এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ২৬+২৭

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

প্রায় তিন ঘন্টা পর মুহিতের গাড়ি এসে ঢাকায় পৌঁছে গেলো। মুহিত গাড়ি নিয়ে ওর ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে ছুটল। মারুকে ফ্ল্যাটে রেখে ওরা ঐ বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপএ নিয়ে নতুন ফ্ল্যাটে শিফট হয়ে যাবে।

প্রায় দশ মিনিট পর মুহিত ওর নতুন ফ্ল্যাটের রাস্তায় মোড় নিলো। সামনের মোড়টা পাড় হলেই মুহিতের ফ্ল্যাটটা দেখা যায়। মুহিত তাড়াহুড়ো করে গাড়িটা আরো স্পিডে ছেড়ে দিলো। রূপের শরীরের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। কেমন অস্থির অস্থির করছে। শরীরের দুর্বলতার কারনে হয়তো গাড়ির ধকল নিতে পারছে না। অস্থিরতায় ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। বার বার উল্টানি আসছে। মনে হচ্ছে এখনই বমি করে সব ভাসিয়ে দিবে।

ফ্ল্যাটের গেইটের কাছে আসার সাথে সাথেই রূপ বমি করে মুহিতকে ভাসিয়ে দিলো। রূপ গড়গড় করে বমি করছে। মুহিত গাড়িটা থামিয়ে চোখে, মুখে চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে রূপের পিঠে হাত বুলাচ্ছে আর রূপকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—-“রূপ…. আমি পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তুমি যতো পারো বমি করো। বমি করার পর শরীরটা ঠিক হবে। বেটার লাগবে।”

রূপ মাথাটা নিচু করে জোর করে বমি করছে। চোখ, মুখ লাল হয়ে গড়গড় করে পানি পড়ছে রূপের। বমি করতে করতে এক পর্যায়ে রূপের কাশি উঠে গেলো। কাশতে কাশতে রূপ নেতিয়ে পড়ছে। মৃন্ময় আর মারু গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মুহিত গাড়ি থেকে নেমে পড়। রূপের এখন রেস্ট দরকার। এতোটা জার্নি হয়তো নিতে পারে নি। তাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”

মুহিত মাথায় হাত দিয়ে বলল,,,,,

—-“ব্যাপারটা আমার সুবিধের লাগছে না ভাই। মনে হচ্ছে ডক্টর দেখাতে হবে।”

—-“আচ্ছা ঠিক আছে। পরে দেখানো যাবে। এখন আপাতত ফ্ল্যাটে আয়।”

মারু ও মৃন্ময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলল,,,,,,

—-“হুম মুহিত। মৃন্ময় ঠিক বলছে। রূপকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এসো। আপাতত ফ্ল্যাটে উঠি। ঘরোয়া চিকিৎসায় যদি রূপ সুস্থ হয়ে উঠে তাহলে তো ভালোই। আর যদি না হয় তবে অন্য ব্যবস্থা করা যাবে।”

মুহিত আর দেরি না করে রূপকে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে ফ্ল্যাটের গেইটের ভিতর ঢুকে পড়ল। পিছনে পিছনে মৃন্ময় আর মারু ও আসছে। মৃন্ময়ের হাতে রূপের লাকেজটা আছে। মুহিত অনেকক্ষন ধরে ফ্ল্যাটের নিচ তলার কলিং চেঁপে যাচ্ছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর ফ্ল্যাটের মালিক মিঃ আমজাদ চৌধুরী দরজা খুলে বাইরে বের হলো। মুহিত আর রূপকে ঐ অবস্থায় দেখার সাথে সাথেই উনি চোখে, মুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কি হয়েছে মুহিত?….মেয়েটার এভাবে হাফাচ্ছে কেনো?’

মুহিত বেশ ব্যস্ত স্বরে বলল,,,,,,,

—-“আঙ্কেল….ওর এজমা প্রবলেম আছে। শ্বাস বেড়ে গেছে। ওর শরীরটা ও দুর্বল। মাথায় ও চোট পেয়েছে।”

আমজাদ চৌধুরী বেশ পেরেশান হয়ে বলল,,,,

—-“ইসসস বমি ও তো করেছে দেখছি। যাও যাও ওকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ করাও। বেডে শুইয়ে দাও। ঔষধ পত্র থাকলে খাইয়ে দাও। কয়েক ঘন্টা ঘুমোলেই শরীরটা আস্তে করে ঠিক হয়ে উঠবে।”

মুহিত বেশ ব্যস্ত স্বরে বলল,,,,,

—-“হুম আঙ্কেল তাই করতে হবে। ফ্ল্যাটের চাবি টা দিন।”

আমজাদ চৌধুরী দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে ঢুকে কয়েক মিনিটের মধ্যে দুতলার ফ্ল্যাটের চাবিটা এনে মুহিতের হাতে ধরিয়ে দিলো। মুহিত চাবিটা হাতে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দুতলায় উঠে গেলো। মৃন্ময় আর মারু ও মুহিতের পিছু পিছু দু তলায় উঠে গেলো। রূপ খুব জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। শরীরের দুর্বলতা, মাথার পেইন প্লাস শ্বাস কষ্ট সব মিলিয়ে রূপের যায় যায় অবস্থা। মৃন্ময় মুহিতের হাত থেকে চাবিটা নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলে দিলো। মুহিত দ্রুত পায়ে হেঁটে ফ্ল্যাটের ভিতর ঢুকে ড্রইং রুম ক্রস করে রূপকে নিয়ে বেড রুমে চলে গেলো। মুহিতের ফ্ল্যাটটা জিনিসপএ দিয়ে সাজানো গোছানো আছে। জিনিসপএ সহ পুরো ফ্ল্যাটটা সে ভাড়ায় নিয়েছে।

বেড রুমে ঢুকেই মুহিত রূপকে বেডে শুইয়ে দিলো। মারু ল্যাকেজ থেকে এক্টা শাড়ি বের করে মুহিতের দিকে এগিয়ে এসে বলল,,,,,,,,

—-“মুহিত ধরো। আগে রূপের ড্রেসটা চেইন্জ্ঞ করে দাও। এরপর ফ্রেশ করাবে।”

মুহিত শাড়িটা হাতে নিয়ে রূপকে শোয়া থেকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো। মারু আর মৃন্ময় রুম থেকে বের হয়ে গেলো। খুব সাবধানে মুহিত রূপের গাঁ থেকে জামাটা খুলে শাড়িটা পড়িয়ে দিলো। এরপর ওয়াশরুমে ঢুকে রূপকে ফ্রেশ করিয়ে আবার বিছানায় শুইয়ে দিলো। ল্যাকেজ থেকে ইনহেলারটা বের করে মুহিত রূপের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,

—-“রূপ ইনহেলারটা প্রেস করে নাও। এরপর টানা এক্টা ঘুম দাও। দেখবে শরীরটা ঠিক হয়ে যাবে।”

রূপ শোয়া থেকে উঠে মুহিতের হাত থেকে ইনহেলারটা নিয়ে দুবার প্রেস করে মুখটা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়ল। চোখ দুটো বন্ধ করে রূপ ঘুমানোর চেষ্টা করছে। মুহিত রূপের মাথার পাশে বসে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মুহিত এখনো চেইন্জ্ঞ করে নি। ওর এখানে এক্সট্রা কোনো শার্ট ও নেই। মূলত এই কারনে মুহিত এখনো চেইন্জ্ঞ করছে না।

প্রায় পনেরো মিনিট রূপের মাথায় হাত বুলানোর পর রূপ গভীর ঘুমে তলিয়ে নিলো। মুহিত কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে রূপের কপালে চুমো খেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রুমের বাইরে মারু আর মৃন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। মারু আর মৃন্ময় কিছুটা উওেজিত হয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“রূপ এখন কেমন আছে?”

মুহিত শার্টের দিকে তাকিয়ে মুখটা কালো করে বলল,,,,,,,

—-“হুম। এখন ভালো আছে। মাএ ঘুমালো।”

মৃন্ময় এক ভ্রু উঁচু করে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কিরে শার্ট টা যে এখনো চেইন্জ্ঞ করলি না?”

মুহিত বিরক্তি নিয়ে বলল,,,,,,

—-“এক্সট্রা শার্ট থাকলে তো চেইন্জ্ঞ করব।”

আচমকাই মুহিতের চোখ গেলো মৃন্ময়ের শার্টের দিকে। মৃন্ময়ের শার্টের নিচে আরেকটা টি শার্ট আছে। মুহিত বাঁকা হেসে মৃন্ময়ের দিকে এগিয়ে এসে মৃন্ময়ের শার্ট টা এক টানে গাঁ থেকে খুলে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এটাতে কাজ হয়ে যাবে। তোর গাঁয়ে তো নিচে টি শার্ট আছেই।”

মুহিত আর দাঁড়ালো না। আবারো রুমে ঢুকে গেলো। মুহিতের কান্ড দেখে মৃন্ময় আর মারু হেসে দিলো। হাসির মাঝখানেই মারুর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে মৃন্ময়ের কেমন ঘোর লেগে এলো। মৃন্ময় হাসি থামিয়ে এক্টু এক্টু করে মারুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মারু শুকনো ঢোক গিলে পিছু হাঁটছে। মারু বেশ বুঝতে পেরেছে মৃন্ময়ের ইরাদা ভালো না। মারু পিছু ফিরে দৌঁড় দিতে নিলেই মৃন্ময় এক ঝটকায় মারুর হাতটা ধরে ফেলল। মারু চোখ বন্ধ করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। মৃন্ময় হেচকা টান দিয়ে মারুকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। মারু লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মৃন্ময়ের বুকে মিশে আছে।

প্রায় পাঁচ মিনিট পর মৃন্ময় মারুকে বুক থেকে উঠিয়ে আচমকাই মারুর ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। মারু মৃদ্যু হেসে মৃন্ময়ের পিছনের চুল গুলো আঁকড়ে ধরল।

প্রায় দশ মিনিট পর মুহিত চেইন্জ্ঞ করে ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা ঠেলে রুম থেকে বের হলো। মুহিতের উপস্থিতি টের পেয়ে মৃন্ময় আর মারু তাড়াতাড়ি নিজেদের ছাড়িয়ে নিলো। মুহিত ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে বাঁকা হেসে মৃন্ময় আর মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“বাহ্ বাহ্ ভালোই রোমান্স চলছে দেখছি। আমি বলছি কি…. আজ রাতেই তোমাদের ফুলসজ্জাটা বিশাল ভাবে সেলিব্রেট হয়ে যাক? কি বলো তোমরা?”

মারু লজ্জা পেয়ে রূপের বেড রুমে ঢুকে গেলো। মৃন্ময় অট্ট হাসি দিয়ে মুহিতের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,,

—–“মন্দ হয় না। আমার কোনো আপত্তি নেই।”

—–“তাহলে চল, এখনই থেকেই ডেকোরেটিং শুরু করি। সন্ধ্যা তো ঘনিয়ে এলো।”

—–“আগে বাড়ি চল। বাড়ির অবস্থা দেখে আসি। এরপর না হয় চিল মোডে এরেন্জ্ঞমেন্ট করা যাবে।”

—-“মন্দ বলিস নি। তবে বাড়ির সবাইকে কি বলব? বাড়িতে ঢুকলেই তো সবাই হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দিবে। আমরা দু ভাই এতোদিন কোথায় ছিলাম? কি করেছি? ব্লা ব্লা ব্লা। তখন কি হবে? ওদের কি জবাব দেবো?”

মৃন্ময় কিছুক্ষন ভেবে বলল,,,,,,,

—–“বলব যে আমরা দুজন দুটো আলাদা জায়গা থেকে এসেছি। তুই গিয়েছিস তোর কোম্পানির কাজে। আর আমি গিয়েছি আমার কোম্পানির কাজে। রূপ কয়েকটা দিন ওর ফ্রেন্ডের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। আজ ই সবাই এক সাথে ঢাকা ব্যাক করি। ঢাকা পৌঁছেই দুই ভাই বাড়ি ফিরে এলাম। ব্যাস। এতে অবশ্য কারো সন্দেহ হবে না।”

মৃন্ময় কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—-“তবে রূপকে সাথে নিয়ে গেলে ভালো হতো।”

মুহিত কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,,

—–“না ভাই। রূপের শরীরটা এমনিতেই খারাপ। রূপ ফ্ল্যাটেই থাকুক। আজই সবার থেকে একেবারে বিদায় নিয়ে ঐ বাড়ি ছেড়ে চলে আসব। দোলা আপুর বিয়েতে অবশ্যই এটেন্ড করব।”

মৃন্ময় এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,,,,,

—–“ওকে চল তাহলে।”

মুহিত মুখটা কাচু মাচু করে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“ভাই এক সেকেন্ড দাঁড়া। আমি আসছি।”

মৃন্ময় মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। মুহিত ওর বেড রুমে ঢুকে রূপের পাশে থাকা মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“ভাবী…..রূপকে এক্টু দেখে রাখবেন। আমি আর ভাই ঐ বাড়ি যাচ্ছি। ঘন্টা খানিক বাদেই ফিরে আসব। আমার বেব হলেই সদর দরজাটা ভেতর থেকেই লাগিয়ে দিবেন। কেমন?”

মারু বসা থেকে উঠে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“ওকে মুহিত।তোমরা যাও।”

মুহিত রূপের দিকে একবার তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মারু মুহিতের পিছনে পিছনে রুম থেকে বের হয়ে সদর দরজার কাছে চলে গেলো। মৃন্ময় আর মুহিত সদর দরজা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই মারু দরজাটা ভিতর থেকে ভালো করে আটকে দিলো।

রূপের বেড রুমে ঢুকে মারু রূপের ল্যাকেজ থেকে এক্টা শাড়ী বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। রূপ আরামচে নাক টেনে ঘুমাচ্ছে। দিন দুনিয়ার খবর নেই ওর।

প্রায় আধ ঘন্টা পর,,,,

মুহিত আর মৃন্ময় গাড়ি নিয়ে ওদের বাড়ি পৌঁছে গেলো। গার্ডেনে গাড়িটা পার্ক করে দুজনই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। বাড়ির ড্রইং রুমে পা রাখার সাথে সাথেই মৃন্ময়ের আম্মু মায়া আহমেদ দুজনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ল। সাথে সোহেলী আহমেদ, সানায়া আর দোলা ও আছে। মায়া আহমেদ হাত দুটো বুকের উপর গুজে বেশ কঠোর কন্ঠে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,,

—-“মৃন্ময়…..দুই দিন যাবত তুমি কোথায় ছিলে?”

মৃন্ময় কাঠ কাঠ গলায় বলল,,,,,,,

—-“কেনো আম্মু? আব্বু তোমাকে কিছু বলে নি?”

—-“উনি তো আমার সাথে কথাই বলে না। তোমাদের ব্যাপারে তো একদমই না। তোমার নাম্বারে হাজারটা কল দিয়েছি নাম্বারটা বার বার ব্যস্ত আসছিলো। নিশ্চয়ই নাম্বারটা ব্লক লিস্টে রেখেছো?”

মৃন্ময় থতমত খেয়ে বলল,,,,,,,,

—-“না ব্লক লিস্টে রাখব কেনো? কাজে ব্যস্ত ছিলাম তাই সবার কলই আসার সাথে সাথে কেটে দিতাম। কেম্পানির কাজে আমাকে ঢাকার বাইরে যেতে হয়েছে। ইমার্জেন্সি ছিলো তাই কাউকে বলে যেতে পারে নি। তবে আব্বুকে বলেছি।”

মায়া আহমেদ মৃন্ময়কে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে তেজী কন্ঠে বলল,,,,,,,,

—-“পাতলা এক্টা টি শার্ট পড়ে তুমি ঢাকার বাইরে গিয়েছো তা ও আবার কোম্পানির কাজে? আমাকে বুঝাতে এসেছ?”

মৃন্ময় কিছু বলার আগে মুহিত বলে উঠল,,,,,,,

—-“আআআম্মু…. ভাইয়ার শার্ট আর কোর্ট সব আমার ফ্ল্যাটে। আমি ও কোম্পানির কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম, ফেরার সময় ঢাকা এসে দুজনেরই দেখা হয়ে যায়। তাই আমি ভাইয়াকে ফোর্স করে আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে যাই। ফ্রেশ হওয়ার সময় ভাইয়া শার্ট আর কোর্ট আমার ফ্ল্যাটেই ছেড়ে এসেছে।”

মায়া আহমেদ মুহিতের দিকে তাকিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“মুহিত….তোমার গাঁয়ের শার্টটা ও কিন্তু মৃন্ময়ের। আর এই শার্টটা পড়েই ঐ দিন মৃন্ময় বাড়ি থেকে বের হয়েছে। তুমি আমার ছেলের শার্টটা কেনো পড়লে?”

মুহিত মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো মায়া আহমেদের কথাটা মানতে পারছে না। মুহিতের মৌনতা দেখে মৃন্ময় মায়া আহমেদকে উদ্দেশ্য করে রাগ দেখিয়ে বলল,,,,,,

—-“জাস্ট শাট আপ আম্মু। মুহিত আমার ভাই। আমার শার্ট পড়ার অধিকার আছে ওর। তুমি প্লিজ আমাদের ভাই ভাইয়ের মাঝ খানে নাক গলাতে এসো না। দূরে থাকো আমাদের থেকে।”

মুহিত মাথাটা উঠিয়ে মলিন হেসে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“শার্ট টা রেখেই যাবো আম্মু। তোমার টেনশান করতে হবে না। আজই আমি ফ্ল্যাটে শিফট হচ্ছি। তাই আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে এলাম।”

দোলা তেড়ে এসে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“তোর ঐ কাল নাগিনী বউ টা কই রে? একে তো দুইদিন ধরে দেখছি না।”

মুহিত চোখ লাল করে দোলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“আমার বউ সম্পর্কে বাজে কিছু বলার আগে একশ বার ভেবে চিন্তে বলবে। তোমাদের সবাইকে আমি ওয়ার্ন করছি। নেক্সট টাইম এমন বাজে ওয়ার্ড উচ্চারন করবে তো আমি উগ্র হতে বাধ্য হবো। আমাকে উস্কালে কিন্তু তোমরা লুকানোর জায়গা ও খুঁজে পাবে না। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বের হয়ে আসবে।”

কথাগুলো বলেই মুহিত সবাইকে ক্রস করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। মুহিতের কথায় বাড়ির সব ধ্বংস মহিলারা ভয় পেয়ে গেছে। একেকটা শুকনো ঢোক গিলছে। সানায়া অশ্রুসিক্ত চোখে মুহিতের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। সানায়া এখন ও মুহিতকেই ভালেবাসে। দিন দিন মুহিতের প্রতি আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এর মাঝেই মৃন্ময় গলাটা ঝাঁকিয়ে মায়া আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“আম্মু। আজ আমি মুহিতের ফ্ল্যাটে থাকব। রূপের শরীরটা তেমন ভালো না। রাত বিরাতে কিছু হলে মুহিত একা সামলাতে পারবে না।”

মায়া আহমেদ চোখ লাল করে বলল,,,,,

—-“ওহ্ তাহলে কি তুমি ওদের বাড়ির বডিগার্ড? লাভলী সিং?”

মৃন্ময় স্বাভাবিক গলায় বলল,,,,,

—-“হুম ধরে নিতে পারো। বিপদে যদি ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানো বডিগার্ডের কাজ হয় হ্যাঁ তো আমি বডিগার্ড।”

কথাগুলো বলেই মৃন্ময় নিজের রুমে ঢুকে গেলো। মায়া আহমেদ রাগী দৃষ্টিতে মৃন্ময়ের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।

মুহিত রুমে ঢুকে ফার্স্টে মৃন্ময়ের শার্টটা খুলে নিজের এক্টা শার্ট পড়ে নিলো। এরপর কাবার্ড থেকে সব শার্ট প্যান্ট, রূপের জামা- কাপড়, ব্রাশ, অফিসের যাবতীয় সব কাগজপএ, ল্যাপটপ সব গুছিয়ে বড় এক্টা লাকেজে পুড়ে নিলো। ল্যাকেজটা এক হাতে ধরে অন্য হাতে মৃন্ময়ের শার্টটা নিয়ে মুহিত রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

সাব্বিরের রুমের কাছাকাছি গিয়ে মুহিত আচমকাই থেমে গেলো। সাব্বিরের রুমের দরজাটা হালকা ভেজানো। রুমের ভেতর থেকে এক্টা বাজে গন্ধ এসে মুহিতের নাকে ঠেকছে। স্মেলটা এতোই বাজে যে, বমি এসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মুহিত বেশ বুঝতে পারছে এটা গাঁজা বা ইয়াবা জাতীয় কিছুর গন্ধ। মুহিত তাড়াহুড়ো করে সাব্বিরের রুমটা ক্রস করে ড্রইং রুমে নেমে এলো। কয়েকটা বড় বড় শ্বাস ফেলে মুহিত সোহেলী আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“চাচী। আপনার ছেলের দিকে এক্টু নজর রাখবেন। ওর কার্য কলাপ ভালো ঠেকছে না। ভালোর জন্য বললাম। হাজার হলে ও সে আমার কাজিন। এখন থেকেই ছেলকে শুধরান। পরে না আবার হায় হায় করতে হয়।”

সোহেলী আহমেদ আগা মাথা কিছু না বুঝে বেকুব হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত সোহেলী আহমেদকে ক্রস করে মায়া আহমেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃন্ময়ের শার্টটা উনার হাতে গুজে দিয়ে বলল,,,,,,,

—-“নাও আম্মু। তোমার ছেলের শার্ট। দিয়ে গেলাম।”

চোখে জল নিয়ে মুহিত আচমকাই মায়া আহমেদের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,,

—-“আসি আম্মু। ভালো থেকো।”

মায়া আহমেদ নিচের দিকে তাকিয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“দোলার বিয়েতে এসো।”

মাঝখান থেকে দোলা খুশিতে গদগদ হয়ে মুহিতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—-“বিয়ের দুদিন আগে চলে আসবি। রূপকে ও নিয়ে আসিস।”

মুহিত মাথা নাঁড়ালো। সানায়া ন্যাকা কান্না করে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“তুমি চলে গেলে আমার কি হবে মুহিত? প্লিজ যেয়ো না তুমি। দরকার হলে রূপকে ছেড়ে দাও।”

—-“রূপকে ছাড়ার জন্য ওর হাত ধরি নি। রূপের সাথে আমার অমর সম্পর্ক। এই সম্পর্ক আজীবন অটুট থাকবে। তুমি অন্য একজনকে খুঁজে নাও। বিয়ে করো, সুখে থাকো।”

মুহিত আর দাঁড়ালো না। ড্রইং রুম ক্রস করে বাড়ির বাইরে চলে এলো। মৃন্ময় ও রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমের সবাইকে ক্রস করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। দুই ভাই ই এবার গাড়িতে উঠে পড়ল।

মুহিত ওর ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। মৃন্ময় কিছু এক্টা ভেবে মুহিতের দিকে তাকিয়ে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,,,

—–“মুহিত গাড়িটা ঘুড়া। শপিং কমপ্লেক্স চল। কিছু কেনাকাটা আছে। মারুর জন্য কয়েকটা শাড়ি কিনতে হবে।”

মুহিত গাড়িটা শপিং কমপ্লেক্সের দিকে ঘুড়িয়ে বাঁকা হেসে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“ভাই। তুই তো দারুন বাহানা বানাতে পারিস। এতো ভনীতা না করে সোজাসুজি বলে দে না ফুলসজ্জার জিনিসপএ কিনতে শপিং কমপ্লেক্স যাবি। ভাবীর জন্য শাড়ী, তোর জন্য পান্জ্ঞাবী, হরেক রকম ফুল। ব্লা ব্লা ব্লা।”

মৃন্ময় অট্ট হেসে বলল,,,,,,,

—-“তুই বুঝবি বলেই তো ঘুড়িয়ে বললাম। এসব বিষয়ে তো তুই আমার থেকে ভালো জানিস।”

—-“হুম। বয়সে ছোট হলে ও বিয়েটা কিন্তু আমি তোর আগে করেছি।”

মৃন্ময় হু হা করে হেসে বলল,,,,,

—-“হুম চল এবার।”

প্রায় পনেরো মিনিট পর দুজনই শপিং কমপ্লেক্স পৌঁছে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে ওরা কমপ্লেক্সের ভিতর ঢুকে গেলো।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

প্রায় পনেরো মিনিট পর দুজনই শপিং কমপ্লেক্স পৌঁছে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে ওরা কমপ্লেক্সের ভিতর ঢুকে গেলো।

মেয়েদের শো রুমে ঢুকে মৃন্ময় আর মুহিত মারুর জন্য শাড়ি দেখা শুরু করল। দুজনই আলু থালু ভাবে কয়েক ডজন শাড়ী এদিক সেদিক ছিটিয়ে গোছানো শো রুমের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। দুজনই দুটো করে শাড়ী হাতে নিচ্ছে পছন্দ হচ্ছে না তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক সেদিক ছুড়ে মারছে। শো রুমের মেয়েরা দাঁতে দাঁত চেঁপে সব অত্যাচার সহ্য করে নিচ্ছে। আশে পাশের কাস্টমাররা ও অবাক হয়ে মুহিত আর মৃন্ময়ের কান্ড দেখছে। মুহিত এক্টা শাড়ী হাতে নিয়ে নাক ছিটকে শো রুমের এক্টা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এ্যাঁ কি পঁচা কালেকশান। এসব শাড়ী আমার ভাবী পড়বে? নো নো নো। আরো ভালো কোয়ালিটির শাড়ি দেখান। যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। আজ আমার ভাইয়ের ফুলসজ্জা বললে কথা।”

মৃন্ময় ও মুহিতের সাথে তাল মিলিয়ে বলল,,,,,,

—-“হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো কালেকশান দেখান। কি সব ফালতু ডিজাইন। আমার ই পছন্দ হচ্ছে না আর আমার ওয়াইফের তো আরো আগে পছন্দ হবে না।”

মেয়েটা মনে মনে মুহিত আর মৃন্ময়ের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,,,

—-“এ্যাঁ। কাউয়া মার্কা চোখ নিয়ে এসেছে শাড়ী কিনতে। সুন্দর জিনিসটাই বুঝে না। কাক যেমন মুরগির আঁত ভুড়ি খুঁজে। এ দুটো ও এসেছে ফালতু মার্কা শাড়ী খুঁজতে। যত্তো সব। আমার এত্তো সুন্দর সুন্দর শাড়ীর কালেকশানকে ফালতু বলছে। ইচ্ছে তো করছে দুটোকে কিক মেরে আমার শো রুম থেকে বের করে দিতে।”

মেয়েটার বিড়বিড়ানি দেখে মুহিত এক ভ্রু উঁচু করে
মেয়েটাকে বলল,,,,,,

—-“এই যে, ম্যাম কি বিড়বিড় করছেন? সুন্দর দেখে শাড়ী দেখান।”

মেয়েটা থতমত খেয়ে বলল,,,,,,

—–“না না না স্যার। কি বিড়বিড় করব? আমি তো ভাবছিলাম কোন শাড়ী গুলো আপনাদের দেখাবো।”

মেয়েটা কিছুক্ষন থেমে আবার বলল,,,,,,,

—-“আচ্ছা ভাইয়া আপনাদের যদি কোনো আপওি না থাকে তাহলে কি আমি ভাবীর জন্য শাড়ী চোজ করে দিতে পারি? একচুয়েলি আমি ও তো মেয়ে, তাই ভাবীর চয়েসটা ভালো বুঝব।”

মৃন্ময় কিছু বলার আগেই মুহিত বলে উঠল,,,,,

—-“হুম হুম চোজ করে দিন। দেখি আপনার পছন্দ কেমন।”

মেয়েটা মৃদ্যু হেসে মেরুন কালারের এক্টা কাতান কাপড় প্লাস নীল কালার শাড়ী এনে মুহিতের হাতে তুলে দিলো। দুজনই শাড়ি গুলো খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“বাহ দারুন হয়েছে। আপনার চয়েস আছে দেখছি।”

মেয়েটা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মুহিত আর মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। মৃন্ময় মৃদ্যু হেসে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আপু আরেকটা হেল্প করবেন প্লিজ? শাড়ি গুলোর সাথে মিলিয়ে দুটো অরনামেন্টস চোজ করে দিবেন? আসলে আমরা এসব বিষয়ে তেমন বুঝি না। তাই আপনাকে বললাম।”

মেয়েটা মাথা নাঁড়িয়ে পাশের কসমেটিকস দোকান থেকে পাথরের ডিজাইন করা ইউনিক কানে, গলার দু সেট অরনামেন্টস এনে মৃন্ময়ের হাতে ধরিয়ে দিলো। মৃন্ময় খুশি খুশি মনে শাড়ীর বিল আর অরনামেন্টসের বিল চুকিয়ে ছেলেদের শো রুমে ঢুকে গেলো। লাল রঙ্গের এক্টা পান্জ্ঞাবী কিনে মৃন্ময় মুহিতের হাত ধরে ফুলের দোকানে চলে গেলো। দুই ভাই মিলে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা ফুল, ক্যান্ডেল সব মিলিয়ে প্রায় দু ব্যাগের মতো ফুল নিয়ে বেশ চনমনে মুডে শপিং কমপ্লেক্স থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে ফ্ল্যাটের দিকে রওনা হলো।

প্রায় আধ ঘন্টা পর। গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো মুহিতের ফ্ল্যাটের সামনে। দুজনই গাড়ি থেকে নেমে ল্যাকেজ পএ, শপিং ব্যাগ, ফুলের ব্যাগ সব নিয়ে ফ্ল্যাটের ভিতর ঢুকে গেলো। দুতলায় উঠে ওরা রুমের দরজা ধাক্কানোর সাথে সাথে মারু এসে দরজা খুলে দিলো। ফুল হাতে মৃন্ময়কে দেখে মারু খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। কালো রঙ্গের শাড়িতে মারুকে দেখতে দারুন লাগছে। মৃন্ময় এক দৃষ্টিতে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মারু লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের চোখাচোখি দেখে মুহিত বাঁকা হেসে মৃন্ময়কে বলল,,,,,,,

—–“শুভদৃষ্টি দেখি দরজায় দাঁড়িয়েই সেরে ফেলছিস। ফুলসজ্জার জন্য কিছু রাখ।”

মৃন্ময় আর মারু থতমত খেয়ে গেলো। আচমকাই মারু মুহিতের হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলো ছিনিয়ে সোজা রূপের রুমে ঢুকে গেলো। মৃন্ময় আর মুহিত ফুল হাতে নিয়ে ড্রইং রুমে ঢুকে সদর দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে মুহিতের পাশের রুমটায় চলে গেলো। ঐ রুমটাতেই আজ মারু আর মৃন্ময় থাকবে। রুমে ঢুকেই মুহিত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ঘড়িতে রাত নয়টা বাজছে। মুহিত আর দেরি না করে মৃন্ময়ের ফুলসজ্জার খাট সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আজ সবাই বেশ ক্লান্ত। সকাল থেকেই সবার উপর ধকল যাচ্ছে। সবারই বিশ্রাম দরকার। মৃন্ময় ও মুহিতের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছে।

ঐদিকে মারু রূপের রুমে ঢুকে শপিং ব্যাগ থেকে শাড়ী দুটো বের করে অবাক হয়ে শাড়ী গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মারাত্নক দেখতে শাড়ি গুলো। যেমন কিউট কালার তেমনি কিউট ডিজাইন। মেরুন কাতানটা দেখতে ভারী সুন্দর। নীল শাড়িটা ও সুন্দর। ছোট ছোট সাদা পাথরের কাজ শাড়িটাতে। মারু শাড়ী গুলো দেখছে আর লজ্জায় মুর্ছা যাচ্ছে। এক্টু পরেই ওর ফুলসজ্জা হবে।

এর মাঝেই রূপের ঘুম ভাঙ্গল। পিটপিট চোখে রূপ পুরো রুমটায় চোখ বুলাচ্ছে। মারুর দিকে চোখ পড়তেই রূপ শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ল। ঢুলুঢুলু চোখে রূপ মারুর কান্ড কীর্তি দেখছে। মারু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি গুলো গাঁয়ের উপরে রেখে ট্রায়াল দিচ্ছে। রূপ চোখ গুলো বুজে অস্পষ্ট ভাষায় মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মারু….মুহিত কোথায় রে?”

মারু আয়না থেকে সরে শাড়ি দুটো হাতে নিয়ে রূপের পাশে বসে বেশ এক্সাইটেড হয়ে বলল,,,,,,,

—-“এই রূপ জানিস আজ আমার ফুলসজ্জা।”

রূপ চোখ জোড়া খুলে বলল,,,,,

—-“কে বলল?”

—-“কে আবার? মুহিত আর মৃন্ময়।”

—-“না আজ কিছুতেই তোর ফুলসজ্জা হবে না।”

—-“কেনো কেনো?”

—-“দুই বেস্টু এক দিনে ফুলসজ্জা করব।”

—-“তাহলে তোরা ও আজ করে নে। ব্যাস লেটা চুকে গেলো।”

—-“ধ্যাত আমাদের তো এখনো তিন কবুল হয় নি। শুধু রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়েছে।”

—-“এ্যাঁ।”

—-“এ্যাঁ না হ্যাঁ।”

—-“না আমি মানি না। আজই আমার আর মৃন্ময়ের ফুলসজ্জা হবে।”

—-“তুই বললেই হলো?”

—-“হ্যাঁ হলো। আমার দাবি মানতে হবে ব্যাস শেষ।”

—-“তাহলে তোরা ও আজ তিন কবুল পড়ে নে। কে বারণ করেছে?”

—-“এতো সহজ না। কাজী ডাকতে হবে।”

—-“হ্যাঁ তো ডেকে নে।”

—-“রান্না করতে পারবি? এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আমি রান্না করে কাজীকে খাওয়াতে পারব না।”

—-“শোন রূপ এতো কথা বুঝি না আজ আমাদের ফুলসজ্জা হবেই হবে।”

—-“শোন মারু আমি ও এতো কথা বুঝি না। আজ তোদের ফুলসজ্জা হবে না ব্যাস শেষ।”

দুজনেই তুমুল ঝগড়া লেগে গেলো। ওদের চেঁচামেচির আওয়াজ দেয়াল ভেদ করে পাশের রুমে চলে গেলো। রূপের গলা পেয়ে মুহিত পেরেশান হয়ে দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা রুপদের রুমে চলে এলো। মারু আর রূপ ঝগড়া করেই যাচ্ছে। মুহিত ওদের ঝগড়া দেখে হাসবে না কাঁদবে বুঝছে না। দুজন ঝগড়াতে এতোটাই মগ্ন যে রুমে তৃতীয় কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছে না। আচমকাই মুহিত রূপকে কোলে তুলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মারু যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।

মুহিত রূপকে কোলে তুলে ছাদের দিকে যাচ্ছে। রূপ ধস্তাধস্তি করছে আর মুহিতকে বলছে,,,,,,,

—-“ধ্যাত ছাড়ো আমায়। মারুর কাছে যেতে দাও। ওর সাথে আমার বোঝা পড়া আছে।”

—-“কিসের বোঝা পড়া রূপ?”

—-“ও তুমি বুঝবে না। ছাড়ো আমায়।”

মুহিত কোনো কথা না বলে নিশব্দে রূপকে কোলে তুলে ছাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রূপ মুহিতের হাতের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। খামচি, চিমটি দিয়ে। মুহিত এক্টা টু শব্দ ও করছে না। কেবল সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে মুহিত ছাদে চলে এলো। ছাদের দরজা খুলে মুহিত রূপকে নিয়ে ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো।

আজ আকাশে সম্পূর্ণ চাঁদ উঠেছে।থালার মতো চাঁদটা আজ জ্বলজ্বল করে আকাশে জ্বলছে। রূপ চিমটি, খামচি থামিয়ে গোল চাঁদটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আচমকাই রূপের চোখে পানি চলে এলো। চাঁদের দুপাশে দুটো তাঁরা খুব জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে তাঁরা গুলো হাসছে। চোখে জল নিয়ে রূপ তাঁরা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আনমনেই রূপ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,,,,,

—–“মুহিত…..আমি আমার আম্মু, আব্বুকে দেখছি। ওরা আমাকে দেখে হাসছে। সব সময় ওরা আমাকে দেখলে ঠিক এভাবেই হাসে। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি। আম্মু, আব্বুকে আরো কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে মুহিত। খুব শীঘ্রই আমি ওদের কাছে যেতে চাই। মুহিত তুমি আমাকে নিয়ে যাবে ওদের কাছে? ওদের এক্টু ছুঁয়ে আসব। ব্যাস এটুকুই।”

মুহিত ছলছল চোখে রূপকে আরো টাইট করে বুকের সাথে মিশিয়ে বলল,,,,,,,

—-“তাঁরা দের ছোঁয়া যায় না রূপ। যদি যেতো তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে নিয়ে যেতাম। ওরা দূর থেকেই সুন্দর।

মুহিত কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—-“এই শত সহস্র তাঁরার মাঝে আমি ও আমার আম্মুকে দেখছি রূপ। তবে ছোঁয়ার চেষ্টা করছি না। এ আমাদের বৃথা চেষ্টা। তাই নিজেকে দমিয়ে রাখাই শ্রেয়। উনাদের জন্য না কেঁদে দোয়া করো রূপ। উনারা দোয়া পেলে খুশি হবে। কাঁদলে কষ্ট পাবে।”

রূপ মুহিতকে ঝাপটে ধরে হেচকি তুলে কাঁদছে। রূপকে কোল থেকে নামিয়ে মুহিত রূপের মুখটা উঁচু করে রূপের চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে রূপের গালে হাত রেখে বলল,,,,,,,

—-“কাঁদছ কেনো রূপ? আমাকে কষ্ট দিতে তোমার খুব ভাল্লাগছে তাই না?”

রূপ মাথা নাঁড়িয়ে না বুঝালো।

—-“তাহলে কান্না থামাও। আর ফুলসজ্জার জন্য রেডি হও।”

রূপ নাক টেনে অবাক হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আমাদের তো এখনো তিন কবুল হয় নি মুহিত।”

মুহিত কিছুটা কঠোর কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,

—-“তাহলে ভাবীর সাথে ঝগড়া করছিলে কেনো? ভাবীদের তো তিন কবুল হয়ে গেছে। সো ওরা আজ ফুলসজ্জা করতেই পারে। তাছাড়া মৃন্ময় ভাইয়া আমার বড় ভাই। আগে উনার বাচ্চা কাচ্চা হবে এরপর আমার।”

রূপ আবারো ঠোঁট উল্টিয়ে কেঁদে বলল,,,,,

—-“তুমি আমাকে ধমকাচ্ছ কেনো মুহিত? আমি তো মারুর সাথে মজা করছিলাম।”

মুহিত হাসি চেঁপে রূপের গালে লম্বা এক্টা চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,

—-“আচ্ছা আর কাঁদতে হবে না। এবার নিচে চলো। ভাবীকে রেডি করিয়ে দাও। অনেক রাত হয়েছে। আ’ম সো টায়ার্ড। লম্বা এক্টা ঘুম দিতে হবে।”

রূপ পেটে হাত দিয়ে মুখটা কাচুমাচু করে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আমার ক্ষিদে পেয়েছে মুহিত।”

মুহিত বেশ বুঝতে পেরেছে বমি করার দরুন রূপের পেটটা খালি হয়ে গেছে। মুহিত বেশ ব্যস্ত কন্ঠে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“আচ্ছা নিচে চলো। আমি খাবার আনছি।”

মুহিত রূপের হাত ধরে ছাঁদ থেকে নেমে যেই না ওর ফ্ল্যাটে ঢুকতে যাবে অমনি পিছন থেকে আমজাদ চৌধুরী এবং উনার ওয়াইফ মারজানা চৌধুরী হাতে দুই বক্স খাবার নিয়ে মুহিতকে পেছন থেকে ডেকে বলল,,,,,,,,

—-“এই মুহিত দাঁড়াও।”

মুহিত আর রূপ ফ্ল্যাটের দরজায় হাত দিয়ে পিছু ফিরে তাকালো। আমজাদ চৌধুরী আর সাবরিনা চৌধুরীকে দেখে মুহিত মুচকি হেসে বলল,,,,,,,

—-“আরে আঙ্কেল, আন্টি আপনারা? প্লিজ ভেতরে আসুন।”

মারজানা চৌধুরী বক্স দুটো মুহিত আর রূপের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“দুটো বক্সেই হালকা খাবার আছে। তোমরা সবাই মিলে খেয়ে নিও। মাএ রান্না করে নিয়ে এলাম। নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছ। হয়তো বাজার ও করো নি। বাড়ির মালিক হিসেবে এটা আমাদের কর্তব্য।”

রূপ মলিন হেসে বলল,,,,,,,,

—-“কি দরকার ছিলো আন্টি এতো কষ্ট করার। আমরা বাহির থেকে খাবার এনে খেয়ে নিতাম”

মারজানা চৌধুরী রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“এটাই তো প্রবলেম। বাইরের খাবার খেলে শরীর খারাপ হবে। এজন্যই তো তাড়াহুড়ো করে নিয়ে এলাম। তাছাড়া তোমার শরীরটা ও তেমন ভালো না। আমজাদ বলল। তাই তোমাকে দেখতে ও চলে এলাম। এখন কেমন আছো মা?”

—-“এখন ভালো আছি আন্টি। প্লিজ আপনারা ভেতরে আসুন।”

—-“না মা। আজ না। রুমে অনেক কাজ পড়ে আছে। তোমরা যাও। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

আমজাদ চৌধুরী ও তাল মিলিয়ে বলল,,,,,,,

—-“হ্যাঁ যাও তোমরা। খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নাও। কাল সকালে কথা হবে।”

মুহিত আর রূপ মুচকি হেসে মাথা নাঁড়ালো। উনারা দুজন মুহিত আর রূপের দিকে একবার তাকিয়ে নিচতলায় চলে গেলো। মুহিত আর রূপ উনাদের যাওয়ার পথে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রুমে ঢুকে গেলো। ড্রাইনিং টেবিলের উপর খাবারের বক্সগুলো রেখে রূপ চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,

—-“মারু, মৃন্ময় ভাইয়া….. তোমরা কোথায়? তাড়াতাড়ি ড্রইং রুমে চলে এসো।”

রূপের চেঁচামেচিতে মারু আর মৃন্ময় দুজন দু রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে এসে জড় হলো। মুহিত চারটে প্লেইটে খাবার সার্ভ করছে। দুটো বক্সেই ঠাঁসা ঠাঁসা বিরিয়ানী ছিলো। বিরিয়ানীর ঘ্রাণে তো রূপ পাগল হয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে নাক দিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। রূপের কান্ড দেখে মুহিত মিটিমিটি হাসছে। রূপ কয়েকটা ঢোক গিলে মারু আর মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“চলো চলো তাড়াতাড়ি বসো। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

মৃন্ময় এক ভ্রু উঁচু করে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“খাবার কে দিলো?”

মুহিত রূপকে চেয়ারে বসিয়ে রূপের মুখে চামচ দিয়ে বিরিয়ানী পুড়ে দিচ্ছে আর মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলছে,,,,,,,,,

—-“আঙ্কেল, আন্টি দিয়ে গেছে। বস খা।”

রূপ মারুর হাত ধরে টেনে মারুকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। মৃন্ময় ও মারুর পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ল। প্রায় বিশ মিনিট পর সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। রূপ আর মারু ডাইনিং টেবিল গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকে গেলো। মারুকে এখন সাজানো হবে। মুহিত আর মৃন্ময় এখনো ফুলসজ্জার খাট সাজাচ্ছে। চারিদিকে ক্যান্ডেল, মাঝ খানে ফুলসজ্জিত খাট। সব মিলিয়ে ওয়াও।

মারু মেরুন কালার শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে বসে আছে। রূপ মারুর চোখে আই সেডো পড়িয়ে দিচ্ছে। পালাক্রমে কাজল, লিপস্টিক, চুড়ি, শাড়ির সাথে ম্যাচ করা অরনামেন্টস, খোঁপায় গাজরা ফুল সব মিলিয়ে মারুকে খু্ব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিলো রূপ। মারু আয়নার দিকে তাকিয়ে লজ্জা মাখা হাসি দিচ্ছে।

মারুর সাজ কমপ্লিট হলেই মুহিত দরজা ঠেলে রুমে ঢুকল। রুমে ঢুকেই মুহিত রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,,,

—–“রূপ……ভাবীকে সাজানো হয়েছে???”

রূপ পিছু ফিরে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—-“হুম….কমপ্লিট।”

—-“ওকে তাহলে ভাবীকে নিয়ে পাশের রুমে চলে এসো।”

কথাগুলো বলেই মুহিত চলে গেলো। রূপ মারুকে বসা থেকে উঠিয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,,,,,,,

—–“বেশি রাত জাগিস না কেমন? শরীরের পক্ষে ভালো না। কাল সকাল দশটার আগে তোদের জাগাবো না। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারিস।”

মারু প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,,

—-“রূপ তুই কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছিস। ভুলে যাস না আমি তোর বড় ভাবী।”

রূপ হু হা করে হেসে মারুকে নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে আর বলছে,,,,,,,

—-“ওকে ভাবী আমি আর বাড়াবাড়ি করব না। এবার চলুন।”

রূপ মারুকে নিয়ে মৃন্ময়ের রুমে চলে এলো। রুমে ঢুকেই রূপ অবাক হয়ে গেলো। চারিদিকে ক্যান্ডেলের ঝাপসা আলো। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলো। বেড ভর্তি লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধ্যা ফুলের সুঘ্রান সব মিলিয়ে দারুন লাগছে রুমটাকে। রূপ ড্যাব ড্যাব করে পুরো রুমটা চোখ বুলিয়ে দেখছে।

মৃন্ময় লাল পান্জ্ঞাবী পড়ে জামাই সাজে মুহিতের সাথে রুমের ব্যালকনীতে দাঁড়িয়ে আছে। মৃন্ময়কে জামাই সাজে দারুন লাগছে। রূপ আর মারুকে দেখে মুহিত মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মারুকে বেডের উপর বসিয়ে রূপ কোমড়ে হাত দিয়ে মৃন্ময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,

—-“ভাইয়া টাকা বের করো।”

মৃন্ময় ভ্রু যুগল কুঁচকে বলল,,,,,,

—-“কিসের টাকা?”

—-“এই যে, তোমার বউকে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে দিলাম। তোমার রুম অব্দি পৌঁছে দিলাম।”

—-“ছোট বোন হিসেবে করেছিস এতে আবার চাঁদা লাগে নাকি?”

—-“চাঁদা কেনো বলছ? এটা তোমার ছোট বোনের আবদার।”

রূপ এবার মৃন্ময়ের দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,,,,

—-“দাও বলছি।”

মৃন্ময় চাঁপে পড়ে পকেট থেকে দুটো এক হাজার টাকার নোট বের করে রূপের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,

—-“ফুট এবার।”

রূপ টাকা গুলো হাতে নিয়ে অট্ট হেসে মৃন্ময়কে ভেংচি কেটে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রুম থেকে বের হয়ে রূপ বাঁকা হেসে মৃন্ময়ের রুমের দরজাটা বাহির থেকে খিল লাগিয়ে দিলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে রূপ পাশের রুমে চলে গেলো।

মৃন্ময় গলাটা ঝাঁকিয়ে পান্জ্ঞাবীর কলারটা উঁচু করে মারুর পাশে এসে বসল। মারু বড় ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। লজ্জায় সে মুর্ছা যাচ্ছে। এই প্রথম মৃন্ময়ের উপস্থিতি মারুকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। মৃন্ময় মারুর ঘোমটা টা মুখ থেকে সরিয়ে মারুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“অপূর্ব লাগছে তোমাকে।”

মারু মৃন্ময়ের চোখে চোখ মেলাতে পারছে না। মাথাটা নিচু করে রেখেছে। মৃন্ময় এক্টা হেচকা টান দিয়ে মারুকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। মারু চোখ বন্ধ করে মৃন্ময়ের বুকে নিজেকে মিলিয়ে নিলো। মৃন্ময় মারুর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। মৃন্ময়ের প্রতিটা স্পর্শে মারু কেঁপে কেঁপে উঠছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর মৃন্ময় মারুকে নিয়ে বেডে শুয়ে পড়ল। রাত বাড়ার সাথে সাথে ওদের ভালোবাসা ও গভীর হতে লাগল।

অন্যদিকে,,,,,,

রূপ রুমে ঢুকে মৃন্ময়ের দেওয়া টাকা গুলো বার বার করে গুনছে। মুহিত ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুচছে আর অবাক হয়ে রূপের কান্ড দেখছে। রূপ টাকা গুলো গুনতে গুনতে ধপাস হয়ে বেডে শুয়ে পড়ল। মুহিত রুমের দরজা লাগিয়ে লাইট অফ করে রূপের পাশে শুয়ে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“টাকা গুলো কে দিলো?”

রূপ টাকা গুলো বালিশের তলায় রেখে মুহিতকে ঝাপটে ধরে বেশ আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“মৃন্ময় ভাইয়া দিয়েছে।”

—-“তুমি এতোক্ষন ধরে ওদের রুমে এসব করছিলে?

—-“হুম করেছি তো কি হয়েছে? টাকা টা আমার দরকার লাগবে।”

—-“কি দরকার? আমার বললেই তো হতো। আমি দিতাম।”

—-“আমি জানি তোমার কাছে এখন টাকা নেই। জমানো সব টাকা দিয়ে তুমি ফ্ল্যাটের ভাড়া এডভান্স করে দিয়েছ।”

মুহিত কিছু বলল না। চুপ হয়ে গেলো। রূপ বুঝতে পেরেছে মুহিতের মন খারাপ হয়েছে। রূপ মুচকি হেসে মুহিতের চোখে, মুখে অসংখ্য চুমো খাচ্ছে আর বলছে,,,,,,,

—-“কাল আমি বাজার করব মুহিত। তোমার তো আবার অফিস আছে। কাল থেকে নতুন জবে জয়েনিং তোমার। আ’ম সো এক্সাইটেড মুহিত।”

মুহিত শুধু মলিন হাসল। আচমকাই রূপ মুহিতের ঠোঁটে কামড় দিয়ে বলল,,,,,,

—–“এতো আস্তে হাসলে কেনো? জোরে জোরে হাসো। আমি তোমার হাসি দেখতে চাই।”

মুহিত কথা ঘুড়ানোর জন্য বলল,,,,,

—–“তোমাকে বাজারে যেতে হবে না রূপ। আমি বাজার করে এরপর অফিসে যাবো।”

রূপ কিছুটা রেগে বলল,,,,,

—-“চুপ আর কোনো কথা না। এত্তো সকালে উঠে তোমাকে বাজারে যেতে হবে না। তোমরা অফিস যাওয়ার পর আমি আর মারু মিলে বাজার করতে যাবো। কথা না বাড়িয়ে ঘুমাও এখন।”

মুহিত রূপকে ঝাপটে ধরে চোখের জল ছেড়ে দিলো। তবে রূপের অগোচড়ে। রূপ যেনো বুঝতে না পারে। রূপ খুব টাইট করে মুহিতকে ধরে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো। মুহিত ও রূপকে ধরে চোখ জোড়া বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরের দিন,,,,,

#চলবে,,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here