একটুখানি বিশ্বাস পর্ব ৩+৪ রোমান্টিক গল্প

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-০৩(বোনাস পার্ট)
রোকসানা আক্তার

অশ্রু “চকলেট রেস্টুরেন্ট”- এ কিছু সময় অতিবাহিত করে ঠিক বারোটার সময় বোস্টিং হাউজের দিকে রওনা করে।” চকোলেট রেস্টুরেন্ট” থেকে বোস্টিং হাউজে হেঁটে যেতে প্রায়ই মিনিট পাচেক সময় লাগে।
অশ্রু বোস্টিং হাউজের মেইন গেইটের সামনে এসেই থমকে দাড়ায়।তার শিরা-উপশিরায় হীম রক্ত বইতে থাকে।গাঁয়ের পশম কাঁটার মতো সরু হয়ে যায়।আর বুকের মাঝে ধুকপুক আওয়াজের ধ্বনি তো আছেই!
হুটট করে কেউ গেইট খুলে বলে,
———স্যার বাসায়ই আছেন।ভেতরে আসুন।
অশ্রু লোকটির দিকে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকায়। লোকটিকে দেখে তার দারোয়ান মনে হলো না।মেয়েদের ভেতরে ঢোকানোর সার্ভার বোধহয়।অশ্রু নিজেকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে রেখে লোকটিকে অনুসরণ করে।লোকটি তাকে একটু রুমে নিয়ে যায়।
———ম্যাম,এখানেই থাকুন।স্যার কিছুক্ষণ পর চলে আসবেন।
বলেই লোকটা রুম থেকে বের হয়ে যায়।অশ্রু ভয় ভয় মনে বিছানার এককোণে গিয়ে বসে,আর রুমটার চারদিক তাকাতে থাকে।
এরইমধ্যে কেউ দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে।অশ্রু দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে অরুন এসছে। সে তড়িঘড়ি বসা থেকে দাড়িয়ে যায়।অরুন ব্যস্ত মনে বলে,
———আরে এত ফর্মালিটিজ লাগবে না।যেভাবে বসেছিলে সেভাবেই থাকো!
অশ্রু মাথা নেড়ে আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে।অরুন মাথায় হাত রেখে চোখমুখ কুঁচকে এনে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাড়ায়।নিজমনে বিড়বিড় করে আবার বলে,
———মাথাটা আমার প্রচন্ড ব্যথা করছে।উফস এই সাপ্তাহিক টকশোটা কবে জানি আমার মাথা খেয়ে ফেলে!
তারপর অরুন মাথার সিল্কি চুলগুলো মাথার এক সাইডে ভাজ করে পেছন ফিরে।আর অশ্রুর দিকে তাকিয়ে ফিকে হাসি দেয়!অশ্রু অস্বস্তিতে পড়ে।অরুন তা বুঝতে পেরে বলে,
———এত দ্বিধাদ্বন্দে না থেকে স্বাভাবিক হয়ে বস।আই’ম ফ্রী!যে মেয়েরা আমার এখানে রুমডেটে আসে সবাই ফ্রীলি আমার সাথে কথা বলে।তবে তুমি তাদের থেকে একদম আলাদা।
যাইহোক আমি এতকথা বলে ফেললাম এবার তুমি কিছু বল!
অশ্রু চারপাশ পিটপিট চোখে তাকিয়ে এবার অরুনকে ডিরেক্ট উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
———আচ্ছা,আপনি রুমডেটটা কেন করেন?
অরুন অশ্রু কথায় ভ্রু কুঁচকে আনে।সরু হয়ে হাই ছেড়ে বলে,
———সাডেন এধরনের প্রশ্ন?
———মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
———জানতে চাও, কেন?
———হু।
———আত্মতৃপ্তির জন্যে!
———আর রিলেশন?
এ কথা শুনে অরুন খিলখিল হেসে দেয়।হাসি থামিয়ে অশ্রুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।ভ্রু জোড়া আবার এককরে বলে,
———তুমি এতকিছু জেনে কি করবে শুনি?
———যে মেয়েটার সাথে আজ সারাটা রাত কাটাবেন,কিছু সময়ের ব্যবধানে তার সতীত্ব কেড়ে নিবেন সে এসব প্রশ্নের উওর জানাটাতো মন্দ কিছু নয়!নাকি অধিকার নেই!কোনটা?
অরুন অশ্রুর উদ্ভট প্রশ্নে দোটানায় পড়ে।হম্বিতম্বি করে পাল্টা জবাব ছেড়ে দেয়।
———তোমার যদি এতই অসহ্যকর লাগে তাহলে ইউ ক্যান লিভ দিস প্ল্যাস।আমি বাঁধা প্রদান করবো না।
———এ কেমন কথা!মাঝপথে এনে এভাবে ছেড়ে দিবেন তাতো মানবো না।

অরুন অশ্রুর কথায় এবার চরম মাএায় অবাক!একটা সাধারণ মেয়ে এসে তাকে এমন অসাধারণ প্রশ্ন করবে সত্যিই এসব তার ধারণার বাহিরে!জ্বলে যাওয়ার রাগটাকে আর সামলাতে পারেনি।ছট করে অশ্রুর দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,
———স্টপ!মন চাইলে থাকো,নাহলে কেটে পড়ো।তোমার সাথে এধরনের আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ার সময় আমার একদম নেইই!ডু ইউ আন্ডার্সটেন্ড?

অশ্রু চুপ হয়ে থাকে।এভাবে কিছুক্ষণ দুজনার মাঝে নিরবতা বিরাজ করে।অরুন হালচোখে এবার অশ্রুর দিকে তাকায়।দেখে অশ্রু মুখটাকে ভার করে অন্যদিক তাকিয়ে আছে।পরক্ষণে অরুন রাগটাকে মাথাচাড়া দিয়ে বলে,
———কাল তোমাকে আমি কি কি রুলস বলেছি মনে আছে?
অশ্রু মুখটা মুভ করে অরুনের দিকে,তবে শব্দ বিহীন!
———কি হলো আমার এন্সার?
———আমি এখন বাসায় যাবো।
———এতরাতে?হো হো হো হো
———আজব মেয়েতো তুমি! মাথায় কি বুদ্ধিসুদ্ধি কিছু নেই নাকি?এতরাত বাসায় যাবে লকেটে চড়ে?
এবার অশ্রু ফেলফেল হেসে । তা দেখে অরুন শিরদাঁড়া প্রায়।অরুন মনে মনে ভাবে,এ আবার কোন পাগল!আমি আবার কোনো পাগলের পাল্লায় পড়লাম নাতো!?হায় এধরনের পাগলের পাল্লায় পড়ে গেলে রেহাই নাই।এসব ভাবনার ছেদ ঘটে অশ্রুর কথার শব্দে।
———আমি এখানে রাত কাঁটিয়ে কাল সকালে বাসায় যাবো।অনেক বড় আশা নিয়ে এসছি মিস্টার অরুনের সাথে রাত কাটাবো বলে আর সে আমায় এভাবে ফিরিয়ে দেবে!?
———ফিরিয়ে দিচ্ছি না।ফিরাতে বাধ্য হচ্ছি
———ওকে আমি আর কোনো ভোগলামি করবো না।আই’ম রেডি!তবে তার আগে আরেকটা কাজ সেরে নিতে হবে।
———কী?
———কফি খাবো।কারণ রাতে এককাপ কফি ছাড়া আমার চলে না!
———ওকে।কুইকলি দু’কাপ কফি বানিয়ে রুমে চলে এসো ফার্ট মুভ এন্ড গো!।
অশ্রু রুম থেকে বের হয়ে মুখটা হালকা মলীন করে ফেলে।উফস প্লানগুলো সবতো ভেস্ত যাচ্ছে!এ’তো দেখি আমার থেকেও বেশি চালাক!তবে যাই হও মিস্টার অরুন!আমি তোমার মুখোশ জনসম্মুখে উন্মোচন করবই!এটাই আমার প্রমিস।।
ভেবেই স্যালোয়ার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে রেকর্ডটা সেভ করে নেয়।পরে আবার মোবাইলটা স্যালোয়ারের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।।
তারপর দু’কাপ গরম গরম কফি নিয়ে দরজার সামনে এসে গলা খেচকি দেয়।ভেতর থেকে অরুন বলে উঠে,
———দরজা খোলাই।
অশ্রু ভেতরে ঢোকে।এককাপ অরুনের দিকে এগিয়ে দেয়, আর আরেকটা নিজে নেয়।
———একটা কাজ করতে পারবে?
———কী কাজ?
———আমরা বেলকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফি খাবো,চলো!
———ক-ক-কিন্তু!
———নো কিন্তু।জাস্ট কাম উইথ মি।।
বলেই অরুন বেলকনির দিকে চলে যায়।অশ্রুও বাধ্য হয়ে বেলকনিতে যায়।অরুন কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,
———বেস্ট কফি।আরাম পেলাম!তবে এরচেয়ে বেশি আরাম পাওয়ার অপেক্ষায় আছি!
বলেই শতানী চাহনিতে অশ্রুর দিকে তাকায়।
অশ্রু চোখমুখে ইতস্ততা এনে মাথানিচু করে ফেলে। অরুন তা দেখে হেসে বলে,
———তুমি বেশ লাজুক!
———তেমনই!একটা প্রশ্ন আছে
অরুন এবার বিরক্ত হয়ে বলে,
———আবার প্রশ্ন?
——প্রশ্নটা তেমন বড় নয়!উওর দু’অক্ষরের!
———করো!
———আমি আপনার কত নাম্বার রুমডেটার?
———৩০
———ওহ।
নিরবে অশ্রু একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। অরুনের কফি খাওয়া শেষ হয়।অশ্রুকে হালচোখে বলে উঠে,
———আচ্ছা আমি বাথরুমে গেলাম।তুমি কফিটা শেষ করে তাড়াতাড়ি রুমে চলে এসো।ওকে?
অশ্রু মাথা নাড়ে।
অরুন বাথরুমে চলে যায়।অরুন বাথরুমে যাওয়ার পর অশ্রু বাথরুমের দিকে তাকায়।তারপর দরজার দিকে ধাপে ধাপে পা বাড়াতে থাকে। এখনই সময় পালানোর!যেভাবেই হোক পালাতে হবে।নাহলে আর বাঁচার উপায় নেই!যতটুকু রেকর্ড হয়েছে তাতেই এনাফ।ভেবেই অশ্রু দরজা আলতো ফাঁক করে বেরিয়ে পড়ে।আনাচে-কানাচে তাকিয়ে খুবই সতর্কতার সহিত বাড়ি থেকে বের হয়।আর আল্লাহ আল্লাহ শব্দ তুলে তড়িৎ বেগে মেইন গেইটের সামনে যায়।গেইট ঠকঠক করে খুলতে গেলেই পেছন থেকে কেউ হাতটা মুচড়ে ধরে!অশ্রু চমকে ভয়ার্ত মুখে পেছনে তাকায়।পেছনে অরুন দাড়িয়ে আছে।অরুন চোখে মুখে শতানী হাসি! অরুন খুব জোরে হট্রহাসিতে ফেটে পড়ে।আর অগ্নিচক্ষু নিক্ষেপ করে বলে,
———কি ভেবেছিলে আমাকে?আমি অবুঝ?আমি বোকা?হা হা হা হা হা।
অশ্রু থরথরে কাঁপতে থাকে!
অরুন প্রসঙ্গ টেনে আবার বলে,
———তোমার বাবা যে দৈনিক পএিকার সাধারণ সম্পাদক তা আমি আগ থেকেই জানি।আমার লোকেরা তোমার সব ডিটেলস আমায় আগেই দিয়েছে!আমার এখানে যেসব মেয়েদের ঢোকার অনুমতি দিই আগে তাদের বায়োডাটা চেইক করে নিই।নাহলে অরুনের বোস্টিং এ এর আগে কারো জায়গা হয়না!তুমি ভুল পথে এসেছ!আমার সব রটানোর জন্য,রাইট?হা হা হা হা। কিন্তু এখন শেষে হলোটা কি?বড় একটা আন্ডা!নিজেকে চালাক ভেবেছ,না?

———সাধারণ মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন আর আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখবো?কখনোই না!ছেড়ে দিন আমায়!ছেড়ে দিন বলছি!
অরুন অশ্রুর প্রতিবাদী মুখের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে,
———সে আশা ছেড়ে দাও!
অশ্রু অবাক হয়ে বলে,
———মানে?
———চলো আমার সাথে!
একটুখানি বিশ্বাস
রোকসানা আক্তার
পর্ব-০৪
———আমাকে ছেড়ে দিন বলছি!কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে! ছাড়ুন আমায়।
অরুন অশ্রুর কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে টেনেহিঁচড়ে অশ্রুকে বাড়ির ত্রিসীমানার দিকে নিয়ে যায়।অশ্রু শত চেষ্টার পরও অরুনের হাত ছাড়াতে পারেনি।অরুন অশ্রুকে রুমের ভেতর নিয়ে এসে এক ঝাটকায় তার হাত ছেড়ে দেয়।আর ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে ফেলে।তারপর অরুন দরজার পেছন ঘুরে অশ্রুর দিকে হিংস্র নয়নে তাঁকায়।একগাল ফুঁলিয়ে বলে,
———আমার সব কথা রেকর্ড করেছ,না?মোবাইল কই তোমার?
অশ্রু উওর দেয়নি।
———তুমি মোবাইল দিবে নাকি আমি খুঁজে নিব!(চোখবুঁজে জোরে)
অশ্রু অরুনের কথার কোনো উওর না করে নিঃশব্দে ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।
———গিভ মাই এন্সার!
অশ্রু এবার চমকে উঠে।পিটপিট দু’খানা চোখ স্বাভাবিক করে শক্তমনে বলে উঠে,
———না আমি কোনো রেকর্ড করেছি আর না কোনো আমার কাছে রেকর্ড প্রমাণ আছে!
———বোকা বানানো হচ্ছে আমাকে?তুমি আমায় বোকা ভেবেছ?(জোরে চিল্লিয়ে)
অশ্রু হালকা অস্বস্তিতে পড়ে।তারপরও নিজেকে স্বাভাবিকতায় রাখার চেষ্টা করে। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে নিজেকে সব অসাড় মনে সয়ে নিতে হয়।নাহলে সফলতার আলো সেদিনই নিভে যায়।অশ্রু খুব স্বাভাবিক হয়েই বলে,
———নাহ তো। আমি আপনাকে বোকা বানাতে কেন যাবো!আমারতো আর খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই।
অরুন অশ্রুর কথায় বাম ভ্রু’টা হালকা উঁচায়।
ঠোঁটের কোণে একটা হট্টহাসি টেনে বলে,
———আমার উপর তোমার খুব ক্ষেপ,না?তার উপর মিস্টার অরুন জয়!জানো,আমি-না খুবই নাজেহাল তোমার সাহস দেখে!
এবার আরেকটু সামনে এগিয়ে অরুন আবার দাঁত কেলিয়ে বলে,
———এত সাহস তোমাকে দিয়েছে টা কে শুনি?কার সহায়তায় তুমি এখানে এসেছ?তোমার বাবার?

অরুনের উচ্চ ধবনির আওয়াজে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠে।অরুনের মুখে অশ্রু তার বাবার কথা শুনেই ভয়ে কুঁকড়ে উঠে।সবকিছু মানা গেল তবে তার বাবাকে কেন টানছে অরুন!এ ভেবে অশ্রু চোখদুটো বুঁজে আসে!
তা দেখে অরুন ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
———ভয় পেয়ে কোনো লাভ নেই।তোমার বাবা হাতেনাতে প্রমাণ চাইতো সেকারণে তোমাকে আমার আস্তানায় পাঠিয়েছে। আজ পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক আমায় নিয়ে কিছু লিখতে পারে নি,অথচ আজ কি হলো?যাইহোক এবার তোমার বাবার সাথে আমার আসল হিসেব-নিকেশ হবে।
বুকটা এবার অশ্রুর সত্যিই ভার হয়ে আসে।ধীরে ধীরে যেন সাহসটা বুক থেকে ফাঁকা হচ্ছে। কারণ এসব ব্যাপারে না তার বাবা জানে, না তার মা।তারউপর অরুন যদি তার নিরপরাধ বাবার উপর উল্টো রিয়াকশন করে বসে পরে কি ঘটবে উপরওয়ালা ছাড়া আর কেহ জানে না।অশ্রু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ,
———দেখুন আপনার ভুল হচ্ছে।এসব ব্যাপারে আমার বাবা কিছুই জানেন না!
———ওহ আচ্ছা,তাই?মিথ্যে বলা হচ্ছে আমার সাথে?বাবা -মেয়ে মিলে আমার সাথে পাঙ্কা নিতে এসছো?ওয়েট– তুমি-না আমার পর্দা ফাঁস করতে এসছো? এবার আমি তোমার পর্দা ফাস করে রুমডেট ভিডিও সারা ওয়ার্ল্ড কে দেখাবো।তখন দেখবো তোমার এই সাহসী মন কই থাকে!
বলেই অরুন শার্টের বোতাম খুলতে থাকে।তা দেখে অশ্রু আতঙ্কে পড়ে যায়।অরুন শার্টের বোতাম খুলে কি করবে?কি করতে চায় ও?অশ্রুর হার্টবিটটা দ্রুতগতিতে উঠানামায় লেগে যায়।নাহ মন কিছুতেই শান্ত না তার। অরুনকে যে করেই হোক আটকাতে হবে।প্রয়োজন হলে কোনো ফন্দি এঁটে। এসব ভাবতে ভাবতে অশ্রুর হাত-পা শক্ত হয়ে আসে।আর যেই সে অরুনকে কিছু বলতে যাবে ওমনিই অরুন তার বাম হাতে হেঁচকা টান মেরে বিছানার উপর শুইয়ে দেয় এবং দু’হাত বিছানার চৌকাঠের সাথে শক্ত করে ধরে।অশ্রুর এখন চোখের পানির বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। টপটপ চোখবেয়ে পানি পড়তে থাকে!অরুন এবার অশ্রুর সাথে জোরাজুরি করতে উঠে লেগে যায়।
———দেখুন এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না!একদমই না।আপনি আপনার লিমিটেশন ক্রস করতেছেন!
কথার মাঝেই অশ্রুর ফোনকল বেজে উঠে।অশ্রু ফোনকলের আওয়াজ পেয়ে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে অরুনকে এক ঝাটকায় সরিয়ে দেয়।তড়িঘড়ি পকেট থেকে মোবাইলটা হাতে নেয়।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রুমকির কল।অশ্রু তড়িঘড়ি চোখের পানি মুছে
অস্থির মনে হ্যালো বলে।রুমকি অশ্রুর কন্ঠ শুনামাএই কথা বলা শুরু করে দেয়।আর অরুন?সে কি তাকিয়ে দেখার মতো পাবলিক?মোটেও নয়।সে জিম্মি অশ্রুর থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে কানের কাছে গুঁজে রুমকির কথা শুনতে থাকে।
———দোস, গ্রেট!খুব ভালো একটা কাজ করছিস!সবগুলো অডিও আমি পেয়ে গেছি।দেখবো ওই ব্যাটা মুখ কই গুঁজায়।এখন শুধু ওই কুলাঙ্গারের কুকর্মের পর্দা জনসম্মুখে ফাঁস করার পালা!আচ্ছা তুই এখন কোথায় আছিস?
———আমি অশ্রু নয় অরুন!
রুমকি আচমকা হয়ে যায়!তাড়াতাড়ি মোবাইলের স্ক্রিনে তাঁকায়।আবার কোনো ভুলবাল নাম্বারে কল দিল নাতো?হুম অশ্রুকেই তো কল দিয়েছে তাহলে অরুন আসলো কই থেকে!রুমকি হম্বিতম্বি হয়ে পড়ে।অরুনের ঘাড়ের দুটা রগ মোটা হয়ে যায়।প্রবল শীতেও ঘামতে থাকে।ক্রদ্ধগলায় অরুন বলে উঠে,
———দুই বান্ধবী মিলে আমায় ফাঁসানোর ঝালে আছিস, না?তোদের আমি দেখে নিব।একজনকে ত অলরেডি দেখতেছিই এবার তোকে!
রুমকি সারা গাঁ চিনচিন জ্বলে উঠে।সে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারে অশ্রু যে এখন অরুনের চারদেয়ালে আঁটকা পড়েছে।তাই দম-মুখ খিঁচে কঠিন গলায় বলে উঠে,
———অশ্রুর মোবাইল থেকে রেকর্ড ডিলিট করতে পারবেন! বাট আমার ফোন থেকেতো আর নয়!জাস্ট দু’মিনিট আপনাকে টাইম দিলাম। অশ্রুকে ছেড়ে দিন।আর যদি না ছেড়ে দেন তাহলে আপনার এই অডিও রেকর্ড ইউটিউব,ফেইসবুকে এখনই ভাইরাল করে দিব!
রুমকির কথায় অরুন হেসে দেয়।হাসি থামিয়ে বলে,
———ভয় দেখাচ্ছিস আমাকে?হা হ হা হা হা।মিস্টার অরুন পৃথিবীর কাউকে ভয় পায় না।
———আপনি কি আসলেই আমার কথায় সিরিয়াস না?
———তোদের মতো মেয়েদের কথায় আমি সিরিয়াস হব?হাউউ ফানি!
———ওকে তাহলে এখনই ফাঁস করে দিচ্ছি আপনার কুকর্মের সব পর্দা!

রুমকির কথায় এবার অরুন একটু নড়েচড়ে বসে।কলটা হোল্ডে রেখে এস.এম.এস এ ঢুকে।
বরাবর দু’টো রেকর্ড রুমকিকে পাঠানো হয়েছে।একটা ৪০ মিনিটের এবং আরেকটা ২০ মিনিটের!
অরুন এবার জোরে আৎকে উঠে!মোবাইলটা হাত থেকে অশ্রুর দিকে জোরে ছুঁড়ে ফেলে বলে,
———তুই খুব পাক্কা মেয়ে রে!তুই সব তোর বান্ধবীকে পাঠিয়ে দিলি?এবার সত্যি তোর কোনো ছাড় নেই।
বলেই অরুন আবার অশ্রুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আবারোও রুমকির কল বেজে উঠে।অরুন কল রিসিভ করে বলে,
———কি চাচ্ছিস তুই?
———আমি অবশ্য কিচ্ছু চাচ্ছি না।কিন্তু আপসেট এত্তবড় একজন বিজনেসম্যান আদরের ছেলের যার কিছুক্ষণ পর কুকর্মের পর্দা ফাঁস হবে এবং তা দেখে দেশের পাবলিক মুখে থুতু দিবে তখন সে কিভাবে সহ্য করবে?ইস আমিইতো এটা একদম মানতে পারছি না!
———তুই কোথায় আছিস এখন?
———কেন দেখা করবেন?
অরুন দাঁত কটমটে বলে,
———শায়েস্তা করবো!
রুমকি খিলখিল হেসে দেয়।হাসি থামিয়ে বলে,
———এখন আমি আপনার বাসার নিচেই দাড়িয়ে আছি।বিলিভ নাহলে বেলকনিতে এসে দেখুন।
———রিয়েলি?
———কেন সন্দেহ হয়!
———তা নয়।
———আমার সহজ সরল বান্ধবীটাকে একটা ভক্ষকের কাছে একা কিভাবে দিতে পারি!তাছাড়া আপনি তা ভাবলেন কি করে?
রুমকি কি সব সত্য বলছে নাকি মিথ্যে বলছে তা পরখ করতে অরুন সত্যিই সত্যিই বেলকনিতে এগোয়।
আর অশ্রু সুযোগ পায় পালিয়ে যাওয়ার।সে ধীরে পা ফেলে আলতো রুমের দরজা খুলে ফেলে।দরজা খুলার সাথে সাথেই অশ্রু পা দু’টো থরথর কেঁপে উঠে।যে লোকটি তাকে তখন গেইট খুলে ভেতরে নিয়ে আসে সে লোকটিই এখন তার সামনে দাড়িয়ে আছে।লোকটি চোখ দু’টো চরকার মতো ঘুরিয়েই বলে উঠে,
———ম্যাম,স্যার কোথায়?
———আপনার সার বসে আছেন।আমি কিচেনে দু’কাপ কফি করতে যাচ্ছি!
———ওহহ আচ্ছা আচ্ছা যান।
অশ্রু লোকটির থেকে ছাড়া পেয়েই তড়িৎ বেগে পা ফেলে সিড়ি বেয়ে নামে।নিচে নামার পর আবার চারপাশে চোখ বুলায়।কাউকে দেখতে না পেয়ে সদর দরজার দিকে চোখ রেখে তুফানের মতো দৌড়!

বাট আপসেট বাড়ির বাইরে জায়গা দিয়ে অশ্রুকে অরুন দৌড়াতে দেখতে পায়। সে তড়িঘড়ি পেছনের দিকে তাকায়, অশ্রু বিছানার উপর বসা নেই।অরুন জোরে চিৎকার শব্দ করে উঠে,
———কে কোথায় আছো মেয়েটিকে ধরো!
অরুনের কথার ছোবলে লোকজন চারপাশ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে।আর রুমকি অরুনের কথার আওয়াজ পেয়েই তাড়াতাড়ি মেইন গেইট একধাক্কায় খুলে চলন্ত অশ্রুর হাতে টান মেরে তাকে একঝাটকায় ব্যাম্বু বাইকে উঠিয়ে ফেলে।
দ্রুতগতিতে মেইন রাস্তা দিয়ে চলতে থাকে দু”বন্ধুর ব্যাম্মু বাইক।খুব খুব বেগে,যেন তুফান ছুটছে!
অশ্রু রুমকিকে জোরে জড়িয়ে ধরে।আর উল্লাসিত মনে বলে,
———থ্যাংকু দোস্ত আমায় বাঁচানোর জন্যে!এতক্ষণ তোর অপেক্ষায়ই ছিলাম।
———কেমন খেললাম?
———সেই!অরুনকে ত একদম বোকা বনে পাঠালি।
———হা হা হা হা হিহিহিহি ।
————অডিও রেকর্ড সব ঠিকঠাক আছে ত?
———সব ওকে।
কনকনে শীত অনুভূতি হতে অশ্রু রুমকিকে আরো জোরে চেপে ধরে।
নিয়নের আলোয় আলোয় রাতের এই শহরে, নিস্তব্ধ পরিবেশের মাঝে দু’টো প্রাণী ছুটে চলে তাদের প্লানিং গন্তব্যে।আর অরুনের লোক?তারা কি পিঁছু নিয়েছে?হয়তো নিয়েছে!

চলবে।।

(বুঝাই যাচ্ছে দু’বান্ধবীর আগ থেকে প্লানিং ছিল😁)
চলবে…
(লিখে ফেললাম।তাই বোনাস পার্ট।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here