এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ৭+৮

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

নূর ভাইয়া মুচকি হেসে আমার বুকে শুয়ে পড়ল। আমি ও আর দেরি না করে নূর ভাইয়াকে বুকে নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম।

(গল্পের শুরুতেই কিছু কথা বলতে চাই। আসলে গল্পের নায়ক, নায়িকাদের নাম গুলো চেইন্জ্ঞ করা হয়েছে। নূর আর চাঁদের বদলে রূপসা আর মুহিত রাখা হয়েছে। কজ নূর আর চাঁদকে কেবল #শেষটা_সুন্দর গল্পতেই মানায়। প্রথম থেকেই আমার কেমন অস্বস্তি লাগছে গল্পটা লিখতে। মন সায় দিচ্ছে না। নূর আর চাঁদের প্রখর ভালোবাসা আমি এই গল্পে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারছি না। অধিকাংশ পাঠকদের রিকুয়েস্টে নূর আর চাঁদকে এই গল্পে এনেছিলাম। একচুয়েলি আমার দ্বারা আর হয়ে উঠছে না। এর জন্য অনেকেই হয়তো দু এক্টা কটু কথা শুনাবেন। এতে আমার কিছু করার নেই। ধন্যবাদ সবাইকে।)

সকালের মিষ্টি ঘুমটা ভাঙ্গল কাকদের কাঁ কাঁ শব্দে। পিটপিট চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম গেস্ট রুমে। পাশে মারু নেই। জানালার কাঁচ দিয়ে সকালের সূর্যটাকে ক্লিয়ারলি দেখা যাচ্ছে। শীতের সকালে রোদের তেজ কম থাকে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের তেজ ও বাড়তে থাকে। আচ্ছা আজ কি কাকদের রাজ্যে বিয়ের ধুম পড়েছে? মনে হচ্ছে অনেক গুলো কাকের আজ একসাথে বিয়ে। আমাদের নিমন্ত্রণ করতে এসেছে। তাই তো সকাল থেকেই গাছের ডালে বসে লাগাতাড় ব্যান্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। ওদের নিজস্ব ভাষায় আমাদের কিছু বুঝাতে চাইছে। ওদের ভাষা বুঝি না বলে এতোটা বিরক্ত লাগছে। কানটা ঝালাফালা হয়ে যাচ্ছে। চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,,,,,,,

—-“আরে, কাক ভাইরা প্লিজ থেমে যান। আমরা শুনেছি তো আপনাদের রাজ্যে বিয়ের ধুম পড়েছে। আমরা নিমন্ত্রণ পেয়ে গেছি। সময় করে চলে যাবো আপনাদের বিয়েতে। প্লিজ এবার আসুন।”

আপন মনে বিড়বিড় করছি। আচমকাই মনে হলো আমি এই রুমে কি করছি? আমি তো ছিলাম মুহিত ভাইয়ার রুমে। ঘুমে পায়চারী করার অভ্যেস নেই আমার। তাহলে কি স্বয়ং মুহিত ভাইয়া আমাকে এই রুমে রেখে গেছে? হবে হয়তো। আমাকে মুহিত ভাইয়ার রুমে দেখলে বাড়ির সবাই হয়তো খুব মাইন্ড করত। নানা ধরনের কটু কথা আমাদের নামে রটিয়ে দিতো। তাই সবার অগোচরে মুহিত ভাইয়া আমাকে এই রুমে শুইয়ে দিয়ে গেছে। যাক বাবা, মুহিত ভাইয়ার সব দিকেই নজর আছে। সিক্স সেন্স বেশ ভালো মুহিত ভাইয়ার।

শোয়া থেকে উঠে বসলাম। বড় এক্টা হাই তুলে পিটপিট চোখে রুমের চারপাশের দেয়ালে চোখ বুলাচ্ছি। একচুয়েলি আমি দেয়াল ঘড়ি খোঁজার চেষ্টা করছি। তিন বছরে কত কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই রুমে এক্টা দেয়াল ঘড়ি ছিলো। কিন্তু এখন ওটা নেই। এক্সেক্ট সময়টা নির্ণয় করতে পারছি না। মনটা কেমন আনচান আনচান করছে। মুহিত ভাইয়াকে এক্টা নজর দেখতে ইচ্ছে করছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। জুতো জোড়া পড়ে গাঁয়ের উড়নাটা ঠিক করে বুকে জড়িয়ে নিলাম। দরজা ঠেলে রুম থেকে বের হয়ে এদিক সেদিক না তাকিয়ে মুহিত ভাইয়ার রুমের দিকে দিলাম এক দৌঁড়। যেনো কেউ বুঝতে না পেরে আমি মুহিত ভাইয়ার রুমে যাচ্ছি। মুহিত ভাইয়ার রুমের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লাম মুহিত ভাইয়ার রুমে। চোখ জোড়া বন্ধ করে দরজার সাথে ফিট হয়ে সমানে হাঁফাচ্ছি। কয়েকটা বড় বড় শ্বাস ফেলে চোখ খুলে বেডের দিকে তাকালাম। মুহিত ভাইয়া বেডে নেই। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। দৌঁড়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলে পুরো ওয়াশরুমটায় চোখ বুলিয়ে নিলাম। ওয়াশরুমে ও নেই মুহিত ভাইয়া। বিষন্ন মন নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে বেডের উপর বসলাম। জানালা দিয়ে আসা মৃদ্যু মন্দ বাতাসে ডেস্কের উপর থাকা ছোট্ট এক্টা কাগজ উড়ছে। অবশ্য কাগজটাকে খুঁটি দেওয়ার জন্য এক্টা ক্যাটবেরি চকলেট ও আছে। বুঝতে পারলাম এটা মুহিত ভাইয়ার কারসাজি। চট জলদি বসা থেকে উঠে কাগজটা হাতে নিলাম। চকলেটের প্যাকেট টা ডেস্কের উপর রাখলাম। খুব উৎসাহ নিয়ে কাগজটা পড়ছি। কাগজটাতে লিখা আছে,,,,,,,,

—–“গুড মর্নিং রূপসা। ভালোবাসি, ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি। অনেকগুলা ভালোবাসি তোমায়। আমি জানতাম তুমি আমাকে ঘুম থেকে উঠে দেখতে না পেয়ে দৌঁড়ে আমার রুমে চলে আসবে। তাই চিঠি টা আমার রুমেই রেখে গেলাম। অফিসের কাজে আমাকে এই সাত সকালেই বের হতে হলো। কর্মচারীদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকে না। যখনই কাজ লাগবে তখনই তাদের যেতে হবে। তাই হাজার ইচ্ছে থাকা সও্বে ও তোমার সাথে সকালের কিছুটা মিষ্টি সময় কাটাতে পারলাম না। তার জন্য আ’ম স্যরি রূপসা। প্লিজ তুমি রাগ করো না। একদিন আমাদের ও সময় আসবে। ঐদিন তুমি আর আমি মিলে পুরোটা সকাল জুড়ে একসাথে অনেকটা সময় কাটাতে পারব। তখন আমাদের নিজস্ব এক্টা বাড়ি থাকবে। আমরা তখন নিজেদের মতো করে বুক ফুলিয়ে বাঁচতে পারব। সবকিছু আমাদের অধীনে থাকবে। ঐদিন আমাদের বিশাল বড় এক্টা গাড়ি ও থাকবে। হুটহাট করে আমরা লং ড্রাইভে চলে যাবো। এই বড় বড় স্বপ্ন গুলো পূরণ করার জন্যই আমি খুব হার্ড ওয়ার্কিং করছি। খুব মন লাগিয়ে কাজ করছি। তুমি পাশে থাকলে আমি সব পারব রূপসা। আমাকে আরো বেশি পরিশ্রমী হতে হবে। তোমাকে এক্টা সুন্দর লাইফ উপহার দিতে হবে।”

কিছুটা গ্যাপ দিয়ে আবার লিখা,,,,,

—-“নাস্তা করে নিও রূপসা। আমি সামনের টং দোকান থেকে চা খেয়ে নিবো। আমার খাওয়া দাওয়া নিয়ে একদম টেনশান করো না কেমন? বাড়িতে কেউ কিছু বললে খানিকটা হলে ও প্রতিবাদ করার চেষ্টা করো। ইদানিং বড্ড ভয় হয় তোমাকে একা ছেড়ে যেতে। এরপরে ও যেতে হয়। জীবিকার তাগিদে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে খানিক রাত হবে আমার। এই সময়টাতে তোমাকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে হবে। আমি বাড়ি ফিরলে বাকিটা সময় আমার সাথে থাকবে। আর হ্যাঁ চকলেট টা খেয়ে নিও। অফিস থেকে ফেরার সময় মেহেদীর পুরো এক্টা বক্স নিয়ে ফিরব। তোমার খালি খালি হাত দেখতে আমার একদম ভালো লাগে না। মেহেদী রাঙ্গা হাতে আমার রূপসার হাত জোড়া ভারী মিষ্টি লাগে দেখতে। তুমি আমার পাশে বসে দুহাতে মেহেদী লাগাবে আর আমি তোমাকে দু চোখ ভরে দেখব।”

ব্যাস এটুকুই। অনেক অনেক ভালোবাসা নিও রূপসা।

♥ইতি তোমার মুহিত♥

খুব রাগ হচ্ছে মুহিত ভাইয়ার প্রতি। যাওয়ার আগে অন্তত আমাকে এক্টু ডেকে যেতে পারত। উনার মুখটা দেখে সারাটা দিন পাড় করে দিতাম। উনাকে ছাড়া বাকিটা সময় কাটাতে অতোটা কষ্ট হতো না। কিন্তু না আমাকে কিছু বলে যায় নি এমনকি ডেকে ও যায় নি। খুব রাগ করেছি উনার সাথে। ফিরুক আজ বাড়িতে। একদম কথাই বলব না। মুখে তালা ঝুলিয়ে রাখব। মেহেদী ও লাগাব না হাতে। মেহেদীর বক্স টা ছুঁয়ে ও দেখব না। একদম পাওাই দিবো না লোকটাকে। আমার ভালোবাসা তো উনার চোখেই পড়ে না। কেবল নিজের দিকটাই ভাববে। কিছুটা সময় ব্যয় করে আমার দিকটা ভাববে না। তাহলে আমি কেনো ভাবতে যাবো ঐ লোকটার কথা? আমি ও ভাবব না। খুব রাগ করেছি আমি। খুব খুব খুব রাগ করেছি।

এর মাঝেই মুহিত ভাইয়ার দরজার সামনে দোলা আপু আর ফুফুমনির চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেলাম। তাড়াতাড়ি চিঠিটা চার ভাঁজ করে বুকের উপর গুজে রেখে দিলাম। দোলা আপু আর ফুফুমনি দরজা ঠেলে রুমে ঢুকার সাথে সাথেই আমি বেড গুছানোর ভান ধরলাম। দুহাত দিয়ে মুহিত ভাইয়ার বেডটাকে ঝাঁড়ছি। দোলা আপু তেড়ে এসে আমার হাত দুটো চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—–“নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তাই না? ঢং করে মুহিতের বেড গুছাতে এসেছিস? মুহিতকে ফোসলানোর জন্য? তোর এই আশা কখনো পূরণ হবে না রূপসা। আমরা যে করেই হোক মুহিতকে সানায়ার সাথেই বিয়ে দিবো। মুহিতের ভাগ্যটা বেশ ভালো যে সানায়া মুহিতকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। আর মুহিত কি না সানায়াকেই পায়ে ঠেলে দিচ্ছে শুধুমাএ তোর জন্য?”

আমি এক ঝটকায় দোলা আপুর হাতটা সরিয়ে নিলাম। কিছুটা রাগী লুক নিয়ে দোলা আপুকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,,,

—–“তোমাদের মন মানসিকতা খুব নিচ বুঝলে? আমাকে এক্টু বুঝিয়ে বলবে, তোমরা কোন যুক্তিতে সানায়া আপুর সাথে মুহিত ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করলে? নিজের আপন চাচাতো বোনের সাথে বিয়ে? তোমাদের মনে হচ্ছে না তোমরা পাপ করছ, অন্যায় করছ? ভাই-বোনের মিষ্টি সম্পর্কটাকে নষ্ট করছ?”

ফুফুমনি তেড়ে এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—–“আমরা কোনো পাপ ও করছি না, অন্যায় ও করছি না। আমরা যা করছি মুহিতের ভালোর জন্য করছি। সানায়াকে বিয়ে করলে মুহিত সুখী হবে। শান্তিতে থাকবে। তোকে বিয়ে করে মুহিত কিচ্ছু পাবে না। তুই তো নিজেই একজন ভিক্ষুক। মুহিতকে দেওয়ার মতো কি আছে তোর?”

—-“আমার সবকিছু তো তোমরাই কেড়ে নিলে ফুফুমনি। এক সময় আমার ও সব ছিলো। তোমরা চিট করেছ আমার সাথে ফুফুমনি। আমি মুহিত ভাইয়াকে সব বলব। তোমরা আমার সম্পওি ছিনিয়ে নিয়েছ এমনকি তোমাদের জন্যই আমি বাধ্য হয়েছি এই বাড়ি ছাড়তে।”

ফুফুমনি হু হা করে হেসে বলল,,,,,,

—-“হাসালি রূপসা। মুহিত কি করবে আমাদের? কি করার আছে ওর? মাসে মাএ ২০ হাজার টাকা ইনকাম করে। তাও আবার ছোট্ট এক্টা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে। কিছু করার সামর্থ্য আছে নাকি ওর? মুহিতের ভয় আমাদের দেখাস না প্লিজ। এতে তোরই ক্ষতি হবে। মুহিতকে ধরে বেঁধে আমরা সানায়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো। রেজার কিন্তু টাকা পয়সার অভাব নেই। সানায়ার সম্পওির পুরো ভাগ মুহিত পাবে। মুহিত পাওয়া যে কথা আমরা পাওয়া একই কথা। এবার ভেবে দেখ সানায়াকে বিয়ে করলে মুহিতের সাথে সাথে আমরা ও কতোটা লাভবান হবো।”

বুঝতে পারলাম ওদের কিছু বলে লাভ নেই। লোভ মানুষের মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে দেয়। বিবেক, বুদ্ধিকে গলা টিপে মেরে দেয়। ওদের সাথে তর্কে জড়ানো বোকামী ছাড়া আর কিছুই না। কেনো জানি না মনে হচ্ছে আমি যে সত্যি গুলো খোঁজার চেষ্টা করছি, তা আর না খুঁজলে ও চলবে। কারণ এর উওর আমার জানা আছে। ওরাই আমার বাবা-মা কে খুন করেছে। সম্পওির লোভে। এক্টা সময় আমার বাবার প্রচুর সম্পওি ছিলো। ফুফু মনি খুব হিংসুটে। হয়তো লোভ এবং হিংসেতে পড়ে ফুফুমনি আমার বাবা, মা কে খুন করেছে। একদিন আমি ঠিক এর যথাযথ ন্যায় পাবো। ফুফুমনির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। ঐদিন ফুফুমনির আমার বিরুদ্ধে কিছু বলার জায়গা থাকবে না। আমি সেই দিনটার অপেক্ষায় থাকব। মুহিত ভাইয়ার প্রতি বিশ্বাস আছে আমার। মুহিত ভাইয়া কখনো আমাকে ছেড়ে সানায়া আপুর কাছে যাবে না। এবার সানায়া আপু যতোই সুন্দুরী হোক আর কোটিপতি হোক।

চোখ জোড়া বন্ধ করে বড় এক্টা শ্বাস ফেলে ওদের ক্রস করে রুম থেকে বের হতে নিলেই দোলা আপু পিছন থেকে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,

—-“ব্রেকফাস্ট টা তাড়াতাড়ি তৈরী কর। খেয়ে দেয়ে আমার আবার বের হতে হবে। আধ ঘন্টার মধ্যে আমার ব্রেকফাস্ট চাই ওকে?”

আমি কিছু বললাম না। সোজা নিজের রুমে গেলাম। মারু মুখটা ফুলিয়ে বেডের উপর গোল হয়ে বসে আছে। আমি ভ্রু কুঁচকে মারুর পাশে বসে কিছুটা কৌতুহল নিয়ে বললাম,,,,,,,

—–“এই মারু কি হয়েছে তোর? মুখটা এভাবে ফুলিয়ে রেখেছিস কেনো?”

মারু গাল দুটো ফুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“মৃন্ময়ের সাথে রাগ করেছি!”

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,,,,,

—-“মানে কি? মৃন্ময় ভাইয়ার সাথে রাগ করেছিস মানে?”

—-“আর বলিস না। আমি ঘুম থেকে উঠে পা টিপে টিপে মৃন্ময়ের রুমে যাই মৃন্ময়কে দেখতে। উনার রুমের দরজাটা ভেজানো ছিলো। রুমে ঢুকে আমি যখন উনার বেডের পাশে দাঁড়াই তখনই দেখি উনার ফোন বাজছে। ফোনটা সাইলেন্ট মোডে ছিলো। ফোনের স্ক্রীনে এক্টা সুন্দুরী মেয়ের ছবি ভাসছে। মেয়েটার নাম মেবি রূপা। নাম্বারের পাশাপাশি নামটা ও রূপা দিয়ে সেইভ করা ছিলো। জানিস মেয়েটা অসম্ভব সুন্দুরী দেখতে। আমার থেকে ও সুন্দুরী। আমার মনে হয় মৃন্ময় এই মেয়েটাকেই ভালোবাসে। ইসসসস আমার কপালটা পোঁড়ল বুঝলি?”

আমি হু হা করে হেসে বললাম,,,,,,

—-“আরে পাগলী। রূপা আপু হলো মৃন্ময় ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। রূপা আপু অলরেডি মেরেইড। হয়তো কোনো কাজে মৃন্ময় ভাইয়াকে কল করেছে। আর তুই কিনা আপাদমস্তক না জেনে খামোখা অভিমান করে বসে আছিস?”

—-“এ্যা….সত্যি বলছিস তুই?”

—-“হ্যাঁ রে হ্যাঁ। সত্যি বলছি।”

মারু বসা থেকে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে পড়ল। আয়নায় নিজেকে খুব ভালো করে দেখে রুম থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই মৃন্ময় ভাইয়া রুমে যাচ্ছে। আমি মৃদ্যু হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে সোজা কিচেনে চলে গেলাম। এই বাড়িতে যখন থাকছি সবার কথা শুনেই চলতে হবে। মুহিত ভাইয়া তো বলেই দিয়েছে, ওদের সাথে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে। ভালো এক্টা জব পেলে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। তাই খামোখা ওদের সাথে লেগে লাভ নেই। আপোষে যতো দিন চলতে পারি। কিচেন রুমে ঢুকে পরটা বানানোর কাজে লেগে পড়েছি। আধ ঘন্টার মধ্যেই সব রেডি করতে হবে।

ঐদিকে মারু মৃন্ময় ভাইয়ার রুমে ঢুকে মৃন্ময় ভাইয়ার বেডের উপর দু পা ঝুলিয়ে বসে আছে। মৃন্ময় ভাইয়া ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে। মারু বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা কিচেন রুমে চলে এলো। কোঁমড়ে উড়না গুজে মারু আমার দিকে তাকিয়ে বলছে,,,,,,

—–“রূপসা তাড়াতাড়ি এক কাপ কফি বসা। মৃন্ময়কে কফি খাইয়ে ইমপ্রেস করতে হবে। বেচারা ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে।”

আমি বেকুব হয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে আছি। মারু আমাকে গ্যাসের সামনে থেকে সরিয়ে চুলায় কফি বসিয়ে দিলো। আমি পরটা বেলে যাচ্ছি আর মারুর কান্ড দেখছি। দশ মিনিটের মধ্যে মারু কফি বানিয়ে কিচেন থেকে বের হয়ে সোজা মৃন্ময় ভাইয়ার রুমে চলে গেলো। মৃন্ময় ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে মাএ ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে। মারু মিটিমিটি হেসে কফি হাতে নিয়ে মৃন্ময় ভাইয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। মারুকে দেখেই মৃন্ময় ভাইয়া জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“সকাল সকাল চলে এসেছ আমার মাথাটা ঘাটাতে? আচ্ছা তুমি আমার পিছনে এভাবে উঠে পড়ে লেগেছ কেনো? কি চাইছ তুমি আমার থেকে? প্লিজ আনাসার মি ড্যাম ইট। প্লিজ।”

মারু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মৃন্ময় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে মারু মৃন্ময় ভাইয়ার দিকে কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,

—-“আআআপনার জন্য কফি নিয়ে এসেছি। প্লিজ খেয়ে নিন।”

—-“কফি আমার লাগবে না ওকে? প্লিজ তুমি এক্ষনি রুম থেকে দফা হও।”

মারু মুখটা বাঁকা করে কফির কাপটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে আর পিছু ফিরে মৃন্ময় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—-“আপনার কখনো বিয়ে হবে না বুঝেছেন? আস্ত রাক্ষস আপনি। ডায়ান ছাড়া আপনাকে কেউ বিয়ে করবে না। আমি ও করব না। একদম করব না। বদরাগী লোক এক্টা।”

মারু আর দাঁড়াল না। দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মৃন্ময় চোখ জোড়া বন্ধ করে কপাল ঘঁষছে আর বলছে,,,,,,

—-“ওহ্ গড। দিজ গার্ল ইজ টোটালী ম্যাড।”

আমার পরটা বেলা প্রায় শেষের দিকে। এবার শুধু ভাজার পালা। এর মাঝেই মারু হনহনিয়ে কিচেন রুমে ঢুকল। আমি পরটা ভাজতে শুরু করেছি। মারু মুখ ফুলিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ বুঝতে পেরেছি মারু মৃন্ময় ভাইয়ার রগচটা রূপটা দেখে এসেছে। কিচ্ছু বলছি না। মুখ টিপে হাসছি। প্রায় পনেরো মিনিট পর পরটা ভাজা শেষ হয়ে এলো। এবার শুধু সার্ভ করার পালা। মারু আমাকে যথেষ্ট হেল্প করছে। কিচেন রুম থেকে খাবার গুলো টেনে টেনে ডাইনিং টেবিলে সাজাচ্ছে। এর মাঝেই সবাই ডাইনিং টেবিলে এসে হাজির হয়ে গেলো। মৃন্ময় ভাইয়া, সানোয়ার আংকেল, ফুফুমনি আর দোলা আপু। বাড়ির বাকিরা হয়তো সাকিব ভাইয়াকে নিয়ে ফিরছে। সানায়া আপু তো দেশের বাইরেই আছে। উনার শখ বেশি ঘুরাঘুরি করার। বাপের টাকা আছে তাই তেমন প্রবলেম ও হয় না। যখন যেখানে মন চায়, ঘুড়তে চলে যায়।

আমি মারুকে চেয়ারে বসিয়ে দিলাম। মৃন্ময় ভাইয়া কফি খাচ্ছে আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—-“রূপসা তুই ও বসে পড়। একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নে।”

ভাইয়ার কথা মতো বসে পড়লাম। সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করছি। খাওয়া দাওয়া শেষে সানোয়ার আংকেল আর মৃন্ময় ভাইয়া অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে। মারু এক দৃষ্টিতে মৃন্ময় ভাইয়ার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। আচমকাই মৃন্ময় ভাইয়া পিছু ঘুরে মারুর দিকে তাকালো। মারু চোখ বড় বড় করে মৃন্ময় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় ভাইয়া তাড়াতাড়ি ঘাঁড় ফিরিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরল। আমার মনে হচ্ছে মৃন্ময় ভাইয়া এখনো পঞ্চাশ টাকার খোঁজ করে নি। তাই পরিবেশ এতো শান্ত আছে। না হয় বাড়িতে হাঁক ডাক পড়ে যেতো।

ফুফুমনি টেবিল ছেড়ে উঠছে আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—-“রূপসা শুন না। আজ বাসন্তির মা কাজে আসবে না। তুই এক কাজ কর। হাড়ি, পাতিল গুলো ধুঁয়ে মসলা বাটতে বসে যা। আমাদের ব্ল্যাল্ডারটা ও নষ্ট হয়ে গেছে। সাকিবের জন্য আজ সব স্পেশাল আইটেম রান্না করবি। তুই নিজের হাতে সব রান্না করবি কেমন?”

আমি হাসি মুখে মেনে নিলাম। মারু চোখ রাঙ্গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আমার কাজ করছি। কিচেন রুমের বেসিনে হাড়ি পাতি মাজছি। মারু নিরুপায় হয়ে আমাকে হেল্প করছে। হাড়ি, পাতিল ধুঁয়ে মসলা বাটতে বসে গেলাম। প্রায় দুই ঘন্টা যাবত মসলা বেটেছি। হাতে ঠোসা ফুটে গেছে। চোখ, মুখ ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। খুব কেঁদেছি। এর মাঝেই সাকিব ভাইয়াকে নিয়ে আন্টি,আংকেল চলে এসেছে। ছেলেকে নিয়ে ওরা বেশ ফুর্তি আমোদেই আছে। মাঝখান থেকে আমাকে খাটাচ্ছে। কিছুক্ষন পর পর আপেল কেটে দিচ্ছি, মাল্টা কেটে দিচ্ছি, কফি দিচ্ছি, নাস্তা দিচ্ছি। আবার গ্যাসে রান্না ও বসিয়েছি। মারু আমাকে সমানে বকছে আর আমাকে হেল্প করছে। দুপুর দুইটার আগেই রান্না কমপ্লিট হয়ে গেলো। শাওয়ার নেওয়ার ও সময় দেয় নি ওরা। লাঞ্চ সার্ভ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। হাতের জ্বলন নিয়ে সব দিক সামলাচ্ছি। সার্ভ করে ওদের খেতে দিয়েছি। সবাই কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছে। মারুকে জোর করে বসিয়ে দিয়েছি। হাতের জ্বালায় আমি ভাত মাখতে পারছি না। মারু আমাকে লোকমা ধরিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে। সাকিব ভাইয়া আমার দিকে বাজে নজরে তাকাচ্ছে। বুঝতে পেরে ও কিছু বলছি না। আর মাএ কয়েকটা দিন সহ্য করে নেই।

প্রায় আধ ঘন্টা পর খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই নিজেদের রুমে চলে গেলো। ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রুমে গিয়ে ধপাস হয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম। ঘড়িতে ৩:৩০ বাজছে। কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি আমি আর মারু। মারু জোর করে ও আমার হাতে কিছু লাগাতে পারছে না। ভয়ে হাতে কিছু লাগাতে চাইছি না। এনটিসেফটিক লাগালা যদি হাতে আরো বেশি করে জ্বালা করে তাই। দাঁতে দাঁত চেঁপে সব ব্যাথা সহ্য করে নিচ্ছি। চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। শরীরটা খুব ঢুলছে। এক্টু ঘুমালে হয়তো ভাল্লাগবে। কিছুক্ষন পরেই চোখে ঘুমপরীরা হানা দিলো। এভাবে কতোক্ষন ঘুমিয়েছি জানি না। আচমকাই মনে হলো আমার হাতে কেউ কিছু ঘঁষছে। হাতটা কেমন জ্বালা ও করছে। চোখ জোড়া খুলেই মুহিত ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। টপটপ করে মুহিত ভাইয়ার চোখ থেকে পানি পড়ছে। উনি আমার হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।

আমি নিজেকে কিছুটা সংযত করে মুহিত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললাম,,,,,,

—–“কেঁদো না মুহিত ভাইয়া। আমার হাতে তেমন জ্বালা করছে না। তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়। নিতে পারি না।”

মুহিত ভাইয়া কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকে মাথা ঠেকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আর কয়েকটা দিন কষ্ট করো রূপসা। এই বাড়ি ছেড়ে আমরা সারা জীবনের জন্য চলে যাবো। ওরা চাইলে ও আমাদের খুঁজে পাবে না।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“আর কয়েকটা দিন কষ্ট করো রূপসা। এই বাড়ি ছেড়ে আমরা সারা জীবনের জন্য চলে যাবো। ওরা চাইলে ও আমাদের খুঁজে পাবে না।”

আমি কিছুটা সিরিয়াস হয়ে মুহিত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,,,

—-“মুহিত ভাইয়া….আমি তোমাকে কিছু সত্যি জানাতে চাই।”

মুহিত ভাইয়া নাক টানতে টানতে বলল,,,,

—-“বলো রূপসা।”

আমি মুহিত ভাইয়ার মাথায় বিলি কাটছি আর বলছি,,,,,,

—-“তুমি জানো মুহিত ভাইয়া? ফুফুমনি আমার সম্পওি উনার নামে লিখে নিয়েছে?”

মুহিত ভাইয়া ফটাফট আমার বুক থেকে উঠে অশ্রসিক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“হোয়াট? এসব তুমি কি বলছ রূপসা? আম্মু তোমার সব সম্পওি নিজের নামে লিখে নিয়েছে?”

আমি শোয়া থেকে উঠে মুহিত ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,

—-“হুম মুহিত ভাইয়া। আমি যা বলছি সব সত্যি বলছি। এই সত্যিটা জানার পরই তিন বছর আগে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। রুচিতে বাঁধছিলো এই একই বাড়িতে প্রতারক মানুষ গুলোর সাথে দিন কাটাতে। তাই কিছুটা বাধ্য হয়ে আমি তোমাকে ছেড়ে, এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। সত্যিটা তোমার থেকে আর গোপন করতে পারছিলাম না। আজ বলেই দিলাম। এছাড়া ও ঐদিন….

মাথাটা নিচু করে আমি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে আবার বললাম,,,,,

—-“ঐদিন সাকিব ভাইয়া নিজ থেকে আমার সাথে অসভ্যতা করতে আসে নি। ফুফু মনি, দোলা আপু, সানায়া আপু আর সোহেলী আন্টি প্ল্যান করে সাকিব ভাইয়াকে ওভার ড্রিংকস করিয়ে আমার রুমে ঢুকিয়ে দেয়। ড্রাংক অবস্থায় সাকিব ভাইয়া আমার সাথে জবরদস্তি করতে চেয়েছিলো। আমি খুব কষ্টে সাকিব ভাইয়ার থেকে নিজেকে সরিয়ে….

আর কিছু বলতে পারছি না। গলাটা ধরে আসছে। মুহিত ভাইয়া আমাকে এক টান দিয়ে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে মুহিত ভাইয়া মলিন কন্ঠে বলল,,,,

—-“আর কিছু বলতে হবে না রূপসা। আমি যা বুঝার বুঝে গেছি। একদিন আমাদের ও সময় আসবে। ঐদিন আমরা ও ঘুড়ে দাঁড়াবো। আর ওরা পড়বে মুখ থুবড়ে। খুব শীঘ্রই আমরা ঐ দিনের মুখোমুখি হবো। তবে খানিক ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমি জানি আমার রূপসা পারবে। ধৈর্য্যের মতো মহৎ গুনটা আমার রূপসার মধ্যে ষোল আনাই আছে। সাকিবকে আমি উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে। নেক্সট টাইম এই ভুল গুলো করতে যথেষ্ট ভেবে চিন্তে করবে। আর রইল তোমার সম্পওি হাতানোর কথা? এটা অবাক হওয়ার বা অবিশ্বাসের কিছু না। আমি খুব ভালো করে জানি আমাদের বাড়ির প্রতিটা মানুষ ঠিক কেমন।”

মুহিত ভাইয়া কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,

—-“রূপসা…..আমি ভাবছি কালই আমরা দুজন এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। আমার অফিসের কাছে ছোট্ট এক্টা ফ্ল্যাট আছে দু রুমের। ভাড়া ও মোটামুটি। আশা করছি এতেই দুজনের হয়ে যাবে। ফ্ল্যাট ভাড়া আর খাওয়া দাওয়ার খরচের পর…. বাকি সামান্য কিছু টাকা আমরা সঞ্চয় করতে পারব। জাস্ট কয়েকটা মাস তোমাকে কষ্ট করতে হবে রূপসা। কারণ, কয়েক মাস পরেই আমি খুব ভালো এক্টা কোম্পানিতে জয়েন করব। মান্থলি এিশ হাজার তো হবেই। ওভার টাইম মিলিয়ে কমচে কম চল্লিশ হাজারে গিয়ে পৌঁছাবে। তিন চারটে মাস তোমাকে কষ্ট করতে হবে। এরপর থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি পারবে তো রূপসা? আমার এই অল্প বেতনে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে?”

আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,,,,,,

—-“আমরা এখন কোত্থাও যাচ্ছি না মুহিত ভাইয়া। তোমার নতুন চাকরীটা না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোত্থাও মুভ করব না। তাছাড়া…..তুমি তো এই বাড়ির ছেলে। আমি চাই না আমার জন্য তুমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাও। সবাই খুব কষ্ট পাবে। ফুফুমনি খুব কাঁদবে। হয়তো শত পার্সেন্ট দোষ আমাকেই দিবে। এই বাড়ির প্রতিটা লোক তোমার জন্য খুব কষ্ট পাবে। সবার রুহের হায় লেগে যাবে। আমরা কখনো সুখি হতে পারব না। তাই আমি ভাবছি……মারুর সাথে আমি আবার রাজশাহী ফিরে…..

আর কিছু বলতে পারলাম না এর আগেই মুহিত ভাইয়া আমাকে থামিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,,,,

—–“আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে কারো কিছু আসবে যাবে না। উল্টে ওরা খুশি হবে। তোমাকে এসব নিয়ে টেনশান করতে হবে না রূপসা। বাড়ির কেউ তোমাকে দোষ দিবে না। আর দিলে ও আমি শুনছি না। ওদের প্রতি আমার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর শোন…. রাজশাহী যাওয়ার কথা একদম উচ্চারণ করবে না। জাস্ট ফাইনাল এক্সামের সময় গিয়ে এক্সাম দিয়ে আসবে। বাড়িতে বসে সিলেবাস শেষ করবে। যা হেল্প করার আমি করব। সো রাজশাহী যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।”

—-“তবু ও মুহিত ভাইয়া। এতো রাতারাতি দুজনের এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াটা আমার ঠিক লাগছে না। সবাই সন্দেই করবে। হয়তো আমাদের যাওয়াটাই আটকে দিবে। আই থিংক আরো কয়েকটা মাস থেকে গেলে ভালো হয়। আস্তে, ধীরে আমাদের বিয়ের কথাটা ও সবাইকে জানাতে পারব। আশা করছি এতোদিনে তোমার নিউ জবটা ও হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে আমার প্রপোজালটাই ঠিক আছে।”

মুহিত ভাইয়া কিছু এক্টা ভেবে বলল,,,,

—-“একচুয়েলি….. আমি ও সায় পাচ্ছিলাম না রূপসা। এই বাড়িতে তুমি কিছুটা হলে ও সেইফ আছো। আমি নিশ্চিন্তে অফিসে কাজ করতে পারব। কিন্তু ফ্ল্যাট বাড়িতে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কখন কি থেকে কি হয়ে যায়। বলা যায় না। তাছাড়া ঐ এলাকার ছেলেরা ও তেমন সুবিধার না। দিন, দুপুরে চুরি, ডাকাতি, র‍্যাপ করা এসব লেগেই থাকে। না থাক, তোমার সিদ্ধান্তই না হয় মেনে নিলাম। কয়েকটা মাস তুমি এই বাড়িতেই থাকো। নতুন অফিসে শিফট হয়ে গেলে তখন না হয় এক্টা ভালো দেখে ফ্ল্যাট নিবো। আশা করছি ঐ এলাকাটা ও ভালো হবে।”

আমি মুচকি হেসে মুহিত ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে মুহিত ভাইয়ার বুকের বাঁ পাশটাতে এক্টা চুমো খেয়ে বললাম,,,,,,

—–“মুহিত ভাইয়া….. তুমি না খুব ভালো। ঠিক আমার মনের মতো। সবসময় আমাকে নিজের চেয়ে ও বেশি বুঝো। মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ্ আমাকে সব দিক দিয়ে সুখ না দিলে ও এক দিক দিয়ে সুখ ভরিয়ে দিয়েছে। এই সুখটা একান্তই আমার। কারো ভাগ নেই এতে। এমনকি সানায়া আপুর ও না। তুমি একদম তোমার ধারে কাছে ছানায়া আপুকে ঘেঁষতে দিবে না। যদি দেখি তুমি উনাকে তোমার কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছ তো…… আমি তোমাকে ঠিক খুন করে ফেলব।”

মুহিত ভাইয়া বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“তুমি যদি আমাকে স্বামীর অধিকার না দাও…. তাহলে তো আমাকে সানায়ার কাছে যেতেই হবে।”

আমি চোখ মুখ লাল করে মুহিত ভাইয়ার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে মুহিত ভাইয়ার গালে কামড় বসিয়ে বললাম,,,,,,

—-“কি বললে তুমি? তুমি সানায়া আপুর কাছে যাবে? ফের যদি এই কথা বলেছ তো আরেক গালে খুব জোরে এক কামড় বসিয়ে দিবো। তখন আর অফিসে ও যেতে পারবে না। কাজকর্ম লাটে উঠবে।”

মুহিত ভাইয়া আমাকে হেচকা টান দিয়ে উনার মুখোমুখি বসিয়ে আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“বাইটের দাগ নিয়ে অফিসে গেলে কিছু হবে না। কজ সবাই জানে আমি বিবাহিত। বউয়ের আদর ভেবে সবাই হেসে উড়িয়ে দিবে। আমার মন এখন অন্যকিছু চাইছে রূপসা। প্লিজ বারণ করো না আমায়।”

মুহিত ভাইয়ার আকুল আবেদন আমি ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। মুহিত ভাইয়া বুঝতে পেরেছে আমার সম্মতি আছে। ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে মুহিত ভাইয়া আমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। পরম আবেশে আমি মুহিত ভাইয়ার শার্ট চেপে ধরলাম। দুজনই হারিয়ে গেলাম এক অন্য জগতে। প্রায় দশ মিনিট পর দরজায় টোকা পড়ল। মারু দরজার বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“রূপসাসাসাসা….নিচে সবাই তোকে ডাকছে। ডিনার সার্ভ করে দিতে। কাজের মহিলা পেয়েছে তোকে। যে যেভাবে পারছে খাটাচ্ছে।”

মুহিত ভাইয়া আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে চোখ, মুখ লাল করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমার দিকে তাকিয়ে মুহিত ভাইয়া বেশ ভারী কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“তুমি এখানেই বসে থাকো। রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা ও করবে না। আমি এক্ষুনি আসছি।”

কথাগুলো বলেই মুহিত ভাইয়া উনার ভেজা ঠোঁট জোড়া মুছে রুমের দরজার সামনে দাঁড়াল। নিজেকে পরিপাটি করে মুহিত ভাইয়া রুমের দরজা খুলে দিলো। মারু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুহিত ভাইয়া মারুর দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,,

—-“মারু তুমি রূপসার সাথে রুমে বসো। আমি আমাদের খাবারটা উপরে নিয়ে আসছি।”

মারু দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,,

—-“থ্যাংক ইউ মুহিত ভাইয়া। আপনি খুব খুব খুব ভালো।”

মারু আর দেরি না করে মুহিত ভাইয়ার পাশ কাটিয়ে দৌঁড়ে আমার পাশে বসে পড়ল। মুহিত ভাইয়া শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে হনহনিয়ে নিচে চলে গেলো। মারু আমার পাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,

—-“জানিস রূপসা এক্টু আগে কি হয়েছে?”

—-“কি হয়েছে?”

—-“আমি না এক্টু আগে মৃন্ময়ের রুমে গিয়েছিলাম। মৃন্ময়ের বেডের উপর বসার সাথে সাথেই দেখি মৃন্ময় অফিস থেকে ফিরে রুমের দরজা ঠেলে রুমে ঢুকছে। আমি ওকে দেখে ভয়ে চুপসে ছোট খাটো এক্টা বিড়ালছানা হয়ে যাই। সে আমাকে দেখেই আমার কাছে তেড়ে এসে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,

—-“এই তুমি আমার রুমে কি করছ? কখন এসেছ আমার রুমে?”

কিছুটা থেমে আবারো ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,,,,

—-“আচ্ছা…. তোমার কি মিনিমাম সেন্স টুকু নেই যে, উইদাউট পারমিশন কারো রুমে ঢুকা যায় না!”

জানিস রূপসা আমি কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম? ভয়ের চোটে ডিরেক্টলি চোখ, মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিই। প্রায় এক মিনিট পর মৃন্ময়ের কোনো চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ না পেয়ে আমি যেই না এক চোখ খুলে তাকাই অমনি দেখি মৃন্ময় আমার দিকে কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আচমকাই সে হু হা করে হেসে বলল,,,,,,

—-“ভীতুর ডিম এক্টা। ভয়ে পুরো গলুমলু বাচ্চা হয়ে গেছে। ধ্যাত আমার রাগটাই দমিয়ে দিলো। যাও যাও নিজের রুমে যাও। আমি তোমাকে আর বকব না। তবে নেক্সট টাইম আমার রুমে পা রাখলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

আমি আর দেরি না করে দরজা ঠেলে যেই না রুম থেকে বের হতে যাবো অমনি পেছন থেকে মৃন্ময় আমাকে ডেকে বলল,,,,,,

—-“হেই ওয়েট ওয়েট ওয়েট। তোমার নামটা যেনো কি?”

—-“মামামারু।”

—-“শুধু মারু? সামনে পিছনে কিছু নেই?”

—–“মারুফা ইয়াসমিন মারু।”

—-“ওকে এবার যেতে পারো।”

ব্যাস দৌঁড়ে চলে এলাম তোর কাছে। জানিস রূপসা….. এই মৃন্ময়টা না খুব রাগী এক্টা লোক। সবসময় আমার সাথে কেমন খারাপ ব্যবহার করে। অন্তত গেস্ট হিসেবে তো আমার সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু না উনি করবে না। স্বভাবটাই যেনো রগচটা। থাকব না আমি আর এই বাড়িতে। কালই আমি রাজশাহী চলে যাবো।”

বেশ বুঝতে পেরেছি মারুর খুব মন খারাপ হয়েছে। আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে মারুর হাতে হাত রেখে বললাম,,,,,,

—-“ভালোবাসায় ধৈর্য্য রাখতে হয় বুঝলি? এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলে চলবে কি করে? মৃন্ময় ভাইয়া ও তোকে ভালোবাসবে তুই যতোটা বাসিস। তবে আস্তে ধীরে। ভালোবাসা কোনো বিষ না যে খেলেই সাথে সাথেই রিয়েকশান হবে। ধীর গতিতে ভালোবাসার প্রতিক্রিয়া শুরু হবে। সময় দিতে হবে ব্যাস এটুকুই।”

এর মাঝেই নিচ থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেলো। মুহিত ভাইয়ার গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আর বসে থাকতে পারলাম না। বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালাম। মুহিত ভাইয়া বারণ করে গেছে রুম থেকে বের হতে। তাই সাহসে কুলাচ্ছে না দরজার বাইরে পা রাখার। উঁকি চুকি দিয়ে ড্রইং রুমে তাকিয়ে দেখলাম মুহিত ভাইয়া ফুফুমনি আর দোলা আপুর সাথে খুব চেঁচিয়ে কথা বলছে। ওরা দুজনই মাথা নিচু করে রেখেছে। সোহেলী আন্টি, রেজাউল আংকেল আর সাকিব ভাইয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। নূর ভাইয়া ফুফুমনিকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,,

—–“আম্মু তুমি কাল থেকেই নতুন বুয়াকে কাজে রাখবে। রূপসা কাল থেকে কোনো কাজ করবে না। দরকার হলে বুয়ার বেতনের টাকা আমি নিজের গাইড থেকে দিবো। এরপরে ও যেনো রূপসার খাটাখাটনি করতে না হয়। আমি রূপসাকে কাজের বুয়া হিসেবে এই বাড়িতে আনি নি। রূপসাকে আমি ভালোবাসি। তাই আমি ওকে এই বাড়িতে এনেছি। আজ এই মুহূর্ত থেকে রূপসা বাড়ির কোনো কাজেই হাত লাগাবে না। তোমরা নিজেদের খাবার নিজেরাই সার্ভ করে খাও। আমি আমাদের খাবার গুলো উপরে নিয়ে যাচ্ছি।”

কথাগুলো বলেই মুহিত ভাইয়া কিচেনে ঢুকে প্রায় পনেরো মিনিট পর হাতে দুটো প্লেইট নিয়ে কিচেন রুম থেকে বের হয়ে ফুফুমনি আর দোলা আপুকে ক্রস করে সোজা সিঁড়ি বেয়ে গেস্ট রুমের দিকে এগুতে লাগল। ড্রইং রুমের উপস্থিত সবাই রাগী দৃষ্টিতে মুহিত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কাছে পেলেই মুহিত ভাইয়াকে ওরা কাঁচা চিবিয়ে খাবে।

আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে ঢুকে আবারো গোল হয়ে খাটের উপর বসে পড়লাম। মারু ফোনে স্ক্রলিং করছে। এর মাঝেই মুহিত ভাইয়া এসে রুমে ঢুকে রুমের দরজা আটকে দিলো। হাসি মুখে মুহিত ভাইয়া মারুর দিকে এক প্লেইট খাবার এগিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,

—-“টেইক ইট মারু। ইট’স ইউর।”

মারু মুদ্যু হেসে ফোনটা বিছানার উপর রেখে হাত বাড়িয়ে খাবারের প্লেইটটা নিয়ে নিলো। মুহিত ভাইয়া এবার অন্য খাবারের প্লেইটটা নিয়ে আমার মুখোমুখি বসল। মারু দৌঁড়ে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে বিছানার উপর বসে খাবারের প্লেইটটা হাতে নিয়ে মনযোগ দিয়ে খাবার খেতে লাগল। মুহিত ভাইয়া আমাকে লোকমা ধরে খাইয়ে দিচ্ছে আর বলছে,,,,,,

—-“রূপসা….. কাল থেকে তুমি বাড়ির কোনো কাজ করবে না। আমি নিচে বলে এসেছি। এরপরে ও যদি কেউ তোমাকে কাজ করার জন্য কিছু বলে জাস্ট আমাকে বলবে। বাকিটা আমি বুঝে নেবো।”

আমি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ জানালাম। মাঝখান থেকে মারু বাম হাত ঢুকিয়ে মুহিত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“ভাইয়া আপনি কোনো চিন্তাই করবেন না। রূপসা কিছু না বললে ও আমি আপনাকে সব বলব।”

মুহিত ভাইয়া বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“এই জন্যই তো আমি শালীকা সাহেবাকে ভাবী বানাতে চাইছি। মৃন্ময় ভাইয়া বুঝলেই হলো।”

মারু লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসল। আমি মুখে ভাত পুড়ে মারুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মুহিত ভাইয়া কেবল আমাকেই খাওয়াচ্ছে নিজে এক্টু ও খাচ্ছে না। তাই কায়দা করে মুহিত ভাইয়ার হাতে থাকা লোকমাটা ঘুড়িয়ে মুহিত ভাইয়ার মুখেই পুড়ে দিলাম। মুহিত ভাইয়া বেকুব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি হেসে মুহিত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,

—-“খেয়ে নাও মুহিত ভাইয়া। তুমি ও তো কিছু খাও নি। এক প্লেইট খাবারে আমাদের দুজনের হয়ে যাবে।”

মুহিত ভাইয়া মুচকি হেসে লোকমাটা খেয়ে নিলো। প্রায় দশ মিনিট পর আমাদের খাওয়া শেষ হলো। মুহিত ভাইয়া আমাকে পানি খাইয়ে দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো। মারু আর আমার খাবার প্লেইটটা হাতে নিয়ে মুহিত ভাইয়া রুম থেকে বের হচ্ছে আর আমার দিকে তাকিয়ে বলছে,,,,,,

—-“রূপসা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। ঘন্টা খানিক পরে এসে আমি তোমাকে আমার রুমে নিয়ে যাবো। আশা করছি বাড়ির সবাই এক্টু পরেই ঘুমিয়ে পড়বে।”

আমি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালাম। মুহিত ভাইয়া রুম থেকে বের হয়ে বাইরে থেকে দরজায় খিল লাগিয়ে গেলো। আমি আর মারু কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। মারু আমার পাশে ফিরে বেশ আগ্রহ নিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“আচ্ছা রূপসা….. মৃন্ময় কোন কালারটা খুব পছন্দ করে?

—-“ডার্ক ব্লু। কাল নিশ্চয়ই ডার্ক ব্লু কালারের চুড়িদার পড়বি?”

—-“পড়বই তো। ঐ বেটাকে আমি খুব জলদি ইমপ্রেস করেই ছাড়ব। দেখবি…. দুইদিন পর আপনা আপনি আমার পিছনে ঘুরঘুর ঘুরঘুর করবে।”

—-“হয়েছে হয়েছে। এখন ঘুমা। অনেক রাত হয়েছে।”

মারু অন্য পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি ও ঘুমানোর চেষ্টা করছি। তবে ঘুম আসছে না। অপেক্ষা করছি মুহিত ভাইয়া কখন আসবে। অপেক্ষা জিনিসটা বড্ড খারাপ। মনমানসিকতাকে বিগড়ে দিয়ে দম আটকানো পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধ করে নেয়।

আনুমানিক এক ঘন্টা পর দরজার খিল খুলে মুহিত ভাইয়া আমাদের রুমে ঢুকল। আমি মুচকি হেসে মুহিত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। মুহিত ভাইয়া আমাকে আধ কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা উনার রুমে চলে এলো। আমাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে মুহিত ভাইয়া দরজার খিল লাগিয়ে ডেস্কের উপর থেকে এক্টা ক্যাটবেরী নিয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়ল। চকলেটের প্যাকেট টা খুলে মুহিত ভাইয়া আমার মুখে পুরো চকলেট টা গুজে দিলো। আমি খুব তৃপ্তি নিয়ে চকলেট টা খেয়ে যাচ্ছি। অন্যদিকে আমার পুরো থুতনীতে চকলেট দিয়ে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। মুহিত ভাইয়া ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চকলেট প্রায় শেষের দিকে আর সামান্য এক্টু বাকি আছে। মুহিত ভাইয়া বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“রূপ…..আমি ও খেতে চাই।”

আমি ছোট্ট বাচ্চাদের মতো পিটপিট চোখে বললাম,,,,,,,
,
—–“শেষ তো মুহিত ভাইয়া। আর ইট্টু বাকি আছে।”

—-“ইট্টুতেই আমার হবে।”

বাঁকা হেসে মুহিত ভাইয়া আমার থুতনী আর ঠোঁটে লেগে থাকা চকলেট গুলো চুমোর মাধ্যমে খেতে লাগল। আমার পুরো শরীর বার বার শিহরন দিয়ে উঠছে। চোখ বন্ধ করে বিছানার চাঁদর খাঁমচে ধরেছি আমি। হাতে থাকা বাকি চকলেটটা মুহিত ভাইয়া আমার মুখে পুড়ে দিয়ে আমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। আমি মুহিত ভাইয়ার শার্ট আঁকড়ে ধরেছি। চকলেট খাওয়া জাস্ট এক্টা বাহানা ছিলো। আসল উদ্দেশ্যটা তো আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। প্রায় দশ মিনিট পর মুহিত ভাইয়া আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে আমার বুকে শুয়ে পড়ল। আমি ও মুহিত ভাইয়াকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। দুজনই এক্টা শান্তির ঘুমের সন্ধানে আছি।

পরের দিন,,,,,,

#চলবে,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here