একগুচ্ছ জারবেরা পর্ব -০৬

#একগুচ্ছ_জারবেরা
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৬

সেদিন চলে আসলাম।আরাদ ভাইয়া পরেরদিন ভোর বেলায় আমায় নিতে আসলো।আম্মুকে আগেই বলে রেখেছিলাম।এখানে আসতেই আমি এই জায়গার প্রেমে পরে গেলাম।জায়গাটা কুয়াশায় ঢা’কা পরাতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।ব্রিজের উপর আসলাম।আশেপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছে না।আমি আর আরাদ ভাইয়া ওখানে অনেক সময় গল্প করলাম।এদিকে আরাদ প্রেয়শীর অগোচরে প্রেয়শীর অনেকগুলো ছবি তুলে নিলো।প্রেয়শীর খিলখিল হাসির শব্দে আরাদ মু’গ্ধ হচ্ছে।হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছি!আরাদ ভাইয়া এতো হাসাচ্ছিলেন আমায়।বাসায় এসে ঘুৃমিয়ে পরলাম। আজকে শুক্রবার এর জন্য ভার্সিটি অফ।সেদিনের ঘটনার পর আমি আরাদ ভাইয়ার সাথে কথা বলিনি। আরাদ ভাইয়া অনেক বার ক্ষ*মা চাওয়ার পর আমি উনাকে ক্ষ*মা করেছি।কিন্তু প্রথমে তাও তার সাথে আগের মতো কথা বলতে পারিনি।আ’স্তে আ’স্তে আরাদ ভাইয়ার সাথে একটু স্বাভাবিক হতে পেরেছি।উনি আমায় ফ্রেন্ডের মতো ট্রিট করেন।উনি আমার ভালো ফ্রেন্ড হলেও আমি তো একজনকেই ভালোবাসি।উনার সাথে আমার কথা বলতে ভালো লাগে শুধু মাত্র ফ্রেন্ড হিসাবে।উনি আমাকে বোঝেন অনেক।

___________

কলিংবেলের আওয়াজ শুনে আম্মু বলল,,,
“প্রেয়শী দেখতো কে এসেছে”

“দেখছি আম্মু”

মাত্রই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে আসলাম।সোফায় বসতে বসতেই কলিংবেল বাজলো।আমি উঠে গিয়ে দরজা খুললাম।দরজা খোলার পর স্ত’ব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি!কাকে দেখছি আমি।এতোদিন পর আসলেন।চো’খে পানি টলটল করছ।যখন তখন পরে যাবে।

“কি হলো ভেতরে ঢু’কতে দিবি না প্রিয়”

আমি এতো সময় ভাবছিলাম আমি সপ্ন দেখছি।কিন্তু নাহ আনফি ভাইয়া এসেছেন।উনি আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন।আমি এখনো একটা ঘো’রের ভেতর আছি।

“কিরে প্রেয়শী কে আসলো”

আম্মুও কথাটা বলতে বলতে রান্নাঘর থেকে বের হলো।আম্মুও স্ত’ব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আনফি ভাইয়া আম্মুকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
”কেমন আছো মামিমনি”

আম্মু ঘো’র থেকে বেরিয়ে বলল,,,
“ভালো আছি আনফি বাবা তুই কেমন আছিস”

“আমিও ভালো আছি!সারপ্রাইজ কেমন দিলাম”

আনফি ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,,,
“প্রিয়রে তোর কি হয়েছে”

আমার ঘোর কাটল।টলমল চো’খে তাকালাম তার দিকে।সে আমার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে আম্মুকে বলল,,,
“মামিমনি খুব খুদা লাগছে সেই কখন থেকে খাই না”

“তুই বস বাবা আমি খাবার নিয়ে আসছি”

কথাটা বলেই আম্মু চলে গেলো রান্না ঘরে।আনফি ভাইয়া সোফায় বসে পরলো।তারপর আমায় টেনে বসিয়ে দিলো তারপাশে।আমার গালে হাত রেখে বলল,,,
❝আম সরি প্রিয় আমি বুঝতে পারিনি তুই এতো ক*ষ্ট পাবি কিন্তু আমি তো আম্মুকেও বলতে পারছিলাম না।যাই হোক তুই পারবি না তোর আনফিকে ক্ষ*মা করতে আমি কিন্তু তোর প্রিয় জারবেরা ফুল এনেছি!আমি জানি তুই আর রা*গ করতে পারবি না আমার উপর❞

আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো। আমি দৌড়ে উপরে চলে আসলাম।আনফি ভাইয়াও আমার পেছনে চলে আসলেন আমার রুমে।আমি বসে বসে কাঁদতেছিলাম।আনফি ভাইয়া এসে আমার পাশে বসে বলল,,,,
“তুই কি সত্যি এখনো রা*গ করে আছিস প্রিয়”

কাঁদতে কাঁদতে তার দিকে তাকালাম।প্রেয়শীর কান্নারত চোখ দেখে আনফি থ’মকে গেলো!আনফি প্রেয়শীর চো’খ মুছে বলল,,,,
“প্রিয়রে কিছু বল তুই!তোর কা’ন্না স*য্য হয় না আমার জানিস না”

❝আপনি সত্যিই এসেছেন আনফি ভাইয়া❞

“হ্যা রে পা*গ*লি আমি এসেছি তোকে ক’থাও দিচ্ছি তোকে ছা’ড়া কোথাও যাবো না আর কোনো দিনও”

এবার প্রেয়শী আনফিকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
❝আপনি প্লিজ যাবেন না আমার যে কিভাবে এই তিনটা বছর কেটেছে তা শুধু আমি আর আমার আল্লাহ ভালো জানেন।❞

“আমি আর যাবো না প্রিয় কথা দিচ্ছি তোকে তোর সব ইচ্ছা পূরণ করবো আমি।আমার মনের রানী তো হয়েই আছিস শুধু সবার মত নিয়ে তোকে আমার করে নেওয়ার পালা এবার।কান্না থামা আর কান্না করবি না আমি চলে এসেছি”

আমি কা’ন্না থামিয়ে মুচকি হাসলাম।আনফি ভাইয়া আমাকে নিয়ে নিচে নেমে আসলেন।আনফি ভাইয়া আর আমি খাবার খেয়ে নিলাম।খাবার খাওয়া শে’ষে আনফি ভাইয়া বলল,,,
”প্রিয় তুই যা রেডি হয়ে আয়”

“কেনো আনফি ভাইয়া কোথাও যাবো”

“হুম যা তুই”

প্রেয়শী উপরে চলে যেতেই আনফি বলল,,,
“মামিমনি আমি প্রিয়কে নিয়ে আমাদের বাসায় যাচ্ছি। রাতে এসে দিয়ে যাবো”

আম্মু হেসে বলল,,,
“আচ্ছা দিয়ে যাস”

”এতে সময় আসলাম কিন্তু প্রিয়ম বা মামাকে তো দেখলাম না”

“তোর মামা তো অফিসে আর প্রিয়ম কাজের জন্য শহরের বাইরে আছে”

“ওহ”

কথাটা বলেই আনফি ফোন দেখতে লাগলো।প্রেয়শীর আম্মু টে’নশনে পরে গেলো।সে বুঝতে পারছে কিছু একটা হতে চলেছে। আরাদ যে প্রেয়শীকে আনফির হতে দেবে না তা খুব ভালো করে জানে।আর আনফিও রে*গে গেলে কতো ভ’য়ং’ক’র হতে পারে তা সবাই জানে।আবার অন্যদিকে প্রেয়শীও আনফিকে ভালোবাসে।এখন কি হবে!

আমি সুন্দর করে রেডি হয়ে নিচে আসলাম।আনফি ভাইয়ার কাছে আসতেই আম্মুকে বাই বলে বেরিয়ে পরলাম।আনফি ভাইয়া আমার হাত ধরে বলে,,,
❝এই হাত যখন ধরেছি আর ছাড়ছি না কিন্তু❞

মিষ্টি হেসে বললাম,,,
“আমিও চাই না আপনি এই হাত ছাড়ুন আনফি ভাইয়া”

আনফি ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলল,,,
“তুই কি আমাদের বিয়ের পরও ভাইয়া বলে ডাকার প্লান করেছিস নাকি!”

“না না তা হবে কেনো!”

“তাহলে আজকে থেকে ভাইয়া বলবি না”

আমি মা*থা নাড়ালাম। আমি খুব ভালোবাসি এই লোকটাকে খুব কিন্তু আমি জানি না অন্যকেউ হলে কি করতো কিন্তু আমি আর আনফিকে হারাতে চাই না।
উনি উনাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো।ফুফি আনফি ভাইয়াকে দেখে খুশিতে কেঁ’দে ফেলেছে।ফুফি তার কাজের জন্য অ’প’রাধ বোধ করেছে তাই আনফিকে বলল।

___________

“প্রেয়শী কই তুই”

আরাদ ডাকতে ডাকতে প্রেয়শীদের বাসায় ঢু’কলো।প্রেয়শীর আম্মু আরাদকে দেখে বলল,,,,
“কিরে আরাদ তুই এইখানে এখন”

“আসলে খালামনি প্রিয়কে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাইছিলাম তাই আসলাম”

“ও তো বাসায় নেই তুই পরে আসিস”

“কোথায় গিছে ও”

“ও ওর ফুফিদের বাসায় গিছে”

আরাদ হেসে বলল,,
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি ওখান থেকে ওকে নিয়ে আসছি”

“আরাদ তোকে কিছু বলতে চাই আমি”

“বলো খালামনি”

“তুই প্রেয়শীর জীবন থেকে সরে যা”

আরাদ অবাক হয়ে বলল,,,,
“কেনো খালামনি কি হয়েছে”

“দেখ আরাদ প্রেয়শী তোকে কোনোদিন ভালোবাসবে না কারণ ও আনফিকে ভালোবাসে আর আনফিও ওকেই ভালোবাসে!”

“কিন্তু আনফি তো এখানেই নেই”

“ও ফিরে এসেছে।প্রেয়শী ওর সাথেই আছে।তাই বলছি আমার আমার মেয়েটাকে হাসি খুশি থাকতে দে বাবা তোর কাছে ভি*ক্ষা চাইছি আমার মেয়েটার সুখ।আমি জানি তুই আমায় স্বা’র্থপর বলবি কিন্তু কি করবো বল আমি তো দেখেছি এই তিন বছর ও কতটা ক*ষ্ট পেয়েছে আর দেখতে চাইছি না বাবা”

আরাদ কোনো কথা না বলে চুপচাপ বের হয়ে গেলো।প্রেয়শীর মা বসে বসে কাঁদতে লাগলেন।সে জানে আরাদ কখনো চুপ থাকবে না কিছু তো করবেই।কেনো হলো তার মেয়েটার জীবন এমন।একজন বাঘ তো আরেকজন সিংহ।কেউ কাউকে ছাড়বে না।

চলবে,,,,,,,?

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here