এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ৩৬+৩৭

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

ফ্ল্যাটে পৌঁছেই রূপ কিচেন রুমে চলে গেলো। সকাল ধরে কারোর ই তেমন খাওয়া হয় নি। এখন রান্না বসাতে হবে।

কোঁমড়ে কাপড় গুজে রূপ খুব মনযোগ দিয়ে রাঁধতে শুরু করল। মুহিত ফ্রেশ হয়ে রূপকে হেল্প করতে কিচেন রুমে চলে এলো। আচমকাই মুহিত পেছন থেকে রূপকে ঝাপটে ধরল। রূপ ভয়ে খানিক কেঁপে উঠল। এক্টু আগের ঘটনা গুলো রূপ মনে মনে আওড়াচ্ছিলো। মুহিতের এমন আচমকা এ্যাটাকে রূপ বিচলিত হয়ে উঠে।

রূপের কাঁপা কাঁপি দেখে মুহিত রূপের গলায় মুখ ডুবিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,,,

—–“এতো ভয় পাচ্ছ কেনো রূপ? আমাদের সাথে আর কিছুই খারাপ হবে না। এবার থেকে যা হবে খুব ভালো হবে। আমরা এক্টু শান্তিতে শ্বাস নিতে পারব।”

রূপ চোখ জোড়া বন্ধ করে মুহিতের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“আমি ও এটাই চাই মুহিত। এক্টু শান্তিতে শ্বাস নিতে চাই। গুছিয়ে এক্টু সংসার করতে চাই।”

মুহিত রূপের মাথায় চুমো খেয়ে ম্লান হেসে বলল,,,,,

—–“এক সপ্তাহ বাদেই আমরা হানিমুনে যাচ্ছি রূপ। এখন থেকেই তৈরী হয়ে যাও।”

রূপ খুব অবাক হয়ে চুলার গ্যাসটা কমিয়ে পিছু ফিরে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“কি বললে? আমরা সত্যি সত্যি হানিমুনে যাবো?”

—–“হুম বৌ যাবো। মাউন্ডকে রিফ্রেশ করার জন্য যাওয়াটা খুব জরুরী। দুজনই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। রিফ্রেশমেন্টের দরকার আছে।”

রূপ লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মুহিতের বুকে মাথা ঠেকিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,,

—–“মুহিত….. আমাদের মাথে মারু আর মৃন্ময় ভাই ও যাবে প্লিজ। ওদের ও তো হানিমুনে যাওয়া হয় নি।”

—–“তা ঠিক। আমি ভেবে রেখেছি মৃন্ময় ভাইকে ও বলব। সব্বাই একসাথে যাবো। বেশ মজা হবে।”

রূপ বেশ এক্সাইটেড হয়ে মুহিতের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,,,

—–“তাহলে আমি এখনই মারুকে খুশির খবরটা দিয়ে আসছি। ওর নাম্বারে ছোট্ট এক্টা টেক্সট করে দিলেই হবে।”

—–“এখন না রূপ। ঐ বাড়ির অবস্থা বিশেষ ভালো না। পরিস্থিতি ঠিক হোক এরপর জানানো যাবে।”

রূপ মলিন হেসে মুহিতের দু কাঁধে হাত ঝুলিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“আমার জন্য আজ সবাই সাফার করছে। সাকিব ভাই আমার জন্যই এতোটা নিচে নেমেছে। সানায়া আপু আমার সাথে হিংসে করেই আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছে। আমার জন্যই আজ তুমি নিজের পরিবার ছেড়েছ। আমি এত্তো এত্তো অপরাধের বোঝা মাথায় রেখে কিভাবে বাঁচব মুহিত? এসব ভাবতে নিলেই আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। দমটা আটকে আসে। শ্বাস ভারী হয়ে উঠে। নিজেকে তখন পৃথিবীর সবচে নিকৃষ্ট প্রাণী বলে মনে হয়। হাঁফিয়ে উঠছি আমি।”

—–“তুমি এতোক্ষন যা যা বললে এসবের মাঝে আমি কোনো অপরাধ খুঁজে পাচ্ছি না। অপরাধ তো তোমার না। অপরাধ হলো আমাদের মতো মানুষদের বিগড়ে যাওয়া মনমানসিকতার। সাকিব ভাই চাইলে পারত আমাদের দুজনের মাঝখান থেকে সরে যেতে। সানায়া চাইলেই পারত তোমার সাথে হিংসে না করে আপোসে সবটা মেনে নিতে। আমার পরিবারের মানূষরা চাইলেই পারত আমাকে ওদের পরিবারের ছেলে হিসেবে মেনে নিতে। আমাকে ওদের কাছে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু না ওরা কেউ ই তা করে নি। করবে কি করে? ওদের চিন্তাধারা আর মন সানসিকতা হলো নিকৃষ্ট প্রাণীদের সমতুল্য। যা আমাদের মতো সভ্য মানুষের চিন্তাধারা বা মন মানসিকতার সাথে একদমই যায় না। সো তুমি এসব টপিক আর তুলবে না। জাস্ট ইগনোর করো। ভাল্লাগে না এসব। তিক্ত হয়ে গেছি। ডিপ্রেশানের চরম পর্যায়ে চলে গেছি। এক্টু নির্বিঘ্নে শ্বাস নিতে চাই।”

রূপ মুহিতের চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আচমকাই মুহিতের ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। মুহিত চোখ বড় বড় করে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ মলিন হেসে মুহিতের শার্ট আঁকড়ে ধরেল। আস্তে আস্তে মুহিত চোখ জোড়া বন্ধ করে রূপের ঠোঁটে সফটলি কিস করতে লাগল।

প্রায় দশ মিনিট পর রূপ মুহিতের থেকে ঠোঁট জোড়া ছাড়িয়ে মুহিতের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,

—–“শান্তি পেয়েছ? এবার ভাল্লাগছে?”

মুহিত বাঁকা হেসে রূপের হাত জোড়া চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,

—–“না শান্তি হই নি। আমার আরো আরো আরো লাগবে।”

রূপ লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,,,

—–“হাত ছাড়ো বলছি। রান্না এখনো বাকি আছে।”

—–“রান্না করার সময় চলে যাচ্ছে না। পরে ও রান্না করা যাবে।”

রূপ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“উফফফ মুহিত। আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। এখনই রান্না করতে হবে।”

মুহিত এবার রূপের হাত জোড়া ছেড়ে চুলার গ্যাস বাড়িয়ে দিয়ে মাছ ভাঁজা শুরু করল। রূপ মৃদ্যু হেসে অন্য চুলায় ভাত বসিয়ে দিলো। মুহিত মাছ ভাজছে আর রূপকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—–“রূপ….. আজ আমি তরকারী রান্না করব। তোমার কিছু করতে হবে না। তুমি হয়তো অনেক টায়ার্ড।”

রূপ বড় এক্টা হাই তুলে বলল,,,,,,,

—–“হুম খুব টায়ার্ড। ঘুম ও পাচ্ছে।”

—–“এক্টু দাঁড়াও। রান্না করে নেই। এরপর খেয়ে দেয়ে দুজনই লম্বা এক্টা ঘুম দেবো।”

রূপ মৃদু হেসে মাথা নাঁড়লো। প্রায় এক ঘন্টা পর। মুহিতের রান্না শেষ হলো। ভাত ও হয়ে গেছে। রূপ আর মুহিত ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে গেলো। দুজন একসাথে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো। মুহিত রূপকে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে রেখেছে। রূপ মুহিতের বুকে মাথা রেখে আনমনা হয়ে বলল,,,,,,

—–“মুহিত…..তোমার কি মনে হয় না একবার নোয়াখালী যাওয়া উচিত? মারুর পরিবারের হাল অবস্থা জানা উচিত?”

—–“দু,একদিন পরেই যাবো। মৃন্ময় ভাই বলেছে। মারু ভাবী ও নাকি কান্না কাটি করে। আসলেই ব্যাপারটা সলভ করা উচিত।”

—–“তাহলে তো অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে।”

—–“হুম একদিনের জন্য।”

—–“অনিক এখন কি অবস্থায় আছে আল্লাহ্ ই জানে।”

—–“হয়তো আস্তে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।”

—–“অনিক না আবার আমাদের পিছনে লেগে বসে। ওর সাথে কিন্তু বিশ্বাস নেই।”

——“আমি ও তাই ভাবছি। নোয়াখালী গেলে অনিকের ব্যাপারটা ও সলভ করে আসব। ঠান্ডা মাথায় ওকে বুঝিয়ে আসব। আশা করি বুঝবে।”

—–“মারুকেও নিয়ে যাবে তোমাদের সাথে?”

—–“না শুধু আমি আর মৃন্ময় ভাই যাবো।”

রূপ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলল,,,,,

—–“কাল দোলা আপু্র রিসিপশানে যাবে না?”

——“না রূপ। ঐ পরিবার থেকে যথেষ্ট দূরে থাকার চেষ্টা করব। তাছাড়া এতো বেশি ছুটি নেওয়া যাবে না। সবে মাএ নতুন কোম্পানীতে জয়েন করলাম। এর মাঝে একদিন নোয়াখালী যেতে হবে। কয়েকদিন বাদে আবার হানিমুন। সো যতো অফিস কম কামানো যায় ততো ভালো।

——“হুম। কাল তো একবার থানায় ও যেতে হবে। আদ্রিতাকে ছাড়িয়ে আনতে হবে। আন্টির চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না।”

——“রাতে যাবো। আমি রিস্ক নিয়ে আদ্রিতাকে ছাড়িয়ে আনব।”

—–“সাকিব ভাইরা ও খুব সহজে ছাড়া পেয়ে যাবে। আঙ্কেল ঠিক ছাড়িয়ে আনবে।”

—–“আশা করি এবারের চোটে সাকিব ঠিক হয়ে যাবে। আর যদি ও ঠিক না হয় তো এবার ওকে জানেই মেরে ফেলব।”

——“ছি মুহিত। এসব কথা আর মুখে ও আনবে না। আমরা ওর থেকে সাবধানে থাকব তাহলেই হবে।”

—–“হুম অনেক হয়েছে। এবার ঘুমাও।”

—–“না ঘুমাবো না। ঘুম আসছে না।”

মুহিত রূপের কানের লতিতে আস্তে এক্টা বাইট দিয়ে বলল,,,,,

—–“ঘুম আসছে না, নাকি অন্য কিছু চাইছ?”

রূপ লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,

—–“বুঝ ই যেহেতু তাহলে আবার জিগ্যেস করছ কেনো?”

মুহিত বাঁকা হেসে এক ঝটকায় রূপকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। রূপ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত এক্টু এক্টু করে রূপের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। রূপ লজ্জায় উল্টো দিকে মুখ ফেরাতে নিলেই মুহিত তাড়াহুড়ো করে রূপের ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। রূপ পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে মুহিতের পিছনের চুল আঁকড়ে ধরল। ধীরে ধীরে মুহিতের ভালোবাসা বাড়তে থাকল রূপ ও মুহিতের সাথে তাল মেলাতে লাগল। আজ দুজন দুজনের সম্মতিতেই নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে।

পরের দিন,,,,,,

সকাল আটটা। রূপ ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে কিচেনে চলে গেলো। ব্রেকফাস্ট বানাতে। মুহিত ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছে। প্রায় পনেরো মিনিট পর মুহিত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমে ঢুকল। বেডের উপর মুহিতের ফোনটা অনেকক্ষন ধরেই বাজছে। মুহিত দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলো। স্ক্রীনে মৃন্ময়ের নাম্বারটা ভাসছে। মুহিত আর দেরি না করে ফোনটা পিক করে নিলো। ঐ পাশ থেকে মৃন্ময় বলে উঠল,,,,,

—–“হ্যালো মুহিত?”

মুহিত গলাটা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,

—–“হ্যাঁ ভাই। বল?”

—–“কই তুই?”

—–“বাড়িতে। অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।”

—–“না গেলে হয় না?”

—–“কেনো ভাই?”

—–“আজ দোলার রিসিপশান। তোরা আসবি না?”

—–“স্যরি ভাই। ইচ্ছে নেই।”

—–“আব্বু কষ্ট পাবে।”

—–“আমি পরে আব্বুর সাথে পার্সোনালী কথা বলে নিবো।”

—–“ওকেহ্। যা ভালো বুঝিস।”

মৃন্ময় কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—–“আচ্ছা শুন। কাল নোয়াখালী যাবো।”

—–“কালই যাবি?”

—–“হুম। মারুর কান্না কাটি আর সহ্য হচ্ছে না। কিছু এক্টা করা দরকার। তুই অফিস থেকে ছুটি নিস।”

—–“ওকেহ্। তাহলে কাল সকালে তুই ভাবীকে নিয়ে ফ্ল্যাটে চলে আসিস। ওদের দুজনকে ফ্ল্যাটে রেখে আমরা নোয়াখালী রওনা দিবো।”

—–“ওকেহ্ ডান।”

—–“রাখছি তাহলে।”

—–“হুম রাখ।”

মুহিত কলটা কেটে কাবার্ড থেকে অফিসের জন্য প্যান্ট, শার্ট বের করে চট জলদি রেডি হয়ে নিলো। রূপ পরটা আর ওমলেট করে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাজিয়ে দিলো। মুহিত অফিসের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো। মুহিতকে দেখে রূপ এক্টা পেয়ালায় মুহিতের খাবার সার্ভ করে দিলো। মুহিত হেচকা টান দিয়ে রূপকে পাশের চেয়ারটায় বসিয়ে দিলো। মুহিত পরোটা মুখে দিচ্ছে আর রূপকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—–“রূপ খেয়ে নাও। আমি যাওয়ার পর তো কিছুই মুখে দেবে না। সো এখন আমার সাথেই খেয়ে নাও।”

—–“ওকে ওকে খেয়ে নিচ্ছি। তুমি এতো তাড়াহুড়ো না করে আস্তে ধীরে খাও। নয়তো বিষম লেগে যাবে।”

—–“নয়টা অলরেডি বেজে গেছে। দেরি করা যাবে না।”

মুহিত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবারো রূপকে বলল,,,,,,

—–“শুনো রূপ….. তুমি রান্না বান্না করে আন্টির কাছে চলে যাবে। সারা ক্ষন আন্টির সাথে থাকবে। আমি ফিরলে পরে ফ্ল্যাটে আসবে।”

——“ঠিকাছে জনাব। আমাকে নিয়ে এতো টেনশান করতে হবে না। আমি আন্টির কাছে সেইফ থাকব।”

—–“আমি জানি সেইফ থাকবে। এরপরে ও ভয় হয়।”

রূপ মুহিতের কাছে এগিয়ে মুহিতের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,

—–“আমাকে নিয়ে এতোটা টেনশান করো না মুহিত। এক্টা মানুষ যদি এতো গুলো টেনশান মাথায় রেখে চলে তবে যে কোনো সময় এক্টা অঘটন ঘটে যেতে পারে। তখন আমার কি হবে?”

—–“কিছু হবে না আমার। তোমাকে নিয়ে টেনশান করাটা অস্বাভাবিক কিছু না। প্রতিটা ছেলের লাইফেই টেনশান থাকে। কারো ক্যারিয়ার নিয়ে, কারোর পরিবার নিয়ে, কারোর সংসার ধর্ম নিয়ে। হয়তো আমার টেনশানটা অধিক। এটা ব্যাপার না। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি পাশে থাকলে আমি সব পারব।”

——“পাশে আছি মুহিত। এভাবেই সারা জীবন পাশে থাকব।”

এর মাঝেই ঘড়িতে নয়টার ঘন্টা বেজে উঠল। মুহিত তাড়াহুড়ো করে ব্রেকফাস্ট করে রূপের থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছুটে চলল গাড়ির পার্কিং এরিয়ায়। গাড়িতে উঠে মুহিত হাই স্পিডে গাড়ি ছেড়ে দিলো। সাড়ে নয়টার আগে তাকে অফিস পৌঁছাতে হবে।

রূপ ফ্ল্যাটের দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে রুম গোছানোর কাজে লেগে পড়ল। আস্তে ধীরে রূপ থালা, বাসন ধুঁয়ে, রান্না বান্না করে, শাওয়ার নিয়ে, দুপুরের লাঞ্চ করে দুপুর দুইটার আগেই মারজানা চৌধুরীর ফ্ল্যাটে চলে গেলো। মারজানা চৌধুরী মাএ গ্যাসে রান্না বসিয়েছে। মেয়ের শোকে উনি কাতর হয়ে আছে। খাওয়া, দাওয়া সব চুলোয় গেছে। রূপ উনাকে শান্তনা দিচ্ছে। এরপরে ও উনি কেঁদেই চলছে। রূপ উনাকে রুমে শুইয়ে দিয়ে রান্না করার দায়িত্বটা হাতে নিলো। রূপ বেশ মনযোগ দিয়ে রান্না বান্না করে মারজানা চৌধুরী আর আফ্রিদাকে জোর করে খাইয়ে দিলো।

রূপ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে মারজানা চৌধুরীকে শান্ত করার। উনাকে বুঝানোর। কিন্তু মেয়ের অমন কুকর্ম উনার কোমল মনটাকে বিষিয়ে দিচ্ছে। এরপরে ও রূপ চেষ্টা করছে যতোটা পারছে। এভাবে বুঝাপড়ায় কেটে গেলো প্রায় অনেক গুলো ঘন্টা। ঘড়িতে এখন রাত আটটা বাজছে। মুহিত এখনো বাড়ি ফিরে নি। রূপ বেশ টেনশানে পড়ে গেলো। কল করার জন্য ফোনে ব্যালেন্স ও নেই। মারজানা চৌধুরীর ফোনে ও ব্যালেন্স ফুরিয়ে গেছে। তাই রূপ কোনো ভাবেই মুহিতের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে পারছে না।

প্রায় আধ ঘন্টা পর। ফ্ল্যাটের কলিং বেল বেজে উঠল। রূপ সোফা থেকে উঠে এক ছুটে ফ্ল্যাটের মেইন দরজায় চলে গেলো। দরজা খোলার সাথে সাথেই রূপ মুহিতের হাসি মুখটা দেখতে পেলো। মুহিতকে দেখে রূপ চোখের পানি ছেড়ে টাইট করে মুহিতকে ঝাপটে ধরল। ভয়ে রূপের বুকটা কাঁপছে। মুহিত বেশ বুঝতে পেরেছে রূপ খুব ভয় পেয়েছে। মুহিত মৃদ্যু হেসে রূপকে বুক থেকে উঠিয়ে রূপের চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে বলল,,,,,,

—–“স্যরি রূপ। অনেকটা দেরি হয়ে গেলো। আসলে আদ্রিতাকে নিয়ে একেবারে বাড়ি ফিরলাম। পুলিশ আদ্রিতার বয়ান নিয়ে আদ্রিতাকে ছাড়ল। আমি ও ওর পক্ষে সাইন করে ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসলাম।”

রূপ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“আদ্রিতা কোথায়?”

—–“গাড়িতে বসে আছে। আন্টির ভয়ে রুমে ঢুকতে চাইছে না। আন্টি নাকি ওকে কেলাবে।”

রূপ অট্ট হেসে দৌঁড়ে বাড়ির পার্কিং এরিয়ায় চলে গেলো। আদ্রিতা গাড়িতে ঘাপটি মেরে বসে আছে। রূপ গাড়ির দরজা খুলে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“এই তুমি এখানে বসে আছো কেনো?”

আদ্রিতা ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আদ্রিতা রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“ভাবী…..আমি এখানেই বসে থাকব। রুমে গেলে আম্মু আমাকে মারবে।”

—–“কিচ্ছু করবে না। ভাবী আছি তো। ঠিক তোমাকে বাঁচিয়ে নিবো।”

—–“সত্যি তুমি আমাকে বাঁচিয়ে নিবে?”

—–“হ্যাঁ তো সত্যি। তাড়াতাড়ি নেমে পড়ো।”

—–“ভাবী আমার শরীরটা কেমন যেনো করছে। হাত, পা চুলকাচ্ছে।”

রূপ বেশ বুঝতে পেরেছে আদ্রিতা ড্রাগসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। একদিন নেশা না করলেই এখন থেকে সে ভাইলেন্ট হয়ে উঠবে। আদ্রিতার এখন সুস্থ হওয়াটা খুব জরুরী। সংশোধনাগারে পাঠাতে হবে। যেখানে নেশা ছাড়ানো হয়। রূপ মলিন হেসে আদ্রিতাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,

—–“চিন্তা করো না আদ্রিতা। কিছুদিনের মধ্যেই তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে। আমরা তোমাকে আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনব। আজকের রাতটা তোমাকে কষ্ট করতে হবে। কাল থেকে তোমাকে নেশা ছাড়ানোর সংশোধনাগারে রেখে আসব। ইনশাআল্লাহ্ কিছু দিনের মধ্যেই তুমি ঠিক হয়ে যাবে।”

আদ্রিতা মাথা নাড়ালো। রূপ আদ্রিতাকে নিয়ে ফ্ল্যাটের ভিতর ঢুকে মারজানা চৌধুরীকে মানিয়ে আদ্রিতাকে খাইয়ে দাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আসল। মারজানা চৌধুরী মেয়েকে বুকে নিয়ে শান্তির ঘুমম দিলো।

মুহিত অনেক আগে ফ্ল্যাটে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কাজে বসে গেলো। রূপ মাএ রুমে ঢুকল। রাতের খাবার গরম করে রূপ মুহিতকে ডেকে দিলো। মুহিত কাজ রেখে রূপকে নিয়ে ডিনার করে রুমে ঢুকে আবারো ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল। রূপ কিছুক্ষন ফোনে স্ক্রলিং করে যেই না কম্বল মুড়ি ঘুমাতে যাবে অমনি মুহিত ল্যাপটপ গুছিয়ে দৌঁড়ে এসে রূপের গায়ের উপর শুয়ে পড়ল।

রূপ বেকুব হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত চোখ মেরে রূপের ঠোঁটে এক্টা চুমো খেয়ে রূপকে গালে স্লাইড করছে আর বলছে,,,,,,,

—–“অফিস থেকে ছুটি নিলাম।”

—–“কেনো?”

—–“কাল নোয়াখালী যাবো?”

—–“মৃন্ময় ভাই ও যাবে?”

—–“হুম। তুমি আর ভাবী ফ্ল্যাটে থাকবে।”

—–“তার মানে কাল মারু আসবে?”

—–“হুম। কাল সক্কাল সক্কাল ভাবী আর মৃন্ময় ভাই আমাদের ফ্ল্যাটে চলে আসবে।”

—–“ইসসসস কি যে খুশি লাগছে। তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।”

মুহিত বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—–“হুম তো এবার আমাকে ও খুশি করো।”

—–“পারব না। ঘুম আসছে আমার।”

—–“ঘুমাতে দিলে তো!”

মুহিত আর কথা না বাড়িয়ে রূপকে আবারো নিজের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রূপ খিলখিল হেসে মুহিতের বুকে কিল, ঘুঁষি মেরেই যাচ্ছে। মুহিত অসবে পাওা নিয়ে রূপকে নিজের করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

পরের দিন,,,,,,,,,
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

পরের দিন,,,,,,

সকাল সাতটা। মুহিত ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার করে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। অফিসের কিছু ইম্পরটেন্ট কাজ শেষ করে নিচ্ছে। আজ তো আর অফিসে যাওয়া হবে না। তাই বাড়িতে বসে যতোটা সম্ভব কাজ গুলো এগিয়ে রাখছে। রূপ খুব আরামচে ঘুমুচ্ছে। মুহিত রূপকে এখনো জাগায় নি। এতো সকালে রূপকে জাগিয়ে লাভ নেই। কারন নাশতা তৈরী করতে আধ ঘন্টার বেশি সময় লাগে না। মৃন্ময় আসার পরে ও নাশতা তৈরী করা যাবে। মুহিত রূপের ঘুমন্ত মুখটার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো কাজে মনযোগ দিলো।

কেটে গেলো প্রায় দু ঘন্টা। ঘড়িতে সকাল নয়টা বাজছে। রূপ আড়ামুড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠল। মুহিত রূপের পাশে বসে বেশ মনযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। রূপ পিটপিট চোখে মৃদ্যু হেসে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন মুহিতের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে রূপ আচমকাই শোয়া থেকে উঠে পিছন থেকে মুহিতকে জড়িয়ে ধরল। মুহিত ল্যাপটপে টাইপিং করছে আর মৃদ্যু হেসে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—–“তাহলে আমার মহা রানী টা এবার উঠেই পড়েছে! তা কি মনে করে আমাকে এভাবে ঝাপটে ধরলেন?”

রূপ আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“আদর দাও।”

মুহিত টাইপিং বাদ দিয়ে এক্টা হেচকা টান দিয়ে রূপকে ওর কোলে বসিয়ে নিলো। রূপ ঠোঁট উল্টে পিটপিট চোখে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত মৃদ্যু হেসে রূপের ঠোঁটে চুমো খেতে নিলেই রূপ হাত দিয়ে মুহিতকে থামিয়ে বলল,,,,,

—–“আগে কপালে চুমো খাবে, এরপর দু গালে, এরপর নাকে, কানে, ঠোঁটে। ঠিক আছে?”

মুহিত অট্ট হেসে বলল,,,,,,,

—–“ঠিক আছে।”

মুহিত এক্টু ঝুঁকে রূপের কথা মতোই রূপকে আদর করল। রূপ চোখ জোড়া বন্ধ করে মুহিতের প্রতিটা আদর উপভোগ করছে। চোখ খুলে রূপ কিছুক্ষন মুহিতের দিকে তাকিয়ে থেকে মুহিতের নাকে নাক ঘঁষে কলল,,,,,,

—–“তাড়াতাড়ি ফিরে এসো মুহিত। তোমাকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না। কেমন নিরাগ নিরাগ লাগে। কিছু এক্টার শূণ্যতা ফিল করি। তুমি পাশে থাকলেই শূন্য জায়গাটা পূরণ হয়। ফিল ইন দ্যা গ্যাপস হয় আর কি!”

মুহিত রূপের চুলে বিলি কেটে বলল,,,,,,

—–“রাতের মধ্যেই ফিরে আসব রূপ। তুমি চিন্তা করো না। শূন্য জায়গাটা বেশিক্ষন শূন্য থাকবে না। খুব তাড়াতাড়ি পুরণ হয়ে যাবে।”

—–“তাই যেনো হয় মুহিত। আমি নীল শাড়ী পড়ে তোমার অপেক্ষায় থাকব। তোমার প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকব। হাতে কিন্তু এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে ফিরবে। আমি খোঁপায় জড়াবো।”

মুহিত রূপের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,

—–“আমি তো আমার নীল পরীকে দেখতে এক ছুটে চলে আসব। প্রতীক্ষার প্রহর কাটিয়ে আমি ঠিক তোমার দু চোখে ধরা দিবো। হাতে থাকবে এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল আর নীল রঙ্গের কাঁচের চুড়ি। তোমাকে বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হবে না রূপপ। আমি নিজে ও অপেক্ষা জিনিসটাকে ভয় পাই।”

রূপ মলিন হেসে মুহিতের কোল ছেড়ে উঠে কাবার্ড থেকে এক্টা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মুহিত আবারো কাজে মনযোগ দিলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর রূপ শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে কিচেনে চলে গেলো। আধ ঘন্টার মাঝেই রূপ পরোটা আর ওমলেট বানিয়ে নিলো। মুহিত কিছুক্ষনের জন্য কাজ থামিয়ে রূপের সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

ঐদিকে,,,,,,,

মৃন্ময় আর মারু রেডি হচ্ছে রূপদের ফ্ল্যাটে আসার জন্য। মারু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছে আর মৃন্ময় শার্টের বোতম লাগাচ্ছে। মারু খুব আশাবাদী। তাই ওর চোখে, মুখে আনন্দের ঝিলিক। মারু জানে আজ কিছু এক্টা ভালো হবে। যার অপেক্ষায় মারু উল্লাসিত।

বাড়ির ড্রইং রুমে জট পাকিয়ে বসে আছে মায়া আহমেদ আর সোহেলী আহমেদ। সোহেলী আহমেদ উনার দুই ছেলে মেয়ের জন্য এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। আর লাগাতাড় হায় হুতাশ করছে।

দোলা ওর হাজবেন্ডকে নিয়ে রুমে আছে। সাকিব আর সানায়ার ব্যাপারটা জানার পর দোলা খুব আপসেট হয়ে পড়েছে। দোলার হাজবেন্ড ও ব্যাপারটা জেনে গেছে। তবে এ নিয়ে লিয়েনের কোনো অভিযোগ নেই। কর্ম অনুযায়ী ফল পেয়েছে এতে অবশ্য কারো অভিযোগ থাকার কথা না। রেজাউল আহমেদ পুলিশ স্টেশান দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। সানোয়ার আহমেদ এই বিষয়ে পাওা ই দিচ্ছে না। উনি ব্যস্ত অফিসের কাজে। সাকিব আর সানায়াকে এক সপ্তাহের আগে থানা থেকে ছাড়ানো যাবে না। তা ও আবার মোটা অঙ্গের টাকা দিয়ে দুই ভাই বোনকে ছাড়াতে হবে। পুলিশের জেরায় সাকিব জবান বন্দি দিতে বাধ্য হয়েছে। সব দোষ স্বীকার করেছে। সাকিব যাদের কাছ থেকে ড্রাগস নিতো তাদের নাম ও বলে দিয়েছে। পুলিশ এখন চিরুনি তল্লাশিতে আছে।

সোহেলী আহমেদের কান্না যেনো থামছেই না। মায়া আহমেদ কিছুক্ষন সোহেলী আহমেদকে শান্তনা দিয়ে চলে গেলো উনার নিজের রুমে। রুমের দরজা আটকিয়ে উনি আলমারি থেকে দুটো ফাইল বের করল। দুটোই আলাদা আলাদা নীল রঙ্গের ফাইল।

ফাইল গুলো নিয়ে উনি বেডের উপর বসে মিটিমিটি হেসে বলল,,,,,,,

—–“বাহ্ দুই বাড়ির দলিল দুই ফাইল। এক্টা রূপদের বাড়ির আরেকটা এই বাড়ির। দলিল পএ গুলো কোথাও এক্টা লুকিয়ে রাখতে হবে। কেউ যেনো খুঁজে না পায়। মুহিত তো বলেই দিয়েছে এই বাড়ির সম্পওি নিবে না সে। সো সব সম্পওি এখন থেকে আমার ছেলে মেয়ের। অবশ্য এর থেকে সাকিব আর সানায়া ও ভাগ পাবে। ভালোই হলো মুহিত ঐ ফকিন্নি রূপকে বিয়ে করেছে। ভালো ঘরের মেয়েকে বিয়ে করলে অবশ্যই সম্পওির ভাগ চাইত। তখন বাধ্য হয়ে দিতে হতো। ছেলেটাকে আগে খুব ভয় পেতাম। বেশি ঘাটাতে চাইতাম না। যা বলত তাই মেনে নিতাম। ভাবতাম একে ঘাটালে হয়তো সানোয়ার রেগে সব সম্পওি ঐ ছেলের নামে লিখে দিবে। কিন্তু না মুহিতের বিয়ের পর পরই জানলাম সানোয়ার ওর ছেলে, মেয়েকে সম্পওির সমান ভাগ দিয়েছে। তাই এই ছেলের বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে রুখে দাঁড়ালাম। এখন তো মুহিত জেনেই গেছে আমি ওর সৎ মা। সো আর ভালো মানুষি করে লাভ নেই। যাই হোক, ছেলেটা আমাকে বাঁচালো। সম্পওির ভাগ ফিরিয়ে নিলো। ওকে আর কোনো সম্পওি দিতে হবে না। সব সম্পওি আমার ছেলে, মেয়ে আর সাকিব, সানায়ার।”

কথা গুলো বলেই মায়া আহমেদ ফাইল গুলো নিয়ে স্টাডি রুমে চলে গেলো। স্টাডি রুমের কোণায় বড় এক্টা লকার আছে। ঐ লকারে উনি ফাইল গুলো তালাবন্ধ করে রেখে দিলেন।

কিছু এক্টা ভেবে উনি আবার বলল,,,,,,

—–“মুহিত তো জাস্ট মুখে বলেছে সম্পওি নিবে না। কাগজে কলমে তো সাইন করে দেয় নি। কোনো প্রমান ও নেই। যে করেই হোক মুহিতের থেকে আমার সাইন নিতেই হবে। সম্পওির পুরো ভাগ হাতিয়ে নিতে হবে। যেমন রূপের থেকে নিয়েছিলাম। এখন কথা হলো মুহিতের থেকে সাইন নিবো কিভাবে? ছেলেটাকে কি আপোষে পটানো যাবে নাকি অন্য ব্যবস্থা করতে হবে? ব্যাপারটা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।”

ঐদিকে,,,,,,

মারু আর মৃন্ময় মাএ রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসল। মৃন্ময় শো শো বেগে গাড়ি ছেড়ে দিলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো মুহিতদের ফ্ল্যাটের সামনে। দুজনই গাড়ি থেকে নেমে সোজা মুহিতদের ফ্ল্যাটে উঠে গেলো। মুহিত আর রূপ নাশতা খাওয়া শেষ করে ড্রইং রুমের সোফায় বসে কথা বলছে। কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই মুহিত দরজা খুলে দিলো। মুহিত হাসি মুখে মৃন্ময় আর মারুকে রুমে ঢুকালো।

মারু রুমে ঢুকে দৌঁড়ে এসে রূপকে ঝাপটে ধরল। রূপ খুশিতে খিলখিল করে হাসছে আর হাল চাল জিগ্যেস করছে। মুহিত মৃন্ময়কে নিয়ে বেড রুমে ঢুকে গেলো। প্রায় পনেরো মিনিটের মধ্যে মুহিত রেডি হয়ে মৃন্ময়কে নিয়ে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মারু আর রূপ যথেষ্ট হাসি মুখে ওদের বিদায় দিলো।

মুহিত ড্রাইভ করছে আর মৃন্ময় পাশের সিটে বসেছে। কিছুদূর যাওয়ার পর মুহিত মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,

—–“ভাই….. নোয়াখালী পৌঁছেই আগে আমাদের পুলিশ স্টেশান যেতে হবে। পুলিশ ডায়েরী করতে হবে। জোর খাটিয়ে কারো সম্পওি কেড়ে নেওয়া যায় না। তাছাড়া দলিল এখনো আব্বাস আঙ্কেলের নামেই আছে। প্রমাণ কিন্তু সব আব্বাস আঙ্কেলের পক্ষেই।”

—–“আমি ও তাই ভাবছি। তবে পুলিশরা কি আমাদের পক্ষে কথা বলবে? নোয়াখালীর পুরো এলাকাই তো অনিকের বাবার হাতে। উনি একজন চেয়ারম্যান। দাপট তো থাকবেই।”

——“নোয়াখালী শহরে পুলিশ স্টেশানের অভাব নেই ভাই। কোনো না কোনো পুলিশ স্টেশানে নিশ্চয়ই আমাদের অভিযোগ মন্জ্ঞুর হবে। তুই এই নিয়ে টেনশান করিস না। আমার মন বলছে ভালো কিছু হবে।”

——“তোর কথাই যেনো সত্যি হয় মুহিত। ভালোয় ভালোয় যেনো সবটা মিটে যায়।”

মুহিত এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাই স্পিডে গাড়ি ছেড়ে দিলো।

রূপ আর মারু নিচ তলার ফ্ল্যাটে আছে। আদ্রিতাকে এখন সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। আমজাদ চৌধুরী আদ্রিতাকে নিয়ে অলরেডি গাড়ির কাছে চলে গেছে। মারজানা চৌধুরী নিজেকে শক্ত করে আদ্রিতা আর আমজাদ চৌধুরীকে হাসি মুখে বিদায় দিলো। রূপ আর মারু ও হেসে হেসে আদ্রিতাকে বিদায় দিলো। আমজাদ চৌধুরী গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর রূপ আর মারু মিলে মারজানা চৌধুরীকে নিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলো।

মারজানা চৌধুরীর সাথে কিছুক্ষন কথা বার্তা বলে রূপ আর মারু উপরে চলে গেলো। রুম গুছিয়ে রান্না করতে হবে। রূপ কিচেনে ঢুকে হাড়ি, পাতিল ঘঁষছে আর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মারুকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,,

—–“মারু তোকে তো এক্টা গুড নিউজ দেওয়ার ছিলো!”

মারু বেশ এক্সাইটেড হয়ে বলল,,,,,,,

—–“কি নিউজ রে?”

—–“আরে শুধু নিউজ না গাঁধি। বল গুড নিউজ।”

—–“আরে হ্যাঁ ঐ একই হলো। গুড নিউজ। জলদি বল এবার।”

রূপ গলাটা ঝাঁকিয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে বলল,,,,,,,

—–“এক সপ্তাহ পর আমরা হানিমুনে যাচ্ছি।”

মারু মুখটা ফুলিয়ে বলল,,,,,,,

—–“তো তোরা যাবি। এখানে আমার জন্য গুড নিউজ কি?”

—–“আরে উল্লুক। সাথে তুই আর মৃন্ময় ভাই ও যাবি। মুহিত সব প্ল্যান করে রেখেছে।”

মারু খুশিতে গদগদ হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,,,,,,

—–“সত্যি বলছিস রূপ?”

—–“হ্যাঁ বাবা সত্যিই বলছি।”

মারু রূপকে ঝাপটে ধরে খুশিতে হেসেই চলছে। হঠাৎ কি মনে করে মারু চুপ হয়ে গেলো। মুখটা কালো করে রূপকে ছেড়ে রূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,

—–“আমার ঐ বাড়ির জন্য টেনশান হচ্ছে রূপ। আম্মু, আব্বু কি অবস্থায় আছে আল্লাহ্ ই জানে। ছোট আপুর শ্বশুড় বাড়িতে হয়তো অনেক হেনস্তা হয়ে থাকতে হচ্ছে। মৃন্ময় আর মুহিত আদৌ কিছু করতে পারবে কিনা তা ও অস্পষ্ট। ভালো লাগছে না কিছু।”

মারু এবার কেঁদেই দিলো। রূপ হাতটা ভালো করে ওয়াশ করে মারুকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,

——“সব ভালো হবে মারু। তুই অযথা টেনশান করে নিজের শরীর খারাপ করিস না। মুহিতের প্রতি বিশ্বাস আছে আমার। নিশ্চয়ই কোনো এক্টা পথ বের করবেই মুহিত। আর সাথে তো মৃন্ময় ভাই ও আছে। ওরা দুজন ঠিক সব ম্যানেজ করে নেবে।”

মারু কেঁদে কেঁদে কিছু বলবে এমন সময় শো শো বেগে বাতাসের সাথে নাকে পোড়া জাতীয় কিছু এক্টার বিদঘুটে গন্ধ পেলো রূপ আর মারু। চারিদিক থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে। মনে হচ্ছে পুরো এলাকার মানুষ এক জট হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। পুরো এলাকা কালো ধোঁয়ায় ছেঁয়ে যাচ্ছে। ক্ষনে ক্ষনে আগুনের ফুলকি উপরের দিকে উঠছে। কিচেন রুমের জানালা দিয়ে রূপ আর মারু সবটা প্রত্যক্ষন করছে।

চোখে, মুখে আতঙ্ক নিয়ে রূপ আর মারু দুজন দুজনকে ছেড়ে যেই না কিচেন রুম থেকে বের হয়ে সদর দরজার কাছে যাবে অমনি মারজানা চৌধুরী ফ্ল্যাটের কলিং বেল চাঁপছে আর জোরে চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,,

—–“রূপ, মারু তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হও। আমাদের পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে। দুটো বাড়ি অলরেডি পুড়ে গেছে। খুব খারাপ অবস্থা। আমাদের তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাট থেকে বের হতে হবে।”

ধোঁয়ার বাজে গন্ধে রূপের শ্বাস বেড়ে গেলো। কিছুতেই সে নিশ্বাস নিতে পারছে না। পুরো রুমটা কালো ধোঁয়ায় ছেঁয়ে গেছে। মারু নাকে শাড়ির আঁচল চেঁপে রূপকে এক হাতে শক্ত করে ধরে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বের হলো। মারজানা চৌধুরী রূপকে অন্য হাতে ধরে দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে মেইন রাস্তায় চলে এলো।

রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের ভীড়। পুরো এলাকার মানুষ এক হয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর পর ফায়ার সার্ভিস আসছে। রূপদের পাশের দুটো বাড়ি জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। অনেক বড় বড় আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। কখন রূপদের ফ্ল্যাটে আগুন চলে আসে বলা যায় না। ফায়ার সার্ভিসের লোকরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই যেনো আগুনকে দমাতে পারছে না। পুরো এলাকায় কান্না কাটি, হায় হুতাশের রোল পড়ে গেছে। কালো ধোঁয়ার তান্ডব বেড়েই চলছে। চোখের সামনে রূপ এসব সহ্য করতে পারছে না। মাথা ঘুড়াচ্ছে ওর।

মারু রূপকে টাইট করে হাতের বন্ধনীতে পেঁচিয়ে রেখে মারজানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“আন্টি আগুন লাগল কিভাবে?”

—–“লোকজন বলছে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে। আগে থেকেই নাকি সিলিন্ডারের লাইন লিক ছিলো। ঐ বাড়ির ভাবী না দেখেই গ্যাস অন করে দেয় আর তখনই নাকি ঐ অনর্থ ঘটে। উনার বাড়ির সাথে সাথে পাশের বাড়িতে ও আগুন ধরে যায়।”

—–“ইসসসসসসস। ঐ বাড়ির আন্টি বেঁচে আছে তো?”

—–“বেঁচে থাকার কথা না। শুনলাম ভাবীর হাজবেন্ড ও পুড়ে গেছে। তবে বাচ্চাদের সেইফ রেখে গেছে। বাচ্চা দুটোকে কোনো রকমে বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে ভাবীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই শেষ হয়ে গেছে। আই থিংক ভাই, ভাবি দুজনই আর নেই। পাশের বাড়ির ক্ষয় ক্ষতির খবর জানি না। হয়তো ওরা আগুন লাগার আগেই বের হয়ে গেছে।”

রূপের মাথায় মারজানা চৌধুরীর কথা গুলো ঘুড়ছে। কোনো এক্টা অতি পূর্ব ঘটনার সাথে মারজানা চৌধুরীর কথা গুলোর মিল খুঁজে পাচ্ছে। রূপ ওর ছোট বেলাকে মনে করছে। ওর বাবা, মা ও এভাবে আগুনে পুড়ে মরেছে। তাহলে কি রূপের বাবা, মায়ের মৃত্যুটা ও গ্যাস সিলিন্ডার লিকের কারণে হয়েছে? সিলিন্ডার কি আগে থেকেই ভুল বশত কোনো কারণে লিক হয়ে গিয়েছিলো? নাকি কেউ ইচ্ছে করে লিক করেছে?

রূপের মাথায় এমন শত শত প্রশ্ন ঘুড়ছে। যার উওর রূপ খুঁজে বেড়াচ্ছে। রূপের মন বলছে ওর বাবা, মায়ের সাথে কিছু এক্টা খারাপ হয়েছে। কাকতালীয় ঘটনার জন্য ওর বাবা, মা মরে নি। মরেছে কারো ষড়যন্ত্রে। এসব ভাবতে ভাবতে রূপ আচমকা সেন্সলেস হয়ে গেলো। মারুর কাঁধে মাথা ঠেঁকিয়ে রূপ চোখ জোড় বুজে ফেলল।

প্রায় দু ঘন্টা পর,,,,,,,,

রূপ চোখ খুলে তাকালো। পিটপিট চোখে রূপ নিজেকে বেড রুমে আবিষ্কার করল। পাশেই মারজানা চৌধুরী বসে আছে। তবে মারুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রূপকে চোখ খুলতে দেখে মারজানা চৌধুরী রূপের দিকে ঝু্ঁকে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,,

—–“এখন কেমন আছো মা?”

রূপ শোয়া থেকে উঠে আশে পাশে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে মারজানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“আন্টি আগুন কি নিভেছে?”

—–“হুম মা মাএ নিভল। তুমি তো সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে। আল্লাহ্ র রহমতে আমাদের ফ্ল্যাটে কিছুই হয় নি। মারু তোমাকে দু ঘন্টা যাবত কাঁধের উপর রেখেছে। আগুন নিভার পর তোমাকে নিয়ে আমরা রুমে ঢুকে বেডের উপর শুইয়ে পানি ছিটা দিয়ে হুশ ফিরালাম। মারু এখন কিচেনে আছে।”

রূপ শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,

—–“ওওওরা সবাই কি মারা গেছে?”

মারজানা চৌধুরী এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,,,,,,

—–“ভাই, ভাবী আর নেই। তবে উনাদের বাচ্চারা সেইফ আছে।”

—–“বাবাবাচ্চারা এখন কোথায়?”

—–“ওদের নানুর বাড়িতে।”

এর মাঝেই মারু গরম গরম স্যুপ করে নিয়ে এলো রূপের জন্য। মারু রূপের পাশে বসে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,,

—–“আমি জানি তুই কি ভাবছিস। কি নিয়ে এতো ভয় পাচ্ছিস। আসলে এই ঘটনাটার মাধ্যমে তুই তোর অতীতকে খুঁজছিস। ভাবছিস তোর অতীতটা ও কি কাকাতালীয় ছিলো নাকি ঘটিত।”

মারু কিছুটা থেমে বলল,,,,,

—–“আমি বলছি কি…. এসব নিয়ে আপাতত না ভেবে নিজেকে এক্টু শান্ত কর। মুহিত এলে না হয় এই বিষয়ে কথা বলিস। তোর যদি কাউকে সন্দেহ হয় অবশ্যই মুহিতকে বলবি। মুহিত মাথা উঁচু করে তোর পক্ষে দাঁড়াবে।”

রূপের গাঁ বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। এক প্রকার কাঁপা কাঁপি করছে সে। চোখ দিয়ে ও পানি পড়ছে। মুখ ফুঁটে কিছু বলতে পারছে না সে। ওর বাবা, মা কে দারুন ভাবে মিস করছে। এর মাঝেই রূপের ফোন বেজে উঠল। মারু বসা থেকে উঠে কাবার্ডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দৌঁড়ে রূপের কাছে এসে বলল,,,,,,,,

—–“রূপ। তোর মামু কল করেছে।”

রূপ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিয়ে শান্ত কন্ঠে ফোনটা রিসিভ করে বলল,,,,,,,

—–“হ্যাহ্যাহ্যালো।”

ঐ পাশ থেকে রূপের মামু বেশ ব্যস্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“কেমন আছো রূপ?”

—–“ভাভালো আছি মামু। তুমি?”

—-“খুব ভালো আছি। তোমাকে এক্টা গুড নিউজ দেওয়ার ছিলো।”

—–“কিকি গুড নিউজ মামু?”

—–“আমি দেশে ফিরছি। ভাবছি তোমার ফ্ল্যাটেই উঠব। তোমার ফ্ল্যাটের এড্রেসটা আমাকে হোয়াট’স এ্যাপ করে দিও।”

মুহূর্তেই রূপের মুখে হাসি ফুটে উঠল। রূপ হাসি মুখে ওর মামুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“ওকে মামু এড্রেস পাঠিয়ে দিবো। তাড়াতাড়ি চলে এসো মামু। তোমার সাথে আমার অনেক কথা জমে আছে। এবার কিন্তু আমার এক্টা মামি চাই ই চাই।”

—–“হুম আমি ও তাই ভাবছি। এক্টা বউ হলে মন্দ হয় না।”

—–“তবে মামী খোঁজা শুরু করি?”

—–“হুম করো।”

—–“ওকে খুঁজব। আগে বলো তুমি কবে আসবে?”

—–“কাল বা পরশু।”

—–“ওকে। তাহলে রাখছি।”

—–“রাখো। মামু এক্টু ব্যস্ত আছি।”

রূপ কলটা কেটে মারু আর মারজানা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,,,

—–“আমার মামু আসছে।”

মারু আর মারজানা চৌধুরী হাসি মুখে রূপের দিকে তাকালো। মারু মিষ্টি হেসে রূপকে স্যুপ খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রূপ স্যুপ খাচ্ছে আর মনে মনে বলছে,,,,,,

—–“মামু এলেই রহস্যের সমাধান করব। আমার পক্ষে আরো একজন সমর্থক বাড়বে। মুহিতের পাশাপাশি মামুকে ও সাথে পাবো। ফুফুমনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে আমার আম্মু, আব্বুর অকাল মৃত্যুতে। সবটাই সম্পওির লোভে।”

অন্যদিকে,,,,,,

মুহিত আর মৃন্ময় নোয়াখালী পৌঁছে নোয়াখালী থানা থেকে পুলিশ অফিসার নিয়ে সোজা অনিকদের বাড়ি রওনা হলো। পুলিশ ড্রাইভ করছে আর পাশে বসে আছে মৃন্ময়। ব্যাক সিটে বসেছে মুহিত। পিছনে আরো এক্টি গাড়ি রয়েছে। তিনজন কন্সটেবল আছে ঐ গাড়িতে। পুলিশ আধ ঘাট বেঁধে অনিকের বাবার সাথে মোকাবেলা করতে নেমেছে।

পুলিশ অফিসার একমনে ড্রাইভ করছে আর মৃন্ময়, মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—–“সিরিয়াসলি আপনারা আমাকে উদ্ধার করলেন। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম রশিদ মির্জাকে কিভাবে হাতে নাতে ধরা যায়। লোকটা বেশি বেড়ে গেছে। তবে আমার হাতে কোনো প্রমাণ ছিলো না। এলাকার লোকজন উনার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেই চায় না। উনার ভয়ে জনাজীর্ণ হয়ে থাকে। ভালোই হলো আপনারা প্রমাণ সহ আমার কাছে আসলেন। এবার তো ঐ রশিদ মির্জাকে জেলের ভাত খাইয়ে ই ছাড়ব। অন্তত একদিনের জন্য হলে ও।”

পুলিশ অফিসার কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—–“ভিকটিমকে কল করে বলে দিন চলে আসতে। প্রমান সহ মাঠে নামতে চাই।”

মৃন্ময় গলাটা ঝাঁকিয়ে পুলিশ অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“স্যার আমরা ভিকটিমকে কল করে দিয়েছে। আই হোপ উনি ও ঠিক টাইমে রশিদ মির্জার বাড়ি পৌঁছে যাবে।”

—–“বাহ্ দারুন।”

গাড়িতে আর কেউ কথা বলল না। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পর গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো রশিদ মির্জার বাড়ির সামনে। এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। পুলিশদের দেখে বাড়ির বডিগার্ডসরা ভয়ে চেঁপে গেলো।

মুহিত, মৃন্ময়, ইন্সপেক্টর তিনজনই দ্রুত পায়ে হেঁটে রশিদ মির্জার ড্রইং রুমে চলে এলো। খুব মনযোগ দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছে রশিদ মির্জা। মুহিত বাঁকা হেসে রশিদ মির্জার হাত থেকে খবরের কাগজটা ছিনিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“স্যার আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আপনার সাথে কথা বলতে এসেছে। দশ মিনিট সময় হবে আপনার?”

#চলবে,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here