#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩৮
#নিশাত_জাহান_নিশি
—–“স্যার আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আপনার সাথে কথা বলতে এসেছে। দশ মিনিট সময় হবে আপনার?”
রশিদ মির্জা চোখ তুলে উপরের দিকে তাকালো। মুহিতের বাঁকা হাসি দেখে রশিদ মির্জার রাগী দৃষ্টি তড় তড় করে বাড়তে শুরু করল। উনি পারছে না এখনই মুহিতকে ভৎস করে দিতে। মুহিতের প্রতি অঢেল ক্ষোভের প্রমান উনার খড়তড় দৃষ্টি।—–“স্যার আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আপনার সাথে কথা বলতে এসেছে। দশ মিনিট সময় হবে আপনার?”
রশিদ মির্জা চোখ তুলে উপরের দিকে তাকালো। মুহিতের বাঁকা হাসি দেখে রশিদ মির্জার রাগী দৃষ্টি তড় তড় করে বাড়তে শুরু করল। উনি পারছে না এখনই মুহিতকে ভৎস করে দিতে। মুহিতের প্রতি অঢেল ক্ষোভের প্রমান উনার খড়তড় দৃষ্টি।
মুহিত চোখ দিয়ে ইশারা করে রশিদ মির্জাকে পাশে তাকাতে বলল। রশিদ মির্জা চোখ ঘুড়িয়ে পাশে তাকালো। পুলিশ অফিসার উনার পাশের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। মৃন্ময় অট্ট হাসি দিয়ে রশিদ মির্জার দিকে তাকিয়ে আছে। উনি অবাকের পর অবাক হচ্ছে। বিরোধী দলের এমন আচমকা আগমনের কারণ উনি বুঝতে পারছে না। তবে উনার দৃষ্টি এখনো ক্ষীণ। কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।
এর মাঝেই আব্বাস আহমেদ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো রশিদ মির্জার ড্রইং রুমে। আব্বাস আহমেদকে দেখে রশিদ মির্জা বেশ বুঝতে পেরেছে ডাল মে কুচ কালা হে। মনে মনে উনি যাই ভাবছে তাই হচ্ছে। উনি ঠিক ধরেছে মুহিত চালাকী করে আব্বাস আহমেদের পাশাপাশি পুলিশকে ও ডেকে এনছে। উনি এবার ক্ষেপে বসা থেকে উঠে আব্বাস আহমেদকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
—–“আমার সাথে একা পেরে উঠছিস না তাই না? তাই সাথে করে তিন জন চ্যালা নিয়ে এসেছিস? কান খুলে শুনে রাখ আব্বাস তোর চ্যালারা আমার কিছু করতে পারবে না।”
আব্বাস আহমেদ চোখ লাল করে রশিদ মির্জার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—–“সাবধানে কথা বলুন রশিদ ভাই। আইনের রক্ষক কখনো চ্যালা হতে পারে না। মেয়ের জামাই রা অতি সম্মানের হয়। ওদেরকে ও চ্যালা বলা জায়েজ না। আপনি জোর করে আমার সম্পওি কেড়ে নিয়েছেন। তাই আপনার বিরুদ্ধে আমার মেয়ের জামাইরা থানায় এন্ট্রি করেছে।”
রশিদ মির্জা অট্ট হেসে পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,
—–“আমার বিরুদ্ধে থানায় এন্ট্রি করেছে? দেখি পুলিশের কতো ক্ষমতা। এই যে, মিঃ পুলিশ আসুন। আমার মুখোমুখি হন।”
পুলিশ অফিসার রশিদ মির্জার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে খুব তেজী কন্ঠে বলল,,,,,,,,
—–“শুনুন মিঃ রশিদ মির্জা। আপনি যদি আমাকে অন্য পুলিশ অফিসারদের সাথে গুলিয়ে ফেলেন তো এটা আপনার জীবনের সবচে মস্ত বড় ভুল। আমি এরেস্ট ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছি। আপনার বাপের উপরে বাপ আসলে ও আমাকে ঠেকাতে পারবে না। আপনার বিরুদ্ধে আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ ও আছে। যদি আপনি ভালোয় ভালোয় আব্বাস আহমেদের দলিল ফিরিয়ে দিন তো আমি আপনাকে নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিবো। আর যদি আপনি আমাদের হতাশ করেন তো এর ফল আপনাকে ভোগ করতে হবে। আমি আপনার সাথে কোনো প্রহসন করছি না। যা সত্যি তাই বলছি। আপনাকে যদি হাতে শিকল বেঁধে হুড়হুড়িয়ে থানায় টেনে নিয়ে যাই তবে বুঝতেই তো পারছেন সমাজে আপনার অবস্থানটা ঠিক কি হবে? তার উপর কিছুদিন পর ইলেকশান। ভোট তো এক্টা ও কপালে জুটবে না। গো হারা হারবেন। সো ভেবে বলুন কি করবেন! চয়েস এখন আপনার হাতে।”
রশিদ মির্জা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। অস্থির চোখে উনি পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় আর মুহিত পুলিশ অফিসারের দু পাশে দাঁড়িয়ে রশিদ মির্জার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। এই হাসির অর্থ হলো প্রহসন। প্রহসন করে মুহিত আর মৃন্ময় হাসছে। রশিদ মির্জা সবার থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,,,,
—–“পুলিশ টা অবশ্য মন্দ বলে নি। সামনে সত্যিই ইলেকশান আসছে। ইলেকশানের আগে কোনো মন্দ কাজে জড়ানো যাবে না। সাধারন মানুষকে ক্ষেপানো ও যাবে না। নয়তো এবার চেয়ারম্যানের পদটা হারাতে হবে। আপোষে ভেজালটা মিটিয়ে নিলে মন্দ হয় না। ঐ আব্বাসের দুই টাকার সম্পওির জন্য আমি আমার পদ হারাতে পারব না! আমি বরং এক্ষেএে হার মেনে নেই। আব্বাসের মেয়ের জামাইরা ও হয়েছে খুব শেয়ানা। টেকনিক খাটিয়ে সাথে পুলিশ নিয়ে এসেছে। ঐ দুটোকে তো আমি দেখেই ছাড়ব। ওদের জন্য আমার ছেলে এখনো হসপিটালে। ছেলেটা এক্টু সুস্থ হয়ে নিক এরপর খেলা দেখাবো।”
রশিদ মির্জা মনে মনে বিড়বিড় করে ড্রইং রুমের সবাইকে ক্রস করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। উপস্থিত সবাই বেশ বুঝতে পেরেছে রশিদ মির্জা ইলেকশানের ভয়ে চেঁপে গেছে। প্রায় দশ মিনিট পর রশিদ মির্জা হাতে করে দলিল এনে আব্বাস আহমেদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,
—–“এই নিন আপনার দলিল। থানায় গিয়ে আমার কমপ্লেইন উঠিয়ে নিন।”
আচমকা মৃন্ময় তেঁড়ে এসে বলল,,,,,,
—–“মিঃ রশিদ মির্জা আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, আপনার কাছে দু দুটো বাড়ির দলিল আছে। মিনা আপুর বাড়ির দলিলটা ও আপনার জিম্মায়। সো ঐ দলিলটা ও ফেরত দিন।”
রশিদ মির্জা রাগী কন্ঠে বলল,,,,,,
—–“মিনার হাজবেন্ড আমার থেকে অনেক অনেক টাকা নিয়েছে। টাকা গুলো আগে ফেরত দাও এরপর দলিল পাবে।”
মৃন্ময় পকেটে হাত দিয়ে কিছু এক্টা বের করছে আর রশিদ মির্জাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,
—–“হিসেব করে বলুন রাসেল ভাই আপনার থেকে কতো টাকা নিয়েছে?”
—-“লাখ খানিক তো হবেই।”
মৃন্ময় প্যান্টের পকেট থেকে এক লাখ টাকার এক্টা চেক বের করে রশিদ মির্জার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,
—–“এই নিন চেক। সিগনেচার করা আছে। এবার ঐ বাড়ির দলিলটা ও ফেরত দিন।”
রশিদ মির্জা চেক টা ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে উপরে উঠে দশ মিনিটের মধ্যে আবারো মিনারদের বাড়ির দলিলটা হাতে নিয়ে নিচে নেমে এলো। দলিলটা মৃন্ময় ছিনিয়ে নিয়ে রশিদ মির্জার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—–“আপনার সাথে আমাদের সমস্ত লেনা দেনা শেষ। পুলিশ ডায়েরী ও উঠিয়ে নেওয়া হবে। আশা করি ভবিষ্যতে এরূপ কাজ করতে একশ বার ভেবে চিন্তে দেখবেন।”
রশিদ মির্জা কিছু বলছে না। হিংস্র দৃষ্টিতে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত এগিয়ে গিয়ে রশিদ মির্জার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,,
—–“স্যার এই পর্যন্ত আপনার সাথে এবং আপনার ছেলের সাথে যা যা হয়েছে তার জন্য সবার পক্ষ থেকে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মাফ করবেন আমাদের। আসলে আমি আর কোনো অশান্তি চাইছি না। অনিককে ঐ দিন খুব মেরেছি। তার অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে। আমি অকারণে কারো গাঁয়ে হাত তুলি না। কারনটা আমি, আপনি এখানে উপস্থিত বাকিরা ও খুব ভালো করে জানে। আমার অতিরিক্ত মার ধরের কারণে সে এখনো হসপিটালে আছে। একমাএ ছেলেকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে আপনার যে খুব খারাপ লাগছে তা আমি ভালো করেই জানি। আসলে অনিক তার কর্ম অনুযায়ী ফল পেয়েছে। এতে আপনার বা আমার কারের ই আপসোস করার কিছু নেই।”
মুহিত কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,
—–“আশা করছি হসপিটাল থেকে সুস্থ হয়ে ফেরার পর অনিক সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবে। ওর মধ্যে কোনো প্রতিশোধ প্রবনতা থাকবে না। আপনি ওকে মানিয়ে নিবেন। আপনার উপর ভরসা রেখে আমরা এই বাড়ি থেকে বের হচ্ছি। এখনো সময় আছে স্যার। ছেলেকে ভালো শিক্ষা দিন। এতে আপনার ই মঙ্গল। অযথা ছেলের জন্য জায়গায় জায়গায় হেনস্তা হতে হবে না। তবেই চেয়ারম্যান হিসেবে উপযুক্ত সম্মান পাবেন। গ্রামের লোকরা ও আপনাকে মেনে চলবে।”
মুহিত আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল। পুলিশ অফিসার রশিদ মির্জার সাথে হ্যান্ড শেক করে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,
—–“থ্যাংক ইউ স্যার। আমার সঙ্গ দেওয়ার জন্য। আমার কথা রাখার জন্য। আশা করি নিজেকে শুধরে নিবেন।”
পুলিশ অফিসার ও বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল। মৃন্ময় আর আব্বাস আহমেদ কিছুক্ষন রশিদ মির্জার দিকে তাকিয়ে থেকে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। রশিদ মির্জা বাঁকা হেসে সবার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে উনার মাথায় কোনো শয়তানী বুদ্ধি খেলছে।
আব্বাস আহমেদ অনেক রিকুয়েস্ট করে ও মুহিত আর মৃন্ময়কে উনার বাড়িতে নিতে পারল না। দুজনই কাজের বাহানা দিয়ে আব্বাস আহমেদের হাত থেকে ছাড়া পেয়েছে। কিছুদিন পর মারু আর রূপকে নিয়ে বেড়াতে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুজন পুলিশ অফিসারের সাথে পুলিশ স্টেশান চলে এলো। অভিযোগ তুলতে। আব্বাস আহমেদ খুব মুগ্ধ। মৃন্ময় এবং মুহিতের কাজে।
কেটে গেলো আরো তিন ঘন্টা। দুপুর পেরিয়ে বিকেল ঘনিয়ে এলো। মুহিত আর মৃন্ময় পুলিশ স্টেশান থেকে বের হয়ে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠে পড়ল। দুজনই বেশ ক্লান্ত। খাওয়া দাওয়া ও হয় নি। কিছদূর যাওয়ার পর মুহিত এক্টা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে মৃন্ময়কে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে দেয়ে বের হলো। রেস্টুরেন্টের পাশেই এক্টা ছোট খাটো মেলা বসেছে। কয়েকটা রকমারী চুড়ির দোকান দেখা যাচ্ছে। এর মাঝে নীল রঙ্গের চুড়ি গুলো মুহিতের চোখে ভাসছে। মুহিত রূপকে কথা দিয়েছিলো নীল চুড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরবে। মৃদ্যু হেসে মুহিত দৌঁড়ে চলে গেলো চুড়ির স্টলে। মৃন্ময় ও মুহিতের পিছু পিছু ছুটল।
নীল রঙ্গের তিন ডজন চুড়ি কিনল মুহিত। সাথে এক্টা নীল রঙ্গের নেইল পলিশ। মৃন্ময় ও মারুর জন্য লাল রঙ্গের তিন ডজন চুড়ি নিলো। সাথে নীল রঙ্গের নেইল পলিশ। দুজনই কেনা কেটা করে আবারো গাড়িতে বসে পড়ল। মুহিত খুব স্পিডে গাড়ি ছেড়ে দিলো। রূপকে দেখার জন্য মুহিতের মন ব্যাকুল হয়ে আছে।
প্রায় তিন ঘন্টা পর। গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো রূপদের বাড়ির ফ্ল্যাটের সামনে। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে মুহিতের বুকটা ভয়ে ধক করে কেঁপে উঠল। রাস্তার চারপাশে হাজার হাজার মানুষের ভীড়। মুহিত আর মৃন্ময় ভালো করে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল ওদের পাশের দুটো ফ্ল্যাটই পুড়ে ছারখাড় হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে দেখছে। মুহিত এবার তাড়াহুড়ো করে নিজেদের ফ্ল্যাটের দিকে তাকালো। বড় এক্টা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে মুহিত ফ্ল্যাটের বিপরীত পাশে এক্টা ফুল দোকানে চলে গেলো। ঐ খান থেকে মুহিত এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। রূপ সত্যি সত্যি আজ নীল শাড়ি পড়েছে। মুহিতের জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।
ঘড়িতে রাত আটটা বাজছে। ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজার সাথে সাথে রূপ দৌঁড়ে গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দিলো। মুহিতকে দেখে রূপ মৃদ্যু হেসে মুহিতকে ঝাপটে ধরল। মৃন্ময় ড্রইং রুমের এদিক সেদিক তাকিয়ে মারুকে খুঁজছে। রূপ মুহিতকে ছেড়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,,
——“ভাইয়া। মারু তো বিকেলের দিকে ঐ বাড়ি চলে গেছে। ফুফুমনি আর্জেন্ট কল করেছে। বাড়িতে নাকি অনেক কাজ। দোলা আপুর শ্বশুড় বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে। তাই বাধ্য হয়ে মারুকে যেতে হলো।”
মৃন্ময় রাগ দেখিয়ে বলল,,,,,,
—–“যাওয়ার সময় আমাকে কল করে গেলে কি হতো? তাহলে এতো পেরেশান হয়ে আমাকে এখানে ছুটে আসতে হতো না। সসবসময় আমার কাজ বাড়াবে। ইডিয়ট এক্টা।”
মৃন্ময় আর দাঁড়ালো না। রাগে গজগজ করতে করতে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে ছুটল ঐ বাড়ির উদ্দেশ্যে। রূপ আর মুহিত হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে উঠছে। মৃন্ময় খুব রেগে আছে। আজ মারুর খবর আছে। কপালে শনির দশা লেগে গেলো।
রূপ হাসতে হাসতে মুহিতের হাত থেকে গোলাপ ফুল ছিনিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে গোলাপের ঘ্রাণ শুকছে। মুহিত সদর দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে রূপকে কোলে তুলে বেড রুমে চলে গেলো। রূপকে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে মুহিত রূপের মুখোমুখি হাঁটু ভাঁজ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। শপিং ব্যাগ থেকে নীল চুড়ি গুলো বের করে মুহিত রূপের দুহাতে পড়িয়ে দিলো। চোখে ঘন করে কাজল পড়েছে রূপ। দেখতে খুব মায়াবী লাগছে। মুহিত এক ধ্যানে রূপের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিতের এমন ঘোর লাগা চাহনীতে রূপের কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে।
নিচের দিকে তাকিয়ে রূপ মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—–“মারুর পরিবারের কি হলো? ঐ খানে সবকিছু ঠিকঠাক তো?”
মুহিত রূপের হাত জোড়া টেনে নিয়ে হাতের উপরের পিঠে চুমো খেয়ে বরল,,,,,,
—–“ঐখানে সব ঠিক আছে রূপ। দুই বাড়ির দলিল ই আব্বাস আঙ্কেল ফিরে পেয়েছে। এখন আর কোনো চিন্তা নেই।”
—–“অনিকের ব্যাপারটা কি হলো?”
—–“রশিদ মির্জাকে ভদ্র ভাষায় বুঝিয়ে এসেছি। এরপরে ও যদি না বুঝে তাহলে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।”
—–“তোমার কি মনে হয় বুঝবে?”
—–“না বুঝলে আঙ্গুল বাঁকাতে হবে।”
রূপ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,,,,,,
—-“মুহিত…. মামু কাল দেশে ফিরছে।”
মুহিত বেশ অবাক হয়ে বলল,,,,,,
—–“সত্যি?”
—–“হুম। সকালে কল করেছিলো।”
—–“বাহ্ খুব ভালো খবর।”
—–“আরেকটা খারাপ খবর আছে!”
মুহিত নাক, মুখ কুঁচকে বলল,,,,,,
—–“কি?”
—–“আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছে আজ। দুটো ফ্ল্যাটই জ্বলে গেছে।”
মুহিত রূপকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে চোখ জোড়া বন্ধ করে বলল,,,,,,
—–“জানি রূপ। আসার সময় দেখলাম। কিছুটা সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমাদের ফ্ল্যাটে ও হয়তো খারাপ কিছু হয়েছে। কিন্তু না আল্লাহ্ বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমার রূপকে ঠিক রেখেছে, সুস্থ রেখেছে।”
রূপ মুহিতকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
—–“মুহিত…… আমি যদি বলি আমার আম্মু, আব্বুর মৃত্যুতে কারো হাত ছিলো তাহলে কি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে?”
মুহিত রূপকে ছেড়ে রূপের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
——“হঠাৎ করেই তোমার এমন মনে হলো কেনো রূপ?”
—–“জানি না। তবে আমার মন বলছে আমার আম্মু, আব্বু এমনি এমনি মরে নি। কেউ ছিলো যে আমার আম্মু, আব্বুকে ইচ্ছে করে পৃথিবী থেকে সরিয়েছে।”
——“তুমি কি কোনো ভাবে আম্মুকে সন্দেহ করছ?’
—–“ঠিক তাই। আমি ফুফুমনিকেই সন্দেহ করছি। সম্পওির লোভে ফুফুমনি এটা করতেই পারে।”
—–“ভুল কিছু বলো নি। ব্যাপারটা আসলেই ভেবে দেখতে হবে। ঐ মহিলার দ্বারা সব সম্ভব।”
—–“আমার মনে হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারের লাইনটা কোনো ভাবে আগে থেকে লিক করে দেওয়া হয়েছিলো, যার কারনে আম্মু গ্যাস অন করার সাথে সাথে গ্যাস লাইনটা ব্লাস্ট হয়। আম্মুর সাথে সাথে আব্বু সহ পুরো বাড়ি জ্বলে যায়।”
—–“তুমি চাইলে আমরা পুলিশ এন্ট্রি করতে পারি রূপ। কারন মায়া আহমেদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমান ও আছে। আমার আম্মুর সুসাইড কেইসে ও মায়া আহমেদের হাত আছে। এরপর তোমার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার বাপারটা। সব প্রমান কিন্তু আমাদের পক্ষে।”
—–“হুম করব। আমি ফুফুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। তবে মামু দেশে ফিরে নিক। এরপর না হয় মামুকে নিয়ে সত্যির মুখোমুখি হবো।”
মুহিত রূপের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,
—–“ওকে রূপ তাই হবে।”
মুহিত আচমকা রূপকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মুহিত নিজে ও রূপের উপর শুয়ে পড়ল। রূপের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে মুহিত রূপের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,
——“নীল শাড়ীতে তোমাকে দারুন লাগছে রূপ। আমি চোখ সরাতে পারছি না। বার বার ভুল করতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ আমাকে বাঁধা দিও না।”
রূপ মৃদ্যু হেসে মুহিতের পেছনের চুল আঁকড়ে ধরল। মুহিত রূপকে আবারো নিজের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
ঘড়িতে মধ্যরাত দুইটা। রূপ মুহিতের বুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। মুহিত ও রূপকে বুকে নিয়ে ঘুমুচ্ছে। অনেকক্ষন ধরেই মুহিতের ফোনটা ভাইব্রেশন মোডে বেজে চলছে। গভীর ঘুমের রেশে কেউ টের পাচ্ছে না। টানা ছয় বারের কলে মুহিতের টনক নড়ল। পিটপিট চোখে মুহিত বালিশের তলা থেকে ফোনটা বের করল। ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে মুহিত হাসি মুখে ফোনটা পিক করল।
মুহিত হা করে কিছু বলার আগেই ঐ পাশ থেকে কেউ একজন এক নিশ্বাসে অনর্গল কিছু বলে চলছে। মুহিত খুব মনযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর মুহিত মিনমিন করে বলল,,,,,,
—–“ওকে আমি এখনই আসছি।”
কথাটা বলে মুহিত ফোনটা কেটে দিলো। ফোনটা ডেস্কের উপর রেখে মুহিত রূপকে খুব সাবধানে বুকের উপর থেকে উঠিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলো। রূপ এক্টু নড়েচড়ে আবারো ঘুম দিলো। মুহিত বিছানা ছেড়ে উঠে ধীর পায়ে হেঁটে কাবার্ড থেকে শার্ট, প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
প্রায় পনেরো মিনিট পর মুহিত শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে খুব তাড়াহুড়ো করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা সেট করে রূপের পাশে বসে রূপের মাথায় চুমো খেয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,,
—–“আমার জন্য দোয়া করো রূপ। খুব বড় এক্টা মিশনে যাচ্ছি। তোমাকে আগে থেকেই কিছু বলা যাবে না। নয়তো তুমি টেনশান করবে। ভোরের সূর্য উঠার আগেই আমি ফিরে আসব। চোখ খুলেই তুমি প্রথমে আমার মুখটা দেখবে।”
ফোনটা হাতে নিয়ে মুহিত খুব সাবধানে রুম থেকে বের হয়ে রুমের দরজাটা হালকা ভেজিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সদর দরজাটায় বাহির থেকে খিল দিয়ে মুহিত গেইটের চাবি নিয়ে গাড়ি ছাড়াই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
শুনশান রাস্তায় মুহিত একা হেঁটে চলছে। মাঝে মাঝে দু এক্টা পথচারীর সাথে ও দেখা হচ্ছে। ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে মুহিত হেঁটেই চলছে। দৃষ্টি তার রাস্তার আশে পাশে। মনে হচ্ছে কিছু এক্টার জন্য সে অপেক্ষা করছে।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
শুনশান রাস্তায় মুহিত একা হেঁটে চলছে। মাঝে মাঝে দু এক্টা পথচারীর সাথে ও দেখা হচ্ছে। ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে মুহিত হেঁটেই চলছে। দৃষ্টি তার রাস্তার আশে পাশে। মনে হচ্ছে কিছু এক্টার জন্য সে অপেক্ষা করছে।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর মুহিত হঠাৎ হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। দূর থেকে শো শো বেগে এক্টা গাড়ি এগিয়ে আসছে মুহিতের দিকে। গাড়িটাকে দেখে মুহিত এক্টা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল। মুহিতকে দেখে মনে হচ্ছে সে আপাতত বেশ নিশ্চিন্ত। এতক্ষন যাবত সে এই গাড়িটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
গাড়িটা নিশব্দে মুহিতের সামনে এসে থামল। মুহিত আগ পাছ না ভেবে গাড়িতে উঠে পড়ল। ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসেছে মুহিত। পাশের লোকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মুহিত সামনের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। লোকটা ও মৃদ্যু হেসে গাড়িটা স্টার্ট করে দিলো।
ঘড়িতে সকাল আটটা,,,,,
রূপ আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠল। পিটপিট চোখে পাশের দিকে তাকালো। মুহিতকে পাশে দেখতে না পেয়ে রূপ শোয়া থেকেই পুরো রুমে চোখ বুলাতে লাগল। দরজাটা হালকা ভেজানো। রূপ মৃদ্যু হেসে শোয়া থেকে উঠে বড় এক্টা হাই তুলে বলল,,,,,,
—–“মুহিত নিশ্চয়ই ড্রইং রুমে বসে কাজ করছে। আমি বরং শাওয়ারটা নিয়ে ওর জন্য নাশতা রেডি করি।”
রূপ মুচকি হেসে শাড়ীটা গাঁয়ে জড়িয়ে কাবার্ড থেকে আরেকটা শাড়ী নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। প্রায় আধ ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে রূপ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ভেজা চুলে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আয়নার দিকে তাকিয়ে রূপ টাওয়াল দিয়ে চুল মুচছে আর মুচকি হেসে বলছে,,,,,,,,
—–“হানিমুনে যাওয়ার পর পরই বেবির প্ল্যানিং করতে হবে। বাড়িতে একা একা আর ভালো লাগে না। মুহিত ও সারাদিন থাকে বাইরে বাইরে। আমি রুমে একা পড়ে থাকি। আমাদের ছোট্ট এক্টা গলুমলু বাবু হলে তো আমাকে আর রুমে একা বসে থেকে বোর হতে হবে না। ওর সাথেই হাসি, খুশিতে সারা দিন কেটে যাবে।”
রূপ কথাগুলো বলে দাঁত বের করে হেসে টাওয়ালটা নিয়ে ব্যালকনীর দঁড়িতে ছড়িয়ে দিলো। শাড়ীর আঁচলটা ঠিক করতে করতে রূপ রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমের সোফার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ থেমে গেলো। মুহিতকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রূপ ভেজা চুল গুলো খোঁপা করেই কিচেন রুমের দিকে চলে গেলো। কিচেন রুমে ও মুহিতকে দেখতে না পেয়ে রূপ বেড রুমের পাশের রুমটায় চলে গেলো। ঐ রূমটা ও পুরো খাঁ খাঁ করছে। শূন্যতায় ভর্তি।
রূপ কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে গেলো। নিচ তলার ফ্ল্যাটের কলিং বেড় অনবরত চেঁপে রূপ বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। পুরো বাড়িটা চোখ বুলিয়ে দেখছে রূপ। না কোথাও মুহিতকে দেখা যাচ্ছে না। বাড়িটা নীরবতায় তলিয়ে আছে। পর পর কয়েকবার কলিং বেল চাপার পর মারজানা চৌধুরী দরজা খুলে পিটপিট চোখে রূপের দিকে তাকালো। উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি মাএ ঘুম থেকে উঠেছে।
রূপ হাঁফাতে হাঁফাতে মারজানা চৌধুরীর হাত চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,
—–“আন্টি…..মুহিত কি আপনাদের ফ্ল্যাটে এসেছে?”
রূপের ভয়ার্ত ফেইস দেখে মারজানা চৌধুরী বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,,,,
—–“না রূপ। মুহিত তো আমাদের ফ্ল্যাটে আসে নি। কেনো কি হয়েছে?”
রূপ আর এক মুহূর্ত দেরি করল না। মারজানা চৌধুরীর হাতটা ছেড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তায় চলে গেলো। রাস্তায় পাগলের মতো ছুটাছুটি করছে রূপ। আর চিৎকার করে মুহিত মুহিত বলে চেচাচ্ছে। অঝড়ে ঘামছে রূপ। সাথে চোখের জল ছেড়ে ও কাঁদছে। এক প্রকার উন্মাদ হয়ে গেছে সে। রাস্তার লোকজন হা করে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। মারজানা চৌধুরী রূপের পিছুপিছু রাস্তায় চলে এলো। রূপের পাগলামী দেখে উনি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এক পর্যায়ে রূপের পাগলামী বেড়ে গেলো। সে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাড়ির রাস্তা ক্রস করে অন্য রাস্তায় মোড় নিলো। মারজানা চৌধুরী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে রূপের পিছু নিয়ে পিছন থেকে রূপের হাত ধরে ফেলল। রূপ কাঁদছে আর চিল্লিয়ে বলছে,,,,,,,
—–“আন্টি আমার হাতটা ছাড়ুন। আমাকে মুহিতের অফিসে যেতে হবে। মুহিত হয়তো আমাকে না বলেই অফিসে চলে গেছে। ওকে একবার চোখের দেখা দেখেই চলে আসব। ওকে এক্টা নজর দেখার জন্য আমার মনটা উতলা হয়ে আছে। প্লিজ ছাড়ুন আমায়।”
মারজানা চৌধুরী রূপের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,,,,,,,
—–“তুমি এতো সিউর কি করে হচ্ছ রূপ? মুহিত যে অফিসেই আছে এটা তুমি কি করে জানো? আমার জানা মতে মুহিত তোমাকে না বলে রুমের বাইরে ও পা রাখে না। সেখানে অফিস তো দূরে থাক।”
রূপ চোখের জল মুছে মারজানা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—–“হুম আন্টি আপনি তো ঠিক ই বলেছেন। মুহিত আমাকে না বলে কোথাও যায় না। তবে আজ কোথায় গেলো মুহিত? আমার মনটা বড্ড কুহ গাইছে আন্টি। কিছু এক্টা হয়েছে আমার মুহিতের সাথে। যে করেই আমাকে মুহিতের কাছে পৌঁছাতে হবে।”
রূপ মারজানা চৌধুরীকে ক্রস করে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাড়ির রাস্তায় মোড় নিলো। বাড়ির ভিতর ঢুকে রূপ এক ছুটে ফ্ল্যাটে চলে এলো। বেড রুমে ঢুকে রূপ ডেস্কের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে মুহিতের নাম্বারে ডায়াল করল। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে রূপ ফোনটা কানের কাছে ধরল। কলটা ঢুকছে না মুহিতের নম্বরে। বার বার তিনটা টুং টাং শব্দ করে ফোনটা কেটে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বার ডায়াল করার সাথে সাথে ফোনটা সুইচ অফ বলছে। রূপের চোখে আবারো অজস্র জলের ছুটাছুটি শুরু হলো। গড়গড়িয়ে রূপের চোখ থেকে পানি পড়ছে।
রূপ হাল না ছেড়ে বার বার মুহিতের নাম্বারে কল করেই যাচ্ছে। বারংবার ই ফোনটা সুইচ অফ আসছে। রূপ মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। হাঁটু ভাঁজ করে রূপ শাড়ির আঁচল মুঠ করে ধরে বুক ফাঁটা চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,,
—–“মুহিতততততত তুমি কোথায়? কোথায় চলে গেলে আমাকে কিছু না বলে? ফোনটা ও বন্ধ করে রেখেছ। আমি তোমার সাথে কন্ট্রাক্ট করব কি করে মুহিত? প্লিজ আমাকে এক্টা পথ দেখাও। অন্তত এক্টা পথ ছেড়ে যেতে। আমি না হয় সে পথ অনুসরন করে তুমি অব্দি পৌঁছে যেতাম।”
মারজানা চৌধুরী রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রূপের কান্না দেখছে আর চোখের জল ছাড়ছে। রূপ বিধ্বস্ত অবস্থায় নিজেকে তুলে ধরেছে। যেখানে বদ্ধ উন্মাদ ও হার মানবে।
রূপ কাঁদতে কাঁদতে হাতে থাকা ফোনটার দিকে আবার তাকালো। খুব মনযোগ দিয়ে রূপ কারো নাম্বারে ডায়াল করছে। ফোনটা কানের কাছে ধরে রূপ এক মিনিট চুপ থেকে কান্নার স্পিড বাড়িয়ে জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,
—–“মৃন্ময় ভাই….. তুমি কোথায়? প্লিজ তাড়াতাড়ি এ বাড়ি চলে এসো। মুহিতকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আমার মন বলছে মুহিত ভালো নেই। প্লিজ তুমি একবার এ বাড়িতে এসো।”
মৃন্ময় অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। শার্টের বোতম লাগাচ্ছিলো। রূপের কথা শুনে মৃন্ময় শার্টের বোতম ছেড়ে চোখে, মুখে ভয় নিয়ে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,
—–“এই রূপ এসব তুই কি বলছিস? মুহিতকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে?”
——“মুহিত কোথাও নেই ভাইয়া। ঘুম থেকে উঠেই আমি মুহিতকে খুঁজছি। পুরো বাড়ি খুঁজেছি। এলাকাটা ও ঘুরে ঘুরে দেখেছি। ওর ফোনটা ও বন্ধ আসছে।”
—–“হয়তো অফিসে গেছে।”
—–“অফিসে গেলে আমাকে বলে যেতো। অন্তত ফোনটা অন রাখত। কিন্তু না ওর ফোন অফ। অনেকক্ষন ধরে ট্রাই করছি বার বার সুইচ অফ বলছে। আমার মন বলছে কিছু একটা হয়েছে। আমার মুহিত ভালো নেই।”
—–“ওকে ওকে তুই কান্না থামা। আমি এক্ষনি আসছি। আসার পথে ওর অফিসে খোঁজ নিয়ে আসব। তুই শান্ত হ। আমি মারুকে নিয়ে আসছি।”
রূপ ফোনটা কান থেকে সরিয়ে আবারো চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কান্না জুড়ে দিলো। চোখ, মুখ লাল হয়ে একাকার হয়ে গেছে রূপের।
গতকাল রাতে মারু আর মৃন্ময়ের মধ্যে ঠোঁকা ঠোঁকি হয়েছিলো। বাড়ি ফিরে মৃন্ময় খুব রাগ দেখিয়েছিলো। যার জের ধরে মারু মৃন্ময়ের উপর রেগে আছে। মৃন্ময়ের সাথে কথা বলা টোটালি অফ। ঘুম থেকে উঠে মারু ইচ্ছে করে রুমে আসছে না। কিচেন রুমে অযথা ঘুরপাক খাচ্ছে।
মৃন্ময় কোনো রকমে দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে ঢুকে মারুকে টানতে টানতে কিচেন রুম থেকে বের হয়ে সোজা বাড়ির বাইরে চলে এলো। বাড়ির বাকিরা এখন যার যার রুমে। তাই কোনো উটকো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় নি মৃন্ময়কে। মৃন্ময় মারুকে টানতে টানতে নিয়ে গাড়ির ভিতর বসিয়ে দিলো। মারু চোখ লাল করে ড্রাইভিং সিটে বসা মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—–“এই আপনি আমাকে নিয়ে এতো টানা হেছড়া করছেন কেনো,? সমস্যা কি আপনার?”
মৃন্ময় হাই স্পীডে গাড়ি ছেড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—–“মুহিতকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রূপ খুব কান্নাকাটি করছে। আমরা এখন রূপের কাছে যাচ্ছি।”
মারু কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“কি বলছ এসব? কোথায় গেলো মুহিত।”
—–“জানি না। তবে ওর অফিসে খুঁজে দেখতে হবে।”
প্রায় পনেরো মিনিট পর মৃন্ময় মুহিতের অফিসের সামনে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে গাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—–“মারু তুমি এখানেই বসো। আমি ভিতরে গিয়ে দেখে আসি মুহিত আছে কিনা। হয়তো কাজের চাঁপে রূপকে কিছু না জানিয়ে অফিসে চলে এসেছে। ফোনের ব্যাটারী ও খতম হয়ে গেছে। তাই কন্ট্রাক্ট করতে পারছে না।”
মারুর উওরের আশা না করে মৃন্ময় দৌঁড়ে অফিসের ভিতর ঢুকে গেলো। মারু গাড়িতে বসে ছটফট করছে। ভয়ে ওর গাঁ থেকে ঘাম ঝড়ছে। প্রায় দশ মিনিট পর মৃন্ময় দৌঁড়ে এলো গাড়িতে। গাড়ির সিটে বসে মৃন্ময় গাড়িটা স্টার্ট করে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,,
—–“অফিসে আসে নি মুহিত। নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হয়েছে। যা আমাদের ধারনার বাইরে।”
মৃন্ময় আবারো ফুল স্পীডে গাড়ি ছেড়ে দিলো। মারু রূপের জন্য টেনশানে মরছে। মারু জানে রূপ হয়তো কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে।
ঐদিকে,,,,,,,
রূপ ফ্লোরে বসে হাঁটু ভাঁজ করে কেঁদেই চলছে। চেঁচিয়ে কাঁদছে সে। মারজানা চৌধুরী অনেক চেষ্টা করে ও রূপকে শান্ত করতে পারছে না। এক প্রকার হাত, পা ছুড়াছুড়ি কাঁদছে সে। এর মাঝেই রূপের ফোন বেজে উঠল। মারজানা চৌধুরী ফ্লোর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে রূপের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,,
—–“রূপ……. তোমার মামু কল করেছে।”
রূপ হাঁটু থেকে মুখটা উঠিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফোনটা পিক করে ওর মামুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—–“মামু আমার মুহিতকে কোথাও খোঁজে পাচ্ছি না। সকাল থেকে ওকে আমি পাগলের মতো খুঁজছি। আমার মুহিত ভালো নেই মামু। কেউ আমার মুহিতকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছে। মুহিতকে খুঁজতে হবে আমার। কিন্তু কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি এসো মামু। আমাকে হেল্প করো।”
রূপের মামু মিঃ হাসিব আহমেদ বেশ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,,,,,,,
——“ইসসস দেশে পা রাখতে না রাখতেই এমন এক্টা বেড নিউজ শুনতে হলো? আমি বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে আছি রূপ। ভেবেছিলাম তুমি আর মুহিত এসে আমাকে পিক করবে। কিন্তু দেখো এর আগেই এক্টা অনর্থ ঘটে গেলো। তুমি চিন্তা করো না রূপ। আমি ঘন্টা খানিকের মধ্যে আসছি। মামু তোমার পাশে আছি।”
রূপ হেচকি তুলে কেঁদে বলল,,,,,,,,
—–“তাড়াতাড়ি এসো। আমার মুহিতকে খুঁজে দাও।”
মিঃ হাসিব ফোনটা কেটে এক্টা লোকাল বাসে উঠে রূপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। খুব তাড়াহুড়োয় আছে উনি। খুব শীঘ্রই রূপের কাছে পৌঁছাতে হবে। রূপ বেশ ভেঙ্গে পড়েছে। রূপের পাশে এখন ছায়ার মতো দাঁড়াতে হবে।
মৃন্ময় আর মারু এতক্ষনে রূপদের ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেছে। রুমে ঢুকেই ওরা রূপকে এলোমেলো অবস্থায় দেখতে পেলো। কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে অগোছালো করে তুলেছে রূপ। হাত, পায়ের ছুড়াছুড়িতে পড়নের শাড়িটা ও খুলে খুলে পড়ছে। ভেজা চুল গুলো জট পাকিয়ে গেছে। কাজল লেপ্টে চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে। দেখতে পুরো বিভৎস লাগছে।
মারু দৌঁড়ে গিয়ে রূপকে ঝাপটে ধরে চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,,,,
—–“এসব কি করে হলো রূপ? মুহিত কখন রুম থেকে বের হয়েছে তুই কিছুই জানিস না? টের ও পাস নি?”
—–“আমি কিচ্ছু জানি না মারু। কাল রাতে ঘুমিয়েছিলাম এক সাথে। কিন্তু সকালে উঠে দেখি নেই। বিশ্বাস কর আমি এক্টু ও বুঝতে পারি নি মুহিত কখন রুম থেকে বের হয়েছে।”
মৃন্ময় রূপের কাছে এগিয়ে এসে বলল,,,,,,,,
—–“মুহিত অফিসে ও নেই। অফিস থেকে মিটিং এর কাজে কোথাও যায় ও নি। অফিস বাদে আর কোথায় যেতে পারে মুহিত? তোর কোনো ধারনা আছে?”
—–“নেই ভাইয়া। কারণ মুহিত বাড়ি আর অফিস ছাড়া আদার’স কোথাও যায় না। আমাদের বিয়ের পর থেকে সে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেওয়া ও বন্ধ করে দিয়েছে।”
মৃন্ময় হাত দিয়ে কপাল ঘঁষছে আর বেশ চিন্তিত হয়ে বলছে,,,,,,,,
—–“তাহলে মুহিত কোথায় যেতে পারে?”
মৃন্ময় কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে হঠাৎ করে বলে উঠল,,,,,,
—–“অনিক কিছু করে নি তো?”
রূপ কান্না থামিয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“অনিক না। আমার অন্য কাউকে ডাউট হচ্ছে। মামু এলেই আমি থানায় যাবো।”
মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকে বলল,,,,,,
—–“অন্য কেউ মানে? কে সে?”
—–“নামটা বললে তুমি কষ্ট পাবে না তো?”
মৃন্ময় আচমকা বলে উঠল,,,,,,,
—–“আম্মু?”
রূপ মাথাটা নিচু করে বলল,,,,,,,
—–“হুম। প্রথম থেকেই আমার ফুফুমনিকে ডাউট হচ্ছে। এছাড়া ও অনেক হিসেব বাকি আছে ফুফুমনির সাথে আমার।”
মৃন্ময় মলিন হেসে বলল,,,,,,
—–“তুই কেনো মাথা নিচু করলি রূপ? করবো তো আমি। কারণ অনুশোচনাটা আমার হওয়া উচিত। তোর না।”
রূপ মৃন্ময়ের হাত জোড়া চেঁপে ধরে বলল,,,,,
—–“আঙ্কেলকে এক্টু কল করবে ভাইয়া? আঙ্কেল হয়তো অফিসে। এই ব্যাপারে কিছুই জানে না।”
—–“দাঁড়া করছি।”
মৃন্ময় পকেট থেকে ফোনটা বের করে সানোয়ার আহমেদের নাম্বারে ডায়াল করল। প্রথম কল টা বেজে বাকি কয়েকটা কলে তিনটা টুং টাং শব্দ করে কল গুলো কেটে যাচ্ছে। মৃন্ময় কপাল কুঁচকে বার বার ডায়াল করেই চলছে। কিন্তু প্রতিবারই ফোনটা কেটে যাচ্ছে। মৃন্ময় বেশ পেরেশান হয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—–“আব্বুর ফোনটা ও বন্ধ আসছে রূপ। কিছুতেই কল ঢুকছে না।”
রূপ বসা থেকে উঠে চোখে, মুখে কৌতুহল নিয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—–“তবে কি ফুফুমনি মুহিতের সাথে আঙ্কেলকে ও বন্ধি করে নিয়েছে? সম্পওির লোভে? হয়তো পুরো বাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য!”
মৃন্ময় মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বেডের উপর বসে পড়ল। মারু চোখে জল নিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“রূপ প্লিজ চল। আমরা ঐ মায়া আহমেদের মুখোমুখি হই। উনাকে জেরা করলেই উনি সত্যিটা বলে দিবে।”
—–“সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না মারু। উনি এতো সহজে সত্যিটা স্বীকার করবে না। পুলিশ নিয়ে যেতে হবে। পুলিশের জেরাতে উনি সত্যিটা বলবে। অনেক বছর আগের হিসেব ও বাকি আছে উনার সাথে আমার। সব হিসেব আমি এক সাথে মিটিয়ে নিবো। ঐ মহিলা যদি আমার স্বামীর গাঁয়ে এক্টা আঁচড় ও দেয় না তো আমি সত্যিই ভুলে যাবো উনি আমার ফুফুমনি।”
রূপ কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,,
—–“ঘন্টা খানিক ওয়েট করতে হবে আমাদের। মামু আসলেই আমরা সবাই মিলে থানায় যাবো। থানা থেকে পুলিশ নিয়ে ঐ বাড়ি যাবো। আই থিংক ফুফুমনির সাথে রেজাউল আঙ্কেল ও জড়িত আছে। কারণ, মুহিতের জন্যই উনার ছেলে, মেয়ে এখনো জেলে।”
এসব বলতে বলতেই রূপের শ্বাস বেড়ে গেলো। এক্টু চিৎকার চেঁচামেচি করলেই রূপের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মারু ডেস্কের ড্রয়ার থেকে ইনহেলার এনে রূপের হাতে ধরিয়ে বলল,,,,,,
—–‘রূপ তাড়াতাড়ি স্প্রে করে নে।”
রূপ মারুর দিকে একবার তাকিয়ে ইনহেলারটা হাতে নিয়ে দুবার স্প্রে করে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—–‘আমাকে এখন শান্ত থাকতে হবে মারু। ধৈর্য্য নিয়ে সামনে এগুতে হবে। নয়তো আমার স্বামী আর শ্বশুড়কে আমি উদ্ধার করতে পারব না। আমার আম্মু, আব্বুর হত্যাকারীকে ও শাস্তি দিতে পারব না।”
মৃন্ময় এখনো মাথা নিচু করে রেখেছে। নিজের মায়ের কুকীর্তি নিজ কানে শুনতে পারছে না। হাজার খারাপ হলে ও মা তো মা ই হয়। রূপ ব্যাপারটা বুঝে মৃন্ময়ের পাশে বসে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
——“ভাইয়া প্লিজ তুমি মন খারাপ করো না। ফুফুমনির জন্য হয়তো তোমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটাই সত্যি। ফুফুমনি এ সব কিছুর সাথে জড়িত। পুলিশ এলে প্রমান বের করেই ছাড়বে।”
মৃন্ময় শুধু মাথা নাঁড়ালো। আর কিছুই বলল না। প্রায় এক ঘন্টা পর। মিঃ হাসিব রূপের ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেলো। রূপ অনেক আগেই হোয়াট’স এ্যাপ করে ফ্ল্যাটের এড্রেস মিঃ হাসিবকে জানিয়ে দিয়েছে। মিঃ হাসিব রুমে ঢুকেই রূপকে বুকে জড়িয়ে ধরল। রূপ কেঁদে কেটে মিঃ হাসিবের কালো শার্ট টা ভিজিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,
—–“মামু প্লিজ আমাকে হেল্প করো।আমার মুহিতকে ফুফুমনি কিছু এক্টা করেছে। ষড়যন্ত্র করে আমার মুহিতকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে। সাথে আঙ্কেলকে ও। আঙ্কেলের প্রতি উনার অনেক ক্ষোভ জমে আছে। যার জেরে উনি স্বামী, ছেলে দুজনকেই আটকে রেখেছে। এতোটা হিংস্র হয়ে উঠেছে।”
মিঃ হাসিব রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,,
—–“আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম রূপ। তোমার ফুফুমনি খুবই লোভী আর হিংসুটে এক্টা মানুষ। আমার বোনের মৃত্যুতে যে উনার হাত আছে তা ও বেশ ভালো করে জানি। তুমি তো বিশ্বাস করতে চাইতে না। এবার হলো তো বিশ্বাস?”
মিঃ হাসিব রূপকে বুক থেকে উঠিয়ে রূপের চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে বলল,,,,,,,
——“অনেক হয়েছে। এবার কান্না থামাও। ফ্রেশ হয়ে এসো। থানায় যাবো। পুরনো কেইস আবার ওপেন করতে হবে। সাথে মুহিত আর সানোয়ার ভাইকে ও উদ্ধার করতে হবে।”
রূপ দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। মিঃ হাসিব মলিন হেসে মৃন্ময়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
—–“মায়ের কুকর্মের জন্য কষ্ট পেও না। তুমি ভালো তো জগত ভালো। তুমি তোমার কর্ম দিয়ে নিজেকে জাজ করবে। অন্য কারো কর্মফল দিয়ে না।”
মৃন্ময় শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,
——“তাই করছি আঙ্কেল।”
প্রায় দশ মিনিটের মধ্যেই রূপ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মিঃ হাসিবকে নিয়ে মৃন্ময়ের গাড়িতে বসে পড়ল। মারু ও আছে সাথে। মৃন্ময় গাড়ি নিয়ে ছুটল পুলিশ স্টেশানের উদ্দেশ্যে। রূপ এখনো চোখের পানি ছেড়ে যাচ্ছে আর মুহিতের বলা প্রত্যেকটা কথা মনে মনে আওড়াচ্ছে। মুহিত বার বার রূপকে এক্টা কথাই বলত,,,,,,
—–“আমি যদি নিঁখোজ হই তুমি আমাকে খুঁজে নিও রূপ। আমি জানি তুমি পারবে। হারানোর কথাটা আমি সম্ভাবনা থেকে বললাম। যদি হারাই ও তুমি ঠিক পারবে আমাকে খুঁজে বের করতে। ভালোবাসায় কখনো ক্লান্তি আসে না রূপ। তুমি ও আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হবে না।”
রূপ এসব মনে করছে আর চোখ বুজে ঢুকরে কেঁদে উঠছে।
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,
(কাল সন্ধ্যা থেকে আমার খুব জ্বর, সর্দি, কাশি। মেডিসিনের প্রভাবে ঘুমের রেশটা বেশি। খুব কষ্ট হয়েছে এই পার্ট টা লিখতে। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#চলবে,,,,,,,,,
(সবার কি মনে হয় মুহিত কোথায় যাচ্ছে? আর কলটাই বা মুহিতকে কে করেছে? আবারো বলছি লেখিকার উপর ভরসা রাখুন। শেষ পর্যন্ত গল্পটার পাশে থাকুন।)