একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-৩৮
রোকসানা আক্তার
দুপুর থেকে সবগুলো টেলিভিশনে শুধু একই নিউজ হচ্ছে তা হলো কাল বিকেলের মধ্যে অরুন জেলে সারেন্ডার্ড করবে।এই খবরে যতটা-না খুশি কিছু নাঁক ছিটকানো পাবলিক,তারচেয়েও বেশি খুশি পারুল বেগম এবং নুজিফা।এখন তারা টেলিভিশনের সামনে বসে আছে।আলাউদ্দিন বাসায় নেই।অফিসে।বাসায় থাকলে তিনিও এতে ভাগ বসাতেন।
পারুল বেগম এবং নুজিফা কিছুক্ষণ পরপর কিলবিল করে হাসছে। তাদের হাসাটা বেমানান না।আজম্ম শুত্রুর পতন হবে এরচেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে!
পাশে অশ্রুও বসে।তার মুখটা গম্ভীর এবং থমথমা।মা এবং বোনের সাথে একফালি কথা বলবে সে ইচ্ছা টুকুও হচ্ছে না। বুক চিরে ঝাঁকে ঝাঁকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে তার।এখানে বেশিক্ষণ বসে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে।তাই দাড়িয়ে পড়ে।স্থান ত্যাগ করে আসতেই পারুল বেগম উচ্ছাস গলায় বলে উঠেন,
“আরেহ যাস না,যাস না।আরো আপডেট নিউজ আসবে।সবগুলা নিউজ দেখে তারপর রুমে যাস।”
“মাথা ঘুরচ্ছে মা।পরে আসবো।”
বলেই না দাড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসে।দরজা লাগায়।
কান্না পাচ্ছে।ভীষণ কান্না পাচ্ছে।কান্নার প্রখর ব্যাখ্যাতেও কান্না করার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না।হুড়মুড়িয়ে বিছানার কাছে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নেয়।মেসেজ চেইক করে।অরুন আর কোনো মেসেজ দেয়নি।
তাহলে ওই মেসেজটিতে অরুন রাগ করে বসে নিতো?খুবই রাগ করে আছে আমার উপর! আচ্ছা কি হয় একটা মানুষকে একটুখানি বিশ্বাস করে দেখা করা।ক্ষতিতো আর নয়।স্বয়ং আল্লাহই তো বলেছেন,কাউকে সাঁঝা দেওয়ার আগে তার শেষ কথা শুনতে।”
টগবগিয়ে যায় অশ্রু।মুহূর্তেই মত বদলে ফেলে।আজ যে করেই হোক অরুনের সাথে দেখা করবে।পরে আবার কবে দেখা হয় অথবা না হয় তার ঠিক নেই।অরুনকে কল দেয়।দু’তিনবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে রিসিভ হয়।খুব ক্ষীণ কন্ঠে ভেসে আসে,
“হ্যালো!”
অশ্রু নিজেকে স্বাভাবিক করে।স্পষ্ট কন্ঠে বলল,
“ভালো আছেন?”
অরুন ঠোঁট বেঁকে হেসে দেয়।নাজেহাল বসর হয়ে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ ভালোই তো।তুমি কেমন আছো?”
“আছি আর কি।”
“এইভাবে উত্তর করে না।বলবে আলহামদুলিল্লাহ!”
“আমিতো ভুল বলে ফেললাম
তাহলে আপনি ভুল বললেন কেন?”
“ওইযে মুখ ফসকে চলে এসছে।”
“আমারও।”
অরুন আবারও ফিঁকে হাসে।অশ্রু বলল,
“আচ্ছা আপনি আজ সন্ধে ফ্রী আছেন?”
“ফ্রী তো অলটাইম।তা কোনো দরকার?”
“হু।”
“কী দরকার?”
“আপনার সাথে দেখা করব।”
অরুন চমকে যায়।কি মনে করে হঠাৎ দেখা করার কথা বলল তা ভেবে পেলনা।তখন হয়তো আবরারের হুটহাট ওমন মেসেজ করার অর্থ বুঝতে পারেনি।তাই ওরকমটি বলেছে।এখন হয়তো বিষয়টি মোটামুটি বুঝতে পেরেছে।তাছাড়া এখন তার সেইফটিতো খুবই প্রয়োজন।আমি কাল জেলে গেলে ওরতো আরো বিপদ হবে!ভেবেই অরুন বলল,
“হ্যা দেখা করতে পারবো।কোথায় দেখা করবে বলো?”
“শহীদ বুদ্ধিজীবীর সামনে আসতে পারবেন?সন্ধেয় ওখানে মানুষের সমাগম কম থাকে।তাছাড়া,আমার বাসা থেকে বেরুতেও রিস্কি হবে না।ওটা আমার বাসা থেকে খুবই কাছে।”
“বুঝলাম।সমস্যা নেই তোমার যেখানে সুবিধা।
বলেই অরুন হাতঘড়ির দিকে তাকায়।তারপর আবার বলল,
এখনতো দুটা বাঁজে। আমি আর বিশ মিনিট পরই উত্তরা থেকে রওনা করছি।”
“আচ্ছা।”
অশ্রুর ফোন রাখার পর অরুন আবরারের নাম্বারে ট্রাই করতে থাকে।বাসা থেকে কয়েকদিন যাবৎ বের হওয়া হয়নি।এ ক’দিনে বাইরের পরিবেশটাকেও দেখা হয়নি।তাই বাইরের যাওয়ার অনুভূতিটা ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা মনে হচ্ছে।আবরার সাথে গেলে হয়তো তা কেটে যাবে।তাছাড়া অশ্রুর সাথে দেখা হবে শুনলে খুশিতে চমক খাবে সে।
চার পাঁচবার কল দেওয়ার পরও ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি।অরুনের রাগ উঠে যায়।দাঁত কটমটে আরেকটা ভাবনার দলা চেয়ে যায়।
ব্যাটাকে অসময় একদম গা ঘেঁষে পাওয়া যায় আর সময়েতে ছায়াটুকুও দেখা যায় না!
ভেবেই মোবাইলটা বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে।তারপর মোটামুটি রেডি হয়ে অশ্রুকে নক করে জানান দেয় বাসা থেকে বের হচ্ছে।
অশ্রু মেসেজটি পড়ে ঠোঁটে হাসি ফোঁটায়। অরুন সিড়ি বেয়ে নিচে নামে।কাউকে দেখতে পায়নি।পুরো ডাইনিং এবং বসার রুম খালি।কাজের লোকগুলোও এই মুহূর্তে ধারেকাছে নাই।যাইহোক,বাসা থেকে বেরুনোর এ একটা সুবিধা।নাহলে যাওয়ার পথে পাকোড়াও ভেঁজতে পারতো
তারপরও তোহিয়া রাণীকে কিছু একটা অজুহাত দেখিয়ে বেরিয়ে পড়বে।নাহলে পরে বিনেকারণে টেনশনে পড়ে পুরো ঢাকায় মানুষ লাগিয়ে দেবে।
অরুন টিপটিপ পায়ে তোহিয়া রাণীর রুমের কাছে আসে।গলায় খেঁকারি টেনে স্পষ্ট গলায় তোহিয়া রাণীকে ডাকতে থাকে।
“খালামণি?খালামণি?”
তোহিয়া রাণী বাইরে এসে দেখেন অরুন দাড়িয়ে।হতচকিত হয়ে বলেন,
“কোনো প্রয়োজন,অরুন?”
“হু খালামণি।”
“বল।”
অরুন লক্ষ করলো খালামণির কথা বলার ধরণ একদম পাল্টে গেছে।আগে যেমন কথার প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে আব্বু বলে ডাকতো আজ ডাকছে না।নাম ধরে তখনই ডাকেন যখন খুব রাগ এবং অভিমানে থাকেন।জেলে যাওয়ার সারেন্ডার্ড করাতে রাগটা ওখানেই চাপলো। তা অরুন বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে।নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলল,
“খালামণি,আসলে ডাক্তার ইউসুফ আঙ্কেল আমায় কল করে বললেন উনার চেম্বারে যেতে।আমার শরীরের প্রেশার নাকি খুব জোর বেড়ে গিয়েছে।যেটা আমিও মোটামুটি বুঝতে পারছি।ইদানীং শরীরটা দুর্বল,আর দিকে মাথা ঘুরচ্ছে।তাই ভাবলাম কাল থেকেতো নিজের মর্জিতে আর ডাক্তার দেখানো হবে না আজই গুয়ে দেখিয়ে আসি।ইউসুফ আঙ্কেলও তাই বললেন।বাবা বাসায় নেই নাহলে বাবাকেই বলে যেতাম তাছাড়া,প্রবলেম হবে না আমি আমার গাড়ি নিয়েই বের হব।”
“সব বুঝলাম।তবে আমার মতে তোর এভাবে বেরুনো টা রিস্কি এখন। বাইরে গেলে সবাই তোকে দেখে ফেলবে।তারচে ইউসুফ ভাইকে কল করে বাসায় নিয়ে আসলেই হবে।”
“নাহ,খালামণি প্লিজ।কতটা দিন বদ্ধ ঘরে ছিলাম।কাল থেকেতো আরো থাকতে হবে।বাইরে গিয়ে রুদ্ধশ্বাসটাকে খোলাসা করে আসি।তাছাড়া,চেম্বারে এখন লোকজন কম।গেলেও লোকচক্ষু এড়াতে পারবো।”
তোহিয়া রাণী অরুনের নরম কথায় গলেমলে লাড্ডু।তারপর অরুনের মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছুটি বলতে পারেনি।মায়া কাজ করেছিল ভীষণ।তাই নিশ্চুপ মুখে অন্যদিক তাকিয়ে থাকেন।
“তাহলে খালামণি গেলাম।”
বলেই দাড়িয়ে থাকে নি।পা ফেলে চলে আসে।
অশ্রু ড্রেসিং আয়নার সামনে বসে বসে নিজেকে পরিপাটি করছে।মনের বাঁধা এড়িয়ে আজ নিজেকে অন্যভাবে সাজাচ্ছে । ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, চোখে কাজল,ভ্রু তে মাশকারা, চুলগুলো কোমর অব্দি ছড়িয়ে দেওয়া,গায়ে সবুজ কালার একটা কাতান থ্রী-পিস পড়া সবমিলিয়ে জাস্ট মনোমুগ্ধকর ।কপালে লাল টিপ দিতে ইচ্ছে হয়েছিল।পরক্ষণে মায়ের কথা ভেবেই ইচ্ছেটা গুটিয়ে নেয় অশ্রু।বেশি সাজুগুজু চোখে পড়লে মা অন্যকিছু মনে করতে পারে।পরে আশাতে গুড়বালি বসবে।মাথা ঝাঁকি দিয়ে অশ্রু হ্যান্ড ব্যাগ হাত নেয়। এরমধ্যে মোবাইল ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হয়।
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-৩৯(পাওনা পর্ব)
রোকসানা আক্তার
অশ্রু হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচলো।পারুল বেগমকে ভুলিয়ে বালিয়ে রাজি করাতে পেরে চোখ-মুখে চকচকে আভা টা এখনো ফুটন্ত।অশ্রু টোলারবাগ গেট ক্রস করে সোঁজা মেইন রোডের কিণারে এসে দাঁড়ালো।আজ হরতাল।তাই রাস্তাঘাটে লোকজনের উপস্থিতি কমই বলা চলে। তাছাড়া গাড়িঘোড়ারও তেমন একটা দেখা মিলছে না। টোলারবাগ এক নাম্বার গেট থেকে বুদ্ধিজীবীতে হেঁটে হেঁটে যেতে মিনিট ত্রিশেকের মতো লাগে।কাজেই রিক্সা যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর মোড থেকে একখানা রিক্সার দেখা মিলে।অশ্রু অধীরতা হয়ে মনে মনে একটা নাচুনি দেয়।রিক্সায় কাছে আসলেই অশ্রু রিক্সাতে উঠে যায়।এরইমধ্যে অরুনের কল আসে।অশ্রু কল রিসিভ করেই বলল,
“এইতো আমি রিক্সায়।আপনি কোথায় এখন?”
“চলো এসছি।”
“এত তাড়াতাড়ি?”
“তাড়াতাড়ি কোথায়?সাড়ে চারটা বেজে আসলো।”
অশ্রু হেসে দেয়।বলল,
“পাঁচটায় সন্ধে নামে।এখন বিকেল।”
“একদম বিকেল নয়।শেষ বিকেল।যাইহোক,এত কথা ফোনে বললে পরে আর বলার কিছু থাকবে না।তুমি পৌঁছে কল দিও।”
“আচ্ছা।”হেসে দিয়ে।
অশ্রু কল কেটে নিচের দিকে দৃষ্টি এঁটে।মনে মনে প্রচন্ড লজ্জাবোধ হচ্ছে।আজ সরাসরি অরুনের মুখোমুখি হবে।কিভাবে যে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সামনে গিয়ে দাড়াবে ভাবতেই বুকের ভেতরটা কচরমচর দিয়ে উঠল তার।তবে যাইহোক,আজ কিছুতে নড়বড় হবে না।একদম সুস্পষ্ট,সাবলীল, স্বাভাবিকতায় নিজেকে বজায় রাখার চেষ্টা করবে।রিক্সা বুদ্ধিজীবীর সামনে এসে থামে।অশ্রু রিকসাওয়ালাকে বিশ টাকার নোট দিয়ে এদিক ওদিকে তাকায়।চারপাশে কোনো ব্লাক কার দেখতে পায়নি।গেটের সামনে এসে হ্যান্ড ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে।অরুনকে কল দেয়।কলিং হওয়ার সাথে সাথেই অরুন রিসিভ হয়।
“জ্বী আমি গেটের সামনে দাড়িয়ে।আপনি কোথায় আপনাকে তো দেখতে পাচ্ছি না।”
“এসে পড়েছ তুমি?”
“জ্বী।”
“ওয়েট করো আমি গাড়িটা ব্রেক করে আসতেছি।”
অরুন গাড়ি লিফ্ট সাইডে মুভ করার সময়ই সামান্য দূর থেকেই সবুজ কালার ড্রেস পরিহিতা এক মেয়েকে দেখতে পায়।গেটের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে। তার মুখখানা খুব চিমচাম।চোখজোড়া ডাগর ডাগর।চুলগুলো সরুলতা।তবে মুখের ভাব অস্থিরতায় নিমজ্জে।মুঠে রাখা ফোনটা দিকে দিকে নাড়াচ্ছে আর চারপাশে পিটপিট চোখ তাকাচ্ছে।দেখেই বুঝা যায় কারো জন্যে অপেক্ষা করছে।দৃশ্যটি দেখার পর অরুন ঠোঁট বেঁকে একটা হাসি দিয়ে উঠে।সেই যে অশ্রু তা অরুনের বুঝতে সময় লাগে নি।তাড়াতাড়ি গাড়ি রান করে সামনে দাড় করায়।গাড়ি থেকে বেরিয়ে অশ্রুর সামনে গিয়ে দাড়ায়।অশ্রু থতমত খেয়ে বুকে থুতু দিতে থাকে।অরুন একঝাঁক হাসি দেয়।অশ্রু পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিতে অরুনের দিকে তাকায়।গায়ে ঘি কালার গেন্জি,পড়নে ব্লাক জিন্স,পায়ে কেটস,হাতে বোল্ড ঘড়ি।চুলগুলো সিল্ক করা।কিছুটা চুল আবার কপালের সামনে ছড়িয়ে।ফর্সা মুখটায় তা বেশ মানিয়েছে।পরপুরুষের দিকে ওমন চোখে তাকিয়ে ভাবতেই অশ্রুর সারা শরীর শিরশির করে উঠে।তাড়াতাড়ি চোখের পলক নিচে নামিয়ে নেয়।অরুন হাসিয়ে চাপিয়ে বলল,
“ভয় পেয়েছ?”
অশ্রু মাথা নেড়ে হ্যাঁ-বোধক উত্তর দেয়।
“অন্যকেউ আসে নি।আমিই তো।
থেমে বসার জায়গা খুঁজতে থাকে।চারকোণা পিলার সিট চোখে পড়তেই অশ্রুকে সেদিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
চলো ওদিকটায় গিয়ে বসি।”
তারপর দুজনে সেখানে গিয়ে বসে। অরুন চারপাশে একটা নজর দিয়ে আবার বলল,
“আজ এখানে এভাবে বসতে হবে ভাবিনি কখনো।তোমার আনইজি লাগছে নিশ্চয়ই?”
অশ্রু অরুনের কথা শুনে কিঞ্চিৎ ভ্রু উঁচায়।পরে স্বাভাবিক করে মুঁচকি হেঁসে দেয়।বলল,
“নাহ নাহ, ইটস ওকে।জায়গাটি আমাদের জন্যে সুবিধের।লোকজন কম।”
“হুম।তা ঠিক।তারপরও কেমন কেমন জানি লাগছে।”
অশ্রু উত্তর দেয়নি।হাসে।তারপর দুজনে কিছু সময় চুপ থাকে।অরুন কিভাবে অথবা কোথা থেকে কথা শুরু করবে ভেবে পায়না।সেইম অশ্রুও।দুজনের মাঝেই অপ্রস্তুত বোধ হচ্ছে।তারপরও অরুন স্বাভাবিক ভঙ্গি বজায় রেখে গলার খাঁকারি টানে।বলল,
“বাসায় কখন ফিরবে?”
“এইতো কিছু সময় পর।”
“অ্যাকজেক্টলি কখন?”
অশ্রু ঘড়িতে টাইম দেখে।এখন চারটা পাঁচচল্লিশ বাজে।গোনা ধরা আর পঞ্চাশ মিনিট থাকা পসিবল।বেশি সময় নিলে বাসায় কেলেংকারী হবে।অশ্রু বলল,
“একঘন্টার মতো।”
“নো প্রবলেম।তো কি অবস্থা তোমার?”
অশ্রু ফিকে হেসে মাথা তুলে।অরুনের দিকে হালচোখে তাকিয়ে বলল,
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ।”
আবার দৃষ্টি নিচু করে আনে।অশ্রুর অবস্থাটা এখন বেসামালই বলা চলে।ঠিকঠাক ভাবে অরুনের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে সংকোচ লাগছে।তারপরও নিজেকে যথেষ্ট সামলে রাখার চেষ্টায়।অরুন বলল,
“ ‘আলহামদুলিল্লাহ’মনে থাকবে সবসময়?”
“হুম।”
“আ-চ্ছা।”
টানা ভাবে বলেই এবার অরুন আসল পয়েন্টে আসে।বলল,
“ভয় পেয়ে আছো অনেক,তাই না?”
অশ্রু খরখর চোখে জিজ্ঞাসূচকে তাকায়।অরুন হেসে বলল,
“বলতে চাইছিলাম বাবার ওই ব্যাপারটা নিয়ে ভয় পাবে না একদম।রাগ উঠলে সবাই ই ভুলবাল বলে।হয়তো গরম মাথায় ওমন কথা বলেছেন।”
অশ্রু এই প্রসঙ্গটি এভয়েড করে অন্য প্রসঙ্গ টানে।বলল,
“আপনি কাল সত্যিই জেলে সারেন্ডার্ড করবেন?”
অরুন ঠোঁট বেঁকে হাসে।এমনভাবে হাসল যেন নিরর্থক কথা শুনেছে।অশ্রু হা চোখে তাকিয়ে থাকে।অরুন হাসি থামায়।সামনের চুলগুলো ফু দিয়ে সরায়।বলল,
“পাপের ফল অবশম্ভাবী।তা আজ অথবা কাল।”
অশ্রু জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।নিঃশ্বাসের আওয়াজ অরুনের কানে গিয়ে পৌঁছায়।অশ্রুর চুপ থাকা দেখে অরুন আবার বলল,
“জীবনে অনেক বড় ভুল করেছি।আমেরিকার সংস্কৃতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে এভাবে আমিও যে ফেঁসে যাবো মাথায়ই ছিল না।”
অশ্রু ছলছল চোখে অরুনের দিকে তাকায়।অশ্রুর চোখ দীঘি ভরা পানি যেন নিমিশে কেউ সেখানে সাঁতারিয়ে ঝর্ণার পানি ছাড়বে।।অরুন তীক্ষ্ণ চোখে সে দু’চোখের আর্তনাদ অনুভব করে। বলল,
“মন খারাপ অশ্রু?”
অশ্রু চুপ থাকে।অশ্রু কিছু একটা বলতে যেয়েও যেন পারছে না।অরুন তা লক্ষ করে।আবার বলল,
“কি বলবে বলো?”
অশ্রু আর টাল সামলাতে পারেনি।ফুঁপিয়ে উঠে একদম। ভেঁজা চোখে জোড় গলায় বলল,
“আই’ম স্যরি!”
“স্যরি কেন?” অবাক হয়ে।
“আমার কারণে আজ আপনাকে জেলে যেতে হচ্ছে।বিশ্বাস করুন আমি জানতামই না স্মৃতির মতো মেয়েরা নিজের স্বার্থে এভাবে মিথ্যা অপবাদ দেবে।তাছাড়া,দোষ আপনার একার ছিল না।দোষ ওই মেয়েগুলোরও আছে যারা স্বইচ্ছে এসে উল্টো কুৎসিত রটনা রটিয়েছে।সেখানে আমি একপাক্ষিকতা চিন্তা করেছি!প্লিজজ আমায় ক্ষমা করে দিন।হাত জোড় করে বলছি!”
“আরেহ তুমি ক্ষমা চাচ্ছ কেন!এই অশ্রু হাত নামাও বলছি,হাত নামাও!”
“আগে বলুন আমার প্রতি আপনার কোনো রাগ নেই তো?”
“হাত না নামালে আমি কিন্তু এখন এখান থেকে চলে যাবো!”
অশ্রু হাত নামিয়ে নেয়।অরুন মানি পকেট থেকে একটি টিস্যু পেপার বের করে অশ্রুর দিকে এগিয়ে দেয়।বলল,
“চোখের পানি মুছ।”
অশ্রু টিস্যু পেপারটি হাতে নিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।অরুন এবার স্বাভাবিক হয়ে বসে।বলল,
“তোমার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই অশ্রু।”
“সত্যি!একফোঁটা?”
“উহু,একফোঁটাও নয়।”
অশ্রু দু’ঠোঁট ছড়িয়ে হেসে দেয়।অরুন বলল,
“আমি জেলে ঠিক ক’দিন,ক’মাস থাকব তার সঠিক হিসেব জানি না।তবে তোমার কাছে আমার একটা রিকুয়েষ্ট! “
“জ্বী,কি রিকুয়েষ্ট?”
“অরুন নামের এই মানুষটিকে ভুলবে নাতো?”
কথাটি শোনে অশ্রুর চোখমুখ ভার হয়ে যায়।কি বলল ইনি এসব!উনাকে আমি ভুলে যাবো?আরেহ ভুলা তো ইম্পসিবল।একদম ইম্পসিবল!ভেবেই অশ্রু মাথা ঝাঁকায়।শান্ত ভঙ্গিতে বলল,
“এসব কি বলছেন আপনি?আমি অতি সহজে মানুষকে ভুলি না।”
“কোন মানুষদের ভুলতে পারো না?”
“যারা আমার খুব প্রিয় এবং যাদের আমার খুব ভালো লাগে!”
অশ্রুর এ কথায় অরুন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।পরক্ষণে কিছু একটা ভেবল অন্যদিকে মাথা মুভ করে হাসতে থাকে।অশ্রু অরুনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মিটিমিটি হাসছে।অরুনের হাসার ভঙ্গিমা ঠিক বুঝতে পারলো না।তারপরও ভাবতে থাকে আসলে সে উত্তরটা কি বলল।পরক্ষণে মনে হতেই মাথায় হাত।ইয়া মাবুদ এ’কথা সে মুখ ফসকে বলে ফেলেছে!ইস বলার আগেতো একটিবারও ভাবলো না। তাড়াতাড়ি চোখবুঁজে জিব কাড়ে।
অতঃপর হাইতাই না পেয়ে চিমসে মুখখানা অন্যদিক ঘুরিয়ে নেয়।
কিছুক্ষণ দুজনার মাঝে নিরবতা বিরাজ করে।এই শুনশান নিরবতার ছেদ ঘটে একটা ফোনকলের আওয়াজে।অরুন কলটি রিসিভ করে।রিসিভ করেই একঠাসা গাল দিতে থাকে আবরারকে।
চলবে…
চলবে….
(নায়ক হিসেবে আপনারা কাকে চাচ্ছেন?বিপুল নাকি অরুন।গঠন মূলক কমেন্ট চাচ্ছি।ধন্যবাদ।)