#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
।। পর্বঃ ১১।।
সূর্য ঢেলে সন্ধ্যা নেমেছে। চারিদিকে ধীরে ধীরে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। একসময় পুরোপুরি অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। এমনি এক সন্ধ্যায় এক টেবিলে বসে নাস্তা করছে সবাই। আজকে তেমন পেশেন্ট না থাকায় নর্মাল ডাক্তাররাই সামাল দিতে পেরেছে। তাই বাসায় একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছে আনাজ।
–‘ বাবা তুই মাত্রই কিছু দিন আগে বিয়ে করলি? আর সারাদিন এভাবে হাসপাতালে ছুটছিস, তোর একটা বউ এসেছে তাকেও তো একটু সময় দেওয়া উচিত তাই না? ‘
মিসেস.আয়নার কথায় সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ায় মি. আনন্দ আর আনজানা
–‘আসলেই ভাইয়া,ভাবি কতদিন থেকে এসে আছে। নিশ্চই একঘেয়েমি হয়ে গেছে। তার রিফ্রেশমেন্টের দরকার আছে।’
এতক্ষণ শান্ত মাথায় শুনছিলো আনাজ।
–‘তোমরা কেনো বুঝোনা আমার দিকটাও? আমি তো তাদের হেড তাই না? আচ্ছা আমি গেলাম। এট এনি চান্স যদি কোনো জরুরি কাজে আমাকে কল করে? তখন? ‘
–‘ঠিক আছে যাস না’
অভিমানের সুর তুলেন মিসেস. আয়না। মিসেস. আয়না রাগ করলেই আনাজ তার কাছে যেয়ে বসে। তার হাত দুটো ধরে বলে,
–‘উহু মা, রাগ করছো কেনো? আমি এমনি বলেছি তো।’
–‘আর শোন আমরা সিলেটে তোর দাদুবাড়ির ওই দিকে যাবো। তার তোরা এই ফাকে ঘুরতে পারবি।’
আয়না খানিকটা আহ্লাদী কন্ঠে বলেন।
–‘আ__হ্যা_হ্যা, আম্মু একদম ঠিক বলেছে ভাইয়া।’
আনজানা সম্মতি জানিয়ে বলে। ইয়ানা আর চুপ থাকতে পারেনা। শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
–‘আহা থাক না আম্মু। উনি অনেক ব্যস্ত থাকেন..’
আয়নার মুখে হাসির রেশ বিদ্যমান। অবশেষে তিনি আনাজকে বোঝাতে পেরেছেন।
তবে, মনটা ভিষণ রকমের খারাপ ইয়ানার। সে আনাজের কাছ থেকে এসব কখনোই এসপেক্টেশন রাখেনি। এই কয়েকদিন মনে প্রাণে চেষ্টা করেছে নিলয়কে ভোলার, কারণ নিলয়ই তো তাকে বলেছিলো, খামাখা তার জন্য কষ্ট না পেয়ে, তাকে ভুলে যেতে। সেটারই প্রয়াস চালাতে ব্যস্ত সে।
——-
ছাদে দাড়িয়ে আছে ইয়ানা। বাসায় থাকতে থাকতে আসলেই বিরক্ত সে। আনাজকে মেজাজ দেখিয়ে ছাদে চলে আসে সে৷ ছাদে থাকা দোলনাটায় আনমনে দোল খেয়ে চলছে সে।এক সময় দোলনা থেকে উঠে ছাদের ছোট বাগানটার পাশে দাড়িয়ে প্রাণখোলা সতেজতর নিঃশ্বাস নেয় সে। এখানের নিঃশ্বাস গুলোর সাথে ফুলের গন্ধের ছড়াছড়ি। বেলি ফুলের সুবাসটা ভালো লাগাটাকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণে। ফুলগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এমন সময় পিঠে কারো গরম নিঃশ্বাস পায় সে। পেছনের পানে চাইতেই আনাজের মুখ অবলোকিত হয়!
–‘আপনি ছাদে কেন আসলেন? ‘ (ইয়ানা)
–‘কেনো? নিষেধ আছে বুঝি? ‘ (আনাজ)
মুখে বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে চেয়ে থাকে ইয়ানা। এখন তার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আনাজের সাথে কথা বলার।
–‘কি ব্যাপার? বলতি শেষ?’
–‘কেনো বিয়ে করেছেন আমাকে? ‘
ইয়ানার ঝাঝ মেশানো কথায় নিজেকে সংযত রেখে হেসে হেসে বলে,
–‘কেনো? হঠাৎ এমন প্রশ্ন করার মানে কি?’
–‘আমি যেটা বলেছি তার উত্তর দিন’
রাগটা তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে ইয়ানার।
–‘এমনি__এমনিই হা হা হা’
আনাজের মুখে মিথ্যের হাসিটা স্পষ্ট বিদ্যমান।
–‘সরুন আপনি, একটা ফালতু লোক’
আনাজকে ধাক্কা দিয়ে নিচে যেতে নিলেই ইয়ানাকে হেঁচকা টানে তার বাহুদ্বয় চেপে ধরে আনাজ।
–‘ওকে ফাইন! জানতে চাচ্ছো তাই তো? এতো কৌতূহলে চাতক পাখির ন্যায় ছটফট করাই স্বাভাবিক। তাহলে শোনো,
সে দিন চেম্বারে তোমার হাইপার দেখানোর পর যখন চলে যাচ্ছিলে তখন একজনের সাথে ধাক্কা লেগেছিল, মনে আছে? তিনি আমার মা ছিলেন। তার এক দেখায় তোমাকে পছন্দ হয়ে যায়। এরপর আমাকেও বাধ্য হয়ে তোমার মতো মেয়েকে অর্ধাঙ্গিনী বানাতে হলো! আর হ্যা এই কথা যাতে তোমাকো না বলি, এটার জন্যও কড়া পারমিশন দিয়েছিলো। তাই এড়িয়ে এড়িয়ে চলছিলাম। কিন্তু তোমার মতো মেয়ের কাছে আমার বলতি বেশি দিন বন্ধ থাকেনি এবং জানতাম থাকবেও না!
গলা ঝেড়ে কথা গুলো বলে আনাজ। তারপর ছাদ থেকে তীব্র বেগে নেমে যায় সে। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে ইয়ানা। তার মুখে শত-শত রাগ অভিমান গুলো উপচে উপচে পড়ছে। চোখের পানি হয়ে। চোখের পাতাগুলো ভিজে একাকার! সে তো একটু হলেও ভেবেছিলো আনাজ তাকে ভালোবেসে পাগলামো করে বিয়ে করেছে। তাহলে আনাজের সদ্য দেখানো ভালোবাসা গুলো কি মিথ্যে? কেনো এসব মিথ্যে মোহ দেখালেন আনাজ? গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। চরম অসহায় হয়ে পড়েছে সে, এই নিষ্ঠুর নিয়তির কাছে।
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
।। পর্বঃ ১২।।
আনাজের শপিং মলে ইয়ানা। চারিদিক কোলাহলপূর্ণ। এতো ভিড় জমায়েতে ইয়ানার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে আনাজ। যেনো ছাড়লেই পালিয়ে নতুবা হারিয়ে যাবে ইয়ানা।
–‘হেই, আপনি এরকম ম্যানারলেসের মতো আমার হাত ধরে আছেন কেনো? আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? ‘
ইয়ানার কথায় ভ্রুক্ষেপহীনভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আনাজ।
–‘ সিম্পল, তোমার সেফটির জন্য ধরেছি। খুব চঞ্চল মেয়ে তুমি!’
আনাজের কথায় ইয়ানা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। এমনি সে চাচ্ছে আনাজকে ইগ্নোর করতে। সেই রাতের পর তার দিনগুলো একেকটা কঠিনভাবে কেটেছে। নিলয়ের জন্য ব্যর্থতা তাকে দহনে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিয়েছে। আনাজকেও ভালো লাগে না আর।
–‘কি হলো? কি ভাবছো? চলো!’
মনের গহীনে কখন যে হারিয়ে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি ইয়ানা। আনাজের কথায় হুশ ফিরে তার।
তার পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে শুরু করে সে। এক পর্যায়ে একটা মলের সামনে দাড়িয়ে একটা গাউন দেখতে থাকে সে। হালকা পেস্ট কালারের গাউনটায় সাদা সাদা স্টোন দিয়ে নিপুণ কারুকাজ করা। আকর্ষণীয় গাউনটা মন কেড়ে নিতে সক্ষম। ইয়ানা এদিক সেদিন নেড়ে পর্যবেক্ষণ করছে। এমন সময় আনাজ তার পাশে এসে দাড়ায়। সেলসম্যানকে বলে, সেটা প্যাক করে দিতে।
আনাজের কথা শুনে ইয়ানার চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম।
–‘সে কি! এই পনেরো হাজার টাকার গাউনটা আমার জন্য কিনছেন? ‘
–‘নোপ, আমার আরেক বউয়ের জন্য কিনছি’ চোয়াল শক্ত করে টাকা পে করতে করতে বলে আনাজ। আবার বলে,
–‘তেমাকে বলেছি না, যেগুলো ভালো লাগে নিবে। এরকম কাঙালের মতো চেয়ে দেখতে তো আর বলিনি!’
আনাজের কটাক্ষ করা কথায় আচ্ছা মতোই ঘায়েল হয়েছে ইয়ানা। আনাজ প্যাক নিয়ে এসে ইয়ানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার তার হাতটা টেনে ধরে,
–‘ওহ হ্যালো মিস্টার, এভাবে সারা পথ নিয়ে বেড়ালে মানুষ আমাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ভেবে বসবে তো!’ (ইয়ানা)
–‘তো? ভাবুক! তাদের তো আর বউ না, তাই না?’
আনাজের কথার উত্তর খুজে না পেয়ে অগত্যা ঠোট উল্টিয়ে দাড়িয়ে থাকে ইয়ানা।
——
ইয়ানাকে নিয়ে বাসায় ফিরছে আনাজ সব পছন্দের জিনিসগুলো শপিং করে দিয়েছে সে। ইয়ানা আনজানার জন্যেও কিছু জিনিস কিনেছে। নিশ্চই মেয়েটা খুশি হয়ে যাবে!
গাড়িতে বসে আনমনে একদিকে তাকিয়ে যাচ্ছে ইয়ানা। মুখ থেকে কোনো বুলি আওড়াচ্ছে না সে। আনাজের উপর ভিষণভাবে রেগে আছে সে। আনাজের পাশের ড্রাইভিং সিটে বসায় আনাজ বারবার আড়চোখে দেখছে ইয়ানাকে।
–‘কি হলো? গাড়ি থামালেন কেনো? ‘
আনাজ গাড়ি থামিয়ে দিতেই বলে ইয়ানা।
–‘তোমাকে ওই খালটায় ফেলে দিবো বলে।’
মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলে আনাজ। তারপর সিট থেকে বেড় হয়ে যায় সে। ইয়ানা ভাবতে থাকে,
–‘না জানি কি ধান্দাবাজিতে ব্যাস্ত হয়ে আছে ধান্দাবাজটা হুহ!’
খানিকবাদেই এসে পড়ে আনাজ। হাতে রক্তিম লাল ফুলের গুচ্ছ। খুব সুন্দর লাগছে গোলাপ গুলোকে। ইয়ানা দেখেও না দেখার ভান করে অন্যপানে চেয়ে থাকে।
–‘কি ব্যাপার? এখনো রাগ করে আছো?’
–‘এই ফুলের রক্তিম রঙকে হার মানিয়ে দিয়েছে তোমার রাগ আর লাজ মিশ্রিত সৌন্দর্য। তোমার মুখের শীতল চাহনি ফুল গুলোকে তুচ্ছ করে চলেছে। তুমিও ফুলগুলোর মতোই নিষ্পাপ। পার্থক্য এখানেই, এরা বাগানের বুকে থাকে আর তুমি এই বুকে’
নিজের বুকে ইয়ানার হাত নিয়ে বলে আনাজ। ইয়ানা তার আকষ্মিক কান্ডে রীতিমতো স্তব্ধ। এইতো সেদিনই না লোকটা বলল, তাকে পছন্দ করে না আবার আজকেই ফুল এনে দিচ্ছে?
ইয়ানার হাতে ফুলগুচ্ছ ধরিয়ে দিয়ে আনমনে ড্রাইভিং করতে থাকে আনাজ। ইয়ানা স্তব্ধভাবে এখনো চেয়ে আছে আনাজের দিকে। তাকে বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে বারংবার!
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
।। পর্বঃ ১৩।।
ঢাকা থেকে সিলেটের পথে পাড়ি জমিয়েছে আনাজ পরিবার। সবার মনের ভেতরে অন্যরকম আনন্দানুভূতির জোয়ার বয়ে চলছে। আনজানাও ভিষণ এক্সাইটেড, এতো দিন পর দাদু-দিদার কাছে যাবে বলে কথা! মনে মনে খুশিগুলো উপচে পড়ছে তার। ট্রেনের ডাবল সিটগুলোতে প্রথম সিটে আনাজের মা-বাবা, দ্বিতীয় সিটে আনাজ আর আনজানা। ইয়ানা সেচ্ছায় একা বসেছে শেষের সিটটায়। মনটা ভার হয়ে আছে তার। ট্রেনের জানালার দিকে তাকিয়ে ছুটে যাওয়া রাস্তা গুলোতে দেখছে। আজকের আবহাওয়া খুব ভালো, ফুরফুরে বাতাস আর আকাশের শুভ্র রঙের মেঘের ছড়াছড়িতে দিনটা স্নিগ্ধতায় ভরপুর।
ইয়ানা চায় না আনাজের সাথে কোনো প্রকারের হানিমুনে যেতে তবে বাবা-মার জন্য বাধ্য হচ্ছে। ইয়ানা জানালার পাশে চেয়ে থাকলেও তার সিক্স সেন্স তাকে বলছে আনাজ তার দিকে বারবার তাকাচ্ছে।
–‘কি ভাইয়া? এভাবে চোরের মতো লুকিয়ে চুড়িয়ে ভাবিকে কি দেখছিস? তোরই তো বউ। মনে হচ্ছে যেনো এক অন্য রমণীকে কৌতূহল ভরে দেখছিস!’
আনজানার ফিসফিসানিতে খানিকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় আনাজ।
–‘কি যা তা বলছিস? ওকে দেখলাম যে ঠিক আছে নাকি’
–‘তুই ওর সাথে যেয়ে বস গিয়ে। আই নেভার মাইন্ড’
আনজানার জোরাজোরিতে আনাজ বাধ্য হলো ইয়ানার পাশে এসে বসতে। ইয়ানা তারপাশে আনাজকে বসতে দেখেই হকচকিয়ে ওঠে।
–‘আপনি এখানে কেনো এলেন? ‘ (ইয়ানা)
–‘তোমার পারমিশন লাগতো বুঝি? ‘
–‘ইয়াপ! এই সিটটা এখন আমার দখলে সো, আমি বললে আপনি বসতে পারেন আদারওয়াইজ…
ইয়ানার কথা শেষ করতে না দিয়েই আনাজ বলে,
–‘এখানেও আর মাথা খেয়ো না, নাও শাট আপ ইওর মাউথ!’
আনাজের ধমকানিতে অন্যদিকে রেগে তাকিয়ে থাকে। এটা ট্রেন না হয়ে যদিও বাসায় হতো তবে নিশ্চিত সে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলতো। মনে মনে সে বলে,
–‘আপনার ভাগ্য খুব ভালো যে একথাটা ট্রেনের ভেতরে বলেছেন নাহলে যে আপনাকে কি করতাম…!’
—
কয়েক ঘন্টার জার্নি শেষে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌছে গেলো আনাজ পরিবার। সবার মুখে খুশি যেনো ধরছেই না! সবাই লাগেজ নিয়ে একে একে নিচে নামতে ব্যাস্ত। ইয়ানাকে সেই থেকে ধাক্কিয়ে চলছে আনাজ। মেয়েটা তার ঘাড়ের উপর এতোক্ষণ এটেসেটে ঘুমোচ্ছিলো। আনাজ বেশ এনজয় করেছে ব্যাপারটা।
–‘ইয়ানা, উঠবে না? এতোই ভালো লেগেছে আমার কোল? ‘
ইয়ানা একপাতা চোখ খুলতেই দেখে আনাজের কলার চেপে ধরে তার উপর ঘুমে মত্ত। নিমিষেই একরাশ লজ্জা চেপে ধরে তাকে। সাথে সাথে তার চোখের ঘুমগুলো কর্পূরের ন্যায় উড়ে যায়। আনাজের মুখশ্রী অবলোকন করতেই লক্ষ্যমান হয়, আনাজের মুখে প্রজ্বলিত হাসি।
এক পর্যায়ে নিজেকে ফ্রি করে ট্রেন থেকে নেমে যায় সে। নিচে যেয়ে আনজানা আর তার মা-বাবাকে দেখে। সবাই মিটিমিটি হাসছেন। এটা দেখে আরো লজ্জা পেয়ে যায় ইয়ানা।
—-
সবাই মিলে একটা অটোরিকশা ঠিক করে দাদুবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আর কিছুক্ষণের মাঝেই দাদু দিদার বাড়ি পৌছে যাবে তারা। এক সময় পৌছে যায় তাদের গ্রামে। অটোরিকশা গ্রামের ভেতরে যেতে পারবে না। রাস্তা ভালো না হওয়ার দরুন। তাই অগত্যাই হাটতে শুরু করে তারা। আনজানা দ্রুত হাটছে। তার দাদু দিদাকে দেখার তর সইছে না কিছুতেই। পিছে পিছে হাটছে ইয়ানা, আনাজ। ইয়ানা গ্রামগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করছে। কি অসাধারণ একটা গ্রাম। খানিক দূরেই বাচ্চা খেলছে। সাইডেই রয়েছে স্নিগ্ধ সুষমায় ভরা দিঘি। যেখানে হাঁসগুলো পরমানন্দে সাঁতরাতে ব্যস্ত। আবার মাঝে মাঝে এক দুইটা মাছরাঙা দিঘি থেকে ছো মেরে মাছ তুলে নিয়ে আসছে। ব্যাপারগুলো খুব ভালো লাগছে ইয়ানার। এমন সময় তার পাশে আনাজ এসে বলে,
–‘এই যে ম্যাডাম, আপনি কত পেছনে পড়ে আছেন তা দেখছেন? ‘
আনাজের কথায় ইয়ানা সামনে দৃষ্টি দিতেই দেখে, তাকে ছেড়ে সবাই অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।
–‘ওপপস্! মানে আসলে না..
–‘ হয়েছে আর কাহিনি সাজাতে হবে না, জলদি চলো’
ইয়ানার সাথে এক বেগে ছুটে চলছে ইয়ানা। এক সময় পৌছে যায় তাদের দাদু বাসায়। তারা প্রবেশ করলেই দাদা দিদুন খুশিতে চিল্লিয়ে বলেন,
–‘এই কে কই গেলি আনাজ আসছে’
সবাই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে । আনজানার আনন্দ ধরছে না। সে সবার আগে তার দাদা দিদুনকে জড়িয়ে ধরে।
সবার চোখ আটকে যায় ইয়ানার দিকে। আশে পাশের সবাই এক প্রকার ছুটে এসেছে ইয়ানাকে দেখতে। নতুন বউ বলে কথা! সবার মুখে প্রশংসার ঝড়।
— ‘এতো সুন্দরী একটা বউ, আসলেই আয়না আপার চয়েজ আছে’ সবাই বলাবলি করতে থাকে। এক সময় ইয়ানা তার দাদির পা ছুতে নিলেই তিনি বলেন,
–‘বেঁচে থাকো মা, লক্ষী মেয়ে একটা’
সবাই ফ্রেশ হতে চলে যায়। সাথে ইয়ানাও। শাড়ি পড়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। তার উপর আরো কাতান শাড়ি হওয়ায় গরমের মাত্রাটা বেড়ে গিয়েছে। শাড়ি চেঞ্জ করে থ্রিপিস পড়তে যায় সে। এমন সময় আনাজ বলে,
–‘এই তুমি এখানেও থ্রিপিস পড়বা? নো ওয়ে। এটা আমার দাদুবাড়ি। তারা তোমাকে থ্রিপিস পড়া দেখলে অন্যকিছুও মনে করতে পারে।’
–‘হোয়াট? দ্যাটস মিন, এই জঘন্য গরমে আমি শাড়ি পড়ে ঘুরবো? ‘
–‘হোয়াই নট? যাও এখন শাড়ি নিয়ে এসো গিয়ে।’
ইয়ানা অগত্যাই মুখ ফুলিয়ে শাড়ি নিতে চলে যায়। টশটশে নিল রঙের শাড়িটা পড়বে সে। মনে পড়ে যায় তার সে দিনের কথা। সেদিন নিলয়কে শেষবারের মতো দেখতে এই শাড়িটাই তো পড়েছিলো সে! নিলয়কে মনে পড়তেই বুকে চিনচিন করে তীব্র যন্ত্রণা উপলব্ধি করে সে,
চলবে,
চলবে,
[