এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ২১+২২

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২১
#নিশাত_জাহান_নিশি নিশাত

—-“এ্যাঁ না হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি দিন। হাতে বেশি সময় নেই।”

—-“দিতেই হবে? না মানে আমি বলছিলাম কি….

—-“শুনুন বারো ভাতারী কম করুন। ফটাফট দিয়ে দিন। ছোট ভাইয়ের সামনে অমন এক্টু আধটু রোমান্স করাই যায়। আমি আর ওয়েট করতে পারছি না। গভীর চুম্বনে আমাকে সিক্ত করুন।”

মৃন্ময় কিছুক্ষন পর পর মুহিতের দিকে তাকাচ্ছে আর জোর পূর্বক মৃদ্যু হাসছে। মুহিত এক ভ্রু উঁচু করে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময়রের এমন ফেসিয়াল রিয়েকশানের মানে মুহিত বুঝছে না। মৃন্ময় মুহিতের থেকে চোখ সরিয়ে মিনমিন করে মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“মারু প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো। আমি পারব না এখন। মুহিত পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।”

—-“উফফফ আপনি আসলেই এক্টা মফিজ। সরে দাঁড়ান মুহিতের থেকে না হয় মুহিতকে বলুন আপনার থেকে সরে দাঁড়াতে। এমন ভাব ধরছেন মনে হচ্ছে যে, আপনার ছোট ভাই বয়সে একদমই কচি বাচ্চা। রূপকে একদম চুমোই খায় নি। আপনি জানেন, মুহিত কতোটা রোমান্টিক? হোস্টেলে মুহিত আমার সামনে রূপের ঠোঁটে চুমো খেয়েছে। জানেন, আমার খুব হিংসে হচ্ছিলো তখন।”

—-“ছ্যাঁ তুমি কি তাকিয়ে তাকিয়ে অসব দেখছিলে?”

—-“হ্যাঁ দেখেছি। তো কি হয়েছে? ভালোই তো লাগছিলো। আপনি ও মুহিতের সামনে আমাকে চুমো খেয়ে দেখান। প্লিজ তাড়াতাড়ি করুন। আর এক্টু দেরি করলেই ধরা খেয়ে যাবো।”

মৃন্ময় কান থেকে ফোনটা সরিয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে আমতা আমতা করে বলল,,,,,

—-“মুহিত শুন তুই এক্টু ঘুরে দাঁড়া। দু কানে হাত দিয়ে রাখবি। তোর ভাবীর সাথে আমার এক্টু পার্সোনাল কথা আছে।”

মুহিত বাঁকা হেসে বলল,,,,,,,

—-“চুমো খাবি তাই তো? আমার সামনেই খা না। প্রবলেম কি?”

মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকে বলল,,,,,

—-“পারমিশন দিয়েছিস তাহলে?”

—-“অফকোর্স।”

মৃন্ময় বাঁকা হেসে ফোনের স্ক্রীনে ঠোঁট লাগিয়ে উমমমমমমমমমমমম্মাহ শব্দে লম্বা এক্টা চুমো খেলো। মারু লজ্জায় লাল, নীল, সবুজ, হলুদ হয়ে ফটাফট কলটা কেটে দিলো। মুহিত বুকের উপর দু হাত গুজে ডেবিল স্মাইল দিয়ে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“ভাই তুই তো দেখছি আমাকে ও টপকাবি। আমার তো মনে হয় না আমি আজ ও পর্যন্ত রূপকে এতো দীর্ঘ চুমো খেয়েছি।”

মৃন্ময় ফোনটা ঠোঁটের কাছ থেকে সরিয়ে মুহিতের মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,,,,,,,

—-“ফুট বে। রোমান্সে ফুল সেঞ্চুরি করার ইচ্ছে আছে আমার।”

—-“আর আমি তো অলরেডি থাউজেন্ড সেঞ্চুরি করে বসে আছি।”

কথাটা বলেই মুহিত হু হা করে হেসে দিলো। সাথে মৃন্ময় ও।

অন্যদিকে,,,,,,,

মারু লজ্জা রাঙ্গা মুখ নিয়ে ফোনটা হাতে করে রুমে ঢুকে পড়ল। রূপ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুমের বাইরে উঁকি চুঁকি মারছে। মারু পিছন থেকে রূপের কাঁধে হাত রেখে লজ্জামাখা কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“রূপ নে তোর ফোন।”

রূপ চট জলদি মারুর দিকে ফিরে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,

—-“কথা বলা শেষ?”

মারু মাথাটা নিঁচু করে মুচকি হেসে বলল,,,,,

—-“হুম শেষ।”

রূপ কৌতুহলী দৃষ্টিতে মাথাটা নিচু করে মারুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? ফোনেই অসব হয়ে গেছে নাকি?”

মারু লজ্জায় মুখটা ঢেকে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। রূপ মারুর মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,,,,,

—-“ফোনে অসব করেই লজ্জা পাচ্ছিস। আমার মতো সরাসরি হলে কি করবি?”

মারু মুখ থেকে হাত সরিয়ে রূপের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“হ্যা রে রূপ মুহিত তোকে কতোবার চুমো খেয়েছে।”

রূপ মারুর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বেডের উপর খুব আয়েস করে বসে নাস্তার প্লেইট থেকে এক্টা কেকের পিস মুখে পুড়ে বলল,,,,,,

—-“আনলিমিটেড। মাঝে মাঝে তো পাঁচ, দশ মিনিট ও ওভার হয়ে যায়, এরপরে ও ছাড়তে চায় না।”

মারু মুখটা ফুলিয়ে রূপের পাশে বসে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“ইসসস আমার ও চুমো খেতে ইচ্ছে করছে। আমি তো মৃন্ময়কে আধ ঘন্টার আগে ছাড়বই না।”

মারুর কথা শুনে রূপের বিষম লেগে গেলো। একনাগাড়ে কেশে চলছে সে। মারু তাড়া হুড়ো করে রূপের হাতে পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,

—-“পানিটা খা জলদি।”

রূপ চটপট মারুর হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক চুমুকেই এক গ্লাস পানি ভ্যানিশ করে দিলো। এর মাঝেই মাইমুনা আহমেদ আর মিনা দরজা ঠেলে রুমে ঢুকল। রূপের চোখ লাল হয়ে গড়গড় করে পানি পড়ছে। রূপ আর মারু বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। রূপের চোখ, মুখের অবস্থা দেখে মাইমুনা আহমেদ কিছুটা চিন্তিত হয়ে রূপের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,

—-“কি হয়েছে রূপ? তোমার চোখ, মুখের এই অবস্থা কেনো?”

রূপ পর পর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,

—-“আসলে আন্টি আমার বিষম লেগেছে। হয়তো ফুফুমনি নাম নিয়েছে। কেক খেতে গিয়ে আচমকাই গলায় আটকে গেলো। তাই চোখ লাল হয়ে চোখ থেকে পানি পড়ছে।”

মাইমুনা আহমেদ কিছু বলার আগেই মিনা তেড়ে এসে রুপের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,

—-“সত্যি বলছ? নাকি অন্য কোনো কাহিনী আছে? আমার তো সবটাই বানোয়াট মনে হচ্ছে!”

রূপ কিছু বলার আগেই মারু মিনাকে উদ্দেশ্য করে রাগী কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“আপু তুই না এক্টু বেশিই বুঝিস। এতো বেশি বুঝা ভালো না বুঝলি?”

মিনা চোখ, মুখ লাল মারুকে কিছু বলতে নিলেই মাইমুনা আহমেদ মিনাকে এক হাত দিয়ে থামিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এই তোরা চুপ কর। সবসময় শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া।”

মিনা আর মারু চুপ হয়ে গেলো। তবে মিনা এখনো রাগী দৃষ্টিতে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মাইমুনা আহমেদ মলিন হেসে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“এখন কেমন লাগছে রূপ? পানি খেয়েছ তো?”

—-“হুম আন্টি খেয়েছি। এখন কিছুটা বেটার ফিল করছি।”

—-“ওকে। এবার তাহলে এক কাজ করো। মারুকে রেডি করিয়ে নিচে চলে এসো। এক্টু পরেই মেহেন্দির অনুষ্ঠান শুরু হবে।”

সাথে সাথেই মারু মুখটা কালো করে ফেলল। রূপ দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,,

—-“আন্টি আমি কিন্তু খুব ভালো মেহেন্দি পড়াতে পারি। আপনাদের আপওি না থাকলে আমি কি মারুকে মেহেন্দি পড়াতে পারি?”

মাইমুনা আহমেদ এক গাল হেসে বলল,,,,,,

—-“আমাদের কোনো আপওি নেই রূপ। রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে চলে এসো। আত্নীয় স্বজনরা ওয়েট করছে।”

মাইমুনা আহমেদ হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মিনা কিছুক্ষন রাগী দৃষ্টিতে মারু আর রূপের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আচমকাই মারু চোখ লাল করে রূপের হাতে চিমটি কেটে বলল,,,,,,,

—-“এই ফাজিল মেয়ে কি দরকার ছিলো আম্মুর কাছে ভালো সাজার? নাচতে নাচতে বলে দিয়েছে আন্টি আমি খুব ভালো মেহেদি পড়াতে পারি। মারুকে আমিই মেহেদী পড়াব। যত্তোসব ঢং। এই দিকে আমার সর্বনাশ চলছে উল্টোদিকে ওর পৌষ মাস।”

রূপ দাঁত গিজগিজ করে মারুর কান মলে বলল,,,,,

—-“এই জন্যই অন্যের ভালো করতে নেই বুঝলি? আরে আমি মেহন্দি পড়ালে তো হাতের কোথাও না কোথাও মৃন্ময় নামটা ঠাঁই পাবে। অন্য কেউ পড়ালে তো তা ও হবে না। ভাল্লাগবে তখন তাই না?”

মারু জিভ কেটে মুখে দুঃখী দুঃখী ছাপ ফুটিয়ে বলল,,,,,,,

—-“স্যরি ইয়ার। আমি একদম বুঝতে পারি নি। তুই কতো ধূর্ত হয়ে গেছিস বল। এখন তো মনে হচ্ছে তুই আমাকেই টপকে উপরে উঠে যাবি।”

রূপ মারুর কানটা ছেড়ে ভাব নিয়ে বলল,,,,,,

—-“দেখতে হবে না বউটা কার। মুহিতের সাথে থেকে থেকে বুদ্ধি খুলছে আমার।”

—“যা বলেছিস!”

রূপ এবার মারুর কাঁধে হাত রেখে বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,,,,,,

—-“চল চল রেডি হয়ে নেই। নিচ থেকে আবার ডাকাডাকি শুরু হবে।”

মারু কাবার্ড থেকে এক্টা গাঢ় সবুজ কালার শাড়ী বের করে নিজের মতো শাড়ী পড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রূপ ল্যাকেজ থেকে এক্টা গাঢ় শেওলা কালার শাড়ী বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে একেবারে শাড়ী পড়ে রুমে ঢুকবে সে।

প্রায় বিশ মিনিট পর রূপ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে রূপ আয়নার সামনে দাঁড়ালো। এতক্ষনে মারুর শাড়ি পড়া ও কমপ্লিট হয়ে গেছে। দুজনই কুঁচি ঠিক করছে। আচমকাই রুমের দরজা ঠেলে মেঘা আর মিনা রুমে ঢুকল। মেঘা টিয়া কালার শাড়ি পড়ে হালকা সাজে রেডি হয়ে আছে। মিনা নীল কালারের শাড়ী পড়ে কোনো সাজ গোজ ছাড়াই মারুর রুমে চলে এলো। রূপ আর মারুর পিছনে দাঁড়িয়ে মিনা বুকের উপর দু হাত গুজে রাগী কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা বাজছে। অথচ তোমরা এখনো রেডি হও নি? গ্রামের মহিলারা কি তোমাদের জন্য মাঝ রাত পর্যন্ত ওয়েট করবে? তোমরা বোধ হয় ভুলে যাচ্ছ এটা গ্রাম, শহর না। গ্রামে রাত দশটা মানেই ভোর রাত।”

মারু মিনার কথায় পাওা না দিয়ে চোখে কাজল পড়ছে। রূপ কাতর কন্ঠে মিনার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“স্যরি আপু। আসলে শাড়ি পড়তে পড়তে লেইট হয়ে গেছে। আমাদের আর পনেরো মিনিট সময় দিন। আমার ফটাফট রেডি হয়ে নিচ্ছি।”

—-“ওকে আমি এখানেই দাঁড়ালাম। তোমরা রেডি হও। জাস্ট ফিফটিন মিনিটস ওকে?”

রূপ আমতা আমতা করে বলল,,,,,,,

—-“বলছিলাম কি আপু আপনি নিচে যান না। আমরা পনেরো মিনিটের আগেই নিচে চলে যাবো। আপনার টেনশান করতে হবে না।”

—-“আমি কোথাও নড়ছি না ওকে? তোমরা তোমাদের কাজ করো কুইকলি।”

রূপ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে চুলে খোঁপা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মনে মনে সে মিনাকে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুঁয়ে ফেলছে। মারু তো পারছে না মিনাকে খুন করতে। মেঘা চুপ করে দাঁড়িয়ে সবার কান্ড কীর্তি দেখছে। প্রায় পনেরো মিনিট পর রূপ আর মারুর সাজ গোজ শেষ হয়ে গেলো। দুজনেই চোখে গাঢ় করে কাজল পড়েছে, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পড়েছে, হাত ভর্তি চুড়ি পড়েছে, চুলে হাত খোঁপা করেছে, গলায় কানে ম্যাচ করা অরনামেন্টস পড়েছে। ব্যাস এতেই দুজনের সাজ কমপ্লিট। এই হালকা সাজেই দুজনকে ফাটাফাটি লাগছে।

মারু মনে মনে বিরাট খুশি। তবে চোখে,মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব ফুটিয়ে রেখেছে। নয়তো সবাই সন্দেহ করবে। সবার চোখে ধরা খেয়ে যাবে। বিশেষ করে সবাই রূপকে সন্দেহ করবে। দুজনের সাজ গোজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মিনা দুজনের হাত টেনে রুম থেকে বের হয়ে সোজা ড্রইং রুমে চলে গেলো। ড্রইং রুমটা মেহমানে ভর্তি। গ্রামের মেয়ে, মহিলা সবাই উপস্থিত। সবাই মিনা আর মারুর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মাঝ বয়সী মেয়েরা কাপড় পড়ে গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে। ওদের মাঝে টায়রা ও আছে।

মিনা মারু আর রূপকে টানতে টানতে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। পুরো বাড়িতে গান, বাজনা, আলো আর রোশনাই জ্বলছে। বাড়ির ডেকোরেটিং করা অলরেডি শেষ। কাল শুধু হলুদের প্যান্ডেল করলেই হবে।

মিনা মেহেদীর এক্টা বড় বক্স রূপের হাতে তুলে দিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এই নাও মেহেদী। শুরু করো মেহেন্দীর প্রোগ্রাম।”

রূপ মুচকি হেসে মেহেদীর বক্স থেকে এক্টা মেহেদী হাতে নিয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে মেহেন্দী পড়ানো শুরু করলো। স্পীকারের ধুমধাম শব্দে রূপের বুক ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। বেশি আওয়াজ রূপ সহ্য করতে পারে না। হার্ট প্রবলেম দেখা দেয়। সাথে সাথে শুরু হয় হাঁপানী। রূপ মারুকে মেহেন্দী পড়াচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,,

—-“ইসসসস মেডিসিন বক্সটা তো মুহিতের ল্যাকেজে ফেলে এসেছি। আমার এখন থেকেই শরীরটা দুর্বল লাগছে। কিছুক্ষন পরে হয়তো শ্বাস বেড়ে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। তখন কি করব আমি? মুহিত জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে।”

এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই মিনা রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—-“শুনো রূপ, ডিজাইনের মাঝখানে অনিক নামটা লিখে দিও। মারুর হাজবেন্ডের নাম।”

মারু চোখ লাল করে মিনার দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ মলিন হেসে মিনার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“ওকে আপু তাই হবে।”

মারু এবার মিনার থেকে চোখ সরিয়ে রূপের দিকে চোখ লাল করে তাকালো। রূপ চোখ মেরে মারুকে কিছু এক্টা বুঝালো। মারু ও শান্ত হয়ে গেলো। মেহেন্দি দেওয়ার মাঝখানে এসে রূপ কিছুটা থেমে ওর পাশে তাকালো। মিনা চোখ পাকিয়ে মারুর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ মনে মনে বিড়বিড় করে মিনার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“ইসসসস এই ধ্বংস মহিলা তো এখান থেকে নড়ছেই না। এভাবে ড্যাব ড্যাব করে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে মৃন্ময় নামটা লিখব কি করে? ধ্যাত এভাবে আর হচ্ছে না। যে করেই হোক উনাকে এখান থেকে সরাতে হবে।”

রূপ মাথায় এক্টা শয়তানি বুদ্ধি এঁটে মিনার দিকে তাকিয়ে কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,

—-“আপু টায়রাকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এতোক্ষন তো ঐখানেই নাচছিলো।”

মিনা পিছনে ঘুড়ে দেখল আসলেই টায়রা নেই। কোথাও যাচ্ছে না ওকে। মিনা তাড়াতাড়ি করে বসা থেকে উঠে টায়রাকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পুরো ড্রইং রুম ঘুরে ঘুরে মিনা টায়রা টায়রা বলে চেচাচ্ছে। স্পীকারের আওয়াজে কেউ মিনার গলার আওয়াজ শুনছে না।এক্টু আগে রূপই মেঘাকে চোখ মেরে টায়রাকে ড্রইং রুম থেকে সরাতে বলেছে। মেঘা ও ইশারা বুঝে টায়রাকে নিয়ে উপরের রুমে চলে গেছে। মিনা উঠে যাওয়ার সাথে সাথেই রূপ তাড়াহুড়ো করে মারুর হাতের তালুতে মৃন্ময়ের নামটা ইংলিশে খুব সুন্দরভাবে ডিজাইন করে দিলো। কেউ দেখলে বুঝবে না এটা মৃন্ময়ের নাম। নামটা ইংলিশে পেঁচিয়ে লিখা হয়েছে। কারে সাধ্য নেই বুঝার।

রূপ খুব তাড়াতাড়ি করে মারুর দুই হাতে মেহেন্দি পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মিনা আসার আগেই রূপ মেহেন্দি পড়ানো শেষ করতে চায়। মারু মৃন্ময়ের নামটার দিকে তাকিয়ে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

—-“দোস্ত তুই তো বেশ চালাক হয়ে গেছিস। কেউ ধরতেই পারবে না এটা যে মৃন্ময়ের নাম।”

—-“হুম তুই অনিক বলে চালিয়ে দিবি। বিশেষ করে মিনা আপুকে।”

—-“মিনা জীবনে ও বুঝবে না এটা মৃন্ময়ের নাম। কারণ, পেঁচানো লিখা সে বুঝে না। আমি যেটা বলব সেটাই বিশ্বাস করবে। মিনা ছাড়া অন্য কেউ আমার হাতের মেহেন্দি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে আসবে না। সো নিশ্চিন্তে থাক।”

প্রায় অনেকক্ষন পর মারুর হাতে মেহেন্দি লাগানো শেষ হলেই মিনা টায়রাকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে উপরের রুম থেকে নেমে ড্রইং রুমে চলে এলো। মিনা এসেই মারুর হাত চেইক করে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“অনিকের নামটা কোথায়?”

রূপ শুকনো ঢোক গিলে মৃন্ময়ের নামটা দেখিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আপু এটা। খুব সুন্দর ডিজাইন করে অনিক জিজুর নামটা লিখে দিয়েছি। আপনার পছন্দ হয়েছে?”

মিনা নামটা কিছুক্ষন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলল,,,,,

—-“খারাপ হয় নি।”

রূপ মলিন হেসে টায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“টায়রা মনি তুমি এতোক্ষন কোথায় ছিলে?”

টায়রা বেশ আহ্লাদি স্বরে বলল,,,,,,,

—-“আমি তো এতোক্ষন উপরে ছিলাম। মেঘা খালামনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো তো তাই।”

—-“ওহ আচ্ছা।”

টায়রার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘার দিকে তাকিয়ে রূপ বাঁকা হাসল। মেঘা ও বাঁকা হেসে চোখ মেরে দিলো। আচমকাই মিনা রূপ আর মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“শুনো এখন তোমরা অনুষ্ঠান দেখো। নাচ, গান দেখো। ঘন্টা দেড় এক পরে খেয়ে দেয়ে দুজনই ঘুমিয়ে পড়বে।”

মারু মিনাকে মুচকি দিয়ে ছোটদের নাচ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রূপ মলিন হেসে টায়রার সাথে আলাপে মগ্ন হয়ে গেলো। এভাবেই কেটে গেলো প্রায় দুই ঘন্টা। ঘড়িতে রাত দশটা। মারু হাতের মেহেন্দি উঠিয়ে ডিনার করতে বসে গেছে। সাথে রূপ ও। বাড়ির সবাই ডিনার টেবিলে বসে নিজেদের মতো করে খেয়ে যাচ্ছে। তবে রূপ খেতে পারছে না। শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। এজমা দেখা দিয়েছে। কোনো রকমে এক্টু খেয়ে রূপ রুমে ঢুকে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল। মারু ও অল্প এক্টু খেয়ে রূপের পাশে এসে শুয়ে পড়ল। রূপ কাউকেই ওর কষ্টটা বুঝাচ্ছে না। এমনকি মারুকে ও না।

অন্যদিকে,,,,,,,

মুহিত আর মৃন্ময় লজের পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে নিজেদের রুমে ঢুকেছে। ফ্রেশ হয়ে দুজনই ঘুমাতে যাবে। ল্যাকেজ বের করে মুহিত শার্ট নামাতে গিয়ে রূপের মেডিসিন প্যাকেটটা দেখতে পেলো। মাথায় হাত দিয়ে মুহিত মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“ভাইয়া….রূপ মেডিসিন নেয় নি।”

মৃন্ময় কিছুটা উওেজিত হয়ে বলল,,,,,,,

—-“ইসসসস কি করবি এখন?”

—-“আ’ম সিউর রূপ কষ্ট পাচ্ছে। এক্টা ঔষধ ও ছোঁয়ে দেখে নি। ডক্টর বলেছে সবগুলো মেডিসিন কনটিনিউ করতে। আমাকে এক্ষনি রূপের কাছে যেতে হবে।”

—-“পাগল হয়েছিস? যদি ধরা পড়ে যাস? ওদের বাড়িতে কিন্তু লোকের অভাব নেই।”

—-“ধরা পড়ব না। কনফিডেন্স আছে। আমার রূপ খুব কষ্ট পাচ্ছে ভাইয়া। হাজার রিস্ক থাকলে ও আমাকে যেতে হবে। শ্বাস বেড়ে গেলে ওর রূহ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।”

—-“তাহলে চল, আমি ও তোর সাথে যাবো।”

রূপ আর মুহিত ল্যাকেজ থেকে দুটো কালো হুডি বের করে পড়ে নিলো। মেডিসিন প্যাকেটটা হাতে নিয়ে মুহিত মৃন্ময়ের হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। লজের নিচে নেমে মুহিতের ছোট গাড়িতে মৃন্ময় আর মুহিত বসে পড়ল। মুহিত ড্রাইভিং বসে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো।

প্রায় পনেরো মিনিট পর মুহিত গাড়িটা মারুদের বাড়ির মেইন রাস্তায় দাঁড় করালো। দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে মাথায় হুডির টুপিটা জড়িয়ে নিলো। নিঃশব্দে হাঁটতে হাঁটতে দুজন মারুদের বাড়ির গেইটের সামনে চলে এলো। আচমকাই একটা বড় গাড়ি মারুদের বাড়ির গলিতে ধেঁয়ে আসছে। মুহিত আর মৃন্ময় তাড়াহুড়ো করে গেইটের পাশের বড় নারকেল গাছটার পিছনে লুকিয়ে পড়ল।

ছেলেটি ওর বিশাল গাড়িটা মারুদের বাড়ির গেইটের সামনে পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। চুল গুলো স্পাইক করতে করতে ছেলেটা গুনগুনিয়ে গেইটের ভিতর ঢুকে পড়ল।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২২
#নিশাত_জাহান_নিশি

ছেলেটি ওর বিশাল গাড়িটা মারুদের বাড়ির গেইটের সামনে পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। চুল গুলো স্পাইক করতে করতে ছেলেটা গুনগুনিয়ে গেইটের ভিতর ঢুকে পড়ল।

মুহিত আর মৃন্ময় গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে উঁকি মেরে গেইটের ভিতর তাকালো। ছেলেটা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে মারুদের সদর দরজা পাড় হয়ে ড্রইং রুমে ঢুকে গেলো। মুহিত ভ্রু কুঁচকে ফিসফিসিয়ে মৃন্ময়ের কানে বলল,,,,,,

—-“এটা কে রে ভাই? চিনিস একে? সকালে যখন এসেছিলি তখন দেখেছিলি একে?”

—-“না একে তো সকালে দেখি নি। এই প্রথম দেখলাম। হয়তো রিলিটিভ হবে।”

—-“হবে হয়তো।”

মুহিত কিছু এক্টা ভেবে আবার বলল,,,,,

—-“আচ্ছা অসব ছাড় এখন বাড়ির ভিতর ঢুকব কি করে? গেইট তো খোলা আছে। চল উঁকি দিয়ে দেখি গেইটের ভিতর কোনো গার্ড আছে কিনা।”

—-“চল।”

দুজনই ধীর পায়ে হেঁটে গেইটের ভিতর উঁকি মেরে বেশ কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করে ও কোনো গার্ডস দেখতে পেলো না। মৃন্ময় দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলল,,,,,

—-“রাস্তা ক্লিয়ার। ভেতরে চল।”

মুহিত আর মৃন্ময় ঝড়ের গতিতে দৌঁড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। সদর দরজায় উঁকি মারার সাথে সাথেই একদল লোক ড্রইং রুম থেকে বের হচ্ছে আর বলছে,,,,,,

—-“চল চল তাড়াতাড়ি চল। ভাই কিন্তু বলেছে চব্বিশ ঘন্টা বাড়ির ভিতর নজর রাখতে। এক্টা কুকুর ও যেনো পারমিশন ছাড়া বাড়ির ভিতর ঢুকতে না পারে।”

মুহিত আর মৃন্ময় শুকনো ঢোক গিলে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় কাঠ কাঠ গলায় মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এবার কোথায় যাবি? কি করবি? ওরা তো আমাদের ধরে ফেলবে।”

মুহিত কোনো কথা না বলে মৃন্ময়ের হাত ধরে রকেট গতিতে ছুটে বাড়ির পিছনের দিকে চলে গেলো। পিছনের দিকটা ময়লা আর্বজনায় ভর্তি। খুবই স্যাঁতসেঁতে আর অপরিষ্কার জায়গা। মশা, মাছির তো অভাব ই নেই। দুজনই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। মৃন্ময় অনবরত শ্বাস নিচ্ছে আর মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—-“ওহ্ গড জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম। ভাগ্যিস তোর মাথায় আইডিয়াটা এলো। আমি তো ভাবতেই পারি নি পিছনের দিকে ও জায়গা আছে। অন্তত কারো চোখে ফাঁকি দেওয়ার এক্টা স্পেস পাওয়া গেলো।”

মুহিত হাঁফাতে হাঁফাতে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আস্তে কথা বল ভাই। আর এক্টুর জন্য আমরা বেঁচে গেছি। আদৌ বেঁচেছি কিনা জানি না। গার্ডসরা এক্টু হলে ও আঁচ করতে পেরেছে। রূপের কাছে পৌঁছাবো কি করে বুঝতে পারছি না।”

এর মাঝেই এক্টা পুরুষের ছাঁয়া বাড়ির পিছনের জায়গাটাতে পড়ল। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো গার্ডস তল্লাশিতে নেমেছে। মুহিত আর মৃন্ময় দেয়ালের সাথে একেবারে আঠার মতো চিপকে গেলো। দুজনই নাক মুখ চেঁপে রেখেছে। যেনো নিশ্বাসের শব্দটা ও কারো কানে না পৌঁছায়। গার্ডস টা অন্ধকারে কিছু ক্ষন উঁকি চুঁকি মেরে জায়গা থেকে সরে আবার গেইটের কাছে চলে গেলো। মুহিত বড় এক্টা স্বস্তির শ্বাস ফেলে উঁকি দিয়ে বাড়ির সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল গার্ডসরা পুরো বাড়িটা ঘিরে রেখেছে। লুকিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকার কোনো রাস্তা রাখে নি। মুহিত মাথায় হাত দিয়ে চোখে, মুখে রাগী ভাব ফুটিয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,

—–“ওহ্ সিট ভাই। ওরা সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন বাড়ির ভিতর ঢুকব কি করে?”

মৃন্ময় শান্ত গলায় মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,,

—-“ধৈর্য্য ধর। দেখ না কি হয়। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে দেখি। গার্ডসরা হয়তো এক্টু পরেই ঘুমে কাত হয়ে যাবে।”

—-“দেখে মনে হচ্ছে না ওদের চোখে ঘুম আসবে। এরপরে ও কিছুক্ষন ওয়েট করে দেখি।”

মুহিত আর মৃন্ময় অস্থিরতার মাঝে সময় কাটাচ্ছে। ওরা দুজনই সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে,,,,,,,

অনিক মারুর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আব্বাস আহমেদ, মাইমুনা আহমেদ, মিনা মিলে অনিককে ঘিরে রেখেছে। ওরা বেশ খুশি অনিককে পেয়ে। অনিকের সাথে নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করছে ওরা। কিন্তু অনিক ওদের ভাও দিচ্ছে না। সে ফোনে স্ক্রলিং করছে আর মারুর রুমের দরজা ধাকাচ্ছে। মারু গভীর ঘুমে মগ্ন। তাই সে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ কানে শুনছে না। রূপ শোয়া থেকে উঠে বসে আছে। শ্বাসকষ্টের জন্য সে ঘুমাতে পারছে না। এর উপর দরজার অমন খটখট শব্দ। রূপ কিছুটা অসহ্য হয়ে গাঁ থেকে কম্বলটা সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে দরজার সামনে দাঁড়ালো। গাঁয়ের উড়নাটা ঠিক করে রূপ খুব সাবধানে দরজার খিল খুলে দিলো। সাথে সাথেই অনিক চোখ বন্ধ করে রূপকে ঝাপটে ধরে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,,,,

—-“আমি চলে এসেছি মারু। ঢাকা থেকে ফিরেই তোমাকে দেখতে চলে এলাম। তোমাকে এতোটা কাছে পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। আই লাভ ইউ মারু। লাভ ইউ সো মাচ।”

রূপ এক ঝটকায় অনিকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চোখ,মুখ লাল করে অসুস্থ শরীর নিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,,,

—-“হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার সাহস হয় কি করে আমার গাঁয়ে টাচ করার? আমাকে জড়িয়ে ধরার? কিছু যাচাই বাছাই না করেই যার তার গাঁয়ে হামলে পড়ার স্বভাব আপনার তাই না?”

অনিক দাঁত গিজগিজ করে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এই কে তুই? আমার মারুর রুমে কি করছিস? তোর তো সাহস কম না। নিজেই ভুল করবি আবার নিজেই অন্যের উপর দোষ চাঁপিয়ে দিবি?”

রূপ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর তেজী কন্ঠে বলছে,,,,,,,,

—-“আমি মারুর বেস্ট ফ্রেন্ড। মারুর বিয়েতে এসেছি। আর শুনুন আমি কোনো দোষ করি নি। দোষ করেছেন আপনি। সামনে পিছনে না তাকিয়েই যাকে তাকে জড়িয়ে ধরেছন! আচ্ছা…. এটাই কি আপনার সভ্যতা?”

অনিক শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আমার কোনো সভ্যতা নেই বুঝলি? আমি সবার কাছেই অসভ্য। শুধু আমার মারু ছাড়া।”

—-“হুম ব্যবহার দেখলেই বুঝা যায়, আপনার মাঝে যে সভ্যতার ছিটি ফোঁটা নেই।”

আচমকাই আব্বাস আহমেদ তেড়ে এসে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,,

—–“রূপ চুপ করো। অনিক আমাদের বাড়ির জামাই। তুমি প্লিজ রুম থেকে বের হও। অনিক মারুর সাথে দেখা করতে এসেছে।”

মিনা হুড়মুড়িয়ে এসে রূপের হাত ধরে টানতে টানতে রূপকে নিয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো। এতো টানা হেছড়ায় রূপের শ্বাস যেনো আরো বেড়ে গেলো। রূপ চুপ করে সোফায় বসে আছে। মিনা আর মাইমুনা আহমেদ রূপের দুই পাশে বসে আছে। আব্বাস আহমেদ ও সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। ওরা চারজনই সোফায় বসে আছে। সবাই রাগী দৃষ্টিতে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে।

রূপ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,,

—-“তাহলে ঐ ছেলেটাই অনিক। যার সাথে মারুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। এখন তো দারুন ভয় লাগছে ঐ ছেলে না আবার মারুকে একা পেয়ে খারাপ কিছু করে বসে। ইসসসসস বিয়ের দিনের প্ল্যানটা সাকসেস হবে কিনা তা নিয়ে ও ভয় লাগছে। অনিক ছেলেটা মোটে ও সুবিধের না।”

রূপ আপন মনে বিড়বিড় করেই চলছে। অনিক মারুর পাশে বসে মারুর গাঁ থেকে কম্বলটা সরিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। শীত শীত অনুভূতি পেয়ে মারু পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো। অনিককে দেখার সাথে সাথেই মারু লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“এই আপনি আমার রুমে কি করছেন? এক্ষনি আপনি আমার রুম থেকে বের হয়ে যান। আমি আপনাকে সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ লিভ মি এলন।”

অনিক কানে হাত দিয়ে নাক, মুখ কুঁচকে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এমনিতে ও আমি চলে যেতাম। এতোটা রাগ দেখানোর দরকার ছিলো না মারু। তোমাকে জাস্ট দেখতে এসেছি। দেখা শেষ এবার চলে যাচ্ছি। আর মাএ একদিন। এরপর তো তুমি আমারই হবে। সারাক্ষন তোমাকে চোখে চোখে হারাবো। আহা ভাবতেই খুশিতে মনটা কেমন ভরে উঠছে।”

মারু চোখ বন্ধ করে নাক, মুখ খিঁচে অনিকের কথা গুলো শুনছে। রাগে দুঃখে ওর ভিতর ফেঁটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে অনিককে লাত্থি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিতে। অনিক এক্টু ঝুঁকে মারুর চুলে হাত লাগাতে নিলেই মারু বসা থেকে উঠে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“রুম থেকে বের হন বলছি। না হয় খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমাকে বেশি ঘাটালে না এক্ষনি আমি বিয়েটা ভেঙ্গে দিবো।”

অনিক বসা থেকে উঠে মারুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রাগে গিজগিজ করে বলল,,,,,,,

—-“বিয়েটা তোমার বাপ ও ভাঙ্গতে হবে না ওকে? আর তুমি তো খুব দূরের ব্যাপার। আসছি আমি। দুদিন পরে তোমার সব তেজ ভাঙ্গব। সাথে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ও।”

কথাগুলো বলেই অনিক রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মারু মুখ বাঁকা করে অনিকের যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“উমমম এসেছে আমার তেজ ভাঙ্গতে। একদিন পর আমিই তোর তেজ ভাঙ্গব। সালা, কুওে, কামিনে। আবার বলছে রূপকে ও দেখে নিবে। মুহিত তোর হাড্ডি, গুড্ডি ভাঙ্গবে বুঝলি?”

অনিক নিচ তলায় নেমে ড্রইং রুম ক্রস করে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রইং রুমের উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে, সাথে রূপ ও। অনিক বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই গার্ডসরা দল বেঁধে অনিকের পিছু পিছু ছুটল। মুহিত আর মৃন্ময় ঠিক এই সুযোগটার ই অপেক্ষায় ছিলো। দুজনই বাড়ির পিছন থেকে বের হয়ে যেই না সদর দরজার দিকে পা বাড়ালো অমনি ওরা আবার পিছনে হটে সদর দরজার দেয়ালের পাশে চিপকে গেলো। ড্রইং রুমে এখনো আব্বাস আহমেদ, মাইমুনা আহমেদ, মিনা আর রূপ দাঁড়িয়ে আছে। ভাগ্যিস ওরা সদর দরজার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। না হয় মুহিত আর মৃণ্ময় দুজনই ধরা পড়ে যেতো।

ড্রইং রুম থেকে কেউ ই নড়ছে না। মুহিত আর মৃন্ময় হতাশায় ভুগছে। ঐদিকে গার্ডসদের ও আসার সময় হয়ে গেছে। দুজনই পড়েছে মহাবিপদে। না ভিতরে ঢুকতে পারছে, না বাহিরে লুকাতে পারছে। এক পর্যায়ে রূপ ড্রইং রুম ছেড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। কিন্তু মারুর ফ্যামিলি মেম্বাররা এখনো নড়ছে না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।

আচমকাই মুহিতের নজর গেলো গার্ডেনের পাশে ছোট্ট এক্টা রুমের দিকে। মুহিত আর দেরি না করে মৃন্ময়কে নিয়ে এক দৌঁড়ে রুমের দরজা ঠেলে রুমের ভিতর ঢুকে গেলো। এতোক্ষনে গার্ডসরা ও বাড়ির ভিতর ঢুকে নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল। মুহিত রুমটায় ঢুকে বাঁকা হেসে মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। মৃন্ময় ও বাঁকা হেসে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমটা হলো ইলেকট্রিসিটি রুম। এক্টা সুইচ অফ করলেই পুরো বাড়ি অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। মুহিত আর দেরি না করে পুরো বাড়ির কারেন্টের সুইচ অফ করে দিলো। সাথে সাথেই বাড়িটা অন্ধকারে তলিয়ে গেলো।

গার্ডসরা জড় করে হায় হুতাশ করে বলছে,,,,,,

—–“ইসসসস কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেলো না। জেনারেটর টা ও নষ্ট। এবার অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সব মশা, মাছি মার।”

মুহিত আর মৃন্ময় ধীর পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গার্ডদের ক্রস করে সোজা বাড়ির সদর দরজার কাছে চলে গেলো। অন্ধকারে ড্রইং রুমে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে মিনা বকবক করে বলছে,,,,,,,,

—–“ধ্যাত। কারেন্ট চলে গেলো। এই অন্ধকারে রুমে যাবো কি করে? ফোনটা ও টায়রার কাছে। মেয়েটা হয়তো অন্ধকারে ভয় পাচ্ছে।”

আব্বাস আহমেদ আর মাইমুনা আহমেদ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সোফায় বসে পড়ল। বাধ্য হয়ে মিনা ও বসে পড়ল। পুরো বাড়িটা কুচকুচে অন্ধকার হয়ে আছে। এদিক থেকে সেদিক মুভ করা যায় না। মুহিত আর মৃন্ময় দুজন দুজনের হাত ধরে পা টিপে টিপে খুব সাবধানে ড্রইং রুমে ঢুকে হাতিয়ে হাতিয়ে সিঁড়িতে উঠে গেলো। ওরা এক পা এক পা করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। কেউ বুঝতে ও পারছে না কেউ রুমে আছে আর হেঁটে হেঁটে উপরে যাচ্ছে।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার পর মুহিত পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনের স্ক্রীনের আলো দিয়ে রূপ আর মারুর রুম খোঁজার চেষ্টা করছে। ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালালে নিচে এক্টু হলে ও আলো যাবে। এতে সবাই সন্দেহ করবে বলা যায় না হয়তো মুহিত আর মৃন্ময়কে ধরে ও ফেলবে। তাই মুহিত রিস্ক নিতে চায় নি। দুটো রুম ক্রস করে তৃতীয় রুমের কাছাকাছি যেতেই রূপের কন্ঠ স্বর ভেসে আসল। রূপ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে মারুকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—-“মামারু আমার খুব ভয় করছে। আমি অন্ধকারে খুব ভয় পাই। প্লিজ কিছু এক্টা কর।”

মারু উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,,

—-“রূপ প্লিজ তুই ভয় পাস না। তোর এমনিতেই শরীর খারাপ। আমি তো আছি, কিচ্ছু হবে না। তুই এখানেই বস। আমি আব্বুকে গিয়ে বলি তোর জন্য ইনহেলার এনে দিতে। মুহিত ভাইয়াকে এতো রাতে এই বাড়িতে ডাকা ঠিক হবে না। এক্টু ধৈর্য্য ধর আমি আসছি।”

মারুর কথা শুনে মুহিত আর দেরি করল না। ভেজানো দরজা ঠেলে নিঃশব্দে রুমের ভিতর ঢুকে পড়ল। রূপ আর মারু যেই না ভয়ে চিৎকার দিতে যাবে অমনি মুহিত আর মৃন্ময় এসে দুজনের মুখ চেঁপে ধরে ফিসফিস করে বলল,,,,,,

—-“আরে আমরা এসেছি। প্লিজ তোমরা মুখটা বন্ধ করো।”

রূপ আর মারু মুখটা বন্ধ করে চোখ দুটো বড় বড় করে রেখেছে। মুহিত এবার রূপের মুখ থেকে হাত সরিয়ে রূপকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট টা অন করল। মৃন্ময় মারুর হাত ধরে টেনে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। মারু চোখ দুটো ইয়া বড় বড় করে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“এই আপনারা বাড়িতে ঢুকেছেন কি করে? গেইটের ভিতর অনেক গার্ডস।”

মৃন্ময় এক্টা ভাব নিয়ে বলল,,,,,,

—-“ধ্যাত এসব কোনো ব্যাপার ই না। আমরা স্পাইডার ম্যানের মতো উড়ে উড়ে তোমার রুমে চলে এসেছি। বলো ভালো করি নি?”

—-“এ্যাঁ আমার মোটে ও বিশ্বাস হচ্ছে না। নিশ্চয়ই দুজনই অন্য কোনো বুদ্ধি খাটিয়ে বাড়িতে ঢুকেছেন।”

মৃন্ময় পকেট থেকে ফোন টা বের করে মারুর চোখের সামনে ফ্ল্যাশ লাইট টা ধরে এক দৃষ্টিতে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“ভালোবাসি মারু।”

মারু খানিক লজ্জা পেয়ে মারুর মেহেন্দী রাঙ্গা হাত দুটো মৃন্ময়ের চোখের সামনে ধরে বলল,,,,,,

—-“মৃন্ময় দেখুন, আমি আপনার নামে মেহেন্দী পড়েছি। রূপ পড়িয়ে দিয়েছে।”

মৃন্ময় মুচকি হেসে মারুর হাতটা টেনে হাত দুটোতে অসংখ্য চুমো খেয়ে মারুকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—-“আমার আসাটা স্বার্থক হয়েছে। এক্টা নজর হলে ও তোমাকে দেখতে পেরেছি। জড়িয়ে ধরতে পেরেছি। শান্তি লাগছে ভীষণ।”

মারু বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“এ্যাঁ শুধু জড়িয়ে ধরলে হবে না। আমার ঠোঁটে চুমো ও খেতে হবে। মুহিত যেভাবে রূপের ঠোঁটে খায় এভাবে।”

মৃন্ময় বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“ওহ্ তাই?”

—-“হুম তাই।”

মারু নিজেকে মৃন্ময়ের থেকে সরিয়ে ঠোঁট দুটো পাউট করে চোখ জোড়া বন্ধ করে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“নিন চুমো খান।”

মৃন্ময় বাঁকা হেসে মারুর ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। মারু মুচকি হেসে মৃন্ময়ের শার্ট আঁকড়ে ধরল।

ঐদিকে, মুহিত ঔষধের প্যাকেট থেকে সব গুলো মেডিসিন বের করে রূপকে এক এক করে খাইয়ে দিচ্ছে। শেষে মুহিত ইনহেলটরটা রূপের হাতে ধরিয়ে বলল,,,,,,

—-“রূপ তাড়াতাড়ি প্রেস করে নাও। তাহলে আর শ্বাস ফেলতে কষ্ট হবে না।”

রূপ চোখের জল ছেড়ে ইনহেলার মুখে পুড়ে প্রায় দুবার প্রেস করে নিলো। পাঁচ মিনিট পর মুখটা বন্ধ রাখার পর রূপ মুখটা খুলে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। রূপ এতক্ষনে কিছুটা বেটার ফিল করছে। মুহিত রূপকে আবারো বুকের মাঝে চেঁপে ধরে ফিসফিস করে বলল,,,,,

—-“এখন কেমন লাগছে রূপ? আগের থেকে বেটার তো?”

—-“ভালো লাগছে মুহিত। আমি ভাবতে পারি নি তুমি এতোটা রিস্ক নিয়ে আমার জন্য মেডিসিন নিয়ে আসবে।”

—-“রূপ….ভালোবাসা সবসময় ভাবনার উর্ধ্বে হয়। ভেবে চিন্তে তো বানিজ্য হয়। ভালোবাসা হয় না। মনের টান ই হলো মেইন ফ্যাক্ট। আমার মন বলছিলো তুমি ভালো নেই, কষ্ট পাচ্ছে। তাই ছুটে এলাম। আসাটা খুব জরুরী ছিলো রূপ। তোমার লাইফ রিস্কের চেয়ে আর কাছে অন্য কোনো রিস্ক ই বড় নয়।”

রূপ কাঁদতে কাঁদতে মুহিতের শার্ট আঁকড়ে ধরে বলল,,,,,,

—–“কেনো আমাকে এতোটা ইম্পরটেন্স দিচ্ছ মুহিত? এবার তো আমার পৃথিবী ছাড়তে ও কুন্ঠাবোধ হচ্ছে। মৃত্যুর মতো সহজ সত্যকে আমি মানতে পারছি না। যুগ যুগ ধরে বাঁচতে ইচ্ছে করছে। আমাকে এতোটা ভীতু করে দিও না প্লিজ। যতোটা দরকার ততোটাই ভালোবাসে। এর অধিক বেসো না।”

—-“আমি তোমাকে অধিকের চেয়ে ও অধিকতর ভালোবাসতে চাই। মৃত্যু আমাদের জন্য অবধারিত। মৃত্যুকে মানতেই হবে। তবে মৃত্যুর পরে ও একে অন্যের মনে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকা যায়। দেহের মৃত্যু হলে ও আত্না, ভালোবাসা, মন এসবের মৃত্যু হয় না। ভালোবাসা এক অমর সম্পর্ক রূপ। তুমি চাইলেই যুগ যুগ ধরে মনে ধারন করতে পারো। তোমার দেহ পঁচে গেলে ও ভালোবাসা পচবে না। কারন, তোমার দেহটা পচনশীল, তবে ভালেবাসা পচনশীল নয়।”

এর মাঝেই নিচ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেলো। রূপ তাড়াতাড়ি মুহিতের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে চোখের জল গুলো মুছে মুহিতের দিকে তাকিয়ে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,

—–“মুহিত তোমরা তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হও। এখানে বেশিক্ষন থাকাটা সেইফ না।”

মুহিত বিছানা ছেড়ে উঠে রূপের ঠোঁটে এক্টা চুমো খেয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,,

—-“রূপ নিজের খেয়াল রেখো। টাইমলি ঔষধ গুলো খেয়ে নিও। আর শুনো ভোরে উঠে ইলেকট্রিক রুমে গিয়ে কারেন্টের মেইন সুইচ টা অন করে দিও।”

কথা গুলো বলেই মুহিত ব্যালকনীর দিকে গেলো। মৃন্ময় আর মারুকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে মুহিত চোখে হাত দিয়ে আস্তে করে বলল,,,,,,

—-“ভাই তোর শেষ হলে চল। নিচ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে। আমাদের এক্ষনি পালাতে হবে।”

মারু তাড়াতাড়ি মৃন্ময়ের ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলো। মারু বেশ লজ্জা পেয়েছে। মৃন্ময় ওর ঠোঁট জোড়া মুছে মারুর কপালে এক্টা চুমো খেয়ে মুহিতের হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মারু আর রূপ দরজায় দাঁড়িয়ে মুহিত আর মৃন্ময়ের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।

ড্রইং রুমে টায়রা দৌঁড় ঝাপ করছে। আব্বাস আহমেদ টায়রার সাথে খেলছে। মিনার হাতে ফ্ল্যাশ লাইট। তবে ফ্ল্যাশ লাইটার বেশি আলো নেই। আলোটা শুধু টায়রার কাছেই সীমাবদ্ধ। মুহিত আর মৃন্ময় সুযোগ বুঝে পা টিপে টিপে ড্রইং রুম ক্রস করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। গার্ডসরা এখনো জট পাকিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। অনেকে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। মুহিত আর মৃন্ময় গার্ডসদের পাশ কাটিয়ে খুব ইজিলি বাড়ির গেইট পাড় হয়ে এক দৌঁড়ে মেইন রাস্তায় চলে গেলো।

কিছুক্ষন খেলা ধূলার পর টায়রাকে নিয়ে মিনা রুমে চলে গেলো। আব্বাস আহমেদ আর মাইমুনা আহমেদ ও নিজেদের রুমে চলে গেলো। বাড়ির গার্ডসরা অন্ধকারেই পুরো বাড়িটাকে গার্ড দিচ্ছে।

মারু আর রূপ রুমের দরজা অফ করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শান্তির এক্টা ঘুম দিলো। মুহিত আর মৃন্ময় গাড়িতে উঠে লজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,,

(অনুগ্রহ পূর্বক সবাই হাত, পা উঠিয়ে শূন্যে ভাসতে থাকুন। আরো দুদিন পর ধামাকা পর্ব আসবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here