এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ১১

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
১১.
সাফা বিস্তর মাঠে খালি পায়ে হাঁটছে। পায়ের নিচে সবুজ ঘাস।পড়নে তার সবুজ জামদানি। হাত ভর্তি সবুজ কাঁচের চুড়ি।ঝুমর ঝুমর শব্দ হচ্ছে সেই চুড়ির থেকে।যে শব্দ গুলো খোলা মাঠে বাতাসের সাথে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। হু হু বাতাস বইছে।চারপাশের গাছপালা গুলো দুলছে।হালকা বৃষ্টি পরছে।সাফার লম্বা চুলগুলো খোলা।বাতাসে দুলছে বাম ডান। বিশাল আচঁলটা মাঠে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চোখ ভড়া কাজল।ঠোঁটে ছুঁয়ে আছে হাসি।গালের একপাশের সেই সুন্দর টোলটাও মুখে পরে আছে।ঘন পাপড়িতে পানির ফোটা জমা হচ্ছে শিশির কনার মত।সাফা চোখ ছাপ্টানিতে শিশির কনা গাল ছুঁয়ে পরছে।হঠাৎ নিভ্র সামনে এসে দাড়ায়।হাতগুলো পিছনে।মনে হচ্ছে কিছু একটা আছে।সন্ধ্যা বেলা।নিভ্রের মুখ তবুও উজ্জ্বল দেখা যাচ্ছে। ঠোঁটজোড়া প্রশারিত করে হাসছে।সাফা চকিতেই প্রশ্ন করে…….
—এখানে কেনো আপনি??আর হাতে কি??
.
নিভ্র আবার হাসলো।সাফা চোখমুখ কুঁচকে তাকালো।নিভ্র সাফাকে অবাক করে তার টোলটাতে একটা চুমু খেলো।সাফা বেক্কেল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।নিভ্র আবার হেসেঁ হাত পিছন থেকে এনে একটা কাঁচের বক্স বের করে।আর বক্সটাতে জোনাকিতে ভড়া।সাফা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।নিভ্র বক্সটা নিচে রেখে সাফার হাত টেনে তাকে বসিয়ে দেয় সামনে।আর ওর এক হাত নিয়ে বক্সটা খুলে দেয়।সাথে সাথে জোনাকি গুলো উড়ে এসে সাফার হাতে গায়ে বসছে।তাদের আলোতে চারদিক আলোকিতো হয়েগেছে।নিভ্র সাফার দিকে এসে হঠাৎ তাকে জড়িয়ে নেয়।……..
….🍁
নিভ্র হকচোকিয়ে বালিশ থেকে মাথা তুলে বিছানায় বসে পরে।তার সারা শরীর ঘামে একাকার।বুকে হাত দিয়ে সে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নেয়।দু হাতে চুলগুলো পিছনে নিয়ে টেনে ধরে রাখে।ডান হাত দিয়ে চোখমুখ মুছতে শুরু করে।সে ভাবতে পাড়ছেনা।সে কিভাবে এমন অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেছে।স্বপ্নটা যেনো তাকে নাড়িয়ে রেখে দিয়েছে।বুকে হাত দিয়ে বসে আছে নিভ্র।বুকটা তার ধুপধুপ করে কাপঁছে। ধাকধাক শব্দ করছে।নিভ্র কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না।
—আপনার কফি।
.
কারো মিষ্টি কন্ঠে নিভ্র চকিতেই তার দিকে তাকায়।অবাক হয়ে বলে……
—তুমি আমার রুমে কিভাবে এলে???
—এমন একটা ভাব করছেন যেনো আমি হাঁটতেই পারিনা??পা যখন আছে তাহলে আমি হেঁটে আসতে পারি বুঝলেন??
—সাফা কথা ঘুড়াবে না।একবার স্বপ্নে আবার এখন আমার রুমে এসে ডিস্টার্ব করছ।মানে কি এসবের।
—কেনো বুঝেন না মনে কি??আর আপনি স্বপ্নেও আমাকে দেখেন নাকি??তাহলেতো আপনি আমার প্রেমে পরে গেছেন।
.
নিভ্র চোখ লাল করে তাকালো।রাগে চিৎকার করে বলে…..
—এই পাগল মেয়ে যাও এখান থেকে।আমি নিভ্রনীল কারো প্রেমে পড়তে পারিনা বুঝলে??আর মেয়ে জাতির তো ভুলেও না।
—তাই নাকি তাহলে আপনি কি ছেলে জাতির সাথে প্রেম করবেন বলে ঠিক করেছেন না কি??মানে গে?? ছিই….
.
বলেই হু হা করে হেঁসে উঠে।নিভ্র যেনো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা।সে রেগে যাচ্ছে। এই মেয়েকে এখন তার কি যে করতে ইচ্ছে করছে সে বলে বুঝাতে পারছে না।নিভ্র রেগে গায়ের চাদুরটা পাশে ছুড়ে দিল।বাম হাত দিয়ে কফির মগটা ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে দিল।ঠাসসস করে একটা শব্দ হল।সাথে সাথে নিভ্রর কানে রহমত চাচার চাপা চিৎকার ভেসে আসে।উনি চেঁচিয়ে বলে………
—কি করছেন বাবা।আপনার কি হইছে??আপনার কি অসুখ করছে??এমন কইরা কথা কন কিলাই??আমি বাড়ির বেকেরে ডাকি আনি??আপনার শরীর ডা মনে হয় না ভালা??
.
নিভ্র ভূত দেখার মত করে তাকায়।সে ভাবতেই পারছে না।সাফা কই গেলো।সে চারদিকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে বারবার।সাফাকে খুঁজে চলেছে।তার স্পষ্ট মনে আছে সে এখানে কফির মগ হাতে সাফাকে দেখেছে তবে সাফা গেলো কই??কালকে হসপিটাল থেকে এসেই সে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।তারপর থেকে সাফাকে চোখের সামনে দেখছে।আর সকালে তো তার স্পষ্ট মনে আছে সাফা তার রুমে এসেছে।তাকে উল্টাপাল্টা কথা শুনাচ্ছিল তাহলে গেলো কই।আর রহমত চাচা কখন এলো??নিভ্র বিস্মিত চোখে রহমত চাচার দিকে তাকায়।কঠিন সরে বলে……
—চাচা এখানে কিছুক্ষণ আগে একটা মেয়ে ছিলো না???
রহমত চাচা হতভম্ভ হয়ে তাকায় নিভ্রর দিকে।তারপর জবাব দেয়…..
—না তো নিভ্র বাবা।আমিই আসছি আপনার রুমে প্রথমে।আর এসেই দেখি আপনি আমারে কি কি যেন কইতেছেন।পাগল মাইয়া আরো কি কি যেন।কি হইছে বাবা নিভ্র???
.
নিভ্র জবাব দিল না।সামনে আসা চুলগুলো দুই হাতে পিছনে টেনে ধরলো। সে নিজেই বুঝতে পারছে না তার সাথে কি হচ্ছে। নিভ্র কিছুক্ষণ দীর্ঘশ্বাস নিল।তারপর শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো রহমতের দিকে।সে এখনো ভয়ঙ্কর ভাবে তাকয়ে আছে নিভ্রর দিকে।নিভ্র ঠান্ডা গালায় বলে……
—চাচা আপনি এখন যান।আর আমি যাই বলে থাকিনা কেনো কাউকে বলার প্রয়োজন নেই।এখন আপনি আসতে পারেন।
.
রহমত কাঁচগুলো তুলে নিয়ে হাটা ধরে।নিভ্রর ঘরের বাইরে আসতেই সে একবার পিছনে ঘুড়ে তাকায়।আবার হাটাঁ দেয়।সিঁড়ির কাছে আসতেই বেসামাল ভাবে অভ্রর সাথে ধাক্কা লাগে তার।অভ্র অবাক হয়ে বলে……
—চাচা তোমার কি হয়েছে??এভাবে এলোমেলো হয়ে হাঁটছ কেনো??আর এত তাড়াহুড়া করে নামছ কেনো??
.
রহমত চাচা মনে জোস পেয়েছে এমন একটা শ্বাস নিয়ে বলে……
—আরে অভ্র বাবা আর কইয়েন না নিভ্র বাবারে মনে হয় ভূতে ধরছে বুঝলেন??কেমন কেমন যেনো করতাছে??কিছুক্ষণ আগে আমারে এক মাইয়া ভাইবা কি কি যেনো কইছে??আবার কাপ ডা আছাড় দিছে।বুঝতাম পারতেছিনা কিতা হইছে।আমি কই কি ভালা হুজুর দেখান লাগবো মনে হয়??সারা দিন তো রোগী মরা মানুষ গো লগে থাকে তাই কই কি জিনে টিনে পাইছে কি না কে যানে???
—কি সব বলছ চাচা??এই যুগে এসেও এমন ফাউল কথা কিভাবে বকো তুমি??এখন আর আমরা ছোট নেই। বড় হয়েগেছি তাই তোমার গল্প গুলোও একটু আপডেট করো। বুঝলা চাচা??
.
কথাটা বলেই অভ্র নিভ্রের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।নিভ্র এখনো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তার মাথায় সত্যিই কিছু আসছে না।নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরে নিভ্র মাথা তুলে তাকালো।অভ্র নিভ্রর পাশে বসে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে……
—কিরে তোকে নাকি ভূতে ধরেছে??
–কে বলেছে এই সব ফাউল কথা??
–কে আর রহমত চাচা।তুই নাকি কোন মেয়েকে নিয়েও কি সব বলছিলি??কিরে প্রেমে টেমে পরলি নাকি??আরে বল বল আমিও শুনি কে সেই রমণী??
—এমন কিছুই না।এই সব ফালতু কথা বলিস না তো ভালো লাগে না এই সব।
—যা বলব না।তবে শুন চাচ্চু তোকে আজ নিচে ডাইনিংয়ে দেখতে চায়।আসলে আজ নাকি তার প্রিয় বন্ধু আসবে। তার মেয়ে কিছু দিন থাকবে এখানে।হল পেলেই চলে যাবে সে।উনার নাকি সিলেটে পুস্টিং হয়েছে তাই সেখানে যাবে।মেয়েটার মা নেই আর ঢাকায় অত্নীয়স্বজনও নেই তাই আমাদের বাসায় রেখে যাবে।যাই হোক চাচ্চু পরিবারের সকলকে দেখতে চায় তাই তুইও থাকবি।তা না হলে চাচ্চু রাগ করবে।
—আচ্ছা।
.
অভ্র বুঝতে পেরেছে নিভ্র কিছু নিয়ে টেনশনে আছে তাই এত তাড়াতাড়ি আচ্ছা বলেছে তা না হলে তার সাথে দুই তিন বেলা কথা তো কাটাকাটি করতোই।অভ্র চলে আসে।নিভ্রের হয় তো একা থাকার টাইমের প্রয়োজন।
.
.
—বাবা প্লিজজজ তুমি এখানেই থেকে যাওনা।
—মারে থাকতে তো আমি তোমার চাইতেও বেশি চাই। কিন্তু কিছু করার নেই যেতে হবেই। কেইসটা অনেক ইম্পরট্যান্ট। আর তোমাকে কিছুদিন ওখানে থাকতে হবে তারপর হল পেলে সেখানে চলে যাবে।
—বাবা আমি কিভাবে থাকব তোমাকে ছাড়া??
—আমি তো সব সময় তোমার সাথেই আছি মা। চিন্তা করবে না।এখন সব গুঁছিয়ে নেও।
.
সাফা মন খারাপ করে ব্যাগ গুছাতে থাকে।তার মোটেও ভালো লাগছে না আর একজনের বাড়িতে এভাবে অশ্রুিতার মত থাকতে।সে তো তাদের চিনেও না।তবুও থাকতে হবে।কিছুই করার নেই।তার সাথে সবাই কেমন ব্যবহার করবে?? এটা ভাবতেই তার ভয় করছে।অপরিচিত লোক তার একদম ভালো লাগে না।তার উপরে তারা নাকি অনেক বড় লোক মন্ত্রীর বাড়ি নাকি।তার ভয় লাগছে।কিভাবে না যানি তাকে গ্রহন করবে সবাই।
.
.
ব্যাগ হাতে সিএনজি থেকে নেমে পরে সরিক।মেয়ের এক হাত ধরে বিশাল বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।গেটের ভিতরে ডুকতেই সাফা অবাক হয়ে সব দেখছে।গেটের দুপাশে দুটি বিশাল গাছ রয়েছে একটা গাছ কৃষ্ণচূড়া আর একটা গাছ হলুদ রাধাচূড়া।গেট থেকে সোজা সরু পথ।পিছঢালা রাস্তা।দুই পাশেই মাঠ।এক পাশে বাগান আর এক পাশে সবুজ ঘাসের বুকে বেতের চেয়ার টেবিল।সাফা তার বাবার হাত ধরে দাড়িয়ে ভাবছে বাড়িটা এতো বড় তাহলে বাড়ির মানুষ গুলোর মন টাও কি এত বড় হবে??হলে হবে না হলে নাই তার কি কিছুদিন পরে তো সে হল পেলেই চলে যাবে।একটু কষ্ট করে থাকতে হবে আর কি।
.
নিভ্র আজ হসপিটালে গেলো না।তার বাবা বলেছে বাসায় থাকতে তাই যেতে পারবে না।কফির মগ হাতে সে তার রুমের সামনের বারান্দায় দাড়ায়।কানে তার মোবাইল।হসপিটালের রোগীদের অবস্থা কেমন সে জানতে চাচ্ছে।হঠাৎ গেটের দিকে চোখ যেতেই সে বিরক্ত হয়।সকাল থেকেই সাফা তার স্বপ্নে এসে রুমে এসে নানা ভাবে বিরক্ত করছে।বুঝতেই পারছে না।কি করবে।নিভ্র এবার রেগে গেলো।এটা আবার তার মনের ভুল ভেবে সে রেলিং থেকে সরে এলো।মেয়েটাকে দেখলেই মনের ভিতর ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দৌড়ে বেড়ায়।কিছুই বুঝতে পারছে না হচ্ছেটা কি।তার সাথে।
.
সাফা আর তার বাবা ঘরে ডুকতেই অবাক হয়।বাড়ির প্রতিটা লোকই প্রায় উপস্থিত। সাখাওত এগিয়ে এসে সারিককে জাপ্টে ধড়ে।সাফা অবাক হয়ে দেখছে।ইফতেখার এগিয়ে এসে বলে…..
—ভাই কেমন আছেন??
—ভালো ভাবি।ও আমার মেয়ে।সাফা(সাফাকে দিখিয়ে)
.
সাফা এগিয়ে এসে সালাম দেয়।ইফতেখার তাকে জড়িয়ে নেয়।সাফা যেনো হতভম্ভ। এতটা আপন করে নিবে এটা সে ভাবতে পারেনি।সেও জড়িয়ে ধরে।মায়ের কথা মনে পরে তার খুব করে।ইফতেখারের গায়ে যেনো সে মায়ের গন্ধটাই পাচ্ছে।সবাই এক এক করে তার সাথে কথা বলেছে।দুপুরে খেয়েই তার বাবা সিলেটের উদ্যেশে রওনা হবে।সাফাকে দেখে রাফা এগিয়ে এসে বলে……
—সবার সাথে পরিচিত হয়েছ কিন্তু আমার সাথে আর ভাইয়াদের সাথে এখনো হলে না যে??আচ্ছা আগে আমি নিজের পরিচয় দি।আমি রাফা তোমার বড় কিন্তু অনেক তাই রাফা আপু বলে ডাকতে পারো।আমি তুমি করেই ডাকবো।আর ওই যে আসছে উনি আমার অভ্র ভাইয়া।তোমাদের ভার্সিটির টিচার।
.
রাফার ইশারা দেখে সাফা অভ্রর দিকে তাকায়।অভ্র এবং সাফা দুজনেই অবাক হয়।কিন্তু সাফা মনে মনে ভয় পাচ্ছে যদি অভ্র বলে দেয় যে অভ্রকে ও ফেলে দিয়েছে তবে কি হবে??তাকে তো এই বাড়ির সবাই সাথে তার বাবাও উড়াধুনা দিবে…!! 🙄কথাটা ভেবেই সাফা চোখ নামায়।অভ্র অবাক হলেও তার ভালো লাগছে সাফাকে দেখে।অভ্র ওদের সামনে এগিয়ে আসে।রাফা সাফার গাল টেনে বলে…..
—তুমি কিন্তু ভাড়ী মিষ্টি মেয়ে।কি কিউট একদম গোলুমোলু..আর চোখগুলো কি সুন্দর নীলাভ। যেনো নীল আকাশ তোমার চোখে।ইশশশ্
.
রাফার কথায় সাফা লজ্জা পাচ্ছে।কেউ তার এভাবে প্রশংসা করলেই তার লজ্জা পায়।যদিও সে বাহিরে খুব চঞ্চল কিন্তু বড়দের সামনে খুবই ভদ্র মেয়ে।সাফা ভয়ে আছে কখন না যানি তার কথা অভ্র বলে দেয় আল্লাহ মালুম। সাফা সরে আসতে চাইলে রাফা তাকে ধরে বলে…….
—কোথায় যাচ্ছ মিষ্টির দোকান!! আমাদের সাথে তোমাকে থাকতে হবে বুঝলা??আচ্ছা আমাকে তোমার কেমন লেগেছে??সত্যি কথা বলবে??
.
সাফা অবাক রাফার এমন মিশুক ব্যবহারে।সে ভাবতে পারছেনা বড় পরিবার এত সুন্দর হয়।তার এমন পরিবার ভালো লাগছে।সবাই কত আপন হয়ে থাকে।কি সুন্দর মিলে মিশে থাকে।সাফা জবাব দেয়….
—আপনিও খুব ভালো আপু।আমার অনেক ভালো লাগছে।আসলে আমি সব সময় একা থাকি।আপনাকে পেয়ে ভালো লাগছে।যে কয়েক দিন থাকবো একজন ভালো আপু পেয়ে গেলাম।ভালো হয়েছে না??
—ওয়াওও তোমার ভয়েসও তো খুব মিষ্টি। তোমাকে তো আমি সব সময় আমাদের বাসায় রেখে দিব মিষ্টির দোকান।(বলেই হেঁসে দেয়।সাথে সাফাও হাসে।)
.
অভ্র তাকিয়ে দেখে।মেয়েটা যেখানে যায় হাসির ভান্ডার নিয়ে হাজির হয়।ক্লাসেও সবাই হাসে ওর কথা শুনে।বাচ্চা মেয়ে।ইফতেখার এগিয়ে এসে বলে…..
—রাফা তোমার পাশের রুমটা সাফার। ওকে নিয়ে যাও ফ্রেশ হয়ে আসুক।হাত মুখ ধুয়ে।
—কাকি মা আমার রুমে মিষ্টির দোকান থাকলে কি হবে???
ইফতেখার অবাক হয়ে বলে….
—মিষ্টির দোকানটা কে??
—এই বাচ্চা মেয়েটাই মিষ্টির দোকান।

ইফতেখার মুচকি হাসে।সাফা অবাক হয়ে দেখে এই হাসি সে কথায় যেনো দেখেছে।কার সাথে যেনো খুব মিল আছে।সাফা অদ্ভুত ভাবে দেখছে ইফতেখারের হাসিটা।ইফতেখার বলে…..
—তোর সাথে ঘুমালে মেয়েটা আলু ভর্তা হয়ে যাবে।যেভাবে তুই জাপ্টে ধরস। থাক মা ও আলাদা থাকুক তা ছাড়া ওর ও হয় তো আলাদা থাকার অভ্যাস। বুঝলে।
.
সাফা একবার বলতে চেয়েছে রাতে ঘুমাতে তার ভয় করে। যদিও মাঝে মাঝে। তখন সে বাবার কাছে ঘুমায়।এখন কোথায় ঘুমাবে ভাবছে।আবার আলুর ভর্তা হওয়ার কথা শুনে সে আর বললো না।রাফার সাথে ঘুমানোর কথাটা।সাফা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।অভ্র এগিয়ে এসে বলে…..
—তুমি যে এত চুপ থাকতে পারো আমি জানতাম না।

সাফা কথা না বড়িয়ে বলে…..
—দেখেন আমি আপনাকে ফেলে দিয়েছি এটা কিন্তু আপনি কাউকে বলবেন না।আমি কিন্তু অনেক বার স্যরি বলেছি।তাই আপনি যদি বলেন না তবে কিন্তু আমি….

অভ্র হতবাক এখনো মনে আছে এই মেয়ের।সে সাফাকে একটু ভয় লাগাতে চায় তাই বলে….
—বলে দিলে কি করবে শুনি??
—আবার ফেলে দিবো।
.
কথাটা বলেই সাফা মুখ ভেঙচি দিয়ে একপাশে হয়ে যায়।অভ্র হাসে।সিঁড়ির খটখট শব্দে সবাই তাকায় সিঁড়ীর দিকে।সাফার মনযোগ তার ব্যাগের দিকে।নিভ্র মোবাইলে কথা বলতে বলতে আসছে।সাখাওত সিঁড়ীর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে….
—আমার ছেলে নিভ্রনীল।
.
সাফা ব্যাগ থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়।নিভ্রও মোবাইল কানে নিয়েই তাকায়।সাফা যেনো ভূত দেখেছে এমন ভাবে তাকায়।নিভ্রকে সে মোটেও আশা করে নি।অভ্রকে তো শুধু ফেলেছে আর নিভ্রের সাথে আরো কি কি যে করেছে তার তো কোনো ইয়াত্তা নেই।তার উপর রাতেই চোর বলেছে।এখন কি হবে??সাফা একবার ঘরের দূরের দরজাটা দেখছে একবার নিভ্রের দিকে তাকাচ্ছে।সে যেকোনো সময় এক ভৌ দৌড় দিয়ে পালাবে এখান থেকে।তা না হলে এই দুই ছেলে মুখ খুললে তার উপর কি পরিমান যে ধুমধাড়াক্কা পড়বে সে ভাবতেও পাড়ছেনা।
.
.
#চলবে……….🍁
.
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন………🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here