এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -৪৮

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৪৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

এই রাতে অয়ন্তী যা যা খেতে চাইল, যা যা করতে চাইল তার সব ইচ্ছে পূরণ করে দিলো রাফায়াত! ব্রীজের উপর ওঠে চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে আইসক্রীম খাওয়া, ভাগ্যক্রমে মাহফিলের এরিয়া থেকে ফুচকা খাওয়া, ভেলপুরি খাওয়া, চাপ, গ্রিল, চিপস, চকোলেট, বার্গার এমনকি অয়ন্তীর যত ধরনের পছন্দের খাবার আছে সব খাওয়ালো! আজকের রাতটা হয়ে উঠল অয়ন্তীর ইচ্ছা পূরণের রাত!

এই করতে করতে প্রায় মাঝরাতের দিকে তারা বাড়ি ফিরে এলো। অয়ন্তীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে রাফায়াত খুশি মনে তার বাড়ি ফিরে গেল। যদিও প্রথমে অয়ন্তী ছাড়তে চাইছিলনা রাফায়াতকে! আরও কিছুক্ষণ একসাথে সময় কাটানোর জন্য বড্ড জেদ ধরেছিল। হাত-পায়ে ধরার বাকী ছিল প্রায়। কিন্তু রাফায়াত তো চিনতে পেরে গেছে অয়ন্তীর বাবাকে! বিয়ের আগেই এত বেশী বাড়াবাড়ি করতে গেলে হীতে হয়ত তার অয়ন্তীকে হারাতে হবে! এমনি প্রচণ্ড ক্ষেপে আছে অয়ন্তীর বাবা তার উপর। এখন পান থেকে সামান্য চুন খসলেই মহা বিপদ। সেই আগাম বিপদের ভয়ে-ই রাফায়াত অয়ন্তীর জেদকে তেমন গুরুত্বের সাথে নেয়নি। ঠাণ্ডা মাথায় অয়ন্তীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বরং ফুরফুরা মেজাজ নিয়ে-ই বাড়ি ফিরে গেছে। বিছানায় উবুড় হয়ে শুতেই রাফায়াতের দু’চোখে তব শান্তির ঘুম ভর করল। অন্যদিকে অয়ন্তীর বাবা বড্ড অসন্তুষ্ট অয়ন্তীর এহেন আপত্তিকর চালচলনে! এত রাত অবধি রাফায়াতের সাথে অয়ন্তীর বাড়ির বাহিরে থাকাটা তিনি সুদৃষ্টিতে দেখলেন না! এমনকি মেয়েকেও কিছু বললেন না। ভেতরের রাগ কেবল ভেতরেই মজালেন! মেয়ের রাগকে তিনি এখন মাত্রাতিরিক্ত ভয় পান। আগের বার তো এই সর্বনাশা রাগের জন্যই তিনি তার মেয়েকে হারাতে বসেছিলেন! এই বার আর একই ভুল করতে চাননা তিনি। মনে মনে মেয়েকে নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকলেও উপরে তা প্রকাশ করতে চাইলেন না।

বিছানায় শুয়ে অয়ন্তী কেবল ছটফট করছে। মূলত গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে তার! আজ এত এত বাইরের তেল এবং মসলাযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছে যে তার এখন বদহজম হচ্ছে! মুহূর্তের মধ্যেই প্রায় একবার করে বাথরুমে যেতে হচ্ছে। বমি করেও সব প্রায় উল্টে ফেলছে প্রায়। রাফায়াত বলেছিল বাড়ি পৌঁছেই প্রথমেই তাকে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধটা খেয়ে নিতে। অয়ন্তী শুনেনি তার কথা। বরং ক্লান্ত শরীর নিয়ে কোনো রকমে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়েছিল। এরপর ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে উঠল। এখন কেবল বাথরুমে যাওয়া আসা করতে করতেই তার রাত পেরিয়ে ভোর নেমে এলো! যদিও গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ পরে খেয়েছিল সে তবুও সঠিক সময়ে ঔষধ না খাওয়ায় সেই ঔষধ কাজ করেনি তার। উল্টো টক ঢেকুর হতে লাগল! যা পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে ফিলিংস!

সারারাত আহাজারি করতে করতে অবশেষে ভোরের দিকে অয়ন্তীর চোখ লেগে এলো। পেটের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে সে এচিডিটির যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এই রাতটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাত! শরীর এতটাই বা’জে’ভা’বে অ’সু’স্থ হয়ে পড়েছিল যে তার ম’র’ণদশা হয়ে গিয়েছিল প্রায়! সেই বি’ষা’দম’য় রাত ফুরিয়ে অয়ন্তীর ঘুম ভাঙল সকাল নয়টার কাছাকাছিতে। অর্ধ খোলা অ’সু’স্থ চোখেই সে রাফায়াতকে ফরমাল লুকে আবিষ্কার করল তার চোখের সামনে। এত সকাল সকাল রাফায়াতকে এমন সুদর্শনীয় রূপে প্রদর্শনে করবে তা ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেনি অয়ন্তী। শরীরের সমস্ত অসুস্থতা যেন তার কেটে গেল! শরীর ঝরঝরা হয়ে উঠল। আমোদিত হয়ে সে লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল। অমনি রাফায়াত বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। প্যান্টের পকেট থেকে ইনুর একটি প্যাকেট বের করল সে। গ্লাসভর্তি পানিতে ইনুটি গুলতে লাগল। চমকে থাকা অয়ন্তীকে উদ্দেশ্য করে সে শান্ত গলায় বলল,,

“যাও। আগে ফ্রেশ হয়ে এসো।”

চোখ কচলালো অয়ন্তী। ঘুমের ঘোর থেকে বের হয়ে এলো সে। কৌতূহলী গলায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আপনি হঠাৎ ফরমাল লুকে?”

“হুম ইন্টারভিউ আছে।”

“কোথায়?”

“বাবার অফিসে!”

ভড়কে উঠল অয়ন্তী। কয়েক দফা অবাক হয়ে ভীরু গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“মানে? চট্টগ্রামে?”

“না। ঢাকায়ও একটা ব্রাঞ্চ আছে।”

স্বস্তির শ্বাস ফেলল অয়ন্তী। বুকে হাত রেখে চোখ জোড়া বুজল। প্রশান্তিময় গলায় বলল,,

“ওহ্ আচ্ছা।”

ইনুটা গুলে রাফায়াত ভ’য়’ঙ্ক’র রাগী দৃষ্টিতে শান্তশিষ্ট অয়ন্তীর দিকে তাকালো! দাঁত কপাটি চেপে তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বলল,,

“কথা কানে যায়না? ফ্রেশ হয়ে আসতে বলিনি?”

রাফায়াতের এহেন ভ’য়’ঙ্ক’র রাগের কারণ বুঝতে পারলনা অয়ন্তী। নিতান্তই হতবাক হয়ে সে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে রাফায়াতের দিকে তাকালো। কৌতূহল এড়াতে হঠকারি গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এমন করছেন কেন হ্যাঁ? কী হইছে আপনার? সকাল সকাল ঝাঁড়ি ঝুড়ি দেওয়া শুরু করছেন কেন?”

“কাল রাতে বারণ করেছিলাম না? এত ফাস্ট ফুড না খেতে? রাতে যে কতবার বাথরুমে আপ ডাউন করেছ তা তা তোমার লণ্ডভণ্ড হয়ে থাকা রুম আর তোমার মলিন হয়ে থাকা ফেস দেখে-ই বুঝা যাচ্ছে। কথা শোনো তুমি আমার?”

ভয়ে তৎক্ষনাৎ মাথা নুইয়ে নিলো অয়ন্তী। শুকনো ঢোঁক গিলে ঘন ঘন মাথা চুলকাতে লাগল। নিজের ভুল সে বুঝতে পারল। রাফায়াতের মন মেজাজ বড্ড খারাপ তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আজ হয়ত তার খবর আছে! গ’র্দা’নও যেতে পারে। মানে মানে করে এখান থেকে কেটে পড়া ভালো! কে হাতে ধরে নিজের সর্বনাশ করতে চাইবে? সময় অপচয় না করে অয়ন্তী তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে ওঠে এক প্রকার দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল! মাথা মুথা গরম হয়ে গেল রাফায়াতের। যেখানে কিনা তাকে ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়, বি কনফিডেন্ট হয়ে সেখানে অয়ন্তীর কার্যকলাপে তার মাথা রীতিমত গরম হয়ে যাচ্ছে! এসব দেখে গেলে ইন্টারভিউটা ভালো হবে কী করে?

দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যেই অয়ন্তী ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম বের হয়ে এলো। অয়ন্তীর জন্য রূঢ়তা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকা রাফায়াত তক্ষণি ইনুর গ্লাসটা বিনাশব্দ প্রয়োগে অয়ন্তীর দিকে এগিয়ে দিলো। কাঁপা কাঁপা হাতে অয়ন্তী ইনুর গ্লাসটি হাতে তুলে নিলো। ঢকঢক করে গ্লাসভর্তি ইনু শেষ করল। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সে বদরাগী রাফায়াতের দিকে কম্পিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অমনি রাফায়াত চটে গেল! মেজাজ হারিয়ে সে মাথার চুল টানল। চোঁয়াল উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“রাতে যে শরীর খারাপ হয়েছিল একবারও জানিয়েছিলে আমাকে?”

ভয়ে কেঁপে ওঠে অয়ন্তী মাথা নুইয়ে নিলো। ভীতু গলায় সে প্রত্যত্তুরে বলল,,

“ভেবেছিলাম ঘুমাচ্ছিলেন তাই!”

“একটা বার কল করা যায়নি?”

“সরি।”

“কীসের সরি হ্যাঁ? আমি তোমার কাছ থেকে সরি শুনতে চেয়েছি?”

“না। মনে হলো ভুল করেছি। তাই সরি বললাম।”

“তোমার এই অসুস্থ মুখ দেখে আমি ইন্টারভিউ দিতে যাব? প্রতিবার আমাকে বাঁধা দিতেই হবে?”

“আমি তো ইচ্ছে করে করিনি রাদিফ।”

“ইচ্ছে করেই করেছ। বার বার বারণ করেছিলাম না? একসাথে এত ফাস্ট ফুড না খেতে। শোনোনি আমার কথা। বরং ঘা’ড়’ত্যা’ড়া’মো করে খেয়েছ। বেশী বেশী করে খেয়েছ।”

“আচ্ছা হইছে তো। বাদ দিন না। আমি সুস্থ আছি তো এখন। মাথা ঠাণ্ডা করুন। অল্পতে কেন এত রেগে যান বলুন তো?”

“না। আমার মাথা ঠাণ্ডা করার কোনো প্রয়োজন নেই। গরম মাথা নিয়েই আজ ইন্টারভিউ দিতে যাব। ইন্টারভিউ খারাপ হলে সম্পূর্ণ দোষ তোমার! বিয়ে আরও একবছর পিছাবে! বিয়ে কবে করবে বিয়ে করবে বলে তখন মাথা খেয়ো না আমার!”

কিছুতেই যেন অশান্ত রাফায়াতকে শান্ত করা গেলনা। রেগেমেগে গরম হয়ে সে অয়ন্তীর সাথে একপ্রকার ক্ষিপ্ত হয়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল! যাত্রাপথে অয়ন্তীও রাফায়াতকে বাঁধা দিলোনা। ক্ষুব্ধতা নিয়ে যেতে দিলো রাফায়াতকে। ইন্টারভিউ আজ ভালো হবেনা মনে মনেই জানা ছিল রাফায়াতের। ভেতরে ভেতরে একপ্রকার অশান্তি কাজ করছিল তার। অয়ন্তীর সামান্য অসুস্থতাও সে এখন মানতে পারেনা! অস্থির হয়ে ওঠে। মাথা কাজ করেনা তখন। সবথেকে বেশী তখন খারাপ লাগে যখন অয়ন্তী তার কথা শুনেনা!

ভাগ্যক্রমে ইন্টারভিউ রাফায়াতের চরম লেবেলের ভালো হলো! প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর সে এতটাই স্মার্টলি এবং ভেবেচিন্তে দিলো যে ইন্টারভিউ ভালো না হয়ে কোনো উপায় ছিলনা! তাছাড়া রাফায়াতের বাবা এই বীমা কোম্পানির সাথে প্রায় পঁচিশ বৎসর যাবত যুক্ত ছিলেন! সেই সুবাদে এত ভালো ইন্টারভিউয়ের পর রাফায়াতের চাকুরী পাওয়াটা অনিশ্চিত কিছু ছিলনা। বরং সবাই আশাবাদী ছিল। এখন শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা। এক সপ্তাহের মধ্যেই হয়ত কোম্পানি থেকে তার ডাক আসতে পারে। অয়ন্তীর সাথে রাগারাগি করাটা এভাবে তার লাকি চান্স হয়ে দাঁড়াবে তা ইন্টারভিউ ভালো হওয়ার আগ অবধিও ভাবতে পারেনি রাফায়াত! বাড়ি পৌঁছে রাফায়াত প্রথমে তার মা-বাবার সাথে দেখা করল। সবার আদর এবং ভালোবাসা নিলো। এরপর সোজা চলে এলো অয়ন্তীর বাসায়। অয়ন্তীর সাথে দেখা করতে। খুশির খবরটা অয়ন্তীকে জানাতে। দুপুরের এই কড়া রোদে অয়ন্তী ছাদের উপর ওঠে দোলনায় দুলছে আর জলপাইয়ের আচার খাচ্ছে! বিষয়টা আমাদের কাছে রীতিমত অস্বাভাবিক ঠেকলেও অসুস্থ শরীরে অয়ন্তীর কাছে বেশ ভালোই লাগছে। রাফায়াতকে মনে মনে বেশ বকাঝকাও করছে সে! কেন সে আজ অয়ন্তীর সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হলো? ইন্টারভিউ যদি আজ ভালো না হয় তো দোষটা তো তার ঘাড়েই পড়বে! আচারটা তৃপ্তিভরে চু’ষে অয়ন্তী বিরক্তি ভরা গলায় বলল,,

“ধ্যাত বিয়েটাও পিছিয়ে যাবে এবার! কী দরকার ছিল আমার সাথে ঝগড়া করে বের হওয়ার? পেটের ভাত হজম হয়না বোধ হয় আমার সাথে ঝগড়া না করলে। কী সুন্দর বাচ্চা কাচ্চার প্ল্যানিং করে রেখেছিলাম আমি! সব প্ল্যানিংয়ে পানি ঢেলে দিলো আমার। ভাল্লাগেনা আর। জামাইয়ের অ’ভা’বে দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছি! শ’য়’তা’ন রাদিফটা তা বুঝলোনা।”

পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাফায়াত সব শুনছিল! কোনোমতে হাসি চেপে রেখেছিল প্রায়। অমনি পেছন থেকে রাফায়াত গাড্ডা মারল অয়ন্তীর মাথায়! নাকমুখ কুঁচকে অয়ন্তী পেছনে ঘুরে তাকানোর আগ মুহূর্তেই কেমন যেন বিব্রতকর গলায় বলল,,

“কে রে?”

পিছু ফিরে তাকাতেই অয়ন্তী টাস্কি খেয়ে গেল! সঙ্গে সঙ্গেই রাফায়াত ব্যগ্র অয়ন্তীর দিকে তাকালো। ঠোঁট কামড়ে রসালো গলায় বলল,,

“আসো বাচ্চা দিই!”

তাৎক্ষণিক লজ্জায় রাফায়াতের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো অয়ন্তী! মাথা নুইয়ে নিজেই নিজের মাথায় গাড্ডা মেরে মৃদু স্বরে বলল,,

“ধ্যাত! এই লোকটা আবার সব শুনে নিলো না তো?”

কদাচিৎ হেসে রাফায়াত ডানপিটে ভাব নিলো৷ ঠোঁট কামড়ে পুনরায় লজ্জাহীন গলায় বলল,,

“আসো পরাণ। জামাইয়ের অভাব মিটিয়ে দিই!”

ঝট করে অয়ন্তী বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। রাফায়াতের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে সে লজ্জায় রাঙা হয়ে ওড়না দ্বারা সমস্ত মুখ ঢেকে নিলো। কম্পিত ঠোঁটে অস্ফুটে গলায় বলল,,

“ধ্যাত। আমি তো মজা করে বলেছি।”

পা বাড়িয়ে অয়ন্তীর দিকে হেঁটে এলো রাফায়াত। মোহে সিক্ত হয়ে পেছন থেকে অয়ন্তীকে জাপটে ধরার পূর্বেই অয়ন্তী লজ্জায় আরও একটু খানি দূরে সরে গেল। শয়তানি হেসে রাফায়াত পুনরায় অয়ন্তীকে বলল,,

“আরে আসো। আমি সত্যিই তোমার অভাব পূরণ করতে চাই!”

রাফায়াত আবারও অয়ন্তীর দিকে এগিয়ে যেতেই অয়ন্তী আবারও রাফায়াতের থেকে দৌঁড়ে পালালো। পুরো ছাদ জুড়ে দুজনের ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেল! রাফায়াত যেন কিছুতেই অয়ন্তীকে ধরতে পারছেনা। রোদের তাপে দুজনই ঘেমে নেয়ে একাকার৷ তবুও কারো ক্ষান্ত নেই৷ দৌঁড়োতে দৌঁড়োতে অয়ন্তী এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে এলো। শরীরের শক্তি হারিয়ে সে সোজা দাঁড়িয়ে পড়ল। অমনি সুযোগ বুঝে রাফায়াত ছুটে গিয়ে অয়ন্তীকে এবার পেছন থেকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরল। হাঁপিয়ে ওঠা গলায় বলল,,

“এই বছরই আমাদের বিয়েটা হবে পরাণ। চাকুরীটা হয়ত এবার আমি পেয়ে যাব। যদি আল্লাহ্ তা’য়ালার রহমত থাকে তো!”

খুশিতে উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠল অয়ন্তী। হাঁপিয়ে ওঠা গলায় বলল,,

“সত্যি রাদিফ? ইন্টারভিউ ভালো হয়েছে আপনার?”

“আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক ভালো হয়েছে। ভাবতে পারিনি এতটা ভালো হবে।”

“আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা রাদিফ! আ’ম সো সারপ্রাইজড!”

“এবার আদর দাও!”

“এ্যাহ্!”

“এ্যাহ্ না হ্যাঁ! ইন্টারভিউ ভালো হইছে না আমার? আদর তো একটু প্রাপ্যই।”

“ছাদ থেকে সবাই দেখছে! নিচে আসুন।”

“দেখুক। আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার। দিবা কিনা বলো? আর ওয়েট করতে পারছিনা।”

উচ্ছ্বাসে এক ধাক্কা মেরে অয়ন্তী রাফায়াতকে তার গাঁ থেকে সরিয়ে নিলো। দৌঁড়ে ছাদ থেকে প্রস্থান নিতে নিতে বলল,,

“দিব না! আগে বিয়ে তারপর যা চাইবেন তা!”

সামনের চুলগুলো টেনে ধরে রাফায়াত মৃদু হাসল। প্রফুল্লিত গলায় বলল,,

“অপেক্ষা!”

অমনি রাফায়াতের দৃষ্টি পড়ল আশেপাশের ছাদ গুলোতে। অয়ন্তী ভুল কিছু বলেনি। সবাই ছাদ থেকে ড্যাব ড্যাব করে তাদের দেখছে। বিষয়টায় অস্বস্তি বোধ করল রাফায়াত। পাশাপাশি ছাদে সিসি টিভি ক্যামেরার মত দাঁড়িয়ে থাকা দুজন মহিলাকে সে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“এই? আপনাদের কী খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? অন্যের বাড়ির ছাদে নজর দেন কেন হ্যাঁ? কাজ করতে এসেছেন কাজ করে চলে যান। এভাবে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছেন কেন?”

মহিলাগুলো আর কথা বাড়াল না। চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে ছাদ থেকে নেমে গেল! রাফায়াতও অয়ন্তীকে ধাওয়া করতে করতে ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো।

_______________________________

মাসখানেকের মধ্যে সত্যিই রাফায়াতের চাকুরীটা হয়ে গেল! যথারীতি সে তার নতুন চাকরীতে জয়েনও হয়ে গেল। মাসিক বেতন প্রায় পঁচিশ হাজারের মত। কাজের ধরণ দেখে কিছু মাস পর বেতনের সংখ্যা আরও বাড়বে। এবার শুধু শুভ দিনক্ষণ দেখে বিয়ের কাজটা সেরে নেওয়ার পালা!

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here