একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব ১০

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
||পর্বঃ ১০||

🎀🎀🎀

বান্ধবীর সাথে বাড়ি ফিরছে আনজানা। সহাস্য মুখটা রোদে ঝিলমিলিয়ে সৌন্দর্যের রেশ একে যাচ্ছে বারেবারে। ফ্রেন্ডদের সাথে পার্কে গিয়েছিলো সে উদ্দেশ্য ঘুরাঘুরি। তারপর একদমে ফুচকা খেয়ে সবাই বাড়ি ফিরছে। ফ্রেন্ড সারকেল মানেই হাসা তাও আবার বিনা কারণে। তাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। তবে তাদের অজান্তেই একটা ছেলে ফলো করছে। তবে শুধু আনজানাকে। সবাই এমন হাসিঠাট্টায় মত্ত যে এসব খেয়াল করার সময় নেই। রেললাইনের উপর দিয়ে একযোগে হেঁটে চলছে সবাই। সবার হাতে হাতে কোন! খেতে খেতে গল্প করে চলছে। এমন সময় তাদের লক্ষ্যমান হয় একটা সুদর্শন যুবক তাদের সামনে এসে ফুল এ্যাটিটিউডে তার বাইকটা থামালো। ছেলেটার দৃষ্টি শুধু আনজানাতে। আনজানার সব ফ্রেন্ডগুলো ফেলফেল চাহনিতে চেয়ে রইল ছেলেটার দিকে।সবার বলতি বন্ধ করে দিয়েছে ছেলেটার সৌন্দর্য। গায়ে একটা মানানসই কোট পরিহিত সে।
একসময় ছেলেটা বাইক থেকে নেমে আসে। আনজানার দিক বরাবর এগুতে থাকে সে। তার সামনে এসেই দাড়িয়ে যায়। আনজানার ফ্রেন্ডগুলো এখনো চোখে চোখে গিলে খাচ্ছে ছেলেটাকে।

–‘আনজানা আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে বিয়ে করতে চাই। ডু ইউ এগ্রি উইথ মি?’

আনজানার সামনে হাটু গেড়ে বসে। হাতে একগুচ্ছ শুভ্র রঙের গোলাপ দিয়ে বলে সে। আনজানার দৃষ্টি শূন্য কি থেকে কি হয়ে গেলো! থমথমে বিষ্ময়কর চাহনি তার। সে এতো সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও আজ অবধি কারো কাছ থেকে কোনো প্রপোজাল পায়নি। পায়নি বললে ভুল হবে। তাকে দেওয়ার সাহসটাই তো কেউ করেনি। সে যে আস্ত বাঘিনী একটা। চেহারা দেখলে আদৌ বোঝা সম্ভব নয়।
আনজানাকে তার ফ্রেন্ডটা টোকা দিতে থাকে। তারা মনেপ্রাণে চাচ্ছে ছেলেটাকে আনজানা এক্সেপ্ট করুক। নিরবতার ঘোর ভেঙে আনজানা বলে,

–‘ শুভ্র রঙ কিসের সাইন জানেন আপনি? শুভ্র রঙ শান্তির প্রতিক। আর এভাবে আমাদের শান্তিটাকে নষ্ট করে দিয়ে শুভ্র রংকে অপমান করা হলো না? আর কোন এমন বুকের পাটা আপনি? এসেছেন প্রপোজ করতে। চিনেন আমাকে?’

ছেলেটা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে।

–‘ইউ নো হোয়াট, আমি আজ অবধি কাউকে প্রপোজ করিনি। বরং সবাই আমাকেই প্রপোজ করে আসছে। এক্সেপ্ট করিনি কজ আই লাভ ইউ! সাহস কি করে হয় তোমার, আদ্রকে রিজেক্ট করার? ‘

আনজানা কিছু বলতে নিবে তখনই ছেলেটা বলে,

–‘নো মোর এক্সকিউজ। আমি তোমাকে চুজ করেছি দ্যাট মিনস আমি তোমাকেই বিয়ে করছি।’

আদ্রর বাঁকা হাসিতে রীতিমতো শিউরে ওঠে আনজানা। বিষয়টাকে এড়িয়ে চলতে তার ফ্রেন্ডদের বলে,

–‘এই চলতো সবাই, এরকম লম্পট ছেলেদের এগুলা ছাড়া কোনো কাজই থাকে খালি পারলে রাস্তা ঘাটের মেয়েদের এভাবে হ্যারেজ আর টিজ করে।’

আনজানা সবাইকে নিয়ে চলতে নিলেই আনজানার হাত ধরে হেঁচকা টান দেয় আদ্র। গালে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দেয় আনজানাকে।

–‘একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলনি আনজানা? আমার প্রেস্টিজে এভাবে আঘাত হানার আগে অন্তত দশবার ভাবলে না?’

–‘এই লোক! সাহস কি করে হয় আপনার, একটা অচেনা মেয়ের গায়ে হাত তোলার? আর আপনাকে বিয়ে? হে হে হে ** অফফ!! ‘

আনজানা সব বান্ধবীদের নিয়ে মুহূর্তেই সেখান থেকে চলে যায়। আদ্র বিনিময়ে বাঁকা হাসি দেয়। মনে মনে বলে,

–‘কি ভাবলে আনজুপরি? এভাবে চিল্লিয়েই পার পেয়ে যাবে? আমিও আদ্র এলভিন তোমাকে বিয়ে করেই ছাড়বো! ‘

————————
–‘ভাবি জানো, আজকে বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম না? সেখান থেকে ফেরার সময় একটা বখাটেমার্কা ছেলে, সে কিনা এসে প্রপোজ করলো। আর যেইনা রিজেক্ট করলাম। যেনো তার পিত্তি জ্বলে উঠে। সাথে সাথে আমাকে চড় মেরে বসে। আমিও কি আর কম নাকি? হেব্বিরকম শাসিয়েছি।’
আনজানার কথা শুনে ইয়ানা বলে,

–‘একদম ঠিক করেছো। ওরকম বখাটেদের এভাবেই টাইট দিতে হয়। দরকার পরলে তোমার ভাইয়াকে বলিও। সে যেয়ে সলভ্ করে দিবে।’

–‘নাহ থাক এসব সিলি ম্যাটারে ভাইয়ার মতো ব্যাস্ত মানুষের কি আর সময় হয়? আর ওই বখাটেটা জ্বালানোর সুযোগ পাবে না।’

ইয়ানার সাথে কথা শেষ করে নিজের রুমে যায় ইয়ানা।শুয়ে আছে আনাজ। ইয়ানাকে দেখে আনাজ বলে,

–‘জলদি গেট লাগিয়ে এখানে এসো তো।’

ইয়ানা শুকনো ঢোক গিলে গেট লাগিয়ে দেয়। যেয়ে বলে,

–‘কি হলো আবার ? কি চাই?’

–‘আমার মাথাটা একটু চেপে দাও তো।’ (আনাজ)

-‘আমার কাছে জিজ্ঞেস করছেন মাথা টিপে দেওয়ার জন্য’

-‘নোপ! আমি তোমাকে অর্ডার করেছি। এখন জলদি চেপে দাও। ব্যাথায় মাথা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম!’

‘ওকে ওয়েট’ বলে, হাতের রিংটা খুলে নেয় ইয়ানা। এটা তার এঙ্গেন্জমেন্ট রিঙ। আনাজ পরিয়ে দিয়েছিলো। তারপর আস্তে আস্তে আলতো করে আনাজের মাথা চেপে দেয় ইয়ানা।

–এই মাথা ব্যাথাটাইতো আমার কাল ডেকে এনেছিল!
আনমনে বিড়বিড়িয়ে বলে ইয়ানা। আনাজের চোখ বন্ধ থাকলেও সব শুনতে পাচ্ছে সে।

— আমাকে বিয়ে করা তোমার কাল হয়ে দাড়ালো?

–আনফরচুনেটলি ইয়েস!

এবার চোখ খুলে ইয়ানার দিকে দৃষ্টি দেন আনাজ। ইয়ানার মুখে বিরক্তির আভাস। অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে রয়েছে সে। আনাজ এবার একটা দুষ্ট হাসি দেয়। ইয়ানার কমোড় ধরে তার দিকে ফেলে জড়িয়ে ধরে থাকে সে। ইয়ানা আনাজের আকষ্মিক কান্ডে স্তব্ধ হয়ে যায়। হার্টবিট যেনো মিস্ হয়ে গেলো! আনাজের দিকে দৃষ্টি দিতেই দেখে আনাজ তার দিকে তাকিয়ে। ইয়ানা একদম আনাজের বুকের উপর ঠোঁট বরাবর শুয়ে আছে। আনাজের ঠোঁটের দিকে তাকাতেই তার টকটকে গোলাপি অধরজোড়াকে জ্বলজ্বল করতে দেখে সে। ইয়ানার ইচ্ছে করছে এখুনি কামড়ে নিক। পড়ে নিজের ভাবনা গুলোকে সালাম জানিয়ে আনাজকে বলে,

–‘ধান্দাবাজের মাথায় ধান্দাবাজিতে ভরপুর। সরেন ‘
আনাজকে ইয়ানা ধাক্কা দিতে নিলেই, আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আনাজ। মুখের বাঁকা হাসিটা লেগেই আছে

–‘আগে সরি বলো,’ (আনাজ)

–‘আপনার মতো ধান্দাবাজকে সরি বলবো কোন দুঃখে?’

–‘তাহলে এই কথাটি বললে কেনো, যে আমার সাথে বিয়ে তোমার কাল ডেকে এনেছে? ‘

–‘ অভিয়াসলি এনেছে। জিবনটাকে…..

–‘হুশশশশ! নো মোর ওয়ার্ডস্।
ইয়ানার ঠোঁটে তর্জনী রেখে বলে আনাজ। ইয়ানার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। শুরু করেছে লোকটা?

চলবে,

(কালকের পর্ব ব্যস্ততার কারণে দিতে পারিনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার্হ দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here