এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ৩০+৩১

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩০
#নিশাত_জাহান_নিশি

ঘড়িতে রাত আটটা। মুহিত অফিস থেকে বাড়ি ফিরছে। গাড়িটা ফ্ল্যাটের পার্কিং এরিয়ায় পার্ক করে হাতে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল আর ক্যান্ডেল নিয়ে মুহিত যেই না দুতলার সিঁড়িতে পা রাখতে যাবে অমনি আদ্রিতা ঝড়ের গতিতে এসে মুহিতের সাথে ধাম করে এক ধাক্কা খেলো।

আদ্রিতা হুমড়ি খেয়ে মুহিতের গাঁয়ে পড়ল। মুহিত সাথে সাথেই আদ্রিতাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ওর গাঁয়ের উপর থেকে সরিয়ে নিলো। মুহিতের হাত থেকে অলরেডি ফুল, ক্যান্ডেল সব মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ক্যান্ডেল গুলো ভেঙ্গে চূড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। মুহিতের রাগটা যেনো মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। চোখ মুখ লাল করে মুহিত পাশে ঢঙ্গী ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“চোখে দেখতে পাও না তুমি? বাড়িতে এতো এতো আলো থাকতে তুমি কিনা অন্ধের মতো আমার গাঁয়ে এসে ধাক্কা খেলে?”

আদ্রিতা মুহিতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ন্যাকা ন্যাকা ভাব নিয়ে বলল,,,,,,

—-“স্যরি ভাইয়া। আমি না একদম খেয়াল করি নি। আপনি ও উপরে উঠছিলেন আমি ও নিচে নামছিলাম। তাই দুজন মুখোমুখি হয়ে গেলাম। পুরোটাই কাকতালীয় ছিলো। বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছে করে কিচ্ছু করি নি।”

মুহিত চোয়াল শক্ত করে সামনের চুল গুলো টানছে আর রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই যেনো হয়ে উঠছে না। অনেক আশা করে মুহিত ফুল আর ক্যান্ডেল গুলো এনেছিলো। অথচ কিছুটা মুহূর্তের মধ্যে সব নষ্ট হয়ে গেলো। মুহিত আর কথা না বাড়িয়ে নিচে বসে ফুল গুলো দু হাত দিয়ে কুড়ােচ্ছে। আদ্রিতা ও মুহিতের পাশে বসে ফুল গুলো কুড়োচ্ছে আর ন্যাকা ন্যাকা কন্ঠে মুহিতকে বলছে,,,,,,

—-“আমি ও আপনাকে হেল্প করছি মুহিত ভাইয়া। আমার জন্যই তো এতো বড় অর্নথটা হলো।”

মুহিত কোনো কথা বলছে না। মনযোগ দিয়ে ফুল গুলো এক্টা এক্টা করে তুলে নিচ্ছে। আদ্রিতা ভাও না পেয়ে আবারো গলাটা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,

—-“ভাইয়া…..এত্তো এত্তো ফুল দিয়ে কি হবে? কোনো বিশেষ কাজে এনেছেন?”

মুহিত সম্পূর্ণ ফুল গুলো কুড়িয়ে নিয়ে আদ্রিতাকে ক্রস করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর বলছে,,,,,

—–“আজ আমার আর রূপের ফুলসজ্জা।”

কথাটা গম্ভীর গলায় বলেই মুহিত দ্রুত গতিতে হেঁটে দু তলায় উঠে গেলো। আদ্রিতা মুহূর্তেই চোখ, মুখ লাল করে কারো এক্টা নাম্বারে কল লাগিয়ে বলল,,,,,

—-“এই হ্যালো শুনো আজ ওদের ফুলসজ্জা। আমরা আর কিছুই করতে পারব না। সব ঠিকঠাক আছে। কোনো আইডিয়াই এখন কাজে দিবে না। অন্য কোনো আইডিয়া খুঁজো। ক্যামেরাটা ও মুহিতের গাঁয়ে ফিট করতে পারলাম না। ছেলেটা বড্ড, একঘুঁয়ে আর জেদী।”

কথা গুলো বলেই আদ্রিতা চুপ হয়ে গেলো। মনযোগ দিয়ে কিছু এক্টা শুনছে সে। হয়তো ঐ পাশের লোকটা কিছু বলছে। প্রায় দুই মিনিট পর আদ্রিতা আবার বলল,,,,,,,,

—-“ওকে আমি নজরে রাখব। এই আইডিয়াটাই কাজে লাগবে। তুমি এ নিয়ে কোনো চিন্তা করো না। আমার কাজ আমি ঠিক বুঝে নিবো।”

কথা গুলো বলেই আদ্রিতা কলটা কেটে হনহনিয়ে নিচ তলায় নেমে ওদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।

মুহিত মুখটা ফুলিয়ে অনবরত কলিং বেল চেঁপে যাচ্ছে। মারু বিজি মৃন্ময়ের সাথে। মৃন্ময় এক্টু আগেই অফিস থেকে ফিরেছে। এসেই সে মারুর সাথে রোমান্টিক অত্যাচারে লেগে পড়েছে। অন্যদিকে রূপ ওয়াশরুমে ঢুকে দুপুরের ভিজিয়ে রাখা শাড়ীটা কাচ্ছে। তাই কলিং বেলের আওয়াজ রূপের কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না। এছাড়া ও কলিং বেল টার আওয়াজ খুব কম। রুমের দরজা লাগালে আওয়াজ কানেই আসে না।

মুহিত অনেকক্ষন কলিং বেল চাপার পর খুব ঘাবড়ে গেলো। ভয়ে ওর বুকটা কেঁপে উঠল। মৃন্ময় ফ্ল্যাটে আছে জেনে ও মুহিতের ভয়টা যেনো কিছুতেই কমছে না। রূপের এমন লাপাতা ভাব মুহিতের ভয়টাকে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো। গাঁ থেকে ঘাম ঝড়া শুরু হলো মুহিতের। হাত- পা কাঁপতে শুরু করল। পেরেশান হয়ে মুহিত পকেট থেকে ফোনটা বের করে রূপের নাম্বারে ডায়াল করল। প্রথম কলটা এমনি এমনি কেটে গেলো। দ্বিতীয় কলটা বাজার সাথে সাথে রূপ ওয়াশরুম থেকে দৌঁড়ে এসে কাবার্ডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিলো। হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই ফোনটা কেটে গেলো। রূপ যেই না মুহিতের নাম্বারটায় কল ব্যাক করতে যাবে অমনি টুং টাং শব্দে এক্টা ম্যাসেজ এলো রূপের নম্বরে।

ম্যাসেজটা মুহিতের করা। ম্যাসেজটাতে লিখা আছে,,,,,,

—-“রূপ তুমি কোথায়? কখন থেকে কলিং বেল চেঁপে যাচ্ছি। দরজা খুলছ না কেনো?”

রূপ ম্যাসেজটা সিন করে আর এক মুহূর্ত ও দাঁড়াল না। ফোনটা বেডের উপর ছুড়ে মেরে দৌঁড়ে সদর দরজার কাছে চলে গেলো। দরজার খিলটা খোলার সাথে সাথে মুহিতের নেতিয়ে যাওয়া মুখটা রূপের চোখে পড়ল। রূপকে দেখা মাএই মুহিত উত্তাল দু চোখ নিয়ে রূপকে টাইট করে জড়িয়ে ধরল। রূপ বেশ বুঝতে পেরেছে মুহিত প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। মুহিতের বুকটা এখনো ধকধক করে কাঁপছে। মনে হচ্ছে হার্টবিট টা এখনই বের হয়ে আসবে। শরীরটা ও ঢকঢক করে কাঁপছে। কিছুতেই যেনো মুহিত নিজেকে স্থির হতে পারছে না।

এই মুহূর্তে রূপ নিজেকে খুব লাকী মনে করছে। পৃথিবীতে একজন হলে ও ওর কথা ভাবে, এক্টু চোখের আড়াল হলেই ঘাবড়ে যায়, অহেতুক ভয়ে নিজেকে অস্থির করে তুলে, হার্টবিটকে নাচাতে নাচাতে অকেজো করে তোলে, শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলে। নিজেকে পুরোপুরি কোনঠাসা করে ফেলে। ভালোবাসার সিমটমস গুলিই এরকম। ভালোবাসলে তোমাকে খুব শক্ত মনের মানুষ হতে হবে। নয়তো যে কোনো সময় হার্টবিট দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দুর্বলতা ভালোবাসার ক্ষেএে প্রযোজ। যা মুহিতের মাঝে ষোল আনা আছে।

মুহিত রূপকে আরো জোরে টাইট করে জড়িয়ে ধরে রূপের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“কোথায় ছিলে এতোক্ষন? জানো আমি কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?”

রূপ মিনমিন করে বলল,,,,,

—-“ওয়াশরুমে ছিলাম। শাড়ি কাচ্চিলাম। তাই কলিং বেলের আওয়াজ শুনি নি।”

রূপ কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,

—-“স্যরি মুহিত আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতোটা ভয় পেয়ে যাবে।”

—–“স্যরি বলতে হবে না। রুমে চলো। তোমার কোলে মাথা রাখব।”

—–“আগে ফ্রেশ হবে, ডিনার করবে এরপর কোলে মাথা রাখবে।”

—-“এতো রেস্ট্রিকশান আমি মানতে পারব না।”

কথাটা বলেই মুহিত আচমকা রূপকে কোলে তুলে নিলো। সদর দরজার খিলটা ভালো করে লাগিয়ে মুহিত রূপকে নিয়ে বেড রুমে চলে গেলো। বেড রুমের দরজা লাগিয়ে মুহিত রূপকে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো। পায়ের জুতো গুলো কোনো রকমে খুলে মুহিত রূপের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।

মুহিত এক দৃষ্টিতে রূপের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি ওর চঞ্চলা। কিছুটা আবেদনময় ও। রূপ হাসি মুখে মুহিতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মুহিত আচমকাই রূপের হাত জোড়া বুকের বাঁ পাশে চেঁপে ধরে রূপের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“ফিল করতে পারছ আমার হার্টবিটের অসহ্য ধুকপুকুনি? কেনো আমার হার্টবিট অশান্ত হয়ে উঠেছে জানো?”

রূপ চুপ করে রইল। মুহিত আবারো বলল,,,,,,

—-“তোমাকে হারানোর ভয়ে। সবসময় তোমাকে ঠিক এই জায়গাটায় ধারণ করি আমি। তুমি কখনো হারিয়ে যাবে না তো রূপ? তাহলে এই হার্টবিটের ধুকপুকানীটা ও সারা জীবনের জন্য থেমে যাবে।”

রূপের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না সে। এরপরে ও নিজেকে কিছুটি স্বাভাবিক করে রূপ মলিন হেসে বলল,,,,,,,

—-“কোথায় হারাবো তোমাকে ছেড়ে? হারানোর জায়গা নেই আমার।”

—-“কনফার্ম করে বলো তুমি কোথাও যাবে না।”

—-“পাক্কা কনফার্ম। কোথাও যাবো না।”

মুহিত এবার রূপের হাত জোড়ায় এক্টা লম্বা চুমো খেয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি তোমাকে কোথাও হারাতে দেবো না রূপ। এভাবেই তোমাকে সবসময় আঁকড়ে রাখব। তুমিই আমার লাইফ লাইন।”

রূপ আনমনা হয়ে আচমকাই বলে উঠল,,,,,,

—-“যদি নিয়তি কেড়ে নেয়?”

মুহিতের শান্ত চোখ জোড়া আবারো অশান্ত হয়ে উঠল। চোখে লাল আভা ফুটে উঠেছে। নিজেকে কিছুটা দমিয়ে মুহিত বলে উঠল,,,,,,

—-“নিয়তি নিশ্চয়ই আমার সাথে কোনো অবিচার করবে না।”

—-“যদি তুমি হারিয়ে যাও???”

—-“যেভাবেই হোক খুঁজে নিবে আমায়। আমি জানি তুমি পারবে।”

—-“তার মানে তুমি সত্যি সত্যি হারিয়ে যাবে?”

—-“সম্ভাবনা থেকে বললাম। যদি ও নিঁখোজ হই আমি জানি, তুমি ঠিক আমায় খুঁজে নিবে।”

—-“খুঁজতে খুঁজতে যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ি?”

—-“ভালোবাসায় কখনো ক্লান্তি আসে না রূপ। তুমি ও ক্লান্ত হবে না।”

রূপ চোখের জল ছেড়ে মুহিতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“তুমি কোথাও হারাবে না মুহিত। আমি তোমায় হারাতে দেবো না।”

চোখের জল গুলো মুছে রূপ মুহিতের দিকে খানিক ঝুঁকে মুহিতের নাকে নাক ঘঁষল। মুহিত মলিন হেসে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ এক ভ্রু উঁচু করে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“এক্টু জোরে হাসো। এখনো মন খারাপ করে থাকবে?”

—-“হুম।”

—-“কেনো?”

—-“ফুল আর ক্যান্ডেল গুলো নষ্ট হয়ে গেছে।”

রূপ অবাক হয়ে বলল,,,,,

—-“হোয়াট?”

—-“আজ আমাদের ফুলসজ্জা হওয়ার কথা ছিলো।”

—-“তো???”

—-“তো আর কি? আমি ফুল আর ক্যান্ডেল নিয়ে আসছিলাম। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় হঠাৎ ই আদ্রিতার সাথে ধাক্কা লাগে। হাত থেকে সব ফুল আর ক্যান্ডেল মাটিতে ছিটকে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। যাও কয়েকটা ফুল কুড়িয়ে এনেছিলাম ভয়ের চোটে সব ফুল নিচে পড়ে গেলো।”

রূপ কিছুটে কৌতুহল নিয়ে বলল,,,,,

—-“আদ্রিতার সাথে ধাক্কা লাগলো কিভাবে?”

—-“উপর, নিচ করার সময় দুজনই মুখোমুখি হয়ে যাই। রাগের চোটে মেয়েটাকে অনেক বকেছি ও। অসহ্য লাগছিলো।”

এর মাঝেই মুহিতের ফোনটা বেজে উঠল। মুহিত পকেট থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখল কাজী সাহেবের নাম্বার থেকে কল এসেছে। মুহিত বেশ খুশি খুশি মনে ফোনটা পিক করে যেই না হ্যালো বলতে যাবে অমনি ঐ পাশ থেকে কাজী সাহেব অস্থির কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,

—–“মুহিত মাফ করো আজ আমি আসতে পারব না। কিছু পার্সোনাল প্রবলেমের জন্য আজ আমার কোথাও যাওয়া হচ্চে না। তুমি প্লিজ অন্য কোনো কাজী ডেকে বিয়েটা পড়িয়ে নিও।”

মুহিতকে আর কিছু বলার সুযোগ দেয় নি কাজী সাহেব। ফোনটা কাট করে দিলো। মুহিত ফোনটা কানে রেখেই নানা চিন্তার মধ্যে ডুবে গেলো। কাজী সাহেবের অস্থির কন্ঠ, হঠাৎ পার্সোনাল কাজের অযুহাত, উনার কাজ অন্যকে দিয়ে করানোর আইডিয়া এই সব কিছুই যেনো মুহিতের কাছে কেমন ঘোলাটে লাগছে। কোথাও এক্টা ফাঁক ফোঁকড় রয়ে গেছে। কিছু এক্টা রহস্য তো লুকিয়েই আছে।

মুহিতের মনটা ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রথমত জেনিয়ার সাথে ধাক্কা, দ্বিতীয়ত কাজী সাহেবের এমন উদ্ভট কথা বার্তা সব মিলিয়ে টেনশানের পাশাপাশি মনটা ও দারুন খারাপ হয়ে গেছে মুহিতের। রূপ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মুহিতের এমন ভাবুক লুক দেখে মুহিতকে হালকা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“কি হয়েছে মুহিত? কি ভাবছ?”

মুহিত কান থেকে ফোনটা সরিয়ে রূপের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বেডের উপর বসে গেলো। বসা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুহিত বিষন্ন মন নিয়ে টাই খুলছে আর রূপকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—–“আজ বিয়েটা হবে না রূপ। কাজী সাহেব আসতে পারবে না।”

রূপ অট্ট হেসে বলল,,,,,,

—–“আল্লাহ্ এই জন্য তোমার মন খারাপ?”

—–“হুম।”

রূপ মৃদু হেসে বেড থেকে উঠে মুহিতকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মুহিতের পিঠে মাথা ঠেঁকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“আচ্ছা আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না মুহিত। কাল ও তো বিয়েটা করা যাবে। মুখটা এভাবে ফুলিয়ে রেখেছ কেনো? তোমাকে এভাবে দেখতে আমার একদম ভালো লাগছে না। প্লিজ হাসো।”

মুহিত রূপকে শান্তনা দেওয়ার জন্য জোর পূর্বক অট্ট হেসে বলল,,,,,,,,

—–“এই দেখো হাসছি। একচুয়েলি তোমার স্যামপেথি পাওয়ার জন্য আমি এমন ইচ্ছে করে ঢং করছিলাম। এবার ছাড়ো প্লিজ। ফ্রেশ হবো।”

রূপ মুহিতকে ছেড়ে মুহিতের পিঠে এক্টা চুমো খেয়ে
কিচেন রুমের দিকে চলে গেলো। রাতের খাবার গরম করতে। মুহিত আলমারি থেকে শার্ট, প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। মুহিত গভীর চিন্তায় আছে। সব কাজের ফাঁকেই সে কিছু না কিছু এক্টা চিন্তা করেই যাচ্ছে।

অন্যদিকে মারু আর মৃন্ময় রোমান্সে ব্যস্ত। মৃন্ময় কিছুতেই মারুকে ছাড়তে চাইছে না। জোর করে মৃন্ময়ের কাছে আটকে রাখছে। মারু অতিষ্ট হয়ে উঠছে মৃন্ময়ের অত্যাচারে। মৃন্ময়ের ফোনটা সাইলেন্ট মোডে রাখা কাবার্ডের উপর। অনেকক্ষন ধরেই ফোনটা বেজে যাচ্ছে অথচ মৃন্ময় কলটা তুলছেই না। আওয়াজ পেলে তো তুলবে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর। ঘড়িতে রাত ৯ টা পেরিয়ে ৯:৩০ এ পৌঁছলো। মুহিত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত, পা মুছে ডাইনিং রুমে চলে গেলো। রূপ কিচেন রুম থেকে খাবার গুলো এক এক করে ডাইনিং টেবিলে এনে সাজাচ্ছে। মুহিত এক্টা চেয়ার টেনে বসে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“ভাই আর ভাবী কি রুমে?”

রূপ বেশ ব্যস্ত স্বরে বলল,,,,,,

—–“হুম। ওদের ডাকতে হবে। খাবার তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

—–“ওদের ডাকা টা কি এখন ঠিক হবে? ভাই তো আমার মতো রোমান্সের অভাবে ভুগছে না। চান কপাল আমার ভাইয়ের। শালা আমি আগে বিয়ে করে ও কোনো ফয়দা তুলতে পারছি না।”

রূপ তেড়ে এসে মুহিতের মুখ চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—–“তোমার মুখ টা আমি সুঁচ দিয়ে সেলাই করে দিবো। আস্ত অসভ্য লোক এক্টা। মুখে কিচ্ছু আটকায় না। না?”

রূপের কথায় কান না দিয়ে মুহিত চোখ বন্ধ করে রূপের হাতে ইচ্ছে মতো চুমো খেয়ে যাচ্ছে। মুহিতকে শাস্তি দিতে গিয়ে রূপ নিজেই রোমান্সের শিকার হয়ে গেলো। রূপ তাড়াতাড়ি করে মুহিতের মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে নিলো।

কোমঁড়ে হাত গুজে রূপ চোখ লাল করে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত বাঁকা হেসে এক দৃষ্টিতে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ রাগে ক্ষুদ্ধ হয়ে হনহনিয়ে মৃন্ময়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো। লাগাতাড় দরজায় টোকা মারছে রূপ। তবে মুখে কিছু বলছে না। মারু দরজা টোকানোর আওয়াজ পেয়ে মৃন্ময়ের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“মৃন্ময় এবার প্লিজ ছাড়ো। রূপ ডাকছে হয়তো।”

মৃন্ময় মারুকে বুকের সাথে আরো জোরে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—-“আমি কিন্তু এক্টু পরেই বাড়ি চলে যাবো মারু। আজ রাত হয়তো থাকা হবে না। আম্মু সন্দেহ করতে পারে।”

মারু কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মৃন্ময়ের বুকে মাথা রেখে কাতর স্বরে বলল,,,,,,,,

—–“মৃন্ময আজ থেকে যাও না প্লিজ। কাল একেবারে অফিস থেকে বাড়ি চলে যেও। আমার একলা রুমে থাকতে ভয় লাগবে।”

মারুর কথা মৃন্ময় ফেলতে পারছে না। মারুর মাথায় লম্বা এক্টা চুমো খেয়ে মৃন্ময় মারুর কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“ওকে তাই হবে। আজ থেকে যাবো। কাল অফিস থেকে বাড়ি ফিরে যাবো। খুশি তো?”

মারু খুশিতে মৃন্ময়কে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,,

—–“খুব খুব খুব খুশি।”

মৃন্ময় এবার নড়ে চড়ে বলল,,,,,,

—-“তাহলে এবার উঠি। রূপ নিশ্চয়ই হয়রান হয়ে যাচ্ছে।”

মারু তাড়াতাড়ি মৃন্ময়ের উপর থেকে উঠে শাড়িটা ঠিক করে দরজার খিলটা খুলে দিলো। মারুকে দেখা মাএই রূপ বাঁকা হেসে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,

—-“এই তোরা এতক্ষন কি করেছিস রুমে? তোর গলায় বাইটের দাগ কেনো?”

মারু তাড়াতাড়ি শাড়ি দিয়ে গলাটা ঢেকে লজ্জায় লাল হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“তিন কবুল হলে বুঝবি। এখন চল। ক্ষিদে পেয়েছে।”

মারুকে আর লজ্জায় ফেলতে চাইছে না রূপ। তাই সে মারুর হাত ধরে টানতে টানতে মারুকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে গেলো। মৃন্ময় ও ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে এলো। মুহিতের পাশের চেয়ারটা টেনে মৃন্ময় মুহিতের পাশে বসে গেলো। মুহিত ফিসফিসিয়ে মৃন্ময়ের কানে কানে বলল,,,,,,,

—–“দিন, কাল কেমন যাচ্ছে ভাই? সব ঠিক তো?”

মৃন্ময় বেশ বুঝতে পেরেছে মুহিত কি বুঝাতে চাইছে। মৃন্ময় ও ফিসফিসিয়ে মুহিতের কানে বলল,,,,,,,

—-“শুনলাম তোর দিন কাল একদমই ভালো যাচ্ছে না। তাই আমার দিন কালের পেছনে পড়েছিস!”

মৃন্ময়ের ইয়ার্কি মুহিতের একদম পছন্দ হয় নি। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে সোজা হয়ে বসে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“রূপ তাড়াতাড়ি সার্ভ করো। ক্ষিদে পেয়েছে।”

মৃন্ময় হাসি চেঁপে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। রূপ একে একে সবার প্লেইট খাবার বেড়ে দিলো। রূপ ও ওর প্লেইটে খাবার নিয়ে মারুর পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ল। সবাই এবার খাওয়ায় মনযোগ দিলো।

সবার খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। আচমকাই মুহিত মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—-“ভাই তুই কি আজ বাড়ি যাবি?”

—-“না। কাল একেবারে অফিস থেকেই বাড়ি যাবো।”

—-“আম্মু যদি সন্দেহ করে?”

—-“সন্দেহ করলেই বা কি? আমার কিছু আসবে যাবে না। তাছাড়া সন্দেহ করার কোনো স্কোপ নেই। কজ আমার বিয়ের কথা আমরা চারজন ছাড়া এর বাইরে আর কেউ জানে না। তোদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা টা ও ঐ বাড়ির কেউ জানে না। সো চাইলে ও ওরা কোনো খবর নিতে পারবে না।”

—-“তা ঠিক।”

সবাই আবারো চুপ হয়ে খাওয়ায় মনযোগ দিলো। প্রায় পাঁচ মিনিট পর সবার খাবার সম্পূর্ণ শেষ হলো। রূপ আর মারু টেবিলটা গুছিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো। মুহিত রুমে ঢুকে সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজে লেগে পড়ল। রূপ রুমে ঢুকে মুহিতকে ব্যস্ত দেখে মুখটা ফুলিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

মারু আর মৃন্ময় দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর মারু মৃন্ময়ের বুকে মাথা রেখে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“আচ্ছা মৃন্ময়….তোমার ফ্যামিলি যদি আমাদের বিয়ের কথাটা জেনে যায় তখন কি হবে?”

—–“জেনে গেলে তো ভালোই। আমাদের তাড়াতাড়ি মেনে নিবো।”

—–“ওরা আমাকে মেনে নিবে না মৃন্ময়। তোমাদের বাড়ির কেউ আমাকে পছন্দ করে না।”

—–“মেনে না নিলে আমি ও মুহিতের মতো রাস্তা মাপব। যে যেমন তার সাথে তেমনই করতে হবে।”

—–“আমার খুব টেনশান হয় মৃন্ময়। কখন কি থেকে কি হয়ে যায়, বলা যায় না।”

—–“ধ্যাত চুপ করো তো। রোমান্টিক মোডটা নষ্ট করো না।”

মৃন্ময় আর দেরি না করে আচমকাই মারুর ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। ওরা আবারো ভালোবাসায় ডুবে গেলো।

ঐদিকে,,,,,

মুহিতের যেনো কিছুতেই কাজে মন বসছে না। বিভিন্ন চিন্তা মুহিতের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কাল সকালে অফিসে যাওয়ার আগেই সে কাজী সাহেবের সাথে দেখা করবে। কাজী সাহেবের মুখ থেকে মূল কথা শুনতে হবে। না হয় মুহিত কিছুতেই শান্তি পাবে না।

প্রায় আধ ঘন্টা পর, ল্যাপটপটা আলমারির ভেতর রেখে মুহিত রুমের লাইট অফ করে রূপের পাশে শুয়ে পড়ল। ড্রিম লাইটের আবছা আলোতে রূপের উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মুখটা ফুঁটে আছে। ঘুমিয়ে গেছে রূপ। শুধু ঘুমিয়ে গেছে বললে ভুল হবে, গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। রূপের ঠোঁট জোড়া মুহিতকে খুব টানছে। তবে এখন কিছুতেই রূপের ঠোঁটে চুমো খাওয়া যাবে না। না হয় রূপের ঘুম ভেঙ্গে যাবে। মুহিত মুচকি হেসে রূপকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে চোখ জোড়া বুজে নিলো।

ঘড়িতে রাত ১০:৩০। মৃন্ময়ের ফোনটা আবারো বেজে উঠল। রাত যতো গভীর হয় আশে পাশের নিস্তব্ধতা ততোই দ্বিগুন হয়। সাইলেন্ট মোডের ফুসফুস আওয়াজটা মারুর কানে এসে বাজল। মারু তাড়াতাড়ি মৃন্ময়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেড ছেড়ে উঠে কাবার্ডের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে আবারো বিছানায় ব্যাক করল। মৃন্ময় মারুর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখল মায়া আহমেদ কল করেছে। মৃন্ময় ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে মায়া আহমেদ বলে উঠল,,,,,,,

—–“মৃন্ময় কোথায় তুমি?”

—-“এইতো মুহিতের ফ্ল্যাটে। কেনো?”

—-“আমি বুঝি না তুমি সারা দিন রাত মুহিতের ফ্ল্যাটে কি করো। যাই হোক কাল সকালের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে। জরুরী দরকার আছে।”

—-“কাল সকালে সম্ভব না। ফিরতে ফিরতে রাত হবে।”

—–“আমরা কি রাতে মেয়ে দেখতে যাবো?”
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩১
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“আমরা কি রাতে মেয়ে দেখতে যাবো?”

—-“হোয়াট? মেয়ে দেখতে যাবো মানে?”

—-“হুম মেয়ে দেখতে যাবো। বয়স তো কম হলো না তোমার। তাই ভাবছি ভাই, বোনের বিয়েটা একদিনেই দিবো। দোলা আর তোমার বিয়ের ডেইট একদিনে ফিক্সড করব।”

মৃন্ময় প্রচন্ড রেগে বলল,,,,,,

—-“আমি এক্ষনি বাড়ি আসছি। ফোনটা রাখো।”

মৃন্ময় ফোনটা কান থেকে সরিয়ে একবার মারুর দিকে তাকালো। মারু জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় শোয়া থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বাটন লাগাচ্ছে আর পিছনে থাকা মারুকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,

—-“মারু তাড়াতাড়ি রেডি হও। বাড়ি যেতে হবে।”

মারু চোখ, মুখ কুঁচকে বলে উঠল,,,,,

—-“মানে?”

—-“মানে তুমি আর আমি এখন ঐ বাড়িতে যাবো। আজই আমাদের চ্যাপ্টার টা ক্লোজ করতে হবে।”

মারু বিছানা ছেড়ে উঠে মৃন্ময়ের পেছনে দাঁড়িয়ে বলল,,,,,

—-“এতো তাড়াহুড়ো কিসের মৃন্ময়? আমি সত্যিই তোমার কথার আগা মাথা বুঝতে পারছি না।”

—-“না বুঝার তো কিছু নেই মারু। আমরা আজই ঐ বাড়িতে গিয়ে উঠব। সত্যিটা যতো দ্রুত সামনে আসবে ততোই ভালো হবে।”

মারু তেড়ে এসে মৃন্ময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—-“আচ্ছা হঠাৎ কি এমন হলো বলো তো? তোমার মা ফোন দেওয়ার পর পরই তুমি বাড়ি যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলে।”

—-“এর যথেষ্ট কারন আছে মারু। ঐ বাড়ি গেলেই বুঝবে। যাও শাড়ি পাল্টে নীল শাড়িটা পড়ে এসো।”

মারু মৃন্ময়ের কথার আগা মাথা না বুঝে কাবার্ড থেকে নীল শাড়িটা বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মৃন্ময় শার্টের বোতম গুলো লাগিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা মুহিতের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো। কিছুক্ষন ইতস্তত বোধ করে মৃন্ময় গলা ঝাঁকিয়ে মুহিতের রুমের দরজায় টোকা মারছে আর বলছে,,,,,,,

—–“মুহিত, রূপ দরজা খোল। দরকারী কথা আছে।”

এভাবে প্রায় অনেকবার মৃন্ময় মুহিতের রুমের দরজা ধাক্কালো। মুহিতের কানে দরজার ধাক্কানোর আওয়াজটা বাজার সাথে সাথেই মুহিত চোখ খুলে দরজার দিকে তাকালো। মৃন্ময়ের কন্ঠটা ভেসে আসার সাথে সাথেই মুহিত শোয়া থেকে উঠে বসল। উদ্বিগ্ন হয়ে মুহিত রূপকে ছেড়ে বেড থেকে নেমে এক দৌঁড়ে দরজার কাছে চলে গেলো। রূপ এখনো ঘুমুচ্ছে। কোনো হাঁক ডাক ওর কানে যাচ্ছে না। মুহিত তাড়াহুড়ো করে দরজাটা খুলে মৃন্ময়ের দিকে কৌতুহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“কি হয়েছে ভাই?”

মৃন্ময় মুহিতের কাঁধে হাত রেখে কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,

—–“মুহিত….. ভেজাল তো একটা লেগে গেছে!”

—–“কি ভেজাল?”

—-“আম্মু কল করে বলল, কাল নাকি আমার জন্য মেয়ে দেখতে যাবে।”

—-“হোয়াট? আচমকা বিয়ের প্রসঙ্গ উঠল কেনো?”

—-“বয়স বাড়ছে তাই।”

—–“তো কি করবি এখন?”

—-“ভাবছি মারুকে নিয়ে বাড়িতে উঠব।”

—–“বাহ গুড আইডিয়া। তা কখন যাবি?”

—-“এখনই। মারুকে বলেছি রেডি হতে। চাইলে সাথে তুই ও যেতে পারিস।”

—–“স্যরি ভাই। রূপকে একা রেখে আমি যেতে পারব না।”

—–“তাহলে, রূপকে ও সাথে নে।”

—–“না। একে বারে দোলা আপুর বিয়েতে যাবে। এখন গেলে ঐ বাড়ির সবাই রূপকে কথা শুনাবে। কাজ ও করাবে। তার চেয়ে ভালো তুই তোর মতো করে আম্মু আর বাড়ির সবাইকে হ্যান্ডেল করে নে। আশা করছি ভাবীকে সবাই মেনে নিবে। আব্বু তো আছেই তোকে সাপোর্ট দেওয়ার মতো। বিশেষ দরকার হলে আমাকে ইনফর্ম করিস আমি চলে যাবো।”

—-“ওকে তাই হবে। রূপকে আর জাগাব না। পরিস্থিতি ঠিক হলে তোদের জানিয়ে দিবো।”

এর মাঝেই মারু শাড়ি পাল্টে পুরোপুরি রেডি হয়ে মৃন্ময়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। মারুকে দেখে মুহিত মৃদু হেসে বলল,,,,,,

—–“অল দ্যা বেস্ট ভাবী। আশা করছি আম্মু কে আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন।”

মারু মলিন হেসে বলল,,,,,,

—-“রূপ কোথায়?’

—-“রূপ তো ঘুমুচ্ছে ভাবী।”

—-“আচ্ছা ঘুমুক। কাল একবার এসে রূপকে দেখে যাবো।”

—-“ওকে ভাবী।”

—-“রূপকে বলে দিও মন খারাপ না করতে। আমি মাঝে মাঝে এসে রূপকে দেখে যাবো।”

মুহিত মলিন হেসে মাথা নাঁড়ালো। মৃন্ময় আর দেরি করল না। শেষ বারের মতো মুহিতের দিকে তাকিয়ে মারুর হাত ধরে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গেলো। মুহিত সদর দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে রুমে ঢুকে রূপকে ঝাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল। রূপ খানিক নড়ে চড়ে আবারো আরাম করে ঘুম দিলো।

প্রায় আধ ঘন্টা পর। মৃন্ময় মারুকে নিয়ে বাড়ি পৌঁছে গেলো। মারু খুব ভয়ে আছে। ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে সে। মৃন্ময়ের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে মারু। মৃন্ময় বাড়ির কলিং বেল চাপছে আর মারুকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—–“এই তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেনো? ভয় শব্দ টা তোমার সাথে একদমই যায় না। আমি এই ভীতু মারুকে ভালোবাসি নি। আমি খুব সাহসী আর চনমনা মারুকে ভালোবেসেছি। সাহস রাখো, ধৈর্য্য রাখো। দেখবে সব আপনা আপনি ঠিক হয়ে গেছে।”

মারু শুকনো ঢোক গিলে মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। এর মাঝেই রুমের দরজা খুলে মায়া আহমেদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। উনি এখনো মারুকে খেয়াল করে নি। মারু আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া আহমেদ কিছুক্ষন তেজী দৃষ্টিতে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে থেকে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে আর পিছন থেকে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,,

—–“ভেতরে এসো।”

মৃন্ময় পিছনে ফিরে মারুর হাত ধরে সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। ড্রইং রুমটা পুরো ফাঁকা। বাড়ির আদারস ধ্বংস মহিলাদের দেখা যাচ্ছে না। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। মারু সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মায়া আহমেদ পিছনে ফিরে মারুকে দেখে অবাক না হয়ে উল্টো অট্ট হেসে বলল,,,,,,,,

—-“বউকে নিয়ে চলে এসেছ দেখছি। খুব ভালো করেছ। কতো দিন আর বউকে নিয়ে পরের ফ্ল্যাটে থাকবে।”

মারু আর মৃন্ময় ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে মায়া আহমেদের দিকে তাকালো। মায়া আহমেদ আবারো অট্ট হেসে বলল,,,,,,,

—-“তোমরা কি ভেবেছ আমি কিছু জানতে পারব না? সব জানতে পেরেছি আমি। শুধু আমি না, বাড়ির সবাই তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে জানে। আর কিছুই ধামা চাঁপা দিয়ে রাখা যাবে না। বুঝেছ তোমরা?”

মৃন্ময় গলাটা ঝাঁকিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে মায়া আহমেদকে বলল,,,,,,

—–“তোমরা কার কাছ থেকে, কোথা থেকে আমাদের বিয়ের খবর জেনেছ তা জানার বিন্দু মাএ ইন্টারেস্ট নেই আমার। কারন আমি কোনো অন্যায় করি নি। ঠিক, ভুল বিচার করার যোগ্যতা আছে আমার। তবে, তোমার এই অট্ট হাসির মানে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি কি কোনো ভাবে আমাদের বিদ্রুপ করছ?”

—-“বিদ্রুপ করার মতো কাজ ই তো করেছ তুমি। কাপুরুষের মতো ফ্যামিলিকে কিছু না জানিয়ে এক্টা অসভ্য মেয়েকে বিয়ে করে নিলে?”

—-“আম্মু জাস্ট শাট আপ। ব্যবহার সংযত করো। আমার ওয়াইফ মোটে ও অসভ্য নয়। তাছাড়া আমি কাপুরুষ নই। কাপুরুষ হলে এতোদিনে মারু অন্য কোনো পুরুষের সাথে সংসার করত। আমার হতো না।”

—–“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে কি তুমি এই মেয়েটাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে এনেছ?”

—–“হুম এনেছি। আমার ক্ষমতা ছিলো তাই আমি পেরেছি। এই নিয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না। সত্যটা যখন জানাজানি হয়ে গেছে তখন এসব পুরনো কথা টেনে কোনো লাভ নেই।”

—-“তোমার লাইফে কি আমাদের কোনো ইম্পরটেন্স নেই মৃন্ময়? তুমি কি করে পারলে আমাদের না জানিয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ডিসিশান টা নিতে?”

—–“আমি কিন্তু একবার ও বলি নি, আমার লাইফে তোমাদের কোনো ইম্পরটেন্স নেই। তোমরা শুধু শুধু ব্যাপারটাকে ঘোলাটে করছ। আমার হাতে কোনো অপশন ছিলো না বলেই আমি কাউকে কিছু না জানিয়ে ডিসিশানটা নিয়েছি।”

—-“আমাদের জানানোর সময় হয় নি, অথচ রূপ আর মুহিতকে জানানোর সময় ছিলো তাই না? ঐ দুটো অসভ্য ছেলে, মেয়েই তোমার মাথা খেয়েছে। ওরাই তোমাকে ফুসলিয়েছে।”

—-“আমি যথেষ্ট ম্যাচুয়েড আম্মু। ভালো, মন্দ জাজ করার ক্ষমতা আমার আছে। রূপ আর মুহিতকে নিয়ে কিছু বলার আগে হাজার বার ভেবে বলবে। ওকে?”

মায়া আহমেদ তেজ দেখিয়ে কিছু বলতে নিলেই মৃন্ময় বলে উঠল,,,,,,,

—–“এই নিয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইছি না আম্মু। আমি মারুকে নিয়ে এক্টু সুখে, শান্তিতে সংসার করতে চাই। তোমরা প্লিজ আমাদের মাঝখানে কোনো প্রকার অশান্তি করতে এসো না। বাড়ির বাকিদের ও বলে দিও মারুর সাথে যেনো কোনো ধরনের উগ্র ব্যবহার না করে। না হয় আমি ও বাধ্য হবো মুহিতের মতো বাড়ি ছাড়তে। তখন নিশ্চয়ই সমাজের লোকজন তোমাকেই কটু কথা শুনাবে। তাছাড়া আমার বউ ও কিন্তু কম যায় না। মারু কিন্তু রূপের মতো একদম ভোলা ভালা নয়। ইটের জবাবে পাটকেল খেতেই হবে।”

মৃন্ময়ের কঠোর কথার ধাজ দেখে মারু তো খুশিতে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছে। মৃন্ময়ের এমন প্রতিবাদী ভাব মারুকে শক্ত হতে বাধ্য করছে। নিজেকে অধিক সাহসী করতে অনুপ্রাণিত করছে। মৃন্ময় আরো কিছু বলার আগেই মারু বড় এক্টা হাই তুলে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“মৃন্ময় আমার খুব ঘুম পেয়েছে। প্লিজ রুমে চলো।”

মারুর কথা শুনে মায়া আহমেদের জেদটা যেনো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেঁপে উনি সব সহ্য করে নিচ্ছে। মৃন্ময়ের দেওয়া হুমকি উনি মানতে পারছে না। একমাএ ছেলেকে হারাতে চাইছে না উনি। তাছাড়া মৃন্ময় খুব আদরের। দোলার চেয়ে ও উনি মৃন্ময়কে খুব ভালোবাসে। মায়া আহমেদ নিজেকে কিছুটা সংযত করে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“যাও তোমরা রুমে যাও। কাল সকালে কথা হবে।”

মৃন্ময় মুচকি হেসে মায়া আহমেদকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,

—–“আমি জানতাম আম্মু। তুমি সব মেনে নিবে। একমাএ ছেলেকে নিশ্চয়ই হারাতে চাইবে না।”

মায়া আহমেদ কিছু বলল না। শুধু শুনে গেলো। মৃন্ময় এবার মায়া আহমেদকে ছেড়ে মারুর হাত ধরে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলো। মারু পিছু ফিরে জোরে চেঁচিয়ে মায়া আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“আসছি শাশু মা। গুড নাইট এন্ড সুইট ড্রিম।”

মায়া আহমেদের গাঁ পিওি জ্বলে উঠল। উনি পারছে না মারুকে এখান থেকে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিতে। রাগে গজগজ করতে করতে উনি রুমে চলে গেলো। মারু সামনে ফিরে মৃন্ময়ের কাঁধে মাথা রেখে নিজেদের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই মৃন্ময় দরজায় খিল লাগিয়ে মারুকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,,

—-“মারু দেখলে তো। আম্মু কতো ইজিলি আমাদের মেনে নিলো। তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলে।”

—-“উনি এতো ইজিলি আমাকে মেনে নিবে না বুঝেছ? সব উনার অভিনয়। তবে আমি ও কম যাই না। আমার পিছনে লাগতে আসলে আমি কিন্তু উনাকে ছেড়ে কথা বলব না। তোমাকে আগেই বলে রাখলাম।”

—–“হুম। এই বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। যে যেমন তার সাথে ঠিক তেমনটাই করা উচিত। এবার ঘুমাবে চলো। রাত তো অনেক হলো।”

—-“হুম চলো। তবে আগে মুহিতকে ব্যাপারটা জানিয়ে দাও। বেচারা হয়তো টেনশানে আছে।”

—-“দাঁড়াও এক্ষনি টেক্সট করে দিচ্ছি।”

মৃণ্ময় মারুকে ছেড়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে মুহিতের নম্বরে টেক্সট করে দিলো। এতো রাতে মুহিত আর রূপ ঘুমাচ্ছে বলে মৃন্ময় ওদের কল করে ডিস্টার্ব করতে চায় নি। ফোনটা কাবার্ডের উপর রেখে মৃন্ময় মারুকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পর দুজনের চোখেই ঘুম লেগে এলো।

পরের দিন,,,,,,,

সকাল আটটা। রূপ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে যেই না কিচেন রুমের দিকে যাবে অমনি রূপ খেয়াল করল মারুদের বেড রুমের দরজাটা খোলা। রূপ বিছুটা অবাক হয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করে দেখল মারু আর মৃন্ময় রুমে নেই। ভয়ে রূপের কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠল। এক দৌঁড়ে রূপ মুহিতের কাছে ছুটে গেলো। মুহিতের পাশে বসে রূপ ঘুমন্ত মুহিতকে ঝাঁকাচ্ছে আর বলছে,,,,,,,,

—–“মুহিততত শুনছ? মারু আর মৃন্ময় ভাইয়া ওদের রুমে নেই। প্লিজ কিছু এক্টা করো। উঠো।”

রূপের ঝাঁকুনীতে মুহিতের ঘুম চোখ থেকে গায়েব হয়ে গেলো। মুহিত পিটপিট করে চোখ খুলে রূপের দিকে তাকালো। রূপ আবারো পেরেশান হয়ে বলল,,,,,,,

—–“মারু আর মৃন্ময় ভাইয়া রুমে নেই। রুমের দরজাটা ও খোলা।”

মুহিত বড় এক্টা হাই তুলে শোয়া থেকে উঠে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কাল রাতে ওরা দুজনই ঐ বাড়ি ফিরে গেছে। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকি নি।”

—-“হোয়াট? ঐ বাড়ি ফিরে গেছে মানে?”

—–“মানে কাল রাতে আম্মু আচমকাই ফোন করে বলল, মৃন্ময় ভাইয়ার জন্য নাকি মেয়ে দেখতে যাবে তাই ভাই রিস্ক নিতে চায় নি। গতকাল রাতেই ভাবীকে নিয়ে ঐ বাড়ি চলে গেছে। সত্যিটা আর গোপন করে রাখা ঠিক হবে না। এতে হীতে বিপরীত হতে পারে।”

মুহূর্তেই রূপের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মারুর এভাবে চলে যাওয়াটা রূপ মানতে পারছে না। সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলো রূপ। মুহিত রূপের মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরে রূপকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,

—–“মন খারাপ করো না রূপ। একদিন না একদিন তো ভাবীকে যেতেই হতো। ভাবী বলেছে প্রতিদিন বিকেলে এসে তোমাকে দেখে যাবে।”

—-“আমার এক্টু ও মন খারাপ হয় নি মুহিত। আমি ভালো আছি। ঐ বাড়ির সবাই মারুকে মেনে নিয়েছে কিনা সেটা ভেবেই মন খারাপ লাগছে।”

—–“ইসসস আমার তো অনেক আগেই উচিত ছিলো ভাইকে ফোন করে সব জেনে নেওয়া। ধ্যাত মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিলো।”

মুহিত তাড়াহুড়ো করে রূপকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ডেস্কের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল মুহিতের নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজটা দেখেই মুহিত এক গাল হেসে বলল,,,,,,,

—–“রূপ…..ভাবীকে আম্মু মেনে নিয়েছে। কোনো ভেজাল হয় নি।”

—–“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না মুহিত। ফুফু মনি এতো সহজে মারুকে মেনে নিবে না।”

—–“হুম। এর চেয়ে বড় কথা হলো, আম্মু আচমকা মৃন্ময়ের ভাইয়ের বিয়ের জন্য পাগল হলো কেনো? আচ্ছা ওদের বিয়ের খবরটা কি লিক হয়েছে? মানে আমরা বাদে পঞ্চম কোনো ব্যক্তি কি এই খবরটা জেনেছে? হতে পারে আম্মু সত্যিটা জেনে গিয়েছিলো তাই মৃন্ময় ভাইকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো।”

—–“হতে পারে। তবে আমরা তো কাউকে কিছু বলি নি। জানবে কি করে?”

—–“মাথা কাজ করছে না। আমাদের বাইরে তো আব্বু এই খবরটা জানত। তবে আমার মনে হচ্ছে না আব্বু এতো সহজে আম্মুকে সব বলে দিবে। তাহলে আর কে হতে পারে?”

—-“আচ্ছা বাদ দাও। যা হওয়ার হয়ে গেছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি কফি নিয়ে আসছি।”

রূপ বসা থেকে উঠে কফি করতে কিচেন রুমে চলে গেলো। মুহিত বেড ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর রূপ কফি নিয়ে রুমে ঢুকল। মুহিত ও ওয়াশরুম থেকে বের হলো। রূপ মুহিতের হাতে কফির মগটা ধরিয়ে দিয়ে বেডের উপর বসে গেলো। মুহিত ও এসে রূপের পাশাপাশি বসল। রূপ কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—–“মুহিত…..আই থিংক কেউ আমাকে ফলো করছে। কাল থেকেই আমি ব্যাপারটা নোটিশ করছি।”

মুহিত উদ্বিগ্ন হয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“মানে? কিভাবে বুঝলে?”

—–“কাল যখন আমি আর মারু বাজারে গিয়েছিলাম তখন নোটিশ করেছিলাম।”

—–“পুরুষ না মহিলা ছিলো?”

—–“আই থিংক পুরুষ।”

মুহিত কফির মগটা পাশে রেখে চোখে, মুখে আতঙ্ক নিয়ে রূপকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,

—–“তোমাকে একা রেখে আমি অফিসে যেতে পারব না রূপ! এতোদিন তো ভাবী ছিলো ভরসা ও ছিলো। এখন আমি কার ভরসায় তোমাকে রেখে যাবো? সারাক্ষন মনে ভয় নিয়ে আমি অফিসে কাজ করতে পারব না।”

মুহিতের বুকটা ধকধব করে কাঁপছে। রূপ বেশ বুঝতে পারছে মুহিত ভয় পাচ্ছে। এই মুহূর্তে মুহিতকে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। মুহিতকে শান্ত করতে হবে। রূপ জোর পূর্বক হাসি টেনে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“আরে এটা জাস্ট আমার এক্টা ধারনা ছিলো। ধারনা থেকে আমি তোমাকে বললাম। ধারনা সবসময় সত্যি হয় না। তাছাড়া আন্টি তো আছেই। উনি আমাকে দেখে শুনে রাখবে। ঘরের কাজ সেরে আমি আন্টির কাছে চলে যাবো। সারাক্ষন আন্টির সাথে আড্ডা দিবো। এমনিই সময় কেটে যাবে। তুমি খামোখা ভয় পাচ্ছ মুহিত। প্লিজ শান্ত হও। রেডি হও। নয়টা বেজে যাচ্ছে। অফিস যেতে হবে।”

—–“যাবো না অফিস। বুকে ভয় নিয়ে সামনে এগুনো সম্ভব না।”

—-“ইসসস রাগ উঠি ও না তো। অফিস না গেলে ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিবে? খাওয়া দাওয়ার খরচ করে দিবে?”

মুহিত মুখটা কালো করে রূপকে ছেড়ে আলমারি থেকে শার্ট,,প্যান্ট বের করে রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রূপ মৃদু হেসে কিচেন রুমে চলে গেলো। মুহিতের জন্য নাস্তা বানাতে। প্রায় পনেরো মিনিট পর মুহিত রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে এলো। রূপ মুহিতের প্লেইটে ওমলেট আর পাউরুটি সাজিয়ে দিলো। মুহিত খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে খেয়ে চলছে। অফিস থেকে ক্ষনে ক্ষনে ফোন আসছে। আজ অনেক বড় এক্টা ডিল আছে। এক্টু আগেই মুহিত খবরটা পেয়েছে। তাই সে তাড়াহুড়োয় আছে। রূপ ও মুহিতের পাশে বসে এক্টু খেয়ে নিলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে মুহিত রুমে ঢুকে অফিসের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে পিছনে ফিরে রূপকে দেখল। রূপকে জড়িয়ে ধরে রূপের কপালে এক্টা চুমো খেয়ে মুহিত আচমকাই রূপের হাত ধরে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে নিচ তলায় চলে এলো। রূপ অবাক হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমজাদ চৌধুরীর ফ্ল্যাটের কলিং বেল চেঁপে মুহিত রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আন্টির কাছে তোমাকে আমানত হিসেবে রেখে যাবো। না হয় আমি শান্তি পাবো না।”

এর মাঝেই ফ্ল্যাটের দরজা খুলে মারজানা আহমেদ বের হলো। মুচকি হেসে মুহিত মারজানা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। মারজানা চৌধুরী এক গাল হেসে রূপ আর মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—–“প্লিজ তোমরা ভিতরে এসো। বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”

মুহিত গলাটা ঝাঁকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,,,,,,

—–“একচুয়েলি আন্টি। আমি এক্টা দরকারে এসেছি। আমি এখনি অফিস চলে যাবো। রূপকে এক্টু দেখে শুনে রাখবেন। ফ্ল্যাটে রূপ একা তো। তাই ভয় পাচ্ছিলাম। আমার ওয়াইফকে আমি আপনার কাছে আমানত স্বরূপ রেখে গেলাম।”

—-“ওহ্ আচ্ছা এই ব্যাপার। তুমি চিন্তা করো না মুহিত। আমি রূপকে আমার মেয়েদের মতোই ভালোবাসি। তোমার আমানতের খেয়ানত হবে না। আমি সারাক্ষন রূপকে দেখে শুনে রাখব। দরকার হলে রূপ সারাক্ষন আমার কাছেই থাকবে। আমাদের সাথে খাবে, দাবে, ঘুমোবে। রাতে তুমি আসলে এর পর না হয় তোমাদের ফ্ল্যাটে যাবে।”

মুহিত কিছু বলার আগেই রূপ বলে উঠল,,,,,,,

—–“আরে না না আন্টি। আপনি শুধু শুধু ব্যস্ত হচ্ছেন। আমি রুমের কাজ করে একেবারে দুপুরের পরে আপনার কাছে চলে আসব। টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনার সাথে থাকব।”

মৃহিত বেশ ব্যস্ত স্বরে রূপ আর মারাজানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“আমি আসছি তাহলে। তোমরা মা মেয়ের ব্যাপার তোমরা বুঝে নাও।”

মুহিত আর দাঁড়াল না। এক ছুটে বাড়ির পার্কিং এরিয়ায় চলে গেলো। গাড়িতে উঠে মুহিত শো শো বেগে গাড়ি নিয়ে ছুটল অফিসের উদ্দেশ্যে। খানিক পথ যাওয়ার পর মুহিত কাজী অফিসের সামনে গাড়ীটা দাঁড় করালো। উদ্দেশ্য কাজী সাহেবকে খোঁজা। গাড়ি থেকে নেমে মুহিত কাজী অফিসের সামনে গিয়ে দেখল অফিসটা তালা বন্ধ। অফিসের পাশের ফ্ল্যাটেই কাজী সাহেব ভাড়া থাকে। মুহিত তাড়াহুড়ো করে ফ্ল্যাটে গিয়ে খুঁজ নিয়ে দেখল কাজী সাহেব ফ্ল্যাটে ও নেই। গতকাল রাতেই নাকি বউ,বাচ্চা নিয়ে উনার গ্রামের বাড়ি গেছে। ব্যাপারটা মুহিতের ঘটকা লাগলে ও আশেপাশের মানুষরা বলছে কাজী সাহেবের মা নাকি খুব অসুস্থ তাই উনাকে দেখতে গেছে।

মুহিত মাথায় গাঁধা গাঁধা টেনশান নিয়ে গাড়িতে উঠে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। এই মুহূূতে রূপের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছে মুহিতের। কেউ যদি সত্যিই রূপকে ফলো করে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সামনে কোনো ঝড় আসছে।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,

(যাদের মনে হচ্ছে আমি স্টার জলসার সিরিয়াল লিখছি তারা দয়া করে গল্পটা পড়বেন না। আপনাদের কয়েকটা মন্তব্যের জন্য লিখার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলি।)
#চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here