এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ২৮+২৯

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

পরের দিন,,,,,,,

সকাল আটটা। মুহিত ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিচ্ছে। রূপ ব্রেকফাস্ট টেবিলে মুহিতের জন্য খাবার সার্ভ করছে। মারজানা চৌধুরী এক্টু আগে এসে রূপদের জন্য সকালের নাস্তা দিয়ে গেছে। ডিম, পরোটা আর চা। রূপ সে গুলিই সার্ভ করছে। আজ অফিসের প্রথম দিন বলে মুহিত নয়টার আগেই অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

মারু আর মৃন্ময় দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে মগ্ন। আজ দুজনেই পূর্ণ। দুজন দুজনকে পুরোপুরি আপন করে নিয়েছে। রূপ এক্টু আগে মারুদের রুমের দরজা খুলে এসেছে। ঘুম থেকে উঠে মারু দরজা খুলতে না পারলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিবে। তাই রূপ এই রিস্কটা নিতে চাইছে না।

প্রায় পনেরো মিনিট পর মুহিত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ড্রইং রুমে চলে এলো। মুহিতকে দেখা মাএই রূপ মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,,

—-“বসে পড়ো মুহিত। খাবার রেডি হয়ে গেছে।”

মুহিত অবাক হয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“খাবার এলো কোত্থেকে? আমি তো এখনো দোকানেই যাই নি।”

রূপ মলিন হেসে বলল,,,,,

—-“মারজানা আন্টি দিয়ে গেছে। তুমি তখন ওয়াশরুমে ছিলে।”

মুহিত কিছুক্ষন চুপ থেকে এক্টা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,,,,,,,

—-“উনি আমাদের ঋণী করে দিচ্ছে। বার বার কোনো না কোনা ভাবে আমাদের সাহায্য কর যাচ্ছে। প্রথম মাসের বেতনের টাকাটা পেয়েই উনাদের একদিন দাওয়াত করব। সকাল, দুপুর, রাত তিন বেলাই আমাদের সাথে খাবে।”

রূপ বেশ উওেজিত হয়ে বলল,,,,,,

—-“উপপপস কবে যে মাসটা শেষ হবে। আমি তো পারছি না আজই উনাদের দাওয়াত করে খাইয়ে দেই।”

মুহিত মুচকি হেসে রূপের কাছে এগিয়ে এসে রূপের কপালে লেগে থাকা ধূলো গুলো মুছে রূপের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“কখন ঘুম থেকে উঠেছ?”

—-“সকাল সাতটায়।”

—-“কিচেন রুম পরিষ্কার করেছ তাই না?”

—-“হুম, কিচেন রুমটায় অনেক ধূলো জমেছিলো। তাই পরিষ্কার করে নিলাম।”

মুহিত রূপের গালে আলতো করে ছুঁয়ে বলল,,,,,,

—-“এ ভুলটা আর কখনো করবে না রূপ। ধূলোতে তোমার এলার্জি আছে। এলার্জি থেকে আবার এজমাতে চলে যাবে। তখন কিন্তু আমি খুব বকব। এখন থেকে ধূলো পরিষ্কারের কাজটা আমিই করব। মনে থাকবে?”

রূপ মুচকি হেসে মাথা নাঁড়ালো। মুহিত রূপকে ছেড়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে গেলো। রূপ চুলটা উঁচু করে খোঁপা করে চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠা গরম চা ঢেলে নাস্তার প্লেইটের সামনে রাখল। রূপের দিকে তাকিয়ে মুহিত হেচকা টান দিয়ে রূপকে কোলে বসিয়ে নিলো। রূপ বেকুব হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত পরটা ছিড়ে রূপের মুখে পুড়ে দিলো। রূপ মুহিতের থেকে চোখ সরিয়ে পরটা ছিড়ে ওমলেট করা ডিম সহ মুহিতের মুখে পুড়ে দিলো। রূপ আর মুহিত দুজন দুজনকে খাইয়ে দিচ্ছে। এভাবে প্রায় দশ মিনিট পর উভয়ের খাওয়া শেষ হলো।

মুহিত গরম চা টা আস্তে ধীরে খেয়ে রূপকে কোল থেকে উঠিয়ে রুমে চলে গেলো রেডি হতে। ঘড়িতে অলরেডি ৮:৪৫ ছুঁই ছুঁই। নয়টার আগে কিছুতেই অফিসে পৌঁছা সম্ভব না। রূপ এক্টা বক্সে মারু আর মৃন্ময়ের খাবারটা তুলে রেখে রুমে চলে এলো। মুহিত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে শার্টের বোতম লাগাচ্ছে। তবে তাড়াহুড়োর চোটে বোতম গুলো ঠিকভাবে লাগাতে পারছে না। রূপ এসব দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। মুহিত রাগে, দুঃখে লাল থেকে নীল হয়ে যাচ্ছে।

এসব দেখে রূপ ধীর পায়ে হেঁটে মুহিতের পেছনে দাঁড়িয়ে মুহিতকে ঘুড়িয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলো। মুহিত হতাশ ভাব নিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ খিলখিল করে হেসে মুহিতের নাক টেনে বলল,,,,,,,

—-“ওলে লে লে লে ছোট বাচ্চাটা। সামান্য শার্টের বোতমটা লাগাতে পারছে না।”

মুহিত মুখটা বাঁকা করে মাথাটা বাঁ পাশে ঘুড়িয়ে নিলো। রূপ খুব সিরিয়াস হয়ে মুহিতের শার্টের বোতম গুলো লাগিয়ে দিলো। বেডের উপর থেকে টাই টা নিয়ে রূপ মুহিতের শার্টের কলারে বেঁধে দিলো। হাত ঘড়ির ফিতে বেঁধে দিলো। ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে চুল গুলো ঠিকভাবে সেট করে দিলো।

কালো শার্টে মুহিতকে দারুন লাগছে। চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো। রূপ এক দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত রূপের দিকে ঝুঁকে বাঁকা হেসে রূপের ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। রূপ মৃদ্যু হেসে মুহিতের শার্ট চেঁপে ধরল। প্রায় পাঁচ মিনিট পর মুহিত রূপের ঠোঁট জোড়া ছেড়ে কাবার্ড থেকে ল্যাপটপ বের করে এক্টা ব্যাগে গুছিয়ে নিয়ে ব্যাগটা কাঁধে তুলে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আসছি রূপ। নিজের খেয়াল রেখো। সাবধানে বাজারে যেও। আর সাথে ভাবীকে ও নিয়ে যেও। একা কোথাও যাবে না। মনে থাকে যেনো। আর শুনো, আমার ফিরতে ফিরতে রাত হবে। দুই জা মিলে মিশে থেকো।”

রূপ মাথা নাঁড়িয়ে হাসি মুখে মুহিতকে বিদায় দিলো। মুহিত অফিসের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে অফিসে রওনা দিলো। রূপ সদর দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে রুমে চলে গেলো। এলোমেলো রুমটাকে গুছিয়ে মানুষ করতে হবে।

এর মাঝেই মারু আর মৃন্ময় ঘুম থেকে উঠল। প্রথমে মৃন্ময় শাওয়ার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগল। বাড়ি থেকে রেডি হয়ে এরপর অফিসে যাবে। মারু শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। লম্বা এক্টা শাওয়ার নিবে বলে।

প্রায় পাঁচ মিনিট পর মৃন্ময় রেডি হয়ে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মারুকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,

—–“মারুরুরুরু……. আমি যাচ্ছি। সময় পেলে রাতে এসে দেখা করে যাবো। তুমি আর রূপ সাবধানে থেকো। মুহিত ও হয়তো এতক্ষন অফিসে চলে গেছে। আমি ও চলে যাচ্ছি। সো বি কেয়ারফুল।”

মারু ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,

—–“আমি বের হলে যেও। আর এক্টু। আমার হয়ে গেছে।”

—–“সময় নেই মারু। যা বলার বলে ফেলো।”

—-“আমার কিছু টাকা লাগবে মৃন্ময়।”

—-“বালিশের নিচে টাকা রেখে গেছি। যতো লাগবে নিয়ে নিও।”

মারু লাফিয়ে বলে উঠল,,,,,,

—-“থ্যাকংস, থ্যাংকস এবার যাও তাহলে।”

মৃন্ময় মৃদ্যু হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রইং রুমে যাওয়ার সাথে সাথেই রূপ ডাইনিং টেবিল থেকে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,,

—–“ভাইয়ায়ায়ায়া…..খেয়ে যাও। আমি ব্রেক ফাস্ট সাজিয়ে রেখেছি।”

মৃন্ময় বেশ ব্যস্ত স্বরে বলল,,,,,,,

—–“সময় নেই রূপ। খুব তাড়ায় আছি। এখান থেকে বাড়ি, বাড়ি থেকে অফিস। আমি অফিসে গিয়ে খেয়ে নিবো। তুই মারুকে নিয়ে খেয়ে নিস। আর শোন, সাবধানে থাকিস।”

রূপ মুখটা কালো করে বলল,,,,,,

—-“নাস্তাটা করে গেলে খুশি হতাম ভাইয়া।”

মৃন্ময় সদর দরজার কাছে যাচ্ছে আর বলছে,,,,,

—–“মন খারাপ করিস না রূপ। রাতে এসে ডিনার করব। আসছি আমি।”

মৃন্ময় আর দাঁড়ালো না। সদর দরজা খুলে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলো। রূপ সদর দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে মারুর রুমে চলে গেলো। মারু এখনো শাওয়ার নিচ্ছে। রূপ মুচকি হেসে বেডের উপর থাকা ফুল গুলো বিছানা ঝাঁড়ু দিয়ে ঝেঁড়ে ফ্লোরে ফেলছে। বেড গুছাতে গুছাতে মারু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে মারু রূপের দিকে তেড়ে এসে বলল,,,,,

—–“এই রূপ কি করছিস তুই? আমার কাজ আমি করব। তুই করছিস কেনো?”

রূপ বেডটা ভালো করে গুছাচ্ছে আর মারুর দিকে তাকিয়ে বলছে,,,,,,,,

—–“তুই হলি আমার বাড়ির মেহমান। জাস্ট এক সপ্তাহের জন্য আছিস। এরপর তো এই বাড়ি ছেড়ে শ্বশুড় বাড়ি চলে যাবি। তখন না হয় ঐ বাড়ি গিয়ে কাজ করবি।”

মারু মুখটা কালো করে বলল,,,,,,,

—-“আমি ঐ বাড়ি যাবো না রূপ। এই বাড়িতে তোর কাছেই থাকব।”

—-“না মারু। এটা হয় না। বাড়ির সব ছেলেরা যদি ওদের বউকে নিয়ে আলাদা থাকে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। পাঁড়ার লোকরা ও কটু কথা শোনাবে। আই থিংক ফুফু আম্মু তোর সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করবে না। কারন তুই উনার নিজের ছেলের বউ।”

—-“শুন রূপ। ঐ মহিলার সাথে বিশ্বাস নেই। উনার কাছে আপন, পরের কোনো ভেদাভেদ নেই।”

মারু কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,

—-“আমি ও কম যাই না। ঐ মহিলা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে আসলেই আমি উনাকে বুঝিয়ে দিবো আমি কি জিনিস। ছেলের বউদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা সারা জীবনের জন্য ঘুচিয়ে দিবো।”

রূপ মলিন হেসে বলল,,,,,,,

—–“যা করার এক বাড়িতে থেকেই করবি। আলাদা হওয়ার কথা ভুলে ও ভাববি না। আমি তো বের হয়েছি উনার নিজের ছেলের বউ না বলে। যদি মুহিতের সাথে উনার রক্তের সম্পর্ক থাকত তখন না হয় হাজার কষ্ট হলে ও ঐ বাড়িতে থেকে যেতাম।”

মারু মুখটা ফুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“এসব কথা আর বলিস না রূপ। খারাপ লাগে শুনতে। কত্তো আশা ছিলো দুই বেস্টু মিলে এক বাড়িতে সংসার করব। তা আর হলো না। সেই আলাদা হতে হলো।”

রূপ এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মারুকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,

—-“মন খারাপ করিস না মারু। আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্য করে। তুই আর মৃন্ময় ভাইয়া প্রতি সপ্তাহে এই বাড়িতে চলে আসবি। আমরা একসাথে পিকনিক খেলব। অনেক মজা হবে।”

মারু মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,

—-“আমি প্রতিদিন বিকেল বেলা তোর কাছে চলে আসব। রাতে মৃন্ময় আর আমি একসাথে বাড়ি ফিরব।”

রূপ মারুকে ছেড়ে মারুর নাক টেনে বলল,,,,,,

—–“ওকে ওকে, চলে আসিস। এবার খেতে চল। অনেক বেলা হয়ে গেছে।”

মারু তাড়াহুড়ো করে চুল থেকে টাওয়ালটা সরিয়ে রূপের সাথে ডাইনিং টেবিলে চলে গেলো। মারুর সামনে নাস্তা সাজিয়ে রূপ চা গরম করতে কিচেনে চলে গেলো। চা গরম করে রূপ দুটো কাপে চা ঢেলে মারুর পাশে এসে বসল। মুহিতের সাথে হালকা এক্টু নাস্তা করেছে বলে রূপ দ্বিতীয় বার আর কিছু খায় নি। শুধু গরম চা টা খাচ্ছে। মারু পরটা আর ওমলেট খেয়ে গরম চা টা হাতে নিয়ে খুব আয়েস করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে।

রূপ চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর মারুকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,,

—–“মারু….. এক্টু পর আমরা বাজারে যাবো। মুদি বাজার, সবজি বাজার সব করতে হবে।”

মারু রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“আমি মৃন্ময়ের থেকে টাকা রেখেছি। সব মিলিয়ে বাজার করব।”

—-“হুম বালিশের তলায় টাকা দেখেছি। ঐ টাকাটা তুই রেখে দে মারু। তোর পার্সোনাল কাজে খরচ করতে পারবি।”

—-“চুপ কর। পার্সোনাল কাজে খরচ করার জন্য মৃন্ময় আমাকে আলাদা টাকা দেবে। এই টাকাটা আমি বাজারের জন্যই রেখেছি। তোর কাছে যে দুই হাজার টাকা আছে এই টাকা দিয়ে কিচ্ছু হবে না। মুদি খরচ ই এর চেয়ে বেশি লেগে যাবে। আর কাঁচা বাজারের কথা তো বাদই দিলাম।”

রূপ মলিন হেসে বলল,,,,,,,

—-“তুই কিভাবে বুঝলি টাকা টা আমি বাজারের জন্য নিয়েছি?”

—–“জানি না বাট গেইস করলাম। আমার আন্দাজ সঠিক হয়েছে বল?”

আমকাই রূপ মারুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,

—-“তুই শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না আমার বোন ও। তাই আগে থেকেই সব বুঝে ফেলিস।”

—–“হ্যাঁ রে। আমি সত্যিই বুঝে যাই। আলাদা এক্টা টান ফিল করি তোর প্রতি।”

এর মাঝেই দেয়াল ঘড়িতে দশটার ঘন্টা বাজল। রূপ তাড়াতাড়ি মারুকে ছেড়ে বসা থেকে উঠে বলল,,,,,,

—-“মারু চল রেডি হয়ে নে। দশটা বেজে গেছে। বাজারে যেতে হবে।”

—-“ওকে ওকে আমি চুলটা আচড়ে আসছি।”

মারু আর দেরি করল না। রুমে চলে গেলো চুল আচড়াতে। রূপ কিচেন রুমে বাজারের ব্যাগ খোঁজা শুরু করল। কিন্তু কোথাও এক্টা পলি ব্যাগ ও দেখা যাচ্ছে না। মারু বালিশের তলা থেকে এক হাজার টাকার তিনটে নোট হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রূপ শাড়িটা ভালো করে ঠিক করে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“নিচে চল। আন্টির ফ্ল্যাট থেকে এক্টা বাজারের ব্যাগ নিতে হবে।”

—-“হুম চল।”

রূপ হাতে করে তালা আর চাবি নিয়ে মারু সহ রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সদর দরজার তালাটা ভালো করে লাগিয়ে রূপ চাবিটা ওর ছোট্ট পার্সটায় রেখে দিলো। মারু আর রূপ হাঁটতে হাঁটতে নিচ তলায় নেমে এলো। আমজাদ চৌধুরীর ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে রূপ দু বার কলিং বেল চাঁপার সাথে সাথেই আমজাদ চৌধুরীর বড় মেয়ে এসে দরজা খুলে দিলো।

মেয়েটা মুচকি হেসে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। মারু আর রূপ বড় বড় চোখ করে মেয়েটার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখছে। ছোট ছোট ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। উপরের গেন্জ্ঞিটা নাভি অব্দি। নাভিটা ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে। তার উপর হাত, কাটা গেন্জ্ঞি। নিচে প্যান্টটা হাঁটু অব্দি। হাঁটার নিচের জায়গা স্পষ্ট। নায়িকাদের মতো ভাব ধরে ফুল এটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। রূপ আর মারুর চাহনী দেখে মেয়েটা গলা ঝাঁকিয়ে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“হেই ভাবী। কেমন আছেন আপনি?”

রূপ নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“ভালো আছি আদ্রিতা। তুমি কেমন আছো?”

—-“আমি ও খুব ভালো আছি ভাবী। তা কি জন্য এসেছ? কিছু লাগবে?”

রূপ আমতা আমতা করে বলল,,,,,

—-“হুম। আসলে এক্টা বাজারের ব্যাগ লাগবে। কিচেন রুমে অনেক খুঁজলাম। বাট পেলাম না। তাই ভাবলাম তোমাদের থেকে নেই।”

আদ্রিতা সামনের চুল গুলো কানের পিছনে গুজে নিয়ে বলল,,,,,,

—-“ভাবী মুহিত কি রুমে? আই মিন মুহিত ভাইয়া ই কি আপনাকে পাঠিয়েছে?”

—-“না না মুহিত তো অফিসে চলে গেছে। আমি নিজ থেকেই এসেছি।”

—-“তার মানে আপনি বাজার করবেন?”

—-“হুম আদ্রিতা। আমিই করব। আসলে মুহিত সময় পায় নি। আজ নতুন অফিসে জয়েনিং তো তাই।”

—-“ওহ্ আচ্ছা আমি আরো ভাবলাম। মুহিত রুমে আছে। আচ্ছা আপনারা দাঁড়ান। আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি।”

আদ্রিতা রুমে ঢুকে গেলো। আমকাই মারু রূপের হাতে চিমটি কেটে বলল,,,,,,,,

—-“কি দরকার ছিলো মেয়েটাকে এতো কিছু বলার? তোর থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কথা নিচ্ছিলো মেয়েটা। মেয়েটাকে একদম সুবিধরে লাগছে না আমার। মুহিতকে কেমন নাম ধরে ও ডাকছিলো।”

রূপ নাক, মুখ কুঁচকে মারুর কানে ফিসফসিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আরে মুহিতকে এই বাড়ির সবাই খুব ভালো করে চিনে। তাই হয়তো মেয়েটা মুহিতের নাম ধরে ডাকছিলো। তাছাড়া আমি কি এমন বলেছি? আমি তো শুধু বললাম, মুহিত বাড়িতে নেই। নতুন অফিসে জয়েনিং দিয়েছে।”

—-“পরিচিত বলেই যে নাম ধরে ডাকতে হবে। ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। আর শোন যাকে তাকে মুহিত বাড়ি নেই, নতুন অফিসে গেছে এসব বলবি না। এখানে তুই নতুন। কোন দিক থেকে কে উৎ পেতে আছে তুই বুঝতে ও পারবি না।”

এর মাঝেই আদ্রিতা বাজারের ব্যাগ নিয়ে এলো। রূপ আদ্রিতার হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে মুচকি হেসে বলল,,,,,,

—-“থ্যাংকস আদ্রিতা। আসছি তাহলে।”

—-“ইট’স ওকে ভাবী। সাবধানে বাজার করবেন।”

মারু রূপকে কিছু বলতে না দিয়ে রূপকে নিয়ে টানতে টানতে গেইটের বাইরে বের হয়ে গেলো। রূপ চোখ লাল করে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মারু রূপের মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,,,,,,

—-“এভাবে তাকিয়ে না থেকে গাড়ি খুঁজ। দেরি হয় যাচ্ছে।”

রূপ মারুর থেকে চোখ সরিয়ে রাস্তার দিতে চোখ রাখতেই এক্টা খালি রিকশা দেখতে পেলো। রূপ গাড়িটাকে থামানোর আগেই মারু গাড়িটাকে দুই হাত দিয়ে সিগন্যাল দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো। এরপর দুজনই গাড়িতে উঠে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

রিকশায় কেউ কোনো কথা বলে নি। মারু মনে মনে আদ্রিতাকে নিয়ে ভাবছে। মেয়েটাকে একদম সুবিধার লাগছে না ওর। কিছুটা গাঁয়ে পড়া ভাব। চাল, চলন ও সুবিধার না। মেয়েটার এমন উগ্র আচরণ এবং স্বভাব সবই রূপের লাইফে খারাপ ইফেক্ট ফেলতে পারে।

প্রায় দশ মিনিট পর গাড়ি এসে থেমে গেলো কাঁচা বাজারের সামনে। রূপ আর মারু গাড়ি থেকে নেমে রিকশা ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে বাজারে ঢুকে গেলো। দুজনই প্রথমে মাছ বাজারে ঢুকল। দুজনই নাকে কাপড় চেঁপে তিন পদের মাছ কিনল। সব দুই কেজি করে। এরপর তিন কেজি ওজনের এক্টা বড় মুরগি কিনল। এবার দুইজনই চলে গেলো সবজি বাজারে। ঘুড়ে ঘুড়ে ওরা সবজি কিনছে। দুজনই বাজারের ব্যাগটা ধরাধরি করে হাঁটছে।

রূপ সামনের দিকে হাঁটছে আর কিছুক্ষন পর পর পিছনের দিকে তাকাচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে কেউ ওদের ফলো করছে। কিন্তু পেছনে তাকাতেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। মারুর এসব দিকে খেয়াল নেই। সে সবজি দেখতে ব্যস্ত। রূপ ব্যাপারটাকে তেমন আমলে না নিয়ে মারুর পাশাপাশি হেঁটে চলছে।

কিছুক্ষন ঘুড়াঘুড়ির পর মারু প্রায় পাঁচ আইটেমের শীত কালীন সবজি কিনল। রূপ এখনো সামনে পিছনে তাকাচ্ছে। সে যতোই ব্যাপারটাকে ইগনোর করতে যাচ্ছে ব্যাপারটা ততোই স্পষ্ট হচ্ছে। এক পর্যায়ে রূপের ঘাম ছুটে গেলো। ভয়ে সে জনাজীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। মারু আরো সবজি কিনতে নিলেই রূপ মারুর হাতে চিমটি কেটে বলল,,,,,,

—-“মারু বাড়ি চল। আর সবজি কিনতে হবে না।”

মারু মুখ ভেংচিয়ে বলল,,,,,

—-“এ্যাঁ বাড়ি চল। মুদি বাজার তোর জামাই করবে?”

রূপ গলার ঘাম মুচছে আর বলছে,,,,,,

—-“আরে মুদি বাজার তো ফ্ল্যাটের সামনে থেকেই করা যাবে। প্লিজ বাড়ি চল। আমার এখানে অস্বস্তি লাগছে।”

—-“এই রূপ তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?”

—-“হুম শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। প্লিজ বাড়ি চল।”

মারু আর দেরি না করে রূপকে নিয়ে মেইন রাস্তায় চলে এলো। রূপ এখনো পেছনের দিকে তাকাচ্ছে। পিছনের দিকে তাকালেই কেউ একজন সরে যাচ্ছে। মারু তাড়াতাড়ি রিকশা ডেকে রূপকে নিয়ে রিকশায় উঠে গেলো।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২৯
#নিশাত_জাহান_নিশি

মারু আর দেরি না করে রূপকে নিয়ে মেইন রাস্তায় চলে এলো। রূপ এখনো পেছনের দিকে তাকাচ্ছে। পিছনের দিকে তাকালেই কেউ একজন সরে যাচ্ছে। মারু তাড়াতাড়ি রিকশা ডেকে রূপকে নিয়ে রিকশায় উঠে গেলো।

রূপ রিকশায় বসে ও বার বার পেছনের দিকে তাকাচ্ছে। তবে কাউকে এবার দেখা যাচ্ছে না। রিকশার স্পিডের সাথে হয়তো পেরে উঠছে না। তাই ফলোকৃত ব্যক্তিটাকে দেখা যাচ্ছে না। রূপ কিছুটা ঘাবড়িয়ে রিকশার হুড তুলে দিলো। মারু নাক, মুখ কুঁচকে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এই কি হয়েছে তোর? এমন অদ্ভুত বিহেভ করছিস কেনো? রিকশার হুডটা তুললি কেনো?”

রূপ কোনো কথা বলছে না। মারুর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মারু ওর ক্ষীণ দৃষ্টি পাল্টে বেশ নরম স্বরে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“কিরে রূপ। তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?”

রূপ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। মারু মিষ্টি হেসে বলল,,,,,,

—-“দাঁড়া আর এক্টু। আমরা পৌঁছে গেছি। রুমে গিয়ে রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”

রূপ মারুর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের দিকে তাকালো। মারু ও রূপের থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি রাখল।

প্রায় দশ মিনিট পর রিকশা এসে পৌঁছে গেলো রূপদের ফ্ল্যাটের সামনে। রূপ আগে আগেই গাড়ি থেকে নেমে ফ্ল্যাটের গেইটের ভিতর ঢুকে গেলো। মারু বাজারের ব্যাগ নিয়ে রিকশা থেকে নেমে রিকশা ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে রূপের পিছু পিছু বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো।

রূপ ফ্ল্যাটের দরজা খুলেই ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি সাভার করে ফেলল। গলা বেয়ে পানির কয়েকটা ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে রূপের। শাড়ি দিয়ে পানি গুলো মুছে রূপ চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,,

—–“ঐ লোকটা কে ছিলো? অস্পষ্ট ভাবে আমি তাকে অনেকবার দেখেছি। আমার মন বলছে কেউ আমাকে ফলো করছে। আমার গতিবিধি নজরে রাখছে। কেউ আছে আমার পেছনে। যে আমার ক্ষতি করতে চাইছে। মনটা কুহ গাইছে। অজানা আতঙ্কে বুকটা কাঁপছে।”

এর মাঝেই মারু রুমের দরজা ঠেলে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। মারুকে দেখার সাথে সাথেই রূপ নিজেকে যথেষ্ট শান্ত করার চেষ্টায় লেগে পড়ল। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে রূপ মারুর হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা কেড়ে নিচ্ছে আর মারুর দিকে তাকিয়ে বলছে,,,,,,,

—-“দে মারু। এবার আমি ব্যাগটা হাতে নেই। কাটা কুটি করতে হবে। রান্না বসাতে হবে।”

মারু রূপের মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,,,,,

—–“এই তোর কি বুদ্ধি সুদ্ধি লোপ পেয়েছে? লবন, মরিচ, হলুদ ছাড়া রান্না করবি কিভাবে? মুদি খরচ এখনো বাকি আছে।”

রূপ জিভ কেটে বলল,,,,,,,

—-“ইসস ভুলেই গেছি। দাঁড়া আগে এক্টা লিস্ট করে নেই। তাহলে খরচ আনতে সুবিধে হবে।”

রূপ দৌঁড়ে গিয়ে রুম থেকে খাতা আর কলম এনে ডাইনিং টেবিলে বসে খরচ লিখা শুরু করল। দৈনন্দিনের যাবতীয় সব খরচ এক এক করে লিস্টে তুলছে রূপ। মারু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হিসেব করছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর লিস্ট করা শেষ হলে রূপ কাগজটা খাতা থেকে ছিড়ে হাতে গুজে নিলো। দুজনই এবার মুদি দোকানের উদ্দেশ্যে ছুটল। রুমের দরজা ভালো করে লাগিয়ে রূপ মারুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশের দোকানটায় চলে গেলো। দুজনই খুব মনযোগ দিয়ে মুদি খরচ গুলো বুঝে নিচ্ছে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর ওরা মুদি খরচ বুঝে নিয়ে আবারো ফ্ল্যাটে চলে এলো। দুজনই কোমড়ে শাড়ি গুজে মাছ আর মাংস কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কাটা কাটির পর্ব শেষে মাছ, মাংস ভালো করে ধোঁয়ে রূপ রান্নার জন্য মাছ আর মাংস আলাদা করে বাকি গুলো ফ্রিজে রেখে দিলো।

মাছ, মাংস কড়াইতে ভেজে রূপ জিভ কেটে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“ইসসস মারু। শিল, নুড়ি তো নেই কিচেনে। মসলা বাটব কি করে?”

মারু কিছুটা আপসেট হয়ে বলল,,,,,

—-“ব্ল্যান্ডার ও তো নেই।”

—-“ধ্যাত। কি করি এখন।”

হুট করেই রূপ কিছু এক্টা ভেবে মারুকে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“মারু তুই এখানে দাঁড়া। আমি নিচ তলায় আন্টির কাছে যাচ্ছি। মসলা গুলো ব্ল্যান্ড করে আসি।”

রূপ আর দাঁড়ালো না। মসলার থালা টা হাতে নিয়ে এক ছুটে নিচ তলায় চলে গেলো। মারুকে কিছু বলার সুযোগটা দিলো না।

নিচ তলার কলিং বেল চেঁপে রূপ অধিক আগ্রহ নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় চার বার কলিং বেল চাঁপার পর আদ্রিতা এসে দরজাটা খুলে দিলো। রূপ হাসি মুখে আদ্রিতার দিকে তাকালো। আদ্রিতার চোখ, মুখ, নাক, লাল হয়ে ফুলে আছে। দেখতে টোটালী নেশাখোরদের মতো লাগছে। মুহূর্তেই রূপের হাসি মুখটা চুপসে গেলো।

আদ্রিতা হেলে দুলে পড়ছে আর রূপকে উদ্দেশ্য করে মিনমিন করে বলছে,,,,,,,,

—–“বলুন ভাবী। কি দরকার?”

আদ্রিতার মুখ থেকে এক্টা বিদঘুটে গন্ধ আসছে।
গন্ধটা রূপের নাকে যাওয়ার সাথে সাথে রূপের নাক, মুখ কুঁচকে এলো। কোনো রকমে নিজেকে সামলিয়ে রূপ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“মমমমসলা ব্ল্যান্ড করতে এসেছি।”

আদ্রিতা পিছু ফিরে ড্রইং রুমের দিকে দু, তিন মিনিট তাকিয়ে থেকে মুখটা সামনের দিকে ঘুড়িয়ে আচমকাই রূপের হাত থেকে মসলার থালাটা ছিনিয়ে নিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“ভাবী আপনি এখানেই দাঁড়ান। আমি দশ মিনিটের মধ্যে ব্যাক করছি।”

রূপ মুখ খুলে কিছু বলার আগেই আদ্রিতা ঠাস করে মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিলো। রূপ বুকে হাত দিয়ে পর পর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,,

—–“আদ্রিতার হলো টা কি? সকাল থেকেই মেয়েটাকে কেমন অদ্ভুত লাগছে আমার। ওর আচরন স্বাভাবিক না। প্রথম দিন যখন ওর সাথে আমার পরিচয় হয় তখন কিন্তু যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছিলো মেয়েটাকে। কিন্তু সকাল থেকেই মেয়েটার অদ্ভুত আচরন আমাকে বাধ্য করছে মেয়েটাকে অসভ্য বলতে। নিশ্চয়ই মেয়েটা নেশা ভান করে। তাই তো চোখ, মুখের এই অবস্থা। মুখ থেকে সিগারেট জাতীয় কিছু এক্টার বিদঘুটে গন্ধ আসছিলো।”

এসব মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে রূপ নিচের দিকে তাকালো। দরজার এক পাশে দু জোড়া জুতো পড়ে আছে। এক জোড়া পুরুষের জুতো। অন্য জোড়া মেয়েদের জুতো। জুতো গুলো রূপের খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথাও এক্টা দেখেছে সে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। রূপ মাথায় প্রবল প্রেশার দিয়ে মনে করার চেষ্টা করছে জুতো গুলো আসলে সে কোথায় দেখেছে। এভাবে কেটে গেলো প্রায় দশ মিনিট। এতোটা সময় নেওয়ার পরে ও রূপ কিছু মনে করতে পারছে না। উল্টে মাথায় যন্ত্রনা শুরু হলো। হীতে বিপরীত হয়ে গেলো।

এর মাঝেই দরজা খুলে আদ্রিতা মসলার বাটি টা নিয়ে রূপের মুখোমুখি দাঁড়াল। রূপ মসলার বাটি টা আদ্রিতার হাত থেকে নিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আদ্রিতা…..তোমার আম্মু কোথায়? উনাকে দেখছি না যে!”

আদ্রিতা আবারো ঢুলতে ঢুলতে বলল,,,,,

—-“আম্মু নানু বাড়ি গেছে। আপনি এখন যান। আমি এখন ব্যস্ত আছি। বিকেলে এক সাথে বসে কথা বলব।”

আদ্রিতা মুখের উপর ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। রূপ আরো একবার জুতো জোড়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,,,

—–“তার মানে বাড়িতে আন্টি নেই। আঙ্কেল ও হয়তো অফিসে। নিশ্চয়ই আদ্রিতার রুমে আউট কোনো পার্সন আছে।”

রূপ কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—-” আ’ম সিউর দুু দুটো আউট পার্সন আছে আদ্রিতার রুমে। এখন প্রশ্ন হলো জুতো গুলো আমার পরিচিত লাগছে কেনো? কোথায় দেখেছি আমি? তাহলে কি আদ্রিতার রুমে আমার কোনো পরিচিত লোক আছে?”

এসব ভাবতে ভাবতেই রূপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। ফ্ল্যাটের দরজা খুলে রূপ রুমের ভিতর ঢুকে দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে কিচেনে চলে গেলো। মারু রান্না ঘরের দেয়ালের সাথে ড্যাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে গেইমস খেলছে। রূপ কোনো দিকে না তাকিয়ে চুলায় রান্নার বসিয়ে দিলো। মারু এসে রূপের পাশে দাঁড়ালো। রূপকে চুপচাপ থাকতে দেখে মারু রূপকে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এই রূপ তোর কি হয়েছে বল তো? বাজারে যাওয়ার পর থেকেই তুই কেমন অদ্ভুত বিহেভ করছিস। প্লিজ ক্লিয়ারলী বলবি তোর হয়েছে টা কি?”

রূপ মুরগির মসলাটা কষিয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,,,

—–“মারু…..আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বা আমাদের ফলো করছে। প্রতিনিয়ত আমাদের উপর নজর রাখছে। প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ উভয় ভাবে। আমি টের পাই। কিন্তু ধরতে পারি না।”

—–“তার মানে বাজারে কেউ আমাদের ফলো করছিলো?”

—–“বাজারে, বাড়িতে সব জায়গায়।”

—-“কই আমার তো মনে হলো না কেউ আমাদের ফলো করছে।”

—-“কারন তুই ছিলি বাজার করার ধ্যানে। তাই কিছু বুঝিস নি। তবে আমি স্পষ্ট বুঝেছি কেউ আমাদের ফলো করছে।”

মারু বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,

—-“মুহিতকে ব্যাপারটা জানা। এ ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।”

—-“হুম জানাবো। আজ রাতেই জানাবো। মুহিতকে ও সাবধান করতে হবে। কোন দিক থেকে কোন ঝড় চলে আসে বলা যায় না।”

মারু কিছু এক্টা ভেবে চোখে, মুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“আচ্ছা রূপ…… এসব অনিক করছে না তো?”

—-“অনিক কিভাবে এতো কিছু করবে মারু? উনি নিশ্চয়ই আধ মরা হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে।”

—-“অনিকের বাবা কিন্তু মুহিতকে হুমকি দিয়েছিলো।”

—–“আমার মাথা কাজ করছে না মারু। খুব টেনশান হচ্ছে।”

এর মাঝেই রূপের ফোন বেজে উঠল। এই ভর দুপুরে কে কল করতে পারে তা ভেবেই রূপের বুকটা কেঁপে উঠল। রূপ দৌঁড়ে ওর বেড রুমে চলে গেলো। কাবার্ডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে রূপ মুহিতের নাম্বারটা দেখতে পেলো। কাঁপা কাঁপা হাতে রূপ কলটা পিক করল। সাথে সাথেই মুহিত বেশ আহ্লাদি কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,

—-“আমার লক্ষী বউ টা কি করছে?”

রূপ কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,,

—-“মুহিত তুমি কি অফিসে?”

—-“হুম অফিসে। কাজ করছি।”

রূপ শুকনো ঢোক গিলছে আর বলছে,,,,,,

—-“তুমি ঠিক আছো তো মুহিত?”

—-“হুম আমি ঠিক আছি। তোমার ভয়েসটা এমন শোনাচ্ছে কেনো রূপ? কি হয়েছে?”

রূপ কয়েকটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে বলল,,,,,,

—–“কি হবে? কিছু হয় নি। তোমাকে মিস করছি তো তাই জিগ্যেস করলাম।”

—-“আমি ও তোমাকে খুব খুব খুব মিস করছি রূপ।”

—-“কখন ফিরবে?”

—-“রাত হবে বউ।”

—-“সাবধানে এসো। ডানে বায়ে সব দিকে সমান ভাবে নজর রেখো।”

—-“তুমি কি কোনো বিপদের আশঙ্কা করছ রূপ?”

রূপ প্রসঙ্গ ঘুড়িয়ে বলল,,,,,,

—-“আচ্ছা মুহিত…..আদ্রিতা মেয়েটা কেমন?”

মুহিত অফিসের কাগজ পএ ঘাটছে আর বেশ ব্যস্ত স্বরে বলছে,,,,,,,

—-“আমার জানা মতে তো ভালোই। এই পর্যন্ত খারাপ কিছু দেখি নি। কেনো বলো তো?”

—–“না এমনি।”

রূপ কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,

—-“আচ্ছা মুহিত…..মেয়েরা ও কি স্মোকিং করে?”

—-“স্মোকিং, গাঁজা, ইয়াবা সব করতে পারে। সমাজটাই পাল্টে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো তুমি আমাকে এসব জিগ্যেস করছ কেনো?”

—-“না না এমনি। কৌতুহল হলো তাই জিগ্যেস করলাম। আচ্ছা বাদ দাও কাজ কেমন চলছে তোমার?”

—-“ভালোই চলছে। কোম্পানির বস টা ও খুব ভালে। কোম্পানিটা ও সব দিক থেকে পার্ফেক্ট। আচ্ছা…..এবার বলো তুমি কি করছ?”

—–“রান্না করছি। এক্টু আগে বাজার করে আসলাম।”

মুহিত কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,,,,,,,

—-“নেক্সট টাইম থেকে আমি বাজার করব। তুমি বাজারের ধারে কাছে ও ঘেঁষবে না।”

—-“আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বাজারের ধারে কাছে ও ঘেঁষব না।”

রূপ কিছুটা আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,,,,

—-“তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসো মুহিত। তোমার সাথে অনেক কথা আছে।”

—-“কি কথা রূপ?”

—-“ফোনে বলা যাবে না। বাড়ি ফিরলেই বলব।”

—-“আজ কাজী নিয়ে বাড়ি ফিরব।”

—-“মানে?”

—-“মানে সিম্পল। আজ আমাদের তিন কবুল হবে। শীত কাল তো চলে যাচ্ছে। বউ ছাড়া থাকা আর সম্ভব না।”

—-“ধ্যাত। ফোনটা রাখো তো। কাজ আছে আমার।”

—–“সত্যি সত্যিই কিন্তু আজ আমাদের ফুলসজ্জা হবে। ফুল, ক্যান্ডেল, গাজরা, পিল এই সব নিয়ে বাড়ি ফিরব। আজ আমি আমার বউকে নিজের করে নিবো।”

—-“তুমি আস্ত এক্টা অসভ্য লোক। ফোনটা রাখো বলছি।”

—-“আরে আরে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে। তোমার বর ই তো তোমাকে এসব বলছে। বাইরের কেউ তো বলছে না। অফিসে এক্টু ও মন বসছে না। রাত যে কখন হবে সেই অপেক্ষায আছি।”

—-“ছি ছি ছি। অফিসে বসে এসব নষ্টামি কথা বলছ। তোমার এক্টু ও লাজ লজ্জা নেই বুঝলে? ফোনটা রাখছি আমি। এমন অসভ্য লোকের সাথে আমার কোনো কথা নেই।”

—-“আরে আরে আমি তো মজা করছিলাম। এতো হাইপার হচ্ছ কেনো? আচ্ছা যাও ফোন রাখছি। যা হবার রাতে হবে।”

রূপ হাসি চেঁপে বলল,,,,,

—-“ওকে লাঞ্চ করে নিও।”

—-“তুমি ও। ভালোবাসি বউ। উম্মাম্মাম্মাম্মাহ।”

রূপ তাড়াতাড়ি কলটা কেটে মুচকি হেসে কিচেনে চলে গেলো। মুহিত ফোনটা কান থেকে সরিয়ে অট্ট হাসি দিয়ে কাজে মনযোগ দিলো।

মারু এতক্ষনে মুরগি তরকারী অর্ধেক রান্না করে ফেলেছে। এর মাঝেই যোহরের আযান পড়ে গেলো। রূপ তাড়াহুড়ো করে অন্য চুলায় মাছ তরকারী বসিয়ে দিলো। দুজনে মিলে এবার একসাথে রান্না শুরু করল।

প্রায় এক ঘন্টা পর রান্না ঘরের সব কাজ শেষ করে রূপ আর মারু শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। এর মাঝে মারু প্রায় অনেকবার মৃন্ময়ের সাথে ফোনে কথা বলে নিয়েছে। দুজন দুজনকে চোখে হারাচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য দূরে থাকাটা ও দায় হয়ে পড়ছে।

শাওয়ার শেষে দুজন লাঞ্চ করতে বসল। খাবার মুখের কাছে নিয়ে রূপ আচমকাই থেমে গেলো। খাবারটা প্লেইটে রেখে রূপ কিচেন রুম থেকে দুটো বক্স এনে বক্স দুটোতে মাছ আর মাংস তরকারী বেড়ে নিলো। মারু খাবারের লোকমা মুখে পুড়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“নিশ্চয়ই নিচে যাচ্ছিস?”

—–“হ্যাঁ রে। আন্টি বাসায় নেই। আদ্রিতা একা। তাই ভাবলাম এক্টু তরকারী দিয়ে আসি।”

বক্সে তরকারী নিয়ে রূপ মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“তুই খা। আমি আসছি।”

রূপ আর দাঁড়াল না। রুম থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে নিচ তলায় চলে গেলো। কলিং বেল চাপার সাথে সাথে আদ্রিতা রুমের দরজা খুলে দিলো। রূপ নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল জুতো গুলো আর দরজার কাছে নেই। তার মানে ছেলে আর মেয়ে দুজনই রুম থেকে বের হয়ে গেছে। আদ্রিতাকে ও দেখতে খুব চনমনে লাগছে। চোখ, মুখ আর ফোলা নেই। ড্রেস ও চেইন্জ্ঞ করে নিয়েছে। নীল রঙ্গের এক্টা চুড়িদার পড়েছে। দেখতে দারুন লাগছে। আদ্রিতা হাসি মুখে রূপকে টেনে রুমে ঢুকিয়ে ধপ করে সোফায় বসিয়ে দিলো। রূপ বক্স গুলো আদ্রিতার দিকে এগিয়ে বলল,,,,,,

—–“তোমার জন্য তরকারী এনেছিলাম আদ্রিতা। জানি আন্টি রান্না করে গেছে। এরপর ও নিয়ে এলাম।”

আদ্রিতা মুখ ফুলিয়ে বলল,,,,,,

—–“আমরা এক সাথে বসে লাঞ্চ করব ভাবী। তরকারী লাগবে না আমার। একা একা কিছু খেতে আমার একদম ভালো না। আফ্রিদা ও বাড়িতে নেই। আম্মুর সাথে নানুর বাড়ি গেছে। চলুন ভাবী। আপনার ফ্ল্যাটে যাই। আমরা সবাই একসাথে বসে লাঞ্চ করব।”

রূপ মলিন হেসে বলল,,,,,,

—–“হুম সিউর। চলো।”

আদ্রিতা আর দেরি করল না। রূপকে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে সোজা দুতলায় চলে গেলো। মারু খাওয়া বন্ধ করে ফোন টিপছে। রূপ এলে এক সাথে খাবে বলে। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে মারু সামনের দিকে তাকাতেই রূপ আর আদ্রিতাকে দেখে চোখ, মুখ লাল করে ফেলল। আদ্রিতাকে কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না মারুর। রূপ ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে ও হাসিমুখে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে।

আদ্রিতা মারুর পাশের চেয়ারটা টেনে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল। রূপ কিচেন রুম থেকে আরেকটা প্লেইট এনে আদ্রিতার সামনে রাখল। ভাত, তরকারী আদ্রিতার প্লেইটে সাজিয়ে দিলো। আদ্রিতা পুরো রুমটা চোখ বুলিয়ে দেখছে। রূপ মারুর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখের সামনে ভাতের লোকমা ধরল। মারু পারছে না রূপের মাথা ফাটিয়ে আসতে। রূপ চোখ দিয়ে ইশারা করে মারুকে বলছে শান্ত হয়ে লাঞ্চটা করতে। মারু নিজেকে কিছুটা দমিয়ে খাবার খাওয়ায় মনযোগ দিলো।

আদ্রিতা ভাতের প্রথম লোকমাটা মুখে দিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“বাহ ভাবী। আপনার রান্নার হাত তো বেশ ভালো। তরকারীটা খুব মজা হয়েছে।”

রূপ মলিন হেসে বলল,,,,,,

—-“থ্যাংক ইউ।”

—-“আচ্ছা ভাবী আপনার কি শ্বশুড় শ্বাশুড়ী নেই?”

—-“আছে। উনারা আলাদা থাকে।”

—-“ননদ, ভাসুড় বা দেবর নেই?”

—-“হুম আছে তো। তোমার পাশের জন আমার জা। আমার ভাসুড়ের বউ।”

আদ্রিতা এবার মারুর দিকে তাকালো। মারু জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

—-“খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নেই আদ্রিতা। আগে খাও। পরে কথা হবে।”

আদ্রিতা মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। প্রায় পনেরো মিনিট পর সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। রূপ ডাইনিং টেবিল গুছিয়ে আদ্রিতাকে নিয়ে ড্রইং রুমের সোফায় বসল। মারু রুমে গিয়ে বিছানায় এক্টু গাঁ এলিয়ে দিলো। আদ্রিতার ঢঙ্গি কথা বার্তা মারুর একদম পছন্দ হচ্ছে না। রূপ মুখে হাসি ফুটিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“আচ্ছা আদ্রিতা তোমার কি কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড নেই?”

—-“আছে ভাবী।”

—-“ওরা কি তোমার সাথে দেখা করতে আসে না?”

—-“হুম আসে তো। তবে খুব কম আসে। আম্মু পছন্দ করে না তো তাই।”

—-“আজ নিশ্চয়ই ওরা দেখা করতে এসেছিল তাই না?”

আদ্রিতা কিছুটা থতমত খেয়ে কথা ঘুড়ানোর জন্য বলল,,,,,,

—-“ভাবী আপনাদের বেড রুমটা দেখা হলো না। চলুন এক্টু দেখে আসি। এক্টু পর আমাকে আবার প্রাইভেটে যেতে হবে।”

রূপ বেশ বুঝতে পেরেছে আদ্রিতা কথা ঘুড়ানোর চেষ্টা করছে। রূপ বসা থেকে উঠে আদ্রিতাকে নিয়ে বেড রুমে চলে গেলো। আদ্রিতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বেড রুমটা পরখ করে বেশ ব্যস্ত কন্ঠে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“ওকে ভাবী। এবার তাহলে আমি আসি। প্রাইভেটে যেতে হবে।”

আদ্রিতা আর দাঁড়ালো না। ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। রূপ আগা মাথা কিছু না বুঝে সদর দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে সোজা মারুর রুমে চলে গেলো। মারু খুব আরাম করে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমুচ্ছে। রূপ মুচকি হেসে মারুর পাশে শুয়ে পড়ল। মারুকে জড়িয়ে ধরে রূপ ও ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘড়িতে রাত আটটা। মুহিত অফিস থেকে বাড়ি ফিরছে। গাড়িটা ফ্ল্যাটের পার্কিং এরিয়ায় পার্ক করে হাতে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল আর ক্যান্ডেল নিয়ে মুহিত যেই না দুতলার সিঁড়িতে পা রাখতে যাবে অমনি আদ্রিতা ঝড়ের গতিতে এসে মুহিতের সাথে ধাম করে এক ধাক্কা খেলো।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here