এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -২৩

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_২৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

“আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করছি প্রিয়া! তুমি শুধু অনিককে একবার চট্টগ্রাম নিয়ে এসো। তার ফোন থেকে ভিডিওটা ডিলিট করো। অনিককে ফাঁসিয়ে আমরা অতি শীঘ্রই আমাদের সুখের সংসার বাঁধব প্রিয়া!”

না চাইতেও যেন আকাশের চাঁদটা হাতের মুঠোয় পেয়ে গেল প্রিয়া। চোখজুড়ে তার স্বপ্নঝড়া আনন্দ অশ্রু! শরীরের সমস্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে সে রাফায়াতকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। প্রশান্তিতে চক্ষুজোড়া বুজল। অতি আবেগঘন হয়ে ভরাট গলায় বলল,,

“এই দিনটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না রাফায়াত। সবকিছু যেন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে আমার। দেরীতে হলেও আমি এখন বুঝতে পারছি জানো? তুমিই ছিলে আমার লাইফের সবচেয়ে বড়ো পাওনা!”

প্রিয়া অতিরিক্ত পর্যায়ের আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠল! রাফায়াত ঝট করে প্রিয়াকে তার বুকের পাঁজর থেকে সরিয়ে নিলো। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত আশা জাগালেই আবার কারো মন ভাঙার হায় লেগে যাবে রাফায়াতের উপর! তাই সবদিক বিচার বিবেচনা করে রাফায়াত তার শার্টের কলারটা ঝেড়ে প্রিয়ার পাশ থেকে ওঠে দাঁড়ালো। মাথা চুলকে হাওয়াই মিঠাইটা প্রিয়ার মুখের সামনে ধরল। জোরপূর্বক হেসে বলল,,

“টেইক ইট।”

রাফায়াতের এহেন অদ্ভুত কার্যকলাপ দেখে অতিমাত্রায় অবাক হলো প্রিয়া। হঠকারী দৃষ্টিতে সে রাফায়াতের অস্থির দৃষ্টিতে তাকালো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী হলো রাফায়াত? তুমি হঠাৎ আমার পাশ থেকে ওঠে গেলে কেন?”

“আরেহ্। রাত কয়টা বেজে গেছে দেখেছ? বাড়ি ফিরবে না? এখান থেকে আমার আবার অন্য একটা কাজে যেতে হবে। সিনিয়র ভাই-ব্রাদাররা কল করছে। তাছাড়া তুমি তো জানোই আমি কতটা ব্যস্ত মানুষ।”

গোমড়া মুখে প্রিয়া হাওয়াই মিঠাইটা তার হাতে তুলে নিলো। রাগ দেখিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। মাথা নুইয়ে বিষণ্ন গলায় বলল,,

“তোমার শুধু কাজ আর কাজ। আমাকে নিয়ে একটু বের হয়েছ এখানেও কাজ।”

ক্ষোভ ঝেড়ে রাফায়াতের দিকে বিমূর্ষ দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়া। অতি আবেগী হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“বিয়ের পর আমরা বাচ্চা কাচ্চা প্ল্যানিং করার সময়টা পাব তো রাফায়াত? নাকি তখনও এরকম কাজ কাজ করবে?”

বিষম খেলো রাফায়াত! প্রিয়ার অদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা দেখে সে অবাক না হয়ে পারলনা! একটু ঢিল দিলেই মানুষ যে মাথায় ওঠে নাচতে শুরু করে তার জ্বলন্ত প্রমাণ যেন আরও একবার পেল সে। জীবনে অনেকবার রাফায়াত এসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। নরম হলেই মানুষ চেপে ধরতে আসে। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্র ব্যতিরেকে বাকী সমস্ত ক্ষেত্রে শক্ত হওয়াটা অতিব জরুরী! গলা খাঁকারি দিয়ে উঠল রাফায়াত। প্রসঙ্গ পাল্টাতে উদ্দত হলো। স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,,

“হারি আপ। আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে।”

রাফায়াতের বাইকের পেছনে বসে পড়ল প্রিয়া। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রিয়াকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রাফায়াত চঞ্চলকে পিক করতে তার বাড়ির সামনে চলে গেল। চঞ্চলসহ দুজন মিলে তাদের পাশের পাড়ার হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। দ্রুত গতিতে বাইক চালাচ্ছে রাফায়াত। হুট করেই চঞ্চএ এই সময়ে উত্তেজিত গলায় রাফায়াতের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী রে? ভিডিওটা ডিলিট করার ব্যবস্থা করলি?”

যদিও রাস্তায় চলন্ত গাড়ি ঘোড়ার শব্দে রাফায়াত চঞ্চলের কথা পুরোপুরি শুনেতে পায়নি। তবুও সে আন্দাজ করে মৃদু আওয়াজে বলল,,

“কাল সকালে অনিক চট্টগ্রাম আসছে!”

“মানে?”

“প্রিয়া আমাদের হেল্প করবে অনিকের ফোন থেকে ভিডিওটা ডিলিট করতে।”

“হাউ ইট’স পসিবল ম্যান? প্রিয়া এত সহজে আমাদের হেল্প করতে রাজি হয়ে গেল?”

“এমনি এমনি তো আর রাজি হয়নি। অভিনয় করতে হয়েছে অনেক। আচ্ছা ছাড় এখন এসব কথা। তোর মনে আছে? একবার অনিক তার ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড আমাদের বলেছিল? কাইন্ডলি একটু মনে করে বলতে পারবি পাসওয়ার্ডটা কী ছিল?”

“তুই আবার ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড দিয়ে কী করবি?”

“অনিক নিশ্চয়ই কোনো কাঁচা কাজ করবেনা। ভিডিওটা সে ল্যাপটপেও সেভ করে রাখতে পারে! তাই রিস্ক নিতে চাইছিনা।”

“অনিক নিশ্চয়ই এখন ল্যাপটপ নিয়ে চট্টগ্রাম আসবেনা। তো ভিডিওটা ডিলিট করবি কীভাবে শুনি?”

“অনিক চট্টগ্রাম থাকতে থাকতেই আমরা ঢাকা পৌঁছে যাব! তাছাড়া অয়ন্তীর বাবা-মায়ের সাথেও আমার সরাসরি কথা বলাটা ভীষণ দরকার! উনারাও হয়ত অয়ন্তীর জন্য ভেঙে পড়েছেন। খামোখা তাদের দুঃশ্চিন্তায় রেখে লাভ নেই। তাছাড়া অয়ন্তীও সারাক্ষণ তার বাবা-মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে। চোখের সামনে এসব দেখতে ভালো লাগেনা আমার। তাই ব্যাপারটা এবার আমার একটু দেখা দরকার।”

“খারাপ বলিসনি কিছু। অনিকের ল্যাপটপের পাস আই থিংক আমার মনে আছে! দেখা যাক কাল কী হয়।”

“হুম। নেতা কল করেছিল?”

আচমকাই হু হা শব্দে হেসে দিলো চঞ্চল! উচ্ছৃঙ্খল গলায় বলল,,

“হ্যাঁ! শা’লা হা’রা”মী শুধু তোকেই খুঁজছে!”

“কিছু আঁচ করতে পারছে না তো আবার?”

“আরেহ্ না। আমরা তো আর কাঁচা কাজ করিনি যে কিছু আঁচ করতে পারবে! কম মেয়ের জীবন তো আর নষ্ট করেনি ঐ জা’নো’য়া’রটা। তাকে আ’ধ’ম’রা না করে বরং স্পটেই মে’রে ফেলা উচিৎ ছিল আমাদের! এভাবে হয়ত অনেকগুলো মেয়ের জীবন বেঁ”চে যেত।”

“আমি তো মে’রেই ফেলতে চেয়েছিলাম। মাঝখান তুই এসে বে’গ’ড়া দিলি!”

“আচ্ছা এখন বাদ দে এসব। নেতার সামনে ভালো মানুষ সাজার অভিনয়টা কিন্তু দুজনকেই খুব ভালোভাবে করতে হবে।”

“হুম। মাথায় আছে আমার। তোর এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।”

এভাবে দুজন কথা বলতে বলতে কিছুদূর যেতেই তাদের গন্তব্যে চলে এলো! রাত তখন প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই। হসপিটাল থেকে রোগীরা আসা যাওয়া করছে। কেউ সুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরছে তো কেউ অসুস্থ শরীর নিয়ে হসপিটালের ভেতর ঢুকছে। বাইকটা পার্কিং এরিয়ায় পার্ক করে রাফায়াত এবং চঞ্চল দ্রত পায়ে হেঁটে হসপিটালের ভেতরে ঢুকে গেল। আ’হ’ত জুবিনের কেবিনের সামনে দাঁড়াতেই তারা দুজন যাদের রা’জ’নী’তি করে সেই দলের বড়ো নে’তা’র মুখোমুখি পড়ে গেল! সাথে অবশ্য নেতার চ্যা’লা’ফ্যা’লা’রা ও রয়েছে। খুবই চিন্তাগ্রস্ত দেখাচ্ছে তাদের। হয়ত কেবিনের ভেতরে থাকা জু্বিনের অবস্থা খুবই সূচ’নীয়! রাফায়াতকে দেখামাত্রই নেতা ‘মির্জা ফখরুল হক’ গম্ভীর ভাবমূর্তি নিয়ে হাত দ্বারা ইশারায় রাফায়াতকে ডাকলেন।

অবুঝ ভাব নিলো রাফায়াত। অতিরিক্ত ভক্তি দেখাতে গিয়ে মাথা নুইয়ে নিলো! তবে অতি ভক্তি যেন চোরের লক্ষণ না হয়ে দাঁড়ায় সেইদিকেও বিশেষ নজর রাখল! হাত দুটোকে সে ভদ্রভাবে পেছনের দিকে গুটিয়ে নিলো। ধীর পায়ে হেঁটে নেতার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। নম্র গলায় শুধালো,,

“হ্যাঁ বস বলুন?”

রাফায়াতের ভদ্রতা দেখে ফখরুল হক খুশি হলেন। রাফায়াতে বাঁ কাঁধে তিনি ভরসার হাত রাখলেন। রাশভারী গলায় শুধালেন,,

“এত লেইট করলি কেন আসতে?”

রাফায়াতের পরিষ্কার উত্তর,,

“অন্য একটা কাজে আটকে পড়েছিলাম বস।”

“খোঁজ পেয়েছিস? কে আমার ভাইস্তাকে খু”‘ন করার চেষ্টা করেছিল?”

কান চুলকালো রাফায়াত! এমন একটা ভাব নিলো যেন সে কিছুই জানেনা। ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। পূর্বের ন্যায় মাথা নুইয়ে রেখেই রাফায়াত নিচু গলায় বলল,,

“এখনও খবর পাইনি বস। পেলে নিশ্চয়ই আপনাকে জানাব।”

“চব্বিশ ঘণ্টা হয়ে গেল, অথচ এখনও জানতে পারলাম না কে আমার ভাইস্তাকে জা’ন নেওয়া হা’ম’লা করেছিল। খবরটা যদি জুবিনের বাবার কানে যায় তখন আমার মান সম্মানের কী অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছিস তো? জলদি কিছু একটা কর রাফায়াত। আমার মাথা কাজ করছেনা।”

মাথা তুলল রাফায়াত। মির্জা ফখরুল হকের অস্থির দু’চোখে নির্লিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। পরিস্থিতি সামলাতে মিছে শান্তনার স্বরে বলল,,

“আপনি এত হতাশ হচ্ছেন কেন বস? এখনও কিন্তু কিছুই আমাদের হাতের বাইরে যায়নি। আর দু/ একটা দিন সময় দিন আমায়। পুলিশের সাহায্যে আমি আসল কা’ল’প্রি’টকে খুঁজে বের করবই!”

“সেই ভরসাতেই রইলাম রাফায়াত! যেকোনো দরকারে তুই আমাকে পাশে পাবি ওকে? তবে পুলিশ অফিসারটাকে আমার তেমন কাজের মনে হচ্ছেনা! আদো এই অফিসারটা আমার কেইসটা নিয়ে ভাবছে তো?”

থতমত খেয়ে গেল রাফায়াত! গলা খাঁকিয়ে মিচকে শয়তানের মত ভাব নিলো। ঝেড়ে কেশে বলল,,

“ভাবছে তো বস। আপনি খামোখা টেনশন করছেন। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবেন। আসল কা’ল’প্রি’টও ধরা পড়বে। আপনি প্লিজ বাড়ি যান এখন। খাওয়াদাওয়া করে রেস্ট নিন। এদিকটা আমি আর চঞ্চল সামলে নিচ্ছি।”

বেশ ভাবুক হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মির্জা ফখরুল হক। রাফায়াতের উপর ভরসা রেখে তিনি চ্যা’লা’ফ্যালাদের নিয়ে হসপিটাল ত্যাগ করলেন। ভরসা করবেন না ই বা কেন? রাফায়াত প্রায় তিনবছর ধরে মির্জা ফখরুল হকের দলের হয়ে কাজ করছে! কখনও কোনো বেঈমানী বা বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখায় যায়নি তাকে। তাই রাফায়াতের প্রতি এত অগাধ আস্থা উনার। ঠিক চোখ বুজে বিশ্বাস করার মত বিশ্বস্ত। সেই দুর্বলতার-ই সুযোগ নিলো রাফায়াত। যতই অপ- রাজনীতি করুক না কেন অন্যায় কাজের সাথে সে ঘোরতোরভাবে যুক্ত নয়! যেখানে অন্যায় দেখবে রাফায়াত সেখানেই প্রয়োজনে বার বার দুর্বলতার সুযোগ নিবে।

নেতার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রাফায়াত এবং চঞ্চল স্বস্তির শ্বাস ফেলল। রাফায়াতের কাঁধে হাত রেখে চঞ্চল ভীরু গলায় বলল,

“জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম রে ভাই। শা’লাকে বাড়িতে না পাঠালে এক্ষণি অফিসার শাওনের হিস্টোরি নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে দিত। যা শকুনের নজর এই শা’লা’র। নির্ঘাত টের পেয়ে যেত শাওন আমাদের দলের-ই লোক!”

“আরে চিল ভাই। এত ভাবিস না তো। ঘরের ইঁ’দু’র যখন বেড়া কা’টে তখন তাকে ধরার সাধ্য কারো হয়না! ঘণ্টা খানিক বাদে আমরাও চলে যাব। কে আবার রাতের ঘুম হারাম করে ঐ ন’রপ’শুকে পাহারা দিবে?”

_______________________________

মধ্যরাত প্রায় দুইটা ছুঁই ছুঁই। বিছানার উপর উবুড় হয়ে শুয়ে আছে অয়ন্তী। পেটে হাত রেখে সে ক্ষুধার তাড়নায় এক প্রকার কাতরাচ্ছে! সকালের আনা একটা নাশতাও এই অবধি মুখে তুলেনি অয়ন্তী! অভুক্ত, অনাহারে অবলীলায় কাটিয়ে দিয়েছে গোটা দিন। রাতের অর্ধেকটা সময়ও এই একই ভাবে উপোস কাটিয়ে দিলো! এভাবেই যেন না খেয়ে দেয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে তার। কী লাভ এই বেঁচে থাকার? যে বেঁচে থাকার মাঝে কোনো স্বাধীনতা নেই। কোনো সুখ নেই স্বাচ্ছন্দ্য নেই। এই বন্দি জীবন এখন যেমন তার বিতৃষ্ণা লাগছে তার তেমনি খাবার দাবারের প্রতিও অনীহা তৈরী হচ্ছে। মুখে এক ফোঁটা পরিমাণ পানিও রুচতে ইচ্ছে করছেনা তার। এদিকে আবার ক্ষুধার জ্বালাও সইতে পারছেনা!

ইতোমধ্যেই ফ্লাটের কলিং বেল বেজে উঠল! দুবার বেলটি বেজে পুনরায় থেমে গেল। রাফায়াত এসেছে বুঝতে বেশী সময় ব্যয় করতে হলোনা অয়ন্তীর। অপরিমেয় ঘৃণা নিয়ে মুখটা অন্যপাশে ফিরিয়ে নিলো অয়ন্তী। রাফায়াতকে উদ্দেশ্য করে সশব্দে চিৎকার করে বলল,,

“ফিরে যান আপনি। দরোজা খুলব না আমি!”

রেস্টুরেন্ট থেকে অয়ন্তীর পছন্দের পিজ্জা এবং বিরিয়ানি হাতে নিয়ে দরোজায় দাঁড়িয়ে আছে রাফায়াত‌! অন্য হাতে আবার দুটো শপিং ব্যাগও আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অয়ন্তীর জন্য শপিং করেছে সে! দরোজার ঐপাশ থেকে অয়ন্তীর জবাব শুনে মুহূর্তেই মেজাজ চটকে গেল রাফায়াতের। এমনিতেই এতকিছু নিয়ে দাঁড়ানো যাচ্ছেনা ঠিকমত। তার উপর আবার অয়ন্তীর অহেতুক অভিমান! মেয়েটা কী সময় গময় ও বুঝেনা? একরাশ বিরক্তি নিয়ে রাফায়াত দাঁতে দাঁত চাপল। চোয়াল উঁচিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলল,,

“নাটক করো না তো অয়ন্তী। দরোজাটা খোলো বলছি।”

অয়ন্তীও নাছোড়বান্দা। ফুঁপিয়ে কেঁদে একরোখা গলায় বলল,,

“পারব না খুলতে বললাম তো। যেখান থেকে এসেছেন সেখানেই ফিরে যান আপনি।”

“স্টপ ইট অয়ন্তী। লোকজন দেখছে আমায়। এক্ষণি দরজাটা খোলো বলছি।”

জবাব দিলো না অয়ন্তী! বিছানার উপর মুখ চেপে শুধু ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। অধৈর্য হয়ে উঠল রাফায়াত। দরোজায় জোরে এক লাথ মারল! দাঁতে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,

“দরোজাটা খুলো বলছি অয়ন্তী। না হয় কিন্তু আমি বাধ্য হব তোমার বাবা-মায়ের ক্ষতি করে দিতে!”

সমস্ত রাগ-ক্ষোভ, ঘৃণা, অভিমান যেন নিমিষেই জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল অয়ন্তীর! ঝট করে সে শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠল৷ গাঁয়ের অগোছালো ওড়নাটি ঠিক করে দৌঁড়ে রুমের দরোজাটি খুলে দিলো। বাহির থেকে রাফায়াম রুমের তালাটি খুলতেই দরজাটা গটগট করে খুলে গেল। তক্ষুণি কেঁদে কেটে চোখ-মুখ ফুলিয়ে রাখা অয়ন্তীর দিকে রাফায়াতের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পড়ল। প্রচণ্ড জিদ্দি হয়ে অয়ন্তীকে ঠেলেঠুলে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল রাফায়াত। হাতভর্তি খাবার এবং শপিং ব্যাগগুলো বিছানার উপর ছুড়ে মেরে সে প্রথমেই রুমের দরজাটি ভেতর থেকে লক করে দিলো। এমনকি তালাও মেরে দিলো ভেতর থেকে!

রাফায়াতের এহেন উগ্র মেজাজ দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে গেল অয়ন্তী! এক পা দু পা করে সে পেছনের দিকে হাঁটা ধরতেই শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে তুলল রাফায়াত। হেঁচকা টানে অয়ন্তীর ডান হাতটা খপ করে ধরে ফেলল! বিস্ফোরিত গলায় বলল,,

“সাহস হয় কী করে তোমার হ্যাঁ? দরোজার বাইরে আমাকে এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখার?”

তুমুল ভয়ে কাঁপতে লাগল অয়ন্তী। হৃৎস্পন্দন দ্রুতগতিতে টিউটিউ করতে লাগল। জানটা যেন তার এক্ষণি বের হয়ে যাবে এমন উপক্রম হলো। এই মুহূর্তে নীরবতাকেই সঙ্গী করে নিলো অয়ন্তী। চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু আল্লাহ্’র নাম জপ করতে লাগল। অয়ন্তীর নীরবতা যেন রাফায়াতকে আরও অধিক ক্ষোভের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল! ঘাড়ের রগ টান টান করে সে পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী হলো? উত্তর দিচ্ছ না কেন? আমি কিন্তু তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছি অয়ন্তী।”

অস্বাভাবিক ভয়ের চোটে অয়ন্তী এবার ঠোঁট ভেঙে কেঁদেই দিলো! ঝাপসা গলায় বলল,,

“আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দিন!”

ইতোমধ্যেই আচমকা রাফায়াতের দৃষ্টি পড়ল সকালের আনা নাশতাগুলোর দিকে। সকালে রাফায়াত যেমনভাবে নাশতাগুলো বিছানার এক পাশে সাজিয়ে রেখে গিয়েছিল তেমন ভাবে সেই একই জায়গায় নাশতাগুলো পড়ে আছে! মেজাজ যেন আরও বিগড়ে গেল রাফায়াতের! হেঁচকা টানে সে অয়ন্তীকে নিজের মুখোমুখি এনে দাঁড় করালো। হুট করেই অয়ন্তীর থুতনি চেপে ধরল! চোখ দুটো মুহূর্তেই অসম্ভব লাল করে তুলল। তটস্থ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“শরীরে খুব কা’রে’ন্ট না? সকাল থেকে এই পর্যন্ত না খেয়ে আছো? তুমি কী ভেবেছ? এভাবে না খেয়েদেয়ে থাকলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিব? এত সহজ রাফায়াতের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া?”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here