একমুঠো বসন্ত পর্ব -০৭+৮

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_৭

প্লেনটা বিশাল ঝাঁকুনি দিয়ে উড়া শুরু করলো। প্লেন যত উপরে উঠছে নিহিলার মনে ততো বিষন্নতা নেমে আসছে। এইতো পরিবারটাকে ছেড়ে যাচ্ছে। এখন চাইলেও আর মায়ের কাছে ছুটে যেতে পারবে না। তার এখন ইচ্ছে করছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতে যাতে একটু ভয়টা কমে কিন্তু তা তো আর সম্ভব না। এতদিন নিজের মনকে সবার সামনে শক্ত করে দেখালেও এখন আর পারছে না। আশ্চর্য! তার এমন কেন লাগছে! তার ইচ্ছে করছে নিচে অপেক্ষারত মানুষদেরকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে। ইচ্ছে করছে দৌড়ে প্লেন থেকে নেমে গিয়ে মানুষগুলোকে গিয়ে বলতে,’শোনো? আমি তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি কোথাও যাচ্ছি না।’ নিহিলা চোখ মুখ বন্ধ করে রইল। তার এমন অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা কেন আসছে! যা হচ্ছে তার জন্যই তো হচ্ছে।
পাড়ি জমালো এক ভিনদেশে নিহিলা। যেখানে তার একটা ফুফি ছাড়া আর কেউ নেই। তিনিও এখানকার স্থানীয়। তাও ভিডিও কলেই কয়েকবার কথা হয়েছিল। আর এক ভাইকে সে চোখের দেখাও দেখেনি। ফুপির সাথে এইবারই প্রথম দেখা হবে। ফুপি পালিয়ে বিয়ে করে এখানে এসেছিলো বিধায় আমান শেখের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। শুনেছে, ফুপির না-কি দুই ছেলে আরেক মেয়ে। তার কাজিনদের সাথেও তেমন ভাব নেই শুধু অরিন ছাড়া। প্রথমটা নিহিলার চারবছরের বড়ো। ভুলক্রমেও ছবিও দেখেনি নিহিলা আর পরের দুজন যমজ। তারা নিহিলারই একই বয়স। এদের মধ্যে শুধু মেয়েটা মানে অরিনের সাথে কয়েকবার ভিডিও কলে কথা হয়েছিল বিধায় একটু স্বস্তিবোধ হচ্ছে তাও খুব অল্প সময়ে যখন দেশের বাইরে আসবে বলেছে তখন থেকেই একটু আলাপ হয়েছে অরিনের সাথে যার ফলে একটু ভাব আছে কিন্তু কল আর সামনাসামনি অনেক তফাৎ। নিহিলা ভাবতে বসে গেল সে কী আদো ইনাদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে! মিশতে পারবে! আমান শেখ তার বোনের নামও সেই বাড়িতে শুনতে চায় না। তাই নিহিলা আগ বাড়িয়ে বলতে পারলো না যে তার ফুপির সাথেই সে থাকবে।
নিহিলা প্লেনের জানালা দিয়ে উঁকি দিল। কিছু দেখা যাচ্ছে না। মায়ের জন্য বড্ড মন পুড়ছে। রিহি, বড়ো বাবা, চাচী এই মানুষগুলোকে আর দেখবে আরো কতদিন পরে! সে কী আদো পারবে এমন অচেনা একটা জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে! কীভাবে থাকবে!

———-

আওয়াজ আর ঝাঁকুনি অনুভব হতেই চোখ খুলতেই দেখতে পেল প্লেন লেন্ড করছে। নিহিলা নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে নিল। একে একে সবাই নামতেই সেও সবার দেখাদেখি নেমে পড়লো। জাপান! স্বপ্নের দেশ তার! এই প্রথমবারের মতো দেশটার মাটিতে পা পড়লো তার। মনের ভেতরে ভেতরে উৎফুল্ল হচ্ছে কিন্তু পরক্ষনেই চারদিকে তাকিয়ে খুশিটা কেটে গিয়ে মনে ভয় বাসা বাধঁতে শুরু করল। সবাই নেমেই একেকজন একেকদিকে ছড়িয়ে পড়লো। সবাই যার যার আত্মীয় স্বজনদের সাথে চলে যেতেই নিহিলা দাঁড়িয়ে রইল। তার মাথায় এলো ফুপি নিতে আসবে। সে আশেপাশে তাকিয়ে এতো এতো অচেনা মানুষের ভিড়ে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিল। আচ্ছা? এখন যদি তার ফুপি তাকে নিতে না আসে? তবে? তবে সে কী করবে! সম্পূর্ণ একটা অচেনা দেশে! পরক্ষনেই নিহিলা নিজেকে শান্ত করলো। এমন অলুক্ষনে কথা সে কেন মাথায় আনছে! তিনি অবশ্যই নিতে আসবেন। নিহিলা নিজেকে শান্ত করে আরো এগিয়ে গেল। বাইরে প্রায় মানুষ যাত্রীদের উদ্দেশ্যে যার যার আত্মীয়স্বজনদের নাম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে আশার মানুষগুলোকে দেখে হাত নেড়ে হাসিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে।এসবের ভিড়ে নিহিলার নিজের জন্য কাউকে চোখে পড়লো না। আস্তে আস্তে জায়গাটা খালি হয়ে যাচ্ছে। তার মনে মনে ভয় বাসা বাধঁতে শুরু করেছে। যদি সত্যি সত্যি কেউ না নিতে আসে! তবে! নিহিলা নিজেকে শান্ত করে একটু এগিয়ে গিয়ে বসে রইল। তার ভীষণ রকম কান্না পাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষন পরে নিহিলার সামনে এক জোড়া পা এসে থামতেই সে উপরে চোখ না তুলেই নিজের ব্যাগটা আরো জোরালো ভাবে জড়িয়ে ধরলো। এখন ইনি যদি তাকে নিরুপায় ভেবে কিডন্যাপ করে ফেলে! এটা অস্বাভাবিক কিছু না।

“নিহিলা? এম আই রাইট?”

উক্ত ব্যক্তিটির মুখে নিজের নাম শুনে নিহিলা তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নাক টেনে উঠে দাঁড়ালো। উঠেই হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। এতক্ষনে তার কলিজায় পানি এলো বলে!

“হাই! আমি আহান। সম্পর্কে তোমার দুষ্ট কাজিন হবো। মানে অরিনের যমজ।”ছেলেটির ভাঙা ভাঙা কথা শুনে নিহিলা একটু স্বস্তি বোধ হলো। যাক সে প্রাণ ফিরে পেল।

“চলো, গাড়িতে উঠা যাক।” বলেই সে গাড়িতে উঠতে গিয়ে থেমে গেল।

“আচ্ছা? তুমি কাঁদছিলে কেন?”

নিহিলা কী বলবে ভেবে পেল না। নিহিলার কোনো জবাব না পেয়ে আহান হাসলো।
“আসবো না ভেবেছিলে? রাইট?”

আহানের কথা শুনে নিহিলা এদিক ওদিক তাকিয়ে কী কথা বলবে ভাবার মাঝেই আহান হুট্ করে মুখভঙ্গি পাল্টে নিহিলার একটু কাছে এগিয়ে আসলো।
“ধরো যদি এখন আমি তোমাকে বাসায় না নিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে চলে যায়?”

আহানের কথা শুনেই নিহিলা মাথা তুলে তাকালো। আহানের মুখভঙ্গি মুহূর্তের মধ্যে যেন পাল্টে গেল। নিহিলা ভয় পেল।
তার ভয়ার্ত চেহারা দেখে আহান হুট্ করেই জোরে হেসে দিল।
“হাহা, মজা করছিলাম।আমি অন্যদের সাথে করলেও তোমার সাথে করবো না। যদিও তুমিও খুব সুন্দরী বাট আমার আম্মাজান তোমাকে বিশ্বাস করে আনতে পাঠিয়েছে সেই মর্যাদা তো রাখতেই হবে। আর তাছাড়া তুমি তো এখানকার নও। বাঙালী। সো এতো বাড়াবাড়ি করবো না। হাহা।”

নিহিলা আহানের দিকে তাকালো। ছেলেটাকে তেমন একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। ছেলেটা কী আসলেই এতো খারাপ!

“হেহে, নিহি তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছো? আচ্ছা যাক, উঠে পড়ো গাড়িতে। তোমাকে দিয়ে এসে আমি বেরোবো। আমার কাজ আছে।”

———–
গাড়ি এসে থামলো এক সুন্দর বাড়ির সামনে। কী সুন্দর বাড়ি! এমন উন্নত দেশে একটা বাঙালি পরিবারের এমন সুন্দর বাড়ি! পরক্ষনেই নিহিলার মনে আসলো, বেশ অনেক বছর ধরে উনারা এখানে। বোধহয় সেই অনুসারে এমন দেশে এমন একটি বাড়ি অস্বাভাবিক কিছু না। নিহিলা শুনেছে, ফুপার তেমন কেউ ছিল না কিন্তু বাবার দেওয়া সম্পত্তি ছিল কিছু। ফুপিকে বিয়ে করে যখন বড়ো বাবারা ফুপিকে মেনে নেননি তখন ফুপি ভেঙে পড়েছিল। ঠিক তখনই তার ফুপা দেশের সম্পত্তি সব বিক্রি করে দিয়ে এখানে চলে এসে সুখের সংসার করেছিল। এসব কিছু নিহিলাকে তার মা রেহেনা বেগমই বলেছিলেন। তার মা আর বড়ো মা লুকিয়ে তার ফুপির সাথে যোগাযোগ রেখেছে। এসবকিছু আজ থেকে অনেকবছর আগের কথা। এতো বছরে এমন কয়েকটা বাড়ি করা স্বাভাবিক। নিহিলা নিজেই নিজের উত্তর বের করে ফেলল।
নিহিলার এতসব ভাবনার মাঝে আহান নিহিলার ব্যাগগুলো নামিয়ে দিল।
“তুমি বাসায় যাও, আমার কাজ আছে। এসে অনেক আড্ডা হবে। বাই নিহিলা।” বলেই আহান গাড়ি ফিরিয়ে চলে গেল। নিহিলা আহানের গাড়িটির দিকে তাকিয়ে ভাবলো, একটু ভদ্রতা দেখিয়ে ব্যাগগুলো নিয়েও দিল না। এখানে কী সবাই এমন! কই, নিহিলারা তো এমন নয়! তবে ছেলেটার মানুষের সাথে মেশার ক্ষমতা আছে বলতে হবে। নিহিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যাগগুলো কোনোমতে টেনে টেনে দরজার সামনে উপস্থিত হলো।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার নজরে দেখার অনুরোধ। )#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_৮

দরজা খুলে দিল এক সুন্দরী মধ্যবয়স্ক মহিলা। নিহিলা শুরুতেই চিনে নিল। বেশ কয়েকবার মায়েদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় নিহিলা দেখেছে ইনাকে। তিনি দরজা খুলেই নিহিলাকে টেনে নিল।

“আসসালামু আলাইকুম।” নিহিলা নিজেকে গুটিয়ে নিল। এখন ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।

“ওয়া আলাইকুমুস সালাম মা আসো আসো।” বলতে বলতেই তিনি নিহিলাকে জড়িয়ে নিলেন।

“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না এখনো। শেষ পর্যন্ত কত বছর পরে নিজের পরিবারের কাউকে কাছে পেলাম! কত বড়ো হয়ে গেছো! অথচ এতবছর পরে কাছে পেলাম।”

“তুমি আমার ভাইয়ের অস্তিত্ব মা। একদম ভাইয়ের মতো হয়েছো। কী মায়াবী! কেমন আছো?”

নিহিলা হাসার চেষ্টা করলো। তার ফুপির মতো এমন একজন কাছের মানুষের কাছ থেকে ‘তুমি’সম্বোধনটা ভালো লাগছে না।
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ফুপি। আমাকে আপনি ‘তুই’সম্বোধন করতে পারেন।”

“আচ্ছা,ভাইজান কেমন আছেন?” রিনা আহমেদ মলিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
নিহিলা তাকালো। সে বুঝতে পারলো মানুষটি অনেক গভীর থেকে কথাটা বলেছে।

“এইতো ভালো আছেন।”

“দেখছিস? আমি কী পাগল! তোকে এখানে দাঁড়িয়ে রেখেই কথা বলছি।” বলেই তিনি দরজার বাইরে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিহিলার দিকে তাকালো।

“আহান কই? পাজিটা তোকে বিরক্ত করেনি তো? আর ব্যাগগুলো তোকে দিয়েই আনিয়েছে।দেখেছিস ছেলেটার কাজ কারবার!” বলতে বলতেই তিনি কেউ একজনকে ডেকে নিহিলার ব্যাগগুলো উপরে রেখে আসতে বললেন।

“না না ফুপি। ব্যস্ত হবেন না। ভাইয়াটা আমাকে কোনো বিরক্ত করেনি। ”

“ভাইয়া না, আহান, তুই , রিহি, অরিন একই বয়সের। হয়ত ওখানে থাকলে আজকে তোদের মধ্যে অনেক সুন্দর একটা সম্পর্ক থাকতো!” বলেই রিনা আহমেদ এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

“আচ্ছা, অনেক ক্লান্ত তুই! যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে মা। তারপর আমি খাবার দিয়ে আসবো এরপর ঘুমিয়ে নিস্ ।”

“না না ফুপি। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো। এর আগে তোমার মোবাইলটা একটু দিবা? মা, বড়ো বাবাকে একটা খবর দেওয়া লাগবে।”

“আচ্ছা।” বলেই তিনি নিহিলাকে রুমে নিয়ে গেলেন।

————

ঘুম ভাঙলো জানালার কাছে কেউ একজনের পর্দা সরানোতে। নিহিলা চোখ মুখ কুঁচকে আবারো শুতে নিতেই রিনা আহমেদ ডাক দিলেন।

“রুম অন্ধকার করে এতক্ষন ঘুমালে চলবে? সেই সকালে এসেছিস এখন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। উপোস থেকে এতক্ষন ঘুমিয়ে আছিস! খুদা লাগেনি? উঠে পড়। কিছু খেয়ে দরকার হলে আবার শুইস।”

নিহিলার এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো সে তার বাড়িতে ছিল। ফুপির কণ্ঠস্বর শুনে ধারণা ভাঙলো। তার মনে হয়েছে সে বাড়িতে ঘুমিয়েছিল আর মা এসে পর্দা সরিয়ে দিচ্ছে। তার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল।

“নিহিলা?” রিনা আহমেদের ডাকে নিহিলার ধ্যান মগ্ন হলো। সে তাকাতেই তিনি হেসে এগিয়ে এসে নিহিলার মাথায় পরম আদরে হাত বুলিয়ে দিলেন।

“পরিবারের কথা মনে পড়ছে?”
নিহিলা চুপ রইল।

“আমি তো আছি। এখানে একদম নিজের মতো করে থাকবি। বাড়িতে নিজের মায়ের কাছে যা আবদার করতিস এখানেও আমার কাছে তাই করবি। মনে করবি আমি তোর আরেকটা মা।”

নিহিলা ‘হ্যাঁ-বোধক’ মাথা নাড়াতেই রিনা আহমেদ তাড়া দিলেন।

“উঠে পড়। নিচে সবাই খেতে বসেছে। অপেক্ষা করছে। আয়।” বলেই নিহিলাকে চোখ মুখ ধুতে বলে রিনা আহমেদ নিচে চলে গেল।

নিহিলা বেশ কিছু সময় চোখ মুখে পানি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে টেবিলের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি হলো। সবাই খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।

অরিন নিহিলাকে দেখেই টেবিল ছেড়ে দৌড়ে এগিয়ে এলো।

“আরে নিহিলা! কেমন আছো? তুমি তো ছবির থেকেও বাস্তবে আরো মায়াবী!”

“আলহামদুলিল্লাহ আছি। তুমিও সুন্দর। একদম পুতুলের মতো।”

“উহু, এটা তোমার সাথে মানায়। আচ্ছা? তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি?”

নিহিলা নিজেই আগ বাড়িয়ে অরিনকে জড়িয়ে নিল।
নিহিলা ভাবলো ছোটকাল থেকে এই দেশে থেকেও কী সুন্দর করে তারা বাংলা ভাষায় কথা বলছে। ফুপি হয়ত ভালোভাবেই ভাষার শিক্ষাটা দিয়েছে। সকালে আহানের কথা বলা দেখে মনে মনে ধারণা এসেছিল যে হয়ত সেই মায়ের কাছে থেকে শিখেছে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অরিনও পারে।

রিনা আহমেদ তাড়া দিতেই তারা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। টেবিলে আহান আর মধ্যবয়স্ক এক পুরুষ বসে আছে। ইনিই হয়ত তার ফুপির স্বামী মানে ফুপা। নিহিলা এগিয়ে গিয়ে মানুষটিকে সালাম দিল।

“এইতো বসে পড়ো মা। অবশেষে রিনা নিজের পরিবারের কাউকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটালো বলে! কেমন আছো মা? বাসায় সবাই কেমন আছেন?”

“এইতো আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ সবাই।”

“বসে পড়ো।” তিনি নিহিলাকে চেয়ারের দিকে ইশারা করলেন।

রিনা আহমেদ নিহিলার প্লেটে খাবার দিতে দিতে বলে উঠল,
“আমার ছোট ছেলেকে তো দেখেছিস। সকালে আনতে গিয়েছিল। পাজিটা তোরে ব্যাগ বহন করতে দিয়েছিল। এই সে। আহান।”

নিহিলা তাকাতেই আহানের সাথে চোখাচোখি হতেই আহান হাসলো।

“হ্যালো ভাইয়া।”

“উহু, আমাকে ভাইয়া ডেকো না। এটা তুমি রাহান ভাইয়ার জন্য তুলে রাখো। মা বলেছে আমরা একই বয়সের।”

“আচ্ছা।”

শফিক আহমেদ আহানের দিকে তাকালো,
“তোর মা যা বলছে সত্যি? অতিথিকে কীভাবে আপ্পায়ন করা লাগে জানিস না? সকালে ব্যাগটা নিজে এনে দিলে কী হতো!”

“ওহ বাবা, নিহিলার তো কোনো সমস্যা হয়নি। ও বললে আমি ঠিকই এনে দিতাম।” বলেই আহান নিহিলার দিকে তাকালো, “কী নিহিলা? তোমার সমস্যা হয়েছে?”

“না না, আমার সমস্যা হবে কেন!” বলেই নিহিলা খাবারের দিকে হাত বাড়ালো।

“আমার পরিবারকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। যদিও আনাফ নেই কিন্তু ও থাকলেও গম্ভীর। ও এদের সাথে যায় না। অফিসের কাজে অন্য জায়গায় গিয়েছে। এইবার পুরো পরিবারকে চিনে নিছিস। কোনো সংকোচ করবি না। যা লাগে বলবি।” রিনা আহমেদের কথায় নিহিলা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

“হ্যাঁ মা। মনে করো আজকে থেকে এই পরিবারের আরেক জন সদস্য তুমিও। যা লাগবে বিনা সংকোচে বলবে। অস্বস্তি আনবে না। অরিন আর তুমি একই ভার্সিটিতে পড়বে। আশা করি সমস্যা হবে না।”

“জি আঙ্কেল।”

“তোমার পরিবারের সাথে কথা হয়েছে?”

“জি।”

শফিক আহমেদ নিহিলার জবাব পেয়ে অরিনের দিকে তাকালো।

“তুমি বা আহান বিকালে গিয়ে নিহিলাকে কিছু কেনাকাটা করে দিয়ে আসিও। কয়েকদিনের ভেতর ক্লাস শুরু হবে। আপাতত কয়েকদিন ঘুরে দেখাইয়ো।”

অরিন হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়তেই শফিক আহমেদ হেসে নিহিলার দিকে তাকালো,

“আচ্ছা খেয়ে নাও।”

নিহিলা খেতে খেতে ভাবলো। মানুষগুলো কী ভালো অথচ সে দুমিনিট আগেও অস্বস্তিতে কীভাবে মানিয়ে নিবে ভাবছিল। যেমন ভেবেছিল তেমন মোটেও না। তার বড়ো বাবা কিনা এমন একটা সুন্দর পরিবারকে মেনে নিচ্ছে না! কী এমন দোষ করেছিল! ভাবতে গিয়েই নিহিলার ভাবনায় এলো, আচ্ছা ফুপি কী এরপর একবারও দেশে যায়নি? হয়ত কলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। ফুপিরও তো উচিত ছিল গিয়ে সরাসরি ভাইয়ের কাছে যাওয়া। তাহলে হয়ত ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। এতো বছরে এই ছেলেমেয়েদের দেখে বড়ো বাবা নিশ্চই ফিরিয়ে দিতে পারেন না।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। অগোছালো হচ্ছে কিন্তু কী করবো বলুন! রাইটিং ব্লকটা ভালোভাবে কাটিয়ে উঠতে পারছি না। যারা পড়েন একটু কষ্ট করে অগোছালো লেখাটার সাথে মানিয়ে নিন। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। চাইলেও পারছি না। পরিশেষে ভুলভ্রান্তির জন্য অগ্রীম ক্ষমাপ্রার্থী।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here