১.
দশ কেজি ওজনের ভারী লেহেঙ্গা পড়ে ফিল্মস্টার আলেয়া ভাটের সাজে নূর ভাইয়ার সাথে বসে আছি রেজিস্ট্রি অফিসে। দীর্ঘ তিন বছর পর নূর ভাইয়ার সাথে দেখা। দুজনই রেজিস্ট্রি অফিসে পাশাপাশি বসে আছি। নূর ভাইয়া আমাকে জোর করে কলেজ হোস্টেল থেকে উঠিয়ে এনেছে। নূর ভাইয়ার ভয়ে হোস্টেল ম্যানাজার সহ আদার’স ম্যাম এন্ড স্টুডেন্টেরা ঢকঢক করে কাঁপছিলো। কেউ উনাকে বাঁধা দেওয়ার সাহস যোগাতে পারছিলো নি। হি ইজ সো ডেন্জ্ঞারেচ। রাগলে পুরো এ্যাটম বোম হয়ে যায়। বোম ব্লাস্টের ভয়ে কেউ সামনে এগুতে চায় না। ধবধবে সাদা শরীরটা তখন রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। নীলাভ চোখ জোড়া থেকে আগুনের ফুলকি বের হয়। ওহ্ মাই গড, ওহ্ মাই গড্ হি ইজ সো ডেন্জারেচ। উনার অগ্নিরূপ তখন বড় বড় মাফিয়াদের ও হার মানায়।
যাই হোক, আমাকে তুলে আনার মূল মোটিভটাই হলো আমাকে বিয়ে করা। এখনই নাকি আমাকে এই ডেন্জ্ঞারেচ লোকটা বিয়ে করবে। স্বাক্ষী হিসেবে উনার দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড আছে। একজন মেয়ে ফ্রেন্ড আর একজন ছেলে ফ্রেন্ড। নায়রা আপু মানে নূর ভাইয়ার মেয়ে ফ্রেন্ড আমাকে দুই ঘন্টা যাবত সাজিয়েছে। এক্টা জিনিস আমার মাথায় ঢুকছে না। এই ইডিয়ট নূরটা কি আগে থেকেই সব প্ল্যানিং করে রেখেছিলো? না মানে লেহেঙ্গা, গহনা, সাজের সরন্জ্ঞাম সব হাজির করে রেখেছে তো তাই বললাম। প্ল্যান মাফিক আমাকে জোর জবরদস্তি করে উঠিয়ে এনে বউয়ের সাজে সাজিয়ে একদম পরিপাঠি বিয়ে করার দারুন ছক কষেছে এই ইডিয়ট নূর।
আটা,ময়দা, সুজি মেখে আমাকে একদম ধবধবে হুলো বিড়াল বানিয়ে ছেড়েছে। চেহারার গঠন ভালো বলে ফিল্মস্টার আলেয়া ভাটের চেয়ে কম সুন্দুরী লাগছে না আমাকে। শ্যামলা ত্বকটা কেমন ফর্সা হয়ে গেছে। অথচ আমি কেঁদে কেটে সব সাজ নষ্ট করে ফেলছি। খুব জোরে জোরে চিল্লিয়ে কাঁদছি। হাত, পা ছুড়াছুড়ি করে কাঁদছি। এতে কোনো লাভ হচ্ছে না মনে হয়। নূর ভাইয়া এবং উনার ফ্রেন্ডরা কোনো টু শব্দ ও করছে না। নাক কুঁচকে বিরক্তি ও প্রকাশ করছে না। এর ঠিকঠাক কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। যেভাবে আমি চিল্লাচ্ছি আমার মনে হয় না কোনো সুস্থ মানুষ আমার আশেপাশে থাকবে বলে কিন্তু না এই নূর ভাইয়া তো উল্টে আমার সাথে চিপকে বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে আমার হাত দুটো জড়ো করে উনার এক হাত দিয়ে মুঠ করে ধরে রেখেছে। যেনো আমি হাত ছুড়াছুড়ি করতে না পারি। উনি বিরক্ত হয়ে আমার কানের নিচে দুটো ঠাটিয়ে দিবে তা না আমার দিকে চেয়ে চেয়ে কেমন দাঁত বের করে হাসছে। অদ্ভুত এক হাসি। যাকে বলে রহস্যময়ী হাসি। আজব, এই হাসির কারণ আমি বুঝছি না। এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসার কি হলো? আমি কি কোনো ভিন গ্রহের প্রাণী নাকি এলিয়েন? না এভাবে আর চলতে দেওয়া যাচ্ছে না। এ হাসির কারণ আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। আমি কান্না থামিয়ে গলাটা ঝাঁকিয়ে নূর ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা ফিসফিসিয়ে বললাম,,,,,,
—-“আপনি কি পাগল হইছেন? এভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসছেন কেনো? মানে বুঝলাম না। মানুষ তো কানের কাছে এমন ঘ্যান ঘ্যান শুনলে বিরক্তি প্রকাশ করে। কমচে কম এক্টা হলে ও কানের নিচে বাজিয়ে দেয়। বাট আপনার কোনো রিয়েকশান ই দেখছি না! আপনার কি মনে হচ্ছে না আপনি এলিয়েনদের মতো আচরণ করছেন?”
নূর ভাইয়া আচমকাই আমার হাত দুটো ছেড়ে শাহরুখ খানের মতো এক্টা ভাব নিয়ে কলারটা এক্টু ঝাঁকিয়ে দুই কানের ভিতর থেকে দুটো তুলো বের করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“হুম। এবার বলো কি বলছিলে?”
আমি তো উনার কান্ড দেখে উগান্ডা থেকে ফ্রীতে দুইবার ঘুরে এসেছি। চোখ দুটো বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে আমার। আমি মুখটা হা করে মনে মনে বিড়বিড় করে বলছি,,,,,,
—-“যাহ্ শালা। এ কি হলো? বেটা দেখছি আগে থেকেই সেইফটি কার্ড সাথে নিয়ে রেখেছে। ফাজিলটা দেখছি আমার থেকে ও দু কদম এগিয়ে। তাই তো বলি, এওো বদরাগী ছেলেটা কিভাবে কানের কাছে এমন ঘ্যান ঘ্যান সহ্য করছে। নাহ্ এই বেটার সাথে চিল্লিয়ে পারা যাবে না। একচুয়েলি কিছু করেই পারা যাবে না। এই ফাজিল নূরের সাথে আমি কখনো পেরে উঠব না। এখন বরং চুপচাপ বিয়েটা করে নেই। যা হবার পরে হবে।”
নূর ভাইয়া আমার দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আমাকে। বেটা লুচ্চা। ইচ্ছে করছে নীল চোখ দুটো বের করে মার্বেল খেলতে। এতে অন্তত এক্টা খেলা হলে ও শিখতে পারব। হোক সেটা খারাপ খেলা। বাট খেলা তো খেলাই। নূর ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বাঁকা হেসে বলল,,,,,
—-“আর ইউ রেডি টু মেরি মি মিস চাঁদ? অবশ্য তুমি রেডি থাকো বা না থাকো এতে আমার কী? আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার। আই উয়িল মেরি ইউ রাইট নাও। ওকে? আই উয়িল নট লিসেন টু এ্যানি অফ ইউর প্রোহিভিশানস।”
কথাগুলো একটানা বলে নূর ভাইয়া রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে লাল মলাটের খাতাটা ছিনিয়ে এনে আমার সামনে ধরল। সাথে এক্টা পেন এনে আমার হাতে গুজে দিলো। চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“এক্ষনি এখানে সাইন করবে। না হয় তিন বছর আমার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়ানোর প্রতিশোধ কড়ায় গন্ডায় তুলব। এক বছরের জন্য দেশের বাইরে ছিলাম বলে তুমি আমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে পালাতে পেরেছ। দেশে ফিরেই তোমাকে খুঁজতে নেমেছি। ইউ নো হোয়াট। আ’ম সো টেরিবেল। সো কুইকলি সাইন দিস পেপার।”
আমি চোখে হাজারো নোনাজল নিয়ে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখে স্পষ্ট করুণ আকুতি বুঝা যাচ্ছে। ইন দিস টাইম নূর ভাইয়া এসব চোখের ভাষা বুঝার মোডে নেই। এসব বুঝার জন্য মুড জিনিসটা খুব ম্যাটার করে। বিশেষ করে মনের ভাষা এবং চোখের ভাষা বুঝার জন্য আই থিংক মোড জিনিসটা খুব এসেন্সিয়াল। ছলছল চোখে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,
—-“আমি এই বিয়েটা করতে চাই না নূর ভাইয়া। প্লিজ লেট মি গো। এভাবে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিও না। আই হেভ জাস্ট টুয়েনটি এয়ান ইয়ারস ওল্ড। আমার অনেক স্বপ্ন পূরণ করা বাকি আছে। আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না।”
নূর ভাইয়া চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“বিয়ের পরে ও তুমি স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে চাঁদ। এসব প্রাচীন আমলের কথা তোমার মুখে মানায় না। তাছাড়া আমি জাস্ট তোমাকে কোর্ট ম্যারেজ করে রাখব। আমার পরিবারের কেউ ই এই ব্যাপারে কিছু জানতে পারবে না। আমি এখনই তোমার থেকে স্বামীর অধিকার চাচ্ছি না ওকে? সো ইউ কেন এসোর্ড।”
আমি কিছুতেই নূর ভাইয়ার কথা শুনতে রাজি না। পেন টা হাতে তুলে আবার ফেলে দিয়েছি। কিছুতেই আমি ঐ পেপারে সাইন করব না। নূর ভাইয়া বাঘের মতো হুংকার দিয়ে পেনটা টেবিলের তলা থেকে তুলে আমার হাতে জোর করে ধরিয়ে দিচ্ছে আর চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,
—-“কলমটা ধরো বলছি। আমাকে হিংস্র হতে বাধ্য করো না চাঁদ। এই বিয়েতে আমাদের দুজনের ই মঙ্গল। তুমি শুধু আমার চাঁদ। আর কারো না। আমি তোমাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসি চাঁদ। আমি থাকতে তুমি অন্য কারো হতে পারো না। জানি না কোন ভুলে তুমি আমাকে তিন বছর আগে ছেড়ে চলে এসেছিলে। এক বছরের মাথায় দেশে ফিরে টানা দু দুটো বছর ধরে আমি তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছি চাঁদ। ফাইনালী আজ তোমাকে খুঁজে পেলাম। আমার দিকে এক্টু চেয়ে দেখো না চাঁদ। শরীরের কতোটা অবনতি হয়েছে আমার। তিন বছরে কোনো এক্টা বেলা আমি ঠিকমতো খেয়েছি কিনা আই ডোন্ট নো। ঘুমের ঔষধ খেয়ে চোখ গুলোকে বিশ্রাম দিয়েছি। স্মোকিং করে পেটের ক্ষুধা মিটিয়েছি। কিছুতেই তোমাকে আমি আর হারাতে দেবো না চাঁদ। আমি এক্টু শান্তি চাই। নিশ্চিন্তে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই। প্লিজ তুমি আমাকে নিরাশ করো না। আই হেভ নিড সাম রেস্ট। প্লিজ ডোন্ট ইগনোর মি এন্ড মেইক মি ইউরস রাইট নাও।”
আমি টলমল চোখে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এই মানুষটা সত্যিই আমাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু পরিস্থিতির কাছে আমার হাত পা বাঁধা। আমি চাইলে ও নূর ভাইয়ার হতে পারি না। এতে প্রায় অনেক জনের ই রুহের হায় লাগবে। নূর ভাইয়া আমার সাথে থাকলে জিন্দিগিতে ও হ্যাপি হবে না। আমি হাতে ধরে আমার ভালোবাসার মানুষটার জীবনটা ধ্বংস করে দিতে পারি না। কিছুতেই আমি এই বিয়ে করতে পারব না।
নূর ভাইয়া ও নাছোদবান্দা। জোর করে আমার হাত ধরে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়ে নিলো। নিজের লেখা দেখে নিজেই হার্ট ফেইল করছি। এক্টা জীবন্ত তেলাপোকাকে কালো কালির কৌটায় ছেড়ে দিয়ে ভালো করে কালো কালিতে চুবিয়ে এক্টা সাদা কাগজে ছেড়ে দিলে যেমন বিচ্ছিরি আঁকি বুঁকি হবে আমার হাতের লিখাটা ও এই মুহূর্তে এতোটাই বিচ্ছিরি লাগছে। ছিঃ রাভিশ, জঘন্য, ওয়াক, থু। পড়ালেখার এই গুন রইল আমার? নাও আ’ম স্টাডি ইন বিবিএ থার্ড ইয়ার। নিজের বিয়েতে এতো বিচ্ছিরি ভাবে সাইন দিতে হবে আমি স্বপ্নে ও ভাবি নি। ছি ছি ছি লজ্জায় নাক, কান কাটা যাচ্ছে।
লাগাতাড় করতালির আওয়াজে আমার ধ্যান ভাঙ্গল। নূর ভাইয়া এবং উনার সাঙ্গ পাঙ্গরা দাঁত কেলিয়ে হাসছে আর করতালি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা ওদের নামে লিখে নিয়েছে। বিরক্ত লাগছে, খুব বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজেই গাড্ডা মারি। কি এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়লাম আমি। এই মুহূর্তে মামুর সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। তবে তা আদৌ সম্ভব না। নূর ভাইয়া আমার ফোনটা অলরেডি ছিনিয়ে নিয়েছে। স্বাদের ফোনটা আর কখনো হাতের কাছে পাবো কিনা তা ও বুঝতে পারছি না।
এর মাঝেই নূর ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে আমার সামনে থেকে রেজিস্ট্রি পেপারটা নিয়ে পেনটা হাতে তুলে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করছে আর বলছে,,,,,,
—–“ইয়েসসসস বিয়ে কমপ্লিট। খুশিতে আমার আরো একবার সাইন করত ইচ্ছে করছে। চাঁদ সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে গেলো। আর কেউ আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।”
নূর ভাইয়ার কথা শুনে আমার কান্নার স্রোত যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। কি জবাব দেবো আমি মামুকে? মামু যে আমার জন্য অন্য কাউকে ঠিক করে রেখেছে। তাহলে কি আমার জন্য মামুর সম্মান নষ্ট হবে? মামুর এতোদিনের সাহায্যের প্রতিদান কি আমি মামুর সম্মান নষ্ট করে দিবো? আমার কষ্টটা কেউ বুঝল না। আম্মু, আব্বু ও বুঝল না। তাই তো আমাকে ছেড়ে সেই ছোট বেলায় তাঁরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। তিন তিনটে বছর সবার থেকে দূরে থেকে ও শেষ রক্ষাটা করতে পারলাম না। সেই নূর ভাইয়ার ক্ষপ্পড়ে আবার পড়তে হলো। যাদের থেকে পিছু ছাড়াতে চাই, তারাই বেশি করে আমার পিছু তাড়া করে। আমার ভবিষ্যত আমি নিজ চোখে দেখতে পারছি। নূর ভাইয়ার পরিবার সত্যিটা জানলে আবার নতুন কোনো তুফান উঠবে। সবাই আমাকেই দোষ দিবে। বলবে যে, আমিই নূর ভাইয়াকে ফুসলিয়েছি। উনি কিভাবে আমার খোঁজ জানল তা আমার কাছে সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। এখন তো আমার পালিয়ে যাওয়ার সব রাস্তা ও বন্ধ হয়ে গেলো।
আচমকাই নূর ভাইয়া আমাকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,
—–“তুমি চিন্তা করো না চাঁদ। আমার পরিবার তোমাকে ঠিক মেনে নিবে। আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ তোমাকে খুব ভালোবাসে। তাছাড়া তুমি টেনশান করো না। আমি এতো শীঘ্রই বাড়িতে আমাদের বিয়ের কথাটা জানাব না। বড় ভাইয়ার বিয়ের পর আমি ফ্যামিলিতে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা জানাবো। তুমি এতোদিনে অনার্স, মাস্টার্স কমপ্লিট করে ফুল গ্রেজুয়েটেড হয়ে যাবে। তোমার সব স্বপ্ন আমি পূরণ করব চাঁদ।”
কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
—-“সবাই চোখে হাত দাও। পাঁচ মিনিটের আগে চোখ খুলবে না।”
নূর ভাইয়ার কথায় সবাই চোখে হাত দিয়ে ফেলল। নূর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে আচমকাই আমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। আমি চোখ বড় বড় করে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। নূর ভাইয়া ব্যস্ত আমার ঠোঁটের স্বাদ নিতে। আমি কোনো জোরাজুরি করছি না। শুধু চোখ দিয়ে জল ফেলছি। একচুয়েলি এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত, আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। প্রায় পাঁচ মিনিট পর নূর ভাইয়া আমার ঠোঁট জোড়া ছাড়ল। আমি মাথাটা নিচু করে রেখেছি। লোকটার দিকে তাকাতে এক্টু ও করছে না। লজ্জা থেকে নাকি ক্ষোভ থেকে সঠিক বুঝতে পারছি না।
নূর ভাইয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে পড়ল। বাকিরা চোখ থেকে হাত সরিয়ে নূর ভাইয়ার দিকে তাকালো। আমার হাত টেনে নূর ভাইয়া আমাকে ও দাঁড় করিয়ে দিলো। আমি কান্নাসিক্ত চোখে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। নূর ভাইয়া এক্টু ঝুঁকে আমার চোখের নোনাজল গুলো মুছে দিয়ে হুট করে আমাকে আধ কোলে তুলে নিলো। নূর ভাইয়া দরজার দিকে পা বাড়াচ্ছে আর উনার ফ্রেন্ডদের উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলছে,,,,,
—-“সামির, নায়রা….. স্বাক্ষীর জায়গায় সিগনেচার দিয়ে স্যারের বিল মিটিয়ে অফিসের বাইরে এসে দাঁড়া। আমি চাঁদকে হোস্টেল পৌঁছে দিয়ে আসছি।”
কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া আমাকে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বের হয়ে এক্টা খালি রিকশায় উঠে গেলো। আমি নিজেকে যথেষ্ট গুটিয়ে রেখেছি। নূর ভাইয়ার গাঁয়ের সাথে ঘেঁষতে চাইছি না। নূর ভাইয়া ব্যাপারটা আঁচ করে ডেবিল স্মাইল দিয়ে আমাকে আষ্টেপিষ্টে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,,,,
—-“আমার পিছু ছাড়ানোর চেষ্টা একদম করবে না চাঁদ। তুমি এখন আমার বিয়ে করা বউ। আমি তোমার গাঁয়ে টাচ করতে পারব এমনকি তোমার সাথে যা ইচ্ছা তা করতে পারব। সো ভালো হবে এটাই, যদি তুমি নিজেকে গুটিয়ে না রেখে আমাকে ভর করে বসো। এতে তুমি ব্যাথা ও পাবে না, আর গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার রিস্ক ও থাকবে না।”
আমি কিছু বললাম না। নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছাড়ছি। এবার এক্টু নিজের সাথে কথা বলতে চাই। আমি “নাহিমা আহমেদ চাঁদনী”। সবাই আদর করে আমাকে চাঁদ বলে ডাকে। আমার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন আমার আম্মু, আব্বু আগুনে পুড়ে মারা যায়। একচুয়েলি আমাদের বাড়িতে আগুন লেগেছিলো। সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়েছিলো। আমাদের ছোট্ট রাজপ্রাসাদটা এক নিমিষে শেষ হয়ে যায়। দুতলা বাড়িটা মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি পাশের বাড়িতে ছিলাম বলে আজ পর্যন্ত সুস্থ অবস্থায় শ্বাস নিচ্ছি। আমার আম্মু আব্বু ঐদিন অন দ্যা স্পটে মারা যায়। পাঁচ বছরের পুচকি ছিলাম বলে অতো শতো বুঝতে পারি নি। শুধু মামুর কান্না দেখে আমি ও এক্টু আধটু কেঁদেছিলাম। তখন থেকেই আমি ফুফুর বাড়িতে মানুষ হই। নূর ভাইয়া আমার ফুফাতো ভাই। নূর ভাইয়ারা দুই ভাই, এক বোন। উনাদের জয়েন ফ্যামিলি। উনার চাচারা ও উনাদের সাথে একই বাড়িতে থাকে। আমার ফুফুর পরিবারটা খুব হাসি, খুশি পরিবার আর খুব ভালো পরিবার। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু তিন বছর আগে আচমকাই আমি এক্টা সত্যির মুখোমুখি হই। সেই সত্যিটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই ঐদিন ভোর রাতে ঐ বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি। মামুর সাথে যোগাযোগ করে ঢাকা ছেড়ে রাজশাহী চলে আসি। মামুর বন্ধুর বাড়িতে। ঐখান থেকে রাজশাহীর প্রাইভেট ভার্সিটিতে এডমিট হই। এখন মামুই আমার সব দৈনন্দিন খরচ চালায়, সাথে পড়ার লেখার খরচ ও। মামু অস্ট্রেলিয়া থাকে। কবে দেশে ফিরবে ঠিক নেই। আম্মু, আব্বুর প্রতি খুব অভিযোগ জমে আছে আমার। ওরা নেই বলেই আমার লাইফটা এলোমেলো হয়ে গেলো। ইচ্ছে করছে চিল্লিয়ে বলতে,,,,,,
—–“আম্মু, আব্বুবুবুবুবু…….. কেনো আমাকে এতিম করে চলে গেলে? এভাবে আমাকে ছেড়ে যাওয়াটা কি খুব জরুরী ছিলো? উপর ওয়ালা কেনো আমার মাথার উপর থেকে এক এক করে ছায়াগুলো কেড়ে নিলো? এতোটা যন্ত্রণা আমি আর নিতে পারছি না। বুকের ভিতরটা কষ্টে ছেঁয়ে আছে। এক্টা সুস্থ, সুন্দর, পরিপূর্ণ লাইফ থেকে আমি বঞ্চিত হলাম।”
এর মাঝেই রিকশা এসে থেমে গেলো হোস্টেলের গেইটের সামনে। নূর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কিছু এক্টা বলতে নিলেই আমি ভারী লেহেঙ্গাটা দুহাতে তুলে গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে হোস্টেলের গেইটের ভিতর ঢুকে যাই।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পর্ব_২
#নিশাত_জাহান_নিশি
এর মাঝেই রিকশা এসে থেমে গেলো হোস্টেলের গেইটের সামনে। নূর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কিছু এক্টা বলতে নিলেই আমি ভারী লেহেঙ্গাটা দুহাতে তুলে গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে হোস্টেলের গেইটের ভিতর ঢুকে যাই।
হোস্টেলের ভিতরে পা রাখব আচমকাই মনে হলো আমি হাওয়ায় ভাসছি। বুঝতে আর দেরি হলো না আমাকে অলরেডি কেউ কোলে তুলে নিয়েছে। সেই কেউ টা আর অন্য কেউ না মিঃ নূর আবরার। জামাই বলে কথা হুটহাট বউকে কোলে তুলবে সেটা অবশ্য অবাক হওয়ার কিছুই না। উল্টে শোভনীয় এক্টা সেন্সিবেল ব্যাপার। আই থিংক সমাজে এর কোনো কুপ্রভাব পড়বে না। তাই তো হোস্টেল ভর্তি স্টুডেন্টরা দাঁত কেলিয়ে হাসছে। সবকটার ৩২ টা দাঁত আমি নিচ তলা থেকে স্পষ্ট দেখতে পারছি। অবশ্য আমার রুমমেট রুবাইয়া মেয়েটার হাতে গোনা ৩৪ টা দাঁত হবে। কারণ, মেয়েটার এক্সট্রা দুটো গেজ দাঁত আছে।
হোস্টেল ভর্তি স্টুডেন্টরা দাঁত কেলিয়ে হাসছে এতে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তবে আমার বেস্টু মারুর চিরল দাঁতের হাসিটা আমার ঠিক হজম হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে ওকে পাবলিক টয়লেটে নিয়ে চুবাতে। এখানে এতো হাসির কি আছে আজব! মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না এ আমার বেস্টু নাকি শত্রু? কোথায় এসে আমাকে এই জন্জ্ঞালটার হাত থেকে রক্ষা করবে তা না। উল্টে ঠোঁট দুটো ফাঁক করে খিটখিট করে ভেটকাচ্ছে। তবে এর লোভাতুর চাহনী আমার মোটে ও ভালো লাগছে না। নূর ভাইয়ার দিকে কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছে। এক্টু লম্বা, চূড়া, হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই এর মাথা নষ্ট হয়ে যায়। চিকনি চামেলি, হরিনী চোখের অধিকারিনী আমার বেস্টু মারু। নোয়াখালী থেকে রাজশাহী এসেছে ভার্সিটিতে পড়তে। নোয়াখালী শহরটা নাকি ওর পছন্দ না। তাই রাজশাহী ভার্সিটিতে এডমিট হয়েছে। এতে অবশ্য আমার ভালোই হয়েছে ওর মতো লুচ্চী, দুষ্টু, মিষ্টি আর ভালো মনের বেস্টু পেয়েছি।
নূর ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে হোস্টেলের ভিতর ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে দুতলায় উঠছে। লোকটা এখনো আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,,,,,
—-“আরে ভাই পড়বেন তো। এক্টু সামনে পিছনে তাকিয়ে হাঁটুন। আমি এই ক্ষুদ্র বয়সে মাজা, কোঁমড় ভাঙ্গতে চাই না। সারা জীবন পড়ে রয়েছে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকার। আমি নিশ্চয়ই কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি না। অবশ্য একে কিছু বলাটাই বেকার। কিছু বললেই এক কানে দিয়ে ঢুকাবে তো অন্য কান দিয়ে বের করে দিবে। তাই চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়। তবে নূর ভাইয়ার চোখে আমি এক আকাশ ভালোবাসা দেখছি। লোকটার চোখ দুটোর বেশ ক্ষমতা। ওর চোখের দিকে তাকালেই আমার ভালোবাসার বিশালতা আকাশ অব্দি ঠেকে যায়। আমি ও এই লোকটাকে এক আকাশ পরিমান ভালোবাসি তবে প্রকাশ করতে চাই না। এতে হয়তো উভয় পক্ষের ই মঙ্গল। কি আজব তাই না? একজন বলছে দুজন একসাথে থাকলেই মঙ্গল, অন্যজন বলছে, দুইজন আলাদা থাকাই মঙ্গল। হয় না….মতের অমিল? আমাদের মধ্যে ও মতের অমিল আছে।”
মুখে এক আঙ্গুল গুঁজে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। ঐ বেসরম ছেলেটার দিকে এক্টু ও তাকাচ্ছি না। নূর ভাইয়া গলা ঝাঁকিয়ে কিছুটা নরম স্বরে বলল,,,,,,
—–“বলছিলাম কি, মনে মনে এতো বিড়বিড় না করে ক্লিয়ারলি আমার কাছেই তো সব কিছু শেয়ার করতে পারো। হাজার হলে ও আমি তোমার বেটার হাফ। কিছুটা হলে ও তোমাকে সঙ্গ দিতে পারব। তোমার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলাতে পারব। আর না তে না। যদি ও তুমি আমাকেই মনে মনে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ওয়াশ করে নিট এন্ড ক্লিয়ার করে দিচ্ছ এতে অবশ্য আমার কিছু আসে যায় না। কজ তোমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট হক আছে আমাকে নিয়ে চর্চা করার।”
আমি লোকটার দিকে একবার হিংস্র বাঘিনীর লুকে তাকিয়ে মুখটাকে আবার অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম। ওমা এর মাঝেই আবার নোয়াখাইল্লা মারুটা এসে হাজির! ওর হিজরা টাইপ লুক দেখে আমার গাঁ পিওি জ্বলে যাচ্ছে। নিজের শরীরকে এভাবে হেলিয়ে দুলিয়ে ফেইস এক্টা পাউট করে নূর ভাইয়ার দিকে এমন ড্যাব ড্যাব তাকানোর মানেটা কি? না বুঝলাম না নিজেকে এভাবে অন্য রকম অদ্ভুত একটা লুকে প্রেজেন্ট করার মানে কি? ওর কি মনে হচ্ছে না এই লুকে ওকে লেসবো লাগছে?
চোখ, মুখ লাল করে মারুর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওকে শুটিয়ে লাল করে দেওয়ার দৃশ্য। মেয়েটা আমার দিকে তাকাচ্ছেই না। নূর ভাইয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি এবার মারুর থেকে চোখ সরিয়ে নূর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। নূর ভাইয়া ও মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। তা ও আবার বাঁকা হেসে! না আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। বিয়ে করা জামাই আমার। অন্য মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে কেনো? নো নো নো ইট’স টোটালী আনএক্সপেক্টএ্যাবল। মারু খুব হেলেদেলু লাজুক ভঙ্গিতে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“হায় ভাইয়া! কেমন আছেন? আমি চাঁদের বেস্টু মারু বলছি।”
নুর ভাইয়া গলাটা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,
—-“কল মি জিজু শালিকা। তোমার হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে তুমি আমাকে অনেক আগে থেকেই চেনো? আগে কোথাও দেখেছ নাকি আমাকে?”
মারু মুখটা হা করে কিছু বলতে যাবে এর আগেই আমি নূর ভাইয়ার কোল থেকে নেমে মারুর মুখ চেঁপে ধরলাম। মারু চোখ দুটো বড় বড় করে ওর মুখ থেকে আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর এক নাগাড়ে উম উম করছে। আমি অসবে পাওা না দিয়ে নূর ভাইয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললমা,,,,,,,
—-“আমার সর্বনাশ তো করেই ছেড়েছেন। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবার যাএা পালা করার কি আছে? প্লিজ গেট আউট ফ্রম হেয়ার!”
নূর ভাইয়া শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে এসে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“প্লিজ জানেমান। এভাবে তাকিও না। তোমার এই অগ্নি দৃষ্টি আমাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। শেষে না আমার ঢাকা যাওয়াটাই মিস হয়ে যায়। তখন কিন্তু তোমাকে অনেক জ্বালা পোহাতে হবে।”
এর মাঝেই নূর ভাইয়ার ফোন বেজে উঠল। পান্জ্ঞাবীর পকেট থেকে ফোনটা বের করে নূর ভাইয়া স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে কলটা পিক করে বলল,,,,,,
—-“হুম ভাইয়া বল?”
ঐপাশ থেকে কি বলল শুনতে পেলাম না। ভাববেন না আমি বয়রা। নূর ভাইয়ার ফোনের যথেষ্ট লাউড। আশেপাশের লোকজন ফোনের ঐ প্রান্তের বলা প্রত্যেকটা কথা নিঁখুতভাবে শুনতে পারবে। কিন্তু আমি শুনতে পারলাম না। মূলত মারুর ঘ্যান ঘ্যানানির জ্বালায়।
নূর ভাইয়া আচমকা গলাটা ঝেঁড়ে বলল,,,,,,
—-“না ভাইয়া আমি এখন সামিরের বাড়িতে। ফিরতে ফিরতে বিকেল হবে। তুই একাই যা। আমি আপাতত এক্টু বিজি আছি। তোর সাথে পরে কথা বলছি।”
কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে নূর ভাইয়া ফোনটা কেটে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“চাঁদ শুনো….. হোস্টেল থেকে একদম পালানোর চেষ্টা করবে না। ইউ নো হোয়াট পৃথিবীর প্রতিটা আনাচে কানাচে খুঁজে হলে ও আমি তোমাকে চোখের সামনে এনে হাজির করব। তিন তিনটে বছর আমাকে অনেক জ্বালিয়েছ। আর জ্বালানোর চেষ্টা ও করো না ওকে? আমি হোস্টেলের সামনে গার্ড লাগিয়ে যাচ্ছি। পালানোর চেষ্টা করবে তো ধরা খাবে। তখন কিন্তু আমি আরো দ্বিগুন হিংস্র হতে বাধ্য হবো। কেঁদে কেটে ও কুল পাবে না তখন। মৃন্ময় ভাইয়া কল করেছিলো। দোলা আপু সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাক করছে। মৃন্ময় ভাইয়া অলরেডি চলে গেছে পিক করতে। আমাকে এক্ষুনি রওনা দিতে হবে।”
কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া প্যান্টের অন্য পকেট থেকে আমার ফোনটা বের করে মারুর মুখ থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে মোবাইলটা আমার হাতে গুজে দিয়ে বলল,,,,,,
—–“এই নাও তোমার ফোন। চব্বিশ ঘন্টা অন রাখবে। আমি এ্যানি টাইম কল করতে পারি। প্রথম কল করার সাথে সাথে যেনো তোমার মিষ্টি ভয়েসটা শুনতে পাই ওকে? না হয় ঢাকা থেকে এসে আবারো তোমার হোস্টেলে হানা দিবো। তুমি কিন্তু আমার সম্পর্কে বেশ ভালো করেই জানো। দুইদিন পর এসে তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাবো। আগে ইডিয়ট সাকিবটাকে সোজা করে নেই। ওর জন্যই তুমি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছ। আম্মু আমাকে সব বলেছে। আগে ওর এক্টা উচিত শিক্ষা দিয়ে নেই এরপর তোমাকে ঐ বাড়িতে নিয়ে যাবো। তোমাকে ছাড়া এক্টা মুহূর্ত থাকা আমার পক্ষে পসিবল না। তুমি চিন্তা করো না চাঁদ। আমি আমাদের বিয়ে সম্পর্কে এখনি কাউকে কিছু বলব না। তুমি আমাদের বাড়িতে আগে যেভাবে ছিলে এখনো ঠিক সেভাবেই থাকবে। বাড়ির সবাই তোমাকে খুব মিস করছে। তোমাকে দেখতে চাইছে। অনেক পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছ কিন্তু এখন আর না।”
কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া মারুর চোখর সামনে আমার ঠোঁটে চুমো খেয়ে নিলো। আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মারু খিলখিল করে হেসে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—-“জিজু। আমি কিন্তু এখানে আছি। শালিকার সামনেই চুটিয়ে রোমেন্স করা হচ্ছে তাই না?”
মারু আরেকটু ভাব নিয়ে বলল,,,,,
—-“অবশ্য শালীর সামনেই তো প্রেম, ভালোবাসা করবেন। আমাদের সম্পর্কটাই তো এরকম।”
বুঝলাম না আচমকা মারু আমাকে ঠেঙ্গানি দিয়ে এমন পজিশনে এক ধাক্কা দিলো সরাসরি নূর ভাইয়ার ঠোঁটের সাথে আমার ঠোঁটের সংঘর্ষ হয়ে গেলো। আমি চোখ দুটো বন্ধ করে নূর ভাইয়ার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে রেখেছি। অবশ্য আমি ইচ্ছে করে লাগিয়ে রাখি নি। নূর ভাইয়া আমার ঠোঁটকে চুম্বকের মতো টানছে। মারু দাঁত কেলিয়ে বলছে,,,,,,
—–“এইবার অইছে খাপের খাপ। তোগোরে এমনেই মানায়। নিউলি ম্যারেড কাপল এমনেই তো চিপকা থাকবি।”
বাহ্ বাহ্ নোয়াখাইল্লা টা এবার নিজের ফর্মে ফিরে আসছে। খাঁটি নোয়াখাইল্লা কথা। এক ধাক্কা দিয়ে নূর ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। রাগে গিজগিজ করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে সোজা তিন তলায় উঠে গেলাম।
নূর ভাইয়া খানিক হেসে মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“শালীকা আপনার এটিটিউড আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আপনি রাজি থাকলে আমি আপনাকে বড় ভাবীর চোখে দেখতে পারি। আমার কিন্তু একজন বড় ভাই আছে। উনি আবার আমার মতো প্রেম ভালোবাসা করে না। একদম খাঁটি সিঙ্গেল।”
মারু পারছে না এখনি নূর ভাইয়ার কথায় রাজি হয়ে মৃন্ময় ভাইয়ার গলায় ঝুলে যেতে। লুচ্চি কাহিকা। মৃন্ময় ভাইয়া আর নূর ভাইয়াকে এই লুচ্চিটা ভালো করেই চিনে। আমার ফোনে হাজার ফটো আছে ওদের। মৃন্ময় ভাইয়াকে দেখলেই ওর মনে লাড্ডু ফুটে। এখন তো সরাসরি চান্সই পেয়ে গেলো। একে আর কে আটকাবে? ফটাফট ঝুলে যাবে মৃন্ময় ভাইয়ার গলায়। তিন তলা থেকে উঁকি চুকি মেরে সব দেখছি। এই মেয়ের গাঁয়ে পড়ার স্বভাব আজ আমি ঠেঙ্গিয়ে বের করব। জাস্ট একা রুমে পেয়ে নেই।
নূর ভাইয়া কিছু এক্টা মনে করে পকেট থেকে এক্টা ক্রেডিট কার্ড বের করে মারুর হাতে গুজে দিয়ে বলল,,,,,,
—-“শালীকা….এটা আপনার কাছে রাখুন। চাঁদকে এ সম্পর্কে কিছু বলবেন না। যখন চাঁদের প্রয়োজন পড়বে তখন আপনি আপনার পক্ষ থেকে এই ক্রেডিট কার্ডটা চাঁদের হাতে তুলে দিবেন। একচুয়েলি চাঁদ কারো কাছ থেকে খুব সহজে হেল্প নিতে চায় না। আই থিংক চাঁদ কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছে। মোটে ও এখন আমার থেকে ক্রেডিট কার্ডটা নিবে না। আপনি তো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনার কাছ থেকে হয়তো নিতে পারে।”
ছলছল চোখে আমি তিনতলা থেকে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। লোকটা এখনো আমাকে কতোটা বুঝে। এক্টু ও চেইন্জ্ঞ হয় নি। ঠিক আগের মতোই সাইকো আছে। আর দাঁড়ালাম না। সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। রুবাইয়া মেয়েটা বেডের উপর বসে আপেল খাচ্ছে। আমাকে দেখেই দাঁত কেলিয়ে হাসি জুড়ে দিলো। কিছু বললাম না। আসলে মোড নেই কিছু বলার। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গাঁ ভর্তি অরনামেন্টস গুলো এক এক করে খুলছি। এর মাঝেই মারু দরজা ঠেলে রুমে ঢুকল। সাপের মতো এঁকে বেঁকে হেঁটে মারু রুবাইয়ার হাত থেকে আপেলটা ছিনিয়ে নিয়ে জোরে এক্টা বাইট দিয়ে আপেলটা পানের মতো চিবুচ্ছে আর আমার পিছনে দাঁড়িয়ে বলছে,,,,,,,,
—–“আহ্ কি হ্যান্ডসাম রে তোর নূর। তোর তো চাঁন কপাল এতো সুন্দর জামাই পাইছস। অবশ্য আমার মৃন্ময় ও খারাপ না।”
আমি পিছু ফিরে দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,,,,
—–“মারু আমার চুলের জটগুলো এক্টু ছাড়িয়ে দিবি?”
মারু যেই না আমার খোঁপার দিকে অগ্রসর হতে যাবে অমনি আমি ল্যাং মেরে মারুকে ফ্লোরে চিৎ করে শুইয়ে দেই আর চোয়াল শক্ত করে বলি,,,,,,,
—-“লুচ্চি কাহিকা। কি দরকার ছিলো ঐ নূরের সামনে এমন অসভ্যতা করার? ছেলেটা আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে। কোথায় এক্টু প্রটেস্ট করবি তা না। উল্টে কানেকশান জুড়ে দিলি।”
মারু ফ্লোরে চিৎ হয়ে শুয়ে উহ্ আহ্ করছে আর বলছে,,,,,,
—–“চাঁদের বাচ্চা এর প্রতিশোধ তো আমি নিয়েই ছাড়ব। তোর জা হয়ে তোর ঘাঁড়ে চাঁপব। সাংসারিক অশান্তিতে তখন তিক্ত হয়ে উঠবি।”
আমি ভেংচি কেটে বললাম,,,,,
—-“সারচে, প্রপোজাল পেতে না পেতেই নিজেকে ঐ ক্যারেক্টারে জাহির করা শুরু করলি? ছেচড়া।”
কথাগুলো বলে জানালার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কানের দুল খুলছি। আচমকাই আমার চোখ গেলো হোস্টেলের গেইটের সামনে। নূর ভাইয়া দৌঁড়ে আবার গেইটের ভিতর ঢুকছে। আমি পর পর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মারুকে দুহাত দিয়ে টেনে তুলে বেডের উপর বসিয়ে অস্থির কন্ঠে মারুকে বললাম,,,,,,,
—–“দোস্ত ঐ নূর আবার আসছে। কিভাবে ওর খপ্পড় থেকে নিজেকে বাঁচব। প্লিজ গিভ মি এন আইডিয়া।”
মারু দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,,,
—–“খাটের তলায় লুকিয়ে পড়।”
আমি ও বোকার মতো উপায় বুদ্ধি না পেয়ে খাটের তলায় ঢুকে পড়লাম। নূর ভাইয়া এতক্ষনে দরজা ঠেলে রুমের ভিতর ঢুকে গেছে। রুমে ঢুকেই নূর ভাইয়া কিছুটা হাঁফিয়ে মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“চাঁদ কোথায়?”
মারু কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,,
—-“ভাইয়া আমি তো জানি নি। তবে খাটের তলাটা এক্টু চেইক করতে পারেন।”
মেজাজটা সেই লেবেলের গরম হয়ে আছে। আজ সত্যি সত্যি আমি ওকে টয়লেটে চুবাবো। অসভ্য মেয়ে কোথাকার। নিজে আইডিয়া দিয়ে নিজেই ধরিয়ে দিলো! নূর ভাইয়া খাটের তলায় উঁকি দিয়ে বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বিড়ালছানার মতো খাটের তলা থেকে বের হয়ে নূর ভাইয়ার মুখোমুখি দাঁড়ালাম। নূর ভাইয়া রুমের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“আপনারা এক্টু রুম থেকে বের হন। চাঁদের সাথে আমার কথা আছে।”
মারু আর রুবাইয়া ফটাফট রুম থেকে বের হয়ে গেলো। নূর ভইয়া আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার কাঁধে দুইহাত ঝুলিয়ে বলল,,,,,,
—–“তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না চাঁদ। তাই ভাবলাম…..তোমাকে সাথে নিয়েই যাবো। সারাক্ষন তুমি আমার চোখে চোখে থাকবে। ভেবেছিলাম দুইদিন পর এসে তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু সম্ভব না। আরো দুইদিন ওয়েট করা টোটালী ইম্পসিবেল। তিন তিনটে বছর অনেক ওয়েট করেছি। আরো দুটো দিন ওয়েট করা মানে দুই শতাব্দী তোমার জন্য ওয়েট করা। এতোটা সময়ের অপেক্ষা আমাকে মেরেই দিবে। অলরেডি আধমরা হয়ে আছি।”
আসলেই নূর ভাইয়া অনেকটা শুকিয়ে গেছে। চেহারাটা ও কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চোখের নিচে খানিক কালো দাগ ও পড়েছে। তবে এটা ভেবে অবাক লাগছে যে, ফুফু মনি কতো গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারে। নিজেরা ষড়যন্ত্র করে মাঝখান থেকে সাকিব ভাইয়াকে ফাসিয়ে দিলো। আসলেই ওরা জিনিয়াস। গুটি সাজাতে এক্সপার্ট। যাই হোক নূর ভাইয়ার সাথে আমি ঐ বাড়িতে যাবো না।
আমার মৌনতা দেখে নূর ভাইয়া গলাটা আবার ঝাঁকিয়ে বলল,,,,
—-“তাড়াতাড়ি চেইন্জ্ঞ করে নাও চাঁদ। আমরা এখনি রওনা দিবো।”
আমি এক ঝটকায় আমার কাঁধ থেকে নূর ভাইয়ার হাত দুটো সরিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,,,,,,
—–“আমি তোমার সাথে কোত্থাও যাবো না শুনেছ? আমি যেখানে আছি সেখানেই থাকব। জোর করে বিয়ে করেছ বলে যখন যা ইচ্ছে হবে তাই আমার উপর চাঁপিয়ে দিবে? আর আমি ও লক্ষী মেয়ের মতো মেনে নিবো? না, তা কখনো হবে না। অনেক হয়েছে। প্লিজ তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।”
নূর ভাইয়া আচমকা আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরল। দুইহাত দিয়ে আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,
—-“তুমি আমার ওয়াইফ চাঁদ। আমি যেখানে থাকব তুমি ও সেখানেই থাকবে। আমার এক আকাশ ভালোবাসার কাছে তোমার রাগটা জাস্ট ঠুনকো। কোনো ম্যাটার ই করে না। হাজার বার তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিলে ও আমি লক্ষ বার তোমার কাছে ফিরে আসব। তুমি ছাড়া আমি কিছু না চাঁদ। জলজ্যান্ত এক্টা মরা লাশ। আমি এক্টু শান্তি চাই চাঁদ। চোখ গুলো বেশ তৃষ্ণাত হয়ে আছে পরিপূর্ণ এক্টা ঘুমের জন্য। শরীরটা ও তরতাজা হতে চাইছে। এই মুহূর্তে তোমাকে আমার দারুনভাবে প্রয়োজন। সো অযথা রাগ না দেখিয়ে চেইন্জ্ঞ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
আচমকাই পিঠে পানি জাতীয় কিছুর অনুভূতি পেলাম। নূর ভাইয়া কেঁদেছে। অজান্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্তত এই লোকটার জন্য হলে ও আমাকে ঐ বাড়িতে ফিরতে হবে। সবার মুখোমুখি হতে হবে। নূর ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দাঁড়ালো। আমি নিজে ও জানি এখন আমার নূর ভাইয়ার কথাই শুনতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। উনার ভালোবাসার বিশালতার কাছে আমার রাগটা এক্টা পিঁপড়ে সমান। তবে এটা ভেবে খারাপ লাগছে যে, আবারো আমাকে ঐ বাড়িতে ফিরতে হবে। আবারো অশান্তি। সবাই আমার সাথে আবার অশান্তি করবে। তবে নূর ভাইয়ার অগোচরে। সাথে দোলা আপু ও ওদের সাথে জয়েন করবে। সম্পওির লোভ বড় লোভ। যেখানে বাকি সব সম্পর্কের টান সস্তা।
কালো এক্টা সালোয়ার স্যুট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলোম। দরজা লাগিয়ে প্রায় পনেরো মিনিট খুব কেঁদেছি। এতিম হলে এভাবেই দরজা আটকে কাঁদতে হয়। মা, বাবা থাকলে অন্তত তাদের কাছে কষ্টটা শেয়ার করতে পারতাম। তখন অবশ্য আমাকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হতো না। বুক ফুলিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতে পারতাম। নিজের মা বাবার ছায়ায় থাকতে পারতাম। ভাগ্য আমার বিপরীত বলে ছোট বেলা থেকে সাফার করে আসছি। সালোয়ার স্যুটটা পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলাম। রুমে ঢুকেই দেখি মারু রেডি হচ্ছে। আমাকে দেখে মারু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,,,,,,
—-“চাঁদু। আমি ও তোর সাথে যাবো। নূর ভাইয়া বলেছে। কয়েকদিন থেকে আবার চলে আসব।”
আমি বেশ বুঝতে পেরেছি মারু কেনো নূর ভাইয়ার কথায় রাজি হয়েছে। মূলত আমাকে প্রটেস্ট করার জন্য। মেয়েটা আমার জীবনের ফার্স্ট টু লাস্ট সব জানে। ঐ বাড়িতে ঘটা প্রত্যেকটা ঘটনা মারু জানে। আমার পাশে থাকার জন্যই মারু ঐ বাড়ি যাচ্ছে। প্লাস মৃন্ময় ভাইয়ার জন্যে ও। নূর ভাইয়া মৃদ্যু হেসে আমার হাত ধরে রুমের দরজা ক্রস করে হোস্টেলের গেইটের দিকে এগুচ্ছে পিছনে মারু ও আছে।
হোস্টেলের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম সামির ভাইয়া আর নায়রা আপু এক্টা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূর ভাইয়া, আমি, মারু উঠে গেলাম গাড়িতে। গাড়ি ছুটে চলল ঢাকার উদ্দেশ্যে।
#চলবে,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,
#