এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ২৩+২৪

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

মারু আর রূপ রুমের দরজা অফ করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শান্তির এক্টা ঘুম দিলো। মুহিত আর মৃন্ময় গাড়িতে উঠে লজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

প্রায় পনেরো মিনিট পর ওরা লজে পৌঁছে নিজেদের রুমে চলে গেলো। দুজনই ফ্রেশ হয়ে আরামসে ঘুম দিলো।

পরের দিন,,,,,,,,

সকাল নয়টা। মারু আর রূপ নাক টেনে ঘুমুচ্ছে। প্রায় অনেকক্ষন ধরেই দরজায় কড়া নাড়ছে মিনা। ডাকতে ডাকতে সে হয়রান প্রায়। রূপ ভোরে উঠে একবার কারেন্টের মেইন সুইচ অন করে এসেছে। রুমে ঢুকে আবার ঘুম দিয়েছে। তাই এতো ডাকাডাকির পরে ও ঘুম থেকে উঠতে পারছে না সে। মিনা কিছুটা ক্লান্ত হয়ে ডাকাডাকি বন্ধ করে নিচে চলে গেলো। ড্রইং রুমে গ্রামের লোকরা গিজগিজ করছে। আজ গাঁয়ে হলুদ বলে কথা। তাই সকাল থেকেই গ্রামের লোকদের আনাগোনা। মিনা কিচেনের দিকে যাচ্ছে আর রাগে ফুসফুস করে বলছে,,,,,,

—-“মেয়ে দুটো এখনো ঘুমুচ্ছে। উঠার সাথে নামই নিচ্ছে না। ঐ রূপ মেয়েটা এসে আমার বোনের সাহস টা আরো বাড়িয়ে দিলো। কিছুতেই কারো কথা শুনছে না মারু। উল্টে মুখে মুখে তর্ক করছে। আজ তো ঐ দুটোর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বই আমি।”

মিনা কথা গুলো বলছে আর কিচেন রুমে ঢুকে টায়রার জন্য নুডলস বানাচ্ছে। প্রায় আধ ঘন্টা পর মারু আর রূপের ঘুম ভাঙ্গল। দুজনই শোয়া থেকে উঠে ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করছে। মারু এক দৃষ্টিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে কাল রাতের কথা মনে করছে। মৃন্ময়ের চুমো খাওয়ার দৃশ্যটা মারুর চোখে ভাসছে। লজ্জায় মারু লাল হয়ে যাচ্ছে।

রূপ ব্রাশ করতে করতে মারুর দিকে তাকিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,,

—-“আচ্ছা মারু তোর উড বি পেশায় কি করে?”

মারু বেশ নরমালী উওর দিলো,,,,,,,

—-“চুরি, ডাকাতি, খুন খারাপী, কিডনাপিং এসব করে।”

রূপ ব্রাশ করা থামিয়ে বড় বড় চোখ করে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“হোয়াট? আর ইউ সিরিয়াস মারু?”

—-“হুম সিরিয়াস। কেনো তোর কি মনে হয়? আমি মিথ্যে বলছি?”

—-“মানে বুঝলাম না আংকেল কি এই বিষয়ে কিছুই জানে না?”

—-“সব জানে। শুধু আব্বু না আমাদের গ্রামের সবাই ই অনিকের ব্যাপারে জানে। গ্রামের সবাই অনিকের ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকে।”

রূপ বেশ রাগী কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“এতোকিছু জানার পরে ও আঙ্কেল কি করে পারছে তোকে ঐ মাফিয়ার হাতে তুলে দিতে?”

মারু ব্রাশ করা থামিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“পারছে কারন আমার আব্বু লোভী। চেয়ারম্যান হওয়ার ভূত চেঁপেছে উনার মাথায়। তাই আমাকে বেঁচে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে।”

রূপ মুখটা বাঁকা করে বলল,,,,,,,,

—-“আঙ্কেল কিছুতেই নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে পারবে না বুঝলি? আমরা কখনো তা হতেই দিবো না। ঠিক তোকে বাঁচিয়ে নিবো।”

—-“বাঁচতে তো আমাকে হবেই। অন্তত মৃন্ময়ের জন্যে হলে ও আমাকে বাঁচতে হবে।”

এর মাঝেই দরজায় টোকা পড়ল। দরজার ঐপাশ থেকে মিনা চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,,,

—-“এই তোরা দুজন মরলি নাকি? মরার ঘুম ঘুমিয়েছিস? সকাল দশটা বাজতে চলল। এখনো উঠার নাম নেই।”

রূপ আর মারু ব্রাশ করা থামিয়ে তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেলো। মারু শুকনো ঢোক গিলে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“দজ্জালটা এসেছে রূপ। তুই এখানেই দাঁড়া। আমি দরজাটা খুলে আসছি।”

রূপ দাঁড়িয়ে রইল। মারু দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার সাথে সাথেই মিনা রুমে ঢুকে মারুর কান মলে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,,,,,,

—-“কয়টা বাজছে বল?”

মারু নাক, মুখ কুঁচকে বলল,,,,,

—-“নয়টা।”

—-“নয়টা অনেক আগেই বেজে গেছে। এখন দশটা বাজছে। এতোক্ষন পর্যন্ত কি করেছিস বল?”

—-“কি করেছি মানে? চোখ বুজে বুজে ঘুমুচ্ছিলাম। প্লিজ এবার কানটা ছাড়। ব্যাথা পাচ্ছি।”

মারুর কান ছেড়ে মিনা রাগী দৃষ্টিতে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“তাড়াতাড়ি নিচে চলে এসো। ব্রেকফাস্ট করে হলুদের শাড়ী আর অরনামেন্টস চোজ করে নাও। দুজনকেই বলছি শুনেছ?”

রূপ আর মারু মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। মিনা রাগে গিজগিজ করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মারু ভেংচি কেটে মিনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“মিনার বাচ্চা যা অত্যাচার করার আজকের দিনটাই করে নে। কাল থেকে আমার টিকি টি ও খুঁজে পাবি না। মায়া হচ্ছিলো বলে ব্যাথা পাওয়ার পরে ও তোকে শাস্তি দিলাম না। করুনা করলাম বুঝলি? করুনা।”

রূপ পেরেশান হয়ে মারুর হাত চেঁপে ধরে বলল,,,,,

—-“মারু আমার না ভীষণ ভয় করছে। প্ল্যানটা ঠিকঠাক ভাবে সাকসেস হবে তো? অনিক ছেলেটাকে নিয়ে আমার ভীষন ভয় হচ্ছে। ভুলক্রমে যদি উনি আমাদের প্ল্যানটা যদি ধরে ফেলে তখন কি হবে?”

মারু ও কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,,

—-“মন্দ বলিস নি রূপ। আমার ও দারুন ভয় করছে। কাল ই তো বিয়ে। আমরা সব দিক সামলাতে পারব তো?”

মারু খুব ঘাবড়ে গেছে। চোখে, মুখে ওর চিন্তার ছাপ। মারুর অবস্থা দেখে রূপ কিছুটা সাহস জুগিয়ে মারুর কাঁধে হাত রেখে মলিন হেসে বলল,,,,,,,

—-“পারব সামলাতে। পারতে আমাদের হবেই। তাছাড়া অনিক ছেলেটা আসার আগেই তো আমরা পালাবো। সবাই যখন বর দেখতে যাবে তখনই আমরা প্ল্যান অনুযায়ী পিছনের গেইট দিয়ে পালাবো। এই নিয়ে তুই টেনশান করিস না মারু।”

মারু মুচকি হেসে রূপকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,

—-“জানিস রূপ আমি খুব লাকী। তোর মতো একজন বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়ে। আমার ভাগ্য টা যে, এতোটা ও ভালো হবে আমার জানা ছিলো না।”

—-“আমি ও কম লাকী না মারু। বর আর ফ্রেন্ড এ দুটো ভাগ্য করে পেতে হয়। আমার ভাগ্য টা খারাপ হলে ও অতোটা মন্দ না। আল্লাহ্ এক দিক না এক দিক দিয়ে আমাকে ষোল আনা পুষিয়ে দিয়েছে। যেমন বর পেলাম তেমনি ফ্রেন্ড ও পেলাম।”

—-“যা বলেছিস। এবার নিচে চল। নয়তো মিনা পাগলী টা বক বক করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিবে।”

রূপ হু হা করে হেসে মারুকে ছেড়ে মারুর হাত ধরে ড্রইং রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। ড্রইং রুমে পা রাখার সাথে সাথেই গ্রামের মহিলারা রূপকে আর মারুকে টেনে সোফা বসিয়ে দিলো। সবাই ওদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সবার মাঝ খান থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলা পান চিবুচ্ছে আর মারুকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—-“আমরা এখন তোর বিয়ের গীত গাইব বুঝলি মারু। তুই বসে বসে শুনবি কেমন?”

রূপ নাক, মুখ কুঁচকে মারুর কানে ফিসফিস করে বলল,,,,,,

—-“এই….বিয়ের গীত মানে?”

—-“রানু মন্ডলকে চিনিস?”

—-“হুম চিনি। তো?”

—-“রানুর মন্ডলের কন্ঠে উনারা গানের লিরিক্স শুনাবে?”

—-“হোয়াট?”

—-“হুম সত্যি। তুই শুনলে বুঝবি।”

এর মাঝেই মিনা এসে গ্রামের মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“শুনুন আপনারা থামুন। ওরা এখনো ব্রেকফাস্ট ও করে নি। আগে ওদের খেতে দিন। এরপর যা শুনানোর শুনাবেন।”

গ্রামের মহিলারা মলিন হেসে মাথা নাঁড়ালো। রূপ আর মারু ছুটি পেয়ে সোফা ছেড়ে উঠে ডাইনিং টেবিলে বসে গেলো। মেঘা ও মাত্র ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে বসল। মিনা ওদের তিনজনকে বিরিয়ানী বেড়ে দিয়ে টায়রাকে নুডলস খাওয়াতে রুমে চলে গেলো।

প্রায় পনেরো মিনিট পর খাওয়া দাওয়া শেষে তিনজনই সোফায় বসল। গ্রামের মহিলারা ড্রইং রুমে বসেই শিল, নুড়ি দিয়ে হলুদ, মেহেদী বাঁটছে আর ছাগলের মতো পান চিবুচ্ছে। মারুর পাশে গ্রামের একজন মুরুব্বি মহিলা বসে গলা ছেড়ে গীত ধরল,,,,,,

“আইজ ময়নার গাঁয়ে হলুদ,
কাইল ময়নায় বিয়া।
আইজ ময়নার গাঁয়ে হলুদ,
কাইল ময়নার বিয়া।
পরশু ময়না যাইবা গিয়া
ঢাক, ঢোল বাজাইয়া।”

এভাবেই পুরোটা গীত গাইছে গ্রামের মহিলারা। রূপ নাক, মুখ খিঁচে কাকের মতো কর্কশ কন্ঠের গীত শুনছে। রূপ পারছে না দৌঁড়ে বসা থেকে পালিয়ে যেতে। তবে ভদ্রতার খাতিরে তাকে ছাড় দিতে হচ্ছে। মারু দম খিঁচে রেখেছে। হয়তো এখনই প্রাণপাখিটা উড়াল দিবে। মুরুব্বিদের কথা চিন্তা করে মারু জায়গা ছেড়ে উঠতে পারছে না। উনারা হয়তো কষ্ট পাবে তাই।

এভাবে কেটে গেলো প্রায় এক, দেড় ঘন্টা। মহিলারা একের পর এক গীত গেয়েই চলছে। মাইমুনা আহমেদ প্রায় অনেকক্ষন পর হাতে করে কতগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে মারু আর রূপকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,

—-“মারু, রূপ দুজনই রুমে এসো। তোমাদের জন্য হলুদের শাড়ী আর অরনামেন্টস এনেছি।”

রূপ আর মারু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ফটাফট সোফা ছেড়ে উঠে এক দৌঁড়ে ড্রইং রুম থেকে পালালো। দুজনই সিঁড়ি বেয়ে উপরে আর বলছে,,,,,,

—-“বাপরে বাপ জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম। আর এক্টু বসে থাকলে হয়তো আমরা দুজনই কোমায় চলে যেতাম।”

দুজনই স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো। মাইমুনা আহমেদ বেডের উপর হলুদের দুটো দু রকম শাড়ী আর অরনামেন্টস ছড়িয়ে রেখেছে। মারু আর রূপ রুমে ঢুকার সাথে সাথেই মাইমুনা আহমেদ ওদের দুইজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠান হবে। তোমাদের সব সাজ বেডের উপর রাখা আছে। যার যেটা ভাল্লাগবে পড়ে নিও। এখন দুজনই শাওয়ার নিয়ে নাও। দুপুর হতে চলল।”

রূপ আর মারু মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। মাইমুনা আহমেদ বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রূপ আর মারু বেডের উপর বসে ওদের শাড়ী আর অরনামেন্টস গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। প্রথমে রূপ ওয়াশরুমে গেলো শাওয়ার নিতে। প্রায় আধ ঘন্টা পর রূপ ওয়াশরুম থেকে বের হলেই মারু ওয়াশরুমে গেলো।

এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা বাজছে। মারুকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে দুটো মেয়ে এসেছে। অনিক পাঠিয়েছে মেয়ে গুলোকে। রূপ এক পাশ দাঁড়িয়ে হলুদ কাপড় পড়ে নিজের মতো করে হালক ভাবে সেজে নিচ্ছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ মারুকে দেখার জন্য কিছুক্ষন পর পর রুমে ঢুকছে। পুরো বাড়িতে হৈ, চৈ এর রোল পড়ে গেছে। বাড়ির বাইরে হলুদের প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। ঐখানে জোরে জোরে গান বাজানো হচ্ছে। কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ছোট ছেলে, মেয়েরা সেজে গুজে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছে।

মারুকে হলুদ শাড়িতে দারুন লাগছে। হলুদ শাড়ির সাথে হলুদ ফুলের অরনামেন্টস। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। চোখের গাঢ় কাজল। হাত ভর্তি হলুদ চুড়ি। মাঝ সিঁথি বরাবর টিকলি। সব মিলিয়ে মারুকে দারুন লাগছে। মারুকে সাজানো শেষে পার্লারের মেয়েরা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

রূপের সাজ গোজ ও মোটামুটি শেষ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রূপ হাত খোঁপা করছে। মারু বেডের উপর বসে আছে। রূপ খোঁপা করে কাবার্ডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে মারুর পাশে বসে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,,,

—-“মারু পোচ নে। সেল্ফি তুলব। মৃন্ময় ভাইয়া তোকে দেখার জন্য হয়তো পাগল হয়ে আছে।”

—-“এ্যাঁ। মুহিত ও কম যায় না। একচুয়েলি তুই মুহিতকে দেখানোর জন্যই ছবি তুলতে চাইছিস।”

রূপ কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,,,

—-“একদম তাই। বরকে দেখাবো না তো কাকে দেখাবো!”

—-“জানি বাছা। এবার ছবি তুলো। কিছুক্ষন পর সুযোগ হয়ে উঠবে না।”

রূপ তাড়াতাড়ি ফোনের ক্যামেরা অপশনে গিয়ে কয়েকটা সেল্ফি তুলে নিলো। এরপর মুহিতের হোয়াট’স এ্যাপে সেন্ড করে দিলো। মুহিত আর মৃন্ময় ঘুড়তে বের হয়েছে। দুজনই সারাক্ষন লজে শুয়ে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই এক্টু রিফ্রেশমেন্টর জন্য বের হয়েছে। হোয়াটস এ্যাপে ম্যাসেজ আসার সাথে সাথেই মুহিত পকেট থেকে ফোনটা বের করে নোটিফেকশন চেইক করতে গিয়ে রূপ আর মারুর ছবি গুলো দেখল। মুচকি হেসে মুহিত মৃন্ময়ের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“নে ভাই, ভাবীকে দেখে নে। হলুদের সাজে কেমন লাগছে।”

মৃন্ময় মারুর ছবি গুলো দেখছে আর মৃদ্যু হাসছে। সামান্য আপসোস ও হচ্ছে। সামনে থেকে দেখার ইচ্ছে টা প্রবল হলে ও পরিস্থিতি আটক দিচ্ছে।

অন্যদিকে,,,,,,,

মারু আর রূপকে নিয়ে মিনা হলুদের স্টেইজে বসে আছে। দুজনেই মারুকে হলুদ পড়াচ্ছে। ওদের হলুদ পড়ানো শেষে মারুর মা, বাবা, মেঘা, মেঘার হাজবেন্ড, মিনার হাজবেন্ড, ফুফু, ফুফা, আন্টি, আংকেল সবাই এক এক করে হলুদ পড়ালো। এরপর আত্নীয়, স্বজন, গ্রামের পাড়া, প্রতিবেশীরা সবাই পালাক্রমে হলুদ পড়ানো শেষ করল। টায়রা হলুদ কাপড় পড়ে মারুর পাশে বসে খিলখিল করে হাসছে আর মারুর গার টেনে বলছে,,,,,

“মারু মনির বিয়ে,
হলুদ, মেহেদি দিয়ে,
ডেইরি মিল্ক খেয়ে,
আমি নাচি হেলিয়ে দুলিয়ে।”

টায়রার ছন্দ শুনে উপস্থিত সবাই হেসে কুটিকুটি। মারু টায়রার গাল টেনে দু গালে দুটো চুমো খেয়ে দিলো। এর মাঝে আচমকাই অনিক কোথা থেকে এসে সব অতিথি, মেহমানদের ঠেলে ঠুলে হলুদের স্টেইজে উঠে বাঁকা হেসে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“এবার আমি হলুদ পড়াবো।”

কথাটা বলেই অনিক হাতে হলুদ নিয়ে মারুর গালে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো। রূপ ইশারা করে মারুকে চুপ থাকতে বলছে। অনিকের সাথে রাগ দেখানোটাই বেকার। গুন্ডা টাকে রাগিয়ে লাভ নেই। সামান্য ভাইলেন্ট হয়ে গেলেই সমস্যা। তাই তাকে আপোসে মানাতে হবে। রূপ স্টেইজের এক্টা কোণায় চুপটি করে বসে আছে। অনিক হাতে আরেকটু হলুদ নিয়ে রূপের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আচমকাই রূপের মুখে হলুদ মেখে দিলো। রূপ বেকুব হয়ে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে। অনিক শয়তানী হাসি দিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“এভাবে তাকিও না সুন্দুরী। শালীকে হলুদ মাখানোর অধিকার আছে আমার। ব্যাস…. কাজ শেষ, এবার আমি আসছি। কাল কিন্তু আমার বউকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখবি। সাথে তুই ও সেজে গুজে থাকবি। বউয়ের সাথে কিন্তু শালী ও ফ্রি চাই। দুজনকেই কাল রাতে আমার বেডে দেখতে চাই।”

অনিক আর দাঁড়ালো না। আব্বাস আহমেদ আর মাইমুনা আহমেদকে ক্রস করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। অনিকের বলা কোনো কথাই মারুর পরিবার শুনতে পায় নি। শুনতে পেলে ও উনাদের অবশ্য কিছু আসবে যাবে না। রূপ চোখের পানি ছেড়ে স্টেইজ থেকে উঠে সোজা রুমে চলে গেলো। রূপের সাথে সাথে মারু ও স্টেইজ থেকে উঠে রুমে চলে গেলো। হলুদের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ হলো। গ্রামের মানুষরা সব এক এক করে নিজেদের বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

রূপ রুমে ঢুকে বেডের উপর বসে অঝড়ে কেঁদে চলছে। মারু রূপের পাশে বসে রূপের হাত ধরে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,,,,

—–“কি হয়েছে রূপ? অনিক তোকে কিছু বলেছে? তুই কাঁদছিস কেনো?”

রূপ হেচকি তুলে কেঁদে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“ছেলেটা খুব খারাপ মারু। আমাকে বাজে প্রস্তাব দিয়েছে।”

মারু রূপের চোখের জলগুলো মুছে দিয়ে বলল,,,,

—–“কাঁদিস না রূপ। আজকের রাতটাই অপেক্ষা কর। কাল তো আমরা পালাবই।”

রূপ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। মারু ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রূপ চোখের জল গুলো মুছে বেডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। মুহিতের নাম্বারে ডায়াল করে রূপ ফোনটা কানে ধরল। প্রথম কল বাজার সাথে সাথেই মুহিত কলটা তুলে ফেলল। রূপ চুপ করে আছে কোনো কথা বলছে না। মুহিত মুদ্যু হেসে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“বৌ..

রূপ কোনো কথা বলছে না। শুধু চোখের পানি ছাড়ছে। মুহিত আবারো বলে উঠল,,,,,,,

—-“ও বৌ…..

রূপ থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। এক্টা টু শব্দ ও করছে না। মুহিত কিছুটা পেরেশান হয়ে আবার বলল,,,,,,,

—-“রূপ কি হয়েছে? তুমি কাঁদছ কেনো? প্লিজ বলো আমায়। না বললে বুঝব কি করে?”

রূপ কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল,,,,,,

—-“আই মিস ইউ মুহিত।”

—-“না তুমি এ কারনে কাঁদছ না। তুমি অন্য কারনে কাঁদছ। বলো কি হয়েছে?”

—-“তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার এক্টু ও ভালো লাগছে না মুহিত।”

—-“আমারো ভালো লাগছে না রূপ। এবার প্লিজ বলো কে তোমাকে কি বলেছে!”

—-“কেউ কিছু বলে নি। তোমায় মিস করছিলাম তাই চোখে জল চলে এলো।”

—-“আমার কসম?”

রূপ চুপ হয়ে গেলো। মিথ্যে বলার জোঁ নেই আর। এবার সত্যিটা বলতেই হবে। রূপ অঝড়ে কেঁদে বলল,,,,,,,

—-“অনিক ছেলেটা আমাকে বাজে প্রস্তাব দিয়েছে মুহিত। ঘিন ঘিন লাগছে আমার।”

মুহূর্তেই মুহিতের মাথা গরম হয়ে গেলো। মুহিত রাস্তার মাঝখানে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,

—-“ঐ কুত্তার বা** এড্রেসটা আমাকে দাও। এক্ষনি দাও।”

রূপ হেচকি তুলে কেঁদে বলল,,,,,

—-“মুহিত প্লিজ পাগলামী করো না। কাল তো আমরা চলেই যাবো। বাদ দাও অসব।”

মুহিত আবার চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“তোমাকে আমি এড্রেসটা দিতে বলেছি। তাড়াতাড়ি দাও। এর বাইরে আমি কোনো কথা শুনতে চাইছি না।”

রূপ ভয়ে কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। মাঝখান থেকে মারু এসে রূপের কান থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,,,,

—-“মুহিত এড্রেস লাগবে না। ঐ অনিকের বাচ্চা এখন জুয়া ঘরে আছে। লজ থেকে বের হয়ে যে কোনো কাউকে জিগ্যেস করলেই তোমাকে জুয়াঘরটা দেখিয়ে দিবে।”

মুহিত কলটা কেটে হুডির চুপিটা মাথায় জড়িয়ে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“ভাই চল তোর পথের কাঁটা কে উপ্রে আসি। এমন মার মারব না বিয়ের নাম টোটালী ভুলে যাবে।”

মৃন্ময় বাঁকা হেসে মাথায় টুপিটা পড়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“চল।”

মৃন্ময় আর মুহিত রাস্তায় হাঁটছে আর রাস্তার এপাশ ওপাশ তাকিয়ে জুয়াঘরের আখড়া খুঁজছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে গ্রামের লোকদের আনাগোনা ও কমে গেছে। রাস্তা পুরো ফাঁকা। আচমকাই একজন পথিককে দেখে মুহিত লোকটাকে ডেকে বলল,,,,,,

—-“ভাই জুয়াঘর টা কোথায়?”

লোকটা ঢুলুঢুলু কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“ভাই আমি তো মাএ জুয়া ঘর থেকে এলাম। সামনে গিয়ে ডানে মোড় নিবেন। জুয়াঘরের সাইন বোর্ড টাঙ্গানো আছে।”

মুহিতত আর মৃন্ময় দেরি না করে দৌঁড়ে সামনে এগিয়ে ডানে মোড় নিলো। জুয়াঘরের সাইনবোর্ড দেখার সাথে সাথেই দুজন হুডির হাঁতা ফোল্ড করতে করতে জুয়াঘরে ঢুকে গেলো। অনিক ড্রিংকস করছে আর দুজন ছেলের সাথে বসে জুয়া খেলছে। অনিককে দেখা মাএই মুহিত মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“তাহলে কাল রাতের ছেলেটা এই মাদার** ই ছিলো। চল হাড্ডি গুড্ডি ভেঙ্গে দিয়ে আসি। কোনো সাউন্ড করবি না। আমাদের ফেইস ও যেনো না চিনে। এমনকি ভয়েস ও না। নিঃশব্দে মেরে পালাবো। আমার রূপকে কাঁদানের শাস্তি ওকে হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেতে হবে।”

—-“হুম চল।”

মৃন্ময় আর মুহিত দৌঁড়ে গিয়ে অনিকের মুখো মুখি দাঁড়ালো। সবকটা ড্রিংকস করে মাতাল হয়ে আছে। তিনজনই পিটপিট চোখে মৃন্ময় আর মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় সাথের চ্যালা ফ্যালা দুটোর কলার ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো। দুজনই ঢুলে ঢুলে পড়ছে আর মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলছে,,,,,

—-“এই কে তুই? কলার ধরলি কেন? কলার ছাড়।”

মৃন্ময় কোনো কথা না বলে এলোপাথাড়ি দুটোকে চাপড়াচ্ছে আর পেটে ঘুষি মারছে। মুহিত অনিকের কলার ধরে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে নাক বরাবর জোরে এক ঘুঁষি বসিয়ে দিলো। অনিক ছিটকে মাটিতে পড়ল। নেশা করে অনিক পুরো বেসামাল হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আর্তনাদ ও করছে না। কেবল ঢুলছে আর মিনমিন করে বলছে,,,,,,,

—–“তোদের আমি দেখে নিবো। আজকের জন্য ছাড় দিলাম। জানোয়ারের বা**। তোরা আমার উইক পয়েন্ট বুঝে আমার উপর এ্যাটাক করতে চলে এলি। কাজটা ভালো করিস নি।”

মুহিত রেগে অনিককে এলোপাথারী লাথি, কিল, ঘুষি মেরেই যাচ্ছে। মৃন্ময় ও ঐ দুটোকে নিজের মন মতো কেলাচ্ছে। অনিককে মারতে মারতে অকোজো করে দিয়েছে মুহিত। এরপরে ও যেনো মুহিতের রাগ কমছে না। রূপের কান্নার আওয়াজ মুহিতের কানে বাজছে। কিছুতেই সে নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। চিৎকার করে অনিককে মারতে ইচ্ছে করছে ওর। শুধু কালকের কথা মনে করে নিজেকে দমিয়ে নিচ্ছে মুহিত।

অনেকক্ষন মার ধরের পর মুহিত আর মৃন্ময় দৌঁড়ে পালালো জুয়া ঘর থেকে। দুজনই দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে লজে চলে এলো। অনিক আধমরা হয়ে জুয়াঘরে পড়ে আছে। সাথে ওর চ্যালারা ও।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২৪ (ধামাকা পর্ব)
#নিশাত_জাহান_নিশি

অনেকক্ষন মার ধরের পর মুহিত আর মৃন্ময় দৌঁড়ে পালালো জুয়া ঘর থেকে। দুজনই দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে লজে চলে এলো। অনিক আধমরা হয়ে জুয়াঘরে পড়ে আছে। সাথে ওর চ্যালারা ও।

রূপ চোখ লাল করে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মারু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। এক পর্যায়ে রূপ মারুর কান মলে বলল,,,,,

—-“কি দরকার ছিলো মুহিতকে উস্কানী দেওয়া? ওর এক্টু ভুলের জন্য যদি কাল কোনো অঘটন ঘটে যায়। তখন কি হবে?”

মারু নাক, মুখ কুঁচকে পিটপিট চোখে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কোনো অঘটন ঘটবে না। তুই শুধু শুধু টেনশান করছিস। কানটা ছাড় এবার। সাংঘাতিক ব্যাথা পাচ্ছি।”

মারুর কানটা ছেড়ে রূপ ব্যালকনি থেকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রায় আধ ঘন্টা যাবত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রূপ কিছু এক্টা ভাবছে। মারু ব্যালকনীতে দাঁড়িয়ে ফোনে গেইমস খেলছে। রূপ মনে মনে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। মুহিত যা ডিসপারেড হয়ে গেছে নিশ্চয়ই কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসবে। মুহিতের জন্য খুব টেনশান হচ্ছে রূপের। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে রূপ কানে, গলার অরনামেন্টস খুলে হাতের চুড়ি গুলো খুলতে নিলেই মারু ফোন হাতে নিয়ে রূপের কানে ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করে বলল মুহিত ফোন করেছে। রূপ মারুর থেকে চোখ সরিয়ে ফোনে হ্যালো বলতে নিলেই মুহিত বেশ এক্সাইটেড হয়ে বলে উঠল,,,,,,,

—-“রূপ আ’ম সো হ্যাপি। খুব খুব খুব খুশি আমি।”

রূপ ভ্রু যুগল কুঁচকে মারুর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে সোজা ব্যালকনীতে দাঁড়িয়ে কৌতুহলী কন্ঠে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“এতো খুশি হওয়ার কারণ কি মুহিত? নিশ্চয়ই অনিককে মেরে আধমরা করে এসেছ? তাই এতো খুশি বলো?”

মুহিত খুব নরমালি বলল,,,,,,

—-“সে তো আধ ঘন্টা আগেই মেরে এসেছি। এটার জন্য ও খুশি। আবার অন্য দুটো কারনে ও খুশি।”

রূপ কিছুটা উওেজিত হয়ে বলল,,,,,

—-“তুমি সত্যি সত্যি অনিককে মেরেছ মুহিত? তুমি জানো ছেলেটা কতো খারাপ? তোমার যদি কোনো ক্ষতি করে দেয়?”

—-“উফফফ ছাড়ো তো রূপ। ঐ হায়েনার বাচ্চা সাত জনম ঘুরে ও আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সে কখনো জানতে ও পারবে না কে ওকে কেলিয়েছে। সে আমার ফেইস, ভয়েস কিছুই দেখে নি এমনকি শুনে ও নি। আমাকে খুঁজে বের করার কোনো পথ নেই। তাছাড়া আজকের ডোজ টা ওর দরকার ছিলো। দেখো না কাল কি হয়। এমন কেলানি কেলিয়েছি না হয়তো এক সপ্তাহ ও বেড ছেড়ে উঠতে পারবে না। আর বিয়ে করা তো দূরে থাক।”

রূপ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,

—-“আমার মনে হয় না উনি এতো সহজে হাল ছাড়বে। বিয়ে করতে ঠিক চলে আসবে।”

মুহিত কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,,,,,,,

—-“আসলে ভালো, না আসলে আরো ভালো। বাদ দাও তো অসব। খুশির কারণ গুলো বলতে দাও।”

রূপ কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল,,,,,,

—-“হুম বলো।”

—-“আগে হাসো।”

—-“কারণ ছাড়াই হাসব নাকি?”

—-“হুম কারণ ছাড়াই হাসবে। আগে হাসো এরপর বলব।”

—-“তুমি কি ফান করার জন্য আমাকে কল করেছ? শুনো তোমার মতো আজাইরা সময় আমার নাই। ফোন রাখো। ফ্রেশ হতে হবে।”

মুহিত হু হা করে হেসে বলল,,,,,,

—-“রাগানোর জন্যই মজা করছিলাম। আচ্ছা শুনো তাহলে, আমার নতুন চাকরীটা হয়ে গেছে রূপ। আ’ম সো সো সো হ্যাপি। খুশিতে আমার পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।”

মুহিত কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—-“দ্বিতীয়ত…. দোলা আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ বাদেই ওর বিয়ে।”

রূপ খুশিতে চোখের জল ছাড়ছে। মুহিতের খুশি দেখে রূপের চোখে জল ভরে এলো। এতো দিনের আশা মুহিতের পূরন হয়েছে। মুহিতের দেখা সব ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন গুলো এবার পূরণ হবে। এই মুহূর্তে রূপের খুব ইচ্ছে করছে সামনে থেকে মুহিতের হাসি মুখটা দু চোখ ভরে দেখার। তবে তা এখন সাধ্যের বাইরে। রূপের নীরবতা দেখে মুহিত মলিন হেসে বলল,,,,,,,

—-“কাঁদছ রূপ তাই না? আজ তোমাকে বাঁধা দেবো না। কাঁদো রুপ, ইচ্ছে মতো কাঁদো। এ হলো খুশির কান্না। খুশির কান্না কিন্তু সবার নসিবে থাকে না। আমি নিজে ও কাঁদতে চাইছি। তবে পারছি না। চোখ দিয়ে জল আসছেই না। মনে হচ্ছে আমার চোখের জল গুলো শুধু তোমার কষ্টতেই সীমাবদ্ধ। তুমি সামান্য কষ্ট পেলেই আমার চোখে অবাধ্য জলের ছুটাছুটি শুরু হয়। নিজের কষ্টে ও হয়তো এতোটা কষ্ট পাই না যতোটা কষ্ট আমি তোমার কষ্টে পাই।”

রূপ মনযোগ দিয়ে মুহিতের কথা গুলো শুনছে। শুনতে খুব ভাল্লাগছে। প্রিয়জনের ভালোবাসার আকুতি শুনতে সবার ই বেশ ভালো লাগে। রূপ এক্টা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,,,,,,,

—–“মুহিত…… তোমার ভালোবাসার গভীরতা এতোটাই যে, আমি বার বার তোমার ভালোবাসাতে তলিয়ে যাই। এতোটাই তলিয়ে যাই যে, সাঁতরে উপরে উঠার কিনারা পাই না। এতো ভালোবাসলে তো আমি মরে যাবো মুহিত। সমুদ্রে তলিয়ে যাবো। খুঁজে পাবে না আমায়।”

—-“এই সমুদ্রে ডুবে তুমি মরবে না রূপ। নিঁখোজ ও হবে না। কারন, এই সমুদ্রের মালিকানা সম্পূর্ন আমার। আমি তোমাকে মরতে ও দেবো না। নিঁখোজ হতে ও দেবো না।”

রূপ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,,,,,,,

—-“জয়েনিং কবে?”

—-“কালকের পর দিন।”

—-“দোলা আপুর বিয়ে! সত্যিই খুব ভালো লাগছে।”

—-“আমার ও ভীষন ভালো লাগছে রূপ।”

—-“বিয়ের খবরটা কার থেকে জেনেছ?”

—-“আব্বু কল করেছিলো।”

—-“আমরা কোথায় আছি জিগ্যেস করে নি?”

—-“হুম করেছে। আব্বুকে সত্যিটা বলে দিয়েছি।”

—-“হায় আল্লাহ্ আঙ্কেল কিছু বলে নি?”

—-“না, উল্টে খুশি হয়েছে।”

এর মাঝেই নিচ থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনা গেলো। রূপের বুকটা ধক করে কেঁপে উঠল। রূপ মুহিতকে কিছু না বলেই কলটা কেটে রুমে ঢুকে দেখল মারু বুকে উড়না জড়িয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে। মারুর সাথে সাথে রূপ ও রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রইং রুমে পা রাখার সাথে সাথেই আব্বাস আহমেদের গর্জন শোনা গেলো। উনি ফোনে বেশ চিৎকার করে কথা বলছে আর বলছে,,,,,,

—-“কার এতো বড় সাহস আমার জামাইকে কেলানোর? যে করেই হোক ওদের খোঁজ নে যারা আমার মেয়ে জামাইকে মেরেছে। কাল সকালের মধ্যেই আমার সঠিক খবর চাই।”

কথা গুলো বলেই আব্বাস আহমেদ ফোনটা কেটে মাইমুনা আহমেদকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,

—–“মাইমুনা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে হসপিটালে চলো। অনিককে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনই দেখতে যেতে হবে। সাথে মিনা ও চলো।”

মাইমুনা আহমেদ শুকনো ঢোক গিলে আব্বাস আহমেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—–“কি হয়েছে আব্বাস? অনিক হসপিটালে কেনো? তোমার কথার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝছি না।”

—–“অনিককে কেউ একলা পেয়ে বেধরক পিটিয়েছে। এখন হসপিটালে ভর্তি আছে।”

মিনা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,,,,,,

—-“হায় আল্লাহ্ এ কি হলো। আমার বোনটার এখন কি হবে? কাল তো ওদের বিয়ে। অনিক যদি সুস্থ না হয় তখন কি হবে আব্বু?”

আব্বাস আহমেদ বিরক্তি নিয়ে মিনার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“উফফ মিনা চুপ করো। বিয়ে হবেই হবে। অনিক যতোই অসুস্থ থাকুক। দরকার হলে মারুকে হসপিটালে নিয়ে বিয়ে দিবো। এরপরে ও বিয়ে বন্ধ হবে না।”

মারু আর রূপ চোখ বড় বড় করে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্বাস আহমেদ, মাইমুনা আহমেদ আর মিনা বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসল। উনারা যাওয়ার পর পরই রূপ মারুর দিকে তাকিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,,,,,,,

—-“এখন কি হবে মারু? বিয়েটা যদি সত্যি সত্যি হসপিটালে হয়? আমরা পালাবো কি করে?”

মারু চিল মোডে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—-“অনিক কখনোই আমাকে হসপিটালে নিয়ে বিয়ে করবে না। দাপট দেখিয়ে লোলা শরীর নিয়েই এখানে চলে আসবে। হিরোগিরি দেখাতে হবে না? তুই আমার কথা মিলিয়ে নিস। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনব অনিক টোপড় মাথায় দিয়ে আমাকে বিয়ে করতে আসছে।”

—-“সত্যি বলছিস তো?”

—-“পাক্কা সত্যি।”

মারু এবার বড় এক্টা হাই তুলে বলল,,,,,,,

—-“চল রূপ রুমে চল। ঘুম পেয়েছে।”

রূপ ও বড় করে এক্টা হাই তুলে বলল,,,,,

—-“চল। আসলেই খুব ঘুম পেয়েছে।”

দুজনই হাত ধরাধরি করে নিজেদের রুমে চলে গেলো। রূপ রুমে ঢুকেই শাড়ীটা চেইন্জ্ঞ করে চোখে, মুখে পানি ছিটিয়ে মারুর পাশে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পর আপনা আপনিই রূপের চোখ ঘুম চলে এলো।

মুহিত আর মৃন্ময় ও পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে এসে কম্বল মুড়ি দিয়ে শান্তির ঘুম দিলো।

পরের দিন,,,,,,,,,

সকাল দশটা। মারু আর রূপ আজ ও নাক টেনে এতো বেলা অব্দি ঘুমাচ্ছে। দরজায় অনেকক্ষন ধরে কেউ অনবরত কড়া নাড়ছে। এক পর্যায়ে দরজায় কেউ সজোরে কিক মারল। সাথে সাথে রূপ আর মারু ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসল। দুজনই চোখে, মুখে অজস্র ভয় নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার কাছে গেলো। দরজায় আরেকটা কিক পড়ার আগেই মারু চট জলদি দরজাটা খুলে দিলো। অনিক হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে চোখ, মুখ লাল করে মারুর গলা চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,

—-“বল কাল রাতে তুই কাকে পাঠিয়েছিস আমাকে মারার জন্য?”

মারুর দম আটকে আসছে। কিছুতেই নিশ্বাস নিতে পারছে না। কথা ও বলতে পারছে না। অনিকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে মারু। কিন্তু পেরে উঠছে না। রূপ এসব চোখের সামনে সহ্য করতে না পেরে গাঁয়ের সমস্ত জোর দিয়ে অনিককে দিলো এক ধাক্কা। অনিক তাল সামলাতে না পেরে দরজার সাথে সজোরে এক ধাক্কা খেলো। সে এমনিতেই আধমরা হয়ে আছে। ওর মাথায়, হাতে, পায়ে ব্যান্ডেজ করা। এর উপর রূপের ধাক্কা। সব মিলিয়ে অনিকের রাগ আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। অনিক এবার তেড়ে এসে রূপের গলা টিপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,,,,,,

—-“তোদের দুজনকেই আমি দেখে নিবো। শুধু কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। দুজনকেই আমার ঘরে তুলব। তুই থাকবি আমার রক্ষিতা। আমি জানি তোরা দুজনই আমার পিছনে কুকুর লাগিয়েছিস। আমাকে মারার জন্য ভাড়াটে কুকুর পাঠিয়েছিস। আজকের মধ্যেই আমি ঐ কুকুর দুটোকে খুঁজে বের করব। দুটোর ই গলা কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

রূপের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে এখনই ওর দম আটকে আসবে। মারু কাহিল হয়ে গলায় হাত দিয়ে ডেস্কের সাথে ড্যাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনিক এবার রূপের গলাটা ছেড়ে শো শো বেগে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রূপের কাশি উঠে গেছে। শ্বাস বেড়ে দম যায় যায় অবস্থা। মারু নিজেকে শান্ত করে রূপকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো। মেডিসিনের প্যাকেট থেকে ইনহেলার বের করে মারু রূপের হাতে ধরিয়ে বেশ পেরেশান হয়ে বলল,,,,,,,

—–“রূপ প্রেস করে নে। তোর শ্বাস বেড়ে গেছে।”

রূপ মারুর দিকে একবার তাকিয়ে মারুর হাত থেকে ইনহেলারটা নিয়ে দুবার স্প্রে করে নিলো। কিছুক্ষন মুখটা বন্ধ রাখার পর রূপ ডেস্কের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো।

রূপ আর মারু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো। অনিকের অত্যাচারে ওরা দুজনই ক্লান্ত হয়ে উঠছে। ওরা দুজনই এবার বসা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। রুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রূপ মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মারু সাজ গোজের রুমটা কিন্তু নিচ তলার স্টোর রুমের পাশের রুমটায় করতে হবে। এতে আমাদের পালাতে সুবিধে হবে।”

—-“হুম নিচে চল। আমি ম্যানেজ করছি।”

রূপ আর মারু রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে এক অলোক ধাঁধায় হারিয়ে গেলো। ড্রইং রুমে মেহমানরা গিজগিজ করছে। এক্টু স্থির হয়ে দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। সোফার দিকে তাকাতেই মারু আর রূপ আরো বেশি অবাক হয়ে গেলো। তিন সেটের সোফা জুড়ে শুধু অনিক আর ওর ফ্যামিলি মেম্বাররা বসে আছে। মাঝখান থেকে মিনা এসে মারুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—–“মারু শোন….. অনিক ওর ফ্যামিলি নিয়ে সকাল সকালই আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে। বিয়ে করে একেবারে বাড়ি ফিরবে। তোরা উপরে যা। এক্টু পরেই পার্লার থেক মেয়েরা আসবে তোকে সাজাতে।”

মারু বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। রূপ বেশ বুঝতে পেরেছে অনিক কিছু আঁচ করতে পেরেছে। তাই সে এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার রিস্ক টা নিতে চাইছে না। রূপ আর মারুকে চোখে চোখে রাখার জন্যই অনিক এই প্ল্যানটা করেছে। রূপ গলাটা ঝাঁকিয়ে মিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“আপু…..আমরা আজ নিচের রুমেই সাজব। দু তলায় যাবো না। একচুয়েলি সাজ গোজের পর খুব কষ্ট হয় শাড়ি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে। মাঝে মাঝে সিঁড়ির সাথে পা আটকে যায়। কাল তো মারু দুবার সিঁড়ি থেকে পড়ে যেতে নিচ্ছিলো। ভাগ্যিস আমি ওকে বাঁচিয়ে নেই। নয়তো কাল সিঁড়ি থেকে পড়ে ওর মাঝা ভেঙ্গে যেতো।”

মিনা কিছু এক্টা ভেবে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“ওকে যাও নিচের রুমেই রেডি হও। দুজনই শাওয়ার নিয়ে নাও। পার্লারের মেয়েরা আসল বলে।”

রূপ আর দেরি না করে মারুকে টানতে টানতে স্টোর রুমের পাশের রুমটায় ঢুকে পড়ল। অনিক বাঁকা হাসি দিয়ে রূপ আর মারুর যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আমার ডাউট যদি সত্যি হয় না, তবে আজ এই দুটোকেই আমি জ্যান্ত কবর দেবো। তোদের চোখে চোখে রাখার জন্যই এই অসুস্থ নিয়ে আমার এ বাড়িতে আসা।”

মিনা এক এক করে সাজের সরন্জ্ঞাম গুলো স্টোর রুমের পাশের রুমটাতে জড় করছে সাথে মেঘা ও আছে। রূপ প্রথমে মারুকে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। রূপ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মিনার অগোচড়ে মুহিতের নম্বরে টেক্সট করে লিখছে,,,,,,,

—–“মুহিত আমার মনে হচ্ছে অনিক আমাদের প্ল্যান ধরে ফেলেছে। তাই তো এতো সকাল সকাল এই বাড়িতে চলে এসেছে। আমাদের পালানোটা এতোটা ও সহজ হবে না। তুমি সাবধানে গাড়ি নিয়ে বাড়ির পিছনের গেইটটায় থেকো। আমি ম্যাসেজ করার সাথে সাথেই তোমরা গাড়ি নিয়ে পিছনের গেইটায় হাজির হয়ে থেকো। আই থিংক একটার আগেই কাজী চলে আসবে। এর কিছুক্ষন আগেই আমি তোমাকে ম্যাসেজ করব।”

প্রায় পাঁচ মিনিট পর রূপের নম্বরে ম্যাসেজের রিপ্লাই চলে এলো। ম্যাসেজটাতে লিখা,,,,,,

—-“রূপ তুমি ঘাবড়িয়ো না। সাহস রাখো মনে। অনিক আমাদের কিছুই করতে পারবে না। তুমি জাস্ট টাইমে আমাকে ম্যাসেজ করে দিবে। আমি গাড়ি নিয়ে বাড়ির পেছনের দিকে হাজির থাকব। জানালা থেকে লাফানোর সময় খুব সর্তক থাকবে। যেনো বেকায়দায় পড়ে কোনো অঘটন না ঘটে। সব দিকেই নজর রাখতে হবে তোমার। কেউ যেনো কিছু আঁচ করতে না পারে। আর শুনো স্প্রে টা তোমার সাথে সাথে রেখো, অনিক বাঁধা দিতে আসলেই ওর চোখে, মুখে স্প্রে করে দিবে। শুধু অনিক না যে ই তোমার সামনে পড়বে তার চোখে মুখেই স্প্রে করে দিবে।”

—-“ওকে মুহিত।”

রূপ ফোনটা বুক পকেটে গুজে রুমে ঢুকে পড়ল। ঘড়িতে এগারোটা বাজছে। পার্লার থেকে দুটো মেয়ে এসেছে। মিনা আর মেঘা রুম থেকে বের গেছে। রূপ রুম থেকে বের হয়ে উপর তলায় উঠে মারুর রুম থেকে লাকেজটা হাতে নিয়ে নিচ তলায় নেমে এলো। স্প্রেটা রূপ কায়দা করে কোমড়ে গুজে নিয়েছে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর মারু ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এলো। পার্লারের মেয়েরা মারুকে শাড়ি পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রূপ একপাশে দাঁড়িয়ে মারুর চুলগুলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দিচ্ছে। শাড়ি পড়ানো শেষে মারুকে এবার আয়নার সামনে বসিয়ে দেওয়া হলো। এর মাঝেই রুমের দরজা ঠেলে অনিক লাল পান্জাবি পড়ে সরাসরি রুমে ঢুকে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বাঁকা হেসে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“শালী সাহেবা। আপনাদের সাজ গোজ দেখতে চলে এলাম। আমার সামনেই আজ আপনারা সাজবেন।”

রূপ চোখ লাল করে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“আচ্ছা এটা আপনার কোন ধরনের অসভ্যতা? বিলিভ মি আপনার মতো অসভ্য লোক আমি আমার বাপের জন্মে দেখি নি। এক্টা পুরুষের সামনে মেয়েরা সাজবে কি করে? চক্ষু লজ্জার ও তো এক্টা ব্যাপার আছে।”

অনিক শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,,,,,

—-“ওহ্ শালিকা, আমরা আমরাই তো। এখানে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ ই নেই। প্লিজ তোমরা রেডি হও। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইছি না।”

রূপ চোখ জোড়া বন্ধ করে রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। অনিককে রুম থেকে বের করার ফন্দি খুঁজছে সে। পার্লারের মেয়েরা নিরুপায় হয়ে মারুকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মারু রাগে ফুসছে। তবে কিছু বলতে পারছে না। আপাতত চুপ থাকাটাই শ্রেয়। মারু মনে মনে অনিকের চৌদ্দ গোষ্ঠীকে ধুঁয়ে ফেলছে।

প্রায় এক ঘন্টা পর মারুর অর্ধেক সাজ শেষ হলো। এবার শুধু খোঁপা করার পালা। রূপ এখনো শাড়ি ও পড়ে নি। টেনশানে ওর কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। অনিক কিছুতেই জায়গা থেকে নড়ছে না। ড্যাব ড্যাব করে রূপ আর মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। খোঁপা বাঁধার পর মারুর সম্পূর্ন সাজ কমপ্লিট হলো। পার্লারের মেয়েরা এক এক করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। পালানোর সময় ঘনিয়ে এসেছে। রুমে অনিক ছাড়া আর কোনো তৃতীয় ব্যক্তি নেই। এই হলো পালানোর মুখ্যম সুযোগ। রূপ বুকে সাহস নিয়ে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“ভাইয়া আপনি এক্টু দয়া করে রুম থেকে বের হন। আমি রেডি হবো। শাড়ি পড়ব। আধ ঘন্টা পরে আমি নিজেই আপনাকে ডেকে নেবো।”

—–“স্যরি শালিকা তা আর হচ্ছে না। কাজী সাহেব আসার আগে আমি রুম থেকে বের হচ্ছি না।”

—-“প্লিজ ভাইয়া বুঝার চেষ্টা করুন। আমি এখনো রেডি হই নি। বেস্টুর বিয়েতে না সেজেই জোকার হয়ে ঘুড়ব নাকি?”

অনিক কিছু এক্টা ভেবে বলল,,,,,,

—-“ওকে দশ মিনিট পর আমি আবার রুমে ব্যাক করব। দশ মিনিটের মধ্যে শাড়ি পড়া কমপ্লিট করে নিবে। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”

—-“ভাইয়া পনেরো মিনিট পর আসুন প্লিজ।”

অনিক মাথা নাঁড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রূপ তাড়াতাড়ি করে মুহিতের ফোনে টেক্সট করে দিলো। টেক্সট করার অনেক আগেই মুহিত আর মৃন্ময় গাড়ি নিয়ে বাড়ির পেছনের গেইটে দাঁড়িয়ে আছে। রূপ মারুর দিকে তাকিয়ে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,

—-“মারু এখনই আমাদের পালাতে হবে। পনেরো মিনিটের মধ্যে। দুজনই নিঃশব্দে রুম থেকে বের হবো। কোনো সাউন্ড যেনো না হয়।”

মারু আয়নার সামনে থেকে উঠে শাড়িটা ভালো করে কোঁমড়ে গুজে নিলো। রূপ ওর ল্যাকেজটা হাতে নিয়ে মারুর হাত ধরে রুমের দরজা খুলে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল ড্রইং রুমে সবাই জড় হয়ে আছে। তবে অনিককে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ড্রইং রুমের উপস্থিত সবাই হাসি খুশিতে মগ্ন। রূপরা ইজিলি এক রুম থেকে বের হয়ে আরেক রুমে মুভ করতে পারবে। কারো চোখে ধরা পড়ার চান্স নেই।

রূপ আর দেরি না করে মারুকে নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে স্টোর রুমে ঢুকে পড়ল। রূপ স্টোর রুমের দরজাটা আটকে দিলো। দরজাটা খুব নড়বড়ে। হালকা ধাক্কায় খুলে যাবে। স্টোর রুমের জানালাটা ভিতর থেকে লক করা। মারু তাড়াহুড়ো করে জানালাটা খুলে দিলো। শাড়িটা ভালো করে দুহাত দিয়ে মুঠ করে ধরে মারু জানালায় উঠে পড়ল। এবার শুধু লাফ দিয়ে নিচে নামার পালা। মারু একবার পিছু ফিরে রূপের দিকে তাকিয়ে এক লাফ দিয়ে নিচে নেমে গেলো। রূপ দরজা থেকে সরে এসে ল্যাকেজটা প্রথমে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারল। মারু ল্যাকেজটা হাতে নিয়ে পিছনের গেইট বরাবর দাঁড়িয়ে রইল।

রূপ উড়নাটা কোমড়ে গুজে যেই না এক পা বাড়িয়ে জানালায় পা রাখতে যাবে অমনি স্টোর রুমের দরজা ঠেলে অনিক রুমে ঢুকে পড়ল। রূপ পিছু ফিরে চোখে, মুখে আতঙ্ক নিয়ে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে। অনিক তেড়ে এসে রূপের চুলের মুঠি ধরে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,,,,,,

—–“আমি জানতাম তোরা নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান করে রেখেছিস। তাই তো আগে থেকে আমি ও প্রস্তুত ছিলাম। তোর আর মারুর চাল আমি ধরে ফেলেছি। মারু সোনা কে পেছনের গেইট থেকে ধরে আনতে আমার বেশি সময় লাগবে না। আগে তোর এক্টা ব্যবস্থা করি।”

কথাগুলো বলেই অনিক রূপের ঠোঁটের দিকে এগুচ্ছে। রূপ ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠছে এরপর ও এক্টা টু শব্দ করছে না। চোখ জোড়া বন্ধ করে রূপ চোখের পানি ছাড়ছে। রূপের এটা ভেবে শান্তি লাগছে যে, অনিক এখনো পুরো প্ল্যান ধরতে পারে নি। মুহিত আর মৃন্ময় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি না। আচমকাই রূপ বাঁকা হেসে এক হাত দিয়ে কোমড় থেকে ক্লোরোফর্মের স্প্রে টা বের করে অনিকের চোখে মুখে স্প্রে করে দিলো। সাথে সাথেই অনিক রূপের চুল ছেড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। অনিক পিটপিট চোখে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে।

রূপ তাড়াহুড়ো করে আবারো জানালায় পা বাড়াতে নিলে অনিক পিছন থেকে রূপের ডান পা টেনে ধরল। রূপ কিছুতেই জানালায় পা বাড়াতে পারছে না। এক পর্যায়ে রূপ বিরক্ত হয়ে অনিককে অন্য পা দিয়ে সজোরে এক্টা লাথি মেরে এদিক সেদিক তাকিয়ে এক্টা ভাঙ্গা ফুলদানি হাতে নিয়ে চোখে, মুখে রাগী ভাব ফুটিয়ে অনিকের মাথায় জোরে জোরে দুটো আঘাত করল। সাথে সাথে অনিকের মাথার সাদা ব্যান্ডেজটা রক্তে লাল হয়ে গেলো। অনিক এবার পুরোপুরি সেন্সলেস হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। রূপ আর দেরি না করে অনিকের মুখে এক গাঁধা থুথু ছিটিয়ে জানালা টপকে বাড়ির পিছনের গেইটে চলে গেলো। রূপ বুকে হাত দিয়ে বড় বড় করে শ্বাস ফেলছে। হয়রান হয়ে গেছে সে। পায়ের কিছুটা জায়গা দেয়ালের সাথে লেগে কেটে ও গেছে। টুপটাপ রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

মারু আর দেরি না করে রূপের হাতে ধরে পিছনের গেইট দিয়ে মেইন রাস্তায় চলে এলো।

মুহিত আর মৃন্ময় টেনশানে শেষ হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি থেকে নামতে ও পারছে না ওরা। গাড়িতে বসে বসেই টেনশান করে যাচ্ছে। মুহিতের অধিক টেনশান হচ্ছে রূপের জন্য।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,

(কাল ই আসছে সেই কাঙ্খিত ধামাকা পর্ব। সবাই হাত, পা নামিয়ে অপেক্ষা করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here