একটুখানি বিশ্বাস পর্ব ১+২ ভালোবাসার গল্প

———জ্বী,আমি আপনার সাথে একরাত রুমডেট করতে রাজি আছি!তারপরও আপনি আমায় ফিরিয়ে দিবেন না!
অশ্রুর কথা শুনে অরুন ঠোঁটের কিণার বাঁকা হাসি টানে।ভঙ্গিমা ফুরফুরা করে বলে,
———ওয়াও,দ্যাটস গুড!শুনে খুশি হলাম।তোমাদের মতো সাহসী মেয়েদেরই ভালোবাসা যায়।তবে আমার আরেকটা শর্ত আছে!
———আ-আর কি শর্ত?
অরুন চোখদুটো চারদিক টগবগিয়ে অশ্রুর দিকে তাকায় আর ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
———যখন রাত এগোরটা পেরিয়ে বারোটার কাঁটায় টিকটিক করবে তখন আমার হাউজে এসে উপস্থিত হবে।কোনোরকম নির্দেশ দেওয়ার আগেই আমার বিছানায় উপর গাঁ ছড়িয়ে দিবে।আমার স্পর্শে কোনোরকম কাতরাতে পারবে না।নিরবে সব সয়ে নিতে হবে!।আমি যেমনটি করতে চাইবো তাই করতে হবে।কারণ,আগেরবার যত মেয়ের ইন্টারভিউ নিয়েছি সব ফেইল মেরেছে।আর অরুন জয় তাদের ছক্কা মেরে গেট আউট।তুমিও যদি এমনটি করো তাহলে মিস্টার অরুনের ভালোবাসার ধুলি কেন,এর পা চাটাও শুকতে পারবে না।ডু ইউ আন্ডার্সটেন্ড?
———ওকে।আই এগ্রি।
———তাহলে কাল বারোটার আগে আগে এই বোস্টিং হাউজে চলে আসবে।গেলাম।
বলেই কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো বামহাতে পেছনের দিকে টেনে নেয় আর হিরো হিরো ভাব নিয়ে পা ফেলে অশ্রুকে ক্রস করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় অরুন।অশ্রু অবাক চাহনিতে অরুনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

এই অরুনটা কে এবার জেনে নিন। বর্তমানে ঢাকা শহরের নাম্বার ওয়ান বিজনেস টপার,যিনি বাংলাদেশ ছাড়াও আন্ডার ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে ছ’নাম্বার স্থান দখল করে আছেন উনারই ছেলে মিস্টার অরুন জয়।মিস্টার ভুট্রোর শুধু দু’ছেলে,মেয়ে নেই।বড় ছেলের নাম ইমতিয়াজ পোদ্দার,আর ছোট ছেলে অরুন।
অরুন জয় গত ছ’মাস আগে আমেরিকা থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে নিজ দেশের মাটিতে পা রাখে।
অরুনের বড় ভাই ইমতিয়াজ পোদ্দার বর্তমানে আমেরিকাতেই এ্যারোনটিক্যালে কাজ করছে। অরুনের মা নেই।বাবা ভুট্রোর দেশে বেশি থাকা পড়ে না।তিনি বিজনেস ডিলের জন্যে একবার এক দেশ থেকে অন্যদেশে পাড়ি জমান।এখন তিনি থাইল্যান্ড আছেন,গত ৬ তারিখ নতুন ডিলের জন্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।।।
অরুন দেশে ফেরার পর দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন, পএিকা,টক-শো,ফেইসবুক,ইউটিউব ইত্যাদি গণমাধ্যম তাকে নিয়ে ঝড় তুলে।বাংলাদেশের একমাএ বিজনেসম্যানের ছেলে অরুন জয় স্টাডি শেষ করে দেশে ফিরেছে বলে কথা এখন সে দেশের জন্যে কি করতে চায়?সাধারণ মানুষদের জন্যে কি করতে চায় ইত্যাদি হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।অরুন গনমাধ্যমকে উওর করে দেশের গরীব মানুষের জন্যে কাজ করবে,দেশের নিরক্ষরতা দূর করবে ইত্যাদি।তার এধরনের হৃদয় নিঙড়ানো কথা অনেক মেয়ের অন্তরে টান লাগে।তাছাড়া,অতিরিক্ত কিউনেসের কারণে হাজারো মেয়েরা ক্রাশ খেতে থাকে।মেয়েরা অরুনের ইন্সট্রাগ্রাম,ফেইসবুকে মেসেজ দিয়ে পাঁটিয়ে ফেলে।কেউ কেউ লাভোবয়,ক্রাশবয়,হার্টলেস বয় ইত্যাদি মেসেজ করে অরুনের মাথা খেয়ে ফেলে।অরুন এসব মেসেজ না দেখেছে, না কোনো এন্সার করেছে।আবার অনেক মেয়ে অরুনকে পাওয়ার জন্যে দু’দিন রোজাও রেখেছে,অনেকে নিজের হাত কেঁটে অরুনের নাম লিখে নিয়েছে।অরুন কোনো জায়গায় গেলে মেয়েরা অরুনকে ঘিরে ধরে সেলফি নিতে নিতে বেহুশ ।এরকম অবস্থা!
তবে অরুন এত বিশেষ ব্যক্তিত্বের হওয়া সত্ত্বেও তার এই চেহারার আবআড়ালে আরেকটা চেহারা লুঁকিয়ে আছে।তা হলো মেয়েদের দুর্বল পয়েন্টের সুযোগ নেওয়া।মেয়েরা যখন তাকে প্রপোজ করতে আসে তখনই সে তাদের বাম আঙ্গুল দেখিয়ে রুমডেট অফার করে।প্রপোজালের আগে রুমডেটটা মাস্ট তার চাই।
।আর মেয়েরা অরুনের প্রতি অতিভক্তি হয়ে তাদের দেহ দিতেও দ্বিতীয়বার ভাবে না।অরুন অফার দেওয়া মাএই তারা রাজি হয়ে যায়।তাদের ধারনা অরুনের মনে একবার জায়গা করে নেওয়া মানেই অমাবস্যার চাঁদ।আর অরুন কি করে?তার ইউজ শেষ হলে মেয়েদের তকমা বানিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়।তার কাছে রুমডেট মানেই ওভার এনজয়,আত্মতৃপ্তি!আর যখন বিয়ের কথা মাথায় আসে তখন তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে নিজেই বলে,দেশের মেয়েদের দিয়ে আমার ছিঁড়ে ভিঁজবে না,আমার আমেরিকান সাদা ফুটফুটে একটা মেয়ে চাই যে আমায় সবসময় খুশি রাখতে পারবে!

অরুনের এধরনের কুকর্মে আশপাশে একটু আধটু রটনা রটায়। তারপরও ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
কারণ অরুনের বাবা যদি একবার জানতে পারে তার আদরের ছেলেকে নিয়ে দেশের মানুষ কানাকুশো করছে এক হলে তাদের চাকরি খাবে,নাহলে চিরতরে ওপারে পাঠিয়ে দেবে।
আমাদের সমাজে উচ্চবিওদের নিয়ে সাধারণ মানুষদের এরকম আশঙ্কাই থাকে। তারা ভয়ে সাহস হারিয়ে ফেলে অমানুষগুলোকে সমাজের প্রতিপওি ভেবে তাদের সেবা করে!পরে সমাজে ওই মানুষগুলোই উজ্জীয়মান থাকে এবং ভালো মানুষগুলো খারাপদের আড়াল থেকে হারিয়ে যায়।
এবার অশ্রুর পরিচয় জেনে নিন।অশ্রুর বাবা আলাউদ্দিন আলম দৈনিক পএিকার সাধারণ সম্পাদক। আর অশ্রু উনার বড় মেয়ে এবং ছোট একটি মেয়ে আছে নাম নুজিফা।অশ্রুরা ঢাকার মোহাম্মদপুরেই নিজেদের কেনা একটি ফ্ল্যাটে থাকে।কিছুদিন আগে অরুন অশ্রুদের ভার্সিটির একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিল আর অশ্রু সেদিনই নিজচোখে অরুনকে দেখতে পায়।অরুনকে দেখে সে খানিক টুকু হতভম্ব হয়।মিডিয়া জগৎ থেকে অরুনকে আরো অন্যরকম লাগছে।কি সুন্দর গাল,কি সুন্দর চুল,কি সুন্দর সুঠাম ফিগার! জাস্ট ক্রাশ খাওয়ার মতো।মেয়েরা অরুনের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে ভুল করেনা আসলেই অরুন সুদর্শন একজন পুরুষ!এসব ভাবনার মাঝেই অশ্রু অরুনকে নিজের মনে জায়গা দিয়ে ফেলে।সে ভেবেই ফেলে যে অরুনকে সে সত্যি সত্যি প্রপোজ করবে তাই আজ সরাসরিই অরুনের বাসায় এসে অরুনকে প্রপোজ করে বসে।অরুনকে এ-ও বলে অরুন যা চায় সে অরুনকে তাই দিবে!নিজের দেহ?সব সব দিতে পারবে সে। অশ্রুর এমন আগ্রহ দেখে অরুন অশ্রুর পা থেকে মাথা অব্দি তাকিয়ে চোখগুলো ছানাবড়া করে ফেলে।মেয়েটা ত আসলেই অনেক সুন্দর!এরকম মেয়েকে টাকা দিয়ে হলেও একরাত কাটানো মন্দ নয়!অরুন নিজচোখের টাল সামলে মেনে নেয় অশ্রুর কথা।তবে অরুনের হৃদয়কোণে হট্রহাসি চাপানো।সে অন্য মেয়েদের মতো অশ্রুকেও ইউজ করবে!

–——জ্বী ম্যাম,এবার আপনি আসতে পারেন।
দারোয়ানের কথার শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে অশ্রুর।অশ্রু চমকে সামনে তাকায়।অরুন যে কখন তার সামনে থেকে চলে গিয়েছে তা তার ভাবনায়ই ছিলনা। অশ্রু স্বাভাবিক হয়ে বলে,
———জ্বী,এইতো চলে যাচ্ছি!
বলেই অশ্রু পেছন ঘুরে। আর হাসিমুখ নিয়ে বেরিয়ে যায়।অশ্রু মেইন গেইটের কাছে যেতেই অরুন উপরের তালার বারান্দা থেকে অশ্রুকে দেখতে পায়।অরুন এতক্ষণ উপরের বারান্দায় দাড়িয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছিল।অশ্রুকে দেখামাত্রই সেই ঠোঁটের কোণে একটা তাচ্ছিল্য হাসি টানে।
অশ্রু গেইট খুলে বাইরে এসে রিক্সার জন্যে পথের কিণারায় দাঁড়ায়। কোনো এক মেয়ে অশ্রুকে পোদ্দার বাড়ির গেইট থেকে বেরুতে দেখে জোরে চিৎকার করে শব্দ তুলে,
———এই মেয়ে শুনো?
অশ্রু মেয়েটির দিকে হালচোখে তাকায়।মেয়েটির পড়নে একটি টপস,জিন্স।আর হালকা কুঁকড়ানো চুলগুলো পেছনে ছাড়া।মেয়েটি অশ্রুর কাছে এসেই বলে,
———অরুনের কাছে প্রেমের নিবেদন নিয়ে গেলে নাকি?
বলেই মেয়েটি মুখ চেপে হাসতে থাকে।তা দেখে অশ্রু ভ্রু কুঁচকায়।মেয়েটি হাই ছেড়ে বলে,
———শালা একটা খারাপ!ও আমার লাইফটাকে হেইল করে দিয়েছে।আমার জীবনটাকে তছনছ করে…..
কথা শেষ না করেই মেয়েটি কেঁদে দেয়।অশ্রু ফকফক চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে।পরক্ষণে মেয়েটি চোখের পানি মুছে অশ্রুর কাঁধে হাত রেখে বলে,
———বোন হিসেবে বললাম,ওই কুলাঙ্গারের কাছে যেও না।ও রুমডেট অফার করে মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।ওরা টাকার গৌরবে দেখিয়ে পুলিশকে থাঁবা দিয়ে রাখে।ভুলে যাই আমরা প্রতিবাদ করতে।পারি না আমার বোনদের মান-ইজ্জত বাঁচাতে।
মেয়েটি কথা বলার মাঝেই অশ্রু একটা রিক্সা থামায়।আর টপকে অশ্রু রিক্সাতে উঠে পড়ে।মেয়েটি অশ্রুর কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না পেয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
রিক্সা ছেড়ে দেয়।অশ্রু মেয়েটিকে ক্রস করে চলে যায় দূরে।অশ্রু বাসায় ফিরে ব্যাগটা সোফার উপর রেখেই নুজিফাকে ডাকে
পর্ব-০২

নুজিফা তখন নিজরুমে ড্রয়িং করছিল।অশ্রু নুজিফার সাড়াশব্দ না পেয়ে চটাত পায়ে হেটে নুজিফার রুমের দরজা ঠাস করে খুলে ফেলে।নুজিফার টনক নড়তেই সে ড্রয়িং থেকে চোখ সরিয়ে অশ্রুর দিকে তাকায়।অশ্রুকে অস্থিরতার মধ্যে দেখে বলে,
———আপু,হঠাৎ এত্ত ব্যস্ত মনে হচ্ছে কোনো খবর আছে নাকি?
অশ্রু দম ছেড়ে মোটা গলায় বলে,
———মা কইরে অশ্রু?
———মাকে ত আমি কিছুক্ষণ আগে কিচেনে দেখলাম।গিয়ে দেখে হয়তো সেখানে হবে।
———তোর মাথা! মা সেখানে নেই!
———তাহলে অন্যরুমে আছেন।
———তাও নেই।সব জায়গায় খুঁজেছি।
———উফস আপু,তাহলে ছাদে গিয়ে দেখো সেখানেই হবেন।আমাকে এই মুহূর্তে ডিস্টার্ব করো নাতো প্লিজজ!
বলেই নুজিফা আবার ড্রয়িং করতে থাকে।নুজিফার এমন উদাস উদাস কথায় অশ্রু রাগ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।অশ্রু রুম থেকে চলে যাওয়ার পর নুজিফা মাথাতুলে সামনে তাকায়,আর মিটিমিটি হাসে।মাথা হেলিয়ে নিজমনে বলে,
———পাগলী আপু আমার।

দুপুরে আলাউদ্দিন তার দু’মেয়েকে সাথে নিয়ে লাঞ্চ করতে বসেন।অশ্রু খাবারের দলা মুখে তুলতে তুলতে আলাউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
———বাবা আগামীকাল আমি রুমকির বাসায় যাচ্ছি।ওর কাল ব্রার্থডে।রাত নাও আসতে পারি।মা যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন এখন শুধু তোমার সম্মতির অপেক্ষায় আছি।নাহ মা?
অশ্রুর মা পারুল বেগম হাল চোখে অশ্রুর দিকে তাঁকিয়ে মাথা নাড়েন।তিনি অশ্রুর হয়ে আলাউদ্দিনকে থমথম গলায় বলেন,
———বললাম কি অশ্রুর তো পরিক্ষা সেই কবে শেষ হলো।তোমার ব্যস্ততার কারণে মেয়েটাতো কোথাও বেড়াতে অথবা ঘুরতে যেতে পারে নি।তুমিতো আর একা মেয়েকে কোথাও ছাড়ো না। এই সিজনে মেয়েটার তো আর কোথাও যাওয়া হলো না।তাই ভাবলাম শেষমেশ কাল রুমকির ব্রার্থডে উপলক্ষে একটু ওদের বাসায় ঘুরে আসুক।এতে রুমকিও অনেক খুশি হবে এবং মেয়েটার মনও রিফ্রেশ হবে।রুমের চারদেয়ালে এভাবে পড়ে থাকলে ত দম বন্ধ হয়ে আসবে।
———চারদেয়ালে বদ্ধ থাকলে তাহলে আজ সকালে মেহেরুনের সাথে দেখা করতে কে সম্মতি দিয়েছে?
আলাউদ্দিন ভাতের নালা কচলানো অবস্থায় পারুল বেগমকে পাল্টা জবাব ছুঁড়ে দেন।পারুল বেগম কপালের ভাঁজে কুঁচকে এনে অশ্রুর চোখের দিকে তাকান।অশ্রু তার মাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলে,মা তুমি অস্থির হয়ো না,শান্ত থাকো।বাবাকে আমি রাজি করাচ্ছি।তারপর অশ্রু তার বাবার দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে বলে,
———বাবা আজ সকালে বাইরে যেতে তুমিই অনুমতি দিয়েছ।তারজন্য ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস।কিন্তু এবার কেসটা সম্পূর্ন আলাদা।আমার একমাএ বেস্ট ফ্রেন্ড রুমকির কাল ব্রার্থডে যদি কাল তার ব্রার্থডে তে উপস্থিত না হতে পারি তাহলে ও কি ভাববে আমায়!বলবে কি এমন বান্ধবী যে আমার ব্রার্থডে তে আসার একটু সময় পায়নি।এরকম বান্ধবী রাস্তায় ফেলে দেওয়া ভালো।আমি ওর এধরনের তিঁতা কথা সহ্য করবো কিভাবে,বলো?তাছাড়া আমিতো তোমার মিষ্টি একটা মেয়ে।
আলাউদ্দিন অশ্রুর কথা শুনে হেসে দেন।হাসার মাঝেই কাশি চলে আসে উনার।পারুল বেগম তাড়াতাড়ি গ্লাসের পানি এগিয়ে দেন।আলাউদ্দিন সম্পূর্ণ পানিটা শেষ করে টেবিলের উপর রাখেন।অশ্রুর দিকে তাকিয়ে স্মিত মুখে বলেন,
———বেস্ট ফ্রেন্ডের বাসায় যাওয়ার জন্যে এত আকুতি মিনতি করা লাগে নাকি?আরেহ আমিতো তোকে কখনো কোথাও যেতে নিষেধ করেছি,বল?
———নাহ ইয়ে মানে বাবা!.
———হয়েছে রাখ ন্যাঁকা!যাস।একরাত কেন ইচ্ছে হলে অনেকদিন থাকিস।।
অশ্রু খুশির তূরী বাজিয়ে জোরে লাফিয়ে উঠে।আর আলাউদ্দিন কাছে এসেই চুমু দিয়ে বলে,
———থ্যাংকু,থ্যাংকু বাবা।তুমি পৃথিবীতে আমার বেস্ট বাবা।
মেয়ের খুশি দেখে সাথে সাথে পারুল বেগমও হাসেন।তা দেখে নুজিফা জ্বলে পুড়ে ছাই!গোমড়ামুখে বলে,
———তুমি বাবা একদম ভালো না।
আলাউদ্দিন ভ্রু কুঁচকে বলেন,
———কেন রে?
———এইযে আপু কোথাও যেতে চাইলে প্রথমে কড়াকড়ি নাঁখোশ করলেও পরে ফ্যালফ্যালিয়ে রাজি হয়ে যাও।আর আমি সারাক্ষণ তোমার সামনে মাথা আঁছালেও রাজি হও না।
আলাউদ্দিন নুজিফার কথায় হেসে উঠেন।হাই তোলে বলেন,
———তুইও অশ্রুর মতন বড় হ।
———হুম বাবা ঠিক বলছে।
———লাগবে না বড় হওয়া!
নুজিফা অভিমানী মুখ নিয়ে আবার খাবারে মনোযোগ দেয়।
এদিক দিয়ে অশ্রু ভীষণ খুশি তার মা এবং বাবাকে ভুলবাল বলে রাজি করাতে পেরে।তাহলে সে কালরাত সত্যি সত্যি অরুনের বোস্টিং হাউজে যাচ্ছে? ইয়াপ! ভাবতেই অশ্রুর সারা শরীর শিরশির করে উঠে ।তবে খানিক টুকু ভয়ভয়ও কাজ করছে অশ্রুর মনে।যাইহোক বাকিটা আল্লাহর উপর ভরসা। এ ভেবে আবার মুখে একটা স্লিপিং হাসি এঁটে অশ্রু।

পরদিন সন্ধে অশ্রু নিজেকে পরিপাটি করাতে অধীর ব্যস্ত হয়ে পড়ে।নুজিফা কিছুক্ষণ পরপর অশ্রুর জন্যে এই রঙ্গের ড্রেস ওই রঙ্গের ড্রেস চোজ করতে আসে।
———আপু?প্লিজজ এই গাউন ড্রেসটা পড়।এতে তোমায় বেশ লাগবে!তাছাড়া ব্রার্থডে এরেন্জে এধরনের ড্রেস সেই মানায়।।
———উফস,নুজিফা আমি কতবার বলব আমি গাউন পড়বো না।জাস্ট থ্রী-পিস,অনলি থ্রী-পিস।তাছাড়া থ্রী-পিস ছাড়াতো আমি ভাবতেই পারি না।তা তুই জানিস!
———হয়েছে লাগবে না পড়া। তুমি তোমার খেতমার্কা চোজ নিয়েই থাকো!
অশ্রু খিলখিল হেসে দেয়।হাসি থামিয়ে বলে,
———নেক্সট কোনো এরেন্জে তোর চোজিং ড্রেস পড়বো।আজকে আপুর গাউন পড়তে একদম ইচ্ছে হয় না। ।প্লিজজ পাগলী বোন আমার বুঝার চেষ্টা কর একটু!
নুজিফা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।অশ্রু খুশি হয়ে নুজিফার গালে হাত বুলায়।
তবে অশ্রু ওতটা গর্জিয়াস সাজ দেয়নি।জাস্ট কপালে একটি কালো টিপ,ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপিস্টিক আর চোখে হালকা কাজল এবং পড়নে কাতান থ্রী-পিস।
সিম্পল সাজে ব্যাগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয় অশ্রু।পারুল বেগম গেস্ট রুমে বসে বসে টিভিতে কুরআন পাঠ দেখছেন।অশ্রু মায়ের কাছে গিয়েই বলে,
———মা,বের হচ্ছি।
পারুল বেগম মেয়ের দিকে থমথমে মুখে তাকিয়ে বলেন,
———এত বড় অনুষ্ঠানে সাজটা একটু কম হয়ে গেল না?গ্রিফট কি এখন গিয়েই কিনবি?
———হুমম মা।শ্যামলী মল থেকে কিনে নিব।
———আচ্ছা,কিনে নিস।আর শোন তোর বাবা বলেছেন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তোর বাবাকে একবার কল করে জানিয়ে দিতে।
———আচ্ছা মা আমি রিক্সায় উঠেই বাবাকে কল করে জানিয়ে দিব যে আমি রুমকির বাসায় রওনা করছি।
———আচ্ছা,সাবধানে যাস।আল্লাহ হাফেজ।
———খোদা হাফেজ,মা!

অশ্রু বাসা থেকে বের হয়ে একটা সি.এন.জি নেয়।সি.এন.জি তে ঢুকে তারপর বাবাকে কল করে জানিয়ে দেয়।চারদিকটা আস্তে আস্তে গাঢ় অন্ধকারে রূপ নিতে থাকে।অশ্রু মুখে কিঞ্চিৎ চিন্তা নিয়ে ঠোঁটের কোণা দাঁত দিয়ে উল্টে রাখে।মনে মনে ভাবে, অরুনতো বলল রাত বারোটার আগে পৌঁছাতে কিন্তু এখনতো সন্ধে ছ’টা বাজে।এত তাড়াতাড়ি তার বাসায় যাওয়াটাও বেমানান।আরেকটু লেট হয়ে বেরুলে ভালো হতো না?নাহ নাহ তা তো হয়না।আমিতো কাল বাবা এবং মাকে সন্ধে বের হবার কথা বলেছি। য়ুমম তাহলে এখন কি করা যায়? ভাবতে ভাবতে টপকে মাথায় আসে বোস্টিং হাউজের পাশের কোনো রেস্টুরেন্টে বসে সময়টা পার করবে।
।।।এরমাঝে সি.এন.জি ড্রাইভার বলে উঠে,
———আপা কোথায় নামাবো আপনাকে?
———জ্বী,বোস্টিং হাউজের পাশে চকোলেট একটা রেস্টুরেন্ট আছে না?
———হ্যাঁ।
———ওখানে নামবো!
———বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবেন বুঝি আপামণি?
ড্রাইভারের কথায় অশ্রু হালকা ইতস্ততা বোধ করে।মন চায় এক কষে নাক ফুলিয়ে দিতে।এরাও না মাঝে মাঝে উদ্ভট কথাবার্তা বলে!সাহস তো কম নয় এদের!ড্রাইভার আছে ড্রাইভারের মতো থাকবে! আজাইরা!
ড্রাইভার লুকিং গ্লাসে চোখবুলিয়ে অশ্রুর দিকে তাকায়।ভ্রু নাঁচিয়ে আবার বলে,
———কি আপা কিছু বলছে না যে?
অশ্রু এবার রাগ হয়ে ড্রাইভারকে বলে উঠে,
———গাড়ি থামান!গাড়ি থামান!
———ক-ক-কিন্তু কেন আপা?
———আমি বলছি গাড়ি থামান!
সি.এন.জি ড্রাইভার থতমত খেয়ে সি.এন.জি থামায়।অশ্রু হনহন করে নেমে পড়ে।আর বলে,
———আপনার ভাড়া কত আসছে?
———সি.এন.জি থামালেন কেন কারণ তো বললেন না!
———আমি বলছি ভাড়া কত আসছে!
———প-প-পঞ্চাশ টাকা!
অশ্রু টগবগিয়ে ব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে দিয়ে দেয়।আর পেছন ঘুরে নিজমনে বিড়বিড় বকতে থাকে ড্রাইভারকে।দরকার হলে অন্য সি.এন.জি দিয়ে যাবে তবুও ওই খাটাস ব্যাটার সি.এন.জি দিয়ে এক মুহূর্তের জন্যেও নয়!!
ধপাস করে সামনে একটা দমকা হাওয়া বয়ে যায়। অশ্রু মাথাতুলে তাকিয়ে দেখে তার একদম সামনে একটি ব্লাক গাড়ি দাড়িয়ে আছে। ।হঠাৎ গাড়িটির আয়না ভেদ হয়ে কালো সানগ্লাস পরিহিত একটি ছেলে মাথা বের করে।অশ্রুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
———তাহলে আজ বারোটায় দেখা হচ্ছে আমাদের?কুইকলি চলে এসো।আমি এখন একটা টকশো তে যাচ্ছি!নাহলে তোমায় আমার সাথে করে বাসায় নিয়ে যেতাম।সাবধানে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যেওও আমার হাউজে।বায়,টেক কেয়ার।
মুহূর্তে গাড়ির গ্লাস অভেদ্য হয়ে পশ্চিম দিকে সোঁ শব্দ করে চলে যায়।অশ্রু সেদিকে তাকিয়ে থাকে।তার মাঝে অপ্রস্তুতবোধ চলে আসে।সে ভাবতেই পারে নি এখন যে অরুনের সাথে তার দেখা হয়ে যাবে!ইসসসস,আপসেট!!

চলবে.….
(অনেকটা প্রস্তুত নিয়ে অশ্রু গিয়েছে।দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয়!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here