একটাই আমার যে তুই পর্ব ১

“আমার একটাই যে তুই”❤️
সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
পর্ব_১

–“এখানে দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে ছেলেদের মজ্জা দিচ্ছিস? লজ্জা করছে না?”

এমন একটি বাক্য শুনে হতভম্ব আমি। পিছনে ফিরেই দেখতে পাই সেই বিষাক্ত কথার মানুষটি আর কেউ না ইউসুফ ভাইয়া। যে এখন আমার দিক লাল লাল মার্বেলের মতো বিলাই চোখে তাকিয়ে আছে।যে চোখে নিজেকে হাারিয়েছি আমি।তার সেই চোখ গুলো দেখেই ভয়ে চুপসে গেলাম। সাথে সাথে যোগ হলো চোখের পানি।তিনি আবার ধমকে বললেন,,

–“এক্ষুনি ভিতরে যাবি। এখানে আর একবার দেখলে ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেবো। ”

তার ধমকে কেঁপে উঠি আমি।সাথে সাথে দৌড়ে রুমে চলে আসি।তিনি সব সময় এমন কেন করেন আমার সাথে? বুঝি না। লোকটি খুব খারাপ। সাংঘাতিক ধরনের খারাপ। শুধু শুধু বকে আমায়…! এ সব ভেবে কেঁদতে লাগি আমি। তখনি রুমে ঢুকে মিশু আপি।তিনি হচ্ছেন ইউসুফ ভাইয়ার আদরের এক মাত্র ছোট বোন। আমাকে কান্নারত দেখে আমার পাশে বসে পরেন তিনি। বিচলিত হয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে উঠে,,

–“সোনাপাখি? কান্না করছিস কেন? কি হয়েছে? কেউ বকুনি দিয়েছে? আমার সোনাপাখিকে?

মিশুপির কথায় কান্নার বেগ কমলো না বরং বারলো।হেঁচকি তুলে কান্না করছি আমি। মিশুপি মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,

–” ভাই বকেছে?”

আমি এবার মাথা উপর নিচ নেড়ে হে জানালাম। সাথে সাথে কান্নার বেগ দিগুন স্পিডে ছুটল।
তা দেখে আপি আমায় শান্ত করার ট্রাই করতে লাগলো আর জানতে চাইলো কেন কান্না করছি। এক পর্যায় কান্না কিছুটা কমে আসলো। পুরো পুরি থামলো না। তখন সেই কান্নারত ভাঙ্গা গলায় বলে উঠি,,

–“বা..বাহিরে তো..তোমার সে…স্টেজ স..সাজানো হচ্ছে হলুদের, আ..আমি নুশরা, বুশরা, তিথি দাড়িয়ে দে..দেখছিলাম তখনি তোমার সেই লম্বু খাসি, সাইকো ভাইটা এসে সবার সামনে আমাকে বলতে লাগে_(কান্না জড়িত কন্ঠে)আ..আমি নাকি ছে…ছেলেদের দা…দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজ্জা দিচ্ছি। বলে হাউমাউ করে কেঁদে আপিকে জড়িয়ে ধরে আবার বললাম,,

–“জা…জানো মিশুপি সে..সেখানে সবাই ছিল তাদের কিচ্ছু বললো না। কিন্তু আ…আমাকে সকলের সামনে অ…অপমান করলো। এ্যা এ্যা এ্যা…!

আবার কান্না করতে লাগলাম।তখনি মিশুপি আমাকে আদুরী সহিত বলল,,

–“কান্না করিস না কুহু! জানিস তো ভাই আমাদের নিয়ে কতটা সেনসিটিভ। আর তোর উপর একটু বেশী। তুই যে সবার ছোট তাই। বুঝলি?”

–” তাই বলে কি সবার সামনে এভাবে বলবে? আমি এখন তাদের সামনে কেমনে যাই? তুমিই বলো? আমাকে দেখে এখন তারা হাসবে..আর বাঁকা চোখে দেখবে!”

বলে আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলাম আমি।মিশুপি আপি আমাকে বুঝাবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে একে বারে বিরক্ত হয়ে বাহিরে চলে গেলেন। আর আমি নাক টেনে কান্না করে যাচ্ছি। কেন করবো না? ;উনি আমার প্রেস্টিজের বারোটা বাজায় দিসে! এখন সবাই হাসবে। সত্যি হাসবে?সাথে বাঁকা কথাও বলবে আর টিটকিরি দিয়ে বলবে,,

–“ওই দেখ যাচ্ছে কুহু। এত বড় মেয়ে বকা খায়? নিশ্চয় চরিত্র সমস্যা আছে ছিঃ ছিঃ! কি সাংঘাতিক ব্যপার!

এসব ভেবে কান্নার বেগে দিগুন থেকে তিনগুনে ট্রানস্ফার হলো।তখনি ধপাধপ পায়ে রুমে আসলেন ইউসুফ ভাই।সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেল আমার কান্না। তার পাশে আড়াআড়ি ভাবে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে মিশুপি। ইউসুফ ভাইয়ার চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট। তখনি তিনি রেগে দাঁত কিড়মিড় করে বলতে লাগেন,,

–“ওই ছিঁচকাঁদুনে মাইয়া! কাঁনদিস কেন? কান্নার প্রতিযোগীতায় বসেছিস? হুম! আর একটা বার যদি কান্নার আওয়াজ আসে তাহলে তোর কণ্ঠনালী শিলি করে দেব। যতসব আজগবি কারবার।”

বলে তিনি ঠিক যেভাবে ধপাধপ পায়ে এসেছিলেন, ঠিক তেমনি বেড়িয়ে গেলেন। আর আমি চোখ বড় বড় করে তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে রইলাম।এটা কি ছিল তাই ভাবচ্ছি। কান্না অটোমেটিকলি বন্ধ।তখনি মিশু আপি পাশ থেকে নিজের মাথায় চাপর দিয়ে বলল,,

–” ভাইকে ডাকলাম কি জন্য? আর সে করলোটা কি? সরি বোনু আমার জন্য আবার বকা খেলি। কই বলে এলাম তোর কান্না থামাতে উল্টো রাগ দেখিয়ে চলে গেল।তুই ঠিকি বলেসি ভাই সত্যি সাইকো।বড় মাপের সাইকো। আচ্ছা বাদদে তো চল আমায় রেডি করাবি না? চল চল কান্না একদম বন্ধ। বাঁচিয়ে রাখ পরশুর জন্য বুঝলি।”

আমি মিশু আপির দিক অসহায় মুখ করে তাকিয়ে মাথা নাড়ালাম। অর্থাৎ হে বুঝেছি।তারপর আপির সাথে চলে গেলাম আপিকে সাজাতে।আজ মিশুপির হলুদ সন্ধ্যা।পার্লার থেকে লোক এসেছে তার আপিকে সাজাতে ব্যস্ত। নুশরা, বুশরা, তিথিরা রেডি বাকি শুধু আমি।কিন্তু আমার সাজ্জতে ইচ্ছে করছে না। মোটেও না।তখনের কথা মনে পরে দুঃখ দুঃখ লাগচ্ছে। ভাবচ্ছি সেই মানুষ গুলোর সামনে কিভাবে যাই? কিভাবে????
মিশু আপির কথায় আমার ভাবনায় ছেদ পড়ে।তিনি কাউকে বলছেন আমাকে সাজাতে।মেয়েটিও টেনে নিয়ে বসিয়ে দিল আয়নার সামনে। আর সাজাতে লাগলো। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই আমার।শুধু মনে পরছে সেদিনের কথা যেদিন এই ইউসুফ নামক ক্রাশে আহত হয়ে দিনের পর পর দিন বাশ খাচ্ছি আমি।এইতো আজ থেকে তিন মাস আগের ঘটনা। সেদিন ছিল নাহার ভিলার জন্য আনন্দের দিন।নাহার হচ্ছেন আমার নানু আর ইউসুফ ভাইয়ার দাদুর নাম।তিনি তার ছোট নাতিকে অত্যধিক ভালবাসেন।তাই তিনি খুব খুশি এক যুগ পর বাড়ির ছোট ছেলে বিদেশ থেকে ফিরছে বলে কথা। পুরো বাড়িকে সেদিন রঙ্গিন আলোয় রাঙ্গানো হয়েছিল।বড় মামা শাফিন তার ছেলের স্বাগতম জানানোর জন্য তার দল বলের লোক জন রেডি। যেহেতু বড় মামা মেয়র আর তার ছেলে আসবে বলে পুরো ময়মনসিংহ আনন্দে উৎসবের ঢল নেমে এলো। ছোট মামাও তার ইম্পরট্যান্ট মিটিং ক্যানসেল করিয়েছে। অবশেষে তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে হাজির হলো ইউসুফ ভাইয়ার গাড়ি…!

গাড়ি থেকে নেমে আসতেই তার উপর পড়লো ফুলের বর্ষণ। আমি তাকে দেখার সেদিন কি ব্যর্থ চেষ্টাই না করছিলাম। এক গাদা মানুষ ঠেলে ঠুলে যখন দেখতে না পাই তখনি দৌড়ে চলে যাই ছাদের দিক।সেখান থেকে স্পষ্ট দেখতে পাই তার মুখ খানা।সেদিন মুগ্ধ নয়নে দেখছিলাম তাকে। মাথা ভর্তি হালকা কোঁকরানো আর সিল্কি সংমিশ্রণ চুল।পাতলা লালচে ঠোঁট, মনে হচ্ছে লিপস্টিক দেয়া। বিলাই চোখ, টোল পড়া গালে হালকা চাপ দাড়ি।, ফর্শা রং আর থুতনিতে খাঁজ।সব মিলিয়ে মারাত্মক সুন্দর যাকে বলে। আমি তাকে দেখে ক্রাশ খেয়ে বসলাম কয়েক দফা।আমি তার দিকে তখন হা করে দেখছিলাম।শুধু যে আমি দেখছিলাম তা মোটেও না এলাকার মেয়েরাও গিলে খাচছে তাকে।নিজেকে তখন বেহায়া মনে হচ্ছিল তাও চোখ সরাতে পারিনি। মনে মনে প্রশ্ন জাগছিল, আচ্ছা উনি এত সুন্দর কেন? মেয়েরাও তো এত সুন্দর হয় না? তাহলে? কেন উনি এত সুন্দর? কেন? কেন? আচ্ছা উনি যদি মেয়ে হতেন? তাহলে ছেলেদের লাইন লেগে যেত নির্ঘাত? তখন তার অনুভূতি কি হতো? এক দিন জিগেস করবো! তখন কি তিনি রাগ করবেন? না কি বলবেন? মেয়েটি পাগল, বড্ড পাগল। আচ্ছা উনি মেয়ে হলো? তার নাম কি হতো? খায়রুন সুন্দরি??

আমি এসব আজগবি প্রশ্ন যখন ভাবচ্ছি তখনি তার সাথে গাড়ি থেকে নেমে আসে এক ইংলিশ মেম। যাকে দেখে আমার খুশি খুশি মুখটা চুপসে গেল! কিন্তু কেন? সাথে বুকে চিন চিন ব্যথা! এসব কেন হচ্ছে? বুকে হাত দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম তাদের দিক।মনে হচ্ছি মেইড ফোর ইচ আদার।তখনি ইউসুফ ভাইয়া উপরে তাকালেন। তার চোখের সাথে আমার চোখা চোখি হতেই হারিয়ে গেলাম তার সেই বিড়াল চোখের গভীর অতলে। পলকহীন ভাবে চেয়েছিলাম একে অপরের দিক!কতক্ষণ খেয়াল নেই।তখন তার সেই চোখের চাহনীতে আমার কি হলো ঘুরে গেল চারিদিক। অসাড় হয়ে গেল শরীর। ধীরে ধীরে চোখ দুটি বুজে আসলো। সেখেনেই পরে গেলাম আমি। তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here