একটি জটিল প্রেমের গল্প পর্ব -০৭+৮

#একটি_জটিল_প্রেমের_গল্প
ভাগ-৭

লেকের ওপাড়ে সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে আছে আফ্রিতা। তার হাতে একটা চিপসের প্যাকেট। থেমে থেমে চোখ মুছছে, আর একটু পরপর প্যাকেট থেকে চিপস বের করে মুখে পুরছে। ওর আশেপাশে মানুষজন তেমন নেই, শুধু একটা কুকুর ঘুরে ঘুরে যেন পাহারা দিচ্ছে৷

আমার মনে হলো ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কী হয়েছে? কান্নারত মুখটা দেখে কেমন রাগ গলে পানি হয়ে যেতে লাগল। কী হলো ওর? সারাক্ষণ পড়াশুনা নিয়ে থাকা মেয়ের আবার কষ্ট কী? কিন্তু যেতে মন সায় দিল না। এত কষ্টে এই মেয়ের মোহ থেকে বের হচ্ছি, সেসব কষ্ট বিফল করে দিয়ে নতুন করে জড়িয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না৷ ওর কাছে যেতে না পারলেও চলে যেতে পারলাম না। হাঁটাহাঁটি করতে থাকলাম, শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখার জন্য।

আমার উদ্দেশ্যহীনভাবে একই জায়গায় চক্কর খাওয়াটাই বোধহয় আফ্রিতার দৃষ্টি আকর্ষন করল। খেয়াল করলাম ও চশমার কাচটা মুছে নিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখল এটা আমিই কি না। তারপর হাত ইশারায় ডাকল। আমি তো অবাক! আমায় কেন ডাকছে? অগত্যা আর বাঁধা মানল না মন। চলে গেলাম ওর কাছে।

পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম, “কাঁদছ কেন? কী হয়েছে?”

আফ্রিতা ঢোক গিলে বলল, “তোর সাথে যা হয়েছে তাই।”

অবাক হয়ে বললাম, “আমার সাথে আবার কী হয়েছে?”

“তুই আমার থেকে রিজেক্টেড হইছিস, আমি অন্য কারো থেকে।”

আমার মুখটা বিরাট হা হয়ে গেল। লেকের পাশে প্রচুর মশা। একটা ঢুকেও গেল ভেতরে। কাশতে কাশতে গলা ব্যথা করে জিনিসটা বের করা গেল। আফ্রিতা দেখি আগুন হয়ে যাবে অবস্থা। বিড়বিড় করে বলল, “গাধা!” বলেই আবার ডুকরে কেঁদে উঠল।

বললাম, “আহা বলো না কার থেকে রিজেক্ট হয়েছ? শুধু কাঁদলেই হবে?”

সে চোখের জল হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে বলল, “আকিব ভাই।”

আমি একেবারে হা হা করে উঠলাম, “সে কী! উনি না তোমার ফুপাতো ভাই?”

আফ্রিতা সরু চোখে চেয়ে বলল, “তোকে কে বলল?”

বুঝলাম আকিব ভাইয়ের কাছে আমার যাওয়ার কথা এখনো আফ্রিতার কাছে গোপন আছে। বললাম, “সেটা যেভাবেই হোক, জানি।”

“তো ফুপাতো ভাইকে পছন্দ করা যায় না? ওকে আমি ছোটবেলা থেকে পছন্দ করি। কিন্তু ও আমাকে পছন্দ করে না৷ অন্য কাউকে ভালোবাসে।”

আফ্রিতা এবার ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে নাক মুছল।

আমার মনে হলো, বাহ! বেশ তো! এবার আকিব ভাই যাকে ভালোবাসে সে তাকে রিজেক্ট করে আমার পেছনে ঘুরলে একেবারে চেইন কমপ্লেক্স রিলেশনের ষোলো কলা পূর্ণ হতো!

আফ্রিতা বলতে থাকল, “অনুষ্ঠানের দিন সেজেছিলাম, আকিব ভাই দেখে বলল, তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে আফু৷ আমার মনে হলো এটাই পারফেক্ট সময় প্রপোজ করে দেয়ার। করলামও, কিন্তু আমাকে হেসে উড়িয়ে দিল। তারপর যা করল!” বলে আবার কান্না!

“কী করল?”

“সবার কাছে আমাকে বোন বলে পরিচয় করিয়ে দিল।”

আমি খিক করে হেসে ফেলতে গিয়ে বহুকষ্টে নিজেকে সংবরণ করে নিলাম।

“তাই জন্য পড়াশুনা বাদ দিয়ে কাঁদছ? কাল না পরীক্ষা?”

“আমাদের পরীক্ষা শুরু এক সপ্তাহ পর। কিন্তু আমি কিছু পারি না। রেজাল্ট খারাপ হবে।”

“হায় হায়! কেন?”

“কিছু পড়তে পারিনি এই ক’দিন।”

“আকিব ভাইয়ের শোকে?”

আফ্রিতা উত্তর দিল না। আমি বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, “তোমার আর আমার উল্টো ফল হয়েছে। আমি এই ক’দিন তোমাকে ভুলে যেতে পড়াশুনায় ডুবে থেকেছি। আমার প্রিপারেশন খুবই ভালো।”

আফ্রিতা দেখি বেশ অবাক হলো। বলল, “তাই নাকি?”

“হ্যাঁ।”

“পড়াশুনা নিয়ে থাকলে ভুলে থাকা যায়?”

“সেটা আমার চেয়ে তোমার ভালো বোঝার কথা।”

“আমার পড়তে বসতেই ইচ্ছে করে না। শুধু মনে হয় আকিব ভাই কেমন করে আমাকে নিয়ে জোক করতে পারল!”

“ওইটা তুমিও আমাকে নিয়ে করেছ আফ্রিতা।” আমি গম্ভীর হয়ে বললাম।

আফ্রিতা সমবেদনার চোখে চেয়ে বলল, “স্যরি মাসুদ। তোর সাথে যা করেছি সেটা ইচ্ছে করে করেছি যাতে তুই আমার পেছনে ঘোরা ছেড়ে দিস।”

“তোমার প্ল্যান সাকসেসফুল। আর আকিব ভাইও সেজন্য তোমাকে নিয়ে মজা করেছে।”

“আমি এখন কী করব মাসুদ?”

“পড়ে পরীক্ষা ভালো দাও। আকিবের চেয়েও ভালো ছেলে পাবা, চিন্তা করো না।”

আফ্রিতা চোখ-নাক মুছে থিতু হয়ে বলল, “তাই করব। সপ্তাহখানেক সময় আছে, হয়ে যাবে বল? আগের পড়াও আছে অনেক কিছু৷ থ্যাংস মাসুদ। তোর জন্য নতুন করে মোটিভেট হলাম।”

আমি মজা করে বললাম, “তাহলে মোটিভেশন দেবার গুণ আমার আছে?”

আফ্রিতা উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে যেতে বলল, “একেবারেই না।”

আমিও উঠে উল্টোদিকে হাঁটা ধরলাম। মনের বোঝা অনেকটা হালকা লাগছে। মনে নানা সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। গুনগুন করে গাইতে গাইতে বাসায় পৌঁছে গেলাম।

পরদিন পরীক্ষা দিতে গেছি, হঠাৎ সেখানে আফ্রিতার আগমন। আমার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এটা রাখ। খবরদার পরীক্ষা দেবার আগে খুলবি না।”

আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বোকার মতো। এ যেন থ্রিলার গল্পের রহস্যভেদের সময় বলে দেয়া, আগে পরীক্ষা দে, শেষ হলে বাকিটা জানতে পারবি। #একটি_জটিল_প্রেমের_গল্প
ভাগ-৮

চিঠি পড়ে মনে হলো, রহস্যময় জগতের সর্বাধিক রহস্যময় নারীর সাথে আমার পরিচয় হয়ে গেছে, যে রহস্যের সমাধান করা আমার মতো অধম মাসুদ রানার পক্ষে সম্ভব নয়। এজেন্ট মাসুদ রানা পারত কি না তাতেও সন্দেহ আছে! যদিও তার নারীদের বিষয়ে উৎসাহও কম ছিল না!

পরীক্ষা আমার ভালোই হলো। সব লিখলাম৷ মাঝে মাঝে পেটে গুড়গুড় শব্দ হতে থাকল। আগে ভাবতাম পেটে গন্ডগোল হলে বা হজমের সমস্যা হলে এরকম শব্দ হয়। কিছু জানার কৌতুহলেরাও পেটে ঢুকে একম শব্দ করতে পারে কে জানত!

আমি বিভাগ থেকে বের হয়ে সোজা একটা তেঁতুল গাছের তলায় বসে চিঠি খুললাম৷ তাতে লেখা-

“আজ বিকেল পাঁচটায় টিএসসির ছাদে অপেক্ষা করবি। কাজ আছে। যদি না থাকিস তাহলে তুই আমাকে যে ন্যাকামি ভরা প্রেমপত্র দিয়েছিস সেটা প্রিন্ট করে ক্যাম্পাসের সব জায়গায় টানিয়ে দেব।”

আক্কেল গুড়ুম হওয়ার জোগাড়! প্রেমপত্র লিখলাম কবে তাই ভেবে পেলাম না। হঠাৎ মনে হলো চিঠিতে তো কোনো সম্বোধন নেই৷ তাহলে এটা আফ্রিতা অন্য কাউকে লেখেনি তো? হয়তো তাকে পৌঁছে দিতে আমার কাছে দিয়ে গেছে। আকিব ভাই নয় তো? ভাবনাটা আরও রাগ ধরিয়ে দিল। ভেবেছিলাম পরীক্ষা শেষে বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দেব, তা কোথায় হতে দেবে মহারানী? এখন বসে বসে মাছি মারতে হবে। এতটা সময় কী করব! তাও আবার এত বড় একটা ধাঁধা নিয়ে!

অযথা বসে না থেকে ক্লাবে চলে গেলাম। আমাদের ইউনিভার্সিটির বয়েজ ক্লাব। কেন তৈরি হয়েছিল সেটা এখন আর জানা নেই, এখন এখানে বসে শুধু আড্ডাই হয়। দুটো টেবিল জোড়া দিয়ে টেবিল টেনিস খেলা হয় কখনো সখনো। একটা বেঞ্চে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। অদ্ভূত বিষয় হলো আমি আধ মিনিটের মাথায় ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙল বিকাল চারটায়৷ কিছুক্ষণ লাগল বুঝতে কোথায় আছি। শক্ত বেঞ্চে শুয়ে শরীরে হালকা ব্যথা অনুভব হচ্ছে। কেমন যেন শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। তবে মনটা খুব বেশি ভালো। দারুণ স্বপ্ন দেখেছি।

দেখলাম আফ্রিতা আর আমি লেকের পাড়ে বসে আছি। লেকটা পার্কের লেকের মতো ঘোলাটে পানির না, স্বচ্ছ পানির লেক। তাতে বড় বড় সফেদ রাজহাঁসেরা জলকেলি করছে। একটা বিশাল নৌকা বাঁধা ঘাটে। আফ্রিতা আমার হাত ধরে বসে আছে। একটা বাদামওয়ালা এসে বলল, “বাদাম নিবেন?”

আফ্রিতা মিষ্টি হেসে বলল, “আমি খাব না। অ্যাই তুমি খাবা?”

আমি বললাম, “হু।”

তারপর আমি বাদাম কিনে খোসা ছাড়িয়ে আফ্রিতার মুখে পুরে দিলাম। আফ্রিতা লজ্জা পেয়ে বলল, “কী যে করো না!”

স্বপ্ন এখানেই শেষ। এখন ভোর নয়, তবু আমি মোটামুটি নিশ্চিত হলাম স্বপ্ন পূরণ হবে। নইলে এই সময়ে ঘুমই বা আসবে কেন, আর এমন স্বপ্ন দেখবই না কেন! চিঠির রহস্যময় অংশের কথা বেমালুম ভুলেই গেলাম৷

ওয়াশরুম থেকে একটু পরিপাটি হয়ে গুনগুন করে গাইতে গাইতে পৌঁছে গেলাম টিএসসির ছাদে। হাতে একটা রক্তজবা, পাশেই গাছে ফুটে ছিল, টুক করে ছিঁড়ে এনেছি। কাউকে আশেপাশে দেখতে না পেয়ে আপনমনে জবা ফুলকেই আফ্রিতা ভেবে বলতে শুরু করলাম, “আমি জানতাম তুমি আমায় ডাকবে। এই সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা বাংলাদেশের তরুণীদের হৃদয় বাচ্চাদের গালের মতোই কোমল, কথার সুর বাঁশির চাইতেও মধুর, গায়ের ঘ্রাণ গন্ধরাজের চাইতেও ভালো। সেই মেয়ে হয়ে তুমি আমায় আর কত কষ্ট দেবে বলো? অনেক কষ্ট পেয়ে গেছি। সেসবের আজ ইতি ঘটবে। তারপর শুধু তুমি আর আমি….”

“তোর কি পড়তে পড়তে মাথায় সমস্যা দেখা দিল?” আফ্রিতার গলার স্বর যেমন, তারচেয়েও অতিমাত্রায় কর্কশ করে সে পেছন থেকে বলে উঠল।

আমি হতাশ হয়ে পিছু ফিরলাম। মনে হলো ঘুমের ঘোরে ছিলাম এতক্ষণ, এখন বাস্তবে ফিরে এসেছি। আফ্রিতা সামনে এসে বলল, “কী বলছিলি বিড়বিড় করে?”

সুন্দর স্বপ্ন নষ্ট করার জন্য খানিক বিরক্ত হলাম। শুকনো মুখে বললাম, “তাতে তোমার কী? কী বলতে চাও বলো।”

“চিঠি পড়ে আবাক হোসনি?”

“আমি এত সহজে অবাক হই না।”

আফ্রিতা কৌতুক মাখা দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, “বাহ!”

আমি বললাম, “তুমিও তো বেশ সামলে নিয়েছ। গতকাল যেভাবে কাঁদছিলে!”

আফ্রিতা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, “সেটা অন্য সময় ছিল। আমি ঠিক হয়ে গেছি।”

“আমার জন্যই তো তাই না?”

“মোটেও না!” প্রতিবাদ করে বসল আফ্রিতা।

আমি বাঁকা হাসলাম। উপকারের কথা স্বীকার করতেও কত কষ্ট!

আফ্রিতা বলল, “তোকে কেন ডেকেছি সেটা বলি।”

“বলো।”

“আমার হয়ে একটা কাজ করে দিতে হবে।”

“কী কাজ?”

“আকিবের প্রেমিকাকে এটা দিতে হবে।” আরেকটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল আফ্রিতা।

“এটাতে কী আছে?”

“প্রেমপত্র।”

“এই প্রেমপত্রের কাহিনীটা কী বলোতো? চিঠিতে লিখেছিলে আমি নাকি তোমাকে কোন প্রেমপত্র দিয়েছি?”

“ওটা লিখেছি যাতে তুই সেই রহস্যের ঘ্রাণে চলে আসিস।”

“অহ। তো এবারের প্ল্যানটা কী?”

“আকিবের প্রেমিকাকে এটা দিবি৷ আমি তারপর আকিবকে ফোন করে বলব তোমার গার্লফ্রেন্ড অন্য একজনের সাথে প্রেম করছে। প্রমাণ হিসেবে ওর কাছে এই চিঠিটা পাওয়া যাবে। চিঠিতে এমন সব কথা লেখা আছে যে…!” বলতে বলতে থেমে গেল আফ্রিতা। ওর চোখদুটো চকচক করছে।

“তারপর আমার কী হবে?”

“তোর নাম লিখিনি তো। তুই চিঠিটা দিয়ে দৌড় দিবি যাতে তোর চেহারা দেখতে না পায়। এখানে নামের জায়গাতেও তোর নাম নেই। সো ডোন্ট ওরি!”

আমার প্রথমবার অনেক বেশি হতাশ আর বিতৃষ্ণা জাগল মেয়েটার ওপর। নিজের স্বার্থে অন্য একটা মেয়েকে দোষী বানিয়ে দিতে কি ওর একটুও খারাপ লাগছে না? এসব কী? আমি এতদিন ওর পেছনে ঘুরেছি? কেমন যেন অবসাদে ছেয়ে গেল পুরো শরীর। দিনটা হঠাৎ যেন উজ্জ্বল থেকে মরে গেছে। পাখিরা ডাকাডাকি বন্ধ করে দিয়েছে। আমাকে গুম মেরে যেতে দেখে আফ্রিতা বলল, “তোর কী হলো?”

বললাম, “এই কাজ আমি কেন করব?”

“কারণ তুই আমাকে পছন্দ করিস। কি করিস না? তাহলে প্রমাণ দে সেটার।”

আমি চিঠিটা নিলাম। সাদা খাম, কিছুই লেখা নেই তার ওপর। আফ্রিতা বলল, “এদিকে আয়, দেখিয়ে দেই ওকে।”

আমরা ছাদের কোণায় চলে গেলাম৷ সেখান থেকে দেখা গেল ছোটখাটো কোমল মুখের একটা মেয়ে বসে আছে গালে হাত দিয়ে। তার সাথে আরেকটা মেয়ে ক্রমাগত হাত নাড়াচাড়া করে কথা বলে যাচ্ছে। “ওইযে মেয়েটার হাতে পেছন থেকে চিঠিটা গুঁজে দিয়ে এক দৌড় দিবি যাতে মুখ দেখতে না পারে। আমি এখানেই থাকব। দেখব ঠিকমতো কাজ করতে পারলি কি না।”

“আচ্ছা।” বলে চলে নিচে নেমে গেলাম। খাম খুলে আসল চিঠিটা বের করে একটা সাদা কাগজ ভাজ করে ভেতরে ঢুকিয়ে নিলাম। তারপর আফ্রিতার কথামতো কাজ করে দূরে গিয়ে ওকে ইশারায় থাম্বস আপ দেখিয়ে হেঁটে চলে গেলাম। মেয়েটাকেও এক নজর দেখলাম।

চিঠিটা পড়ে আমি হতবাক! আফ্রিতা বক্তৃতা দেয়া মেয়ে। এত গুছিয়ে চিঠি লিখেছে যে মনে হচ্ছে সত্যি প্রেম করছে। একটা আফসোসের সুক্ষ্ম ব্যথা মনটা ভরিয়ে দিল। চিঠিটা আমার জন্য ওর লেখা হতে পারত! এই চিঠি দেখলে আকিব ভাই যে জ্বলেপুুড়ে শেষ হয়ে যাবে তা আর বলতে! ভাগ্যিস দেইনি। এখন কাজ হলো আকিব ভাইয়ের কাছে গিয়ে সব বলে দেয়া। আমি সবার আগে একটা ফটোকপির দোকানে গিয়ে চিঠিটা কপি করিয়ে ফেললাম৷

তারপর গেলাম সোজা আকিব ভাইয়ের কাছে। রাজনীতি করা ছেলেরা এ সময় ক্যাম্পাসের পেছনদিকে মুকিত মিয়ার চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়। গিয়ে সত্যি ভাইকে পেয়ে গেলাম৷ তাকে ডেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে পুরো বিষয়টা খুলে বললাম। ভাই অবাক হয়ে চেয়ে রইল আমার দিকে। আমি ফিরে গেলাম।

ভীষণ রাগ লাগছে আমার। ইচ্ছে হচ্ছে নিজের চুল নিজেই কেটে ফেলি। চুলের কথাটা মাথায় ঢুকতেই কী যে হলো, বাস থেকে নেমে সোজা সেলুনে ঢুকে মাথা কামিয়ে ফেললাম। চুল বিসর্জন দেবার সাথে সাথে মনে মনে একটা বাক্যই আউড়ে গেলাম, “আফ্রিতা নামের মেয়েকে আমার জীবন ও স্মৃতি থেকে আজীবনের জন্য বিসর্জন দিলাম।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here