একদিন কাঁদবে তুমিও পর্ব -৩৯+৪০

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৩৯
#Saji_Afroz

মালিহার ফোন পেয়ে অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসে আরশান। মালিহার মুখে সবটা শুনে রাগান্বিত হয়ে পড়ে সে। সকল কর্মচারীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যে মেয়েটি খাবার নিয়ে গিয়েছিল সে সব স্বীকার করে নেয়। আরশান তাকে বলল, এখানে আর কাজ করার প্রয়োজন নেই তোমার। আসতে পারো তুমি। পুরা মাসের বেতন নিয়ে চলে যাও।

মেয়েটি ভয়ে একটি কথাও বলল না। মালিহার কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে চলে গেল সে। দারোয়ানকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলল, ঘোমটা দেওয়া একজন বের হইছিল। আমি জিজ্ঞেস করছিলাম কে সে। বলছিল বুয়া।

মালিহা বলল, এখানে কোনো বুয়া ঘোমটা দিয়ে আসে?
-আমি এটা জিজ্ঞেস করছিলাম। সে বলল, মুখে নাকি এলার্জি হইছে হুট করে তাই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে।

আরশান সবাইকে যেতে বলে। এরপর মালিহাকে বলল, আর কোথায় যাবে সে? নিশ্চয় বাবার বাড়িতে গেছে।

মালিহা বলল, যদি সব বলে দেয়?
-প্রমাণ তো করতে পারবে না।
-হু। বড় জোর ডিভোর্স পেপার পাঠাবে। ও পাঠানোর আগেই তুমি নাহয় পাঠিয়ে দাও। শিক্ষা হবে তার।

সে কথার কোনো উত্তর দিলো না আরশান। হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায় সে।

এদিকে মরিয়ম বেগম ও দিদার আলম বেশ চিন্তিত। হুটহাট মানতাশা চলে এসেছে। তার মলীন চেহারা দেখে কী হয়েছে জানতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু সে কিছুই জানায়নি। বরং আরশানকেও যেন কিছু জিজ্ঞাসা না করে এই বলে নিজের রুমে চলে যায় সে। সেই থেকে রুম বন্ধ করে বসে রয়েছে মানতাশা। কী হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না তারা।

মানতাশা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। লম্বা একটা নি:শ্বাস ফেলে সে। একটা কাজ না করলে যেন শান্তির নি:শ্বাস টুকু নিতে পারছে না। মানতাশা রুম থেকে বেরিয়ে মা এর ফোনটি নিয়ে আসে৷ অনেক দিন পর ডায়াল নাম্বারে একটি নাম্বার তুললো সে। আর সেটি হলো এজাজের। তার নাম্বারে ডায়াল করতে হাত কাঁপছে। একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে ফোন করলো এজাজকে।

-আমেরিকা! উফফ ভাইয়া! আমি ভাবতেও পারছি না যে, আমার ভাই আমেরিকা যাবে।

বোন এলিজার কথা শুনে মৃদু হেসে এজাজ বলল, আমিও কী ভেবেছিলাম এমনকিছু!

পাশ থেকে মা আসমা আক্তার বললেন, কেউ একজন আমার ছেলেকে অযোগ্য মনে করেছিল। তাই আল্লাহ দু-হাত ভরে আমার ছেলেকে সুখ দিচ্ছে।

এই আনন্দে মিষ্টি মুখ করতে থাকে তারা। এজাজের ফোন বেজে উঠলে হাতে নেয় সে। ফোন নাম্বারটি চিনতে ভুল হলো না তার। মানতাশার মা এর ফোন নাম্বার। মানতাশা বেশ কয়েকবার সেই ফোন নাম্বার থেকে তার সাথে কথা বলেছিল।
হঠাৎ মরিয়ম বেগম ফোন দিচ্ছেন কেন? মানতাশা ঠিক আছে তো?
এজাজ নিজের রুমে এসে ফোন রিসিভ করলো। সালাম জানাতে গেলে মানতাশার কান্নাজড়িত কন্ঠস্বর শুনে থেমে গেল সে। ওপাশ থেকে ভাঙা গলায় মানতাশা বলল, এজাজ?

এতদিন পর মানতাশার কণ্ঠস্বর শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো এজাজের। সাথে মানতাশার এমন ভাঙা গলা শুনেও বিষন্ন হয়ে পড়ে মুহুর্তেই৷ এজাজ বলল, কী হয়েছে? তোমার কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? সব ঠিক আছে তো?
-কিচ্ছু ঠিক নেই এজাজ। কিচ্ছু না!

এই বলে কাঁদতে থাকলো মানতাশা। এজাজ ব্যস্ত হয়ে বলল, আগে শান্ত হও প্লিজ!

মানতাশা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল-
আমি যে অন্যায় তোমার সাথে করেছিলাম সেটার শাস্তি পাচ্ছি। আমি ভালো নেই। তিলে তিলে মরে যাচ্ছি। অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।
-আরশান? সে কী করেছে তোমার সাথে?
-যা করেছে তাই আমার প্রাপ্য ছিল৷ আমি শুধু তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে ফোন দিলাম। আমায় ক্ষমা করে দিও।

এই বলে ফোনের লাইন কেটে দিলো মানতাশা। পেছনে ফিরে মা কে দেখে জড়িয়ে ধরলো সে। মরিয়ম বেগম বললেন, এসব সত্যি? কী করেছে আরশান তোর সঙ্গে?

মা কে সব খুলে বলে মানতাশা। তিনিও সব শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাথে বললেন, এই ভয়ই আমি পেয়েছিলাম। দেখলি তো মা! কাউকে ঠকিয়ে ভালো থাকা যায় না। এজাজের মন ভাঙার শাস্তি পাচ্ছিস তুই।
.
.
.
-কফি খাবেন তো?

আজরার প্রশ্ন শুনে ইনতিসার বলল, হু। আমি স্টাডি রুমে যাচ্ছি। কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিও। কাজ আছে কিছু।

এই বলে ইনতিসার স্টাডি রুমে আসলো। চেয়ার টেনে বসে পড়লো সে। আজ যা হয়েছে তা কী ঠিক হয়েছে? নিজের আবেগকে কোনো মতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি সে। রাখবেই বা কিভাবে! তার ভালোবাসার মানুষটাকে আর কত কষ্ট পেতে দেখবে সে? ভালোবাসা! এই ভেবে নিজেই থমকে গেল সে। দাঁড়িয়ে পড়ে ইনতিসার। সারারুমে পায়চারি করে ছটফট করতে থাকলো সে। হ্যাঁ, নাবীহাই তো তার ভালোবাসা। প্রথম ভালোবাসা। কিন্তু আজরা? আজরা কী কেবল দায়িত্ব? কাকে বেছে নেবে সে জীবনে? নাবীহার কষ্ট যে সে সহ্য করতে পারছে না। সুন্দর একটা জীবন সেও পেত, যদি সে ইনতিসারের জীবনে থাকতো।
অনেক তো চেষ্টা করেছে সে, আজরার সাথে ভালো থাকতে। কিন্তু বারবার মন নাবীহাতে গিয়েই আঁটকে যায়। আর কত নিজেকে সামলাবে সে? আর কত! কিন্তু এসব করে আজরার প্রতি অন্যায় করছে না সে?
আবারও গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে ইনতিসার।
মানুষ নিজের ভালোবাসাকে পেতে কত কিছুই না করে। সে নাহয় এই অন্যায় টাও করলো!
আজ তো নাবীহার সামনে সত্যিটা চলেই এসেছে। ইনতিসারের জীবনে নাবীহা চলে আসলেই হয়! কিন্তু সেটা কী সম্ভব? নাবীহা কাল থেকে অফিসে আবার আসবে তো?
.
.
.
অফিসে না আসতে চেয়েও আসতে হলো নাবীহাকে।।কারণ সে নিরুপায়। ইনতিসার তাদের কাছ থেকে টাকা পায়। আর এইদিকে সংসারও তার সামলাতে হচ্ছে। জহিরের ক্ষতি তো সে করতে পারবে না! তাই সবটা বিবেচনা করে অফিসে আসলো নাবীহা।
নাবীহার কাছে আসলো ইনতিসার। তাকে দেখে শান্তি পায় সে। নাবীহা বলল, আমি ফাইল নিয়ে যাচ্ছিলাম এখুনি।
-আমায় দিয়ে দাও।
-জি।

নাবীহা ফাইল গোছাতে শুরু করে। ইনতিসার বলল, আমি কিন্তু কালকের বিষয়ে সিরিয়াস।

নাবীহা ভেবেছিল ইনতিসার মুখ ফসকে কাল সেকথা বললেও, আজ আর এসব বিষয়ে কথা তুলবে না। বরং লজ্জিত হবে। কিন্তু ইনতিসারের এমন আচরণে অবাক হয় সে। নাবীহা বলল, কীসব বলছেন ভেবে বলছেন তো? আপনার কাছ থেকে এটা আশা করিনি আমি। আপনার সাথে আমার সময় কাটাতে ভালো লাগতো মানে এই না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি৷ সে তো আমি ডিপ্রেশনে ছিলাম বলে ঘুরতে ভালো লাগতো। আজরাও বলেছিল যখন যা লাগবে আপনাকে বলতে। কিন্তু এসবের যে অন্য মানে বের করবেন তা আমি বুঝিনি।
-আমার কথাটা অন্তত শোনো!
-কী বলবেন আপনি?
-ভালো আমি তোমাকেই বাসতাম। কিন্তু তুমি রাজি না হওয়াতে আজরাকে বিয়ে করতে হয় আমার।
-বিয়ে তো হয়েছেই?
-কিন্তু ভালোবাসা নেই।
-আপনার তরফ থেকে নেই। ও তো আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
-কিন্তু আমি তোমাকে।
-আপনি আজরাকে ঠকাতে চান?
-নিজেকেও আর কত ঠকাব বলো?

নিশ্চুপ হয়ে যায় নাবীহা। তার ফোন বেজে উঠে। মরিয়ম বেগম ফোন করেছেন। সে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে মরিয়ম বেগম তাকে বাসায় আসতে বলল। নাবীহা বলল, কিভাবে আসি এখন? আমি যে অফিসে আন্টি।

ইনতিসার সেকথা শুনে বলল, যাও। সমস্যা নেই।

নাবীহা আসবে বলে ফোন রাখলো। বেরুনোর সময় বলল সে, এসব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে যত তাড়াতাড়ি ঝেড়ে ফেলবেন ততই ভালো।

এই বলে নাবীহা চলে যায়। ইনতিসার বিড়বিড়িয়ে বলল- বেহায়ার তালিকায় যখন নাম তুলেই ফেলেছি, আরও বেহায়া হয়ে দেখাব৷ এতে যদি তোমাকে পাওয়া যায়। মন্দ কী!

.
.
.
মানতাশার কাছে সবটা শুনে বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে যায় নাবীহা। সে বলল, এতকিছু ঘটে গেল আর আমাকে তুই জানালি না?

মরিয়ম বেগম বললেন, সে কী আমরাও জানতাম! তোমাদের ডাকলাম। যাতে করে কথা বলে ওর মনটা ভালো হয় একটু।
-আজরাও আসবে?

বলতে বলতে আজরা চলে আসে। মরিয়ম বেগম চা, নাস্তা আনতে রান্নাঘরের দিকে যান। এদিকে কেন যেন আজরার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না নাবীহা। তাকে দেখলেই ইনতিসারের বলা কথাগুলো মনে পড়ছে। তাদের তিন বান্ধবীর সাথেই এসব ঘটছে কেন!

তারা মানতাশাকে শান্তনা দেয়। আজরা বলল, আমি ইনতিসারকে আরশানের সাথে কথা বলতে পারব।

মানতাশা বলল, কী বলবি তুই? আমি ও বাড়ি ফিরে যাব না আর। পারলে আমার ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে দিয়ে আসিস।
-মাথা গরম করিস না মানতাশা। বৈবাহিক সম্পর্ক এত ঠুংকো না যে হুট করেই ইতি টানবি।
-তাই বলে মার খেয়েও সংসার করতে হবে?
-আরশান ভাই যেভাবে চায় সেভাবে চলে দেখতি!
-ওর ভাবীর গোলাম হয়ে?

আজরা একটু থেমে বলল, এসবের জন্যই তোর সংসার ভাঙনের পথে। সংসারের ক্ষেত্রে মেয়েদের ধৈর্যশীল হতে হয়।
-তোর সাথে এমন হলে কী করতি?
-জেদ না করে স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করতাম।

নাবীহা বলল, আর স্বামী পর নারীর প্রতি আসক্ত হলে?

আজরা তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। নাবীহা আমতাআমতা করে বলল, এক্ষেত্রে কী করা উচিত জানতে চাইলাম। বা তুই হলে কী করতি?
-নিজের প্রতি আবার আসক্ত করতে চেষ্টা করতাম।
-না হলে?
-না হলে অবধি আমি ভাবতাম না। চেষ্টা থাকতো অব্যাহত। আর এসব কেন জিজ্ঞাসা করছিস বল তো! আরশান ভাই তো এমন না।

ক্ষীণস্বরে নাবীহা বলল, এমনেই!

এদিকে দিদার আলমের সামনে বসে রয়েছে এজাজ। মানতাশার সাথে দেখা করতে এসেছে সে। দিদার আলমের কাছে সব শুনে বলল, আপনারা এখনো এই বিষয়ে কিছু বলছেন না কেন আরশানকে?
-মানতাশা তা চায় না। আমিও নিশ্চুপ আছি। আরশান কী করতে চায় দেখছি। এরপর নিশ্চয় বলব।
-হু।

একটু থেমে তিনি বললেন, তোমার অভিশাপ লেগেছে নিশ্চয়। অবশ্য ওরই দোষ। ওকে পারলে ক্ষমা করে দিও বাবা।
-এমন কিছু না আঙ্কেল! আমি কোনো রাগ পুষিয়ে রাখিনি। ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু মানতাশার ফোন পেয়ে না এসে পারলাম না। আমি কী একটাবার ওর সাথে দেখা করতে পারি? আমি যে ওর প্রতি কোনো অভিমান জমিয়ে রাখিনি তা জানাতে চাই।
.
চলবে#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪০
#Saji_Afroz

মানতাশাকে এভাবে দেখে বুকটা ধুক করে উঠলো এজাজের। এত সুন্দরী মেয়েটার এ কী হাল হলো! আজরা ও নাবীহা এজাজকে বসতে বলে ড্রয়িংরুমে চলে গেল। এজাজ এসে চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসলো। মানতাশা বলল, তুমি?
-কথা বলতে এলাম তোমার সাথে।
-কটু কথা শোনাবে?

এজাজ মৃদু হেসে বলল, নাহ।

মানতাশা একটু থেমে বলল, আমি নিজের করা ভুলের জন্য সত্যিই অনুতপ্ত। ভুল শোধরানোর কোনো উপায় থাকলে তা করে নিতাম। এখন ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার।

মানতাশার চোখ বেয়ে পড়ছে পানি। এজাজ বলল, আমি তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ রাখিনি। এটা জানাতে আসলাম।
-এত কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। তবুও এটা বলছ?
-হয়তো আমিই তোমাকে ভালো রাখার যোগ্যতা অর্জন করিনি তখন। তাই দূরে সরে গেছ।

চোখের পানি মুছতে মুছতে মানতাশা বলল, তোমার মন অনেক বড়। তাই এটা বলছ তুমি।

আবারও থেমে যায় দু’জনে। এজাজ বলল, আমি আমেরিকা যাচ্ছি কিছু দিন বাদে।

তার কথা শুনে অবাক চোখে তাকায় মানতাশা। এজাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আরেকটু অপেক্ষা করলে আমাদের দিনটাও কত সুন্দর হত তাইনা?

নিজের মাথায় নিজেরই আঘাত করতে ইচ্ছে হলো মানতাশার। লোভে পড়ে আরশানকে বিয়ে করেছে সে। অথচ আজ এজাজও ধনী হতে চললো। কী হত একটু সবুর করলে! তাকে যে ভালোবাসতো কষ্ট দিয়েছে সে, নিজে কিভাবে সুখে থাকতে পারে! প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে।
.
.
.
নিজের রুমে বসে রয়েছে আরশান। মনটা খারাপ হয়ে আছে তার। মানতাশাকে মনে পড়ছে খুব বেশি। মেয়েটা সারাক্ষণ কানের পাশে ঘ্যানঘ্যান করতো। যখন সম্পর্ক ভালো ছিল তখন, আবার যখন খারাপ হয় তখনো। ভালোবেসেই নিজের বউ করে এই বাড়িতে নিয়ে আসে তাকে আরশান। ভেবেছিল অনেক সুখে তাদের দিনগুলো অতিবাহিত হবে। কিন্তু একটা বছরও সংসারটা টিকলো না।
-আসব?

আশফাকুল হোসাইনকে দেখে আরশান বলল, এসো ভাইয়া।

তিনি এসে আরশানের পাশে বসতে বসতে বললেন-
তোর ভাবী বলছিল, তুই নাকি মানতাশাকে ডিভোর্স দিচ্ছিস?

আরশান অবাক হয়ে বলল, এমন কিছু তো আমি বলিনি।
-বলিসনি। কিন্তু না করবি না এটা আমি ভালোভাবেই জানি। যত যাই হোক, ভাবীর কথা শুনবি তুই। কিন্তু ভাবীর কথাতে বউ ছেড়ে দিবি?

আরশান গম্ভীরমুখে বলল, ওর দোষ আছে বলে ও দোষী।
-দোষ তোদের নেই?
-আমাদের?
-ও তোর স্ত্রী আরশান! আমি যেমন সবকিছু তোর ভাবীর উপরে ছেড়ে দিয়েছি, তুইও তো কিছুটা মানতাশার উপরে ছেড়ে দিতে পারতি। তাইনা?
-হ্যাঁ মানছি আমি প্রথমে চাপাচাপি করেছি। কিন্তু পরে ওকে সব সুযোগ সুবিধা আমি দিয়েছিলাম। যেটার অপব্যবহার করেছে ও।
-ও তোর বউ। পর কেউ না যে ভুল করলে শাস্তি দিবি। বুঝিয়ে বলবি!

মালিহা চলে আসে। সে বলল, খেতে আসো তোমরা।

মালিহাকে দেখে কথা থামায় তারা। তার সাথে খেতে গেল দু’জনেই।

.
.
.
-তুমিই বলো? আরশান ভাই কী এটা ঠিক করেছে?

আজরার সব কথা শুনে ইনতিসার বলল, এত কিছু হয়ে গেল আর আমি জানিও না! আরশান তো কখনো কিছু শেয়ার করেনি আমাকে।
-মানতাশাও না।
-আচ্ছা আমি কথা বলে দেখব ওর সঙ্গে।
-কোনো দরকার নেই! মানতাশাও এটা চায় না।
-তবে কী চায়? বিচ্ছেদ?
-এখন দু’জনেই রেগে আছে। কিছুদিন যাক। রাগ কমুক। ডিসিশন বদলাক ওদের। এরপর সাহায্য প্রয়োজন হলে নাহয় করব। ততদিন নীরব থাকুন।
-হুম।
.
.
.
অফিসের কাজে ব্যস্ত নাবীহা। আজরার ফোন আসে। সে রিসিভ করতেই আজরা বলল, ব্যস্ত তুই?
-একটু। বল কী বলবি?
-কাল আমার শাশুড়ীর জন্মদিন। ছোটখাটো একটা আয়োজন করতে চাচ্ছিলাম। আমি চাচ্ছি তুই আর মানতাশাও আসবি।

নাবীহা বলল, আমার অফিসে অনেক প্রেসার রে কাজের।
-সেসব ইনতিসার বুঝে নেবে। তোকে মানতাশাকে আনার দায়িত্ব দিচ্ছি। ওর মনটা কিছুটা হলেও ফ্রেশ হবে এখানে আসলে।
-কিন্তু…
-রাখছি আমি।

আজরা ফোন রাখে। নাবীহা পড়ে যায় চিন্তায়। ও বাড়ি যাওয়ার কোনো ইচ্ছে তার নেই। কিন্তু না গেলে আজরা অভিমান করবে।

পরেরদিন মানতাশাকে নিয়ে আজরার বাড়ি আসে নাবীহা। তাদের দেখে আজরার সাথে সাথে ইলারা জামানও বেশ খুশি হোন।
এদিকে নাবীহাকে দেখে ইনতিসার তার দিকে আড়চোখে তাকাতে থাকে। বিষয়টা নাবীহা বুঝতে পারে। তার ভালো লাগে না। মানতাশাকে নিয়ে রান্নাঘরে আসে সে আজরার কাছে। এখনো মেহমান আসতে শুরু করেনি। আগে করেই এসেছে তারা। নাবীহা আজরাকে সাহায্য করতে থাকে। খানিকবাদে আজরা বলল, তোরা ড্রয়িংরুমে গিয়ে বস। আমি ইনতিসারকে তার পোশাক দিয়ে আসি। আসলে ম্যাচিং করে পরব বলে উনার জন্যেও শপিং করেছি আমি।

এই বলে আজরা চলে যায়। মানতাশা তার পথের দিকে চেয়ে রয়েছে। নাবীহা বলল, কী ভাবছিস?
-ভাবছি আজরার এসব দেখে আমার মাঝে লোভের সৃষ্টি হয়েছিল। লোভ ছিল বলে হয়তো সব হারিয়েছি৷ আর আজরা? ভালোবাসা ছিল বলে আজও টিকে আছে সব।

তার কথা শুনে নাবীহা কিছু বলল না। আজরা যে ভালো নেই তা সে নিজেও জানেনা। যেদিন জানবে সেদিন কী হবে? আর জানবেও বা কেন! এসব জানতে দেবে না নাবীহা। ইনতিসারের থেকে দূরেই থাকবে সে।

এদিকে রুমে এসে ইনতিসারকে তৈরী দেখে আজরা বলল, আপনি রেডি হয়ে গেলেন?
-হু। ভালো লাগছে না বলো আমায়?
-কিন্তু আমি যে আপনার জন্য ম্যাচিং করে স্যুট এনেছিলাম।
-তাই! আমায় বলোনি তো।
-আচ্ছা আমি বের করে দিচ্ছি।

আজরাকে থামিয়ে ইনতিসার বলল, এখন আর বদলাতে ইচ্ছে করছে না। পরে কোথাও পরব সেটি।
-কিন্তু…
-ওহহো আজরা! চলো তো।

আজরার সাথে নিচে নেমে আসে ইনতিসার। তাদের দেখে নাবীহা অবাক হয়। ইনতিসার নাবীহার পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে স্যুট পরেছে। আজরার সামনেই সে এসব করতে শুরু করেছে!
.
.
.
-এসব কী শুনছি এজাজ? মানতাশার নাকি ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে?

মা এর কথা শুনে এজাজ বলল, তুমি কিভাবে জানলে?
-এসব কথা কী লুকিয়ে থাকে! যা হয়েছে বেশ হয়েছে ওই মেয়ের সাথে। কষ্ট কাকে বলে তারও বোঝা উচিত।
-আহ মা! থামো!
-কেন থামব? ও থেমেছিল? তবে আমি কেন থামব! জায়নামাজ এ বসে বসে ওর ক্ষতি চেয়েছি আমি। আল্লাহ আমার মনের আশা পূরণ করেছে। পঙ্গু হয়ে গেলে আরও বেশি খুশি হতাম।

এইবার চ্যাঁচিয়ে এজাজ বলল, কারো জন্য এমন কামনা তুমি কিভাবে করো মা? ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। এটাই যথেষ্ট নয় কী?
-মানে! ও তোর সাথে যোগাযোগ করেছে?
-হু।
মাথায় হাত দিয়ে আসমা আক্তার বললেন, হায় হায় হায়! সংসার ভেঙে এখন আবার আমার ছেলের গলায় ঝুলতে চাচ্ছে। নিশ্চয় তুই আমেরিকা যাবি শুনেছে সে।
-এমন কিছু…
-তুই আর ওই মেয়ের সাথে কথা বলবি না।

এজাজ কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়। পাশে থাকা এলিজার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, ভয় হচ্ছে! এজাজ আবার না এই মেয়ের ফাঁদে পা বাড়ায়!
.
.
.
কেক কাটার পর্ব শেষ হয়। অতিথিরা নাস্তা খেয়ে বেশ প্রশংসা করতে থাকে আজরার। সে নিজের হাতে হরেক রকমের নাস্তা বানিয়েছে।
ইনতিসার এক প্লেট নাস্তা নিয়ে নাবীহার কাছে আসলো। তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, কিছু খাচ্ছ না তুমি!
-খেয়েছি। সবার মতো আমিও আজরার প্রশংসা না করে পারলাম না। গুণবতী সে। আপনি আসলেই ভাগ্যবান।

ইনতিসার মৃদু হেসে বলল, যদি তোমাকে পাই তবেই হব ভাগ্যবান। এর আগে নয়!

নাবীহা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি আরশানকে দেখতে পায়। আরশান ভেতরে এসে এত মানুষকে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। সে এসেছিল ইনতিসারের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এখানে যে মানতাশার দেখা পাবে ভাবেনি। তাকে দেখেই ভয়ে মানতাশা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। মানুষের সামনে না আবার তামাশা করে বসে আরশান!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here