এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ৩৪+৩৫

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#এক্সট্রা_পার্ট
#নিশাত_জাহান_নিশি

পরের দিন,,,,,,

সকাল আটটা। জানালা দিয়ে আসা রোদের আলোতে মুহিতের ঘুম ভাঙ্গল। চোখ খুলে মুহিত রূপকে উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে থাকতে দেখল। মুহিত বেশ ফুড়ফুড়া মোড নিয়ে রূপের দিকে এগিয়ে গিয়ে রূপের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। রূপ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাই কিছু টের পাচ্ছে না। মুহিত রূপের গলায় লম্বা এক্টা চুমো খেয়ে রূপকে ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রূপ ঘুমুচ্ছে বলে রূপকে আর জ্বালায় নি সে।

ওয়াশরুমে ঢুকে মুহিত তাড়াহুড়ো করে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেলো। ঘুমন্ত রূপের দিকে একবার তাকিয়ে মুহিত ঝড়ের গতিতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বাড়ি ভর্তি লোকজনকে আড়াল করে মুহিত এক ছুটে বাড়ির সদর দরজা পাড় হয়ে গেলো। বাড়ির মেইন গেইট ক্রস করে মুহিত এক ঝটকায় কোথাও এক্টা হারিয়ে গেলো। সাকিব মুহিতকে ফলো করতে গিয়ে ও থেমে গেলো। বাঁকা হেসে সাকিব মুহিতের যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“তোকে ফলো করে আর লাভ নেই মুহিত। রূপের মনে তোর জন্য ঘৃণার বিচ বুনে দিয়েছি। সাথে তোর শরীরে ও ড্রাগসের নেশা ঢুকিয়ে দিয়েছি। দুজনেরই পতন নিশ্চিত। খুব দ্রুত তোদের গেইম শেষ হবে।”

সাকিব অট্ট হেসে পিছনে ঘুড়ে বাড়ির রাস্তায় মোড় নিলো। মুহিত এক্টা চিপা রাস্তায় ঢুকে এদিক সেদিক তাকিয়ে সাকিবের উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে। সাকিবকে কোথাও দেখতে না পেয়ে মুহিত এক্টা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে কারোর নাম্বারে কয়েকটা টেক্সট করে দিলো। মুহিতের চোখে, মুখে অস্বস্তির ভাব। শার্টের উপরের বাটন টা খুলে মুহিত রূপের নখের আঁচড়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,,,,,

—–“আমি তোকে ছাড়ব না সাকিব। সাথে ঐ সানায়াকে ও না। তোদের দুজনকেই আমি চরম শাস্তি দিবো। শুধুমাএ তোদের জন্য আমাকে রূপের সাথে এতোটা হিংস্র ব্যবহার করতে হলো। না চাইতে ও রূপের উপর হিংস্র জানোয়ারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে হলো। পুরোটাই নেশার ঘোরে। যদি ও রূপ আর আমি পুরোটা নাটক করেছি। এরপরে ও আমি রূপকে কষ্ট দিয়েছি। ড্রাগসের নেশা আমাকে হিংস্র হতে বাধ্য করেছে। সব জেনে ও নাটকটা করতে হলো। চাইলে ও তোদের সব প্ল্যান আমি ভেস্তে দিতে পারছিলাম না। কারণ আমার কাছে যথেষ্ট প্রমান ছিলো না। তবে আজ আমার কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে। সব আমি এক এক করে জোগাড় করব। তোদের ভাই বোনকে তৃপ্তি দেওয়ার জন্য আমাকে এতোটা নিচে নামতে হলো। এর শোধ তো আমি নিয়েই ছাড়ব। তোদের আসল মুখোশ আজই আমি বাড়ির সবার সামন ফাঁস করব। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।”

মুহিত কথা গুলো বলছে আর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কারো আসার জন্য ওয়েট করছে। রাগে, দুঃখে মুহিতের চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। রীতি মতো সামনের চুল গুলো ধরে টানছে সে। রাগ যেনো তার কিছুতেই কন্ট্রোল হচ্ছে না।

ঐদিকে,,,,,,,

রূপ ঘুম থেকে উঠে পিটপিট চোখে পুরো রুমটায় চোখ বুলালো। পাশে মুহিতকে দেখতে না পেয়ে রূপ দরজার দিকটায় তাকালো। দরজায় দিকটায় কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রূপ আবারো হেচকি তুলে কান্না জুড়ে দিলো। রূপ অনবরত কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,

—–“আমি তোমাকে আর বিশ্বাস করতে পারব না মুহিত। আমাদের মধ্যে যা ভালোবাসা ছিলো সব শেষ হয়ে গেলো। তোমার করা এক্টা ভুলের জন্য আমাদের মধ্যকার স্বামী, স্ত্রীর সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেলো।”

কথা গুলো বলেই রূপ ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে কাবার্ডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে ফোনটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বিয়ে বাড়ি এতক্ষনে জমজমাট হয়ে উঠেছে। পুরো ড্রইং রুম জুড়ে মেহমান গিজগিজ করছে। মারু ড্রইং রুমের এক্টা কোণায় বসে বিভিন্ন সাজের জিনিসপএ গুছাচ্ছে। সাথে সানায়া ও আছে। সাকিব বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।

রূপ সবার পাশ কাটিয়ে খুব সাবধানে পা ফেলে বাড়ি থেকে বের হতে চাইছে। লোকজনের ভীড়ে নিজেকে মিশিয়ে নিতে চাইছে। কেউ যেনো রূপকে ভীড়ের মধ্যে আলাদা করতে না পারে। মুখটা শাড়ীর আঁচল দিয়ে ঢেকে রূপ মাথাটা নিচু করে নিশব্দে দ্রুত পায়ে হেঁটে সাকিবকে ক্রস করে দৌঁড়ে বাড়ির মেইন গেইটে চলে গেলো। রূপ হাঁফাতে হাঁফাতে পিছনে ফিরে এক এক করে সবাইকে পর্যবেক্ষন করছে। বিশেষ করে সাকিবকে। সাকিব কিছু আন্দাজ করতে পারে নি। সে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। রূপ কয়েকটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে সামনে ফিরে রাস্তার ফুটপাত ধরে দৌঁড়াতে লাগল।

রূপ শাড়ির কুচি ধরে দৌঁড়াচ্ছে আর কাল রাতের ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে যাচ্ছে। কাল রাতে আসলে কি হয়েছিলো তাই রূপ কল্পনা করছে।

ফ্ল্যাশব্যাক,,,,,,

কাল রাতে মুহিত আর রূপ রুম থেকে বের হয়ে যখন হলুদের স্টেইজে যাচ্ছিলো। তখনই রূপদের অপজিট পাশের রুমটায় ওরা কারো গুন গুন আওয়াজ শুনতে পেলো। রূপ আর মুহিত কান পেতে কথা গুলো শোনার চেষ্টা করছিলো। দুজনই চুপ হয়ে নিশব্দে পা ফেলে রুমের দরজায় কান লাগিয়ে দিলো। রুম থেকে সানায়া আর সাকিবের কন্ঠ স্বর ভেসে আসছে। দুজনই ফিসফিস করে কথা বলছে। সাকিব কিছুটা উওেজিত হয়ে সানায়াকে বলছে,,,,,,,

—–“স্যুপের বাটিটায় সম্পূর্ণ ড্রাগসটা মিশিয়েছিস তো?”

—-“হুম ভাই মিশয়েছি। রূপ আর মুহিত কিছুতেই ধরতে পারবে না স্যুপটায় ড্রাগস ছিলো।”

—–“ওকে তুই স্টেইজে যা। আমি সুযোগ বুঝে রূপদের পুরো রুমটায় সিসি ক্যামেরা ফিট করে আসব। ওয়াশরুম ও বাদ দিবো না।”

—-“ওয়াশরুমে ও লাগাবি?”

—–“হুম লাগাবো। ভিডিও অফ করে সাউন্ড অন করে রাখব তাহলেই হবে।”

—-“রূপ আর মুহিত কি এখন রুম থেকে বের হবে? যদি বের না হয় তাহলে তো খুব রিস্ক হয়ে যাবে।”

—–“আমার মনে হয় না মুহিত এভাবে ঘাপটি মেরে রুমে বসে থাকবে। একবার না একবার রুম থেকে বের হবেই হবে। তখনই না হয় ক্যামেরা গুলো লাগিয়ে আসব।”

সানায়া বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—–“উফফ ভাই কি যে খুশি লাগছে তোকে বলে বুঝাতে পারব না। ফাইনালী রূপ আর মুহিত আলাদা হবে। আজকের পর নিশ্চয়ই রূপ, মুহিতকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে। আর তখনই আমি মুহিতের লাইফে এন্ট্রি নিবো। আর তুই রূপের।”

—–“এতো খুশি হস না তো। এখনো পুরো কাজ বাকি আছে। প্ল্যানটা আগে সাকসেসফুল হয়ে নিক তারপর না হয় খশি হস ওকে?”

সানায়া মৃদু হেসে দরজার দিকে অগ্রসর হলো। রূপ আর মুহিত এক ঝটকায় দরজার কাছ থেকে সরে দুজন দুদিকে ছিটকে গেলো। সানায়া হেলতে দুলতে রুম থেকে বের হয়ে সোজা হলুদের স্টেইজে চলে গেলো। মুহিত আর মারু ও চট জলদি রুমের সামনে থেকে সরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে হলুদের স্টেইজে চলে গেলো। মুহিত আর রূপের অনুপস্থিতিতে সাকিব রূপদের রুমে ঢুকে সিসি ক্যামেরা ফিট করে রুম থেকে বের হয়ে সোজা হলুদের স্টেইজে চলে গেলো।

দোলাকে হলুদ লাগানোর পর মুহিত আর রূপ সবার আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো। মুহিত ফিসফিসিয়ে রূপের কানে কানে বলল,,,,,,

—-“রূপ তুমি ভয় পেও না। সাকিব আর সানায়া যা করতে চাইছে ওদের করতে দাও। আমি ও চাই ওদের খেলাটা জমুক। ওদের খেলা শেষ হলেই আমরা টেনে হিছড়ে ওদের রূপটা সবার সামনে আনব। আদ্রিতাকে ও আমি ছাড়ব না। আদ্রিতা ও সাকিব আর সানায়ার সাথে মিলে আমাদের আলাদা করতে চাইছে। সবার খেলা আমি নিজ হাতে শেষ করব। এর জন্য আমাদের একদিন ওয়েট করতে হবে। দোলা আপুর বিয়ে হওয়া অব্দি আমাদের নাটকটা করে যেতে হবে। আমি চাই না এসব উটকো ঝামেলার জন্য দোলা আপুর বিয়েতে কোনো প্রকার ঝামেলা আসুক।”

মুহিত কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—–” আজ রাতে আমি তোমার সাথে যা যা করতে চাইব তুমি সব মুখ বুজে সহ্য করে নিবে। দুঃখী দুঃখী ভাব নিবে। আমার আচরনে তুমি কষ্ট পাচ্ছ এমনটা বুঝাবে। যেনো সাকিব আর সানায়া তোমাকে দেখে বুঝে তুমি কষ্ট পাচ্ছ, আমাকে ছাড়তে চাইছ। ওরা কিন্তু ভিডিও মুট করে সাউন্ড অন করে রাখবে। তাই আমাদের কথা বার্তা সাবধানে বলতে হবে। খুব নিঁখুতভাবে কাজ করে যেতে হবে।”

—–“সব হবে মুহিত। তবে আমার তোমাকে নিয়ে টোনশান হচ্ছে। তোমার শরীরে তো ড্রাগস ঢুকে গেলো। এখন কি হবে মুহিত? তুমি ও যদি সানায়ার মতো নেশাক্ত হয়ে উঠো তখন?”

—–“তার মানে তুমি জানতে সানায়া নেশাক্ত?”

—-“হুম জানতাম। তবে কাউকে বলি নি। এই না বলাটাই আজ কাল হয়ে দাঁড়ালো। তবে আদ্রিতাকে আমি আমার স্টাইলে জবাব দেবো। তুমি সানায়া আর মুহিতকে বুঝে নিবে।”

—–“আচ্ছা অসব পরে হবে। আগে শুনো…… নেশার ঘোরে আমি হয়তো তোমার সাথে হিংস্র ব্যবহার করতে পারি। প্লিজ তুমি মানিয়ে নিও।”

—–“তুমি চিন্তা করো না মুহিত। আমি ঠিক মানিয়ে নিবো। ভেবে নেবো তুমি আমাকে ভালোবাসছ। যে ভালোবাসা স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে হয়ে থাকে।”

—–“হুম এবার রুমে চলো। নাটক শুরু করতে হবে। এমনিতে ও আমার মাথাটা খুব ঘুড়ছে।”

—-“ওকেহ্ চলো।”

মুহিত আর রূপ দেরি না করে নিজদের রুমে গিয়ে নাটক জুড়ে দিলো। সবটা নাটক হলে ও মুহিতের হিংস্রতা সত্যিই বেড়ে উঠছিলো। নেশার কারনে এমনটা হয়েছে। রূপ সব সহ্য করে নিলে ও ব্যাথা কিন্তু সত্যিই পেয়েছে। নাটকের পাশাপাশি কিছুটা সত্যতা ও ছিলো।

ফ্ল্যাশব্যাক থেকে ফিরে রূপ দৌঁড়ে মুহিতের ম্যাসেজ করা এড্রেসে চলে গেলো। মুহিত চার রাস্তার মোড়ে রূপের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। রূপ মুহিতের কাছে পৌঁছার সাথে সাথেই মুহিত রূপকে ঝাপটে ধরল। রূপের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ব্লাউজ ভেদ করে মুহিতের আঁচড়ের দাগ দেখা যাচ্ছে। গলায়,ঘাঁড়ে বাইটের দাগ দেখা যাচ্ছে। মুহিত রূপকে ঝাপটে ধরে অসহায় কন্ঠে বলল,,,,,,,

—–“স্যরি রূপ। আমি সত্যিই বাড়াবাড়ি করেছি। তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। বিলিভ মি আমি এসব নেশার চোটে করেছি।”

—–“আমি জানি মুহিত। তুমি ইচ্ছে করে কিছু করো নি। সবটা নেশার ঘোরেই করেছ। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আছে শুধু এক আকাশ ভালোবাসা। তুমি মোটেও নিজেকে অপরাধী ভেবো না। না হয় আমি খুব কষ্ট পাবো।”

—–“আমি জানতাম রূপ তুমি ঠিক আমাকে বুঝবে। পাছে লোক যাই করুক। তুমি আমাকেই বিশ্বাস করবে। এসবেরর মাঝে শত্রুরা আমাদের ভালোবাসার বন্ডিংটাকে আরো স্ট্রং করছে। ওরা বুঝতেই পারছে না ওদের এসব কাজের জন্য আমাদের কতোটা হেল্প হচ্ছে।”

—-“হুম তা ঠিক।”

রূপ কিছু এক্টা ভেবে আবার বলল,,,,,,

—-“তবে মুহিত আমার ভীষন টেনশান হচ্ছে। সাকিব যদি কোনো রকমে আমাদের ভিডিও গুলো ভাইরাল করে দেয়? তখন কি হবে? ওর সাথে কিন্তু বিশ্বাস নেই।”

—–“এর ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। দোলা আপুকে উঠিয়ে নেওয়ার পর পরই আমি সিসি ক্যামেরা সহ সানায়া আর সাকিবকে পুলিশে দিবো। আইনের হাতে তুলে দিবো ওদের। ড্রাগস পাচার কারীর অভিযোগে। আই থিংক ওদের রুমে নিশ্চিত ড্রাগস পাওয়া যাবে। পুলিশ সার্চ করে ঠিক পেয়ে যাবে। মারে কাজ হবে না ওদের। এবার কোনো এক্টা পদক্ষেপ নিতেই হবে। আমাদের কাছে এখন সমস্ত প্রমাণ আছে। ধারণ কৃত ভিডিও ই হলো তার প্রমাণ। সাকিব আর সানায়া আমাদের কিছুই করতে পারবে না। প্রয়োজনে ভিডিও গুলো ও পুলিশের হাতে তুলে দিবো। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো রূপ। শুধু দোলা আপুর বিদায় অব্দি তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকবে। আমাকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিবে। সানায়া আর সাকিবকে বুঝাতে হবে ওদের প্ল্যান কাজে দিয়েছে। নয়তো ওরা কিছু আঁচ করতে পারলে সব প্রমাণ লোপাট করে দেবে। সো বি কেয়ারফুল।”

—-“সব যেনো ঠিক ঠাক ভাবে হয় মুহিত। আল্লাহ্ যেনো এই যাত্রায় আমাদের বাঁচিয়ে নেয়। খাবার থেকে যথেষ্ট দূরে থাকতে হবে আমাদের। দরকার হলে আজ কেউ কিছু খাবো না। বলা যায় না কখন সাকিব আর সানায়া মিলে আবারো আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।”

—–“হুম ঠিক বলেছ। আজকের দিনটা না খেয়ে কাটিয়ে দিতে হবে। কোনো রকমে মুখে কিছু গুজা যাবে না। কেউ জোর করলে ও না।”

—–“আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে বেঁচে ফিরি এরপর আমি আদ্রিতার বারোটা বাজাবো। তবে আগে সাকিব আর সানায়ার মুখ থেকে আদ্রিতার ব্যাপারটা জানতে হবে। আদ্রিতা কি আদৌ ওদের সাথে জড়িত নাকি সবটাই কাকতালীয় তা ও জানতে হবে। হয়তো আদ্রিতা পার্সোনাল শত্রুতা থেকে ও আমাদের উপর শোধ নিতে চাইছে।”

—–“পার্সোনাল শত্রুতা বলতে?”

—–“না মানে আমার মনে হচ্ছে আদ্রিতা তোমাকে পছন্দ করে। তাই বললাম।”

—–“কখনো ই না। আমার মনে হচ্ছে আদ্রিতা ও ওদের সাথে জড়িত আছে। ওর ভাব ভঙ্গি আমার মোটে ও সুবিধের লাগে নি।”

—–“হুম আদ্রিতাকে ধরতে গেলে ও আমাদের প্রমাণ লাগবে। আচ্ছা এবার বাড়ি চলো। যা হবার পুলিশের সামনে হবে। এতোক্ষন অব্দি বাড়ির বাইরে থাকলে সানায়া আপু আর সাকিব ভাই আমাদের সন্দেহ করতে পারে।”

—-“একদম ঠিক বলেছ। তুমি প্রথমে যাও। আমি এক্টু পর আসছি।”

রূপ এক পা এক পা করে সামনের দিকে পা বাড়াচ্ছে আর পিছন ফিরে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—–“আমি যাচ্ছি মুহিত। তুমি তাড়াতাড়ি এসো।”

—–“ওকেহ্ রূপ তুমি সাবধানে যাও।”

রূপ এবার দৌঁড়াতে শুরু করল। কিছুক্ষনের মধ্যেই তাকে বাড়ি ফিরতে হবে। প্রায় দশ মিনিট পর রূপ বাড়ি পৌঁছে গেলো। বাড়ির সদর দরজায় সাকিবকে দেখা যাচ্ছে না। শো শো বেগে রূপ বাড়ির ড্রইং রুমে ঢুকে গেলো। ড্রইং রুমে বাড়ির সব মেম্বারসরা জট পেকে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই ব্যস্ত বিভিন্ন কাজে। সানায়া দোলাকে নিয়ে সোফায় বসে আছে। দুজনই খুব হাসছে। সাকিব বড় এক্টা পাতিল নিয়ে কিচেন রুম থেকে বের হয়ে পাতিলটা নিয়ে খাবারের জায়গাটাতে যাচ্ছে। বেচারা খুব ব্যস্ত। এদিক সেদিক তাকানোর সময় পাচ্ছে না।

রূপ ড্রইং রুমে সবার মাঝখানে ঢুকে গেলো। কান্না কান্না মুখ করে রূপ সানায়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মারু কোথা থেকে এসে রূপকে ওর দিকে ঘুড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে বলল,,,,,

—–“এই রূপ। তোর এই অবস্থা হলো কি করে?”

রূপ ন্যাকা কান্না করে সানায়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে মারুকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,,,,,,

—–“মারু….আমার সর্বনাশ হয়ে গেলো। মুহিতকে বিশ্বাস করে আমি জীবনের মস্ত বড় ভুল করেছি। দেখ না কাল রাতে মুহিত আমার কি অবস্থা করেছে। আমি মুহিতকে ছেড়ে দিবো। ওর সাথে থাকা আর সম্ভব না।”

রূপের কথা শুনে সানায়া মুচকি মুচকি হাসছে। মারু বেকুব হয়ে বলল,,,,,,

—-“হায় আল্লাহ্ এসব কি বলছিস তুই? সামান্য আদর ই তো করেছে। এর জন্য তুই মুহিতকে ছেড়ে দিবি? কই মৃন্ময় ও তো আমাকে খুব আদর করে আমি তো কখনো বলি না মৃন্ময়কে আমি ছেড়ে দিবো।”

—-“মৃন্ময় ভাই তো মুহিতের মতো অতো হিংস্র না। মুহিতের থেকে মৃন্ময় ভাই হাজার গুনে ভালো। শুন মারু….. একদম মুহিতের হয়ে সাফাই দিতে আসবি না। তুই আমার ফ্রেন্ড আমার পক্ষে থাকবি। আমি মুহিতকে ছেড়ে দিবো এটাই ফাইনাল।”

কথা গুলো বলেই রূপ মারুকে ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। মারু বেকুব হয়ে রূপের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

কথা গুলো বলেই রূপ মারুকে ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। মারু বেকুব হয়ে রূপের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।

রূপ রুমে ঢুকেই বেডের উপর শুয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না জুড়ে দিলো। হুদাই কাঁদছে সে। কোনো রিজন ছাড়াই। সিসি ক্যামেরা টা কোথায় লাগানো হয়েছে সঠিক বুঝা যাচ্ছে না। নয়তো রূপ সিসি ক্যামেরাটার সামনে গিয়ে প্যাঁচ প্যাঁচ করে কাঁদত। সবটাই হতো লোক দেখানো কান্না।

মারু মাথা চুলকাতে চুলকাতে সানায়ার পাশে এসে বসল। সানায়া মুখ চেঁপে হাসছে। দোলা ওর হবু বরের কাছে ফোনে ম্যাসেজিং করছে। মারু এদিক সেদিক তাকিয়ে মৃন্ময়কে খুঁজছে। মৃন্ময় খুব ব্যস্ত ক্যাটারিং এর কাজে। তাই মারুর আশে পাশে থাকতে পারছে না। সাকিব ও মৃন্ময়ের সাথে হাতে হাতে লাগিয়ে কাজ করছে। সানোয়ার আহমেদ, রেজাউল আহমেদ ও বেশ ব্যস্ত। গেস্টদের দিকটা উনারা সামলাচ্ছে। বাড়ির মহিলারা বাড়ির ভিতরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সবার মাঝখান থেকে মুহিত মিসিং। কেউ মুহিতের খোঁজ করছে না। সবাই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কারো দিকে তাকানোর সময় নেই।

ঐদিকে মুহিত আশেপাশে তাকাচ্ছে আর রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সি.এন.জি খুঁজছে। পুলিশ স্টেশন যাবে সে। পুলিশকে সরাসরি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবে। থানায় কেইস করে আসবে। সন্ধ্যায় পুলিশদের কল করার সাথে সাথেই যেনো পুলিশরা হাজির হতে পারে সেই ব্যবস্থাটাই করবে মুহিত। প্রায় পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর মুহিত এক্টা খালি সি.এন.জি খুঁজে পেলো। সি.এন.জি টা দাঁড় করিয়ে মুহিত ছুটে চলল পুলিশ স্টেশানের উদ্দশ্যে।

প্রায় পনেরো মিনিট পর মুহিত পুলিশ স্টেশান পৌঁছে গেলো। পুলিশ ডায়েরী করে পুলিশকে বিস্তারিত বলে মুহিত থানা থেকে বের হয়ে গেলো। গাড়ি খুঁজে আবারো সে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো। মুহিত সাংঘাতিক ভয়ের মধ্যে আছে। খেলা কখন ঘুড়ে যায় বলা যায় না। সাবধানে প্রতিটা পদক্ষেপ নিতে হবে। আদ্রিতার ব্যাপারটা ও মাথায় ঘুড়ছে মুহিতের। আদ্রিতা আসলেই কি চায় তাই বুঝতে পারছে না মুহিত। আদ্রিতার সাথে কোনো পার্সোনাল শত্রুতা না থাকা সত্ত্বে ও আদ্রিতার এমন হিংস্র আচরণ মুহিতকে দারুন ভাবাচ্ছে। এখন তো মনে হচ্ছে ঐ দিন কাজীকে আদ্রিতাই উল্টো পাল্টা কিছু বুঝিয়ে বাড়ি থেকে বের করেছে। সব সত্যি আজ সন্ধ্যায় সামনে আসবে। মুহিত সেই সন্ধ্যার অপেক্ষায় ই আছে।

প্রায় বিশ মিনিট পর মুহিত এসে পৌঁছে গেলো বাড়ির বিশাল সাজানো গোছানো গেইটের সামনে। সি.এন.জির ভাড়া চুকিয়ে মুহিত প্যান্টের পকেটে হাত গুজে খুব ভাব সাব নিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছে। সাকিব আর মৃন্ময় স্টেইজে কাজ করছে। মুহিতকে দেখা মাএই মৃন্ময় চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,

—–“এই মুহিত। কোথায় গিয়েছিলি? সকাল থেকেই তুই মিসিং।”

সাকিব ও এবার মুখ তুলে মুহিতের দিকে তাকালো। মৃন্ময় আর সাকিবের দিকে এগিয়ে এসে মুহিত শার্টের হাতা ফোল্ড করছে আর বেশ ব্যস্ত স্বরে বলছে,,,,,,,,

—–“অফিস গিয়েছিলাম। জরুরী কাজ পড়ে গিয়েছিলো। রূপকে ও কিছু বলে যায় নি। আমার সোনা বউটা হয়তো আমার সাথে রাগ করে আছে।”

মৃন্ময় মুখ খুলে কিছু বলার আগেই সাকিব বেশ সিরিয়াস হয়ে বলে উঠল,,,,,,,,

—–“যা যা রুমে যা। রূপ হয়তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে। নতুন বউকে রেখে এতো ঘন ঘন বাইরে যাওয়া ঠিক না।”

সাকিবের দিকে তাকিয়ে মুহিত বাঁকা হেসে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,,,

—–“তুই আমাদের ঝগড়া দেখতে চাইছিস তাই তো সাকিব? আমাদের মাঝখানের দূরত্বটা দেখতে চাইছিস। ভালোবাসা থেকে ঘৃনা তৈরী করতে চাইছিস। সব হবে। এখন রূপ আমার সাথে খুব ঝগড়া করবে। আমাকে কটু কথা শুনাবে। সব তুই সিসি ক্যামেরায় দেখবি এবং শুনবি। ব্যাপারটা খুব মাখো মাখো হবে। তুই আর সানায়া খিলখিলিয়ে হাসবি। আহ কত্তো আনন্দ তোদের।”

মুহিত গলাটা ঝাঁকিয়ে সাকিবের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,,,

—–“যাচ্ছি ভাই। নতুন বউ, রোমান্সটা এক্টু বেশি বেশিই চায়।”

মৃন্ময় হু হা করে হেসে মুহিতের দিকে তাকালো। মুহিত বাঁকা হেসে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। ড্রইং রুম ক্রস করে মুহিত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। সানায়া সোফা থেকে সব পর্যবেক্ষন করছে। মুহিত রুমে ঢুকার সাথে সাথে সানায়া দৌঁড়ে সোফা থেকে উঠে স্টোর রুমে চলে গেলো। সাকিব ও কাজ রেখে একছুটে স্টোর রুমে চলে এলো। সানায়া আর সাকিব স্টোর রুমের এক্টা বেঞ্চিতে বসে ল্যাপটপ অন করে দিলো। সাউন্ডের সাথে সাথে ভিডিও ও অন করে দিলো। দুজনই বেশ মনযোগ দিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে।

মুহিত রুমে ঢুকে রূপকে বেডে ডান পাশ ফিরে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেলো। মুহিত ধীর পায়ে হেঁটে রূপের মুখোমুখি শুয়ে পড়ল। রূপ ইচ্ছে করে চোখ বুজে রেখেছে। মুহিত এক দৃষ্টিতে রূপের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে এক্টা হেচকা টান দিয়ে রূপকে মুহিতের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। রূপ এবার এক ঝটকায় চোখ জোড়া খুলে নিলো। মুহিতকে দেখার সাথে সাথে রূপ চোখ, মুখ লাল করে মুহিতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,,

—–“এই তুই আমার গাঁয়ে টাচ করলি কেনো? কোন অধিকারে তুই আমার উপর জোর খাটাস? হু আর ইউ ম্যান? হু আর ইউ?”

মুহিত অবুঝের ভান ধরে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“আর ইউ ক্রেইজি রূপ? কি যা তা বলছ? আমি কে মানে? তোমাকে টাচ করার কি কোনো অধিকার আমার নেই?”

—-“না নেই। আমাকে টাচ করার কোনো অধিকার নেই তোর। তুই আমার লাইফে জাস্ট নাথিং।”

—-“জাস্ট শাট আপ রূপ। আমি তোমার হাজবেন্ড হই। কি যা তা বলছ তখন থেকে? হয়েছে টা কি তোমার? বলবে তো নাকি?”

—–“ওরে বাবা রে তুই এখন কিছুই বুঝতে পারছিস না? শুন মুহিত……. তুই আমার হাজবেন্ড কখনোই হতে পারিস না। তুই এক্টা পিশাচ, জন্তু জানোয়ার। যাদের ধর্মই হলো খাবার পেলে খাবলে খুবলে খাওয়া। কাল রাতে তুই আমার সাথে তাই করেছিস।”

—–“কি করেছি আমি? তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না রূপ। প্লিজ ক্লিয়ারলি বলো?”

—-“ওহ্ আচ্ছা এখন তুমি কিছুই জানো না তাই না? দুধের ধোয়া তুলসি পাতা?”

—-“প্লিজ রূপ ভনিতা না করে ক্লিয়ারলি বলো।”

রূপ এবার কাঁদতে কাঁদতে মুহিতের সামনে এগিয়ে এসে শাড়ির আঁচলটা খুলে পুরো শরীরের আঁচড়ের দাগ গুলো মুহিতকে দেখিয়ে বলল,,,,,,

—–“দেখ দেখ, কাল রাতে তুই আমার সাথে কি করেছিস। আমাকে খাবলে খুবলে খেয়েছিস। শান্তি হয়েছিস তো? আশা করি তোর ক্ষিদে মিটে গেছে! তোর প্রতি আমার সব আস্থা উঠে গেছে। বিশ্বাস উঠে গেছে। ভালোবাসা ও মরে গেছে। কিছু বাকি নেই আমাদের মাঝে আর। তোর হিংস্র রূপ কাল আমি দেখেছি। ঘৃণা হচ্ছে তোর উপর। প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে। আমি তোর থেকে মুক্তি চাই। প্লিজ আমাকে মুক্ত করে দে।”

মুহিত বসা থেকে উঠে বেশ কাতর হয়ে বলল,,,,,,,

—–“বিশ্বাস করো রূপ কাল রাতের কোনো কথাই আমার মনে নেই। তোমার সাথে কি করেছি না করেছি কিছুই আমার মাথায় নেই। আমি সুস্থ মস্তিষ্কে তোমার সাথে এসব করি নি রূপ। হয়তো আমাদের দুজনেরই কোথাও ভুল হচ্ছে। প্লিজ রূপ আমাকে বিশ্বাস করো। তোমার মুহিত কখনো তোমার সাথে অন্যায় করতে পারে না। আমার ভালোবাসা এতোটা ও ঠুনকো না রূপ।”

—-“আমি তোকে বিশ্বাস করি না। সব বিশ্বাস মরে গেছে। কাল রাতেই তুই প্রমান করে দিয়েছিস তুই আমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসিস। তোর চোখে আমার জন্য কোনো ভালোবাসা ছিলো না। পুরোটাই ছিলো লোভ। লোভের বসে তুই আমাকে বিয়ে করেছিস। আমার সব জানা হয়ে গেছে। এমনকি বোঝা ও হয়ে গেছে। কান খুলে শুনে রাখ মুহিত, আমি তোকে ঘৃনা করি। ভালোবাসা কাল রাতেই মরে গেছে। বিশ্বাস ও পুরো দমে উঠে গেছে। তোর প্রতি আমার আর কিছুই বাকি রইল না। খুব শীঘ্রই আমরা আলাদা হয়ে যাবো। আমি আবারো হোস্টেলে ফিরে যাবো।”

কথা গুলো বলেই কাঁদতে কাঁদতে রূপ রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মুহিত মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। মুহিতকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচে হতাশ ব্যক্তিটা সে ই। কেমন জনাজীর্ন হয়ে বসে আছে সে। অভিনয়টা ঠিকঠাক ভাবে করতে পারল কিনা তা নিয়েই হতাশায় ভুগছে মুহিত।

সানায়া আর সাকিব ল্যাপটপ টা অফ করে অট্ট হাসিতে ফেঁটে পড়ল। সাকিব ডেবিল স্মাইল দিয়ে বলল,,,,,,

—-“বাহ্ খেলা বেশ জমে গেছে। এবার শুধু রূপের লাইফে আমার এন্ট্রি নেওয়ার পালা। ভাবতে পারি নি এতো তাড়াতাড়ি ওদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরে যাবে। যাক ফাইনালী আমরাই সফল হলাম।”

সানায়া দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,,,

—–“আমাকে ও এই সুযোগে মুহিতের লাইফে এন্ট্রি নিতে হবে। মুহিতকে আবারো কফির সাথে ড্রাগস দিতে হবে। তাহলেই নেশায় বুদ হয়ে মুহিত আমাকে নিজের করে নিবে। তখন নিশ্চয়ই মুহিত বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করবে। এছাড়া আর কোনো উপায় ও থাকবে না।”

—–“হুম যা করার আজই কর। হাতে বেশি সময় নেই।”

—-“হুম চল রুম থেকে বের হই। কিচেনে যাই।”

সানায়া আর সাকিব স্টোর রুম থেকে বের হয়ে কিচেনের দিকটায় চলে গেলো। কিচেন রুমে ঢুকে সাকিব পকেট থেকে ড্রাগসের প্যাকেট বের করে এক্টা প্যাকেট সানায়ার হাতে ধরিয়ে দিলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে সাকিব কিচেন রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সাকিব কিচেন রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই রূপ ফোন নিয়ে কিচেন রুমের জানালার কাছে চলে গেলো। সানায়া কফিতে ড্রাগসের প্যাকেট মিক্স করছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। রূপ সেই সুযোগে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো সানায়ার। ছবিটাতে ক্লিয়ারলি দেখা যাচ্ছে সানায়া কফিতে ড্রাগস মিক্স করছে। রূপ কয়েকটা ছবি তুলে দৌঁড়ে কিচেন রুমের জানালা থেকে প্রস্থান নিয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো।

মুহিতের নাম্বারে ম্যাসেজ করে রূপ মুহিতকে সাবধান করে দিলো কফিটা যেনো না খায়। এমনকি রূপ মুহিতের হোয়াটস এ্যাপে ও সানায়ার ছবি গুলো ও সেন্ড করে দিয়েছে। মারুর পাশের সোফায় বসে রূপ মুখটা ফুলিয়ে দোলার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া আহমেদ, সোহেলী আহমেদ ও পাশে আছে। কেউই রূপের মুখ ফুলানোর মানে বুঝছে না। তবে মারু বেশ বুঝতে পারছে রূপ কেনো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। মারু ভাবছে রূপ এখনো মুহিতের উপর অভিমান পুষে রেখেছে।

সানায়া কফি করে ড্রইং রুমের সবার দিকে একবার তাকালো। রূপ কাঁদো কাঁদো মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সানায়া বেশ ফুড়ফুড়া মন নিয়ে হেলতে দুলতে কফি নিয়ে মুহিতের রুমে চলে গেলো। মুহিত মাএ রূপের ম্যাসেজ গুলো চেইক করে ফোনটা পাশে রেখেই আবারো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।। সানায়া বএিশ পাঁটি বের করে হেসে মুহিতের দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,,,

—–“মুহিত কফি এনেছি তোমার জন্য। প্লিজ খেয়ে নাও।”

মুহিত মাথাটা নিচু করে সানায়াকে উদ্দেশ্য করে মিনমিন করে বলল,,,,,,

—–” ডেস্কের উপর রেখে যাও। পরে খেয়ে নিবো।”

—–“না না এখনি খাও। সকাল থেকে তো কিছুই খাও নি।”

—–“সানায়া শুনো….. এখন আমার মন মর্জি ঠিক নেই। প্লিজ লিভ মি এলোন।”

—–“এতো রাগ করছ কেনো মুহিত? জাস্ট কফি ই তো।”

মুহিত এবার সানায়ার দিকে তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—–“এই তুমি কি বাংলা কথা বুঝো না? প্লিজ গো টু দ্যা হেল। আমি একা থাকতে চাইছি। সম্পূর্ণ একা থাকতে চাইছি।”

সানায়া থতমত খেয়ে কফির মগটা ডেস্কের উপর রেখে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আবারো কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,,,,,

—–“কফিটা রেখে গেছি মুহিত। প্লিজ খেয়ে নিও।”

মুহিত চোয়াল শক্ত করে সানায়ার দিকে তাকালো। সানায়া ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মনে মনে সানায়া মুহিতের চৌদ্দ গোষ্ঠীকে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুঁয়ে ফেলছে। বেকুবটা এটাই বুঝল না চৌদ্দ গোষ্ঠির মধ্যে সে নিজে ও পড়ে। তবে প্রচন্ড টেনশানে আছে সানায়া। মুহিত আদৌ কফিটা খাবে কিনা।

মুহিত হাসতে ও কাঁদতে ও পারছে না। এক রকম জড়সড় হয়ে আছে। রোবট হয়ে বসে আছে সে। সানায়ার ভয়ার্ত মুখটা মুহিতের চোখে ভাসছে। খুবব হাসতে ইচ্ছে করছে মুহিতের। তবে পারছে না। নয়তো ক্যামেরায় ধরা খেয়ে যাবে।

ঘড়িতে দুপুর দুইটা। রূপ লাল শাড়ি পড়ে হালকা সাজে রেডি হয়ে বসে আছে মারুর রুমে। মারু সাজতে সাজতে সারা দুপুর পাড় করে দিচ্ছে। রূপ এখনো দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বসে আছে। রূপ মুখ খুলে মারুকে কিছু বলতে ও পারছে না আবার সইতে ও পারছে না। মারু ও কিছু শোনার ইন্টারেস্ট প্রকাশ করছে না। কারণ, মারু জানে রূপ কখনো মুহিতকে ছাড়বে না। হয়তো রাগের বশে রূপ মুহিতের সাথে এমন ব্যবহার করছে।

দোলাকে অলরেডি পার্লারের মেয়েরা এসে সাজিয়ে দিয়েছে। লাল লেহেঙ্গা পড়েছে দোলা। অসম্ভব সুন্দুরী লাগছে তাকে। সানায়া রাগে দুঃখে ফুসছে। লাল রং শাড়িটা ওর মুখের সাথে মিলে গেছে। মুহিত ওর চোখের সামনে দিয়ে হাসছে, কথা বলছে পুরো সুস্থ অবস্থায় ঘুড়ছে। নেশার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্চে না। সানায়া বেশ বুঝতে পেরেছে মুহিত কফিটা খায় নি। যদি ও কাজের চাঁপে ওর স্টোর রুমে যাওয়া হয় নি। তবু ও সে আন্দাজ করে নিয়েছে। মুহিত তাকে ছক্কা মেরেছে।

সাকিব এদিক সেদিক তাকিয়ে রূপকে খুঁজছে। রূপকে দেখার জন্য ওর মনটা আনচান আনচান করছে। মুহিত ঐ দিকে সাকিবকে দেখে রাগে ফুসছে। সাকিবের প্রতীক্ষা মুহিত বুঝতে পারছে। মুহিত পারছে না এখনই সাকিবকে কেলিয়ে দাঁত, মুখ ফাঁটিয়ে দিতে। কিন্তু দোলার জন্য থেমে যাচ্ছে। মৃন্ময় গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে বর যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে।

ঘড়িতে দুপুর তিনটা। বর যাত্রী চলে এসেছে। বাড়ির সব ছেলে, পুরুষরা বর যাত্রীকে আদর, আপ্যায়নে ব্যস্ত। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে বিয়ে পড়ানো হবে। রূপ, মারু আর সানায়া মিলে দোলাকে স্টেইজে নিয়ে এলো। দোলাকে দেখে লিয়েনের চোখ ধাঁধিয়ে এলো। এক দৃষ্টিতে লিয়েন দোলার দিকে তাকিয়ে আছে। দোলা লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। চোখ তুলে সামনে তাকাতে পারছে না। দোলাকে স্টেইজে বসানোর পর খাওয়া দাওয়ার প্রোগ্রাম শুরু হলো। দুই পরিবারের সবাই এক সাথে খেতে বসল। তবে রূপ আর মুহিত ছাড়া। দুজন এই বাহানা ঐ বাহানা দিয়ে খওয়ার ব্যাপারটা চেঁপে গেলো। তবে মারু কয়েকটা লোকমা ধরে রূপকে খাইয়ে দিলো। রূপ কিছুটা বাধ্য হয়ে খাবার টা খেয়ে নিলো। মুহিত যত বারই রূপেরর দিকে তাকায় রূপ ততোবারই মুখটা ঘুড়িয়ে নিচ্ছে। ওদের এসব রাগ, অভিমান দেখে সাকিব আর সানায়া খুব মজা পাচ্ছে।

প্রায় দুই ঘন্টা পর। ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা। দোলার বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে। অলরেডি দোলার বিদায় ও হয়ে গেছে। পুরো বাড়িটা থমথমে হয়ে আছে। কারো মুখে হাসি নেই। সবাই কান্না কান্না ভাব নিয়ে আছে। বিদায়ের সময় দোলা ও খুব কেঁদেছে। কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস ও হয়ে গেছে। দোলার সাথে বাড়ির বাকিরা ও কেঁদেছে। বেশি কেঁদেছে মায়া আহমেদ। মৃন্ময় ও বেশ আপসেট ছিলো। তবে কাউকে বুঝায় নি। হাসি মুখে দোলাকে বিদায় দিয়েছে।

ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা। মুহিত আর মৃন্ময় ডেকোরেটিং এর লোকদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করছে। সাথে ক্যাটারিং এর লোকদের ও। বাড়ির গেস্টরা মায়া আহমেদ কে শান্তনা দিচ্ছে। উনি কেবল কেঁদেই যাচ্ছে। মারু সবাইকে চা, নাশতা দিচ্ছে। সানায়া এলোমেলো ড্রইং রুমটাকে গুছাচ্ছে। এর মাঝে রূপকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কারোর রূপের প্রতি খেয়ালই নেই। প্রায় অনেকক্ষন ধরেই রূপকে দেখা যাচ্ছে না।

দশ মিনিট পর। মুহিত আর মৃন্ময় সবার বকেয়া টাকা পরিশোধ করে বাড়ির ড্রইং রুমে প্রবেশ করল। রূপকে ড্রইং রুমের কোথাও দেখতে না পেয়ে মুহিত বেশ ভয় পেয়ে গেলো। এক দৌঁড়ে মুহিত উপর তলায় উঠে ওদের রুমে চলে গেলো। রুমটা পুরো ফাঁকা। রূপকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মুহিত কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে হন্ন হয়ে পুরো বাড়ি চুষে ফেলল। বাট কোথাও রূপকে দেখা যাচ্ছে না। মুহিত এবার দৌঁড়ে বাড়ির ছাদে চলে গেলো। ছাদে ও রূপকে দেখা গেলো না। মুহিত এবার ছাদের চিলি কোঠার রুমে গিয়ে দেখল সাকিব রূপের হাত, পা বেঁধে রূপকে বেহুশ অবস্থায় ফ্লোরে শুইয়ে রেখেছে। পাশেই সাকিব হাঁটু গুজে বসে আছে। রূপের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সাকিব এক্টু নিচু হয়ে যেই না রূপের কপালে চুমো খেতে যাবে অমনি মুহিত দৌঁড়ে এসে পিছন থেকে সাকিবকে দিলো এক লাথি। সাথে সাথে সাকিব রূপের বিপরীত পাশে উল্টে পড়ল। মুহিত পান্জ্ঞাবীর পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনে কারো নাম্বারে ম্যাসেজ করে আবারো চোয়াল শক্ত করে সাকিবের দিকে তাকালো। সাকিবের কলার ধরে মুহিত সাকিবকে এলোপাথারী কিল, ঘুঁষি মারতে মারতে সাকিবকে নিয়ে বাড়ির ড্রইং রুমে চলে গেলো। মুহিত কোনো টু শব্দ করছে না। শুধু রাগে গিজগিজ করছে আর সাকিবকে এলোপাথারী মেরে যাচ্ছে। সাকিবকে ব্যাথায়, যন্ত্রনায় আত্নচিৎকার করছে।

ড্রইং রুমের উপস্থিত সবাই দৌঁড়ে এসে মৃহিত আর সাকিবের মুখো মুখি দাঁড়ালো। মুহিত চিৎকার করে মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—–“ভাবী প্লিজ রূপকে চিল কোঠার রুম থেকে নিয়ে আসুন। রূপ সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। ওর হুশ ফিরান। ডক্টর ডাকুন।”

মারু পেরেশান হয়ে দৌঁড়ে চিলি কোঠার রুমে চলে গেলো। রূপের হাত, পায়ের বাঁধন খুলে মারু রূপকে ধরাধরি করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো।

সানায়া সোফার কুশন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে কাঁপছে সে। সাকিব আচমকা এমনভাবে ধরা পড়ে যাবে সানায়া বুঝতে পারে নি। সোহেলী আহমেদ, মায়া আহমেদ, রেজাউল আমেদ আর সানোয়ার আহমেদ হাজার চেষ্টা করে ও সাকিবকে মুহিতের হাত থেকে ছাড়াতে পারছে না। মৃন্ময় সাকিবকে বাঁচানোর কোনো রকম চেষ্টা করছে না। সে জানে নিশ্চয়ই সাকিব কোনো অন্যায় করেছে।

সানোয়ার আহমেদ চেঁচিয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“মুহিত প্লিজ সাকিবকে ছাড়ো। বেশি বাড়াবাড়ি করছ তুমি!”

মুহিত চোখ লাল করে সানোয়ার আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি কোনো বাড়াবাড়ি করছি না আব্বু। সাকিব ভাই আমার রূপের সাথে জবরদস্তি করছিলো। আমি যদি যথা সময়ে না পৌঁছাতাম, তাহলে এই ছেলেটা আমার রূপের সর্বনাশ করে দিতো। তাছাড়া এই সাকিব এক্টা নেশা খোর। ড্রাগস নেয় সে। আমাকে ও স্যুপের সাথে ড্রাগস খাইয়ে দিয়েছে। এর যথেষ্ট প্রমান আছে আমার কাছে। পুলিশ এলেই এক্টু পর সব প্রমাণ পাবে।”

সাকিবের নাক, মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সাকিব বলল,,,,,,

—–“না চাচ্চু। আমি কিছু করি নি। মুহিত পার্সোনাল শত্রুতার জেরে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।”
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩৫ (ধামাকা পর্ব)
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“না চাচ্চু। আমি কিছু করি নি। মুহিত পার্সোনাল শত্রুতার জেরে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।”

মুহিত রাগে সাকিবের গলা চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—–“ধরা খাওয়ার পরে ও মিথ্যে বলছিস? কিভাবে পারিস তুই এতোটা নিচে নামতে? এই তোর কি বিবেক নামক বস্তুটা ও নেই?”

সাকিব নিশ্বাস নিতে পারছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। সাকিবের মুখ থেকে বাজে এক্টা গন্ধ আসছে। গন্ধটা মুহিতের নাকে ঢুকছে। মুহিত বেশ বুঝতে পেরেছে সাকিব ড্রাগস নিয়েছে। ড্রাগসের নেশায় বুদ হয়েই সে রূপের সাথে জবরদস্তি করতে চেয়েছিলো। সোহেলী আহমেদ কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। রেজাউল আহমেদ কেবল সানেয়ার আহমেদ কেই ধমকাচ্ছে। কেনো উনি মুহিতকে কিছু বলছে না। মুহিতকে থামাচ্ছে না।

মুহিত সাকিবকে টানতে টানতে রেজাউল আহমেদের দিকে এগিয়ে নিয়ে জোরে চেঁচিয়ে রেজাউল আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—–“চাচ্চু তুমি ওর মুখের গন্ধটা এক্টু শুকো। তাহলেই বুঝতে পারবে তোমার ছেলে যে ড্রাগস নেয়। ড্রাগসের উটকো গন্ধ আসছে। এইমাএ ড্রাগস নিয়েছে সে।”

সাকিবকে দেখেই রেজাউল আহমেদ আন্দাজ করতে পেরেছে উনার ছেলে যে ড্রাগস নিয়েছে। তাই উনি ব্যাপারটাকে ধামা চাঁপা দেওয়ার জন্য সানোয়ার আহমেদকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল,,,,,

—–“ভাই….তোর ছেলেকে বল ব্যাপারটা নিয়ে জল ঘোলা না করতে। চার দেয়ালের মাঝেই ব্যাপারটাকে সীমাবদ্ধ রাখতে। পুলিশের কানে যেনো রিপোর্ট টা না যায়। এতে আমাদের পরিবারের ই দুর্নাম হবে। আমার ছেলেকে আমি উপযুক্ত শাস্তি দিবো। দরকার হলে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবো। এর পরে ও যেনো কথাটা পাঁচ কান না হয়।”

সানোয়ার আহমেদ কিছু বলার আগেই মুহিত অট্ট হেসে বলে উঠল,,,,,,

—–“তুমি আসলেই পারো চাচ্চু। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা টা তোমার নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলে ড্রাগস নেয় তা জেনে ও ব্যাপারটাকে এতো বছর ধরে চেঁপে গেছো। এখন যখন তোমার ছেলে ধরা পড়ে গেছে তখনই তুমি পরিবারের সম্মান রক্ষার করার ফালতু লজিক দেখাচ্ছ! কেনো আগে কি তোমার পরিবারের সস্মানের কথা মনে পড়ি নি? তোমার কি এক্টা বারের জন্যে ও মনে হয় নি ছেলেটাকে আমি আগে থেকেই সঠিক পথে ফিরিয়ে আনি। নেশা থেকে মুক্ত করি? এখন যখন দেখছ ছেলে ফেঁসে গেছে তখনই লেইম এক্সকিউজ দিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছ? তুমি পারো ও বটে চাচ্চু। ইউ আর জাস্ট জিনিয়াস।”

মুহিত কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—–“শুনো চাচ্চু। তোমার কথা আমরা রাখতে পারব না। অন্তত বাড়ির বউদের কথা চিন্তা করে তো না ই। রূপের কথা না হয় বাদ ই দিলাম। কারণ, আমি আর রূপ আলাদা থাকি। তবে মারু ভাবী তো আর আলাদা থাকে না। তোমাদের সাথে একই বাড়িতেই থাকে। দেখা যাবে আরো একদিন তোমার ছেলে নেশা করে ভাবীর উপর এ্যাটাক করবে। তখন ভাবীকে কে বাঁচাবে? মৃন্ময় ভাইয়া তো সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে। বাড়ির মহিলারা ও যার যার রুমে থাকে। তখন তো ভাবীর টোটালি সর্বনাশ হয়ে যাবে। সো সবার সুবিধার্থে আমি চাইছি সাকিবকে পুলিশে দিতে।”

মুহিত এবার সানায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“সাথে সাকিবের সহযোদ্ধা প্রাণপ্রিয় ছোট বোন সানায়াকে ও। দুজনই প্ল্যান করে রূপ আর আমাকে আলাদা করতে চেয়েছিলো। আমাদের রুমে সিসি ক্যামেরা ফিট করেছে। আমাকে স্যুপের সাথে ড্রাগস মিশিয়ে রূপের সাথে উল্টো পাল্টা করতে বাধ্য করেছে। রূপের মনে আমার জন্য ঘৃনা তৈরী করতে চেয়েছিলো। আজ সকালে ও সানায়া কফির সাথে ড্রাগস মিশিয়েছিলো আমাকে খাওয়াবে বলে। রূপ ঐ মুহূর্তের ছবি তুলে নিয়েছে। সো প্রমান ও আমার কাছে আছে। পুলিশ কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে। আই হোপ সাকিবের রুমে ড্রাগস পাওয়া যাবে। পুলিশ সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়েই আসবে। আমি আট ঘাট বেঁধে খেলতে নেমেছি। সাকিবের আর সানায়ার বিরুদ্ধে লড়ার যথেষ্ট প্রমাণ আছে আমার।”

মুহিতের কথা শুনে সানায়া ভয়ে কাঁপছে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে সে। তবে সাকিবকে দেখে মনে হচ্ছে না সে ভয় পাচ্ছে। দিব্যি মুহিতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। মায়া আহমেদ আচমকাই তেড়ে এসে মুহিতের গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে বলল,,,,,,

—–“তোমার সাহস কিন্তু দিন দিন বাড়ছে মুহিত। ভুলে যেও না আমাদের দয়ায় তুমি বেঁচে আছো। যার নূন খেয়েছ তার গুন গাইতে হবে। আর তুমি কিনা তাদের বিরুদ্ধেই আঙ্গুল তুলছ? গলা উঁচু করে বলছ পুলিশ ডাকবে? সাকিব আর সানায়াকে ধরিয়ে দিবে?”

মুহিত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া আহমেদের কথা গুলো ওর খুব লেগেছে। চোখে জল জমে গেছে। মাথা তুলে তাকাতে পারছে না সে। মৃন্ময় তেড়ে এসে মায়া আহমেদকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—–“তুমি খুব জঘন্য মা। তোমার মনে কোনো মায়া, দরদ, ভালোবাসা নেই। তুমি যথেষ্ট স্বার্থপর এবং খুব হিংসুটে। তুমি আমার ভাইকে একদম দেখতে পারো না। ওর সব সিদ্ধান্তই তোমার কাছে বেকার মনে হয়। শুনো আম্মু….আমি ও মুহিতের সাথে একমত। সাকিবকে পুলিশে দিতেই হবে। কারণ, আমার বউ ও এই বাড়িতে সেইফ না। আমি এতো বড় রিস্ক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারব না।”

মায়া আহমেদ চোখ লাল করে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সানোয়ার আহমেদ মুহিতের দিকে একবার তাকিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মায়া আহমেদের গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিলো। পাঁচ আঙ্গুলের দাগ পড়ে গেছে উনার গালে। সানোয়ার আহমেদ জোরে চেঁচিয়ে মায়া আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“তুমি কোন সাহসে আমার ছেলের গাঁয়ে হাত তুলো? আমার ছেলে ওর মায়ের অধিকারে বেঁচে আছে। ওর বাবার ছায়ায় বড় হয়েছে। ওর বাবার ইনকামের টাকায় খেয়েছে, পড়েছে, এতো টুকু এসেছে। পুরো বাড়ি ওর নিজের। আমার এই পুরো সামাজ্র আমার ছেলের। ওর নামে আমি সব লিখে দিয়ে যাবো। তখন তোমার এতো সব ঝাড়ি, ঝুড়ি থাকবে তো?”

মায়া আহমেদ গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে সানোয়ার আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহেলী আহমেদ কান্না থামিয়ে সানোয়াের আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই খুব অবাক সানোয়ার আহমেদের কথায় এবং কাজে। উনার এমন উগ্র ভাব কেউ আশা করে নি। মুহিত মাথা তুলে এক দৃষ্টিতে সানোয়ার আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে।

এর মাঝেই পুলিশ চলে এলো। সাকিবের পরিবার বেশ ভয় পেয়ে গেলো। সোহেলী আহমেদ আবারো মরা কান্না জুড়ে দিলো। সানোয়ার আহমেদ আর মৃন্ময় পুলিশের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,,,,,,

—–“স্যার আপনারা আমাদের পুরো বাড়িটা চেইক করুন। যদি মুহিতের ইনফরমেশন সত্যি হয় তবে আপনারা আসল দোষীকে ধরে নিয়ে যাবেন। আমাদের কোনো আপওি নেই।”

পুলিশ মুহিতের দিকে একবার তাকিয়ে মৃন্ময়ের সাথে সানায়া এবং সাকিবের রুমটা সার্চ করতে চলে গেলো। সার্চ করতে করতে প্রায় আধ ঘন্টা সময় লেগে গেলো। শেষ পর্যন্ত সাকিবের রুমের আলমারিতে সাজানো এক জোড়া ক্যাডসের ভিতর প্রায় অনেকগুলো ড্রাগসের প্যাকেট পাওয়া গেলো। সানায়ার রুমে কিছুই পাওয়া যায় নি। একই সাথে রূপ এবং মুহিতের রুম থেকে সিসি ক্যামেরা গুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ক্যামেরায় ধারনকৃত সব ভিডিও এখন পুলিশের হেফাজতে। মুহিত সাকিবকে পুলিশের এক্টা কন্সটেবলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সাকিবের রুমে চলে এলো। মুহিতের ফোনে থাকা সানায়ার ড্রাগস মেশানো ছবি গুলো মুহিত পুলিশকে দেখালো। সব প্রমাণ একএে হাতে নিয়ে পুলিশ নিচ তলায় নেমে এলো।

সানায়া ভয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেই দিলো। সাকিব বাঁকা হেসে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। সাকিবের বাঁকা হাসির মানে মুহিত বুঝতে পারছে না। এতো কিছুর পরে ও সাকিব কিভাবে এতোটা শান্ত থাকতে পারছে মুহিতের বোধগম্য হচ্ছে না। এসবের মাঝে সবাই রূপ আর মারুর কথা ভুলেই গেছে। কেউ রূপ আর মারুর খবর নিচ্ছে না।

পুলিশ সাকিবের কলার ধরে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“মিঃ মুহিতের ইনফরমেশন ঠিক ছিলো। সত্যি সত্যি এই লোকটার রুমে ড্রাগস পাওয়া গেছে। এমনকি উনি অবৈধভাবে একজনের বেড রুমে সিসি ক্যামেরা ফিট করে রেখেছিলো। যা সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধ। উনার বোন ও সমানভাবে দোষী। কফিতে ড্রাগস মেশানোর অপরাধে উনাকে ও আমরা এরেস্ট করব। এর উপযুক্ত প্রমাণ ও আমাদের কাছে আছে।”

সানায়া সোহেলী আহমেদকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে। সোহেলী আহমেদ ও খুব কাঁদছে। রেজাউল আহমেদ দৌঁড়ে এসে পুলিশকে বলল,,,,,,

—–“দেখুন স্যার এখানে যা হচ্ছে সব আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। আপনারা প্লিজ নাক গলাতে আসবেন না। মুহিতের সাথে আমার ছেলের পার্সোনাল শত্রুতা আছে। যার কারণে মুহিত ইচ্ছে করে আমার ছেলে, মেয়েকে ফাসাচ্ছে।”

মুহিত চোখ লাল করে রেজাউল আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। পুলিশ বাঁকা হেসে কিছু বলার আগেই সাকিব অট্ট হেসে রেজাউল আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“আব্বু প্লিজ কুল। শান্ত হও তুমি। এতো হাইপার হচ্ছ কেনো? খেলা যেহেতু মুহিত কে দিয়ে শুরু হয়েছে শেষ টা ও মুহিতকে দিয়েই হবে। আসল খেলা তো এখনো বাকি আছে। দেখতে দেখতে যাও কি হয়।”

কথাগুলো বলেই সাকিব পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“স্যার…..আমি ও মুহিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি। মুহিতের বাড়িটা সার্চ করার জন্য রিকুয়েস্ট করছি। মুহিত ও আমার মতোই ড্রাগসের সাথে জড়িত। আ’ম সিউর ওর বাড়ি সার্চ করলে আপনি অনেক অনেক ড্রাগসের সন্ধান পাবেন।”

মুহিত বেকুব হয়ে সাকিবের দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে বাড়ির বাকিরা ও। সানোয়ার আহমেদ চোখ লাল করে সাকিবের দিকে তাকিয়ে আছে। সাকিব বাঁকা হেসে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

——“কিরে চুপ করে আছিস কেনো? সত্যিটা বল। তুই ও তো আমার সাথে নেশা করিস। মাঝে মাঝে তো আমি তোর বাড়ি গিয়ে ও নেশা করে আসি।”

মুহিত এসব বাজে কথা সহ্য করতে না পেরে ঠাস করে সাকিবের গালে এক চড় বসিয়ে দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,

——“ইউ ব্লাডি, লায়ার, চিট।”

মুহিত আরো কিছু বলতে নিলে পুলিশ মুহিতকে থামিয়ে বলল,,,,,,

—–“শান্ত হন মুহিত। উনার পুরো কথা শুনতে দিন।”

এর মাঝেই রূপ হন্ন হয়ে সিঁড়ি বেয়ে দৌঁড়ে এসে সাকিবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ল। মারু এসে মৃন্ময়ের পাশে দাঁড়ালো। রূপ দাঁত গিজগিজ করে সাকিবের গালে জোরে এক চড় বসিয়ে বলল,,,,,,,

—–“ছি সাকিব ভাই ছি। তুমি এতো নিচ আমার জানা ছিলো না। ছোট্ট এক্টা পুচকি মেয়েকে তুমি আমাদের পিছনে লেলিয়ে দিলে? মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিলে? সাথে আমাদের ও ফাঁসাতে চাইলে?”

সাকিব গালে হাত দিয়ে থতমত খেয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এ্যাঁ। এসব তুমি আবোল তাবোল কি বলছ? আমি কোন মেয়ের জীবন নষ্ট করলাম? তাছাড়া আমি কেনো বেছে বেছে তোমাদের ই ফাঁসাতে যাবো?”

রূপ আঙ্গুল উঠিয়ে খুব চেঁচিয়ে সাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“এক্টু পরেই আদ্রিতা আসবে। সাথে আন্টি ও। তুমি আদ্রিতার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছ। সাথে সানায়া আপু ও আছে। তোমরা দুজন আদ্রিতাকে আমাদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছ। তোমাদের নির্দেশেই আদ্রিতা আমাদের রুমে ড্রাগসের প্যাকেট রেখে এসেছে। মারজানা আন্টি আদ্রিতাকে হাতে নাতে ধরে ফেলেছে। আদ্রিতা এখন নেশা করতে না পেরে পাগল হয়ে যাচ্ছে। কেনো করলে এটা তুমি সাকিব ভাই? কেনো? কেনো মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিলে?”

কথাগুলো বলেই রূপ মুহিতকে ঝাপটে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল,,,,,

—–“জানো মুহিত…..সোহেলী আন্টি এক্টু আগে কল করেছে। নেশার তাড়নায় আদ্রিতা কেমন করছে। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে আদ্রিতা আমাদের ফ্ল্যাটে ছুটে যায়। আন্টি ও নিশব্দে আদ্রিতার পিছু পিছু আমাদের ফ্ল্যাটে চলে যায়। ফ্ল্যাটের নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে আদ্রিতা আমাদের বেড রুমে ঢুকে আলমারির ড্রয়ার থেকে ড্রাগসের প্যাকেট নিয়ে নেশা করা শুরু করে। আন্টি স্বয়ং চোখে সব দেখে ফেলে। আদ্রিতাকে মার ধর করলে আদ্রিতা সব সত্যি বলে দেয়। আদ্রিতাই আমাদের অনুপস্থিতিতে আমাদের রুমে ঢুকে ড্রাগসের প্যাকেট গুলো আলামরীতে রেখে দেয়। সবটাই সাকিব ভাই আর সানায়া আপুর নির্দেশে। সাকিব ভাই আদ্রিতাকে প্রেমের জালে ফাসিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। ঐ দিন সাকিব ভাইয়ের নির্দেশেই আদ্রিতা তোমার চা এ ড্রাগস মেশায়। কাজী সাহেবকে ঐ দিন আদ্রিতাই বাড়ি থেকে হুমকি দিয়ে বের করে দেয়। এতে ও সাকিব ভাইয়ের হাত ছিলো। এখন তো মনে হচ্ছে মারু আর মৃ্ন্ময় ভাইয়ের বিয়ের কথাটা ও আদ্রিতাই লিক করেছে। কারণ, ঐ দিন আমি মারুকে আমার জা হিসেবে আদ্রিতার সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলাম।”

মুহিত রূপকে বুক থেকে উঠিয়ে রূপের চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে বলল,,,,,,,

—–“রূপ প্লিজ শান্ত হও। সোহেলী আন্টি সত্যি সত্যি আসছে তো? ব্যাপারটা এখানেই ক্লিয়ার হোক। এক্টু শান্তি চাই আমি। এতো মানুষের এতো এতো প্যারা আমি নিতে পারছি না।”

এর মাঝেই আদ্রিতাকে নিয়ে সোহেলী চৌধুরী আর আমজাদ চৌধুরী হাজির। সোহেলী চৌধুরী কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে রেখেছে। আমজাদ চৌধুরীর মুখটা নেতিয়ে ছোট হয়ে গেছে। আদ্রিতা মাথাটা নিঁচু করে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সোহেলী চৌধুরী ধীর পায়ে হেঁটে মুহিতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,,

——‘মুহিত বিশ্বাস করো আমার মেয়ে বুঝে শুনে কিছু করে নি। ওকে ফাসানো হয়েছে। বুঝতেই তো পারছ আমার মেয়েটার এখন আবেগের বয়স। তোমার ভাই আমার মেয়েকে প্রেমের জ্বালে ফাসিয়ে তোমাদের ক্ষতি করতে চেয়েছিলো। যারা যারা তোমাদের ক্ষতি করতে চেয়েছিলো তাদের সবাইকে তুমি পুলিশে দাও। চাইলে আমার মেয়েকে ও দাও। আমার কোনো অভিযোগ নেই। পাপ করলে তো পাপের সাজা পেতেই হবে। হোক সে আমার মেয়ে বা অন্য কেউ। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”

সোহেলী চৌধুরীর প্রতি রূপ আর মুহিতের সম্মানটা যেনো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। উনার সততা বরাবরাই রূপ আর মুহিতকে মুগ্ধ করে। আদ্রিতা কাঁদতে কাঁদতে রূপের হাত দুটো চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,

——“আমাকে মাফ করে দিন ভাবী। সাকিবের কথায় আমি আপনাদের ক্ষতি করতে চেয়েছি। সাকিব বলেছে আমি যদি ওর হয়ে আপনাদের বিরুদ্ধে কাজ করি তবে সে আমাকে বিয়ে করবে। আসলে ভাবী আমি সাকিবকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম ওর কথা শুনতে। ওর সাথে মিশে আমি ড্রাগসের প্রতি ও আসক্ত হয়ে উঠেছি। আমি আবারো আমার সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই ভাবী। প্লিজ আমাক হেল্প করুন। আমি এবার সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবো। আমাকে এক্টা বার সুযোগ দিন।”

রূপ আদ্রিতার হাত জোড়া শক্ত করে ধরে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“তোমার উপর আমাদের কোনো অভিযোগ নেই আদ্রিতা। আন্টি যেমন ভালো মনের মানুষ, তুমি ও ঠিক তেমনটাই। হয়তো কিছুটা সময়ের জন্য বিগড়ে গিয়েছিলে। যাই হোক, আশা করি তুমি ঠকে বুঝেছ। নেক্সট টাইম এমন ভুল গুলি করবে না।”

—–“না ভাবী করব না। প্রমিস করছি। আমি খুব ভালো হয়ে যাবো। জানেন ভাবী…..সানায়া আপু আমাকে জোর করে ড্রাগস দিতো। ঐ দিন সানায়া আপু আর সাকিব মিলে আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলো। ওরা আমাকে জোর করে ড্রাগস দিয়ে এসেছে। এর পর থেকে আমি ড্রাগসের প্রতি আসক্ত হয়ে যাই। ওদের কথা মতো চলতে থাকি। ঐ দিন কাজী সাহেবকে আমিই মার ধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেই। কাজী সাহেবকে জানে মারার হুমকি দেই। সানায়া আপু আগে থেকেই আমাকে সব শিখিয়ে পড়িয়ে রেখেছিলো।”

রূপ আদ্রিতাকে ছেড়ে সানায়ার মুখোমুখি দাঁড়াল। সানায়া এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। নিজের পক্ষে কোনো সাফাই ই দিচ্ছে না। বেচারা বহুত ভয় পেয়ে গেছে। সোহেলী আহমেদ চোখ লাল করে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ দাঁত, মুখ খিঁচে ঠাস করে সানায়ার গালে জোরে এক চড় বসিয়ে দিলো। সানায়া বেকু্ব হয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়ি ভর্তি সবাই অবাক। মারু খুশিতে মৃন্ময়কে ঝাপটে ধরে দাঁত বের করে হাসছে। মারু পারছে না নিজে গিয়ে সানায়ার দু গালে দুটো ট্রাস ট্রাস করে দশ আঙ্গুল বসিয়ে দিয়ে আসতে। রূপ চেঁচিয়ে সানায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“তুমি এতোটা জঘন্য আর নিচ আমার সত্যিই জানা ছিলো না। শুধু তুমি কেনো বলছি, তোমার ভাইটা ও জঘন্য। তোমরা মানুষের কাতারে পড়ো ই না। জানোয়ার বললে ও তোমাদের ভুল হবে। এক্টা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিলে? আমার জীবনটা ও নষ্ট করে দিতে চাইছিলে? মুহিত তোমাকে সহ্য করতে পারে না, তা জেনে ও তুমি মুহিতের পিছনে পড়ে আছো? এই তোমার মধ্যে কি লজ্জা নামক বস্তুটা নেই? এতোটাই নির্লজ্জ তুমি?”

রূপ কিছুটা হাঁফিয়ে আবার বলল,,,,,,

—-“তোমাদের শাস্তি চাই আমি। সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”

মুহিত রূপকে দমিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“স্যার….. আশা করি আপনি সব প্রমাণ পেয়ে গেছেন। আমার রুমে কায়দা করে ড্রাগস রাখা হয়েছে। সবটাই আদ্রিতাকে দিয়ে সাকিব আর সানায়া করেছে। আমাকে ফাসানোর জন্য। সব প্রমান আপনার হাতেই। এবার আপনিই জাজ করুন আপনি কি করবেন।”

পুলিশ বাড়ি ভর্তি সবার সামনে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“মিঃ মুহিতের দেওয়া প্রত্যেকটা প্রমাণ অনুযায়ী এটাই প্রমানিত হয় যে, সাকিব এবং উনার বোন দুজনই ড্রাগসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এমনকি এনারা ইচ্ছে করে মিঃ মুহিতকে ফাসানোর জন্য আদ্রিতা নামের মেয়েটাকে ইউজ করেছে। তবে আমরা সাকিব এবং উনার বোনের সাথে আদ্রিতাকে ও থানায় নিয়ে যেতে চাই। মিস আদ্রিতার বয়ান লিখে কালকের মধ্যেই উনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর মিঃ সাকিব এবং মিস সানায়ার শাস্তি ঠিক কি হবে তা অনেক পরে জানা যাবে। আমরা এখন তিনজন আসামীকে নিয়েই থানায় যাচ্ছি।”

সাকিবের চোখে, মুখে এবার ভয়ের ছাপ দেখা গেলো। সানায়াকে একজন লেডি কন্সটেবল টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিতা মাথা নিচু করে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে বসে পড়ল। পুরো বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেছে। মারু আর রূপ মিলে মারজানা চৌধুরীকে শান্তনা দিচ্ছে। মায়া আহমেদ, সোহেলী আহমেদ রূপকে চোখ দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। মৃন্ময়, মুহিত আর সানোয়ার আহমেদ পুলিশের সাথে কথা বলছে। রেজাউল আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে।

প্রায় পাঁচ মিনিট পর। পুলিশ তিন আসামীকে নিয়ে থানার উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে দিলো। মুহিত রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“রূপ ল্যাকেজ পএ গুছিয়ে বাড়ি চলো। মারজানা আন্টির সাথে আমরা ফ্ল্যাটে ফিরে যাবো। এই বাড়িতে আর এক মুহূর্ত না।”

মারু মুখটা কালো করে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ মাথাটা নিচু করে দু তলায় উঠে ল্যাকেজ পএ গুছিয়ে ল্যাকেজ নিয়ে আবারো নিচ তলায় নেমে এলো। ড্রইং রুমে সবাই উপস্থিত। মায়া আহমেদ, সোহেলী আহমেদ, রেজাউল আহমেদ, সানোয়ার আহমেদ, মৃন্ময়, মারু। সবার সামনে মুহিত সানোয়ার আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“আব্বু…… এক্টা ব্যাপার এখানে ক্লিয়ার করা দরকার।”

মুহিত কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,,

—–“আব্বু….. তোমার সম্পওিতে আমার কোনো লোভ নেই। না আমার ওয়াইফের আছে। আমার দুজন দিব্যি আছি। খেয়ে, পড়ে বেঁচে আছি। হয়তো আমাদের জীবনে কোনো বিলাসীতা নেই। হ্যাঁ, তবে এখন নেই তো কোনো এক সময় হবে। কষ্ট এবং পরিশ্রমের দ্বারা আমি আমার ভাগ্য পরিবর্তন করব। ঠিক তোমার মতো। তুমি যেমন কষ্ট করে এই বিশাল অট্টালিকা তৈরী করেছ আমি ও ঠিক তেমন কষ্ট করেই অন্তত আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই তৈরী করব। সর্বোপরি আমি তোমাকে এটা বুঝাতে চাইছি যে, তোমার সম্পওি আমার লাগবে না। কোনো ভাগ ই আমি চাই না। ছায়া হয়ে শুধু আমার পাশে থেকো তাহলেই হবে। তুমি পাশে থাকলে আমি জোর পাবো। সাহস পাবো। নির্ভয়ে দুকদম সামনে এগিয়ে যেতে পারব।”

মুহিত চোখে জল নিয়ে আবারো বলল,,,,,,,

—–“আব্বু……আমি আর এই বাড়িতে ফিরতে চাই না। এই বাড়ির কেউ আমাকে চায় না। সবাই আমাকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে। কাছের মানুষদের এতো ঘৃণা আসলেই মেনে নেওয়া যায় না। এর চেয়ে তো মৃত্যু শ্রেয় আব্বু।”

রূপ চোখের জল ছেড়ে খুব জোরে মুহিতের হাত আঁকড়ে ধরল। সানোয়ার আহমেদ চোখে রাশ জল নিয়ে মুহিতকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,,

—-“বাবা তোমার পাশে আছি মুহিত। ছায়া হয়ে আজীবন তোমার পাশে থাকব। তুমি এগিয়ে যাও। পাছে লোকের কথায় কান দিও না। তোমার তো দরকার নেই তাদের দিকে তাকানোর। তোমার লক্ষ্য কেবল সামনে এগিয়ে যাওয়া। আমি ও চাই না তুমি এই বাড়িতে ফিরে আসো। এই বাড়ির প্রত্যেকটা লোকই দূষিত। এই দূষিত পরিবেশে রূপকে নিয়ে থাকা তোমাদের জন্য সেইফ না। তুমি রূপকে নিয়ে তোমার মতো করে বাঁচো। তোমার সাফল্যের অপেক্ষায় রইলাম। আমি, মৃন্ময় তোমার পাশে সবসময় আছি আর ভবিষ্যতে ও থাকব।”

মৃন্ময় ও এসে মুহিতকে ঝাপটে ধরে চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,,,,

—–“তুই চিন্তা করিস না মুহিত। আমি আর আব্বু সবসময় তোর পাশে থাকব। তুই একদিন খুব বড় হবি ভাই। আমাদের চেয়ে ও অনেক বড় হবি। তুই যেমন অধ্যবসায়ী তেমন কঠোর পরিশ্রমী। তোর উন্নতি হবেই।”

মারু রূপকে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি জুড়ে দিলো। মুহিত, রূপ সবার থেকে বিদায় নিয়ে সদর দরজার বাইরে পা রাখতে নিলেই রেজাউল আহমেদ চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,,,,,

—–“মুহিত…….. আমার ছেলে এবং মেয়েকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে আমার এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে না। তুই খামোখা আমাদের পেছনে লাগতে গেলি। সম্পর্কটা নষ্ট করলি।”

—–“চাচ্চু……. টাকা থাকলে বাঘের চোখ ও মিলে। টাকার জোরে তুমি যা তা করতেই পারো। তবে মাঝখান থেকে তোমার সম্মানটা হারালো। আর রইল সম্পর্কের কথা? আমাদের সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিলো না। না কখনো হবে।”

মুহিত আর কথা বাড়ালো না। রূপকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো। মায়া আহমেদ মাথা নিচু করে বসে আছে।

রূপদের সাথে মারজানা চৌধুরী, আমজাদ চৌধুরী ও গাড়িতে উঠে পড়ল। মুহিত ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে দিলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো মুহিতদের ফ্ল্যাটের সামনে।

ফ্ল্যাটে পৌঁছেই রূপ কিচেন রুমে চলে গেলো। সকাল ধরে কারোর ই তেমন খাওয়া হয় নি। এখন রান্না বসাতে হবে।

#চলবে,,,,,,,,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here