একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব ৪১+৪২+৪৩

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৪১

–‘আমি আনজানাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই!’
আদ্রর এহেন কথায় ভ্যাবাচেকা হয়ে যান আনুজ। ভেতরে ভেতরে কিছুটা রেগেও যান। একে তো তিনি তার একমাত্র মেয়ের সাথে আদ্রর বিয়ে দিতে চাইছিলেন না। আনজানার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়ে দিতে বাধ্য হলেন তবে, শর্তটা এই যে আনজানার মাস্টার্স কামপ্লিট করার পর তবেই জামাইয়ের বাসায় যেতে পারবে। কিন্তু আদ্রর এমন দাবি তার পক্ষে মানা আদৌ সম্ভব নয়, আর সেটা আদ্রও ভালো করে জানে। এখন জানা সত্বেও এভাবে যদি নিয়ে যেতে চায় তাহলে অবশ্যই রেগে যাবেন।

–‘হোয়াট? দেখো বাবা তুমি এখন আমার জামাই আর তোমার ওপর রাগলে সেটা খারাপ দেখাবে। তাই ভালোভাবেই বলছি মেয়ের মাস্টার্স কাম্পিলিট না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।’

–‘কিন্তু বাবা, ও তো আমার সাথে থেকেও পড়াশোনা করতে পারে তাই নয় কি?’

–‘তা কেনো পারবে না? অবশ্যই পারবে, তবে আমার মতেরও একটা ব্যাপার আছে না? যেটাতে আমি সম্মতি দেই নি। তাছাড়া তোমাদের জোড়াজুড়িতে রেজিষ্ট্রেশন অব্দি সম্পর্কটা এগোলো নতুবা আমি সেটাও করতে দিতাম না!’

–‘দেখুন বাবা, আমি বুঝতে পারছি আপনি এতে রাজি নন। মেয়েকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে আপনার। একটাই মেয়ে কি-না! কিন্তু আপনি আমার ব্যাপারটাও বুঝুন, আমিও একা অনেক প্রবলেম ফেইস করি। আর মোটকথা আমি আনজুপরিকে ছাড়া এক দন্ড ঠিক থাকতে পারি না যে!’ (বিনয়ের সুরে আদ্র বলে)

–‘দেখো বাবা, এতে কিছু করার নেই। আর আমার মেয়েও তোমার সাথে যেতে রাজি নয়।’ (আনুজ)

–‘আপনি জিজ্ঞেস করেছেন আপনার মেয়েকে? সে কিসে রাজি? ‘ (আদ্র)

–‘না। তবে,ও রাজি থাকলে আমার কিছু করার থাকবে না।’

আদ্রর মুখে হাসি ঝলকিয়ে যায়। এক ছুটে চলে যায় আনজানার কাছে। এসব রুম থেকে শুনছিলো আনজানা। সে ভেবে কুল পাচ্ছে না এখন আদ্র আসলে কি উত্তর দেওয়া যাবে। মনটা তার আদ্রর সাথে থাকতে চাইছে আবার পরিবারকে ছাড়তেও ইচ্ছে করছে না। রীতিমতো গোলকধাঁধায় পড়ে গেলো আনজানা। আদ্র তার কাছে এসে আলতো করে হাত টেনে ড্রয়িংরুমের কাছে নিয়ে যায়।

–‘আনজানা ইটস ইয়োর ডিসিশান, তুমি কি করবে- আমার বাসায় উঠবে নাকি এখানেই থাকবে? ভেবে চিন্তে বলো! ‘
কি বলবে বুঝতে পারছে না আনজানা। অথচ সবার কৌতূহল চাহনি তার মাঝে আবদ্ধ! এক সময় আনজানা ঠোঁটজোড়া প্রসারিত করে বলতে শুরু করে।

–‘বাবা, আমরা তো লিগ্যালি হাজবেন্ড-ওয়াইফ তাই না? তহলে তো ওর সাথে থাকতে পারতাম…

শেষের কথাটা কোনোমতে বলে জিভ কামড়ে ধরে আনজানা। এই বুঝি বাবার কাছে ধমক খাবে! কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে আনুজ তার মাথায় হাত রেখে বলেন,

–‘আমি বুঝছি, তুইও আদ্রকে ছাড়া কষ্ট পাবি। তুই ইচ্ছে প্রকাশ করেছিস তোকে আর বাঁধা দেবো না। যাহ আদ্রর সাথে যেতে পারিস তুই, তবে মাঝেমাঝে এখানে না আসলে কিন্তু খবর আছে!’

খুশিতে চোখের কার্নিশে পানি এসে জড়ো হয় আনজানার। এটা কি সত্যিই তার বাবা? মুখে হাসি দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। বাবাও খুশি হয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দেন। মেয়ের কপালে চুমু খান।

–‘বাবা, তুমি চিন্তা করবে না। দু’দিন পরপর দেখা করতে আসবো হুম। নাহলে আমার জামাইয়ের এক দিন কি আমার একদিন।’

আনজানার কথায় উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে দেয়।

–‘দু’দিন পরপর আসতে হলে এমন জামাইয়ের বাড়ি যাওয়ার দরকার নাই ভাই! তুই এখানেই ভালো আছিস।’ (আনাজ)

–‘ভাইয়া.. আনাজের কথায় বিরক্ত হয়ে আনজানা বলে৷ সবাই আবার হাসিতে মশগুল হয়ে পড়ে।

———————————

ইয়ানার সাহায্যে লাগেজ প্যাক করে আদ্রর সাথে যাওয়ার জন্য রওনা হয় আনজানা। মনটা খারাপ যাচ্ছে। আনাজ ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পরছে, মুখে কৃত্রিম হাসিটা দৃশ্যমান। বেশি রাত হয়ে যাবে বিধায় আদ্র আর দেরী করতে চায় না। সবাইকে এক এক করে জড়িয়ে ধরার পর মা-বাবার থেকে দোআ নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। সবাই দাড়িয়ে আছে নিস্তব্ধতার সাথে। এমন কিছু হবে, তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না সবাই। অগত্যাই আনজানার জোরাজোরিতে যেতে দিতে হচ্ছে। আদ্রর সাথে গাড়ীতে উঠে পড়ে আনজানা। আরেকবার ভাবিকে জড়িয়ে ধরে। মন খারাপ থাকলেও কান্না আসছে না তার। যেহেতু ঢাকার মধ্যে বিয়ে হয়েছে খুব বেশি দূরে না। যখন ইচ্ছা একটা সিএনজি নিয়ে চলে আসতে পারবে। আর কথা তো দিয়েছেই দু’দিন পরপর দেখা করতে আসবে, তাহলে ক্ষতি কি? বরং ভালো লাগছে আদ্র বেচারাকে আর একা একা কষ্ট পেতে হবে না। এতো দিন ভালোই ভোগান্তির মাঝে জীবনযাপন করেছে। এখন তা ঘুচবে।
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৪২

ব্যালকোনিতে বিষন্নরূপে বসে আছে ইয়ানা। আনজানা যাওয়ার পর থেকে ভালো লাগছে না একটুও। এতোক্ষণ আনজানা থাকলে আড্ডা-হাসিতে সময়টা পেরিয়ে যেতো। আনজানা না থাকায় কেমন উদ্ভট ধরনের লাগছে। শাশুড়ীমা রোজদিন কার মতো জলদি শুয়ে পড়েছেন। বাসার সবার মন খারাপ আনজানার এভাবে চলে যাওয়ায়। মেয়েটা থাকলে এতোক্ষণ সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। না জানি আনজানাও কি অবস্থায় আছে। আয়না শুয়ে শুয়ে ভাবছেন তার মেয়ে যতোই ভালোবেসে বিয়ে করুক আর যতোই স্বামী ভক্ত হোক দিন শেষে পরিবারকেই মনে পড়বে। যতোই হোক রক্তের সম্পর্ক সবার সাথে। তাদেরকি আর চট করে ভোলা যায়? কালকে আনজানা যাওয়ার পর একবার কথা বলেছেন, এই। আজকে ফোন দিতে চাইলেও দিলেন না কি মনে করে। মেয়ের চলে যাওয়ায় তিনিও কষ্টের ভেতরে আছেন। আনুজের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। নাহ, তিনি ঘুমিয়ে গিয়েছেন। মেডিসিন নেওয়ার কারণে জলদি ঘুমিয়ে যান তিনি।

——–
আনাজ বাসায় আসতেই গেটটা খুলে দেয় ইয়ানা। আনাজ বরাবরের মতো ফিক করে হেসে ভেতরে ঢুকে। এপ্রোনটা আর ব্যাগটা ইয়ানার হাতে ধরিয়ে দেয়। মুখ ফুলিয়ে সেগুলো ভেতরে নিয়ে যায় ইয়ানা। আনাজ ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। ইয়ানা ডায়নিং রুমে এসে আনাজের ডিনারের ব্যাবস্থা করতে থাকে। খানিক বাদেই আনাজ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ডায়নিং রুমে আসে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,

–‘মা বাবা ঘুমিয়ে গিয়েছেন? ‘
–‘হু’ মুখ ফুলিয়ে উত্তর দেয় ইয়ানা।

আনাজ চশমাটা টেবিলের উপর রেখে বলে,
–‘একটা প্লেট কেনো? খাবে না তুমি? নাকি আগেই খেয়েছো? ‘
–‘ইচ্ছে করছে না।’
সন্দেহের নজরে ইয়ানার দিকে তাকায় আনাজ।

–‘খাবে না মানে? রাতের খাবারটা কতোটা ভ্যালুয়েবল জানো তুমি? রাতে আমাদের শরীরের যাবতীয়…..

আনাজকে থামিয়ে দিয়েই ইয়ানা বলে,

–‘আমি কি বলেছি আমাকে জ্ঞান দিতে? আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই বিধায় আমি খাচ্ছি না। আপনি জোড় খাটাচ্ছেন কেনো?’

–‘এই তুমি কি কোনো কারণে আমার উপর রাগ করেছো? ওয়েট আজকে কি কোনো বিশেষ দিন? উহু মনে পড়ছে না। দ্যান তুমি কি কিছু আনতে বলেছিলে যে ভুলে গিয়েছি? নাহ এরকম কিছুও মনে পড়ছে না তাহলে? ‘

–‘তাহলে কোনো কারণই না। এখন চ্যাচামেচি না করে খেতে বসো?’
ইয়ানা ভাত বাড়তে নিলেই আনাজ চেয়ার থেকে দাড়িয়ে যায়৷ অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,

–‘তুমি রাগি হলে আমি রাগি আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স। মাইন্ড ইট। তুমি যেহেতু খাবে না, তাহলে আমি একা একা খেলে সেটা আমার কাছে অন্যায় নয়তো খাওয়াটা আমার মন মেনে নিতে পারবে না।

–‘এগুলো সিনেমার মধ্যেই মানায় মি.আনাজ এহমাদ! গলার স্বর নিচু করে আর টাইম ওয়েস্ট না করে খেতে বসুন।’

–‘দ্যাটস্ নট এনি কাইন্ড অব ড্রামাটিক্যাল একশান ইউ নো। সো আমি খাচ্ছি না। দ্যাটস ফাইনাল।’

–‘ওকে ফাইন দ্যান কাউকে খাওয়া লাগবে না তাহলে। একটা রাত না খেলে কিছু হয় না,

চোখ টিপে ইয়ানা বলে। থতমত হয়ে যায় আনাজ। ইয়ানার হাত ধরে তার কাছে এনে বলে,

–‘না খাওয়িয়ে রাখবা?’
–‘তুমিই তো বললা খাবে না, এখন আমার দোষ না?’

–‘ওকে তাহলে আমি খাবো, আর তুমিও! ‘

সশব্দে হেসে উঠে ইয়ানা। বাধ্য হয়ে আনাজের সাথে খেতে বসতে হয়।

————————————

–‘ইয়ানা তোমার কি হয়েছে? আনজানার জন্য মন খারাপ করছো? ‘

ইয়ানার বেডের পাশে বসে আনাজ বলে্। সেই ইয়ানাকে কেমন মনমরা লাগছে। কেমন চুপসানো বলের মতো বসে রয়েছে৷ এরকম ব্যাবহারতো তেমন একটা করে নি ইয়ানা। বিয়ের এতো দিন হয়ে গেলো। তবে আজকে কি হয়েছে তার? বিষয়টা খোলাসা করতে ইয়ানাকে ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করে আনাজ। ইয়ানার মধ্যে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো না। আগের মতোই এক দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে বলে,

–‘আমি খুব একা ফিল করছি আনাজ!’

–‘আচ্ছা তাই বুঝি? আমি ননদ ভাবির ভালোবাসা দেখে বিষম খাচ্ছি তো। তো তুমি কি চাচ্ছো আরেকটা বিয়ে করে একটা সতীন এনে দিই? তার সাথে মজায় মজায় সময় কেটে যাবে?’
আনাজের কথায় রম্যের সুরটা স্পষ্ট। ইয়ানা চোাখ পাকিয়ে বলে,

–‘মোটেও রসিকতা করতে আসবেন না। আপনি এতোটা স্যাভেজ আর ধান্দাবাজ লোক কি বলবো! সব সময় নিজের ধান্দা খুঁজেন। আমি বুঝি না এরকম ধান্দাবাজ ডক্টর এতো ফেমাস কেনো!’

–‘ওহ, তাহলে তুমি ভাবছো তোমার মতো সবার উপর ধান্দাবাজি ফলাই? উহু মোটেও না। আমার সব ধান্দাবাজী তোমার উপর হে হে হে! ‘

আবার হাসতে শুরু করে আনাজ। ইয়ানা আবার মন খারাপ করে অন্যদিকে তাকাতেই থেমে যায় আনাজ। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,

–‘বাসার সদস্য বাড়ানোর ফন্দি আঁটছো?’

ইয়ানার মুখ হাসিতে ঝলমলিয়ে উঠে৷ আনাজকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে আলতো করে ঘুষি মেরে দেয়।
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৪৩

চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই কেটে গিয়েছে কয়েকটি দিন। আশ্বিন মাসের শুরুর দিকে আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ফালি ফালি শুভ্র রঙের মেঘগুলো ছড়াছড়ি করছে। প্রকৃতি প্রকৃতি তার আপন রূপ লাবণ্যে সজ্জিত। কাশফুলগুলো প্রকৃতির সৌন্দর্যতত্ত্ব বাড়িয়ে দিতে মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। স্নিগ্ধ সুষমায় কি অমায়িক একটা রূপের বিস্তর চতুর্দিকে। এমনই একটা প্রভাত প্রহরে আপনা ঘুমে নিমজ্জিত আনজানা। পাশে আদ্র। চোখ খুলে পিটপিটিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে তার ভালোবাসাকে। মুখের সেই মিষ্টি হাসি। যেটাতে বারংবার ঘায়েল হয়ে যায় আনজানা। আনজানার এলোমেলো চুলের আদলে আরো মিষ্টি লাগছে দেখতে। বাচ্চার মতো গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে চলছে আনজানা। ডান হাতটা কপালে গিয়ে ঠেকেছে। আস্তে করে হাতটা নিজের বুকের কাছে নিয়ে রাখে আদ্র। আদ্র ভাবে তার সুইট বউটার একটা কিউট ফটো তোলা যাক। ফোনটা কাবার্ডের উপর থেকে আনতে যায়। একপ্রকার পা টিপে টিপেই যায় আদ্র। এই মুহূর্তে তার আনজুপরির ঘুমটা ভাঙানোর ইচ্ছে নেই। আরো কিছুক্ষণের জন্য তার ঘুমন্ত মিষ্টি চেহারাটা উপভোগ করতে চায়। ফোনটা তুলে তার কাছে আসতেই আনজানাকে জাগ্রত দেখে ভ্যাবাচেকা হয়ে যায়। আনজানা তার দিকে অদ্ভুত চাহনি দিয়ে রয়েছে।

–‘আ…আনজু..পরি তুমি এতো জলদি উঠলে যে?’
অপ্রতিভ গলায় আড়ষ্টভাব নিয়ে বলে আদ্র। আনজানার চাহনিটা জোড়ালো হয়।

–‘সেটা বড় কথা নয়। তুমি ফোন নিয়ে কি করতে যাচ্ছিলে সেইটে বলো!’ক্ষীণ গলায় বলে আনজানা।

–‘ক__কই! কিছু না তো। আমি তো এমনি জাস্ট তোমার সুইটেস্ট মুখের স্ন্যাপ নিতে যাচ্ছিলাম!’

আনজানার দৃষ্টি আরো সন্দেহজনক হয়। খানিক বাদেই হেসে ফেলে সে। ডোজ খেয়ে যায় আদ্র। হঠাৎ আনজানার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দুগালে দেদারসে চুমু দিয়ে উঠে যায়। ব্যাপারটা এতোটাই দ্রুত হয়েছে যে আনজানা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।

–‘দূর হও শেইমলেস, বিচ!’ অপ্রতিভভাবে বলে আনজানা।
–‘উহু মানা করিও না। নাও ইউ আর মাইন, মাই পার্সোনাল প্রোপার্টি। কারো হস্তক্ষেপ চলবে না হে হে হে।’

–‘হোয়াট! তুমি আমাকে নিজের ব্যাবহারের সম্পদ মানো? ‘ (আনজানা).
–‘না না সেটা তো বো__ঝাতে চাইনি….’
আবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আদ্র। তার মুখটা দেখতে এতোটাই কিউট লাগছে যে আনজানা তাকে অবাক করে দিয়ে চটপট একটা চুমু খেয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় হেসে হেসে বলে যায় ‘আমিও পারি হে হে হে’ আবারও ডোজ খেয়ে যায় আদ্র। তবে মনে মনে লাড্ডু ফুটে! তবে মনের মধ্যে এক অন্যরকম আনন্দানুভূতি বয়ে যায়। যেটা অপ্রকাশযোগ্য।

—————————–

সকাল সকাল হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আনাজ। আয়না মাত্রই ঘুম থেকে উঠলেন। আজকে একটু দেরী হয়ে গিয়েছে। শিল্পীআপা এসে পড়েছেন। আনাজানা না থাকায় আরো জলদি আসেন তিনি। ইয়ানা কিচেন রুমে সবার জন্য নাস্তা তৈরিতে ব্যাতিব্যস্ত। ঘুৃম থেকে ওঠার পরও কেমন ক্লান্ত লাগছে শরীরটা। কোনো কাজে শক্তি পাচ্ছে না। তাও কোনোভাবে শিল্পী আপার করা রুটি গুলো সেঁকে চলছে। আনাজের কথায় এই বাসায় সকালে কোনো ভারী খাবার চলে না। পরোটাও না। ফ্যাট থাকায়। জিমে আলাদা ভাবে না গেলেও বাসায় নিজেকে ফিট রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে আনাজ। দুপুরবেলা বেশিরভাগ দিনেই স্যালাদ খেয়ে থাকে। ফ্যাট লো রাখতে। তার সাথে নিয়ম করে সকলকেই সকালে রুটি খেতে হয়। ইয়ানার অবশ্য তা দিয়ে হয় না। বাড়তি ভাবে ফলমূল খায়। খাওয়ার ব্যাপারে ইয়ানাকে একটু পেটুক টাইপ বললে ভুল হবে না, একদম আনাজের উল্টোটা।
আনাজ রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে। ইয়ানা সবাইকে ডাক দিয়ে এসে টেবিলে বসায়। আনাজ বারবার আড়চোখে ইয়ানাকে লক্ষ্য করে চলছে৷ ব্যাপারটা দেখেন শিল্পীবানু। তবে কিছু বলছেন না। সবাই এসে টেবিলে খেতে বসে। বরাবরের মতো ইয়ানা সার্ভ করতে উদ্যত হয়। সার্ভ শেষে সবার কথায় সেও সবার সাথে খেতে মশগুল হয়। খাবারের লোকমা মুখের কাছে তুলে নিতেই এক বিদঘুটে গন্ধ নাকে এসে লাগে। পাশে বসেই আনাজ খাচ্ছিলো। তার দিকে একবার লক্ষ্য করে। ওমনি গলা বেয়ে গলগল করে বমি করে দেয় আনাজের গায়ের উপর। প্রথমে একটু চমকে গেলেও পড়ে সামলে নেয় আনাজ। আয়নাও একটু অবাক-খুশি হয়ে ইয়ানার দিকে তাকান। সাথে সাথে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে তিনি আর শিল্পীবানু ইয়ানাকে ধরেন। আনাজের দিকে ইয়ানা কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে দেখে আনাজ একটুও বিভ্রান্ত হয় নি। বরং মুখটা হাস্যজ্বল! আয়নাকে দেখতে বলে আনাজ জলদি চেইঞ্জ হতে যায়। আয়না আর শিল্পীবানু ইয়ানাকে ধরে তার রুমের দিকে নিয়ে যান। শিল্পী বানু আর আয়না ঠোঁট টিপে মিটিমিটি হাসছেন। ইয়ানার সেদিকে লক্ষ্য নেই সে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত। ওয়াশরুমে যেয়ে ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আনাজ তার জন্য অপেক্ষা করছে। কেঁদে ফেলে ইয়ানা। আনাজের কাছে যেয়ে বলে,

–‘কত খারাপ আমি, আপনার জামাটাই নষ্ট করে দিলাম।’
আনাজ তার দু’কাঁধ ধরে হাসতে হাসতে বলে,

–‘তোমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষাকৃত ইয়ানা মাই জান! চলো আমার সাথে হসপিটালে।’

ইয়ানা কিছু বুঝতে না পেরে আনাজের দিকে তাকায়। দেখে আনাজ আর আয়না হাসিমুখে চোখে চোখে কিছু কথা বলছে। আনাজ তাকে ধরে ধরে গাড়িতে নিয়ে যেয়ে বসায়। এ সময় আয়না বলেন,

‘বউ মাকে দেখেশুনে নিয়ে যাস।’

খুব যত্নের সাথে গাড়িতে তুলে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়। আনাজ।

————————

—‘তুমি প্রেগন্যান্ট ইয়ানা!’ খুশিতে টগবগিয়ে বলে আনাজ। ইয়ানা বিষ্ময়ের চাহনিতে আনাজের দিকে তাকায়। সাথে সাথে তার তলপেটে হাত রাখে। টুপ করে নোনাজল তার চোখ থেকে বেড়িয়ে আসে। মুখে হাসিটা জ্বলজ্বল করছে।

–‘আ__নাজ সত্যি? আমি মা হতে চলেছি? ‘

–‘অভিয়াসলি মাই লাভ! প্রথমেই ধারনা করতে পেরেছিলাম। ব্যাপারটা শিওর হতে তোমার প্রেগন্যানসি টেস্ট করালাম।দেখলাম তুমি কনসিভ করেছো!’

খুশিতে আনাজকে জড়িয়ে ধরে ইয়ানা। চোখ থেকে এখনো জল গড়িয়ে পড়ছে। মাতৃত্বের মতো সুখ আর হয় না। ইয়ানার কপালে চুমু খায় আনাজ। ইয়ানাকে তার মেইন সিটটায় বসিয়ে দিয়ে নিচে বসে আনাজ। তার হাতদুটো ধরে ইয়ানার পেটের কাছে সাবধানতার সাথে মাথা রাখে। তারপর আলতো করে পেটে ঠোটযুগল লাগিয় চুমো একে দিয়ে বলে,

–‘আমার সন্তানকে আমি প্রথম কিস করলাম।’
ইয়ানা খুশি থামতেই চাইছে না। সে বলে ওঠে,

–‘প্রত্যেকটা মেয়েই এই দিনের অপেক্ষায় থাকে। এই সুখটা অপ্রকাশ্য। কথাই ফিকে পড়ে যাবে।’

–‘হুম। এখন থেকে আমারও তো বাবা বলে কিছু কর্তব্য আছে। তাই ভাবছি, তোমাকে টাইম বেশি দিবো।?’

–‘আওওও! আমার বেইবির ওভারপ্রোটেক্টিভ বাবা।’

আনাজের সাথে নাকে নাক ঘষে বলে ইয়ানা।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here