একটুখানি বিশ্বাস পর্ব ১৫+১৬

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-১৫
রোকসানা আক্তার

বিয়ের কেনাকাটা শেষ করে অরুন সবাইকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে।শপিং ব্যাগগুলো সাইড সিটে ছিটকে রেখে ক্লান্তিমগ্নে মাথাটা ডিভানে এলিয়ে দেয় আর বামহাতে সামনের চুলগুলো মুচড়ে চোখবুঁজে আনে।মাথাটা খুব ধরে আছে তার।সেই সকালে বাসা থেকে বেরিয়েছে আর সবগুলো শপে ঘুরে ঘুরে ইউনিক ড্রেসগুলো খুদিয়ে নিতেই দুপুর গড়িয়েছে।তাছাড়া বিয়ের সবগুলো ড্রেস অরুনই চোজ করেছে।ড্রেসের গুণ-মান,কোয়ালিটি,রুঁচি এভরিথিং ব্যাপারে অরুনের আইডিয়া ভালো।। তাই ইমতিয়াজ সবটা অরুনের উপর বর্তায়।ইমতিয়াজতো প্রথমেই শপে ঢুকে সাদা কালার লেহেঙ্গা চোজ করে বসে।তা দেখে অশ্রুর প্রায়ই হাসি পাওয়া অবস্থা। সম্পূর্ণ সাদা বললে ভুল হবে।সাদার উপর হালকা করমচা কালারও ছিল লেহেঙ্গাটিতে।ইমতিয়াজের চোজিং ব্যাপারে রুমকির তেমন আপত্তিকর ছিলনা। ইমতিয়াজ যেমনটি পছন্দ করবে সে তাই পড়বে।তবে ইমতিয়াজের চোজিং-এ অশ্রুর থেকেও অরুনের আরো বেশি নাক উঁচে আসে।সে খ্যাঁক খ্যাঁক গলায় বলে,
“আজকাল বিয়েতে কেউ বিধবা কালার পড়ে!উফস ভাইয়া, তোমার ইন্টারেস্ট এত আনাড়ি কেন!বিয়ের জন্যে টকটকে লাল লেহোঙ্গা বেস্ট।অন্যান্য রঙ্গের তুলনায় লাল একটু ভিন্ন কালারের।লাল রঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি।তাই খুব সহজে লালরঙ্গে সবার দৃষ্টি কাড়ে যতটা অন্য রঙ্গে কাড়ে না।এছাড়াও লাল হলো ভালোবাসার প্রতীক।তোমাদের এই আলবোলা ভালোবাসাটা বিয়ের পর আরো পোক্তপাক্ত হবে।কি ভাবি ঠিক বললাম না?”
অরুনের এমন অশালীন কথায় রুমকি মাথা নুইয়ে আসে।আর ভেতর গত লজ্জ্বায় ফেটে যায়।মুখের কিঞ্চিৎ অংশও লাল আভায় ভরে উঠে।ইমতিয়াজ তা বুঝতে পেরে বলে ,
“এই অরুন তোর এই লাগাম বিহীন কথা যেখানে সেখানে না ছাড়লে হয়না?ব্যাটা দেহেই বড় হইলি আর জ্ঞানে কাঁচাই রয়ে গেলি।”
“আহা,ভাইয়া তুমি-না একটু বেশিই বুঝো।দেবর-ভাবীর ব্যাপার-স্যাপার তুমি এ ব্যাপারে নাক না গলালে হয় না?”
অরুনের হাড়িভরা কথায় অশ্রু ভ্রু কুঁচকাতে কুঁচকাতে ফিঁদা।দাঁতে দাঁত চেঁপে অরুনের রসিকতাপূর্ণ কথা হজম করে।বলতে গেলে অরুনের সাথে অতিবাহিত হওয়া সবটুকু সময় অশ্রুর পিত্তি জ্বলার মতো ছিল।না অশ্রু অরুনের সাথে কোনো টু শব্দ তুলেছে,না অরুন।দু’জনেই দুরকম ভাবে ছিল।

“খুব ক্লান্ত রে অশু।”
“হুমম।আমিতো শীতের মধ্যেও ঘেমে একাকার।হিহিহিহি।”
“তোরতো প্রায়ই ঘেমে যাওয়া জাতীয় অভ্যাস। ”
“অভ্যেস না বদভ্যাস বল। ”
অশ্রু এবং রুমকি দুজনে ফিসফিসিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।অরুন বামহাত মাথায় রেখেই ডানহাত দিয়ে মোবাইলে ঘাটাঘাটি করছে।অরুনের পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ এখন একদম মোবাইলের উপর বর্শিত।পাশের কে কি বলছে কি করছে তাতে অরুনের মোটেও মনোযোগ নেই। সে উদাস মন নিয়ে চ্যাটিং এ ব্যস্ত।মেজেন্জারের টুং শব্দের ধ্বনিতেই অশ্রু ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়।
অন্যদিকে ইমতিয়াজ থুঁতনিতে হাত গুঁজে ওয়েটার খাবার নিয়ে আসার অপেক্ষায় আছে।হয়তো তার খব জোড় খিদে পেয়েছে। পেটটাকে কোনোমতে শান্তি দিতে পারলেই আশপাশে মনোযোগ যাবে।এখন তার পেটটা শুধুই বলে—খাই খাই।একটু পর ওয়েটার খাবার নিয়ে চলে আসে।ওয়েটার টেবিলে খাবার রাখতেই অরুন চোখ থেকে মোবাইলটা সরায়।খানিক টুকু ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এসময় তোমার কাচ্চিটা খেতে বুঝি ইচ্ছে হলো?”
ইমতিয়াজ মুচকি হেসে বলে,
“কাচ্চি অলটাইম মাই ফেভারিট। সেটা তো তুই জানিস।”
অরুন হালকা ফিকে হেসে তারপর নিজের খাবারে মন বসায়। অশ্রু খাওয়ার মাঝেই হুট করে খুক খুক কাশতে থাকে।তা দেখে ইমতিয়াজ তড়িঘড়ি পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।আর রুমকি মাথায় হাত বুলাতে থাকে।তবে ওপাশে যে মহাশয় বসে আছেন উনারতো এদিকে মোটেও ভ্রুক্ষেপ নেই।দাম্ভিকতার সহিত নিজ প্লেটেই দৃষ্টি।অশ্রু যদি এখন দম-মুখ খিঁচে মরেও যেত মনে হয়না অরুনের টনক নড়ত। ভীষণ রকম পাষাণ মন এবং চাপা রাগ নিয়ে নিজের ইগোকে প্রাধান্য দিয়েছে।

সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে ইমতিয়াজ রুমকি এবং অশ্রুকে নিয়ে বাইরে চলে আসে এবং অরুন বিল পে করতে ক্যাশে যায়।কিছুক্ষণ পর অরুন মোবাইল চাপতে চাপতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে।কাছে এসেই বলে,
“ভাইয়া সোহেল নাকি শ্যামলীতে আছে এখন।ডাক্তারের কাছে এসছিল।আমি তাহলে ওর বাইকে বাসায় চলে যাই।আর তুমি উনাদের এগিয়ে দিয়ে আসো। ”
“হুমম। তাহলে সাবধানে যাস।আমি রুমকি এবং অশ্রুকে এগিয়ে দিয়েই বাসায় ব্যাক করবো।
” আচ্ছা ভাইয়া।টেক কেয়ার এন্ড ভাবী ইউ টু।”
রুমকি মুঁচকি হেসে বলে,
“তুমিও সাবধানে যেওও।”

তারপর ইমতিয়াজ দুজনকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে যায়।অশ্রু আপাতত রুমকির সাথেই তাদের বাসায় আসে।আজকের ঘটে যাওয়া সিনগুলোর এক একটার ব্যাখ্যা না দিতে পারলে আজ রাত তার চোখের ঘুম হারাম।ভার বুক, চোখের পাতাকে আয়েশ দিয়ে তবেই অশ্রু বাসায় ফিরবে। ইমতিয়াজ চলে যাওয়ার পর বাকরুদ্ধ অশ্রু এবার মুখটা খুলে,
“দেখছিস ওই অরুন কীরকমের একখান ভাব নিল!”
“দেখলাম।পাওয়ারফুল ম্যানতো এদের কাছে ভাব ইজ সিম্প্লি।”
“বললেই হলো!যার তার সাথে ভাব নেওয়াকে পাওয়ারফুল ম্যান বলে না,বলে বলদ।আর মুখখান যেভাবে গোমড় করে রাখলো একদম শুকরের মতো দেখাচ্ছিল।ভাব নিলে তো মানানসই চাই তার মাঝেতো তা-ও ছিলনা।আবার আমার পাওয়ার ফুল ম্যানরে!!”
অশ্রুর ক্ষ্যাপা মুড দেখে রুমকি মুখ চেপে হাসতে থাকে।
“তুই হাসছিস?বাহ,দেবর হলো আপন আর আমিই হলাম পর!”
রুমকি পেটচাপা হাসিটাকে ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে পড়ে।থেমে থেমে হাসতে তার কাশিই উঠে যায়।অশ্রুকে খেপিয়ে ভালোই এন্টারটেইনমেন্ট পেল রুমকি।তারপর কোনোমতে নিজেকে সংযত করে বলে,
“তুই আস্ত একটা গাধী।মজা করলাম তাও বুঝিস নি।হা হা হা হা হা। ”
“মজা করছিস,না?দাড়া দেখাচ্ছি মজা।”
বলেই অশ্রু রুমকিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে।নাগাল পায়না।রুমকিও বাচ্চামো ভঙ্গিতে এপাশ-ওপাশে দৌড়াতে থাকে। অশ্রু পেরে উঠতে না পেরে সোফার বালিশ হাতে সদর বরাবর আসে। রুমকি সদর দরজার মাঝ বরাবর খানিক টুকু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অশ্রু পেছনে পা হটে রুমকির দিকে বালিশটি স্যুট করতে গেলেই পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা খায়।কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খাওয়ার উপলব্ধিতে অশ্রু তড়িঘড়ি পেছনে তাকায়।তাকাতেই অশ্রুর চোখদুটো গোল আলুর মতো আঁটকে যায়।ইসস!শেষ পর্যন্ত এর বুকের সাথেই কী ধাক্কা খাওয়ার বাকী ছিল!
অরুন চোখে-ঠোঁটে কুঁচকে ভাব এনে অশ্রুর দিকে তাকায়।তার মুখের অবয়ব ভস্মে ঘি ঢালার মতো।আর তীক্ষ্ণ চোখদুটো জলন্ত পিন্ড।
অশ্রু অপ্রস্তুত বোধ নিয়ে অরুনের সামনে থেকে চলে আসে।
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-১৬
রোকসানা আক্তার

রুমকি মুচকি হেসে অরুনের দিকে এগোয়।অনুরোধ বাক্যে বলে,
“ভেতরে আসো।”
“এখন ভেতরে যাওয়ার সময় নেই।সোহেল বাইক নিয়ে নিচে দাড়িয়ে।
নিঃশ্বাস না ফেলেই হাতে থাকা একটি শপিং এগিয়ে অরুন কথার প্রসঙ্গ টেনে আবার বলে,
আপনাদের মধ্যে কেউ এই ব্যাগটি রেস্টুরেন্ট ডিভানে রেখে চলে এসছে।কল করে বিষয়টি আমায় রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ অবহিত করেন।ভাগ্য ভালো তখন শ্যামলীতে ছিলাম।”
রুমকি অরুনের হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে কৃতজ্ঞতা কন্ঠে বলে উঠে,
“অনেক ধন্যবাদ অরুন তোমাকে।ব্যাগটি অশ্রুর হাতে ছিল,উঠে আসার সময় হয়তো ওর খেয়াল ছিলনা।”
“আপনার বান্ধবীকে বলবেন চোখ-কান খোলা রেখে জিনিসপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করতে।এরকম উটকো ঝামেলায় আরেকজনকে বাঁধার মানে হয়না।”
“মানুষের ভুল হতেই পারে অরুন।”
“সব ভুলকে ভুল নয়।অচেতন বলা যায়।আচ্ছা আমি গেলাম দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
বলেই অরুন ধাপে ধাপে পা ফেলে রুমকিকে পাশ কেটে মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়।রুমকি হাতের ব্যাগটার দিকে একনজর তাকিয়ে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তরতর দরজা বন্ধ করে।দরজা বন্ধের আওয়াজ পেয়েই অশ্রু রুম থেকে বেরিয়ে বলে,
“তোর হবু দেবর চলে গেল নাকি?”
“হু।”
পেছনে ঘুরে রুমকি ব্যাগটা টি-টেবিলের উপর রাখে।আর ক্ষান্ত মনে সোফায় বসে গাঁ টা এলিয়ে দেয়।উৎকন্ঠা কন্ঠে অশ্রুকে বলে,
“অশ্রু অরুনকে আমার সুবিধের মনে হচ্ছে না।”
রুমকির কথা শুনে অশ্রুর মাথাচাড়া উঠে।টুপ করে রুমকির পাশে বসে পড়ে।ক্ষীণ স্বর টেনে বলে,
“কিছু হয়েছে, রুমকি?”
“তা নয়।অরুনের দু’রকম চেহারা গেজ হচ্ছে।অরুন তার ভাইয়ের সামনে আমার সাথে খুব স্বাভাবিক কথা বলে তা’তো তুই দেখেছিস।কিন্তু এখন যেভাবে কথা বলেছে একদম পিত্তি জ্বলার মতন। কেমন ভাবে ঝাঁঝালো গলায় কথা শেষ করেই কেটে পড়লো। ”
“আমি তোকে প্রথমেই বলেছি এরা সুবিধের না।কিন্তু কে শোনে কার কথা!”
“আহা,এখানে আবার ইমতিয়াজকে টানছিস কেন।অরুনের থেকে ইমতিয়াজ একদম আলাদা।কেমন সাদামাটা মনের মানুষ,কি সুন্দর কথাবার্তা।আর ওই হনুমানের সাথে আমার প্রাণের হবু স্বামীর তুলনাই হয়না।”
“আচ্ছা…….?
” হু।”
অশ্রু রুমকির জবাবে ঠোঁট ছড়িয়ে হেঁসে উঠে।তারপর হাসি থামিয়ে বলে,
“এতদিনে দেখে-শুনে যতটুকু বুঝলাম ইমতিয়াজ ভাইয়া আসলেই অনেক ভালো।তবে উনার ওই চতুর ভাইটা এরকম কেন হলো?”
“হাতের সব আঙ্গুল সমান?”
“তা নয়।”
“ইমতিয়াজ ভালো হলে অরুনটা যে ভালো হবে এরকম কোনো কথা নেই।”
“হ্যাঁ।তবে আমি যতটা সিউর অরুনের রাগের ল্যাঁচমা আমাদের উপর থেকে এখনো যায়নি।ওর হাবভাব, কথা বলার ভঙ্গিমা সবকিছুই ক্রোধের জানান দিচ্ছে।এখন শুধু সুযোগের সন্ধানে জানোয়ারের মতো আমাদের খাপলে ধরার।”
“ভয় পেলাম।বিয়েটা ক্যান্সেল করে আবার পালিয়ে যাই, চল!এই বিয়ে চাই না!”রুমকি কেঁপে কেঁপে বলে।অশ্রু কুটি হেসে ফেলে।বলে,
” বোকা!ইমতিয়াজ ভাইয়া তোর একমাএ ভরসা।উনি পাশে থাকতে অরুন তোর একটা নখও তুলতে পারবে না।কারণ ভাইয়ার ভালোবাসার কাছে অরুন লেজ গুটানো বিড়ালের মতো,বুঝলি?”
“আমি জানি অশ্রু। এই কারণে এই মানুষটির প্রস্তাব আগ্রাহ্যে গ্রহণ করি। ভীষণ ভালোবাসি ইমতিয়াজকে।আমি দোয়া করি তোর লাইফেও এরকম একজন মানুষের উদয়ন হোক যে তোকে এই পৃথিবী সমান ভালোবাসবে!”
অশ্রু মিষ্টি হাসি টানে রুমকির কথায়।তারপর সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।ব্যাগটি কাঁধে তুলে তাগাদা হয়ে বলে,
“এখন যাচ্ছিরে রুমকি।মাকে কাজের চাপের মধ্যে রেখে চলে আসছি।বাসায় মেহমান।ইনসল্লাহ তোর বিয়ের আগের দিন চলে আসবো।”
“আচ্ছা। ”
“দরজা বন্ধ কর।আর সময় না শেষ হলে ইমতিয়াজ ভাইয়ার সাথে কথা বলে টাইম পাস কর।”
“তুই-না……..!”
অশ্রু বেরিয়ে আসে রুমকিদের বাসা থেকে। মিনিট পঞ্চাশেক-এর মধ্যে বাসায় পৌঁছায়।ভেতরে ঢুকে পুরো বাসা ফাঁকা ফাঁকা অনুভূত হয়।কিচেনে থাকা পারুল বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“মা,মামীরা কোথায়?”
“ডাক্তারের কাছে গিয়েছে। ” পারুল বেগম কাপড়ের কালো অংশ টেনে হাত মুছতে মুছতে অশ্রুকে জবাব দেন।
“ওহ,হ্যাঁ কালই তো বলল।নুজিফাও গিয়েছে সাথে?”
“নাহ।নুজিফা পাশের ফ্ল্যাটের রূপসীর থেকে কী যেন নোটবই আনতে গিয়েছে।ইরাও গিয়েছে সাথে। ”
“ওহহ।আচ্ছা মা শুনো?”
পারুল বেগম হাত থেকে আঁচল ছেড়ে অশ্রুর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“হ্যাঁ,বল।”
“রুমকি আমাদের হোল ফ্যামিলিকে ইনভাইট করবে।তুমি,বাবা এবং নুজিফা যাবে তো?”
“কীভাবে সম্ভব অশ্রু।তোর মামী বাসায়।মেহমান রেখে দাওয়াত খাওয়ার কথা মাথা আনাই অশালীন।তোর বাবাকে বলে দেখিস যায় কিনা। ” মুঁচকি হেসে বলেন পারুল বেগম।
অশ্রু আর মায়ের সাথে কথা না বাড়িয়ে নিজরুমে চলে আসে।হাতের ব্যাগটা বিছানার উপর ধপসে ছুঁড়ে ফেলে ওয়ারড্রব থেকে জামা বের করে নেয়।মেরুন কালারের একটি ড্রস বের করে বাথরুমে ঢুকে যায়।গোসল শেষ করে ভেঁজা চুলে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়ায়।নিজেকে একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে।আজ কতদিন পর অশ্রু নিজেকে খুদিয়ে দেখছে।শেষ কবে দেখেছিল তা তার ঠাহরে নেই।ঠোঁটের কার্ণিশে দৃষ্টি এঁটে আপসেট কন্ঠে নিজমনে বলে উঠে,
“লোকমুখে শোনা ‘ঠোঁটে তিল,পিরীতে মিল’।কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার কপালে একখানা প্রেমও জুটলো।
বলেই চোখমুখ বিদঘুটে করে আফসোস করতে থাকে অশ্রু। পরক্ষণে মাথাটাকে ঝেঁকে ভাবনার ঘুঁচর ভাঙ্গায়। প্রসঙ্গ টেনে আবার নিজমনে বলে,
দাৎ এসব আমি আবার কি ভাবছি। এসবতো মনগড়া কথা।আহারে অশু নিজেকে এখনো অন্ধবিশ্বাসে বেঁধে রেখেছিস?!”

রাতে সবাই ডিনারে বসে।বিপুলের জন্যে আলাদাভাবে রুটি এবং সবজির স্লাইড করা হয়।সে সকাল বেলাই পারুল বেগমকে তারজন্যে সবজির স্লাইড এবং রুটি করতে বলেন।এ বাসায় আসার পর থেকেই আমিষ খেয়ে খেয়ে তার নাকি ভুঁড়ি বেড়ে গেছে।তাই চর্বি থেকে মুক্ত হতে শর্করা এবং আঁশজাতীয় খাবার বেছে নিয়েছে।চট্রগ্রামেও কোহিনুর বেগম(অশ্রুর মামী) ছেলের জন্য প্রতিরাতে আলাদা খাবার রান্না করে।একদিনও ফাঁকফোকর মিসিং হয়না।ছেলেকে উনি এতটা ভালোবাসেন।।উনার একটিমাত্র ছেলে। তাই ছেলের মনে কস্মিনকালেও দুঃখ দিতে তিনি অপারগ।বাকি আছে ইরা।সে খাবারে যথেষ্ট নাক উঁচানি। খাবারে ঝাঁল বেশি হয়,আবার লবণ বেশি হয়,আবার স্যুপ বেশি হয়ে যায়।খাওয়ার সময় এধরনের নানানও অভিযোগ দাঁড় করায়।পারুল বেগম সবটা সয়ে নিয়ে সবার আশানুরূপ রান্না করতে মরিয়া হয়ে যান।বিরক্তি নামক কোনো আভাই উনার মুখের ধারেকাছেও ঘেঁষে না এতটাই আপ্যায়ন করতে ভালোবাসেন তিনি মেহমানদের।

মাঝে মাঝে এসব উটকো ঝামেলায় অশ্রু বিরক্ত প্রায়।অশ্রু ইরার সবকিছুই পছন্দ করে।তবে খাবারের ব্যাপারেই ইরাকে তার অসহ্য লাগে।সবকিছু দেখেও সয়ে নিয়েই চুপ হয়ে যায়।মেহমান দেখে কিছু বলতে পারেনা।অল্প ক’দিনের জন্যেইতো এসেছে। সারাজীবন তো আর থাকবে না এ ভেবে।।
অশ্রু ভাতের নালা মুখে তুলছে আর ইরার দিকে তাকাচ্ছে।মনে মনে মুখে বুলি গাঁথছে–“এই মেয়ে আজ আবার কি অভিযোগ দাঁড় দাঁড় করায় আল্লাহ মালুমই জানে। ”
ভাবনার সঙ্গেই সঙ্গেই ইরা ভ্যাঁ করে উঠে।তা দেখে কোহিনূর আড়নয়নে চেঁচিয়ে বলেন,
“আবার হলোটা কী?”
“আ-আম্মু!”
“হ্যাঁ শুনলামতো।তো বলবি তো কি হয়েছে?”
“আম্মু খাবারে লবণ কম হয়েছে।”
“তুই যেটা খাচ্ছিস আমিও সেটাই খাচ্ছি।লবণতো পরিমাণ মতোই আছে।”
“নাহ আম্মু ঠিক নেই।”
বলেই আবার বাচ্চামো ভঙ্গিতে ভ্যাঁ ভোঁ করতে থাকে।পারুল বেগম স্মিত হেসে বলেন,
“আচ্ছা ওটা খাওয়া লাগবে না তোমার।প্লেটের সাইডে রাখো।গরুর মাংসটা নাও।”
ইরা সম্মতি দেওয়ার সাথে সাথেই চটকে পারুল বেগম মাংস ভুনা প্লেটে ঢেলে দেন।তারপর ইরা ওটাতে টেস্ট পেয়ে আয়েসে খাওয়া আবার আরম্ভ করে।দৃষ্টি সেদিকে আলোকপাত করে মাথা নাড়ে।
আলাউদ্দিন প্লেটের দিকে দৃষ্টি রেখেই কোহিনুর বেগমের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়েন।বলেন,
“ডাক্তার আজ কি বললো ভাবি?অপারেশন করা লাগবে?”
“হু ভাই।পাথরটা নাকি দিনকে দিনকে বড় হচ্ছে তাই দ্রুত অপারেশনটা করাতে হবে।”
“অপারেশনের ডেট দিয়েছে?”
“হ্যাঁ।”
“কবে?”
“আগামী রোববার।”
রোববারের কথা শুনেই অশ্রু চোখদুটো কপালের দিকে টেনে নেয়।আলবোলা কন্ঠে বলে,
“রোববারেই অপারেশনটা করাতে হবে তোমার?”
‘হ্যাঁ অশ্রু।কিন্তু তুই এত্ত উত্তেজিত হচ্ছিস কেন?”(কোহিনুর)
“আহারে সেদিন রুমকির বিয়ে!”
“তো বিয়ে ভালো কথা।যাবি।”
“আমিতো যাবো।কিন্তু বাবা?”
আলাউদ্দিন আলম মেয়ের দিকে দৃষ্টিপাত দিয়ে বলেন,
“আমার আর কই যাওয়া হবে।একেতো অফিস খোলা,তারউপর তোর মামীর অপারেশন। তোর মা গেলে মাকে নিয়ে যাস।”
“মাও যাবেন না।”
“আপু কারো যেতে হবে না আমি যাবো রুমকি আপুর বিয়েতে।”(নুজিফা)
বিপুল খিলখিল হেসে দেয়।অশ্রুকে চ্যাঁতিয়ে দেওয়ার জন্যে সেও বলে উঠে,
” আমিও যাবো।”
“ভাইয়া আমিও যাবো।” (ইরা)
এদের দুষ্টুমি দেখে অশ্রুর রাগ উঠে যায়।ঝাঁঝালো গলায় বলে,
“কারো যেতে হবে না।আমার বান্ধবীর বিয়েতে আমি একাই যাবো,হয়েছে?!”
এবার অশ্রুর রাগান্ধিত কথায় ডাইনিং এর সবাই খিলখিল হেসে উঠে।

চলবে….
চলবে…
(এই অরুনটা আসলো কেন!কী জানি কারণ হতে পারে😁)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here