একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-১৩
রোকসানা আক্তার
“আপু চেঁচাচ্ছ কেন এত?কি হয়েছে?”
অশ্রু চোখমুখ লাল করে নুজিফার দিকে তাকায়।নুজিফা খানিক টুকু বিচলিত হয়।তেজি গলায় বলে,
“এইযে পুরো টেবিল-বিছানা জুড়ে বইপত্র সব ছিটানো এরকমটা হলো কিভাবে?”
“তোমার রুমে আমি আজ মোটেও আসিনি।তবে সকালবেলা বিপুল ভাইয়া একবার আমায় বলেছিলেন হূমায়ুন আহমেদের “শ্রাবণের মেঘ”-উপন্যাসটি খুঁজতে তোমার সেলফ বুকস সার্চ করবেন।”
“উপন্যাসের নামটা কী যেন বললি?”
“শ্রাবণের মেঘ।”
নুজিফার বলা শেষ হলে অশ্রু সঙ্গে সঙ্গেই বুক সেলফের কাছে গিয়ে হাতিয়ে হাতিয়ে উপন্যাসটি খুঁজতে থাকে।হূমায়ুন আহমেদের সবগুলো উপন্যাসই ঠিকঠাক আছে।তবে শ্রাবনের মেঘ উপন্যাসটিই অনুপস্থিত। অশ্রুর বুঝতে আর সময় হয়নি এই কাজটা কার!তেড়ে গিয়ে বিপুলের রুমে এগোয়।দরজা বরাবর আসতেই অশ্রু থেমে যায়।বিপুল উবু শুয়ে পা নেড়ে নেড়ে হট মুভি দেখছে আর হাসছে।তা দেখে অশ্রুর রাগ আরো বেড়ে যায়।রাগটাকে খিঁচে গলায় খেচকি টানে।দরজার সামনে কেউ দাড়িয়ে বিপুল উপলব্ধি করতে পেরে তড়িঘড়ি ঠিকঠাক হয়ে বসে।পেছনটায় তাকিয়ে দেখে অশ্রু।অশ্রুকে দেখে তার ভাব আরো বেড়ে যায়।পূর্ব প্রস্তুতিতে উল্টো মুভি দেখায় মনোনিবেশ করে।এবার অশ্রুর রাগ চটে বসে।দ্বিধাহীন মনে হনহনিয়ে রুমে ঢুকে।তেজি গলায় বলে উঠে,
“তোমার সাহস তো কম নয় আমার রুমে এসে আমার বুক সেলফের বইগুলো উলটপালট করে চলে এসছ!”
বিপুল অশ্রুর কথায় কোনোরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে নিজমনে মুভিই দেখছে।
“আমি কিছু বলছি!কানে কি যাচ্ছে না!?”এভাবে পুনঃবার।তিনবারের সময় বিপুল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।মুখে কিঞ্চিৎ বিরক্তি চেপে বলে,
“দেখতেই তো পাচ্ছিস মুভি দেখছি তারপরও ডিস্টার্বের কোনো মানে হয়?”
“বয়সে পরিপক্ব তবে ম্যানার্সে যে এতটা অসামঞ্জস্য মাথায়ই ছিলনা।”
“আচ্ছা আমি ম্যানার্স জানি না, তুইতো জানিস।তাহলে একজন রিলেটিভের সাথে কেমন ভাবভঙ্গিতে কথা বলতে হয় সেটাতো বোধহয় তোকে আমার শিখিয়ে দিতে হবে!”
“আমি ছোট বাচ্চা নই যে কেউ আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে ধরিয়ে আমায় ম্যানার্স শেখাবে!”
“তাহলে তুই বুড়ি?”
“ভাইয়া! “ বিপুল খিলখিল হেসে দেয়।তা দেখে অশ্রু রাগে গজগজ করে উঠে।বিপুল হাসি থামিয়ে অশ্রুর দিকে পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টি এঁটে।অনেকদিন পর তার অশ্রুকে আজ স্বচোখে দেখতে পেল বিপুল।গোনে গোনে আজ চারশত পঞ্চান্ন তম দিন।এতটা দিন শুধু অপেক্ষায়ই ছিল আজ তার অবসান ঘটলো।বিপুল ধ্যানমগ্নতায় অশ্রুকে বলে,
“কি সুন্দর মায়াবী দুটো চোখ।আঁখি ভরা তার ভাসা জল।।
কি সুন্দর দু’খানা ঠোঁট।ভ্রমর বসে শুষে নেয় মিষ্টি ঠোঁটের রস।।
কি সুন্দর গোলগাল মুখ।স্বপ্ন ঘোরে চুম্বন এঁকে ভিজিয়ে দিব মুখ।
এই রূপের তাড়নে হারিয়েছি বহুকাল।হারিয়ে যাচ্ছি, যাবো।বাঁধা নেই কোনো।।অনেক ভালোবাসি তোমায়, তুমি কি বাসো ভালো আমায়?
নিমজ্জে বলা কথা শেষ হলে চোখমুখ তীক্ষ্ণ করে সামনে তাকায় বিপুল।সামনে অশ্রু নেই।কখন যে সে এখান থেকে উধাও হলো তা টেরই পায়নি।
মুখটা কিঞ্চিৎ বেঁকে আক্ষেপ কন্ঠে বলে উঠে,
“আহা, স্বপ্নের পরী আজও আমার মনের কথা শুনলা না!”
অশ্রু বিড়বিড় মুখে বিপুলের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে আর ছিটানো বইগুলো তুলে তুলে সেলফে বসাচ্ছে।গোছানো প্রায় শেষের দিকে আসলে টপকে বিপুল অশ্রুর রুমে প্রবেশ করে বিছানার উপর ধপ মেরে শুয়ে পড়ে।অশ্রু হাত চালানো বন্ধ করে তেড়ে বিপুলকে বলে উঠে,
“তোমার সমস্যা কি ভাইয়া!বলোতো?”
বিপুল একপাশ হয়ে ডানহাত মাথার নিচে আড়ি পেতে রাখে।মৃদু কন্ঠে বলে,
“ভালোবাসি বলে দে।তাহলে আর তোকে জ্বালাতন করবো না।আই গড প্রমিস।”
“কতবার বললাম এসব ফাজলামো আমার একদম ভালো লাগে না!তারপরও কেন তোমায় বারংবার জানান দেওয়া লাগে!”
“এটা কোনো ফাজলামো না।আই’ম সিরিয়াস অশ্রু।”
“তো করো গা।কে কি তোমাকে হাত বেঁধে রেখেছে নাকি।পৃথিবীতে তো আর মেয়ের অভাব নেই।”
বিপুল শোয়া থেকে ঠিকঠাক হয়ে বিছানার উপর বসে।স্মিত মুখে বলে,
“পৃথিবীতে মেয়ের অভাব নাই তবে এই অশ্রুটারই অভাব।”
অশ্রু আর কিছুটি না বলে বিপুলকে ওভারটেক চলে আসে।সে জানে বিপুল যে তাকে অনেক ভালোবাসে।তার সাথে অন্য সম্পর্ক গড়তে চায়। তাকে তার বউ করতে চায়।আর অশ্রু?অশ্রুর কোনো ফিলিংসই নাই বিপুলের উপর।সে বিপুলকে কাজিন ছাড়া কখনো অন্যচোখে দেখে নি বা দেখার চেষ্টাও করেনি।তারমতে রিলেটিভতো রিলেটিভই তাদের সাথে অন্য সম্পর্ক গড়তে যাওয়া মানেই পুরাতন সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়া।অশ্রু রুম থেকে বেরিয়ে সোফায় বসা তার মামীর পাশে গিয়ে বসে।মামী তার আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টগুলো নেড়েচেড়ে দেখছেন।
“মামী?তোমার পেঁটব্যথা ভালো হয়েছে?”
মামী রিপোর্টগুলো টি-টেবিলের উপর রেখে দৃঢ় নিঃশ্বাস ছেড়ে অশ্রুর দিকে তাকায়।মলীনতায় বলেন,
“সে আর কইরে মা! ডাক্তার বললেন পৃত্ত্বথলীতে নাকি পাথর হয়েছে।অপারেশন লাগবে।তাই ঢাকায় ভালো কোনো সার্জারী ডাক্তার দেখিয়ে অপারেশন করিয়ে ফেলবো।”
“অপারেশন?”জিম হয়ে যায় অশ্রুর মাথা।অপারেশনের কথা শুনলেই অশ্রু ভীষণ ভয় পায়।ও যখন খুব ছোট ছিল তখন সে একটা দুর্ঘটনা অবলোকন করে।পাশের বাসার নাহিদার সাথে হাটি হাটি পা পেলে গ্রিল ছোঁয়া খেলা করতে গেলে ধপসে নিচে পড়ে নাহিদার মাথা ফেটে যায়।মাথা থেকে সে কী রক্ত!রক্তের প্রবল স্রোত দেখেতো ভয়ে কাঁপুনি ওর হাড়।তাড়াতাড়ি নাহিদাকে পার্শ্বস্ত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। তখন অশ্রু স্পষ্ট দেখতে পায় ডাক্তার মাথার স্ক্যাল্প চামড়ার মধ্যে সুঁই ঢুকিয়ে সড়াৎ সড়াৎ সেলাই করে দেওয়ার দৃশ্য।তারপর থেকে মাংস সেলাইয়ের কথা শুনলেই বুঁকের বাম পাজর ছিঁড়ে যাওয়া অবস্থা ওর।অশ্রুর ভয়ার্ত মু্খ দেখে মামী বুঝতে পেরে মুঁচকি হেসে বলেন,
“কিরে ভয় পেয়েছিস?”
“হু,মামী।”
“বোকা মেয়ে।অসুখ-বিসুখ সব আল্লাহর নেয়ামত।আর তা প্রটেক্ট করতে স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালার পাঠানো ডাক্তার হলো একটা মাধ্যম।”
“হুম জানি, মামি।”
“তাহলে ভয় পাস কেন?”
“জানি না।তবে তোমাকে দেখো অনেকটা উৎসাহিত হলাম।”
“আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে জাস্ট নিজের মনকে দখলে রাখবি।”
“কালতো ডাক্তারের কাছে যাবা,না?”
“হুম।”
“সাথে কে যাবে বিপুল ভাইয়া?”
“হুমমম।”
অশ্রুর মা তখন কিচেনে।পোলাউ তে গরম পানি মিক্সডের জন্যে অশ্রুর ডাক পড়ে।
“হ্যা মা আসছি।মামী তুমি থাকো।”
“আচ্ছা যা।”
অশ্রু কিচেনে যায়।মায়ের সাথে কাজে হাত লাগায়।গরম পানি উৎরে আসলে বাসমতী চালে ঢেলে দেয়।পারুল বেগমের আজ সারাটা দিন ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে।সেই সকাল থেকে রান্নায় হাত লাগিয়েছেন এই জলপান,এই দুপুরের লাঞ্চ।অন্যদিকে আলাউদ্দিন আবার ডায়বেটিস রোগী।তারজন্যেও আলাদা খাবার রান্না করতে হয়।এতসব কাজ পারুল বেগমের একাই করতে হয়।
নুজিফা এখনো ভালোভাবে রান্না জানে না।অশ্রু যা-ই জানে সে বাসায় ছিলনা।এখন আবার রাতের খাবারের জন্যে ইলিশের পাঁতুড়ী,ডিমের কোরমা,
ডাল ভুনা,রসুনের ভর্তা।ডাল ভুনা,ডিমের কোরমা,রসুনের ভর্তা তৈরী শেষ।বাকি আছে ইলিশের পাতুড়ী। ওটা অশ্রু আবার ভালো জানে।সে প্রায়শই নিজহাতে ইলিশের পাঁতুড়ী রান্না করে।অশ্রুর হাতের ইলিশের পাতুড়ী খেয়ে আলাউদ্দিন প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
“এই অশ্রু?পোলাওটা হয়ে আসলে নামিয়ে রাখিস।আর ইলিশ মাছ ফ্রীজ থেকে নামিয়ে নিয়েছি।পাতুড়ীটা ছড়িয়ে দিস।মা মাগরিবের নামাজ পড়ে আসছি।”
“আচ্ছা মা।যাও।”
পারুল বেগম চলে যান।অশ্রু পোলাও রান্না শেষ করে পাতুড়ী বসিয়ে দেয়।ডিনারের সময় সবাই পেটপুরে খায়।বিপুলের তো ঠোঁটের কার্ণিস থেকে গুণগানের শেষ নেই।
“উফস ফুঁপি,আমাদের অশ্রুতো সেই ভালো রান্না জানে।জিহবাটা স্বাদে স্বাদে ভরে গেছে।এমন একটা লক্ষ্মী মেয়ে যেই ব্যাটার বউ হয় সেই ব্যাটার কপালতো চাঁদের আলোয় ঝিকঝিকে ভরে উঠবে।”
বিপুলের কথা শুনে সবাই খুশিতে খিলখিল হাসে।অশ্রু মোটেও এর ধার ঘেঁষে না।সে জানে বিপুল সবসময়ই আগ বাড়িয়ে কথা বলে বেশি।পানিকে দুধ বানাতে তার বাম আঙ্গুলের কাজ।একারণে,বিপুলের অতিরঞ্জিতায় অশ্রুর অসহ্য অনুভব হয়।অশ্রু ডিনার শেষ করে তার রুমে চলে আসে।বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিতেই নুজিফা এবং ইরা রুমে এসে হাজির।তাদের দুজনের হাতে দুটা বালিশও আছে।অশ্রু ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
“কী ব্যাপার,তোরা আমার রুমে!”
“আমরা আজ তোমার সাথে ঘুমাবো আপু।” একসুরে বলে উঠে দুজন।
অশ্রুর ভীষণ রাগ উঠে।নুজিফার নিজেরই তো একটা রুম খালি পড়ে আছে তাহলে এ রুমে কি!অশ্রু কিছু বলার আগেই নুজিফা বলে উঠে,
“আপু আমি জানি তুমি তোমার সাথে আমাদের ঘুমুতে নিবে না।কিন্তু আমার রুমটা বুকিং।ওই রুমে মামী ঘুমাবেন।আর বিপুল ভাইয়া গেস্ট রুমে।মা-বাবা উনাদের রুমে।”
আসলেইতো। রুমতো আর খালি নেই।অশ্রুর এতক্ষণে তা খেয়ালেই আসেনি। ভ্রু দু’টো মসৃণ করে মুখে হাঁসি এঁটে বলে,
“আচ্ছা ঘুমাস।”
দুজনে খুশিতে লাফিয়ে উঠে।ইরা ঘুমানোর আগেই বায়না ধরে বসে।
“আপু?মজার মজার গল্প শোনাতে হবে কিন্তু।নাহলে আজ রাত তোমায় ঘুমুতে দিবনা।”
“তোরা কি এখন ছোট বাচ্চা?”
“তাহলে আমরা বুড়ি?”(ইরা)
“এই ইরা তুই-না খুব পাজী।ঠিক তোর ভাইটার মতো।”
“ভাইয়াকে পাজী বলতে পারো আমাকে নই।কারণ আমি ভদ্ররানী।না নুজি?”
“হুমম।”(নুজিফা)
“নুজি হইছে আরেকটা পাজী।এক পাজী আরেক পাজীকে সাপোর্ট করবে স্বাভাবিক তাই!হা হা হা। “
“আপু!”টকটকে গাল দুটো আরো লাল হয়ে যায় নুজির।তা দেখে অশ্রুর আরো হাসি পায়।হাসি থামিয়ে বলে,
“নাহ আমার ছোট্র আপু দুটা খুব খুব ভালো।এবার খুশি?”
নুজিফা এবং ইরা হেসে উঠে।
“বহুৎ হাসছিস এবার ভদ্র মেয়েদের মতে চুপচাপ শুয়ে পড়।”
“আপু গল্প?” (ইরা)
“আজ নয়।কাল বলব।”
“আচ্ছা। “ মলীন মুখে বলে ইরা।
নুজিফা এবং ইরা ঘুমিয়ে পড়ার পর অশ্রু বুক সেলফ থেকে একটা উপন্যাস নিয়ে পড়তে বসে। মনস্থিরভাবে পড়ার ফাঁকে হুট করে অশ্রুর মাথায় একটা ভাবনা ধেঁয়ে যায়।সেটা হলো অরুন।এতদিন নিজেকে প্রাণপনে আড়ালের পরও বাঘের মুখে সন্ধা হলো।সেই বাঘটাই আজ কিনা ওভার মুডে ছিল।বহুরূপীতে বেস্ট মানানসই।যেকোনো পরিস্থিতিকে হ্যান্ডেল করতে যথেষ্ট সে।অশ্রুর এসব ভাবনার মাঝেই তার সারা শরীর শিরশির করে উঠে।
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-১৪
রোকসানা আক্তার
কল বাজছে।অশ্রু চোখ-মুখ নিথর রেখে আলবোলা ঘুমিয়ে আছে। প্রায় দেড়েক সময় পার হলো ইরা এবং নুজিফা রুম থেকে বেরিয়েছে।ফোন কলের ঝং ঝং ধ্বনি অশ্রুর ঘুমের ঘোর কাটায় ব্যস্ত আর ধ্বনিটার আওয়াজ এড়াতে অশ্রু বারংবার কম্বল মুয়ে নিচ্ছে যেন আরো কিছুক্ষণ সময় ঘুমাবে।শীতকালের সকালটা সবারই একটা অলসতার মধ্য দিয়ে যায়।সূর্যের মৃদু রশ্মিতেও ঘুমের আড়মোড়া ভাঙ্গতে চায়না।কম্বল ছেড়ে উঠা মানেই কনকনে বরফে পা রাখা।অশ্রুও তার ব্যতিক্রম নয়।কলের কম্পন ধ্বনি উল্টো বিরক্তিতে রূপ নিচ্ছে।বারংবার ফোনকলে মাথায় রাগ চেপে বসে।গাঁ থেকে কম্বল ধপসে ফেলে বিছানা থেকে নেমে যায়।রাতে শোয়ার আগে ফোনটি চার্জে রেখেছিল।আর চার্জিং মাল্টিপ্লাগ তার পড়ার টেবিলের উপর।ধীরপায়ে হেঁটে মোবাইলটি হাতে নিয়ে কানের পাশে গুঁজেই চোখদুটো বুঁজে আনে এবং ঠোঁটে ঝাড়ির লেস রেখে তার মুখ খোলার আগেই ওপাসের ডায়ালার থেকে ঝাড়ি খেতে থাকে।
“এই তুই কোনো মানুষ নাকি জন্ত, বলতো?এই যে এত্ত এত্তবার কল দিচ্ছি ফোনের কাছে না থাকিস অন্তত কলের আওয়াজটাতো শুনতে পেতিস!”
রুমকি কল করেছে।তাও যে রাগটা ঝাড়বে ও, তার আগেই রুমকি তার উপর উল্টো রিয়াকশন করে বসে।অশ্রু কি থেকে কি বলবে কিছু না ভেবে পেয়ে চুপ হয়ে যায়।
“সাতবারের মতো কল দিয়েছি তারপরও রিসিভ করিস নি। বাসায় কি ঘোড়ার ডিম পাড়িস?”
“ঘুমে ছিলাম।”মৃদু কন্ঠে।
“আটটা বেজে গেছে আর তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস!হায়রে!”
“আচ্ছা এসব না বলে কেন কল করছিস তা বল।”
“আমি এখন তোদের বাসার নিচে দাড়িয়ে আছি।”
“তুই আমাদের বাসার নিচে আর বাসায় আসছিস না।এটা কেমন দেখায় বলতো?”
“তোদের বাসা পাঁচতালায়।সিড়ি বেয়ে এত্ত উপরে উঠা ইম্পসিবল। তারউপর ক্লান্ত।”
“বুঝলাম।তা হঠাৎ এরকমটা আসার কারণ?””
“মার্কেটে যাবো।”
“মার্কেটে?”
“হু।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে আস।”
“আমিও যাচ্ছি?”
“তোকে ছাড়া মার্কেটে কখনো একা গিয়েছি?”
“আজ যে যাবি তা তুই কালতো আমায় কল করে জানাতে পারতিস।”
“হুটহাট প্লান।নিচে আস পরে সব বলব।এমনিতে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে পা’টা ব্যথায় কুঁকড়াচ্ছে।”
“আচ্ছা রাখ,আসছি।”
বলেই অশ্রু কল রেখে দেয়।তারপর ব্রিফকেস থেকে লতা কালার একটা ড্রেস বের করে বাথরুমে চলে যায়।ড্রেসটি পরিধান শেষ করে ড্রেসিং-এ এসে মুখে হালকা প্রোডাক্ট মেখে নেয় এবং চোখে গাঢ় কাজল লেঁপে দেয়।লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে বাইরে বের হয়।বসার রুমে তখন বিপুল টিভিতে খেলা দেখছিল।সে অশ্রুকে দেখামাএই চোখদুটো খাঁড়া করে ফেলে।এমনভাবে অশ্রুর দিকে দৃষ্টি এঁটে যেন চোখের পলকই পড়ছে না তার।বিপুলের এমন চাহনি দেখে অশ্রু মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“এভাবে তাকাইও নাতো ভাইয়া।নজর যাবে!”
বিপুল ফিকে হাসি দেয়।সায় ছেড়ে বলে,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“জানি না।রুমকি নিয়ে যাচ্ছে।গেলেই বুঝবো।”
“ওহহহ।সাবধানে যাইস।”
“তা তোমায় বলতে হবে না।”
বলেই অশ্রু বিপুলকে ওভারটেক করে কিচেনে তার মাকে বলে বেরিয়ে আসে।নিচে নেমেই রুমকিকে দেখে।রুমকি বিমূঢ় হয়ে অন্যদিক তাকিয়ে আছে।অশ্রু পেছন থেকে রুমকির ঘাড়ে হাত রাখতেই রুমকি চমকে উঠে।বুকে থু-তু দিয়ে হালচোখে পেছনে তাকায়।রুমকির ভয় পাওয়া দেখে অশ্রু খিলখিল হেসে বলে,
“ভয় পেয়েছিস?”
“তো-কি।যেভাবে পেছন থেকে চমকে দিয়েছিস!”
“হা হা হা।
হাসি থামিয়ে অশ্রু হাই ছেড়ে আবার বলে,
“কী এমন মার্কেট করতে আমার স্বাদের ঘুমটা ভেঙ্গে দিয়ে আমায় এখানে নিয়ে এসছিস এবার তার কারণ বল।
” বলব।জাস্ট রিলাক্স। ওয়েটিং এ ফিউ মোমেন্ট।
বলেই তার ব্যাগ থেকে মোবাইল টুকে কাউকে কল দেয়।ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই,
“হ্যাঁ,আমরা মাএ রওনা করলাম।অশ্রুকেই নিয়ে আসছি।ওকে।বায়।”
“কার সাথে কথা বললি?(অশ্রু)
“ ইমতিয়াজের সাথে”
“ইমতিয়াজ ভাইয়ার সাথে!”
“হু।অবাক হচ্ছিস যে?”
“এই যে মার্কেটে যাচ্ছিস আবার উনাকেও রওনা হওয়ার কথা বলছিস।ব্যাপারটা বুঝলাম না।”
অশ্রুর কথায় রুমকি মুচকি হেসে বলে,
“ইমতিয়াজ কাল কল করে বলল আজ নাকি আমাদের বিয়ের কেনাকাটা টা সেরে ফেলবে। পরের সময়গুলোতে তার হাতে আর নাকি সময় থাকবে না।কেনার-কানার যত আত্মীয়-স্বজন আছে সবাইকে ইনভাইট করা লাগবে।এছাড়া প্যান্ডেল ট্যান্ডেলে নানানও ঝামেলা।এসবতো আর অরুনের পক্ষে একা হ্যান্ডেল করা সম্ভব নয়।”
“বুঝলাম।তারমানে আজই তোর বিয়ের মার্কেট?”
“হু।”
“রুমকি তোর এখন কেমন অনুভূতি হচ্ছে?”
“কেমন মানে?”
“এইযে পছন্দের মানুষটি সাথে আজ নিজে গিয়েই বিয়ের মার্কেটিং করছিস।”
“জানি না রে।তবে মনের অব্যক্ত কোণ থেকে একফালি আনন্দের ছোঁয়া অনুভূত হচ্ছে যার চাপা আনন্দের কারণ জানি না।”
অশ্রু হেসে দেয়।হুট করে কিছু একটা মনে আসতেই বলে,
“আচ্ছা উনার ওই অধর্ম ভাইটাও যাচ্ছে নাতো আমাদের সঙ্গে?”
“তা জানি না।অরুনের ব্যাপারে আমায় কিছু বলেনি ইমতিয়াজ।”
“তাহলে খাইছে রে!”
বলেই হাঁটা মধ্যি থেমে যায় অশ্রু। রুমকি সেদিকে তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে বলে,
“কেন কি হয়েছে?”
“ওইটা যদি চলে আসে তাহলেতো বিরাট ঝামেলা হয়ে যাবে রে রুম।”
“আহা,আবার বেকার চেন্তা নিচ্ছিস।অরুন মনে হয় আসবে না।তাছাড়া অরুন যদি আজ আসতোই তাহলে ইমতিয়াজ আমায় এ ব্যাপারে বলতো।”
“বুঝছি।আচ্ছা এবার চল।”
তারপর দুজন একটা রিকশা নিয়ে শ্যামলী শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছায়।তার মিনিট দশেক পরেই তাদের সামনে একটি ব্লাক কার এসে থামে।গাড়িটি থেকে ইমতিয়াজ এবং অরুন বেরিয়ে আসা দেখেই অশ্রুর চোখদুটো খাঁড়া।ইমতিয়াজ মুঁচকি হেসে তাদের সামনে এসে বলে,
“গুড মর্নিং অল!”
“গুড মর্নিং।(রুমকি)অশ্রু জবাব দেয়নি।সে থম মেরে দাড়িয়ে আছে।ইমতিয়াজের উওর যে দিবে সে ভাষা তার মুখে বাঁধা।পাশ থেকে অরুন শুধু রুমকিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
“তো হবু ভাবী কেমন যায় দিনকাল?”
“ভা-ভা-ভালো।”ইতস্ততা নিয়ে বলে।সেও যে একসময় অশ্রুর সহিত অরুনের চোখে সমান অপরাধী ছিল এখন তার ভাবতেই অপ্রস্তুত বোধ চলে আসে।নিজেকে সামলে বলে,
“তোমার কি অবস্থা?”
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ।তো এবার মার্কেটে যাওয়া যাক?চলো ভাইয়া।”
ভাবের ছলে ইমতিয়াজকে ইঙ্গিত সবাইকে পাশ কেটে আগে হাঁটা ধরে।তা দেখে অশ্রুর পিত্তি জ্বলে উঠে।মনে মনে বিড়বিড়িয়ে নিজমনে বলে,
“কী ভাবরে!ভাব দেখলে আর বাঁচি না।আজাইরা ঢং যত্তসব।”
চলবে…..
(বোনাস পার্ট নাওও দিতে পারি।আমার কাজিনের টেস্ট এক্সাম চলছে।তার এ্যাসাইনমেন্টগুলো এখনো শেষ হয়নি।জমা দেওয়ার কাল লাস্ট ডেট।তাই কোনোমতে বারোটার আগে যদি ওর এ্যাসাইনমেন্টটা শেষ দিতে পারি তাহলে চেষ্টা করবো বোনাস পর্ব দিতে।প্লিজজ একটু বোঝার ট্রাই করুন।কাজিনটা এ্যাসাইনমেন্টের জন্যে অনেক দূর থেকে এসছে😑)
চলবে…
(আমি বলি নাই যে নায়ক বিপুল হবে অথবা অরুন।অশ্রুর তো এখন প্রমটাই শুরু হয়নি।)