একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-৩২
রোকসানা আক্তার
অরুন সিড়ি বেয়ে নিচে নামে।ইমতিয়াজ সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছে।অরুন সেদিকে যেয়ে বলল,
“বাবা কোথায়,ভাইয়া?”
“জানি না।কোথাও হয়তোবা আছেন।খুঁজে দেখ।” পত্রিকা পড়ায় পূর্ব দৃষ্টি বজায় রেখে বলল।
ইমতিয়াজের এহেন কান্ডে আকস্মিক।ওই ঘটনার পর থেকে তার ভাইয়ের মাঝে যেন আমূল পরিবর্তন এসেছে।কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে যে ভাই সবার আগে নেতিয়ে পড়তো,প্রবলেম সলভ করতে মরিয়া হয়ে উঠতো,কি থেকে কি করবে ভেবে কূল পেত না অথচ আজ সে মুখখানাই খুব অচেনা মনে হচ্ছে। অচেনাতো তার জন্যে সামান্য।এরথেকে নিকৃষ্ট হওয়াই সে প্রাপ্য।ফ্যামিলির মানসম্মান মাটিতে মিশিয়ে এখনতো সোনায় সোহাগা হওয়ার যোগ্য নয় সে।চোখবুঁজে সব যে তারা সহ্য করে নিয়েছে এতেই অনেক।এধরনের নানান ভাবনা মাথায় গাঁথতে গাঁথতে অরুন ইমতিয়াজের দিকে কিছুক্ষণ বিচলিত চোখে তাকিয়ে থাকে।তারপর কিচেনের দিকে চোখ আওড়ায়।কিচেনে তোহিয়া রাণী সন্ধের নাস্তা বানাচ্ছেন।সাথে রুমকিও আছে।অরুন ইমতিয়াজের স্থান ত্যাগ করে কিচেনের দিকে এগিয়ে যায়।দরজার এপাশে দাড়িয়ে তোহিয়া রাণীকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
“খালামণি,বাবা কোথায়?বাবাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।”
তোহিয়া রাণী তখন পানিতে চিনি মেশাচ্ছেন।আধপোয়া ঢালা শেষ হলেই আবার চিনির বৈয়াম তাকে রাখেন।তারপর পেছন ঘুরে অরুনের দিকে টান টান চোখে তাকান।বলেন,
“কোনো প্রয়োজন,আব্বা?”
“হু,খালামণি।”
“কোথায় যেন গিয়েছেন তোর মাহবুব আঙ্কেল সহ।”
“কোথায় গিয়েছেন ?” উৎসুক হয়ে।
“তেমন কিছু বলেনি।শুধু বলল কোন লোকের সাথে দেখা করতে যাবে।আমরা লাঞ্চ পিরিয়ডে অপেক্ষা না করতে।উনারা লাঞ্চ আজ বাইরে করবেন।”
“ওহ।”
বলেই অরুন নিবৃত্ত চোখে নিজ রুমে ফিরে আসে।বিছানার উপর বসে।মাথা নুইয়ে মোবাইলের ডিসপ্লে অন করে।অশ্রু এখনো লাইনে আছে।কল কাটেনি। অরুনের চারপাশটা খা খা শূন্য অনুভূতি হয়।মনো অগোচরে কিছু একটা যেন হারিয়ে যাচ্ছে।যা পাওয়ার তীব্র ইচ্ছাতেও ছুঁতে ইচ্ছে হয়না। আবার ছেড়ে দিলে যেন বুকের বাম পাঁজরে টান অনুভূতি হয় ।যার কষ্ট কাউকে মন খুলে বলা যায় না,কাউকে বুঝানো যায় না আবার চোখবুঁজে সয়ে নিতেও কষ্ট হয়।এই কষ্টের কি মাপকাঠি নেই যাকে মেপে মেপে কমিয়ে দেওয়া যেত।হৃদয় পোড়া মানুষগুলা আর বেশি কষ্ট পেত না!
অরুন দৃঢ় একটা দম ছাড়ে।অশ্রুকে কি জবাব দিবে অথবা জবাবে কি বলবে মাথায় ঢুকছে না।তার বাবা তো কাউকে সহজে ছাড়ার পাত্র নন। কঠিন পরিস্থিতে কাউকে শকুনের মতো খুবলে খুবলে খেয়েও বলেন শান্ত,সব শান্ত কিছুই হয়নি।অথচ ভেতরে ভেতরে সব অরাজকতায় ছিন্নভিন্ন।বলা যায় মুখে হাসি,অন্তরে বিষ এই কৌশলটা তার বাবার ক্ষেত্রে খাটে।তাই অশ্রুর বাবাকেও যে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে এ ব্যাপারে অরুন দ্বিধাদ্বন্দে।কিছুক্ষণ চুপ হয়ে বসে থেকে অরুন নিজেকে স্বাভাবিক করে।ফেন হোল্ড অফ করে।ওপাশ থেকে অশ্রুর উদ্বেগ মিশ্রিত কণ্ঠধ্বনি ভেসে আসে।বলল,
“হ্যালো?আমার বাবাকে পেয়েছেন?”
“আমি বাড়ির রন্ধ্রে রন্ধে সবখানে খুঁজেছি। দেখতে পাইনি।।তাছাড়া আমার বাবাও এই মুহূর্তে বাসায় নেই।”
“আপনার বাবা আমার বাবাকে কোথাও আবার নিয়ে যায় নি তো?”
“তা বলতে পারছি না।”
“আমাদের খুব টেনশন হচ্ছে!সেই যে আঁটটায় বেরিয়েছে….!”
“কুল।টেনশন নিবেন না।কিছু হবে না আপনার বাবার।সন্ধের আগেই দেখবেন বাসায় ফিরে গেছেন।”
অরুনের কথা বলার ধরন খুবই স্পষ্ট, শান্ত এবং সুকোমল।যে কথাগুলোর প্রতিটি ধ্বনিতে জেদ,রাগ,বিষাদতা কোনো কিছুরই উপস্থিতি নেই।এতকিছু হয়ে গেল অথচ এই মানুষটির ভেঙ্গে পড়ার একটুও রেশের চিহ্ন নেই।তবে কি নিজের ভুল নিজে বুঝতে পেরেছে?আচ্ছা, তাহলে এতটা স্বাভাবিক কেন!ওপাশ থেকে অশ্রুর চুপ থাকা শুনে অরুন নিজেই আবার বলল,
“আপনি বোধ হয় টেনশন নিচ্ছেন।বললাম টেনশন নিবেন না।”
“ন-না,সেরকম কিছু নয়।আশা করি বাবা শীঘ্রই বাসায় ফিরবেন।”
বলেই অশ্রু মনে মনে অন্যকিছু ভাবে,উনাকে জিজ্ঞেস করবো উনি এখন কেমন আছেন।আমার উপরতো মনে হয় প্রচন্ড রেগে আছে।জিজ্ঞেস করলে আবার মন্দ ভাববে নাতো। আচ্ছা জিজ্ঞেস করেই দেখি।এবার অশ্রু প্রকাশিত মুখে বলল,
“ওই ঘটনার পর থেকে আপনি আমার উপর খুব রেগে আছেন তাই না?”
“কোন ঘটনা?” ভ্রু কুঁচকে।
“না-নাহ মানে ওইযে নিউজ…!”
“প্লিজজ,ইগনোর দ্যাট টপিক!”
অশ্রু অতি সংগোপনে একটা ঢোক গিলে।অরুন বলল,
“তাহলে রাখলাম।আপনার বাবার ব্যাপারে আপডেট নিউজ পেলে জানাবো নি।”
“জ্বী,আচ্ছা।” গলার স্বর ছোট করে।
অরুন কেটে দেয়।অশ্রু মোবাইলটা কানে সেভাবেই তুলে ধরে থাকল,সরালো না।ধ্যান ঘোরে অস্তিত্বকে বিলীন করেছে।মুখে কথা নেই।নড়াচড়ার ভঙ্গি নেই।স্ট্যাচু সেজে যেন বসে আছে সে।
পরক্ষণে একটা মেসেজ টোন বেঁজে উঠে।টোনটা অশ্রুর কানের ফাঁক দিয়ে মস্তিষ্কে ঠেকে।বিভোর কেটে যায়।মোবাইলটা চোখের সামনে তুলে ধরে।অরুনের মেসেজ।
“জানতে চাইলেন না আমি রেগে কিনা?মোটেও রেগে নেই আমি।বরঞ্চ আপনাকে আরো জোড় ধন্যবাদ দেওয়া উচিত যে আমার ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিয়েছেন।পাপিষ্ঠের পাপ অনিবার্য। ধন্যবাদ।”
মেসেজটি পড়ে অশ্রু একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।মনের ক্রন্দনে তার অন্যসুর বাজে..
“পাপীকে নয়,পাপকে ঘৃণা করো!”
ভাবতেই পুরো শরীরের লোমকূপ তার খাঁড়া হয়ে যায়।
”
”
”
“বাইরে থেকে বাবার কন্ঠস্বর শুনতে পায়।অশ্রু সেদিকে তাকিয়ে বুঝল তার বাবা এসছে।তাও সন্ধের আগেই।মনে মনে অরুনকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে মুখে হাসি ফুটায়।তারপর মাথায় ওড়না টেনে রুম থেকে বের হয়।বেরুতেই আলাউদ্দিন বসা থেকে দাড়িয়ে যান।অশ্রুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
” অশ্রু,তোকে চট্টগ্রাম যেতে হবে!তাও আজ অথবা কালকের মধ্যে!”
“কিন্তু কেন বাবা?”অবাক হয়ে।
“ওই ভুট্টো পোদ্দার আমাকে হুমকি দেয় তোকে তুলে নিয়ে যাবে।ওর ছেলের নিউজগুলো জনসম্মুখে আবার মিথ্যে বলে প্রকাশ না করলে তোকে….।তবে আমিও দেখবো ওর প্রতিবাদ।দরকার হলে তোর সেইফের জন্যে তোকে চট্রগ্রাম পাঠাবো তারপরও ওর কথা আমি মেনে নেব না!আলাউদ্দিন আলম এত সহজ নয় যে কথার জোরেই টসকে যাবে!
বলেই থেমে যান আলাউদ্দিন। অশ্রু বুঝতে পারল তার বাবা কি বলতে চাইছে।নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকে রেখে বলল,
” তাই বলে আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে?দেশে পুলিশ আছে,এসপি আছে,রেব আছে,সেনাবাহিনী আছে ওরা কি করবে?একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে ওরা হা চোখে তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে?”
“নাহ রে মা,নাহ!তুই যেমনটি ভাবিস তেমনটি নয়।এই আইনের মানুষগুলা টাকার কাছে এক একটা জব্দ।আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে কেউ ছিঁড়েখুঁড়ে খেলেও এদের কিছু যাবে আসবে না!ও টাকাওয়ালাদের সাথেই নাচবে।”
“সেটা বুঝলাম।এখন এখানে শুধু প্রবলেম আমাকে নিয়ে?যদি তাই হয় তাহলে আমাকে নিয়ে ভেবো না।আমি আমাকে সেইভ করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আছে।”
“উফস,আবার একই কথা বলছিস!এই তুমি তোমার মেয়েকে একটু বুঝাও তো!”শেষ কথাটি পারুল বেগমকে বলে আলাউদ্দিন আতঙ্কগ্রস্ত মন নিয়ে রুমে চলে যান।
আলাউদ্দিন চলে যাওয়ার পরই অশ্রু পারুল বেগমের দিকে এগিয়ে বলল,
” মা বাবা এসব কি বলছে?”
“তোর বাবা ঠিকই বলছে অশ্রু।ওই পোদ্দার তোর বাবাকে ডেকে নিয়ে বারবার তোকে উদ্দেশ্য করেই হুমকি দিয়েছে।যদি তোর বাবা রাজি না হয়,তাহলে তোকে কলঙ্কিনী করে পুরো দেশ-বিদেশে ঢোল বিঢোল করবে।মা প্লিজজ বাবার কথা মেনে নে।তোর মামীর ওখানে ক’দিন থাকলে সেইফ থাকবি।তোকে নিয়েই আমাদের চিন্তা।”কান্নামুখের বলেন।
অশ্রু তার মায়ের কথায় চুপ হয়ে যায়।
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-৩৩
রোকসানা আক্তার
অরুন অস্থির মন নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর বেলকনির দিকে এগিয়ে যায় তার বাবার আসার অপেক্ষায়।সন্ধে নেমে সূর্য ডুবল এখনো ভুট্টো পোদ্দার বাসায় আসছেন না।অরুন বেলকনির রেলিং এ দু’হাত রেখে জোর একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।আর আবছা এই অন্ধকারে কালো সেই বিষন্ন দিনটির কথা মনে পড়ে যায়।
সেদিন ছিল ঘন বর্ষা।বর্ষণ মুখরে স্কুল ছুটি হয় অরুনের।সে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেইটের সামনে রাতুল চাচার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে।রাতুল তার ড্রাইভার ছিল।প্রতিদিন তাকে স্কুলে আনা আবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া রাতুলের দায়িত্ব ।এরজন্যে ভুট্টো পোদ্দার রাতুলকে মাইনে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন। সেদিন হলো কি রাতুল স্কুলে আসার সময় জ্যামে আঁটকা পড়ে।এতে তার জন্যে অরুন অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়ে।আর এত সময় দাড়িয়ে স্ট্যাচু হওয়া একটা ছোটবাচ্চার জন্যে প্রায়ই অসম্ভব।গিরগিটির মতো লেজ না নাড়ালে এদের মনের আর তৃপ্তি মেটে না।তখন তার মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি চেপে বসে।বৃষ্টির দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগ একপাশে ছিটকে ফেলে নেমে যায় মাঠে।ঝিরিঝিরি পানির ফোঁটার সাথে থৈ থৈ খেলা খেলতে থাকে।পা থেকে আপাদমস্তক ভিঁজে চুপচুপে।কিছু সময় পার হওয়ার পর রাতুল এসে উপস্থিত হয়।সে অরুনকে এমতাবস্থায় দেখে এই হালকা শীত শীত অনুভূতিতেও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।সমস্যাটা ভুট্টো পোদ্দারকে নিয়ে।তিনি যদি এর বিন্দুমাত্র শুনতে পান তাহলে ভূমিকম্প হবে নিশ্চিত।ছেলেদের গাঁয়ে একটা টোকার আঘাতও সহ্য করেন না এতটাই ভালোবাসেন তিনি ছেলেদের।
অতঃপর রাতুলের যেখানে ভয়টা ছিল, সেখানেই সন্ধা নামলো।অরুন বাসায় গিয়ে টানা হেঁচকিতে তোড়ে গাঁয়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো।ভুট্টো পোদ্দারকে তোহিয়া রাণী কিছু না বললেও উনি উনার সুক্ষ্ম বুদ্ধিতে ধরে ফেলেন।তারপর চোখদুটো রাতুলের দিকে আড় নয়নে তাক করে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নিয়ে যান।খালি গাঁয়ে মোটা লাঠি দিয়ে গোনে গোনে একশোটা বারি মারেন।বেচারী রাতুল আধমরা হয়ে ব্যথায় কোঁকড়ায় তারপরও ভুট্টো পোদ্দারের ভ্রুক্ষেপ ছিলনা।খুব নিদারুণভাবে শাস্তি দেন রাতুলকে। রাতুল বাড়ি ফিরে যায় আর কখনো আসে নি কাজ করতে।খুব খুব জঘন্য ছিল সেদিনের দিনটা।আর সেই দিনের পুরো ঘটনাই অরুন স্বচোখে প্রত্যক্ষ করে এবং তার পর থেকেই সে তার বাবার সবটাই মুখস্ত করে ফেলে।
তাই আজও সে তার বাবাকে ভরসা করতে পারছে না।বুকের মাঝখানটা উৎকন্ঠায় কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে উঠে।অশ্রুর বাবার সাথে ভুলবাল কিছু করে ফেললো নাতো?এত সময় উনারা কী করে, কোথায় আছে এধরনের নানানও চিন্তা অরুনের মাথায় লম্বভাবে প্রবাহিত হয়।গাড়ির হর্ণ কানে আসে।হর্ণের শব্দ অনুসরণ করে অরুন বেলকনি ক্রস করে মেইন ফটকে চোখ রাখে।দূর থেকে তার বাবার গাড়ি দেখতে পায়।তিনি আসছেন বৈ-কি।অরুন বিছানা থেকে নেমে তড়িৎ পায়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে যায়।
গাড়ি স্টপ করে ভুট্টো পোদ্দার এবং মাহবুব গাড়ি থেকে নামেন।দুজনের মুখে খুশির ঝলকানি।কাউকে বোধহয় খুব ভালোই সাফাই করেছেন তা মুখ দেখেই বুঝা যায়। অরুন তা পরখ করে ভ্রু কুঁচকায়। নিচ থেকে উনাদের কথোপকথন শুনতে দু’কান হরিণের ন্যায় করে।নিচ থেকে মাহবুবের জোড় গলায় শুনা যায়।বলেন,
“দেখিস ব্যাঁটা মানবে ব্যাঁটার চৌদ্দ পুরুষও রাজি হতে বাধ্য হবে!”
“সেটাতো বুঝলাম।তবে এই আলাউদ্দিন খুবই ধূর্ত।রাজি হবে কিনা সন্দিহান। ”
“সেকারণেই তো মেয়েকে টানলাম।আর তা কোনো বাবাই সহ্য করবে না।বুঝলি?”
“হু।যাইহোক,এখানেই সব স্টপ।বাসায় এসব কাউকে বলা যাবে না।”
“জানি রে, জানি।”
অরুন দুজনের কথোপকথনে শুকনো একটা ঢোক গিলে।কি রাজি,আর অশ্রুকে টানা এসবের মানে বুঝলো না অরুন!তাহলে সবটা জানবে কী ভাবে?ভুট্টো পোদ্দারই নিজ মুখেই বললো বাসায় এসব কাউকে জানাবে না।এখন উপায়?
অরুন দোটানায় পড়ে।রুমে এসে বিছানার উপর গা ছড়িয়ে দেয়।চোখবুঁজে নিঃশ্বাস নিয়ে এক সাইডে কাঁত হয়।আর গভীর ভাবনায় ডুবে যায়।”অশ্রুর বাবা এখনতো বোধহয় বাসা পৌঁছেছে।আর না পৌঁছালে…বিষয়টা অশ্রুর থেকে ক্লিয়ার হওয়া যাবে।”
অরুন বুঁজা চোখদুটো একটানে মেলে ফেলে।উঠে বসে।মোবাইলটা হাতে নেয়।অশ্রুর নাম্বার ডিসপ্লের সামনের এনে কিছুক্ষণ নাম্বারটির দিকে তাঁকিয়ে থাকে।মনের অগোচরে অপ্রস্তুত অনুভব হয়।আবার কল করলে যদি বেহায়া হিসেবে সম্বোধন পায়?
তাছাড়া এখনতো ওসব ভেবে লাভ নেই।এখনতো জরুরী প্রয়োজনে কল করা।আর প্রয়োজনটা তারই হতে পারে!
ভেবেই অরুন মাথা ঝাঁকায়।তর্জনী দিয়ে ডায়ালে টাচ করে।রিং হওয়ার শেষ পর্যায়ে ওপাশ থেকে কল রিসিভ হয়। খুব ক্ষীণভাবে অশ্রুর গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনতে পায়।অরুন তা বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
“তোমার বাবা বাসায় ফিরেছেন?”
“তোমার” শব্দটি শুনতেই আকস্মিক অশ্রুর মুখে হাসি ফুটে উঠে। “তুমি” বলায় অশ্রু বুঝতে পেরেছে অরুন তারউপর এখন রেগে নেই।তাছাড়া আজ সন্ধে থেকেই অশ্রুর সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে।একেতো অরুনের বাবার নির্মমতার কথায় বুকটা দাউ দাউ জ্বলছে তারউপর চট্রগ্রাম ওই বিপুল খাটাসদের বাসায় কয়েক মাস কাটাতে হবে ভেবে। তবে এখন কেনজানি অনেকটা হালকা অনুভূত হচ্ছে তার। মন বলছে চট্রগ্রাম আর যেতে হবে না।অরুনের বাবার হৃদয় নিঙ্গড়ানো কথা মাথায় বয়ে বেড়াতে হবে না।সব বিপদই যেন কেটে যাবে।মুক্ত,খুব খুব মুক্ত।মুক্তবনে বাতাসে উড়ার মতো।অশ্রু খুশির লগনে মুখ ফসকে বলে ফেলল,
“এখনতো আমার উপর রেগে নেই,না?”
অরুন বিষম খায়।কি বলবে ভেবে না পেয়ে প্রসঙ্গ পাল্টায়।
“আমার উত্তর?”
“কি প্রশ্ন যেন করেছেন…ওহ হ্যাঁ,হ্যাঁ মনে পড়েছে।হু বাবা মিনিট ত্রিশেট আগে বাসায় ফিরেছেন।”
মনের অজান্তে ঠোঁটের কার্নিস ঘেঁষে অরুনের হাসি ফু্টে ওঠে।ঠোঁটে নিঃশব্দ হাসি বজায় রেখেই সে বলল,
“তোমার বাবা কিছু বলেছেন?”
অশ্রু চুপ হয়ে যায়।মাথাটা নিচু করে আনে। অশ্রু চুপ থাকায় অরুনের বিবেক নড়ে।সে বুঝতে পারে কোনো ঘাপলা আছে।অরুন একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করে।বলল,
“বলো অশ্রু।আমাকে বলতে পারো দ্বিধাহীনতায়।”
অশ্রুর এবার কেনজানি দু’চোখে বেয়ে টপকে দু’ফোটা পানি বেয়ে পড়ল!নিজের কাছেই নিজেকে খুব অপমানিত বোধ হচ্ছে তার।যাকে সে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল আজ সেই ব্যক্তিই সব ভুলে তাকে ভরসার বাণী শুনাচ্ছে!অশ্রু নিজেকে সামলালো।বলল,
“আ-স-লে আমি চট্টগ্রাম যাবো।এখানে থাকাটা আমার জন্যে নাকি নিরাপদ নয়।বাবা বললেন।”
এটুকু বলেই অশ্রু থেমে গেল।অরুন বুঝল, নিশ্চয়ই তার বাবা মাহবুব আঙ্কেলের ফাঁদে পা রেখে এমন নীচক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে।কিন্তু বাবা এটা ভাবলো কি করে?শেষমেশ এই কেইস অশ্রুকেই টেনে আনল!দু’কান লাল হয়ে যায় অরুনের।কান থেকে যেন এক্ষুনি গরম ধোঁয়া বের হবে এরকম।নিজেকে সে যথেষ্ট আগলে বলল,
“টেনশন নিও না।কিছুই হবে না।”
“আ-আচ্ছা!”
“রাখি।খেয়ে নিও।বায়।”
“আচ্ছা।”
অরুন কল কাটে।অশ্রু কান থেকে মোবাইল রাখার পর ফুঁপিয়ে উঠে।
চলবে….
(ছোট হয়ে গেল।রাতে লিখতে বসলাম তো😑)
চলবে…
( ইচ্ছে হয় গল্পটা এখানেই অফ করে দিই।আপনাদের হাজারো মন্তব্য! কেউ কেউ বলেন শুধুই অরুনের দোষ।আবার কেউ বলেন অরুনের দোষই নেই।কেউবা বলেন উভয়েরই দোষ,কেউ কেউ বলেন শুধুই অশ্রুর দোষ!অশ্রুর দোষ তার কারণ সে না জেনে না বুঝে একটা মানুষকে কেন ফাঁসলো।অরুনতো ইচ্ছে করে রুমডেট করতে আসিনি,ওরাতো এসব হ্যানত্যান।
এবার শুনুন আমার কথা!অশ্রুর কারণেই এতদিনের এই লুকায়িত সত্যটা প্রকাশিত হয়েছে।মানুষ জেনেছে,বুঝেছে।নাহলে ভেতের ভেতরে এধরনের কারসাজি প্রতিনিয়ত চলতো,কেউই এর রেশ টুকু জানতোই পারত না।অশ্রুর এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছে।আর এখানে যে যতটুকু অন্যায় করেছে সে তার ততটুকুই সাঁজা পাবে।খামোখা এসব নিয়ে হট্টগোল করে আমায়.. 😑
বিলিভ মি,আপনাদের এহেন কমেন্টে আমি বাকরুদ্ধ।)