একজীবনে শুধু তুমি পর্ব ১

ইন্টারভিউ বোর্ডে নেহালকে দেখে ভীষণ অবাক হলাম।
,
আজ কে চাকরির জন্য এখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম।
,
এই কম্পানির এমডি যে নেহাল হবে সেটা ভাবতেই পারিনি।
খুব কষ্ট করে কান্না আটকে রেখেছি।
,
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে,
” কেন ফিরিয়ে দিয়েছিলে আমাকে? তোমাকে তো ভালোই বেসেছিলাম। এটা কি আমার অপরাধ? দেখ না তোমার মায়ায় এমনভাবে জড়িয়ে আছি যে আজ অবধি কারোরই হইনি।”
কিন্তু আপসোস আমি কিছুই বলতে পারছিনা।
,
ইন্টারভিউ শেষ নেহাল বলল,
,
মিসেস রাত্রি আপনি একটু আমার কেবিনে আসুন। গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে।
,
সরি স্যার, আপনি ভুল করছেন মিসেস না, মিস রাত্রি। আর হ্যা আপনার সাথে আমার কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকতে পারে বলেতো আমার মনে হয়না।
,
রাত্রি!!!
,
করুন চোখে তাকালো।
কিন্তু তার চোখের দিকে চোখ আমি রাখতে পারলাম না।
কেন যেন মনে হচ্ছে এই চোখে সেই মায়া রয়েছে যা ছিলো কয়েক বছর আগে।
তাই চোখ নামিয়ে নিলাম।
,
পাশথেকে আরেকজন বলল,
,
স্যার, আপনি কি ওনাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন?
,
হ্যা, মানে না।
,
বুঝলাম নেহাল বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
তাই এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হওয়ায় ভালো।
,
এক্সকিউজ মি স্যার আমি আসি। বলে নিজের ফাইলের ফিতাটা লাগিয়ে বের হতে নিলাম।
,
নেহাল আবার রিকুয়েষ্ট করলো।
ফেলতে পারলাম না যেমনটা ফেলতে পারিনি ৫ বছর আগে। পার্থক্য একটাই এখনকার অনুরোধ হলো কথা বলতে চাওয়ার আর তখনকার অনুরোধ ছিলো আর যেন কথা না বলি সেটার।
,
নেহালের পিছন পিছনে তার কেবিনের দিকে যেতে লাগলাম, ওর কর্মী দুইটা কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখলো আমাকে। কিন্তু আমার এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
,
নেহালের কেবিনে,
,
কেমন আছো রাত্রি?
,
“কেমন আছো তুমি কি জানো না।
জীবন্ত লাশ হয়ে আছি।
তোমাকে ছাড়া কিভাবে আছি তা বোঝানোর ভাষা নেই আমার।
তোমার কি একটুও কষ্ট হয়না আমার জন্য?
এতো পাষাণ কেন তুমি? যদি আমাকে ছেড়েই দিবে তাহলে সেই ৯ বছর আগে মিথ্যা মায়ায় কেন জড়িয়েছিলে।
কিন্তু মনের কথা মনেই রেখে দিলাম।”
,
জি, আমি খুব ভালো আছি।
,
কত বছর পর দেখা বলো! কিন্তু রাত্রি চৌধুরীর হঠাৎ চাকরির কেন প্রয়োজন?
যার নিজের বাবার কম্পানিতেই ১৫০০০ কর্মচারী রয়েছে।
,
সেটা আপনাকে জানাতে চাইনা আমি।
,
তুমি না জানাতে চাইলে জোর করবো না। কিন্তু তুমি কি জানো আমি তোমাকে অনেক খুজেছি? তোমার বাসাতে গিয়ে দেখি সেই বাসার মালিক এখন অন্যকেও।
কোনো ভাবেই আমি তোমাদের খোজ পাইনি। পাগলের মত খুজেছি তোমাকে।

আমি কোনো গুপ্তধন নই যে আমাকে আপনি পাগলের মত খুজবেন, মিস্টার নেহাল।
,
নেহাল মুচকি একটা হাসি দিলো।
এটা সাধারণ হাসি না। কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি আছে এই হাসিতে। যা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই।
,
তুমি জানো না তোমাকে কেন খুজেছি?
,
আজব! আমি কি ভাবে জানবো আপনি আমাকে কি জন্য খুজেছেন?
,
নেহালের এই কথা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। নিজেই সম্পর্কের ইতি টেনে আবার নিজেই খুজেছে। বিষয় টা হাস্যকর।
,
না আমি জানি না আপনি আমাকে কেন খুজেছেন।
আমার ইন্টারভিউ কেমন হলো আমি জানিনা। তবে যদি ভালোও হয় তাহলে দয়া করে আমাকে সিলেক্ট করবেন না।
,
তোমার রাগ আর অভিমান সেই আগের মতই আছে।
,
মনে আবারও বলে উঠলো “শুধু রাগ আর অভিমান না নেহাল, আমার ভালোবাসাটাও যে আগের মতই আছে। শুধু তুমি সেটা দেখতে পাচ্ছোনা”।
,
আপনি আমার এমন কেও না যার জন্য আমার রাগ বা অভিমান কিছু থাকবে।
,
কে!! সেতো তুমিই ভালো জানো।
,
বললাম তো জানিনা। আমি এখন আসি।
,
-রাত্রি। আমি জানিনা কি হয়েছে তোমার সাথে। কিন্তু তুমি যেহেতু বলতে চাওনা তবে একটা কথা বলছি, তুমি যেহেতু আমার এখানে জবের জন্য এসেছিলে জবটা আমি তোমাকে দিচ্ছি।
,
আমি কোনো ভিকারি না যে আমার জন্য আপনার এতো দয়া দেখাতে হবে।
আমার যোগ্যতায় ইনশাআল্লাহ আমি অন্য অনেক জব পেয়ে যাবো।
আর হ্যা যদি জানতাম আপনি এখানে আছেন তাহলে আমি কোনোদিন এই অফিসের ত্রিসিমানায় পা দিতাম না। আপনার দয়া আমার চাইনা। আমি এখন আসি।
,
বলে বের হতে নিলাম নেহাল আমার হাতটা ধরে ফেলল।
,
দাড়াও রাত্রি যেওনা। এটা দয়া না রাত্রি।
,
হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নিলাম নেহালের হাত থেকে।
,
এটা দয়া না তো কি মিস্টার নেহাল। আরেকটা কথা। এইযে আপনি ইন্টারভিউ এর পর কেবিনে পারসোনালি কথা বলছেন এর পর যদি আমি আপনার অফিসে কাজ করি তাহলে সবাই কি ভাবে বিষয়টা নিবে বুঝতে পারছেন?
,
কারো পরোয়া আমি করি না।
,
কিন্তু আমি করি মিস্টার নেহাল। আপনি একটা পুরুষ মানুষ সব কিছু ফেলে দিয়ে সামনে আগাতে পারেন কিন্তু আমি পারিনা। কিছু সৃতি আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে দেয়না। তাছাড়া লোকজনের কথা আমি আর শুনতে চাইনা।
,
রাত্রি আগেই এত কিছু ভেবে ফেলোনা। আমিতো আছি তোমার সাথে।
,
আমার সাথে না থেকে নিজের স্ত্রীর পাসে থাকেন তাহলে সে খুশি হবে।
,
সেটা তো থাকবোই। তোমাকেও সাহায্য করতে চাই।
,
আমার কথা যে জবাব নেহাল দিলো তাতে করে বুঝেগেছি যে তার বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে কেন সে আমার প্রতি এত কেয়ার দেখাচ্ছে।
,
আমি এখন আসি।
আর হ্যা আপনি যতই চাকরিটা দিতে চাননা কেন আমি এইটা করবো না।
,
দেখা যাক, চাকরিটা করো কি না!
,
মিস্টার নেহাল ভুলে যাবেন না। আমার প্রতি আপনার কোনো অধিকার নেয়।
,
যদি বলি আছি। আমাদের সম্পর্ক টা….
,
যেটা আপনি শেষ করেছেন।
এখন তো আপনার চরিত্রের উপর সন্দেহ হচ্ছে।
নিজের স্ত্রীর প্রতি সম্পর্ক, ভালোবাসা দেখাবেন।
একটা অচেনা মেয়েকে এতো আদিখ্যেতা দেখাবেন না।
,
রাত্রি!!
,
চিৎকার করবেন না মিস্টার নেহাল।
আমি সেই আগের রাত্রি নেই। যে সব কিছু মাথানত করে মেনে নেব।
আমি আমার মত বাচতে শিখেছি।
আমি আসি এখন।
ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
,
নেহালের কেবিন থেকে বের হয়ে আসলাম।
,
,
বাসাতে ফিরতে হবে তাই অনেক্ষন ধরে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি।
,
,
,
১ম পর্ব
,
#একজীবনে_শুধু_তুমি
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here