একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-০৯
রোকসানা আক্তার
“বিয়েটা করবি না মানে?”
“কিভাবে সম্ভব,মা!এত বড় বাড়িতে বউ হবার ইচ্ছে আমার একদম নেই।”
“তুই ই-তো ইমতিয়াজকে আমাদের বাড়ি আসতে বললি!”
“হু বলেছি। কিন্তু আমিতো জানতাম না ইমতিয়াজ ভুট্টো পোদ্দারের বড় ছেলে!”
“তো ভুট্টো পোদ্দারের ছেলে বিধায় সমস্যা কোথায়!এটাতো আরো খুশির খবর যে ভুট্টো পোদ্দারের ছেলে আমাদের বাড়ি তাও আমার মেয়ের জন্যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসছে।”
“তারপরও মা। তাছাড়া পোদ্দার বংশ আমার পছন্দ না !”
“রুমকি বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!তোর মামারা একটুপর আসবে।তোর মামারা কি বলতে চায় তাদের সাথে ডিসিশন নিস, আমার সাথে নয়!”
বলেই রুমকির মা বেরিয়ে যান।ইমতিয়াজ বাসা থেকে বিদেয় নেওয়ার পর থেকে সবটাই যেন রুমকি এবং অশ্রুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।রুমকি জানতোই না ইমতিয়াজ যে ভুট্টো পোদ্দারের ছেলে। আর সেই ইমতিয়াজকপ নিয়ে সে এতদিন কতই না জল্পনা-কল্পনা এঁকেছে।বাঘের ভয় করতে করতে বাঘের গর্তে যে পা পড়ে যাবে ভাবেই নি।রুমকি ছোট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“অশ্রু আজ এটা আমাদের সাথে কি ঘটে গেল!তুই স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিস?”
“উহু।আমারতো মনে হচ্ছে এখনও সবটা স্বপ্নের ঘরে ঘটে যাচ্ছে।”
“অশ্রু অরুন যদি একবার জানতে পারে তখন ব্যাপারটা কোথায় গড়াবে বুঝতে পেরেছিস?তাছাড়া,ইমতিয়াজও যদি শুনে ফেলে আমরাই তার ভাইকে ফাঁসিয়েছে তখন ব্যাপারটা এলাহী কান্ড।অস্তিত্ব থাকবে না আমাদের।”
“তুই প্রাণ সংকোচে আসিস?”
“তা নয়।কিন্তু আমি কিছুতেই ইমতিয়াজকে বিয়ে করতে পারবো না।ইমতিয়াজকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে তবে তাকে বিয়ে করলে সে যে আমায় খুশি রাখতে তার নিশ্চয়তা দিতে পারবো না।তুই তো জানিস তার ভাই অরুনটারও দুষ্ট মুখে মিষ্টি কথা।আর মুখরোচক মানুষগুলোই সহজে সরল মানুষদের ঠকায়।”
দরজায় করঘাতের শব্দ আসে।অশ্রু বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়।রুমকির দু’মামা প্রবেশ করেন।বড় মামা ছলছল চোখে বলেন,
“রুমকি আমরা বেশ খুশি ভুট্রো পোদ্দারের ছেলে তোরজন্যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসছে।”
“মা তুই এই বিয়েতে রাজি নেই কেন?আরেহ বড়লোক ঘরে বিয়ে হওয়া ইতো ভালো।রাজ কপাল নিয়ে থাকবি।বাপের বাড়ি যেটা পাসনি স্বামীর বাড়িতে তার কমতি থাকবে না।মাথায় তুলে রাখবে সবাই।এ বিয়েতে আমাদের দ্বিরুক্তি নেই।বরঞ্চ প্রশংসায় আহ্লাদ।আমরা তোর বিয়েটা নতজানুতে মেনে নিয়েছি।(ছোটমামা)”
রুমকি তার মামাদের কথার উওর না ফ্লোরের দিকেই দৃষ্টিপাত।
রুমকির মা দরজার ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠেন,
“ন্যাঁকা ওর।ওর কথা গাঁয়ে মাখার দরকার নেই।তোরা যা ডিসিশন নিস তাই হবে।”
“রুমকি,তুই কি চাচ্ছিস?”
“মামা আমার পোদ্দার বংশকে পার্সোনালিটি ভালো লাগে না।”
“পোদ্দার বংশ নিয়ে তোর কোনো ধারণা আছে?কি ভেবে কি বলিস তুই?”(বড়মামা)
“ওর সিদ্ধান্তে কিছু যায় আসে না।যা নেওয়ার আমরা নিব।”(ছোটমামা)
কথা শেষ করে রুমকির দু’মামা চলে যান।রুমকি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে এ বিয়েতে তার মামাদের মোটেও কটুক্তি নেই।তার মামারা রাজি মানেই তার মা এক পায়ে খাঁড়া।সে এখন শত চেষ্টার পরও তার মাকে বুঝাতে পারবে না।তার মামাদের ডিসিশন মানেই তার মায়ের ডিসিশন।আর তার মায়ের ডিসিশন মানেই সে।
তা ভাবতেই দু’চোখ বেয়ে দুই ফুটা লোনা পানি বেয়ে পড়ে।তা দেখে অশ্রু নিবৃও মনে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে।কারণ তার বুকটাও এখন ভার হয়ে আছে।দম ফালানোর জো নেই।কেন যে সাডেন সব এলোমেলো হয়ে গেলো অশ্রু এর উওর খুঁজে পায়না।অশ্রু মলীন মুখে রুমকির কাঁধে হাত রাখে।
“বাবা কাল থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ ব্যাক করছেন। “
“হুম,জানি”
“ভাইয়া,তোমারটা তো ঠিক করে ফেললে।তো আমারটা কবে ঠিক করবে, হ্যাঁ?”
“যদি আপত্তি না থাকে তাহলে রুমকির বান্ধবী অশ্রুকে তোরজন্যে দেখতে পারি।”
“কী নাম যেন বললে ?”
“অ—শ্রু!”
টানা গলায় উচ্চারণ করেই অরুন ভাবনাতে পড়ে যায়।এ নামে কাকে যেন চেনে কাকে যেন চেনে।কিছুক্ষণ অব্দি ভাবার পর অরুনের মাথায় ঠোক্কর খায় হ্যাঁ এই অশ্রু নামের কেউ তার শএু!পরক্ষনে অরুন ইমতিয়াজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
“এই অশ্রু মেয়েটা দেখতে কেমন?”
“কুঁচকুঁচে কালো”
অরুন ইমতিয়াজের ব্যাঙ্গ কথার অর্থ বুঝে উঠতে পারেনি।কালো কুঁচকুঁচে মানে আসলেই কালো সে এটা ভেবে নিয়েছে।তারপর মাথা হেলিয়ে নিজমনে তাচ্ছিল্য স্বরে বলে”ওহ,আমার প্রতিপক্ষতো রজনীগন্ধা রমণী।এ নিশ্চয়ই অন্যকোনো অশ্রু হবে।পৃথিবীতে ত অশ্রু নামের মেয়ের অভাব নেইই।
ভাবনার প্রসঙ্গ টেনেই আওয়াস্ত কন্ঠে বলে,
“এ্যাহ ভাই আমারতো কালো বউ চাই না।চাই শুধুই সুন্দরী যেমন আমেরিকান মেয়ে।তোমার বিয়েটা তাড়াতাড়ি সাড়ো তারপর নাহয় আমেরিকা গিয়ে আমার বউকে খুঁজে নিব।”
বলেই অরুন উঠে যায়।ইমতিয়াজ সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ভ্রু বেঁকে।দুষ্টমির ছলে বিড়বিড়িয়ে বলে,
“ক’দিন পর বাংলাদেশী মেয়েদের কাছেই পাত্তা পাবি না আবার আসছিস আমেরিকান শিক নিয়ে।”
।
অরুন নিচে আসার পর সোফায় বসা একটি মেয়েকে দেখতে পায়।মেয়েটিকে চেনতে অরুনের সময় বাঁধে নি।মেয়েটির নাম স্মৃতি।সে দু’মাস আগে অরুনের সাথে রুমডেট করেছিল।এখানে তার উপস্থিতি দেখে অরুন সামান্য বিগড়ে যায়।অরুন স্বাভাবিকভাবে স্মৃতির সামনে এসে দাঁড়ায়। সে অরুনকে দেখামাএই দাড়িয়ে যায়।আর পিটপিট চোখে মাথা উঁচিয়ে কিছু বলতে সংকোচ ফিল করে।অরুন তা বুঝতে পেরে বলে,
“কি চাই?”
মেয়েটি চোখদুটো ফকফকা করে কাঁপা স্বরে বলে উঠে,
“আ—পনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
অরুন ভ্রু উঁচিয়ে স্মৃতির দিকে কিছু সময় আলোকপাত করে।দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে,
“আবার রুমডেট চাই।সেটাইতো? এ্যা-না তোমাদের মতো মেয়েদের আর কত্ত শারিরীক তৃপ্তি চাই,হু?”
অরুনের কথায় মেয়েটির চোখ পানিতে ভিঁজে উঠে।তারপর কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে,
“আমি সেরকম উদ্দেশ্য নিয়ে আসি নি।”
“তাহলে?”
“আই’ম প্রেগন্যান্ট!”
“তো আমি কি করবো!”
“আমার পেটের অনাগত বাচ্চার বাবা আপনি!”
“হোয়াট!”খুব উঁচিয়ে বলার পর অরুন চারপাশ তাঁকায়।কেউ আবার একথা শুনতে পায়নি তো সেই ভেবে !তারপর স্মৃতিকে ইশারা করে তার পেছন পেছন আসতে।স্মৃতি অরুনকে সম্মতি দিয়ে তার পেছন পেছন হাঁটতে থাকে।অরুন স্মৃতিকে বাড়ির পেছনের সাইডটায় নিয়ে আসে।চাপা রাগটাকে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি রূপান্তর করে স্মৃতির ওষ্ঠাধরে চেপে ধরে। তাকে দেয়ালের সাথে তার পিঠ ঠেঁকায়।দাঁত চিবিয়ে বলে,
“তোকে না বলেছি রুমডেটের সময় প্রটেক্ট নিয়ে আসতি!বলেছি বল?”
স্মৃতির ওষ্ঠাধর চেপে ধরায় সে মুখখুলে কথা আনতে পারেনি।ভয়ার্ত মনে মাথা নেড়ে হ্যাঁ ইঙ্গিত করে।
“তাহলে কেন এসছিস!তোর সাহস তো কম না!টাকা চাই তোর?
স্মৃতি দু’পাশে মাথা নাড়ে।
“তাহলে এই বাড়ির বউ হতে?”
স্মৃতি চুপ হয়ে যায়।অরুন স্মৃতির চুপ থাকা দেখে বজ্রধ্বনিতে হেসে উঠে।যে হাসির ধ্বনি পুরো পৃথিবীকে থমকে দেয়।কেড়ে নেয় কিছু মানুষের মান-আশা।তখন তুচ্ছ প্রাণীটি নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার স্বপ্নটাও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।পৃথিবীটা আসলেই খুব নিষ্ঠুর,খুব অদ্ভুত নিষ্ঠুর!
পরক্ষণে হাসির আওয়াজ বন্ধ করে স্মৃতিকে এক ঝাটকায় ছুঁড়ে দেয়।মরমর করে বলে উঠে,
“এখানে দাঁড়া আমি আসতেছি।”
বলেই অরুন বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। কিছুক্ষণ পর এটিএম কার্ড হাতে ফিরে আসে।স্মৃতির দিকে এটিএম কার্ড ছুঁড়ে দিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে,
“এই নে এটিএম কার্ড।এখানে পুরো পাঁচ লাখ দেওয়া আছে।যত ইচ্ছে হয় তত তুলে নিস।তোর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল দু’মাস আগে।দু’মাস পর নয়।যেভাবে এসছিস ঠিক সেভাবে কেটে পড়।”
কথা শেষ করে অরুন বাড়ির দিকে ফিরে আসে।
রুমকি ফোনহাতে একঘন্টা যাবৎ বসে আছে।শূন্য বুকটা খাঁ খাঁ করছে।কিছুতেই মনটা তার শান্ত হচ্ছে না।এ আজ তারসাথে কি ঘটে গেল!মুহূর্তেই কোনো এক দমকা বাতাসে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে গেল।অশ্রু ফ্লোরের দিকে চোখ রেখে দমবন্ধ হয়ে বসে আছে।
“অশ্রু?কল করে বারণ করে দিলে ভালো হয় না?মনটাকে কোনোমতে মানাতে পারছি না।আমার মন বলছে সম্পর্কটাকে দীর্ঘস্থায়ীর বাসনায় বিপদ ডেকে আনতেছি।সামনের সবটুকু পথই আবছা অন্ধকার।”
“এখন সরাসরি বারণ করতে গেলে উল্টো বিপদ ডেকে যদি আনি?কারণ,এখন হুট করে বারণ করতে গেলেই ওদের মনে সন্দেহের দানা বাঁধবে।”
“কিন্তু সল্যুশন কি!?”
“আমায় আগে একটু ভাবতে দে”
“আচ্ছা সময় নে।”
অশ্রু বালিস চাপড়ে চোখ বন্ধ করে নিমজ্জে ভাবনা শুরু করে দেয়।কিছুক্ষণ ভাবার পর চোখ খুলে নেয়।হাই তুলে বলে,
“ইয়েস,সল্যুশন পথ পেয়েছি।”
“কীভাবে?”
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-১০
রোকসানা আক্তার
“কী!”
“ভেবে দেখ বুদ্ধিটা মন্দ নয়।কাজে দিবে।”
“তাই বলে…..
“উফস আবার দোটানায়!আরে এটা কি সত্য?বিয়ের চাপ সামলানোর উপায় মাত্র।তুই-না যেকোনো কথাইতেই সিরিয়াস।”
“তাই বলে এটা নিয়ে মিথ্যে..অশ্রু বিষয়টা খুব ক্রিটিকাল হয়ে যায় না?”
“এটা না বললে ও ইমতিয়াজকে কিভাবে থামাবি,হু?”
রুমকি পিটপিট চোখে কিছুক্ষণ অব্দি ভাবতে থাকে।এরফাঁকে মোবাইলে রিং বেজে উঠে রুমকির।
রুমকি সেদিকে তাকিয়ে দেখে ইমতিয়াজ কল করেছে।
“কে কল করেছে?”
“ইমতিয়াজ।”
“তাহলে যেটা বলছি ওটা বলে দে।”
“সত্যিই বলব?”
“হু।”
রুমকি দ্বিধায় পড়ে।কল রিসিভ করে ইমতিয়াজকে আদৌ কথাটি কি বলবে?আর বললেও কিভাবে বলবে তাই ভেবে পায় না রুমকি।হম্বিতম্বি হয়ে একবার মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকায় একবার অশ্রুর দিকে।পরে ইতস্তত-তটস্থ রেখে একপ্রকার কলটা রিসিভই করে ফেলে।রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে ইমতিয়াজের কন্ঠ ভেসে আসে।
“কী ব্যাপার আজ কল রিসিভ হতে এত লেট!এই আবার লজ্জাটজ্জা পাচ্ছ নাকি?”
“ন-না সেরকম কিছু নয়।”
“তাহলে?”
“ই-ইম-তিয়াজ,আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে।” কাঁপা কাঁপা কন্ঠে।
ইমতিয়াজ খানিক টুকু হেসে বলে,
“বল।”
“আমি আপনার সাথে বিয়েটা করতে পারবো না!”
“কিন্তু কেন?”
“আসলে আমার একটা শারিরীক প্রবলেম আছে!”
“কী প্রবলেম?”
“আমি গর্ভধারনে অক্ষম।কখনোই মা হতে পারবো না।আমার জরায়ুর মুখ বন্ধ।আপনার যদি বিলিভ না হয় তাহলে রিপোর্টগুলো এসে দেখতে পারেন। “
“মানে!কিসব বলছ!”
“সত্যি ইমতিয়াজ। আই’ম স্যরি! “
বলেই রুমকি অভিমানী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।আর অশ্রু খুশিতে চৌচির হওয়া অবস্থা।রুমকির মুখ থেকে শুনা একথাটি ইমতিয়াজের হজম হয়নি।টাল সামলে রুমকিকে বলে,
“আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি।”
বলেই কলটি কেটে দেয়।ইমতিয়াজ কল কেটে দেয়ার পরপরই অশ্রু রুমকিকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে।
“ইয়েস,ইয়েস!কি বললাম-না আমার এই বুদ্ধিটা কাজে দিবে!?”
“হুমম সেটাই দেখলাম!তোরও বুদ্ধি বেশ!”
“এটা বুদ্ধি নয় রে গাধী।জাস্ট গেজ।ছেলেদের সবথেকে দুর্বল পয়েন্টে হাত রাখলেই ওরা গাধার চেয়ে হাঁদারাম হয়ে যায়।বুঝলি?”
বলেই অশ্রু মুখ টিপে হাসে।প্রসঙ্গ টেনে আবার বলে,
“তোর মন খারাপ হয়নি ইমতিয়াজ ভাইয়াকে এভাবে বারণ করে দিতে?”
“খারাপ লাগলেও কি হবে,বল!ভালোবাসলেই যে পাওয়া যাবে এমন নয়।আমার হয়তো ভালোবাসা,আর ওর হয়তো অন্য আশা।বড়লোক দের মনের বোঝা যায় নারে অশ্রু।”
“হু।”
সকাল হয়।চারদিকে পাখিদের কিচিরমিচির। জানলার পর্দা ভেদ হয়ে ভেতরে মৃদু আলো আসছে।ধুপ ধুপ আলোয় অশ্রুর চোখের উপর উপচে পড়া মাএই ঘুম ভেঙ্গে যায়।পাশ ফিরে তাকিয়ে রুমকি এখনো ঘুমচ্ছে। অশ্রু কাচুমাচু হয়ে উঠে বসে।বালিশের পাশ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সকাল আঁটটা বেজে গেছে।তারপর রুমকিকে ডাকতে থাকে।রুমকিকে ডেকে তোলার পরও রুমকি ঘোর ঘুমে হু-হা করছে,উঠার কোনো নামগন্ধ নেই।রুমকিকে নিয়ে কিছুক্ষণ খটখট করার পর বিরক্তি হয়ে অশ্রু বাথরুমে চলে যায়।
সকালের ব্রেকফাস্ট শেষ করার পর দুজন শপিং করার জন্যে বের হয়।গত শুক্রবার রুমকির বান্ধবীর বিয়ে সেকারণে রুমকির টুকটাক কিছু কসমেটিকস কেনা লাগবে।কেনাকাটার প্রায়ই অর্ধাংশ শেষ হলে তারা একটি জুয়েলারি শপে যায়।সেখানে গিয়ে রুমকি অশ্রুকে কানের দুল চোজ করতে বলে।অশ্রু দুলের দিকে এক এক করে তাকাতে সাডেন নজর কাড়ে একটি কাচের বাক্সে।বাক্সটির মধ্যে সাদা মুক্তোয় ঘেরা নিঁখুত কাজের একজোড়া কানের দুল যেটার চকচকে শুধু বাক্সটি নয় পুরো দোকানটাকেই চাকচিক্য করে তুলেছে।অশ্রু নিঃশব্দ সে দুলখানার দিকে তাকিয়ে থাকে।অশ্রুর একমগ্নতা দেখে রুমকি অশ্রুর সামনে তূরী বাজায়।অশ্রুর টনক নেড়ে উঠে।
“কি ভাবছিস এত?”
অশ্রু বাক্সেটির দিকে ইঙ্গিত করে।রুমকি বাক্সেটির দিকে তাকিয়ে চোখদুটো ছানাবড়া করে ফেলে।আর শ্বাস নিয়ে বলে উঠে,
“আরেহ এরতো অনেক দাম।দেখতেই বোঝায় যায় মুক্তোর হবে!”
“হু।তবে আমার ভীষণ আক্রোশ বেড়েছে।দামটা জিজ্ঞেস করলে ত আর সমস্যা নেই।”
“করতে পারিস।”
“এইযে শুনুন?”
“ইয়েস ম্যাম….
“সাদা কাচের বাক্সের ওই দুল জোড়ার দাম কত হবে?”
জুয়েলারি দোকানদার হেসে বলে,
“ম্যাম এর অনেক দাম।তাছাড়া এটা অর্ডারকৃত!”
“কে অর্ডার করেছেন?”
“ভুট্টো পোদ্দারের ছোট ছেলে।”
অরুনের কথা শুনামাএই অশ্রুর চোখদুটো গোল আলুর মতো আটকে যায়।।রুমকির কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“এই রুমকি?উনিও আবার বিয়ে টিয়ে করছে নাকি?”
“হতে পারে।দু’ভাইয়ের বিয়ে হয়তো একসাথেই এরেন্জ করবে!”
“হা হা হা আজব পাবলিক!”
“ওসব শুনে আমাদের লাভ নেইই!”
অশ্রু এবং রুমকি কথা বলার মাঝে হুট করে অরুন শপে এসে উপস্থিত হয়।ভাগ্যিস ভালো অশ্রু রুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আর অরুন অশ্রুর পেছনটায়।তাই অশ্রু অরুনকে দেখতে পায়নি।তবে রুমকির সরু রেখা অরুনের মুখ বরাবর।
রুমকি হেসেই অশ্রুকে কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি রুমকির চোখ পড়ে অরুনের দিকে।রুমকির মুখটা হা হয়ে যায়,চোখদুটো খাঁড়া!কথা বলতে যেয়ে পারছে না।তা দেখে অশ্রু ভ্রু কুঁচকায়। বলে,
“তোকে আবার প্রতিবন্ধী ধরেছে নাকি?”
রুমকি তোতলে তোতলে পেছনের দিকে ইঙ্গিত করে।
“ও-ও দেখ!”
“কী?”
“পে-পে-ছ-নে!”
“পেছনে কী? ক্লিয়ার কর!”
রুমকি বলার আগেই অরুন পেছন থেকে দোকানদারকে বলে উঠে,
“তো মিস্টার কাব্য,আমার দুলে কার আবার বদ চোখ পড়েছে,শুনি?”
ভয়েসটা শুনে অশ্রু কানদুটো খরগোশের মতো খাঁড়া করে ফেলে।এই ভয়েসটা অশ্রুর অতি পরিচিত।কতবার শুনেছে।কতবার এই ভয়েসটাই হুমকি দিয়েছে।কতবার এই ভয়েসটাই নরপিশাচের মতো তাকে জব্দ করে বসেছে!আর সেই ভয়েসটাই এখন অশ্রুর সামনাসামনি! তা ভেবে অশ্রু বোকা মনে পেছনে তাকায়।এবার যেন সে পৃথিবী থেকে বিলীন। রূহটা ধুপধুপ একবার জ্বলে উঠছে আবার নিভে যাচ্ছে।প্রাণটা আর কিছুতেই থাকছে না।এবার যেন বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠছে।অশ্রুর গলার পানিয়ে শুঁকিয়ে কাঠ!বার বার ঢোক গিলে।অরুন অশ্রুর দিকে ভ্রু উঁচিয়ে ঠোঁটের কোণে পিচাশ হাসি চেপে তাকিয়ে আছে।অরুন অশ্রুর কাছ বরাবর এসে আস্তে গলায় বলে,
“পালিয়ে বেঁচে যাবে তাই ভেবেছ। তাই না?এবার এই অরুন দেখবে পালিয়ে কোথায় যাবে!”
বলেই দোকানদারকে ইঙ্গিত করে দুলের বাক্সটা দিতে।দোকানদার দ্রুত হাতে কাচের বাক্সটা অরুনের হাতে তুলে দেয়।
“ধন্যবাদ স্যার।আবার আসবেন।”
“আপনাকেও ধন্যবাদ।”
“ধন্যবাদ “শব্দটা মুখে দোকানদারকে বলা।তবে তার দৃষ্টিটা অশ্রুর দিকে।আর মুহূর্তেই অরুন অশ্রুকে কেটে চলে যায়।
অরুন চলে যাওয়ার পর অশ্রু বড় করে একটা দম ছাড়ে।চোখের কোণের পানি মুছে বলে,
“রুমকি চল। বাসায় চলে যাই।এখানে আর একমুহূর্তেও না!”
“হু দোস চল!”
দুজনে ক্লান্তমনে তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা করে।রিক্সা বাসার সামনে থামতেই দুজন রিক্সা থেকে নেমে পড়ে।আর ভাড়াটা দিয়ে দ্রুত পায়ে বাসার সামনে এসে কলিং বেল চাপে।রুমকির মা হাসিমুখে দরজা খুলে বলেন,
“কিরে,আসতে এত লেট হলো যে? সবাই সেই কখন এসে বসে আছে আর তোরা!”
রুমকি এবং অশ্রু একে-অপরের মুখে চাওয়াচাওয়ি করে চমকে উঠে।খড় গলায় একসাথে বলে উঠে,
“কারা?”
দুজনের প্রশ্নের উওর করতে রুমকির মা দরজার সামনে থেকে একসাইড হয়ে দাড়ান।আর অশ্রু এবং রুমকি ভেতরে দৃষ্টি এঁটে দেখতে পায় বসার রুমে কি সুন্দরভাবে আড়ি পেতে বসে আছে ইমতিয়াজ, ভুট্টো পোদ্দার, অরুন এবং তার মামারা!!
চলবে…
তা আমরা কাল শুনবো😁
চলবে…..