এক কুয়াশার সকাল পর্ব -০৪

#এক_কুয়াশার_সকাল
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#৪র্থ_পর্ব
আর আবির ভাইয়া চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বলে,
নিধি বিশ্বাস কর আমি না।
এই দেখ,আমাকে বারি দিয়ে ফেলে চলে গেলো ও…

আম্মু আবির ভাইয়ার নামটা শুনে আর ভাইয়ার কথা শুনে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো।

কারণ আম্মু আবির ভাইয়াকে অনেক স্নেহ করে।

আম্মু এবার আবির ভাইয়ার গায়ে হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,কোথাও লাগেনিতো তোর?

আমি আম্মুকে ডেকে বললাম,কেন এমন আহ্লাদ দেখাচ্ছো?

চলে এসো।

_বিশ্বাস করেন কাকী আমি প্রতিদিন আপনাদের বাসায় পাহারা দেই।
দেখার জন্য যে, কে এমন করে।

আজ হাতে নাতে ধরে ফেলতাম,কিন্তু ও আমাকে বারি দিয়ে ফেলে দেয়।
আর আমি অন্ধকারের কারণে ওর মুখ টা দেখতে পাইনি।

আমি তোকে বিশ্বাস করি।
ওঠ এখন।
যা বাসায় যা।
কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।

আমাদের বাসা টা অনেকটা ছাড়া বাড়ীর মত।
একটু দূরে দূরে একেক টা বাসা।আবির ভাইয়াদের বাসাটা বেশি কাছে।
একটু দূরে বলে আর সবাই ঘুমাচ্ছে বলে কেউ শুনতে পায়নি আমাদের কথা গুলো হয়তো।

আবির ভাইয়া চলে যায় আর আম্মুও রুমে চলে আসে।

আম্মু আমাকে বোঝায়,

_দেখ,আবিরকে ভুল বুঝিস না।
ও দেখবি সত্যিই সব সত্যি কথা বলছে।
আমি ওকে ওর ছোট বেলা থেকে চিনি।
ও এমন ছেলে না।

_আম্মু,
যা হবার হয়েছে।
এখন শুবে চলো।ভালো লাগছেনা আমার।

আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ি।
আর ভাবতে থাকি,আসলেই কি আবির ভাইয়া সত্যি বলছে?
আমিও তো আবির ভাইয়াকে ছোট বেলা থেকে চিনি।
আবির ভাইয়া এমন জঘন্য কাজ করার মত ছেলেই না।
নাহ সে হবেনা।
আমি অযথাই ভুলভাল ভাবছি।

সকাল হলো,

আমি প্রতিদিনের মত পড়তে যাচ্ছি।
স্যার শুক্র বার বাদে প্রতি দিন পড়ান।
পড়ে আবার ওখান থেকে আজ স্কুলে যাবো।
বাসা থেকে স্কুল ড্রেস পরে একবারে বের হয়েছি।

রাস্তা দিয়ে মাথা নিচু করে রাস্তা দেখতে দেখতে যাচ্ছি।

_তুমি কি জানো,দুই বেণিতে যে তোমাকে দারুণ লাগে?

কথা টা শুনেই পেছন ফিরে তাকালাম।

তাকাতেই দেখি,কল্লোল নামের ছেলেটা,যে মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে আসে আমার সামনে।

_আপনি কি জানেন,এই ভাবে মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলে আপনাকে গু*ন্ডাদের মত লাগে?গরু চোরের মত লাগে?

কল্লোল এবার হা হা করে হাসছে।

_আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে তাইতো?

_আপনাকে কেন দেখতে ইচ্ছে করবে?
আপনি কেন এভাবে আমার পিছু নিচ্ছেন বলুন তো?

কে আপনি?
আর কি চান আমার কাছে?

_কিছু চাইনা।তোমাকে আমার ভালো লাগে।
তোমাকে দেখলে দিন ভালো যায় আমার।
তাই তোমাকে দেখতে আসি।

নিজের ভালো কে না চায় বলো?

_আচ্ছা,সত্যি করে বলুন তো,
আপনিই সেই ছেলে তাইনা?
যে আমাদের এমন ভাবে পেরেশান করছেন?

সত্যি করে বলুন।

_বুঝলাম না।
কে পেরেশান করছে?কোন সমস্যা হয়েছে?
বলোতো শুনি।

_কিছুনা,আপনি যান এখান থেকে।

আর তখনই একটা পরিচিত কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পাই আমি।

নিধি, কি হয়েছে?
এই ছেলে কি বিরক্ত করছে তোমাকে?

তাকিয়ে দেখি আমীর আংকেল।
আমীর আংকেল আমার প্রাইভেট টিচারের ভাই।
উনার ভাইয়ের কাছে আমি ক্লাস ফাইভ থেকে এইট পর্যন্ত পড়েছি।
স্যার আমাকে বাসায় এসে পড়াতেন।

স্যার অনেক ভালো মানুষ।
আমাকে অনেক স্নেহ করতেন।
এখনো দেখা হলে ডেকে কথা বলেন।

আমাদের এলাকায় স্যারের মত সুন্দর আর একটা ছেলেও ছিলোনা তখন।

এমন কোন মেয়ে ছিলোনা আমাদের এলাকায় যে তাকে পছন্দ না করতেন।

স্যার পড়াতে এসে একেক সময় আমাকে একেকটা ঘটনা বলে হাসতেন।

স্যার আমার সাথে স্যার কম বন্ধু বেশি ছিলেন।

আর আমাদের বয়সের ডিফারেন্স ছিলো দশ বছরের মত।

আমি যখন ক্লাস এইটে উঠি।
তখন আমার কয়েক টা বান্ধবী আমাকে বলেছিলোও।
ঝুলে পড় স্যারের গলায়।

যেমন শিক্ষিত।
তেমন সুন্দর।
এমন ছেলে আজকাল পাওয়া যায়না।

আমি ওদের ধমক দিয়ে বলতাম,
স্যার আমার কাকা হয়।
আর তাছাড়া দশ বছরের বড় উনি আমার।

আর স্যার দের উপর আবার ভালবাসা কিভাবে আসে?
স্যার রা গুরুজন।
এদের সম্মান দিতে শিখ।

ওরা আমাকে বুঝাতো,১০ বছর বেশি একটা বয়স হলো?

দশ বছর কোন ব্যাপার না।
দেখিস না স্যারকে দেখলে মনেই হয়না সে যে আমাদের দশ বছরের বড়।

আমি ওদের কথায় বিরক্ত হতাম।
কারণ স্যারকে আমি ওই নজরে কখনো দেখিনি।

স্যারের জন্য আমার মায়া হয় এখনো।
সম্মান করি শ্রদ্ধা করি।
ভালোও বাসি,তবে স্যার হিসেবে।
তার জন্য মনের ভেতর অনন্তকাল আমার অটুট এক সম্মান
থাকবে।

স্যার চাকুরির সুবাদে অন্যত্র চলে যান বলে ক্লাস নাইন থেকে আমার স্কুলের টিচার দের কাছে গিয়ে পড়তে হয়।

স্যার চলে যাবার আগে আমাকে আর আম্মুকে বলে যান,
পড়ার বিষয়ে কোন রকম সমস্যা হলে বা কোন রকম কোন কিছু দরকার হলে আমি আর আম্মু যেন তার ভাইয়ের কাছে চলে যাই।
তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিবেন।
আর কিছু দরকার হলে এনে দিবেন।
স্যার তার ভাইকে বলে যাবেন।

স্যার যাবার আগে তার ভাইকে বলে যান।
তার ভাইকে দিয়ে আম্মু মাঝে সাঝে ওষুধপাতি লাগলে আনান।

তবে আমি কখনো পড়ার জন্য তার কাছে যাইনি।
কারণ স্যার যাবার পর পরই আমি স্কুলের স্যারের কাছে পড়া শুরু করে দেই।

আমীর আংকেল আবার চেঁচিয়ে বললেন,
নিধি এই ছেলে কি বল্লো তোমাকে?
ও কি তোমার সাথে কোন ঝামেলা করছে?

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম,
না।

তাহলে কি বল্লো তোমাকে?

আমি বললাম,এমনিতেই।কিছু বলেনি।

আমীর আংকেল এবার কল্লোলের শার্টের কলার ধরে বলেন,

আর কোন দিন তোকে যদি নিধির আশেপাশে দেখি,তাহলে সেদিনই হবে তোর জীবনের শেষ দিন।
কথাটা মনে রাখিস যা।

আমি কল্লোলকে বললাম চলে যান প্লিজ।

আমি অবাক হয়ে গেলাম আমীর আংকেলের ব্যবহার দেখে।
উনি কেন ছেলেটার সাথে এমন করলো।
এত রেগেই বা গেলেন কেন?

কল্লোল চলে গেলো।

কল্লোল চলে যাবার পর আমীর আংকেল আমাকে বলেন,

আজ এবং এই মুহূর্ত থেকে ঘোমটা দিয়ে যাবা যেখানেই যাবা।
কোন পোলা যেন তোমাকে দেখতে না পায়।

আমি আচ্ছা বলে মাথা নিচু করে হাঁটা শুরু করলাম।

চার কদম যেতেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
আর ভাবতে লাগলাম,
এই একই কথা আমি কোথায় যেন শুনেছি…
কে যেন বলেছিলো,
আমার স্পষ্ট মনে আছে,এই একই কথা আমি এর আগেও একবার শুনেছি।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here