে একে অনেকেই লাবিবাকে দেখে হাসি মুখে সালাম দিয়ে জিজ্জাসা করে –মেডাম কেমন আছেন ? মেডাম অনেকদিন পর দেখলাম । মেডাম ট্রিট কিন্তু বাকি ছিলো । মেডাম কোয়ার্টারে থেকে আসলেন নাকি ? ব্লা ব্লা ব্লা …..। কোনমতে লাবিবা পা ঠেলে ঠুলে ক্লাস রুমে এসে থামে । ব্রেঞ্চের উপর থম করে বসে পড়ে । জোরে শ্বাস ফেলে বলে –ও আমার আল্লাহ। বাচলাম । এরা যা শুরু করেছে মেডাম মেডাম বলে.. বিরক্ত খাইয়া ফেলছি একদম । পেছন থেকে জবা এসে বলে মেডাম কে বিরক্ত করেছে ? জাস্ট নামটা বলেন একবার । লাবিবা বড় বড় চোখ করে তাকায় ।
–তুইও মেডাম মেডাম করছিস ? আজজবব।
–কেনো কি সমস্যা মেডাম ?
–মেডাম ডাকবিনা একদম । তোর কোথাকার মেডাম আমি ?
–কেনো স্যারের ওয়াইফদের মেডাম ই তো বলতে হয়।
–কিন্তু আমাকে বলবিনা ।
–আচ্ছা মেডাম ।
–আবার মেডাম ।
দরজা দিয়ে হাসিমুখ নিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে মলি । লাবিবা জবা মলিকে দেখে হা । ম
মলি এসে দুজনের মুখ লাগিয়ে দিয়ে বলে –কিরে কেমন আছিছ জবা আর মেডাম কেমন আছেন?
–তুইও মেডাম !!
–মেডামকে তো মেডাম ই বলবো তাইনা ?
জবা এগিয়ে এসে বলে –দোস্ত …এইগুলা কি ?? নাকে বড় নাকফুল কেনো ? মাথা ঘুরতাছে আমার ।
মলি লজ্জা মুখ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে –আসলে..আসলে পরিক্ষার পর এতোদিন মামুনকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না । এতোগুলো দিন একা একা থাকা যায় নাকি ! তাই বাবা মা কে রাজি করিয়ে বিয়েটা সেরেই নিয়েছি ।
–মানে কি ? কিভাবে কি ?আমরা জানলাম না কেনো?
–আসলে সময় ই পায় নি জানানোর । এতো বিজি ছিলাম মামুনকে নিয়ে যে কাউকে জানিতেই পারিনি ।
–আম্মাজান আফনে কি আব্বাজানের থাইকা দুইডা মিনিট ও সময় পান নাই ?
–আঙ্গে না । এক মিনিট ও পায় নি। সরিরে ।
লাবিবা রেগে গিয়ে বলে ঐ মামুন ভাইয়ারে ফোন দে । আসতে বল । বাথরুমে গেলেও একসাথে পাঠামু তোদের দুইটাকে । শালী তুই এক মিনিট টাইম পাস নাই তাইনা ? বিয়ে করে ভুলে গেছিস আমাদের ।
জবা চটপট মামুনকে ফোন দেয় । আর লাবিবা মিলির উপর রিতীমতো রাগের ফুলঝুড়ি ফুটাতে থাকে । মামুন হন্তদন্ত হয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে লাবিবার রাগ ঝাড়ানো দেখে লাবিবাকে থামাতেই লাবিবা মামুনের উপর রাগ ঝাড়ে । একটা ফোন করতে পারে না । এতোই বিজি তারা । দুজনকে আলাদা হতেই দেওয়া হয় না । অপারগ মামুন মিলির সাথেই মাথা নিচু করে কেপ পড়ে ক্লাস করে । মামুন বুঝতে পেরে বলে –চলো রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাক । জবা আর লাবিবার ঠোটে হাসি খেলা করে । আবার দুজনেই আফসোস করে শারমিনের জন্য । গাধীটা এখনো জামাইয়ের বাড়ি থেকে বেরোতে পারে নি । আফসোস ।
রেস্টুরেন্টে যেতেই বাবুর মুখোমুখি হয় । বাবু ক্রাচের উপর ভর দিয়ে হেটে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যাচ্ছিলো। লাবিবাকে দেখেই থমকে দাড়ায়। মামুন বাবুকে দেখেও না দেখার ভান করে ভিতরে ঢুকে পড়ে । কিন্তু লাবিবা চলে না গিয়ে বাবুর সামনে গিয়ে দাড়ায় । বাবু নির্লিপ্ত চোখে লাবিবাকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে নেয় । লাবিবাই প্রথম কথা বলে –কেমন আছেন বাবু ভাই ?
বাবুর মুখ থেকে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে চাইলেও সংযত করে । লাবিবা আবারো বলে –বাবু ভাই ‌। রাতে ঘুম হয় আপনার ? কথাটা বিদ্রুপের বুঝতে পারে বাবু। লাবিবা মুচকি হেসে বাবুকে ক্রস করতেই বাবু বলে উঠে –আই এম সরি । সরি ফর এভরিথিং । থমকে দাড়ায় লাবিবা । কিন্তু বাবুর দিকে না তাকিয়ে চলে আসে মিলিদের কাছে। চারজনে জমপেশ ভুড়ি ভুজ করে ।

চলবে __🍁

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৫৫ (শেষ পর্ব)

🍁

ক্যান্টিন থেকে বের হতেই বাবু সামনে এসে দাড়ায় । লাবিবা চমকে উঠে দু পা পিছিয়ে যায় । বুকে থু থু দিয়ে জিজ্জাসু দিষ্টিতে তাকায় । মামুন এসে বলে –কি ব্যপার বাবু ? পথ আটকিয়েছিস কেনো ? খুড়া হয়েও পথ আটকানোর স্বভাব গেলো না বুঝি তোর ? বাবু মামুনের কোন কথার জবাব না দিয়ে লাবিবাকে বলে -উত্তর টা না দিয়ে চলে গিয়েছিলে তাই অপেক্ষা করছিলাম। আমি জানি আমি ক্ষমার যোগ্য নই তবুও ক্ষমা চাইছি ।
–বাবু ভাই ..ক্ষমা একটি মহৎ গুন । আমি অনেক আগেই আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি । আপনার কৃতকর্মের সঠিক শাস্তিটি পেয়েছেন আপনি । আমাদের নতুন জীবনের জন্য দোয়া করবেন । আর দোয়া করি আপনার পা অতি শিঘ্রই ভালো হয়ে উঠুক আর বিয়ে করে সুখি হন।
–ধন্যবাদ তোমাকে ।
মামুন বিরক্তি ফিল করে খুব । মিলির হাত ধরে বলে –এলিজা আসো তো । আমার লেইট হচ্ছে । মামুনের পিছু পিছু লাবিবাও চলে আসে । কোয়ার্টারে ফিরে এসে ক্লাসের পড়া গুলো দেখে । কিছুক্ষন পর তানভীর আসে । লাবিবা তানভীরকে দেখেই মুচকি হাসি দেয় । তানভীর বিরক্তি নিয়ে লাবিবার দিকে একবার তাকিয়েই আবার মুখ সরিয়ে নেয় । ওয়াড্রোব থেকে কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে । লাবিবার এমন ব্যবহার দেখে তো আত্মা যায় যায় ভাব । তানভীর বেরিয়ে এলে আমি খাবার গরম করে রেখেছি খেতে আসুন । তানভীর কিছু না বলেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় । লাবিবা হতাশ মুখে বুকে হাত চেপে বসে পড়ে । একমিনিটের মাথায় তানভীর আবার ফিরে আসে । এসেই লাবিবার সামনে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়ে। রক্ত চক্ষু দেখে লাবিবার অন্তরাত্মা সহ কেপে উঠে । থুতনি উচিয়ে ধরে দাতে দাত চেপে বলে –বাবুর সামনে কেনো গিয়েছিলে ? কে বলেছিলো তার সাথে কথা বলতে ? কিসের মাফ চাওয়া চাওয়ি ? মাফ চাওয়ার নামে তার কলুষিতো চোখ আমার বউয়ের দিকে বিধিয়ে দিবে সেটা আমি কেনো মানবো ? কেনো কথা বলেছিলে বলো ? কিসের ক্ষমা চায় ও ?
লাবিবা কাপতে কাপতে বলে — বাবু ভাই ভালো হয়ে গেছে । আমার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি । শুধু ক্ষমা চেয়েছে । আমি ক্ষমা করে দিয়েছি ।
চেয়ারে লাথি দিয়ে উঠে পড়ে তানভীর । রাগ সামলাতে না পেড়ে খাটে সজোরে লাথি দেয়। লাবিবার পা ঝোলানো ছিলো বলে পায়ে একটু লাগার সাথে সাথে চিৎকার করে বিছানায় উঠে বসে। মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে পকেট থেকে ফোন বের করে সামনে ধরে বলে –যদি ক্ষমা চাইতেই যেতো তাহলে এই ভিডিওটা লিংকটা আমাকে কেনো পাঠালো ? নিচে আবার লিখে দিয়েছে হটাৎ প্রেয়সির সাথে দেখা ..প্রেয়সির সাথে কফিশপে এককাপ কফি খেয়ে বের হওয়ার সময় । মামুন লিংকটা না দিলে তো জানতেই পারতাম না আমি। কফি খেয়েছিস ওর সাথে তাই না ? তোর জনমের কফি খাওয়াবো আমি । শয়তান কোন দিন মানুষ হতে পারে না । ঐ বাবু কোনদিন ভালো হবে না ।
–আমি কফি খাই নি । শুধু কথা বলছি ।
— ঐ বাবুর সাথে যদি কথা বলিস তাহলে আর আমার সাথে কথা বলবিনা কোন দিন । অন্যের প্রেয়সির সাথে কথা বলবোনা আমি । মিনিমাম লজ্জা থাকলে ঐ বাবুর সাথে কথা বলতিনা তুই । নিলজ্জ কথাকার । এখন কত ভেজাল করতে হবে আমার সোশাল মিডিয়া থেকে এই ভিডিও ডিলিট দেওয়ার জন্য ।
রাগে গজ গজ করতে করতে তানভীর চলে যায় । লাবিবা সেখানে বসেই কস্টের জল বের করে দেয় চোখ থেকে ।
রাতে হাতে এক ব্যাগ বাজার নিয়ে কোয়ার্টারে ফিরে তানভীর । লাবিবাকে কয়েকবার ডাকার পর ও সাড়া পায় না । কিচেনে বাজার রেখে বেডরুমে এসে দেখে কম্বল মোড়া দিয়ে লাবিবা ঘুমোচ্ছে । এই গরমে কম্বল মোড়া দেওয়াতে ভয় পেয়ে যায় তানভীর । জর টর এলো নাকি ভেবে মুখ থেকে কম্বল সরাতেই লাবিবা বড় বড় করে তাকায় । চোখ মুখ পুরো ফুলে লাল হয়ে আছে । চোখের কোনায় এখনো জল । কাদছিলো যে আর বুঝতে দেরি হয়না তানভীরের । নিজেকে এবার অপরাধী মনে হচ্ছে । কেনো যে এই কাজটি করতে গেলো বুঝে উঠতে পারছে না । কপালে হাত দিতে গেলেই জোরে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেয় লাবিবা । হাত গরম দেখে বুঝতে পারে জর চলে এসেছে । হুটহাট জর কেনো চলে আসবে ? লাবিবাকে আবার ছোতে গেলে আবার ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেয় । তানভীর বলে –পুতুল বউ আমি সরি । তখন মাথা ঠিক ছিলো না আমার । তোমাকে বকে ফেলেছি বেশি । সরি বউ । আমি বুঝি নি । জানি না কি বলেছি । তোমার জর কিভাবে আসলো বলোতো ? দেখি টেম্পারাচার । হুট হাট জর তো আসার কথা নয় । আবার হাত এগিয়ে দিতেই লাবিবা কম্বল ছেড়ে উঠে আসে । বিছানা থেকে পা দুটো নামাতেই আহ করে উঠে । তানভীর সাথে সাথে পায়ের কাছে গিয়ে দেখে লাল হয়ে আছে গোড়ালির দিকে । লাবিবা ওভাবেই খুড়োতে খুড়োতে অন্য রুমে চলে যায় । তানভীরের ঘাম ছুটে যায় । এবার তো তার চোখে পানি চলে আসছে । তখন তাহলে এর জন্য চিৎকার করেছিলো। আঘাত করেছে তার বউপাখি টাকে । কিভাবে পারলো এটা করতে । এতো রেগে ছিলো যে আঘাত করে দিলো লাবিবাকে। এর জন্য ই জর চলে আসছে । এর আগেও মেরেছিলো তাখনো জর এসেছিলো। লাস্ট বার যখন চড় দিয়েছিলো ভয়ে তখনি ঔষধ খাইয়ে দিয়েছিলো যাতে জর আসার আগেই চলে যায় । এবার কি হবে ? লাবিবাতো কথাও বলছেনা তার সাথে । উঠে গিয়ে বক্স থেকে ট্যাবলেট বের করে পানি নিয়ে লাবিবার কাছে চলে আসে । সামনে বসে এগিয়ে দিয়ে বলে –কলিজাটা আমি সরি ট্যাবলেট টা খেয়ে নাও প্লিজ । লাবিবা ঘুড়ে বসে অন্যদিকে । তানভীর ঘুড়ে এসেই আবার বলে –জানটা আমার প্লিজ খেয়ে নাও । আমি আর বকবোনা তোমাকে । একটুও হার্ট করবোনা । আমি সরি । আমি খাইয়ে দিচ্ছি । হা করো প্লিজ । প্লিজ সোনা বউটা আমার হা করো । দেখো কতো জর গায়ে ।
হাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ঘুরিয়ে নেয় । উবু হয়ে পায়ে মলম লাগায় ।
তানভীর ব্যস্ত হয়ে বলে — আমি লাগিয়ে দিচ্ছি । তুমি ট্যাবলেটটা খাও প্লিজ দেন আমি লাগিয়ে দিচ্ছি ।
লাবিবা চুপ চাপ পায়ে মলম লাগিয়ে উঠে যায় । তানভীর কি করবে ভেবে পায় না । বেলকনিতে এসে মামুনের নাম্বারে কল দেয় । দুইবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করে বলে
–হ্যালো । বোন বলো ।
–বাবু ভাই কি বেচে আছে ?
একটা জোরালো নিশ্বাস ছেড়ে বলে –হুম বেচে আছে মড়ার মতো । একেবারে পঙ্গু হয়ে গেছে এবার ।
–ওহ রাখছি । বলেই ফোন কেটে দেয় । রুমে আসলে তানভীর আরো জোর করে কিন্তু একটা কাজ ও হয় না । সারারাত জরে কাতর লাবিবাকে দেখে দেখে কাটাতে হয়েছে । একটু কাছে পর্যন্ত ঘেসতে পারেনি । কাছে এলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় না পারলে অন্য রুমে গিয়ে দরজা লক করে দেয় । মুখ তো একেবারে বন্ধ টু শব্দ অব্দি করে না ।
পরদিন ক্লাস শেষে বের হতে সময় মামুন সামনে দাড়ানো। লাবিবাকে বলে আসো আমার সাথে । দুজনে গিয়ে বকুলতলায় বসে । মামুন ই প্রথম কথা বলে –শরীর কেমন তোমার ? জর কমেছে?
–কমেছে । ঔষধ খেয়েছি ।
–কথা বলছোনা কেনো স্যারের সাথে ? স্যার কেমন পাগল তোমার জন্য জানো তো । কষ্ট দিচ্ছো কেনো এইভাবে ?
–ভিডিও টা কেনো দিয়েছো ? এরজন্য কতো বকেছে আমায় । কথাও বলতে না করেছে ।
–শোন এলিজা । আমি তোমার ভাই তোমাকে নিয়ে গিয়েছি খাওয়াতে । সেখানে সামনে কেউ এলে তোমাকে আমি প্রটেক্ট করবো । কিন্তু সেইটা ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করবে এটা তোমার হাজবেন্ডকে কি করে না জানিয়ে থাকি আমি বলোতো ? তোমার সব কিছু উনার জানা প্রয়োজন । এইসব দেখলে মাথা এমনিতেই ঠিক থাকে না । তুমিতো অবুঝ নও তাহলে শুধু শুধু কেনো কষ্ট দিচ্ছ ?
–উনার একটু কষ্ট পাওয়া উচিত । আমাকে কষ্ট দিলে তো কষ্ট পাবেই তাই না ? আমাকে কাল ঝালমুড়ি খাইতে দেয়নি , সেদিন মুখ ফুটে বললাম হোটেলে যাবো তাও নিয়ে যায়নি , আমাকে মুইন ভাইয়ের বাসায় যেতে দেয়নি । কাল আবার বলেছে আমি যাতে কথা না বলি । বাবু ভাইয়ের সাথে যখন আমি কথা বলেছি তখন আর কোনদিন উনার সাথে কথা বলবো না ।
–এতো কিছুর প্রতিশোধ একটা দিয়েই তুলছো ?
–আলবাদ ।
–মাথা ঘুরছে আমার । স্যার আপনার অনেক অপরাধ। আমার বোন শাস্তি দিচ্ছে আপনাকে ।
–স্যার অফিস থেকে শুনতে পাবে না । জোরে চিল্লিয়ে বলতে হবে।
আমি সবি শুনেছি চিল্লানোর প্রয়োজন নেই ।
পিছু ঘাড় ঘোড়াতেই দেখে তানভীর পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে । সাথে সাথেই ঘাড় ঘুড়িয়ে চোখ শক্ত করে বন্ধ করে সোজা টনটনে হয়ে বসে পড়ে । তানভীর পকেট থেকে হাত বের করে লাবিবার হাত ধরে এসো বলে গেইটের দিক হাটতে থাকে । ইশারায় মামুনকেও আসতে বলে । ঝালমুড়িমামার কাছে গিয়ে বলে –মামা ঝালমুড়ি বানান । ঝালমুড়ি মামা ঝালমুড়ি বানাতে থাকে । লাবিবা একবার বানানো দেখে তো একবার তানভীরের দিকে তাকায় । মামুন মিটি মিটি হাসছে । লাবিবা অবাক হয়ে বলে মামা..আপনিতো লেবুই দিতে চান না এখন এগুলো কি দিচ্ছেন ? ঝালমুড়ি মামা হাসি দিয়ে বলে –ব্রয়লার মুরগীর কুচি কুচি করা কষা স্যুপ আর পাঙ্গাস মাছের তেলের মসলা । স্যার বলে দিয়েছিলো এখন থেকে আপনারা এই ঝালমুড়ি খাবেন ।
–মামা আপনার খরচ কতো পড়বে জানেন তো ? দশ টাকায় এতো কিছু দিয়ে ঝালমুড়ি ?? ভাভাগো ভাভা ভাবা যায় এগ্লা?🙄
–পঞ্চাশ টাকা করে বিক্রি করছি তো ।
–কিহহহ দশ টাকার ঝালমুড়ি পঞ্চাশ টাকা ? এটা কেমন কথা ? এতো লাভ করতে আসছেন আপনি ?
ধমকে উঠে তানভীর । এক ধমকেই চুপ হয়ে যায় । মামুনকে বলে –মলি কি চলে গেছে ?
–না স্যার । আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
–আসতে বলো । একসাথে ঝালমুড়ি খেয়ে যাক ।
মলি এলে ঝালমুড়ি নিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ে সবাই । লাবিবা দু একবার মুখে দিয়েই ঝালমুড়ি মামার কাছে এসে বলে –আল্লাহ মামা এত্তো মজা করে কেমনে বানান আপনি ? অসাধারন ইয়াম্মি ইয়াম্মি । আপনাকে পঞ্চাশ টাকার জায়গায় একশ টাকা দেওয়া উচিত । আমি যখন রোজগার করবো তখন একশ টাকা করে খাবো । এখন বুঝেন তো হাজবেন্ডের টাকার দরদ বেশি ।
“দুষ্টু পুতুল নন স্টপ বকবকানি রেখে চেয়ারে বসে চুপটি করে খাও এসে । ”
লাবিবা চুপচাপ এসে চেয়ারে বসে খেতে থাকে ।
তানভীর বলে –রাগ কমেছে ? আজ থেকে এই ঝালমুড়িটাই খাবে তুমি । এইটা খাওয়ানোর জন্য কাল না করেছিলাম ।
উত্তরে লাবিবা মুচকি হাসে ।
রাতে ডিনারের পর তানভীর বলে –চলো ছাদে যাই ।
–আজ তো আকাশে চাদ নেই । আমার ঘুম পাচ্ছে ।
–চলোতো ।
হাত ধরে টেনেই ছাদে নিয়ে আসে । তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে –চাদ নেই তো । আজকে কি আমরা তারা গুনবো ? আমি যদি বেশি গুনি তাহলে আমাকে কি দিবেন ?
–একগুচ্ছ কালো গোলাপের অসীম ভালোবাসা।
লাবিবা তানভীরে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বুকের উপর পিঠ লাগিয়ে দাড়ায়। পেছন থেকে হাত সামনে এনে ধরতেই লাবিবা আনন্দে ব্লাক রোজ বলে চিৎকার করে ফুলের তোড়া হাতে নেয় । তানভীরের গালে টুপ করে চুমু খেয়ে নেয় । তানভীর দুহাতে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে কাধে থুতনি রেখে বলে
— আমার পুতুল বউ কি হ্যাপি ?
— অনেকমাচ ভুরি ভুরি 😀 ।

😍 So sweet 😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here