একটুখানি বিশ্বাস পর্ব ৭+৮

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-০৭(বোনাস পার্ট)
রোকসানা আক্তার

ইমতিয়াজ পোদ্দার বাসায় ঢুকামাএই বাসার সবাই সারপ্রাইজড হয়ে যায়।বাসার সব কাজের লোক,অরুনের লোকবল সবাই ইমতিয়াজ পোদ্দারকে ঘিরে ধরে বলল,
———স্যার আপনি?হঠাৎ বাসায়ই!?
———আপনাদের সবাইকে সারপ্রাইজড দেওয়ার জন্যে।অরুন কোথায়?
———সাহেব মনে হয় রুমে স্যার।(কাজের লোক)
ইমতিয়াজ পোদ্দার সিড়ি বেয়ে তড়িঘড়ি অরুনের রুমে যায়।অরুন বিছানার উপর বসে জানলা বরাবর বাইরে তাকিয়ে আছে। ইমতিয়াজ পা টিপে টিপে অরুনের কাছে যেয়ে পেছন থেকে অরুনের চোখ চেপে ধরে।অরুন চমকে উঠে।
———কে?
ইমতিয়াজ অরুনের কানের কাছে মুখটা গুঁজে ফিসফিসিয়ে বলে,
———ইমু!
অরুনের আর এক মুহূর্তেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি কে এসছে।এই ইমু নামটা তার হৃদয়ের কোণ।
অরুন ইমতিয়াজকে সংক্ষেপে ইমু বলে ডাকে।
ইমতিয়াজ এবং অরুন ভাই হলেও তাদের চলাফেরা একদম বন্ধুসুলভ।দু’ভাই ভুলেই যায় যে তারা ভাই ভাই।ভাই হিসেবে কথা বলতে একে-অপরকে ইতস্ততা বোধ করে,অথচ ইমতিয়াজ এবং অরুনের মাঝে তেমনটি নেই।। অরুন খুশিতে লাফ মেরে উঠে।আর ভাইয়া বলে জোরে জড়িয়ে ধরে।
———আসবে অথচ কল করে জানাও নি কেন?
———প্রয়োজন পড়ে নি।
বলেই অরুনকে ছাড়িয়ে নেয়।তারপর অন্য একটা প্রসঙ্গ মনে আসতেই ঝলকে বলে উঠে,
———এই অরু আজ একটা মজার ঘটনা ঘটেছে!
———কী?
———আজ আমার একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ হয়েছে!
অরুন তার ভাইয়ের কথা শুনে হতভম্ব। ভ্রু বেঁকে বলে,
———সত্যি!?
———হুমম।
———মেয়ের নাম কি?মেয়ে থাকে কই?মেয়ের বাবা কি করে?মেয়ে দেখতে কেমন?প্লিজজ তাড়াতাড়ি বলো আমার কিন্তু তর সইছে না!
———শুধু নামটাই জানি।এছাড়া আর কিছুই জানি না।
———আচ্ছা নামই বলো।
———রুমকি।
———দেখতে কেমন?
———সুন্দরের তুলনা শুধুই সুন্দর!আমার মনে রঙ্গ লেগে গেছেরে।লাইফে এই প্রথম কোনো মেয়েকে আমার ভালো লাগলো।কি সুন্দর চিরল দাঁত,কি সুন্দর হাসি,কি সুন্দর কথা জাস্ট ওয়াও!
———হয়েছে এত সাহিত্যিক বাণী শুনার আর ধৈর্য্য নেই।এখন শুধু বাবাকে কল করে জানিয়ে দেওয়ার পালা!
———বাবাকে কল করবি কেন?
———তোমার বিয়ের কথা বলতে।
———পাগল?এটা কিভাবে সম্ভব!তাছাড়া মেয়েটিকে তো ভালোভাবে আমি চিনিও না জানিও না।তবে নাম্বার আছে তার।
———নাম্বার আছে?
———হু!
———ওয়াও গ্রেটস!ওটা থাকলেই এনাফ।তাহলে আর খুটিনাটি চেনার দরকার নেই।
বলেই অরুন তার ফোনটা হাতে নিয়ে ভুট্টো পোদ্দারকে কল করে।তারপর ভুট্টো পোদ্দার এ খবর শুনেতো ভীষণ খুশি।তার বড় ছেলে কখনো কোনো মেয়ের প্রতি ক্রাশিত হয়নি,অথচ আজ নিজ মুখে বলছে কাউকে ভালো লেগেছে।এরচেয়ে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে!
অরুন খুশি মনে কলটা কেটেই ডিংকা চিকা,ডিংকা চিকা ডান্স দেওয়া শুরু করে!তা দেখে ইমতিয়াজ বিরক্তি।
———এত নাচার কি হলো শুনি?বাড়িতে কি বিয়ে পড়ছে নাকি?
অরুন নাচ থামিয়ে বলে,
———পড়ে নি।পড়বে।বাবা বলেছেন তুমি কালই গিয়ে উনাদের বাসায় প্রস্তাব দিতে।উনারা রাজি হলে পরবর্তীতে বাবা নিজেই এসেই দিন-তারিখ ঠিক করবেন।
———আচ্ছা মানলাম আমারটা হবে।তা তুই করবি কবে?
———কি বলো না ভাইয়া!আমারতো অর্জিনাল মাল চাই!
———অর্জিনাল মাল মানে?
———আরেহ আমেরিকান মেয়ে,আমেরিকান।
———শিকের মতো লম্বা, ধবলের মতো সাদা দেখতে একদম নাক-বোচা!হা হা হা হা।
———তুমি না ভাইয়া!অনেকের মুখে শুনেছি বাংলার নারীদের সৌন্দর্য্যে একরাশ মাধুর্যতার থাকে।তারা হাসলে সুচিস্মিতা,কাঁদলে সুনয়না!তবে আমিতো সেরকম কিছুই দেখছি না।
———অন্তরের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করবি তাহলেই সেই সুক্ষ্মতা গুলো অনুভব করতে পারবি!আচ্ছা অনেক কথা বলে ফেললাম।ভীষণ ক্লান্ত আমি। এখন একটু রেস্ট চাই।
বলেই ইমতিয়াজ চলে যেতে চাইলে অরুন শক্ত গলায় বলে উঠে,
———ভাইয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
ইমতিয়াজ থেমে যায়।হঠাৎ অরুনের মুখের কথার পরিবর্তন নিশ্চয়ই মন খারাপ!ইশতিয়াজ পেছন ফিরে বলে,
———কি কথা বল অরু?
———ভাইয়া তুমি কাল রাত থেকে আজ সকাল এখন পর্যন্ত একবারও ইন্টারনেটে ঢুকেছ?
———নাহ অরুন!কাল থেকেই তো আমার ব্যস্ততা।জিনিসপএ গোছগাছ করা, এয়ারপোর্ট আসা,বিমানের পথ সবমিলিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে।সময় পাইনি নেটে ঢুকার!কেন কি হয়েছে?

তারপর অরুন ইমতিয়াজকে সবটা খুলে বলে।তবে সবকিছু বললেও যে সত্যকথা বলছে এমন না।এইযে মেয়েদের প্রস্তাবের নামে রুমডেট অফার করে তা নিঃসংকোচে ভুলে গেছে।সব দোষটাই অশ্রুর!অশ্রু এবং তার বান্ধবী মিথ্যে বলে ফাঁসিয়েছে! জনগণের সামনে ক্যারেক্টার লুজ প্রমাণিত করছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব শুনামাএই ইমতিয়াজের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।বুকটা ক্রোধে চৌচির হয়ে যাচ্ছে ইমতিয়াজের।তার ফুলের মতো ভাইকে কেমন অপবিএ কথায় ফাঁসাচ্ছে!ছিঃ।এমনটা ইমতিয়াজ ভাবতেও পারছে না।আর হুম ইমতিয়াজ আদৌ ও জানে না অরুন যে ক্যারেক্টারলেস!
———অরুন,তুই মন খারাপ করিস না।সবটা আমি দেখে নিব।আমি দেখবো,কাদের এত সাহস গিরগিটির মতো পা বেড়েছে, তাদের পা আমি ভেঙ্গে দিব!আমার একমাএ আদরের ভাইকে নিয়ে এসব বলছে!বল কে সে মেয়ে?কে?কে? যে তোর উপর আঙ্গুল তুলে কথা বলার সাহস পায়!!
———প্লিজজ ভাইয়া কুল!তোমার কিছু করতে হবে না যা করার আমি করবো!আমি এই স্পর্ধার রস হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেব।ও হয়তো এখনো বুঝে নি আমি কতটা ভয়ংকর!
———গুড!!বাবাকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিস?
———হুমম বাবা জানে!
———কি বলেছেন বাবা?
———বাবা দেশে ফিরলে এর বিহেভ করবেন।
———জানি বাবা ছাড়ার পাএ নন।
———হুমম বাবার অপেক্ষায়ই আছি!
———যাইহোক,মন খারাপ করিস না। গেলাম।
———আর শুনো ভাইয়া?
———আবার কি বলবি?
———রুমকি ভাবিকে জানিও দিওও তুমিযে কাল তার বাসায় যাচ্ছ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
ইমতিয়াজ মুঁচকি হেসে মাথা নেড়ে চলে যায়।অরুন হয়ে মুঠ হাতে“ইয়েস” বলে উঠে।

ওদিক দিয়ে,অশ্রু এবং রুমকি তাদের এক বান্ধবীর বাসায় উঠে।বান্ধবীকে অবশ্য এখানে আসার কারণ বলে নি।নাহলে সে ভয় পেয়ে আশ্রয় দিতে রাজি হবে না।পোদ্দার কথা শুনলেই কেঁপে উঠবে।
রাত হয়।অশ্রু চোখে গ্লাস পড়ে উপন্যাস পড়ছে।রুমকি রুমে এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারি করছে।ইসস ইমতিয়াজ কখন তাকে কল করবে, কখন কল করবে সে আশায়।তা দেখে অশ্রু মিটিমিটি হাসে।ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
———কী ম্যাম,কারো জন্যে অপেক্ষা করছো বুঝি?
রুমকি থতমত খেয়ে বসে।তোতলে তোতলে বলে,
———ম-ম-মানে?
———নাহহ কিছু না আমি বুঝলেই চলবে!
বলেই আবার বইয়ে মুখ গুঁজে অশ্রু।

কিছুক্ষণ কাঁটার পর,
হুট করে ফোনে রিং বেঁজে উঠে।অশ্রু এবার বুঝতে পারে ইমতিয়াজ কল দিয়েছে।আবারো ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
———যাক শীতকালে বসন্তি চলে এসছে।এবার প্রাণ ভরে সুভাস নাও।তবে এখানে নয়।বেলকনিতে গিয়ে কথা বল!
রুমকি আনন্দটা বুকে জমা রেখে অশ্রুকে চোখ ইশারা করে বেলকনিতে চলে যায়।রুমকি বেলকনিতে এসেই একটা দম ছাড়ে।তারপর তড়িঘড়ি কল রিসিভ করে এবং সাথে সাথেই হ্যালো বলে উঠে,
———কী ব্যাপার ভীষণ এক্সাইটেড মনে হচ্ছে?
———ন-নাহ,ন-নাহ!
———য়ু হু মিথ্যে বলা হচ্ছে!আমি কিন্তু তোমার মনের কথা একটু আধটু আস্বাদন করতে পারছি।
———কেমন?
———তুমি এতক্ষণ কি করেছিলে?
———যাকে আজ এক্সিডেন্ট করে দিয়েছিলেন তার সেবা করেছিলাম।
———তাই?তো আমার রোগীর কি অবস্থা।সব কিছু ঠিকঠাক তো?
———হু!
———তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো?
———জ্বী,করুন।
———সত্যি কথা বলবে ত?
———হ্যা,বলবো।
———তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?অথবা তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?
———পছন্দ করি।তবে,ট্রুলি আমার বয়ফ্রেন্ড নেই।
———ট্রুলি?
———হুম।আপনার?
———গফ নেই।তবে আজ কাউকে ভালোবেস ফেলেছি
———কাকে?
———সত্যি নাম বলবো?
———জ্বী,বলুন?
———তোমাকে!
তারপর শুরু হয় দুজনের প্রেমালাপ। চলতে থাকুক।

এক ঘন্টা,দু’ঘন্টা পার হয়ে যায়।রুমকির রুমের আসার এখনো নামগন্ধ নেই।তা ভেবে অশ্রুর ভ্রু কুঁচকে আসে।এই মেয়ে এতক্ষণ কি এমন কথা শুরু করলো?আচ্ছা এদের মাঝে প্রেম টেম হয়ে গেল নাতো?য়ুমম জানতে হবে ত!
অশ্রু মনে শয়তানী বুদ্ধি এঁটে বিছানা থেকে নামে পা টিপে টিপে বেলকনির দেয়াল ঘেঁষে দাড়ায়। আর কান খাঁড়া করে শুনার চেষ্টা করে ওদের মাঝে কেমন কথোপকথন চলছে!
ভালোভাবে শুনতে পেয়েই অশ্রু চোখ দুটো ছোট্র করে আনে।”হায় আল্লাহ প্রেম না শুরু হতে এখনই চুম্মাচুম্মি শুরু হয়ে গেলো!।কি নির্লজ্জ্ব রে ভাই।আমার এখন এসব শুনার বয়স নাই।তারচেয়ে ভালো উপন্যাস পড়তে যাই।”
নিজমনে বলেই অশ্রু আবার বিছানার উপর বসে পড়ে।
চলবে….

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-০৮
রোকসানা আক্তার

রুমকি কথা শেষ করে গম্ভীর মুখে অশ্রুর পাশে বসে।নিরাশ মুখ করে বলে,
———অশ্রু একটা সমস্যা হয়ে গেছে!
অশ্রু চোখ থেকে বই সরায়।ভ্রু কুঁচকে বলে,
———কি!
———আজ দুপুরে যে ব্যক্তির সাথে আমাদের দেখা হয়েছিল,উনি কাল আমাদের বাসায় আসতে চাচ্ছেন।
রুমকির কথায় অশ্রুর কপালের ভাঁজ স্বাভাবিক হয় আর মুহূর্তে সে উপন্যাসটা পাশে রেখেই বাঁদরের মতো লাঁফ মেরে রুমকিকে জড়িয়ে ধরে।উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,
———এতো খুবই খুশির সংবাদ রে!অবশেষে বিয়েটাও হয়ে যাচ্ছে!
রুমকি টান মেরে অশ্রুর হাত ছাড়ায়।ঝাঁজালো গলায় বলে উঠে,
———পাগল তুই?ওই লোকটাকে না আমি ভালো করি চিনি,আর না আমি আগে কোথাও দেখেছি!
———উফস,ড্রামাটিক অফ কর!ভালোভাবে না চিনেই দু’ঘন্টা আগে মমতাজ হলি তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়,হ্যাঁ?
রুমকি অশ্রুর কথায় ভড়কে যায়।চোখের পলক নিচু করে।ইতস্ততা বোধ হয়ে বলে,
———কেন আসবে তার কারণ আমায় বলে নি।তাছাড়া,তুই এতটা সিউর হলি কিভাবে উনি যে আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবেন!
———সিউর না।তবে সাইকোলজিক্যাল থিউরি থেকে যতটা বুঝলাম!
রুমকি ভ্রু বেঁকে কর্কশ জবাবে বলে,
———তুই আবার মনোবিজ্ঞানী হলি কবে?
———আমিতো বলিনি আমি মনোবিজ্ঞানী।আন্দাজ মনে যতটা বুঝলাম।
রুমকি দৃঢ় দম ছাড়ে।তারপর কিলবিল হয়ে বসে।পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে থাই থাই হয়ে বলে,
———উনি যদি কাল বাসায় আসতে চান তাহলে আমাদের তো কাল বাসায় ফেরা সম্ভব নয়।
———কেন সম্ভব নয়?
———আরেহ,এখন বাসায় ফেরা মানেই তো বিপদ!অরুন যদি গুড়িসুড়ি বাসায় এসে হাজির হয় তখন?
———এই তোর মাথায় এখন আবার অরুন!এত খুশির সংবাদে অরুনটাকে আবার কইত্তে নিয়ে আসলি,হু?দিলিতো মুডটা খারাপ করে!
অশ্রু গ্যাঁজ গ্যাঁজ কন্ঠে বলে অন্যদিক মুখ করে নেয়।
———তারমানে তুই চাচ্ছিস কাল উনি আমাদের বাসায় আসতে?
———তো -কি!এমন একটা বড় সুযোগ হাতছাড়া করার মানে হয় আছে? যাকে বলে ক্রাশ আর ক্রাশের থেকেই এমন অফার সত্যি চাঁদ কপালের ব্যাপার।তোর কপালটা আসলেই অনেক ভালো।প্রথম দেখায় ক্রাশিত ব্যক্তির থেকে প্রেমের নিবেদন তারপর বিয়ের প্রস্তাব।ওয়াওওও!!বিষয়টা আসলেই অনেকটা হ্যালুসিলেশন!
———আরেহ গাধা বিয়ের প্রস্তাব কই দিল দেখলি!?
———দেয়নি দিবে তো ম্যান!আর গাধা নয়,গাধী!
———ম্যান নয়,উমেন!
———হয়েছে বেশি পারেন।এবার দুলাভাইকে কল করে বলেন কালই আসতে।সাথে করে আচার-চকোলেটও যেন নিয়ে আসে,হু!
অশ্রুর বাচ্চামো কথায় রুমকি খিলখিল হেসে দেয়।রুমকি হাসতে হাসতে মোবাইলের দিকে তাকায়।কল বেঁজে উঠে।পুলকিত হয়ে বলে,
———এই অশ্রু?আবার কল দিয়েছে!
———আরেহ যা যা কথা বল!
———কাল আসার কথা সত্যিই বলবো?
———হু,বল।
রুমকি ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে আসে।

পরেরদিন,
রুমকি মোবাইল ব্যাগে গুঁজে হাতে নেয় আর অশ্রু হেলমেট দুটো হাতে করে বাইরে বেরিয়ে আসে।রুমকি হাত বাড়িয়ে বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
———আসি রে রিমি।অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে।
———এটা কোনো কথা!?একরাত থেকেই এখন চলে যাচ্ছিস।কষ্টতো উল্টো বাড়িয়ে দিলি।
অশ্রু পাশ থেকে হাই তুলে বলে,
———কষ্টতো বাড়িয়ে দিয়েছি না?ওকে! আবার এসে কষ্ট কমিয়ে দিব।হ্যাপী?
রিমি হেসে বলে,
———অনেক।
দুজন তাদের বান্ধবীকে বিদেয় দিয়ে নিচে চলে আসে।

ইমতিয়াজের পুরো রুম জুড়ে এক অদ্ভুদ সুগন্ধির ঘ্রাণ ছড়িয়ে যাচ্ছে।বাসার কাজের লোক কোহিনূর যতবার রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ততবারই দরজার সামনে দাড়িয়ে ঘ্রাণটি প্রাণভরে শুঁকে নিচ্ছে!চতুর্থ বারের সময় তা ইমতিয়াজের চোখে পড়ে।ইমতিয়াজ দরজার কাছে এসে জোর গলায় ধমকে উঠে!কোহিনুর চমকে অপ্রস্তুত হয়ে যায়।মাথা নিচু করে বলে,
———স্যার,আমি বুঝবার পারি নাই।
———ঘ্রাণ শুঁকা হয়েছে?যদি হয়ে থাকে তাহলে এবার যাও!
কোহিনুর মাথা নিচু করে চলে যায়।অরুন কোট-টাই পড়ে একেবারে রেডি।আজ বড় ভাইয়ের ক্রাশের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে বলে কথা তাই বড় রকমের একটা সাজুগুজু দিয়ে ইমতিয়াজের রুমে আসে।
———কী ভাইয়া,রেডি হয়েছ তো?
———এইতো আর একটু।টাইটা লাগালেই ব্যাস।
অরুন কিছু একটা ঘ্রাণ পেয়ে নাঁক উঁচিয়ে বলে,
———কী ভাই,সেন্ট একটু বেশিই দিয়েছ মনে হয়?
———এই আরকি একটু-আধটু!
অরুন মুখ চেপে হেসে মাথা নাড়ে।তারপর দু’ভাই গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি চলতে থাকে। মহাখালী হাইওয়ে আসতেই লম্বা সিগন্যাল পড়ে। গাড়ি প্রায়ই দশ মিনিট জ্যামে আটকে থাকে।অরুন মুখে একগাদা বিরক্তি নিয়ে লুকিং গ্লাসে তাকাতেই চোখদুটো আলোর মতো আটকে যায়।তাদের গাড়ির পেছনের সারিতে অশ্রু একটি মেয়ের সাথে বাইকে বসে আছে!মেয়েটিকে অবশ্য ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না কারণ তার মাথায় হেলমেট পড়া।আর অশ্রু পেছনে বসে হেলমেট হাতে অধৈর্য্য মনে বসে আছে।
অশ্রুকে দেখামাএই অরুনের মাথায় রাগ চড়ে বসে!সে ক্ষিপ্র হয়ে ইমতিয়াজকে কিছু না বলে গাড়ি থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়!ইমতিয়াজ কিছু বলার আগেই সবুজ বাতি জ্বলে উঠে আর সিগন্যাল ছেড়ে দেয়।তড়িৎ বেগে গাড়ি,বাইক,সি.এনজি,বাস সব ওভার ক্রস করতে থাকে।আর অরুন মুহূর্তে অশ্রুকে হারিয়ে ফেলে।অরুনকে রাস্তামধ্যে জনগণরা দেখে উল্লাসিত মনে ঘিরে ধরে।দৌড়ে আসে সাংবাদিকরা!হাজারো প্রশ্নের পাতা মেলে—হঠাৎ এখানে কি মনে করে আসা?কোনো হ্যাল্পের প্রয়োজন?ইত্যাদি ইত্যাদি।এতবড় একজন সেলিব্রিটির সাথে হঠাৎ দেখা পাওয়া তাকেতো আর জনগণরা এমনি এমনি ছাড়ছে না।তাই নানান প্রশ্নে ছিঁড়ে খাওয়া অবস্থা।মুহূর্তেই পরিবেশটা ধুমধুমা হয়ে যায়।আঁটকা পড়া গণ মানুষের মাঝে অরুনের আর ইমতিয়াজের সাথে যাওয়া হয়নি।
ইমতিয়াজ রাস্তার ওপাশে অরুনকে বারংবার কল করে যাচ্ছে। না অরুন কল উঠাচ্ছে,না রিসিভ করছে।অনেকটা সময় নিয়ে অপেক্ষা করায় ইমতিয়াজের রাগ উঠে যায়।পরে বিরক্তি মন নিয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে।

বাসার সামনে আসা মাএই রুমকি বাইক থামায়।দ্রুত পায়ে হেঁটে দুজন ঘরে ঢুকে।রাস্তায় আজ পর্যাপ্ত জ্যাম ছিল তাই সকালে রওনা করার পরও এখন ১ টায় এসে বাসায় পৌঁছায়।রুমকি ব্যাগটা সোফায় রেখেই তার মাকে ডাকতে থাকে।মা রুম থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে বলেন,
———এই তোদের আসতে এত দেরী হলো কেন?
———আন্টি রাস্তায় আজ সেই লেভেলের জ্যাম ছিল।মাথাটা পুরো ঘুরে গেছে।(অশ্রু)
———আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে।।
———সেই রেস্ট আর কোথায় মা।ইমতিয়াজ তো মনে হয় রওনা করেছে।
রুমকির মা খুশি হয়ে মুখে একটা হাসি টানেন।রুমকি ছোটবেলা থেকেই পিতৃহারা।তাই চারদেয়ালের এই সংসারের বাইরে আছেন মামারা এবং ভেতর বললে শুধুই মা। ছোটবেলা থেকেই রুমকির ভালোলাগা,মন্দলাগা সবটাই সে তার মায়ের সাথে শেয়ার করে এসছে।তাই ইমতিয়াজের ব্যাপারটাও তার ব্যাতিক্রম নয়। ইমতিয়াজ যে আজ আসবে রুমকি সেই সকালেই তার মাকে জানিয়ে দেয়।

কলিং বেল বেজে উঠলে অশ্রু সোফা থেকে উঠে তড়িঘড়ি দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলে দেখতে পায় কালকের সেই অতিথি ইমতিয়াজ পোদ্দার এসছেন।এখনো সেই কালকের মুঁচকি হাসিটা মুখে লেগে আছে।অশ্রু সম্মতি দিয়ে ভেতরে আসতে বলে।ইমতিয়াজ ভেতরে ঢোকে।
চলবে…

(ভাবলাম আজ আর দিব না।তবে যেটুকু সময় পেয়েছি তাড়াতাড়ি লিখেছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here