এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ৩+৪

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

হোস্টেলের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম সামির ভাইয়া আর নায়রা আপু এক্টা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূর ভাইয়া, আমি, মারু উঠে গেলাম গাড়িতে। গাড়ি ছুটে চলল ঢাকার উদ্দেশ্যে।

গাড়িতে বসে আছি নূর ভাইয়ার সাথে চিপকে। নূর ভাইয়ার গাড়িটা তেমন বড় না। তাই এক্টু সমস্যা হচ্ছে বসতে। তিনজন একসাথে বসলে মনে হবে লোকাল বাসে বসে আছি। এতো দামী গাড়িতে বসে ও নিজেকে লোকাল বাসের সামান্য প্যাসেন্জ্ঞাের মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় না মারুর বসতে কোনো প্রবলেম হচ্ছে। হাত, পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে। মানে বুঝছি না এই মেয়েটা এওো সেলফিস কি করে হতে পারে? তবে ওর চাহনী দেখে মনে হচ্ছে না সে সেলফিসনেস থেকে এমনটা করছে সে ইচ্ছে করে এমনটা করছে। নূর ভাইয়ার সাথে আমাকে চিপকে দেওয়ার জন্য। এই মেয়ের আসল মোটিভটাই হলো নূর ভাইয়াকে সুযোগ করে দেওয়া। নূর ভাইয়া ও সুযোগ বুঝে আমাকে আষ্টেপিষ্টে ধরে রেখেছে। ওরা দুজনই এক্কারে সেইম। তবে ওরা দুজনই আমার লাইফের দুটো গুরুত্বপূর্ণ পার্ট।

নূর ভাইয়ার বুকের সাথে মিশে আছি। উনার প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি। বুকের ভিতর অদ্ভুত ধুকপুকানীর আওয়াজটা ও আমার কানে আসছে। গিটারের স্টিঙ এর চেয়ে ও খুব তেজ এই কম্পিত ধুকপুকুনীর। উনি আমাকে আঁকড়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে। আই থিংক এক্টু আধটু ঘুমের ঘোর ও লেগে গেছে। আচ্ছা উনি কি আমাকে বুকে নিয়ে শান্তি অনুভব করছে? আমি যতোটা করছি? খুব নিশ্চিন্ত লাগছে নিজেকে। উনি ও হয়তো নিজেকে অতোটাই নিশ্চিন্ত বোধ করছে। ভালোবাসার ফিলিংসটাই এরকম। ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকলে মনে হয় আপনি স্বর্গ রাজ্যে বসবাস করছেন। দুটো মনের মানুষের উপস্থিতি স্বর্গ রাজ্যটাকে আরো মধুময় করে তোলে। তখন আপনার দিক বেদিক খেয়াল থাকবে না। মনে হবে আপনিই পুরো স্বর্গ রাজ্যের মালিক। আমরা মানুষ খুব অদ্ভুত। মৃত্যু ছাড়াই স্বর্গ পুরীর সাথে নিজের প্রিয় মানুষকে নিয়ে ঘুড়ে আসি। তখন মাথা থেকে বের হয়ে যায় যে, “মৃত্যু ব্যতিত স্বর্গপুরী যাওয়া পসিবল না। আবার মৃত্যুর পরে ও কারো কারো নসিবে স্বর্গপুরী জুটে না।”

কেনো যেনো আচমকাই চোখ দুটো উওাল হয়ে উঠল। কেঁদে কেটে নূর ভাইয়াকে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। আমার চোখ দুটোতে ও ঘুম ভর করেছে। আমি ও তিনটে বছর ঘুমাতে পারি নি। তাহলে কি সময় এসেছে চোখ দুটোকে বিশ্রাম দেওয়ার? অপর পাশে তাকিয়ে দেখলাম মারু কানে হেডফোন গুজে ঠোঁট দুটো নাড়াচ্ছে আর ব্যাক সিটের সাথে মাথাটাকে হেলান দিয়ে রেখেছে। বুঝতে পারলাম… মারু বিখ্যাত শিল্পীর সুরেলা গলার গানটাকে ইচ্ছে মতো অপমান করছে। গানের স্ট্যান্ডার্ড লেবেল ল করে দিয়েছে। যা বিদঘুটে গলা ওর। কাউয়া ডাকার মতো।

যাই হোক নূর ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। ঘুম পেয়েছে খুব। যেহেতু শান্তির এক্টা ঘুমানোর জায়গা ও পেয়ে গেছি তো আর দেরি করে লাভ কি? এর চেয়ে নিরাপদ আর শান্তির জায়গা আর কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না। লম্বা এক্টা ঘুম দিলাম, সে ঘুম ভাঙ্গল চার ঘন্টা পর। ঘুম থেকে উঠে পিটপিট চোখে প্রথমেই নূর ভাইয়ার হাসোজ্জ্বল মুখটা দেখলাম। ইচ্ছে করছে আমি ও এক্টা মুচকি হাসি দিয়ে নূর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। মন চাইলে ও বিবেক চাইছে না। তাই নিজেকে দমিয়ে নিলাম।

নূর ভাইয়া বড় এক্টা হাই তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“টানা চার ঘন্টা ঘুমিয়েছি দুজন। গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তোমার ফ্রেন্ড মারু জাগিয়েছে বলে জাগতে পারলাম। না হয় এভাবে আরো কতক্ষন ঘুমিয়ে থাকতাম আই ডোন্ট নো।”

নূর ভাইয়া কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,

—-” দেখলে তো চাঁদ….তুমিই আমার ঘুমের মেডিসিন।এতোদিন চোখে ঘুম ই ভর করে নি। আর আজ দেখো….তোমাকে বুকে পেতে না পেতেই কতোটা সময় ধরে তৃপ্তির ঘুম ঘুমিয়েছি।”

নূর ভাইয়ার চোখে ক্লান্তির ছাপটা মিইয়ে গেছে।চোখ দুটো শান্ত লাগছে। নীলাভ চোখ দুটো গ্লেইস করছে। দেখতে বেশ ভাল্লাগছে। নূর ভাইয়ার থেকে চোখ সরিয়ে অপর পাশে তাকালাম। মারুর ছায়া ও চোখে পড়ছে না। আজব…..মেয়েটা কই গেলো। একদম লাপাওা। সামির ভাইয়া আর নায়রা আপুকে ও দেখছি না। হয়তো ওরা চলে গেছে। নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললাম,,,,,,

—-“মারু কই?”

নূর ভাইয়া মুচকি হেসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে ইশারা করল। আমি চোখ বড় বড় করে রাস্তার পাশের টং দোকানে তাকিয়ে আছি। মারু টং দোকানে বসে পায়ের উপর পা তুলে টা খাচ্ছে। ওহ্ মাই গড এই মেয়ে পারে ও বটে। বাড়ির সামনে তো চলেই এসেছি। এভাবে ভাব নিয়ে টং দোকানে বসে চা খেতে যাওয়ার কি দরকার ছিলো? মেয়েটাকে একদম বুঝি না আমি। মুহূর্তের মধ্যেই নিজেকে নানান রূপে জাহির করে।

নূর ভাইয়া আমার মুখটা উনার দিকে ফিরিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“চাঁদ….. সাকিব ভাইয়া তোমাকে ঐদিন খুব ইনসাল্ট করেছে তাই না? আমি ওর সাহস দেখে হয়রান হয়ে যাই। মানে কিভাবে পারে? ভয়, ডর নিশ্চয়ই মনের ভিতর নেই।”

জানি না কেনো মনে হচ্ছে ফুফু মনির বানানো কথা গুলো নূর ভাইয়ার মুখ থেকে শুনতে। নূর ভাইয়ার সামনে সাকিব ভাইয়া বা বাড়ির অন্য কোনো মেম্বারসরা আমাকে কিছু বললে যেনো অন্তত নিজের হয়ে কিছু বলতে পারি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,

—-“নূর ভাইয়া….. ফুফু মনি আপনাকে যা যা বলেছে ফার্স্ট টু লাস্ট আমাকে খুলে বলুন।”

নূর ভাইয়া চোখে জল নিয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,

—–“আমি বাড়ি থেকে যাওয়ার পর পরই সাকিব ভাইয়া তোমাকে নানাভাবে ইনসাল্ট করেছে। তোমাকে আশ্রিতা বলে হেয় করেছে। এমনকি তোমার সাথে বাজে কাজ ও করতে চেয়েছিলো। তোমার সম্মান নষ্ট করে তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। এজন্য তুমি বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছ।”

এক্টু ও অবাক হচ্ছি না নূর ভাইয়ার কথা গুলো শুনে। ফুফু মনির পক্ষে এ সব বানায়োট কথা বলা অসম্ভবের কিছু না। অবশ্য সাকিব ভাইয়া ঐদিন আমার সাথে জবরদস্তি করতে চেয়েছিলো। তবে সুস্থ অবস্থায় না। সাকিব ভাইয়া ঐদিন টোটালী ড্রাংক অবস্থায় ছিলো। উনাকে জোর করে ড্রিংক করানো হয়েছে। যদি ও সাকিব ভাইয়ার এতে কোনো আপওি ছিলো না। আই থিংক সাকিব ভাইয়া ও ওদের সাথে আছে। ফুফু মনি আমার বাবার সম্পওির জন্য আমাকে আঠারো বছর ধরে লালন পালন করেছে। আন্তরিকতার সঙ্গে না সবটাই লোভে পড়ে করেছে। আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই উনি ফন্দি করে আমার থেকে সিগনেচার নিয়ে আমাদের সব সম্পওি রপ্ত করে নিয়েছে। সম্পওি লুটে নেওয়ার পর উনার কাছে মনে হলো আমি উনাদের পরিবারের পরগাছা। তাই আমাকে পরিবারের সবার কাছে ছোট করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার প্ল্যান করেছিলো। ঘটনার দিন রাতে আমি আড়াল থেকে সব শুনে নিয়েছিলাম। তাই পরদিন বাড়ি থেকে পালিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার আম্মু, আব্বুর মৃত্যুটাও এক্সিডেন্টলি না। কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে এতে। আমার একার পক্ষে কোনো লুকিয়ে থাকা রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব না। তবে নূর ভাইয়া পাশে থাকলে সব সম্ভব। আমি সবকিছু নূর ভাইয়ার কাছে শেয়ার করব। শুধু এক্টু সময়ের অপেক্ষা। এরপর নূর ভাইয়া নিজেই সব সত্যি বের করবে।

ফুফুমনি জানত নূর ভাইয়া দেশে থাকলে আমাকে কখনো বাড়ি থেকে তাড়ানো সম্ভব না। বিজনেসের কাজে যখন নূর ভাইয়া দেশের বাইরে যায় তখনি ওরা সাকিব ভাইয়াকে আমার পিছনে লেলিয়ে দেয়। অবশ্য নূর ভাইয়া আমাকে ছেড়ে যেতে চায় নি। আমিই জোর করে পাঠিয়েছি। আমাকে নূর ভাইয়ার কাছে খারাপ প্রমাণ করার জন্য ওরা এতোটা নিচে নামবে আমি জাস্ট ভাবতে পারি নি। সাকিব ভাইয়া ও আমাকে মনে মনে পছন্দ করে, তাই সুযোগটা লুফে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। না হয় এতো বছরে উনি আমার সাথে অন্তত একবার হলে ও যোগাযোগ করার চেষ্টা করত। যাই হোক, ব্যাপারটা নূর ভাইয়ার থেকে আরেকটু ক্লিয়ার করে শুনতে হবে। গলাটা ঝাঁকিয়ে আবার নূর ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,,,,,

—–“আচ্ছা…. ফুফু মনি কি সব দোষই সাকিব ভাইয়া কে দিয়েছে নাকি আমাকে ও ফিফটি পার্সেন্ট অংশীদার করেছে?”

নূর ভাইয়া আমাকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,

—–“পুরো দুনিয়া তোমাকে খারাপ বললে ও তুমি আমার কাছে ঠিক ততোটাই পবিএ যতোটা আমাদের ঈমান পবিএ। দোলা আপুর কথা বার্তায় মনে হয়েছিলো দোলা আপু তোমাকে সাকিব ভাইয়ার সাথে মিলিয়ে কথা বলছিলো। তোমার দোষটাই শত পার্সেন্ট দেখাতে চেয়েছিলো। বাট আমি কানে তুলি নি চাঁদ। আমি জানি আমার চাঁদ কখনো নোংরামো করার কথা ভাবতেই পারে না আর স্বয়ং করা তো দূরে থাক। আজ আমি তোমার সামনে সাকিব ভাইয়ার মুখোমুখি হবো। যথেষ্ট ইভিডেন্সের অভাবে আমি এতোদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু আর না। ইভিডেন্টস সহ আমি ঐ লম্পটটার মুখোমুখি হবো।”

আমি যা ভাবছিলাম তাই হলো। আমাকে নূর ভাইয়ার চোখে খারাপ করার ছোট্ট এক্টা প্রচেষ্টা করে ও ফেলেছে। তবে আমি জানি…. নূর ভাইয়া কখনো আমাকে একতরফা দোষ দিবে না। পৃথিবী উল্টে গেলে ও নূর ভাইয়া আমাকে খারাপ ভাববে না। অন্তত এই ভরসাটা নূর ভাইয়ার উপর আমার আছে। বাড়ির সবাই খুব ভালো করে জানে নূর ভাইয়া আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ওরা হাজার চাইলে ও নূর ভাইয়ার থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না। তাই আমার চরিএের উপর দাগ লাগাতে চেয়েছিলো। এসব ভাবনা চিন্তার মধ্যেই দেখলাম মারু জানালার কাঁচে টোকা দিচ্ছে। নূর ভাইয়া আমাকে বুক থেকে উঠিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বলল,,,,,,

—–“চাঁদ…. বাড়িতে চলো। আমার খুব ঘুম পেয়েছে। তুমি আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে। অবশ্য এর আগে সাকিবের চ্যাপ্টারটা ক্লোজ করতে হবে।”

কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া গাড়ির দরজা খুলে বের হলো। মারু এক্টু সরে দাঁড়ালো। নূর ভাইয়া আমাকে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামালো। মারু পিটপিট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কানে কানে ফিসফিস করে বলল,,,,,,

—–“বাড়িতে ঢুকেই ফার্স্টে আমাকে মৃন্ময়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি। না হয় তোর খবর আছে। ঘাঁড়ের উপর উঠে তোর ঘাঁড় মটকাব।”

মেয়েটা আসলেই লুচ্চি। আমি মরছি আমার জ্বালায়। মাঝখান থেকে সে এসে এক্সট্রা প্যারা দিচ্ছে। বুঝলাম না এই ডাইনিটা আমার সঙ্গ দিতে এসেছে নাকি নিজের লাইন সেট করতে? বন্ধু নামক তিন অক্ষরের ওয়ার্ডকে বুঝা বড় দায়। কখন যে কোন এঙ্গেলে রূপ নেয় বুঝা যায় না। দাঁত কিড়মিড় করে আমি ওর কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,,,,,

—-“আপাতত লুচ্চিগিরিটা এক্টু সাইডে রাখ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের পর লুচ্চিগিরির রুলটা কনটিনিউ করবি ওকে?”

মারু মুখটা হা করে কিছু এক্টা বলতে যাবে এর আগেই নূর ভাইয়া আমার হাত ধরে মারুকে উদ্দেশ্য করে মৃদ্যু হেসে বলছে,,,,,,,

—–“চলুন মিস শালীকা। বাড়ির ভিতর গিয়ে দুই ফ্রেন্ড মিলে আড্ডা দিবেন। রাস্তায় আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবেন।”

নূর ভাইয়া আমার হাত ধরে সামনে হাঁটছে। মারু পিছু পিছু হাঁটছে। কিছুটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি মারুর হাত টেনে আমার পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,,,,,

—-“চা যে খেলি বিল দিলো কে? তোর কাছে তো কখনো খুচরো থাকে না। এই টং দোকানদারের কাছে নিশ্চয়ই হাজার টাকার ভাংতি হবে না।”

মারু বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“মৃন্ময়ের নামে বাকি টুকে এসেছি। মৃন্ময়কে দেখলেই দোকানী চায়ের বিল পরিশোধ করবে।”

বেকুব হয়ে তাকিয়ে আছি মারুর দিকে। মানে মেয়েটা কিভাবে পারে মাথায় এতো এতো শয়তানী বুদ্ধি নিয়ে ঘুড়তে? চিনে না জানে না এক্টা অপিরিচিত ছেলের নামে বিল টুকে আসল! হাউ ইট’স পসিবল? মাঝে মাঝে হয়রান হয়ে যাই এই মেয়ের বাঁদড়ামী দেখে।

বাড়ির সদর দরজায় পা রাখার সাথে সাথেই কেউ আমার হাত টেনে আমাকে ঝাপটে ধরল। মুখটা দেখার সুযোগ ও দিলো না। আসলে আমি তখন ও মারুর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়েছিলাম। তাই ঝাপটে ধরা ব্যক্তিটিকে খেয়াল করতে পারি নি। ব্যক্তিটির গাঁ থেকে এক্টা চেনা স্মেল আসছে। বুঝতে আর দেরি হলো না ফুফু মনি আমাকে ঝাপটে ধরেছে। সবই লোক দেখানো আদর। নূর ভাইয়ার সামনে নিজেকে ভালোভাবে প্রেজেন্ট করার অভিনয়। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা কান্না করছে আর বলছে,,,,,,

—–“তুই এতো বছর কোথায় ছিলি চাঁদ মা? জানিস তোকে আমরা কতোটা হন্ন হয়ে খুঁজেছি? আমার রুমের ব্যালকনি থেকে তোকে গেইটের সামনে দেখেই হুড়মুড়িয়ে দৌঁড়ে এলাম নিচে। তোকে কাছ থেকে দেখতে, বুকে নিতে। দেখেছিস আমার ছেলেটা তোকে কতো ভালোবাসে? তোকে ঠিক খুঁজে বের করেছে। আর আমার ছেলেটাকে ছেড়ে যাস না মা।”

আমি ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললাম,,,,,

—-“আমি স্বার্থক ফুফুমনি। তোমরা আমাকে নিয়ে এতোটা কনসার্ন ছিলে আমার সত্যি জানা ছিলো না। শুনে খুব ভালো লাগল সাথে আক্ষেপ ও।”

আচমকাই নূর ভাইয়া আমাকে ফুফুমনির কাছ থেকে সরিয়ে ফুফু মনির দিকে তাকিয়ে তেজী কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“আম্মু প্লিজ….. তুমি কুইকলী সাকিব ভাইয়াকে ড্রইং রুমে আসতে বলো। অনেক হিসেব বাকি আছে সাকিব ভাইয়ার সাথে আমার।”

সাকিব ভাইয়া হলো নুর ভাইয়ার কাজিন। নূর ভাইয়ার ছোট চাচ্চুর ছেলে। উনার মাথায় খানিক প্রবলেম আছে। ছোট বেলা থেকেই উনার এই প্রবলেম। তাই সারাদিন বাড়িতেই পড়ে থাকে। কোনো কাজ করার ক্ষমতা নেই উনার। ব্রেইন সচল না। সব হিসেব গুলিয়ে দেয়। তাই কেউ উনাকে অফিসে নিতে চায় না। উনাকে সবাই অকর্মন্য বলেই ডাকে। ব্রেইন সচল না হলে ও লুচুগিরির দিক থেকে উনি খুব পার্ফেক্ট। আমার দিকে সবসময় খারাপ দৃষ্টিতে তাকাতো। খারাপ ইঙ্গিত ও করত। উনার একজন ছোট বোন আছে। নাম সানায়া। উনি নূর ভাইয়ার সেইম এইজের। এর মাঝেই সাকিব ভাইয়া আর সোহেলি আন্টি মানে সাকিব ভাইয়ার আম্মু ড্রইং রুমে চলে এলো। সাকিব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—–“আবার চলে এলি আমার ঘাড় মটকাতে? ঐ দিন তো আমাকে ফুল ড্রাংক অবস্থায় নিজের করতে চাইছি….

আর কিছু বলতে পারল না এর আগেই নূর ভাইয়া প্যান্ট থেকে বেল্ট খুলে এলোপাথারী সাকিব ভাইয়াকে চাবুক মারছে আর বলছে,,,,,,

—-“ঠিকভাবে কথা বল আমার চাঁদের সাথে। নিজের লিমিট ক্রস করিস না প্লিজ। তুই আমার দুই বছরের বড় বলে এতোদিন তোকে অনেক সহ্য করেছি। তোর সাহস হয় কিভাবে আমার চাঁদকে আমার সামনে ইনসাল্ট করার? আজ আমি তোকে কিছুতেই ছাড়ব না। শুধুমাএ তোর জন্য চাঁদ এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আমার থেকে তিন তিনটে বছর দূরে দূরে থেকেছে। তিন তিনটে বছর তিলে তিলে আমি শেষ হয়েছি। আম্মু ভেবেছিলো তুই সম্পূর্ণ সুস্থ না বলে ঐ দিন চাঁদের সাথে অসভ্যতা করেছিস। ভেবেছে আমি তোকে ছাড় দিয়ে দিবো। কিন্তু না, আমি তোকে ছাড় দেবো না। চাঁদের সামনে তোকে শাস্তি দিবো বলে তোকে এতোদিন ছাড় দিয়েছি। আজ সেদিনটা চলে এসেছে। মামু, মামি নেই বলে ভাবিস না আমার চাঁদ একা। আমি আছি ওর পাশে। আমিই ওর গার্ডিয়ান। আমিই ওর বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করব।”

নূর ভাইয়া এলোপাথারী মেরে যাচ্ছে জানোয়ার সাকিবটাকে। মারু আমার উড়নার আঁচল ধরে হাসছে। আমি ও কিছু বলছি না। চুপচাপ দেখে যাচ্ছি। ভালো লাগছে বেশ। তিন বছরের জমানো রাগ গুলো সাকিবের বুক ফাঁটা আর্তনাদের মাধ্যমে পুষিয়ে নিচ্ছি। সাকিব ভাইয়ার আম্মু আর ফুফু মনি জান প্রাণ দিয়ে নূর ভাইয়াকে ধাক্কাচ্ছে সাকিবকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না নূর ভাইয়া ঐ সাকিবকে আধ মরা না করা পর্যন্ত ছাড়বে। নূরের চাঁদের সাথে নোংরামো করার সাহস দেখিয়েছি সে। এতো সহজে পাড় পাওয়া আদৌ সম্ভব না।

নূর ভাইয়া ঐ জানোয়ারটাকে মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। কিছুটা হাঁফিয়ে নূর ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“চাঁদ….তুমি খুশি হয়েছ তো? আমি এই জানোয়ারটাকে খুব মেরেছি। নেক্সট টাইম তোমার দিকে চোখ তুলে ও তাকাবে না। তুমি নিশ্চিন্তে এই বাড়িতে থাকবে।”

সাকিব ভাইয়া ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে গোঙ্গাচ্ছে। তাজা তাজা রক্ত গাঁ থেকে পানির স্রোতের মতো ঝড়ছে। একেবারে আধ মরা করে দিয়েছে। খুশিতে আমার লাফাতে মন চাইছে। হুট করেই সোহেলী আন্টি কাঁদতে কাঁদতে নূর ভাইয়ার দিকে তেঁড়ে এসে বলল,,,,,,

—-“নূর তুমি কাজটা একদম ঠিক করো নি। এক্টা আশ্রীতা মেয়ের জন্য তুমি বড় ভাইয়ের গাঁয়ে হাত তুললে? তাকে এভাবে বেধরক পেটালে?”

নূর ভাইয়া চোখ গুলোকে রক্ত বর্ণ করে পায়ের কাছে থাকা সোফাটায় জোরে এক্টা লাথি দিয়ে চিল্লিয়ে বলল,,,,,,

—–“ব্যবহার সংযত করো চাচিমনী। চাঁদ কোনো আশ্রিতা মেয়ে না। চাঁদ এই বাড়ির এক্টা পার্ট। আমি চাঁদের গার্ডিয়ান। চাঁদের ছায়া সঙ্গী। যতো বার তোমরা চাঁদকে অপমান করবে ঠিক তত বারই তোমরা আমার কাছ থেকে এমন বেধরক মার এক্সপেক্ট করবে। তুমি আমার থেকে বয়সে যথেষ্ট বড় বলে ছাড় দিলাম। তবে দ্বিতীয়বার ভুল হলে ছাড় দেবো না। সময় থাকতে নিজে ও ঠিক হও এমনকি তোমার ছেলেকে ও সংযত করো।”

মারু রাগে ফুসছে। ওর ফুসফুসানীর আওয়াজ আমার কান অব্দি ঠেকছে। আমার এক্টু ও রাগ লাগছে না। চোখ থেকে কেবল গড়গড়িয়ে পানি পড়ছে। আশ্রিতা নামটা শুনলে বার বার মরে যেতে ইচ্ছে হয়। এই তিন অক্ষরের ওয়ার্ডটা ভিতরটাকে পিষিয়ে দেয়। দারুন ভাবে মনটাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়। সহ্য করতে পারি না এতোটা তাচ্ছিল্যতা। ইচ্ছে করছে এখনই এখান থেকে ছুটে পালাই।

ফুফু মনির অগ্নি দৃষ্টি উপেক্ষা করতে পারছি না। এই লাল চোখ দুটো আমাকে প্রতিনিয়ত মেরে দিচ্ছে। ফুফু মনি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে দৌঁড়ে গিয়ে সাকিব ভাইয়াকে ধরল। সোহেলী আন্টি আর ফুফুমনি ধরাধরি করে সাকিব ভাইয়াকে সোফায় বসালো। উনি সেন্সলেস হয়ে গেছে এতক্ষনে। নূর ভাইয়া হাতের বেইল্ট টা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে শার্টের হাতা দুটো ফ্লোড করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে আসল। দুহাত দিয়ে আমার চোখের জলগুলো মুছে দিয়ে আমার গালে হাত রেখে নরম স্বরে বলল,,,,,,,

—-“ভেজাল শেষ ওকে? সাকিব ভইয়াকে উচিত শিক্ষা দিয়েছি। তুমি এবার নিশ্চিন্তে এই বাড়িতে থাকতে পারো। কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। আমি তোমাকে ছেড়ে আর কখনো দেশের বাইরে পা রাখব না। আর যদি ও কোথাও যেতে হয় তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো। ইজ দেট ক্লিয়ার?”

চোখ গুলো ঢুলছে আমার। মনে হচ্ছে এখনি জ্ঞান হারাবো। নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। এর মাঝেই পেছন থেকে মৃন্ময় ভাইয়ার গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। উনি চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,

—–“আমাদের ফ্যামিলিতে মারু নামের কে আছে? কে আমার নামে টং দোকানে বিল লিখে এসেছে? আজব….কোথা কোথা থেকে মানুষ চলে আসে আত্নীয় বানাতে। বুঝি না। হাতের সামনে পেলে একদম ঠেঙ্গিয়ে পা ভেঙ্গে দিতাম। অসভ্য মেয়ে কোথাকার।”

মারু কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মৃন্ময় ভাইয়ার মুখোমুখি দাঁড়াল। মৃন্ময় ভাইয়া এক ভ্রু উঁচু করে মারুকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে যেই না কিছু বলতে যাবে এর আগেই দোলা আপু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সাকিব ভাইয়ার কাছে দৌঁড়ে গেলো। ফুফু মনি আর আন্টি কাঁদছে। মৃন্ময় ভাইয়া ও দৌঁড়ে গেলো সাকিব ভাইয়ার কাছে। মৃন্ময় ভাইয়া আর দোলা আপু জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—–“কে মেরেছে সাকিবকে?”

নূর ভাইয়া পেছন থেকে গলা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি মেরেছি সাকিব ভাইয়াকে। তাড়াতাড়ি একে তোমরা হসপিটাল নিয়ে যাও।”
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পর্ব_৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“আমি মেরেছি সাকিব ভাইয়াকে। তাড়াতাড়ি একে তোমরা হসপিটাল নিয়ে যাও।”

মৃন্ময় ভাইয়া আর দোলা আপু পিছু ফিরে আমাদের দিকে তাকালো। দোলা আপুর চোখে আমি অসংখ্য রাগের ঝুলি দেখতে পাচ্ছি। মৃন্ময় ভাইয়া আমাকে দেখে মৃদু হেসে বলল,,,,,

—–“আরে চাঁদ। বাড়িতে ফিরেই যে তোকে দেখতে পাবো বুঝতে পারি নি। তিন বছর পর তোকে দেখলাম। আমি জানতাম তোকে আমরা খুব শীঘ্রই দেখতে পাবো। কজ নূর যেভাবে তোকে খুঁজার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। বেশ ভাল্লাগছে তোকে দেখে।”

এর মাঝেই মারু এক্টা ঢঙ্গী ভাব নিয়ে মৃন্ময় ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,,,,,,

—–“ভাইয়া ভালো আছেন? আমি মারু। আই মিন মারুফা ইয়াসমিন মারু।”

আচমকাই সোহেলী আন্টি পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,

—-“তোমরা মানুষ তো? নাকি জালিম? আমার ছেলেটা এভাবে আধমরা অবস্থায় পড়ে আছে আর তোমরা কিনা একজন আরেকজনের হাল চাল জিজ্ঞেস করছ? প্লিজ আমার ছেলেটাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। প্লিজ।”

মৃন্ময় ভাইয়ার চোখে আমি মারুকে ঠেঙ্গানীর দৃশ্য দেখছি। তবে মনে হচ্ছে এখনই মৃন্ময় ভাইয়া মারুকে কিছু বলবে না। কারণ, সাকিব ভাইয়ার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। মৃন্ময় ভাইয়া মারুর দিকে চোখ মুখ লাল করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চট জলদি মারুর থেকে চোখ সরিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে সাকিবকে আধ কোলে করে সদর দরজা পেরিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে পড়ল। নূর ভাইয়াকে কিছু জিগ্যেস করার সাহস নেই মৃন্ময় ভাইয়ার। কেননা নূর ভাইয়া খুব রাগী আর বদমেজাজী। তাই উনি কথা না বাড়িয়ে সাকিবকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলো। সাথে দোলা আপু, সোহেলী আন্টি আর ফুফু মনি ও চলে গেলো। মারু মুখটা ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মৃন্ময় ভাইয়ার সাথে সেটিং করার আগেই মৃন্ময় ভাইয়া উবে গেলো। সত্যি খুব খারাপ লাগছে ওর জন্য। জানি না কি হলো আচমকাই আমার মাথাটা ঘুরে গেলো। সাথে সাথেই নূর ভাইয়ার বুকে লুটিয়ে পড়লাম। এরপর আর কিচ্ছু মনে নেই আমার।

চোখ খুলেই প্রথমে নূর ভাইয়ার মুখটা দেখলাম। আর নিজেকে আবিষ্কার করলাম তুলোর মতো তুলতুলে এক্টা বেডে। বেশ বুঝতে পারলাম নূর ভাইয়ার বেডে শুয়ে আছি আমি। পিটপিট চোখে আমি পুরো রুমটায় চোখ বুলাচ্ছি। রকমারী লাইটিং এর আবছা আলো দেখা যাচ্ছে রুমটায়। লাল, নীল, সবুজ, গোলাপী, সাদা। ভাল্লাগছে বেশ। এই আবছা আলোতেই আমি রুমের প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে আমার বিভিন্ন স্টাইলের ছবি দেখতে পারছি। বেশির ভাগই ক্যান্ডিড। এ সব ছবি নূর ভাইয়ার তোলা। কোনো ছবিতে আমি চুল বাঁধছি, কোনো ছবিতে নখে নেইল পলিশ লাগাচ্ছি, কোনো ছবিতে হাতে মেহেদী পড়ছি। আর কোনো ছবিতে নূর ভাইয়াকে ভেংচি কাটছি। কোনো ছবিতে মুখটাকে ফুলিয়ে রেখেছি। সারাক্ষন নূর ভাইয়া এসব ই করত। বেছে বেছে কেবল আমার ছবি ই তুলত। আমি ও মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকতাম। মাঝে মাঝে দাঁত কেলিয়ে হাসতাম। নূর ভাইয়া ছবিগুলো তুলত আর বলত,,,,,,,

—–“ছবি মানে কয়েকটা আনন্দঘন মুহূর্তের স্মৃতি চাঁদপাখি। হয়তো কখনো আমরা এই ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে নিজেদের ফিকে হয়ে যাওয়া অতীতটাকে দুচোখ ভরে দেখতে পারব। মাঝে মাঝে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ও ফুটে উঠবে। এই হাসিটাই হবে ফিকে হয়ে যাওয়া অতীতটাকে নতুন ভাবে প্রাণোচ্ছ্বল করার হাসি।”

নূর ভাইয়ার কথা গুলো মিলে গেছে। ক্যান্ডিড ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে আমার অতীত মনে পড়ছে। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি উঁকি দিয়েছে। শান্ত দৃষ্টিতে নূর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সাদা শার্টে অতুলনীয় সুন্দর লাগছে নূর ভাইয়াকে। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে নূর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছি নূর ভাইয়া আপাতত বেসামাল হয়ে আছে। ফটাফট শোয়া থেকে উঠে বসলাম। বেডের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে উড়নাটা খুঁজছি। বাট উড়নাটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। কই গেলো মরার উড়না। প্রায় পাঁচ মিনিট পর লক্ষ্য করলাম, উড়নাটা নূর ভাইয়ার হাতে। উড়না হাতে নিয়ে উনি মলিন হাসছে। উড়নাটা আমার চোখের সামনে ধরে উনি মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,

—–“গুড ইভিনিং চাঁদপাখি।”

ফটাফট উনার হাত থেকে উড়নাটা ছিনিয়ে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। উনার বেসামাল চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই কেমন খাপ ছাড়া লাগছে। মুখটা নিচু করতে নিলেই নূর ভাইয়া আমার থুতনীতে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“চাঁদপাখি…… এখনো কিন্তু আমি তোমার চোখে সেই ভালোবাসা দেখতে পাই। যে ভালোবাসায় আমি ডুবেছি অনেক আগে। ভালোবাসা লুকিয়ে রাখার জিনিস না। যত প্রকাশ করবে ততোই এর বিশালতা বাড়বে, সম্পর্কের টান বাড়বে, মায়া বাড়বে। তুমি যতোই আমার থেকে সমস্ত ভালোবাসা হিডেন করার চেষ্টা করো ততোই আমার ভালোবাসায় তুমি আসক্তি হয়ে উঠবে। এই আসক্তি তুমি কোনো কিছুতেই কাটাতে পারবে না। ক্রমশ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। যতক্ষন পর্যন্ত না তুমি নিজ থেকে এসে আমার কাছে ধরা দিবে। অবশ্য…. তোমাকে ভালোবাসতে তোমার অনুমতি আমার লাগবে না। শুধু “অনুভূতি” হলেই হবে। অনুভূতি গুলোতে নতুন করে ভালোবাসা সঞ্চার করার দায়িত্ব আমার।”

এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নূর ভাইয়ার চোখের দিকে। নূর ভাইয়ার বলা কথা গুলো শতভাগ সত্য। আমি এখনো আগের মতোই নূর ভাইয়াকে ভালোবাসি। আমি ও নূর ভাইয়ার ভালোবাসায় ততোটাই আসক্ত, যতোটা নূর ভাইয়া আমার প্রতি আসক্ত। এই ভালোবাসার খেলায় দুজনই খেলোয়াড়। তবে আমি মাঠে নামতে চাইছি না।

নূর ভাইয়া আমার কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,

—–“চাঁদপাখি….তুমি টানা পাঁচ ঘন্টা ঘুমিয়েছ। ঐ সময় সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে। সেন্স ফেরার পর আমার বুকে লম্বা এক ঘুম দিলে। ঘুমানোর কথা ছিলো আমার। উল্টে তুমি ঘুমালে?”

আমি মলিন হেসে নূর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আচমকাই নূর ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিলো। খোলা জানালা দিয়ে চাঁদের আলো রুমটাতে উপচে পড়ছে। রাতের আকাশের বিভৎস আঁধারটা চাঁদের আলোয় মিইয়ে গেছে। বুঝতে পারলাম অলরেডি সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চলল। নূ্র ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে আর বলছে,,,,,

—–“চাঁদপাখি….দুজনই ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যাবো। রান্না করব। এরপর তুমি, আমি আর মারু মিলে ডিনার করব।”

আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বললাম,,,,,,,

—-“বাড়ির বাকিরা কোথায়? শুধু আমি, আপনি আর মারু?”

—-“বাড়ির বাকিরা এখনো হসপিটালে। তবে এক্টু পরে আব্বু আর চাচ্চু অফিস থেকে ফিরবে। আম্মু, মৃন্ময় ভাইয়া আর দোলা আপু ও এক্টু পর চলে আসবে। তাই আমি ভাবছি আমরা দুজন মিলে সবার জন্য রান্না করে রাখি। ওরা এসে অন্তত এক্টু শান্তিতে খেতে পারবে।”

আমি কৌতুহলী দৃষ্টিতে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,

—-“মানে কি? কেউ এখনো হসপিটাল থেকে ফিরে নি? সাকিব ভাইয়া ভালো আছে তো?”

—-“ভালো আছে সাকিব। শরীরের অনেক জায়গা বাজে ভাবে কেটে গেছে। থেতলে ও গেছে। অনেকগুলো সেলাই করতে হয়েছে। ডক্টর বলেছে আজ রাতটা হসপিটালে থাকতে হবে। কাল সকালে রিলিজ করা হবে।”

—-“এতোটা বাজে ভাবে মারার কি খুব দরকার ছিলো? উনি তো আপনার আপন চাচাতো ভাই হয়।”

নূর ভাইয়া হঠাৎ হাঁটা থামিয়ে দিলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“চাঁদপাখি….. মা-বাবার পর তুমি ই আমার কাছে অধিক প্রিয়। আপন চাচাতো ভাই তোমার আগে সামান্য পিঁপড়ে ও না। তোমাকে যে ছোট করবে তাকে আমি সাকিবের মতো ঠিক এভাবেই পিটাবো। হিংস্র থেকে অধিক হিংস্র হবো। তোমার এক ফোঁটা চোখের পানি আমার কাছে বিষাদের মতো। একদম সহ্য হয় না চাঁদপাখি। একদম না। তোমাকে ঠিক কতোখানি ভালোবাসি তা শুধু উপরের ঐ বিশাল আকাশটাই বলতে পারবে। কারণ আমার ভালোবাসার বিশালতা আকাশ সমান।”

জানি না কেনো নূর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরতে খুব মন চাইল। দেরি না করে নূর ভাইয়াকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। নূর ভাইয়া মুচকি হেসে আমাকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। হালকা হালকা শীত পড়ছে। গাঁয়ের লোম গুলো এক্টু পর পর দাঁড়িয়ে উঠছে। নূর ভাইয়া আমাকে কোল থেকে নামিয়ে ফ্লোরে দাঁড় করিয়ে দিলো। সাথে সাথে আমার গাঁ টা থরথর করে কেঁপে উঠল। দুহাত দিয়ে আমার কাঁধ দুটোতে খাঁমচে ধরে আছি। ফ্লোরটা পানিতে ভেজা ভেজা হয়ে আছে। ঠান্ডা পানিটা পায়ে লাগাতে শরীরটা আগের তুলনায় অধিক শিরশিরিয়ে উঠল। দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ শুরু হয়ে গেলো। আমার কাঁপাকাঁপি দেখে নূর ভাইয়া বেশ বুঝতে পেরেছে আমার ঠান্ডা লাগছে। দৌঁড়ে নূর ভাইয়া রুমে ঢুকে এক্টা পিঁড়ি জাতীয় কিছু এক্টা এনে আমাকে পিঁড়িটায় দাঁড় করিয়ে দিলো। ঠান্ডাটা অনেক অংশে কমে গেলো। নূর ভাইয়া মৃদ্যু হেসে আমার দু কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,

—-“তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও চাঁদপাখি। আমি কাবার্ড থেকে জ্যাকেট বের করছি।”

আমি এক ভ্রু উঁচু করে বললাম,,,,,,

—-“এখানে তো আমার কোনো জ্যাকেট নেই নূর ভাইয়া।”

—-“আমার তো আছে। আমার থাকা মানেই তো তোমার থাকা।”

নূর ভাইয়ার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে বললাম,,,,,,

—-“আজব…. এখন কি আমাকে ছেলেদের জ্যাকেট ও পড়তে হবে?”

নূর ভাইয়া বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“হুম…. তুমি চাইলে চুড়িদার ছেড়ে আমার শার্ট, প্যান্ট ও পড়তে পারো। আমি কিছু মাইন্ড করব না। উল্টে খুশি হবো। আমার শরীরের মিষ্টি স্মেইলটা তোমার প্রতিটা শ্বাস নিশ্বাসে বিচরিত হবে। ভাবতেই কেমন খুশি খুশি লাগছে।”

নাকটা ফুলিয়ে নূর ভাইয়ার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছি। নূর ভাইয়া হু হা করে হেসে বলল,,,,,,

—-“জাস্ট ওয়ান মিনিট ওয়েট চাঁদপাখি। তুমি প্লিজ এক্টু খানি কষ্ট করে মুখটা এভাবেই রাখো। আমি এক্ষনি আসছি।”

কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া আমাকে ছেড়ে রুমে চলে গেলো। আমি সেইম ভাবেই নাক ফুলিয়ে চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছি। নূর ভাইয়ার কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝছি না। এক মিনিট হওয়ার আগেই নূর ভাইয়া ঝড়ের গতিতে ওয়াশরুমে চলে এলো। হাতে উনার ফোন। ফোনের স্ক্রীন লক খুলে নূর ভাইয়া ক্যামেরা অপশন টা অন করে পর পর কয়েকটা চাপ দিয়ে আমার প্রায় অনেকগুলো ছবি তুলে নিলো। আমি বেকুব হয়ে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। নূর ভাইয়া খিলখিল করে হেসে আমার ফটো গুলো জুম করে দেখছে আর বলছে,,,,,,

—-“চাঁদপাখি ইউ আর লুকিং সো কিউট। গাল দুটো ফুলে কেমন লাল লাল হয়ে আছে। নাকটা ফোলে ঢোল হয়ে আছে। ঠোঁট দুটো উল্টে আছে। এক্টা গালে টোল পড়ে আছে। চোখের কুচকুচে কালো মনিটা কেমন ঘোলা ঘোলা লাগছে। চোখের সাদা অংশের ভাসমান রগ গুলো ফুলে আছে। ইসসসস কি কিউট লাগছে। ইচ্ছে তো করছে খুব আদর করতে।”

কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া চোখ বন্ধ করে ফোনের স্ক্রীনে অজস্র চুমো খাচ্ছে। মানে বুঝলাম না। এই লোকটা কি পাগল? আমাকে চোখের সামনে রেখে ফোনের তোলা ছবিতে চুমো খাচ্ছে। তিন বছরে নিশ্চয়ই মাথার কোনো এক্টা রগ ছিঁড়ে গেছে। ইচ্ছে করছে মাথাটা ফাঁটিয়ে মাথার ছেঁড়া রগ টা সুন্দর করে জুড়ে দিতে। তাহলে যদি লোকটার মাথায় এক্টু বোধ,বুদ্ধি আসে।

আর সহ্য হচ্ছে না এসব আদেক্ষেতা। ছোঁ মেরে নূর ভাইয়ার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বাথ টাবে ছুড়ে মারলাম। আমাদের মতো ফোনের ও তো শাওয়ার নিতে মন চায় নাকি? তাই এক্টু শাওয়ার নেওয়ার সুযোগ করে দিলাম। নূর ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে বাথ টব থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকালো। ভয়ে চুপসে গেছি আমি। বুঝতে পারি নি নূর ভাইয়া এতোটা রেগে যাবে। অনবরত শুকনো ঢোক গিলছি। নূর ভাইয়া তেড়ে এসে দাঁত কিড়মিড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“কি করলে এটা চাঁদপাখি? ডিরেক্টলি ফোনটা পানিতে ছুড়ে মারলে? ইউ নো হোয়াট আমার এই ফোনটাতে তোমার কতো হাজার হাজার ছবি আছে? এই ছবি গুলো আমার চোখের খোরাক আমার মনের খোরাক। তিনটে বছর আমি এভাবেই পাড় করেছি। তোমার ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে।”

কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া ডান হাতটা উপরে তুলল আমাকে চড় মারার জন্য। আমি চোখে অজস্র জল নিয়ে ভয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললাম। প্রায় এক মিনিট ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছি। চড় মারার কোনো আওয়াজ ই পেলাম না। গালে কোনো রকম ব্যাথা ও পেলাম না। পিটপিট করে চোখ খুললাম। নূর ভাইয়া বুকে দুই হাত গুজে বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সম্পূর্ণ চোখ খোলার সাথে সাথেই গালে প্রচন্ড ব্যাথার অনুভূতি পেলাম। নূর ভাইয়া আমার গালে কামড় বসিয়ে দিয়েছে। আমি গালে হাত দিয়ে নাক, মুখ কুচকে ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলাম। নূর ভাইয়া আমার গাল থেকে হাতটা সরিয়ে বাইটের জায়গাটায় হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,

—-“এটাই তোমার শাস্তি চাঁদপাখি। তোমার গাঁয়ে আঘাত করার সাহস নেই আমার। কেবল তোমাকে আদর করার সাহস আছে আমার। তুমি সামান্য এক্টু ব্যাথা পেলেই সেই ব্যাথাটা আমার বুকে এসে লাগে। আমাকে এভাবে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই চাঁদপাখি। অন্তত আমি তোমার সাথে কখনো হিংস্র হবো না। বার বার থেমে যাবো। কারণ, ভালোবাসার মানুষটার ক্ষেএে হিংস্রতা মানায় না।”

কথাগুলো বলেই নূর ভাইয়া বাইটের জায়গাটায় কয়েকটা চুমো খেলো। এরপর আমার দিকে তাকিয়ে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,

—–“চাঁদপাখি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। ক্ষিদেয় পেটের ভিতর ইঁদুর জাম্পিং করছে। আমি জ্যাকেট বের করে রাখছি। তুমি কুইকলি চলে এসো।”

নূর ভাইয়া আর দেরি করল না। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমে চলে গেলো। আমি গাল ফুলিয়ে ট্যাব ছেড়ে যেই না পানিতে হাত দিলাম অমনি এক লাফ দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে উঠলাম। ঠান্ডায় হাত কাঁটা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ফ্রিজের লাইনের সাথে টাংকির লাইনটা কানেক্ট করা আছে। তাই পানি গুলো বরফ হয়ে আছে। নূর ভাইয়া আমার চিল্লানির আওয়াজ শুনে হুড়মুড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গিজার অন করে দিলো। আহা ট্যাব থেকে এখন গরম পানি বের হচ্ছে। আরাম পেয়ে পানি নিয়ে এক প্রকার ছুড়াছুড়ি করছি আমি। নূর ভাইয়া ওয়াশরুমের দরজায় ঠ্যাস দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার কান্ড দেখছে। পানির ছুড়াছুড়ির এক পর্যায়ে আমি পুরো কাক ভেজা হয়ে গেলাম। নূর ভাইয়া এবার কিছুটা ধমকের স্বরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“প্লিজ স্টপ চাঁদপাখি। পুরো শরীর ভিজে যাচ্ছে তোমার। ঠান্ডা লেগে যাবে। এমনিতেই অনেক শীত পড়ছে।”

আমি খিলখিল করে হেসে নূর ভাইয়ার গায়ে পানি ছিটকাচ্ছি আর বলছি,,,,

—-“আমি কেনো একা ভিজব নূর ভাইয়া? তুমি ও একটু ভিজো। তাছাড়া তুমি থাকতে ঠান্ডা আমায় ছুঁতে ও পারবে না।”

নূর ভাইয়া শার্ট ঝাঁড়ছে আর বলছে,,,,,,

—-“দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

নূর ভাইয়া তেড়ে এসে আমাকে ঝাপটে ধরল। দুজনই কাক ভেজা হয়ে আছি। নূর ভাইয়া খুব জোরে আমার কান মলে বলল,,,,,,

—-“হুম এবার ভিজিয়ে দেখাও। দেখি তোমার কতো সাহস।”

আমি নাক, মুখ কুঁচকে কানে হাত দিয়ে বললাম,,,,,

—-“প্লিজ নূর ভাইয়া ছাড়ো। ব্যাথা পাচ্ছি তো।”

এর মাঝেই নিচ থেকে মারুর চিল্লানির আওয়াজ শুনতে পেলাম। নূর ভাইয়া আমার কান ছেড়ে আমার হাত ধরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে নিচ তলায় গেলো। সদর দরজার কাছে একজন বৃদ্ধ লোক দাঁড়িয়ে আছে। উনার সাথেই বকর বকর করছে মারু। কি নিয়ে বকর বকর করছে সঠিক বুঝতে পারছি না। আরেকটু কাছে গেলাম দুজন। মারু চিল্লিয়ে লোকটাকে বলছে,,,,,

—-“ফাও এক্টা দোকান দিয়া বসে আছেন মিয়া। মাটি কাটলেই তো পারেন। দোকানদার হয়ে জোর খাঁটিয়ে পাওনাদারের কাছ থেকে বাকি টাকা আদায় করতে পারছেন না! আপনার জায়গায় আমি হলে তো ঘাঁড়ে চেপে বসে বাকি টাকা আদায় করে ছাড়তাম।”

লোকটা তেজী কন্ঠে বলছে,,,,,,

—-“মৃন্ময় ভাই কইছে আপনারে নাকি উনি চিনে না। তাই উনি বিল ও পরিশোধ করতে পারব না। কইছে আপনার থেকে বাকি টাকা আদায় করতাম। আমি অতো শতো বুঝি না বাপু। আপনি তাড়াতাড়ি আমার চায়ের বিল পরিশোধ কইরা দেন।”

মারু গালে হাত দিয়ে কিছু এক্টা ভেবে বলল,,,,

—“ভাই আপনি এক্টু দাঁড়ান। আমি এক্ষুনি আপনার বিল পরিশোধ করে দিচ্ছি।”

কথাগুলো বলেই মারু আমাকে আর নূর ভাইয়াকে ক্রস করে সিঁড়ি বেয়ে সোজা উপরে উঠে গেলো। নূর ভাইয়া আর আমি বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নূর ভাইয়া আমার হাতটা ছেড়ে সদর দরজার কাছে গিয়ে দোকানীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“কি ব্যাপার খায়ের ভাই। আপনি এতো রেগে আছেন কেনো? কি হয়েছে আমাকে প্লিজ এক্টু ক্লিয়ারলি বলুন।”

দোকানী ফরফর করে নূর ভাইয়াকে ফার্স্ট টু লাস্ট খুলে বলল। নূর ভাইয়া পেটে হাত দিয়ে হু হা করে হাসি জুড়ে দিলো। আমার ও খুব হাসি পাচ্ছে। মারু আসলেই পারে। সাথে মৃন্ময় ভাইয়াও। কতো দশ টাকা এমনি হাত থেকে ফসকে পড়ে যায়। দোকানীকে দশ টাকা দিয়ে দিলে কি হতো? আসলে দুজনই সেইম। মিলবে ভালো। নূর ভাইয়া হাসি থামিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে দশ টাকা বের করে যেই না দোকানীর হাতে গুজতে যাবে অমনি পিছন থেকে মারু চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—–“দাঁড়ান নূর ভাইয়া। আপনি কেনো বিল দিচ্ছেন হুম? আপনার ভাবী থাকতে আপনাকে কোনো বিল দিতে হবে না। ওকে? তাছাড়া আমার জামাইয়ের এতো ভুড়ি ভুড়ি টাকা কে খাবে শুনি?”

কথাগুলো বলেই মারু নূর ভাইয়াকে ক্রস করে দোকানীর হাতে পঞ্চাশ টাকার আস্ত এক্টা নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,

—-“ধরুন ভাইয়া। আপনার বিল। পুরোটাই আপনি রেখে দিন। আমার জামাই কিচ্ছু মনে করবে না। আপনি এবার আসতে পারেন কেমন?”

দোকানী ক্লোজ আপ হাসি দিয়ে বলল,,,,,

—-“সত্যি আফা? পুরা টাকাই আমি রাইক্ষা দিমু?”

মারু দুই হাত ঝেঁড়ে বলল,,,,,

—-“হুম ভাই সত্যি। রাইক্ষা দেন।”

দোকানী আর দাঁড়ালো না। দৌঁড়ে বাড়ির দরজা থেকে ইউ টার্ণ নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলো। আমি তেঁড়ে গিয়ে মারুকে টেনে আমার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বললাম,,,,,,

—–“তোর জামাইয়ের টাকা মানে? তোর জামাই এলো কোত্থেকে? আর কোত্থেকেই বা নোটটা নিয়ে এলি?”

মারু দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,

—-“মৃন্ময়ের ডেস্কের ফার্স্ট ড্রয়ার থেকে হাতিয়ে নোট টা বের করেছি। ওর পুরো রুম আমার ঘাটা হয়ে গেছে। রুমের প্রতিটা চিপাচাপা বেশ ভালো করে হাতিয়ে নিয়েছি। আলমারী, কাবার্ড কোনো জায়গাতেই কোনো ধ্বংস মেয়ের ছবি পাই নি। তার মানে আমার লাইন ক্লিয়ার। নিশ্চিন্তে ওর সাথে সেটিং করতে পারব।”

নূর ভাইয়া আর আমি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মারু আমাদের ক্রস করে ফ্রিজ থেকে আপেল বের করে ড্রইং রুমের সোফায় বসে আপেল চিবুচ্ছে।

#চলবে,,,,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here