একটুখানি বিশ্বাস পর্ব ২৬+২৭

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-২৬
রোকসানা আক্তার

“পৃথিবীর কেউই পূর্ণাঙ্গ শুদ্ধ নয়।ভুল-ভ্রান্তি সবারই থাকে।কারো কম কারো বেশি।তবে,কম-বেশি দুটোই অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত।” অরুনের হাতে কোকোলার গ্লাস এগিয়ে বলল আবরার।আবরারের কথায় অরুন কিছুক্ষণের জন্যে চোখ বুঁজে।বুঁজা চোখে দৃঢ় একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।
মিনিট ছয়েক আগে দুজন রেস্টুরেন্টে দেখা করতে এসছে।আজ দুপুর থেকেই অরুনের সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে।।সবকিছুই যেন হিজবিজ,ধোঁয়াশা আর একাকীত্বে ঘেরা।উদাসীন মনে বিষন্নতার কালো মেঘ জমেছে তার।সন্ধেবেলা ইমতিয়াজ তার শ্বশুর বাড়ি ব্যাক করার সময় অরুনকে নিয়ে যেতে হাজরা হাজরি করে এবং রুমকিও। অরুন রাজি হয় নি।বাহানা করে বলল, “প্রচন্ড মাথাব্যথা তার।আজ আদিব,রশিদ ওরা যাক।শরীরটা একটু ভালো হলে কাল সকালে নাহয় সে রওনা করবে।।”মুখে বলেছে।তবে যায় কিনা তাও সিউর না।
তাই সবাইকে রিজন দেখিয়ে থামানোর একটা ইঙ্গিত বৈ-কি।
নাহ কোনোকিছুই ভালো লাগছে না তার।মনটা একদম কিছুতেই স্থির নয়।সবকিছুই ফাঁকা ভুবনে মরুভূমির উষার!সে উষার চলে গেলে চারদিকে অন্ধকার নেমে আসবে।দম ছেড়ে তড়িঘড়ি কল করে আবরারকে।মনের কোণের যত অপ্রকাশিত কথা সে কিছুতেই তা ঘোর অন্ধকারে ডুবিয়ে যেতে দেবে না।তাই আবরারই এই ব্যাপারে বলতেই হবে।যে করেই হোক।আর আবরারটাকে আপনারা অবশ্যই চেনবেন।
।আবরার তোহিয়া রাণীর ছেলে যার সাথে অরুন এবং ইমতিয়াজ দু’ভাই হাটি হাটি পায়ে বড় হয়েছে। আবরার বিয়েতে আসেনি ইমতিয়াজের সাথে একটু মনোমালিন্যতা থাকার কারণে।কেননা,আবরার নূরী নামের একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসে।তোহিয়া রাণী চান না তার ছেলে অন্যকোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়ুক।তিনি তার পছন্দ সই মেয়ে ঠিক করেই ছেলেকে বিয়ে করাবেন এটাই উনার ইচ্ছে।তাই আবরারের প্রতি নজরদারি রাখতে ইমতিয়াজকে দায়িত্ব দেন।ইমতিয়াজ
আবরারের গার্লফ্রেন্ডকে খুঁজেও পায়।তারই ফেইসবুক ফ্রেন্ড নূরী নামের এক মেয়ের সাথে আবরার রিলেশন করছে।দেখেই ইমতিয়াজ কাঠপোড়া।।আর সাথে সাথেই তোহিয়া রাণীকে জানিয়ে দেয়।এ নিয়ে সে-কি দুজনের তুমুল ঝগড়া।যার কারণে আজও দুজনার মধ্যে বিচ্যুতি,দূরত্ব ।তবে আবরারের সাথে অরুনের বেশ মিল।দুজন-দুজনের পার্সোনালিটি সবই জানে। বলতে গেলে দুজন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।তাছাড়া সবথেকে খুশির খবর আবরারের রিলেশনশিপটা অফ নয়। অরুনের সহায়তায়ই আবরার নূরীর সাথে এখনো রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছে যেটি ইমতিয়াজ এবং তোহিয়া রাণীর দৃষ্টির অগোচরে।
” কী ভাবছিস অরুন?”
আবরারের জোড় কন্ঠে অরুন চোখ খুলে।গম্ভীর মুখে বলে,
“অশ্রুর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি।”
আবরার চেয়ার টেনে অরুনের মুখোমুখি বসে।ক্ষীণভাবে বলে,
“সবটাইতো শুনলাম।তবে,আমার মতে অশ্রুর বাবাকে তোর ফাঁসানোটা উচিত হয়নি।কেননা উনি অশ্রুর বাবা।আর” বাবা” নামক শব্দের উপর যদি কোনো কলুষতার দাগ পড়ে তাহলে এটা কেউই মানতে পারে না।উল্টো তার প্রতি ওই মানুষটির ঘৃণা জন্মায়।”
“রাগ উঠে গেছে আমার!কি করবো আমি।আমার মান-সম্মান সব ধুলোয় মেশাতে চেয়েছে ও।তারউপর আড়িপাতার মতো কথা শুনিয়েছে।তুই একটা দিক খেয়াল করছিস?এতশত মেয়ে রেখে ওকে কেন এতটা দিন রেহাই দিলাম সত্যি ভাবতেও পারছি না।এর জায়গা অন্য মেয়ে হলে এতদিনের কবরে তার মাংস পঁচতো।”
“প্লিজজ,কুল ম্যান।আই স্যা…..”
“থাকলাম কুল।বল।”
“রাগটা তোর এখানে নয়,অন্য কিছুতে। আই হ্যাভ আন্ডার্সটেন্ড।
বলেই অাবরার একটা নড়াচড়া দেয়।আবরারের কথায় অরুন ফকফক চোখে তার দিকে তাকায়।আবরার টেবিলের উপর হাত সোঁজা রেখে আঙ্গুল গোল গোল করে বলে,
” অরুন ভালোবাসা এভাবে হয়না।তুই কী ভেবেছিস ওর বাবাকে টেনে ওকে তোর মনের কথা বলবি?আচ্ছা তুইতো ওর প্রতিবাদী মনোভাব দেখছিস, তাই না?তাহলে কীভাবে ভাবছিস ও তোর রুমডেট অফার একসেপ্ট করবে!?
“প্রতিটি মেয়ের দুর্বল পয়েন্ট ফ্যামিলি।ফ্যামিলির থ্রেট দেখিয়ে সবটা পুষিয়ে নেওয়া ইজি।ভাবলাম পসিবল হবে,হয়নি। তবে ওর মাঝের প্রতিবাদী মনোভাবটা আমার বেশ মনে ধরেছে । ”
“জানি।আচ্ছা তাহলে ভালোলাগাটা নিশ্চয়ই এখান থেকে?”
অরুন আবরারের দিকে তাকায়।অশ্রুকে ভালো লাগার কারণ খুজতে তাকে।কেনইবা অশ্রুকে ঝটপট মনের অনুভূতিতে জায়গা দিয়ে ফেলল সত্যিইতো এটি ভাবার বিষয়।ঠিক সেদিনইতো,বিয়ের রাতে অশ্রু উবু হয়ে জুতা ঠিক করছিল আর তখনই অশ্রুর কোমরের অনাবৃত অংশ অরুনের মনে কাঁপন জাগিয়ে দেয়।এতো শরীরের কিঞ্চিৎ সৌন্দর্য মাত্র। পুরো সুন্দরের সমাহারে আরো জানি কত মুগ্ধতম সুন্দর সে।।নারীর সৌন্দর্যের প্রতিক্রিয়া নারীর রূপ বড়ই অদ্ভুত।যে রূপে তাড়িত হাজারো পুরুষ। ওহে রূপবতী,ওহে সূর্যমসী,ওহে কেশবতী সত্যি বলছি তোমার রূপে আমি মোহিত।ভাবতে ভাবতে অরুণ ছাতক পাখি হয়ে যায়।আবরার কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকুনি দেয় একটা
“কেন ভালো লেগেছে তার কারণ খুঁজে পাস নি তাই তো?”
অরুনের জবাব না পেয়ে আবরার আবার বলে,
“আচ্ছা জবাব দেওয়া লাগবে না।এবার এটা বল,অশ্রুর বাবার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?”
“আই ডোন্ট নো। আর এখন উঠি।রাত পড়েছে অনেক।বাবা টেনশন করবেন।”বলেই দাড়িয়ে যায় অরুন।
“কথা শেষ না করেই?তারমানে তুই অশ্রুর বাবাকে ছাড়বি না তাইতো?”
“তা নিউজে দেখতে পাবি।অগ্রিম বলতে ইচ্ছুক নই। ”
“নিজের ভুল নিজেই স্বীকার করিস আবার নিজেই অহমিকা দেখাস।ব্যাটা আর মানুষ হইলি না তুই! ”
“ছেড়ে দেব।”ছোট কন্ঠস্বর টেনে বলল।
“গুড।এটাই চেয়েছি।আর সময় নিয়ে আবার দেখা করতে আসিস।”খুশি মনে বলে আবরার।
“আচ্ছা ”
অরুন চলে আসে।রুমে ঢোকে দরজা লক করে ক্লান্তি মনে বিছানার উপর মোবাইল ছুঁড়ে মারে।শার্টের উপরের দু’টা বোতাম খুলে বিছানার উপরে ধপসে বসে।অন্য সময় হলে সে বাইরে থেকে আসলে আগে সোজা ওয়াশরুম যেতো।ফ্রেশ হয়ে তারপর বিছানায় বসতো।অথচ আজ উল্টো।অরুন মাথাটা বিছানার চৌকাঠে খানিক টুকু হেলে দেয়।দরজায় করাঘাত পড়ে।
“ভাইজান,সাহেব আপনের লাইগা খানা নিয়া নিচে বইসা আছেন।তারাতারি আহেন খাওনের লাইগা।”
“যাও,একটুপর আসছি।”বলেই অরুন স্বাভাবিক হয়ে উঠে বসে।সামনেই ল্যাপটপটা ছিল।ল্যাপটপটা অন করতেই বিয়ের কিছু ইমেজ চোখে পড়ে।সকালেই দুটো ছোট কাজিন বিয়ের পিক দেখবে বলে মাতামাতি করে।তাদের ল্যাপটপ অন করে দিয়ে অরুন আর ল্যাপটপের কেনার ঘেঁষে নি।ওরা ছবিগুলো দেখা শেষ করে ল্যাপটপ ডিরেক্ট অফ করে যার কারণে অন করা ফাইল অনই থেকে যায়।
অরুন ছবিগুলো এক এক করে দেখতে থাকে।হুট করে একটা পিক দেখে চোখ দুটো আলুর মতো আঁটকে যায় তার।গাঢ় গোলাপী ঠোঁটে, মাথায় গাদা-গোলাপ ভরা ফুলের ঝাঁকি এবং লাল-হলুদ শাড়িতে বেশ লাগছে অশ্রুকে।সামান্য মৃদু হাসির ঝলকে ছবিটি আরো ফুঁটে উঠছে।অরুন সেদিকে সায় তাকিয়ে থাকে।কতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে অশ্রুকে।নখের কোণে নীলপালিশের একটা লাল বিন্দুও যে পড়েছে তাও খেয়াল করেছে অরুন।
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-২৭
রোকসানা আক্তার

আলাউদ্দিন রাতের খাবার শেষ করে নিজ কক্ষে শয়ন গ্রহণ করতে যান।ইদানীং তার শরীরটা ভালো ঠেকছে না।প্রেশার, ডায়বেটিকস দিনেক দিন যেন বেড়েই চলছে।মনের বিষন্নতায় এসব রোগ শরীরে বেড়ে উঠতে আরো সুযোগ পাচ্ছে।এই যেমন-মন খারাপ,চিন্তামগ্নতার সময় গলা দিয়ে ঠিকমতো খাবার ঢুকে না।সময়মতো গোসল সাড়তে ইচ্ছে হয়না।সারা সময় ঘরের এককোণে একা বসে বসেই পার হয়।এভাবে নিথর দেহে,নিস্তব্ধ পরিবেশে নিজেকে চিন্তায় গুটিয়ে রাখায় শরীরের ক্যালোরির ক্ষয় হয়।ফলে,রোগগুলো দুর্বল কোষে সহজে আক্রমণ করে বসে।
আলাউদ্দিন পায়ের নিচ থেকে কম্বল টেনে শরীরে ছড়িয়ে দেন।কিছুক্ষণ বাদে অশ্রু দরজার ওপাশ থেকে খেঁকারি আওয়াজ তুলে।
“বাবা,শুয়ে পড়েছ?”
ক্ষীণ কানে মেয়ের কন্ঠস্বর শুনে আলাউদ্দিন বিছানা ছেড়ে উঠে বসেন।গলা ছেড়ে বলেন,
“ভেতরে আসবি?”
“হু বাবা।যদি অনুমতি দাও।”
“বাবার রুমে আসতে অনুমতি লাগে?পাগলী মেয়ে কোথাকার।”বেখেয়ালি হেসে বলেন।
অশ্রু বাবার পাশ ঘেঁষে বসে।হেসে হেসে বাবার গলার সাথে গলা মিলিয়ে বলে,
“অন্যের রুমে প্রবেশের পূর্বে তার অনুমতি নিতে হয়।নাহলে অভদ্রতার সঙ্গ।শিক্ষাটি তুমি দিয়েছ।ভুলে যেও না।”
আলাউদ্দিন মেয়ের টিটকারি কথায় খিলখিল হেসে উঠেন।হাসি থামিয়ে বলেন,
“আচ্ছা,আমিই বলেছি।তো এত ডিসিপ্লিন মেনে হুটহাট বাবার রুমে…কোনো কারণ ছাড়া নিশ্চয়ই নয়?”
“এইতো তুমি ঠিক ধরেছ।”
“তাহলে বলে ফেল।”
“আমি যা যা জিজ্ঞেস করবো তার নিঃসঙ্কোচে জবাব দিবে কিন্তু।”
আলাউদ্দিন অপ্রস্তুত হয়ে যান মেয়ের এমন কথায়।তাহলে মেয়ে কি উনার সবটা জেনে গেল?বাবাকে ভুল বুঝে মেয়েটি কষ্ট পায় নিতো?বাবাকে নীচক,ঘুষখোর, স্বার্থপর মানবের কূলে ঠায় দিয়ে বসে নি তো?ভেবেই আলাউদ্দিন মাথা ঝাঁকায়।টাল সামলে আগের সাবলীলতায় বলে,
“কিসের জবাব?”
“আজকালকার মানুষগুলা বড্ড খারাপ।এরা শাসিত সমাজকে হেসে হেসে বরণ করে।অথচ একবারও ভাবে না এই শাসিত সমাজে সেও যে শোষিত হচ্ছে।”
“হঠাই এসব কথা?”
“বাবা এই মেয়েকে কি তোমার বিশ্বাস হয়না?নিজের চাপা আর্তনাদকে বুকে চেপে উল্টো আমাদের কেন কষ্ট দিচ্ছ।মা,নুজিফা ওদেরকে কেন বারণ করলে এতবড় ঘটে যাওয়া বিপদের কথা আমায় আজ্ঞাপিত করতে?আমি জেনে গেলে কি গুরুচন্ডালী দোষ হয়ে যাবে নাকি তোমার ষোলোকলা উদ্ধার হবে না?”
আলাউদ্দিন অপরাধ ভঙ্গিতে মাথা হেলে রাখেন।মেয়ের কথায় জবাব তুলেন না।অশ্রু থেমে যায় না।হৃদয়ের কার্ণিশে জমিয়ে রাখা রাগটা ঝাড়তে থাকে।
“আমার কাছেতো একটু শেয়ার করতে পারতে।সবার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে একা একাই এর প্রতিবাদ করবে ভাবছিলে?হয়না।একতাই শক্তি।তুমি জানো মিথ্যে রিপোর্ট করে তোমায় কে ফাঁসিয়েছে?”
আলাউদ্দিন এবার মাথা তুলে মেয়ের দিকে তাকায়।মেয়েকে সরলভাবে জবাব দেন।
“না।”
“জানবে কী করে?সাপ মেরে যে লেজ তাজা রেখেছ তার কী খবর আছে…..!?
মেয়ের এ কথায় তিনি মেয়ের দিকে জিজ্ঞাসূচকে তাকান।অশ্রু প্রসঙ্গ টেনে আবারও বলে,
“ভুট্টো পোদ্দারের ছোট ছেলেকে নিয়ে তুমি যে রিপোর্ট বানাতে চেয়েছিল সেই ক্ষোভে ভুট্টো পোদ্দারের ছোট ছেলে উল্টো তোমার উপর মিথ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।আর তার সাথে হাত ছিল তোমার কলিগদের এবং পুলিশের।তোমার কলিগরা এবং পুলিশ এমনি এমনি ওর সাথে হাত মেলায় নি।বরঞ্চ পেটপুরে ঘুঁষ নিয়ে ওকে সহায়তা করেছে।”
“জানি আমি।” একটা আক্ষেপতার দীরর্ঘশ্বাস টেনে বলেন।
“জানলে তো হবে না বাবা প্রতিবাদ করতে হবে।”
“প্রতিবাদ করতে প্রমাণ লাগে।”
“প্রমাণ আছে বাবা আমার কাছে।”
“প্রমাণ?” অবাক হয়ে।
“হু।”
বলেই অশ্রু তার মোবাইলটা আলাউদ্দিনের দিকে তাঁক করায়।
“কী ওখানে?”
“ওর কুকর্মের কিছু অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড।আর কিছু মেয়েদের জবানবন্দি।”
“এসব কোথায় থেকে ফেলি তুই?”অনেকটা অবাক হয়ে।
“ স্মৃতি নামের একটা মেয়ে আছে বাবা। প্রমাণগুলো কালেক্ট করতে ও-ই আমায় হ্যাল্প করেছে। “
“স্মৃতিটা আবার কে?”
“চিনবে না।তবে এ অসময়ের যুদ্ধে ও-ই হলো আমাদের একমাত্র ধারালো অস্ত্র।”
“বাহ,সাবাস মেয়ে আমার।সাবাস।সত্যি তোর এই সুচতুর জ্ঞানে আমি হতবাক।প্রশংসা না করে আর পারছি না।”
প্রানখুলে রুদ্ধ দমটা ছাড়েন তিনি।আশাতে বাসা বাঁধতে থাকেন।খুশির লগনে পারুল বেগম এবং নুজিফাকে ডাকতে থাকেন।
“ওহ পারুল,নুজিফা কোথায় তোমরা?এখানে এসো?এসে দেখে যাও…”
আলাউদ্দিনের প্রফুল্ল কন্ঠ শুনে পারুল বেগম এবং নুজিফা দ্রুত ছুটে আসে।
“হঠাৎ এভাবে যে ডাকলে?আর তোমায় এত খুশি খুশি দেখাচ্ছে কেন?”
“সাবাশ জননী তুমি, যে সাহসী এক মেয়ে তোমার উদরে নিয়েছ।”
“বুঝলাম না ঠিক।”
তারপর আলাউদ্দিন পারুল বেগম এবং নুজিফাকে সবটা ক্লিয়ার করেন।দুজনই বিস্ময়তার সহিত মুখে হাত আনে।আর অশ্রুকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
এখন রাত এগোরটা বেজে পয়ত্রিশ।কপালে চামড়ার ঘনস্তর রেখে সোফায় বসে আছেন পারুল বেগম।বুকটার হৃৎস্পন্দন কিছুক্ষণ পরপর টিকটিক ঘড়ির কাঁটার মতো বেঁজে উঠছে।তিনি মেয়েকে এবং স্বামীকে নিয়ে সংকোচিত।স্বামীর মনে এখন যে সাহস সঞ্চারিত হয়েছে তাতে কি পারবে জয়ী হতে?পারবে মিথ্যবাদীদের আগবাড়িয়ে বলা বুলিকে ন্যাস্য করতে?আচ্ছা মেয়েটা যে প্রতিবাদী মুখরে বাবাকে সহায়তা করছে তার উপর কোনো হামলা হবে নাতো?
ভেবে ভেবেই পারুল বেগম একাকার।তারপরও স্বামী-মেয়েকে বুঝাতে পারছেন না।মেয়েটা তার দামামা দিয়েই মাকে থামিয়ে দেয়।
“মা এত ভেবো নাতো।কিছুই হবে না আমাদের।সত্যের জয়,মিথ্যের পরাজয়।বাবাকে মিথ্যা অপবাদে যারা ঘরের কোণে আবদ্ধ করেছে এবার খুলে দিব তাদের আসল মুখোশ।”
“আহা,তুমি এত চিন্তা করছো কেন,বলোতো?এসব দেখার পর দেশের মানুষ অন্তততো একটু বুঝুক কাদের তারা সাধু ভেবে এসেছে এতদিন!তাছাড়া,এটা যদি এখন না করি তাহলে আমায় ফাঁসতে হবে।জেলের ভাত খেয়ে খেয়ে আধমরা হতে হবে।পারবে তুমি সহ্য করতে?তাছাড়া অশ্রু যে প্রমাণগুলো এনেছে এগুলো যথেষ্ট পাকাপোক্ত প্রমাণ।অবিশ্বাস করার মতো কিছুই নেই এখানে।”
এভাবে পারুল বেগম মেয়ে-বাবার এমন আঁট কথায় মুখ ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হোন।কিছু বলতে যেয়েও পারেন না।
আলাউদ্দিন তার বিশ্বস্ত বন্ধু শহীদুল রহমানকে সবগুলো প্রমাণ পাঠান।শহীদুল রহমান বর্তমানে”বাংলাদেশ প্রতিদিন”-পত্রিকার সম্পাদক।তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা আলাউদ্দিনকে ভরসা বাণী দেন।কোনো প্রমাণ হাতে ফেলে সাথে সাথে উনাকে পাঠিয়ে দিতে।উনি সেগুলো পোর্টাল করে উনার অফিস থেকে সরাসরি পাবলিশড করে দিবেন।এখন তাই হলো।আলাউদ্দিন শহীদুল রহমানকে সবগুলো প্রমাণ পাঠিয়ে দেন।এখন শুধু পাবলিসড হওয়ার বাকি।রাতের মধ্যে প্রমাণগুলো অনলাইন পত্রিকায় পাবলিসড হবে এবং কাল সকালে প্রমাণগুলো নিউজপেপারে সবার হাতে হাতে যাবে।
পারুল বেগম,অশ্রু,নুজিফা এবং আলাউদ্দিন প্রমাণগুলো অনলাইনে পাবলিসড হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছেন।আলাউদ্দিন বারংবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছেন শহীদুলের ফোনকলের অপেক্ষায়।কেননা,শহীদুল রহমান বলেছেন পাবলিসড হওয়ার পর পরই উনি কল করে জানিয়ে দিবেন।
এভাবে দশ মিনিট,পনেরো মিনিট,পঁচিশ মিনিট পার হয়।ঘড়ি বারোটা ত্রিশের কাঁটায় টিকটিক করলেই আলাউদ্দিনের কল বেজে উঠে।আলাউদ্দিন আশাবঞ্জক হয়ে ফোন রিসিভ করেন। কথা শেষ হলেই বুকে হাত রেখে ভরসার একটা নিঃশ্বাস ছাড়েন।বলেন,
“শহীদুল অনলাইনে প্রমাণগুলি পাবলিসড করেছল।”
“আলহামদুলিল্লাহ।”(পারুল বেগম)
অশ্রু সত্যতা যাচাই করতে অনালইন চেক করে।হুম আসলেই পাবলিসড করেছে।মনে মনে শহীদুলকে অনেকগুলো ধন্যবাদ দেয় অশ্রু।স্মৃতিকেও বিষয়টা জানায়।স্মৃতি খুশিতে গড়গড়ি খায়।কিছুক্ষণ আনন্দ,উৎফুল্ল করার পর অশ্রু প্রায়ই ক্লান্ত।ক্লান্ত শরীরটাকে এখন শুধু বিছানা টানছে।চোখদুটোও খুব লেগে আসছে তার।লম্বা একটা ঘুম দিতে হবে।তাহলে মনের প্রশান্তি আসবে।ভেবেই অশ্রু সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।পরমুহূর্তে আলাউদ্দিনের আরেকটা কল আসে।আলাউদ্দিন নাম্বারটি ঠিক চিনতে পারছে না।হাল নয়নে অশ্রুর দিকে তাকায়।অশ্রু বলে উঠে,
“বোধহয় তোমার কোনো বন্ধু হবে বাবা।অনলাইনে হয়তো নিউজগুলো দেখেছে।তাই কল করেছে বিষয়টি পুরোপুরি জানতে।রিসিভ করে দেখো।”
বলেই অশ্রু রুমের দিকে পা বাড়ায়।
তারপর আলাউদ্দিন সংকোচ হয়ে কলটা রিসিভ করে।ওপাশ থেকে কলারের কথায় আলাউদ্দিনের সংকোচ মন নিঃসংকোচ হয়ে যায়।উনার চোখেমুখে পুলকিত আভা চেয়ে যায়।উনার বাহ্যিক ভাবভঙ্গি বলছে নিশ্চয়ই কোনো খুশির খবর পেয়েছেন।পারুল বেগম,নুজিফা তা দেখে উৎসুক হয়ে যায়।আলাউদ্দিন কলটা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই আহ্লাদী একটা আওয়াজ তুলে।অশ্রু এখনো রুমে ঢোকে নি।পা বাড়িয়েছে সবে।সে পেছনে ফিরে বাবার দিকে তাকায়।বাবার মুখখানা ঝিকঝিক করছে।পারুল বেগম বলেন,
“কি হয়েছে?কোনো খুশির সংবাদ পেলে নাকি?”
“হ্যাঁ,অশ্রুর মা হ্যাঁ।অনেক বড় খুশির সংবাদ।”
“কি?”
“আমাকে নামে যে মিথ্যে রিপোর্টে করে লোকসম্মুখে ফাঁসিয়েছে ওটা পরিত্যক্ত করা হয়েছে।ওটা আমার নামে একটা ভুলভ্রান্তি মূলক নিউজ বেরিয়েছিল।তাই আমাকে আর জেল আদালতে যেতে হবে না।আমি বেখাতুর খালাস।”
অশ্রু বাবার কথা শুনে জর্জরিত হৃদয়ে একটুখানি শীতল হয়ে আসে।কলকল নদীর পানি শান্ত স্রোতে বইতে থাকে।অশ্রু এক কদম এগিয়েই মুখে উজ্জ্বল্য হাসি ফুঁটে আসে।এত অনেক খুশির সংবাদ। নুজিফাও খুশিতে গদগদ।পারুল বেগম আকাশের দিকে তাকিয়ে শুকরিয়া আদায় করেন।
“কে কল করে বলেছে, বাবা?”
“হাইকোর্টের জজ মোহাম্মদ ইকতিয়ার।
“তবে বাবা সবে মাত্র প্রমাণগুলো অনলাইনে পাবলিসড হলো আর এরইমধ্যে এই খবর!ব্যাপারটায় কেমন জানি একটু হ্যালুসিনেশন লাগছে!”
“আমারও।”(আলাউদ্দিন)
“দাৎ,কি যে বলিস!ওগুলো না পাবলিসড হলে কি আর এমন খবর পেতাম?দেখলি না?মাত্র তোর বাবা শহিদুল ভাইকে প্রমাণগুলো পাঠালো,আর কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তিনি পাবলিসডও করে দিলেন।এরফাঁকে তো প্রমাণগুলো কত মানুষের কাছে পৌঁছে গেল।তাই এটা এত অবাস্তব কিছু নয়।অনলাইনে সবই সম্ভব।”
“তারপরও..ব্যাপারটা..”
“আহা,তুমিও তোমার মেয়েরে মতো আরেক গাধা।এখন যদি প্রমাণগুলো অনলাইনে না পাবলিসড হতো তাহলে কি এমন গুড নিউজ পাইতা?”
“থাকুক,বিতর্ক প্লিজজ অফ করো মা।যাই হলো ভালো হলো।বাবাতো অন্তত মুক্তি পেলো।আমরা পরে নাহয় এ ব্যাপারটা বিশদ জানতে পাবো।এখন শুধু সবাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি এটাই।”
“হুম।।”

অশ্রু কথাবার্তা শেষ করে রুমে আসে।
।দিনটা তার আজ সত্যিই ভালো কেটেছে।আজ তারজন্যে এমন একটা দিন যে আসবে সত্যিই তার ভাবনায় ছিলনা।যদিও অরুনের সাথে দেখা হওয়া মুহূর্তটা ছিল অনাড়ম্বর। অসহ্যকর যত্তসব।ব্যাঁটাতো এখন লেজগুঁটে পা ছাঁটে।হা হা হা হা হা।
হাসতে হাসতে অশ্রু চৌকাঠে মাথা রাখে।এতক্ষণে হাতের মুঠোয় চেপে রাখা মোবাইলটা চোখের সামনে ধরে।ডিসপ্লে অন করতেই একটা ম্যাসেজ চোখে পড়ে–
“অশ্রু,আমি তোমার বাবাকে ছেড়ে দিলাম।আমি জানি আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি।তোমার বাবাকে বলবে আমায় ক্ষমা করে দিতে।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।”
জড়োসড়ো একটা বিষম খায় অশ্রু!!
চলবে…..
(অপরাধ করলে অপরাধীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে!)
চলবে…
(দুঃখিত দেরী করার জন্যে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here