#এক_কুয়াশার_সকাল
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#৩য়_পর্ব
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তিথীকে বললাম,
তোর ভাইয়ার গায়ে দেয়া টিশার্ট টা আমার ব্যাগের ভেতর সেদিন কিভাবে আসলো?আর এদিকে আমার সারা শরীর কাঁপছে।আমার মনে হচ্ছে আমি বোধয় এখনই সেন্সলেস হয়ে যাবো।
তিথী আমাকে ইশারা দিয়ে চুপ করতে বল্লো,
আমি তবুও ওকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম,
বল তোর ভাইয়ার টিশার্ট আমার ব্যাগে কিভাবে আসলো?
তাও আবার রক্তে ভেজা টিশার্ট।
তিথী আমাকে আবার ইশারা দিলো।আমি এবার চুপ হলাম।
আর মনস্থির করলাম পড়াটা শেষ হলেই ওকে আবার জিজ্ঞেস করবো।
তিথী এবার সবার চোখ ফাঁকি দিতে আর কথা কাটানোর জন্য আমাকে চোখ টিপে বল্লো,আরে এক রকমের টিশার্ট থাকতে পারেনা?
দুনিয়ায় তো একই রকম টিশার্ট হাজার টা আছে।
তুই অযথাই ভুলভাল বকছিস।
এই যে স্যার এসে গেছে।এবার সবাই চুপচাপ বস।
আমি জানি তিথী মিথ্যে বাহানা দিচ্ছে।
আর আমি এও জানি,যে টিশার্ট টা আমার ব্যাগে ছিলো,ওটা আর কারোনা ওটা ওর ভাইয়েরই টিশার্ট।
আর এই ছেলেটা একদিন আমাকে ডেকে বলেছিলো,আমার সাথে একদিন চা পান করা যাবে?
আমি না বলে চলে গিয়েছিলাম।
এই টুকুর জন্য তিথীর ভাই আমার সাথে এমন করবে?
এমন হয়রানি করবে আমাকে?
পড়া শেষে আমার তিথীর সাথে কথা বলতে হবে।
পড়া শেষ হতে না হতেই তিথীকে ডেকে আমি বাইরে নিয়ে গেলাম।
আমি কিছু বলার আগেই তিথী আমাকে বল্লো,হ্যাঁ ওটা আমার ভাইয়েরই টিশার্ট।
আমি তোকে সব খুলে বলছি।
আমরা যখন ক্লাস এইটে পড়ি।
ভাইয়া একদিন আমাকে ডেকে বল্লো,
আচ্ছা শোন তিথী,
তোর সাথেই পড়ে ক্লাস এইটে, একটা মেয়ে আছে,
মেয়েটার বাসা স্কুলের দক্ষিণ দিকে।
মেয়েটার নাম নিধি।
ফর্সা মত মেয়েটা,প্রায় সময় মেয়েটা স্কুলে আসে মেকাপ করে গাল লাল করে।
লিপ্সটিক দেয়না,চোখ সাজায় না।
গাল দুটো মেকাপ দিয়ে লাল করে আসে।
চিনিস মেয়েটাকে?
তুই জানিস নিধি আমি সেদিন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম ভাইয়ার কথা শুনে।
আমি ভাইয়াকে বললাম,হ্যাঁ ভাইয়া।
চিনি আমি নিধিকে।
ও আমার খুব কাছের বান্ধবী।
আর হাসতে হাসতে বললাম,ও মেকাপ করে আসেনা।
একটু রোদে গেলেই,কিংবা একটু হেঁটে আসলেই ওর গাল দুটোতে হালকা গোলাপি আভা এসে যায়।
একদিন তো স্কুলের স্যারও ওকে দাঁড় করিয়ে বলেছিলো,নিধি তুমি প্রতিদিন মেকাপ করে আসো কেন?
কাল থেকে আর মেকাপ করে আসবেনা।
কলেজে যখন যাবে,তখন মেকাপ করে যেও।
কেউ কিছু বলবেনা।
নিধি ধীরেধীরে উত্তর দিলো,
স্যার আমিতো মেকাপ করিনা।
স্যার এবার ধমক দিয়ে বললেন,আবার মিথ্যা কথা।
মেকাপ না করলে গাল কি এমনিতেই লাল হয়ে থাকে?
বোকা পেয়েছো আমাদের?
নিধি উত্তর দিলো জ্বী স্যার।
তখন স্যার রেগেমেগে বললেন,
এখন যদি তোমার মুখ ধোয়ার পর দেখি লাল রঙ আর নেই।
তাহলে এই মুহূর্তে আমি তোমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিবো।
তুমি রাজি আছো?
নিধি আস্তে করে উত্তর দিলো,জ্বী স্যার।
এবার ক্লাসের সবাই আমরা অবাক হলাম।
কারণ নিশ্চিত এই মেয়ে মেকাপ করে গাল লাল করে আসে আমাদের ধারণা।
ভাইয়া তখন বল্লো,
তারপর?
তারপর কি হলো?
আমি বললাম,নিধি তারপর আমার কাছ থেকে পানির বোতল নিয়ে বাইরে গিয়ে মুখ ধুলো স্যারের সামনে।
কিন্তু এ কি দেখছি,
ওর গাল যেমন ছিলো তেমনই আছে।
পরে ও বল্লো,
স্যার আমি আমার আম্মুর মত হয়েছি,
একটু রোদে,তাপে,গরমে কিংবা ক্লান্ত হয়ে গেলে আমার আম্মুর মত আমারো গাল লাল হয়ে যায়।
আগে আম্মুকে সবাই বলতো,মেকাপ করে থাকো নাকি সব সময়?
এখন অনেকে আমাকেও বলে।
এই কথা শুনে স্যার হেসে নিজে সরি বলে নিধিকে সিটে গিয়ে বসতে বলেন।
আর বলেন,ভালোই হয়েছে তোমার আর টাকা খরচ করে মেকাপ কিনতে হবেনা।
ভাইয়া আমার কথা শুনে হা হা করে হাসতে থাকে আর বলে,এত দিন আমিও ভাবতাম,এই মেয়ে প্রতিদিন স্কুলে মেকাপ করে যায়।
ভাইয়ার কথা শুনে আমার হাসি আরো বেড়ে গেলো।
তারপর ভাইয়া আমাকে চুপ করিয়ে আমার হাসি থামিয়ে বল্লো,
নিধিকে ভাবী বলে ডাকতে পারবি আর কয়েক বছর পর?
আমার ওকে ভালো লাগে।
আমি উত্তর দিলাম,পারবোনা কেন,১০০ বার পারবো।আমারো ওকে খুব ভালো লাগে।খুব মিশুক।সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে।
ভাইয়া আমাকে বলে এখন থেকে তাহলে তোর হবু ভাবীর খেয়াল রাখবি।
সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম,ভাইয়া তোকে পছন্দ করে।
আর আমি সেদিন থেকে তোকে চোখে চোখে রাখি।
কিন্তু কখনো বুঝতে দেইনা তোকে,আমি যে দুর্জয় ভাইয়ার বোন।
_আচ্ছা বুঝলাম,এখন বল টিশার্ট টা..
_আরে বলতে তো দে,
তারপর কেটে গেলো অনেক গুলো দিন,
আমরা উপরের ক্লাসে উঠলাম।
ভাইয়া তোকে তার মনের কথা জানায়নি কারণ সে ভেবেছিলো তুই আরেকটু বড় হলে ভাইয়া তোকে জানাবে তার মনের অনুভূতি।
কিন্তু ভাইয়া তোকে প্রতিদিন দূর থেকে দেখতো।
আমি বাসায় এলে ভাইয়া আমাকে সব বলতো আর আমার কাছ থেকে তোর খবর নিতো।
_ক্লাস টেনে উঠার পর তোর ভাইয়া আমার সামনাসামনি ঘুরঘুর শুরু করে।
আগে দেখিনি।
এখন দেখি মাঝেমধ্যেই।
কিছু দিন আগে তো আমাকে ডিরেক্ট বলেছে,তার সাথে চা খেতে যাবো নাকি।
আর আমি না করায় আমার সাথে কি রকম শুরু করেছে।
_কি রকম শুরু করেছে মানে?
_এই যে রক্তে ভেজা টিশার্ট,আরো কত কি।
__আর কিছুনারে,শুধু রক্তে ভেজা টিশার্ট ই।
কিছু দিন আগে ভাইয়া এক্সিডেন্ট করে।
আর রক্তে তার টিশার্ট যেন ভিজে যায়,এমন অবস্থা।
ভাইয়া তোকে দেখতে যাচ্ছিলো।
আর তখনই এক্সিডেন্ট হয়।
ভাইয়া দেখে তুই তোর ব্যাগ টা দোকানের বেঞ্চে রেখে একটু দূরে গিয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিস বান্ধবীদের নিয়ে।
আর তখনই ভাইয়া টিশার্ট টা তোর ব্যাগে রেখে দেয়।
আর তুই যেখানে ছিলি ওখানেই তো মেডিকেল।তাই ওই ভাবেই চলে যায়।
ব্যান্ডেজ করে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে এই ভেবে।
আর সব চেয়ে বড় কথা, তোর যেন রক্ত ভেজা টিশার্ট টা দেখে মায়া লাগে ভাইয়ার জন্য,তাই আরো রেখে যায় তোর ব্যাগে।
ভেবেছে,আমাকে বলবে তোর ব্যাগ থেকে টিশার্ট টা নিতে আর তখনই তোকে বলতে ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে।
কিন্তু তার আগেই তো তুই ক্লাসে হাঙ্গামা শুরু করে দিলি।
_এইটুকুই আমার ভাইয়ের কাহিনী।এ ছাড়া আর বাড়তি কিছুই নেই।
এটাকে আর কোন ভাবে না ছড়ালে খুশি হবো।
তিথীর কথা গুলো সত্যি মনে হচ্ছে।
এত বড় মিথ্যে কাহিনী ও বলবেনা।
কিন্তু এর পরের ঘটনা গুলো তাহলে কে ঘটালো?
কে এমন ভাবে আমাদের ঘুম হারাম করছে।
আমি ভাবতে লাগলাম এসব।
এরপর কয়েক দিন কেটে যায়।
আমরা সবাই শান্তিতে ঘুমাই এ কয় দিন।
ভেবেছি আর করবেনা এমন জ্বালাতন ওই ছেলে।
কিন্তু হঠাৎ আবার একদিন রাতে টিনের মধ্যে বারির আওয়াজ।
এবার আম্মু আবার কে রে কে রে বলা শুরু করলো।
এবার আমি আম্মুকে ফিসফিস করে বলি,
তুমি এখানে এই ছেলের সাথে কথা বলতে থাকো।
আমি শুধু ওই রুমের জানালা টা একটু খুলেই টর্চ লাইটের আলো দিয়ে দেখবো কে ওই ছেলে।
যদি কোন সমস্যা করে ওই ছেলে,তুমি চিৎকার দিও।
আমিও চিৎকার দিবো,তাহলেই সবাই চলে আসবে।
কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।
প্রতিদিন এমন প্যারা সহ্য করার চেয়ে একবারে সব শেষ হোক।
আম্মু আমাকে না করা সত্ত্বেও আমি ঠিকই অন্য রুমের জানালা খুলে টর্চ লাইটের আলো জ্বালাই ওই ছেলের দিকে।
কিন্তু আলোটা যার মুখের উপর গিয়ে পড়ে,সে আর কেউনা সে আম্মুর ফেভারিট আবির ভাইয়া।
আমি জোরে চিল্লায় বলি,আবির ভাইয়া আপনি?
আর আবির ভাইয়া চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বলে,
নিধি বিশ্বাস কর আমি না।
এই দেখ,আমাকে বাড়ি দিয়ে ফেলে চলে গেলো ও…
চলবে..