এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ৪৯+৫০

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৪৯.
_______________________
—” আপনি এখানে কি করছেন??”
নিভ্র সাফার দিকে ঘুড়ে তাকায়।কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
—” তুমি উনাকে চিনো??”
—” হুম।কিন্তু আপনি এই লোককে চিনেন কিভাবে??”
নিভ্র ভারী অবাক হওয়া গলায় বললো,
—” লোকটাকে নয় মেয়েটাকে চিনি।মানে একদিন দেখা হয়েছে।আরিফের মামার মেয়ে টাইপের কিছু হবে। এটাই বলেছিলো সেদিন।”
সাফাও বেশ অবাক।পা গুটিয়ে বসে সাফা বেশ আগ্রহ নিয়ে বললো,
—” আপনারা একে অপরকে চিনেন??”
নিভ্র তাদের উত্তরের আগেই বললো,
—” তুমি এই লোককে কিভাবে চিনো??”
—” উনি বাবার ক্লাইন্ড হয়।”

দুজনেই বেশ আগ্রহের সাথে সামনে তাকিয়ে আছে।সামনের দুজন বেশ হেঁসেই ভিতরে ডুকে পড়ে।নিভ্র তীক্ষ্ণ সুরে প্রশ্ন করে,
—” আপনারা এখানে কেনো??”
ছেলেটা হাঁসতে হাঁসতেই বেডে বসতে নেয়।নিভ্র কপাট রাগ দেখিয়ে তার দিকে তাকায়।ছেলেটা লাফিয়ে সরে গিয়ে বললো,
—” স্যরি স্যরি। বসবো না। ভুল করে সেদিকে চলে গিয়েছি।আপনি থাকতে আপনার সাফারানীর ধারে কাছে যাওয়া মসকিল হি নেহি নামুনকিন হে এটা আমি জানি।”

নিভ্রর কৌতুহল বাড়ে।খুব মনোযোগী হয়ে সোজা হয়ে বসে সে।ছেলেটা পাশের টুল টেনে নিভ্রর সামনা সামনি বসে।মেয়েটাকে উদ্যেশ করে ছেলেটা বললো,
—” রুহি তুমি সাফার পাশেই বসো।”

রুহিও বেশ তড়িঘড়ি করে সাফার বেডে বসে।সাফা অবাকের চরম পর্যায়ে আছে।কে এই মেয়ে??রুহির মুখে বেশ হাসি লেগে আছে।সে মহা খুশি।মনে হচ্ছে খাজানা পেয়েছে সে।ছেলেটা নিভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
—” আমি সিফাত।”
নিভ্র হাত মিলালো না।চোখ সরু করে তাকিয়ে বললো,
—” আপনি যেই হন আমার কিছু যায় আসে না।কিন্তু কেনো এখানে এসেছেন তা বলেন।অত সময় নেই আমার।”

সিফাত বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—” আপনাকে যখনি কিছু বলতে যাই আপনার সময় থাকে না।এত আজব কেনো আপনি বলবেন??”
নিভ্র চট করে বললো,
—” আপনার সাথে আমার এটা প্রথম দেখা।তাই আপনার সাথে কথাও প্রথম।আর আপনি এমন ভাবে বলছেন মনে হয় অনেক আগের পরিচায় আমাদের??”
—” তা নয় তো কি।সেদিও আপনি এটাই বলেছেন সময় নেই।আজও বলছেন।আজব না??”
নিভ্র বিস্ময়ে তাকালো।সিফাত আবার বললো,
—” ভাই সেদিন তো বলেছেন যা চাইবো তাই দিবেন আর আজ একটু হাত মিলাতে দিলেন না??খুবই দুঃখজনক।”

নিভ্র কিছুক্ষণ ভাবলো।হুট করেই উঠে জাপ্টে ধরে সিফাতকে।টাল সামলাতে না পেরে পিছনে ঠেস দিয়ে বসে সিফাত।সাথে সাথেই হেঁসে ফেলে।সাফা ভ্রুকুঁচকে অদ্ভুত নয়নে এই দৃশ্য দেখে।রুহি হাসিতে গদগদ হয়ে সাফার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” আমরাও একজন আর একজনকে জড়িয়ে ধরি!!”

সাফা হা করে তাকিয়ে আছে।রুহি সাফার কাছে এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে নিয়েছে।সাফাও হালকা ধরে কিন্তু তার মাথায় কিছুই আসছে না।সিফাত হাঁসফাঁস করতে করতে বললো,
—” ভাই ছাড়েন এবার।দম বন্ধ হয়ে আসছে।আপনার এই বডি আল্লাহ!!”

নিভ্র হেঁসে ছেড়ে দিলো।সিফাত জোড়ে জোড়ে কিছু দম ফেলে বললো,
—” আপনার ভালোবাসা আসলেই ভয়ংকর। বাপ রে।”
নিভ্র হেঁসে বললো,
—” আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না।আপনার জন্যেই আমি আমার সাফারানীকে পেয়েছি।থ্যাংক্স।”
—” আরে ধন্যবাদ আমাকে না আপনার হবু শ্বশুরকে দেন। তিনিই আপনাদের আবার এক হতে সাহায্য করেছে।”
নিভ্র অবাক।সাফা চেঁচিয়ে বললো,
—” বাবা!!”
—” হ্যা আপনার বাবা।আসল কাহিনিটা হলো আমি একজন মডেল।ছোট খাটো মডেল তাই নিভ্রনীল আমাকে চিনেনা।আমি খবরের কাগজে ছবি দেখেছি সাফার। অনেক দিন পুরানো কাগজ দেখেছিলাম।ভাগ্য ক্রমে সেদিনই আপনার বাবা সাথে আমার দেখা।একটা জমির ব্যাপারে কথা ছিলো।আঙ্কেলের সাথে কথা বলে রাস্তা ক্রশ করতেই তিনি সেন্সলেস হয়ে পড়ে।আপনাদের বাসাই নিয়ে যাই আর আপনাকে দেখেই আমার ছবির কথা মনে পড়ে।আপনার বাবাকে সব খুলে বলি তিনিই বলেছে নিভ্রনীলের সাথে যোগাযোগ করে আপনাদের মিলিয়ে দিতে।দুজনের মাঝে কোনো এক কারনে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।আপনি তাকে ছেড়ে এসেছেন।এখন নিভ্রনীল আপনাকে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে।এ দেখে বুঝা যায় আপনাকে তিনি কতটা ভালোবাসে।এটা আপনি না বুঝলেও আপনার বাবা বুঝেছেন। নিভ্রনীলের পার্সোনাল নাম্বার খুঁজতে আমার অনেক সময় লেগে যায়।তারপর রুহি বলেছে তার ভাইয়ের স্যার হয় নিভ্রনীল। তারপর আরিফ ভাই থেকে আপনার নাম্বার জোগার করে আপনাকে কল করলাম।ব্যস কাহিনী শেষ।তবে শেষ হলো না।নিভ্রনীলের আকুলতা আর মারিয়া ভাব আমাকে হসপিটাল অবদ্ধি টেনে নিয়ে এসেছে।এতটা ভালোবাসে সে আপনাকে আমি একদিন কথা বলেই বুঝলাম আর আপনি এত সময়েও বুঝলেন না??”

সাফা মাথা নিচু করে।চোখে ভর করে কান্না।সত্যিই সে বোকার মত কাজ করেছে।তার নিভ্রকে ছেড়ে আসা উঁচিত হয় নি।কিছুতেই না।অপরাধী লাগছে নিজেকে।রুহি বিরক্তি মুখে বললো,
—” আরে তুমি জানো না।এই মেয়ে কতটা ভালোবাসে নিভ্রনীলকে।তাই তো ডায়রির ভাঁজে নিভ্রর ছবি রেখে দিয়েছে।আর সমুদ্রের পারে বসে সেই ছবির সাথে সে কত আলাপ করেছে।আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না!!”

সবাই এবার রুহির দিকে তাকায়।সাফা বেশ অবাক।ভালো ভাবে রুহিকে পর্যবেক্ষণ করছে সে।আরে একে খুব চেনাচেনা লাগছে।কথাও তো দেখেছে কিন্তু মনে পড়ছে না।নিভ্রর আগ্রহ বারে খুব।সাফা নিজের ভালোবাসা কখনোই প্রকাশ করে না।সে জানে সাফা তাকে ভালোবাসে কিন্তু কখনোই তা দেখায় না।তাই নিভ্রর আগ্রহের মাত্রা বাড়ে।রুহি বেশ ভাবসাব নিয়ে বললো,
—” আরে মি.নিভ্রনীল আপনার মনে আছে আপনাকে বলেছি আমি কোথাও দেখেছি আপনাকে??”
নিভ্র চোখ ছোট করে জবাব দেয়,
—” হুম।”
—” আপনি তো শুনলেন না।উল্টা আমাকে ধমকে চলে গেলেন।কষ্ট😔😔যাই হোক আসল কথায় আশি।কক্সবাজারে এসে সমুদ্রের পাড়ে এই সাফাকে আমি অনেক সময় এই একটা ছবি হাতে বসে থাকতে দেখেছি।বিষন্ন চেহারায়।আগ্রহ নিয়ে সামনে যেতেই সে ছবি উনি ডায়রীর ভাঁজে লুকিয়ে ফেলে।কিন্তু ধাক্কা লেগে আবার সে ছবি পড়ে যায় আর আমি দেখে ফেলি।যখন আপনাকে দেখি তখন বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার ভালো করে মনেও ছিলো না আর আপনিও কিছু শুনলেন না।পরে সিফাত বললো বলে আবার মনে পরলো।যদিও সাফাকে আমি চিনতাম না।সিফাত ছবি দিলো।আপনার ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো।ব্যস সব সেট।আমারও আপনাদের এক সাথে দেখার খুব আগ্রহ ছিলো তাই দেখা করতে চলে এলাম।”

নিভ্র সাফার দিকে একবার তাকালো।তারপর তাদের উদ্যেশে বললো,
—” আপনারা একে অপরের কি হন??”
সিফাত লজ্জা লজ্জা ভঙ্গি নিয়ে বললো,
—” ও আমার গার্লফ্রেন্ড। ”

নিভ্র হালকা হাসলো।ভাগ্য বরই বিচিত্র।কত অদ্ভুত ভাবে তাদের আলাদা করেছে আবার অদ্ভুত ভাবে মিলিয়ে দিয়েছে।নিভ্র সিফাতের কাঁধ চাপড়ে বললো,
—” গার্লফ্রেন্ড লিস্টে রেখে লাভ নেই ভাই।বউ বানাও।তা না হলে অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহিনতায় ভুগতে হবে।”
সবাই হেঁসে উঠে।সাফা গভীর ভাবে তার বাবার কথা ভাবছে কতটা ভালোবাসে বাবারা কিন্তু মুখে কখনোই তা প্রকাশ করে না।আসলেই বাবাদের সাথে কিছুর তুলনা হয় না।সামনে না থেকেও পিছন থেকে ভালোবাসে।বাবা তো বট বৃক্ষের মত। ফল দেক বা না দেক ছায়াঁ আর আশ্রয় দিয়ে সব কিছু থেকে বাঁচিয়ে রাখাই তার কাজ।যার নেই শুধু সেই বুঝে সে কি হারিয়েছে।সাফা দীর্ঘশ্বাস নেয়।সবাই মিলে গল্প করা শুরু করে।
______________________
নিভ্ররা কক্সবাজারেই আছে।সাফাদেরকে একসাথে নিয়েই ফিরবে তারা।সাফার বাবার কিছু অতি গুরুত্বপূর্ন কাজ আছে।তাই তাদের আরো কিছু দিন এখানে থাকতে হবে।নিভ্রকে বাসায় নেওয়ার পর থেকে সাফাকে সে খুব কম সময় নিজের সাথে পায়।সাফা তার বাবার সাথেই থাকে।আর নিভ্র নিজের পরিবারের সাথে।রাজিব,মাহবুব আর সাখাওত চৌধুরীরা ঢাকায় চলে গেছে।সবাই কাজে ব্যস্ত।ঢাকায় গিয়ে নিভ্র আর সাফার বিয়ের তারিখ ঠিক করবে সবাই মিলে।নিভ্র একদম সময় নষ্ট করতে চায় না।

নিভ্র নিজের রুমে পায়চারি করছে।সন্ধ্যা থেকে সাফার ফোন অফ। নিভ্রর মনে হয় প্রতি সেকেন্ড তার সাফাকে প্রয়োজন।ভয়।ভয় জিনিটা খুবই খারাপ।নিভ্রর মনে এই খারাপ জিনিসের প্রকট বেশি।তার এখন সব সময় ভয় হয়।সাফাকে হারানোর ভয়।এত ভয় তার কেনো হয় তা সে জানে না।তবে হয়।নিভ্র আবার কল করলো এবারো সেই বিখ্যাত মহিলার সুরেলা কন্ঠ ভেসে এসেছে। যা এতটাই বিরক্তি কর যে নিভ্র নিজের ফোন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।তবে ভাগ্য ক্রমে তা বিছানার উপড়ে পড়েছে।

রাত ১১টা ছুঁই ছুঁই। সাফা এত সময় পরে নিজের ফোন খুলেছে।আজ অভি এসেছে তাদের বাসায়।থাকবে কিছু দিন।সাফাদের সাথে ফিরবে।ঝুমাকে বিয়ে করতে চায় সে।তাই সাফার বিয়ের পরে বা আগে ঝুমাকে বিয়ে করবে। চাকরি পেয়ে গেছে অনেক আগে।অভিই বিরক্ত হয়ে সাফার ফোন বন্ধ করে রেখেছে।সেই কখন থেকে দেখছে এক ঘন্টা পর পর নিভ্র কল করছে তাই বিরক্ত হয়ে সে ফোন অফ করেছে।তারা এত সময় গল্প করে এখন খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে যাচ্ছে। সাফা ফোন অন করতেই নিভ্রর কল।সাফা কল রিসিভ করতেই নিভ্র চেঁচিয়ে বললো,
—” দরজা খোলো!!”
সাফা অবাক হয়ে বললো,
—” আমাদের ঘরের দরজা খুলে আপনার কি হবে??”
নিভ্র বেশ রাগি গলায় বললো,
—” কারন আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।তাড়াতাড়ি খোলো।”
সাফা চারপাশে একবার চোখবুলালো।বেশ ভয় আর অবাকতা নিয়ে সে দরজা খুলে দিলো।নিভ্র দাঁড়িয়ে আছে।সাফার বিশ্বাসই হচ্ছে না।নিভ্র বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।কারন নিভ্র বাহিরে দাড়িয়ে থাকে না সোজা ব্যালকুনি বেয়ে রুমে চলে আসে।কিন্তু আজ দাঁড়িয়ে আছে।অবাক করা ব্যাপার।নিভ্র সাফার হাত টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।দরজা টেনে সাফাকে কোলে তুলে হাটাঁ দেয় সিঁড়ির দিকে।সাফা হা করে তাকিয়ে আছে।নিভ্র সাফাকে বিরক্তির সহিত বললো,
—” সামনের চুলগুলো সরিয়ে দেয়ও তো!!”

সাফা ডান হাত দিয়ে নিভ্রর কপালে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে দিলো।নিভ্র সিঁড়ি বাইছে তো বাইছেই।সাফাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিভ্র বললো,
—” ব্যালকুনিতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা গল্পে বিজি ছিলে তাই বাহিরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আর বাসায় মেহমান আছে এটা বললেই হতো।ফোন অফ করার কি আছে??টেনশন হয় যানো তো!!”

সাফা আগের মতই বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললো,
—” আপনি এই নিয়ে কতসময় দাঁড়িয়ে আছেন??মানে কখন এলেন??”
—” সে অনেক সময়। বাদ দেও।”
—” ছাদে কেনো নিচ্ছেন??”
—” ছাদে কেনো নিচ্ছি মানে কি??আমার ইচ্ছা আমি নিচ্ছি ব্যস।”
—” এটা আমার বা আপনার বাসা না এটা একটা ভাড়া বাসা।অনেক মানুষ এখানে থাকে।কেউ কিছু বললে বা দেখলে তখন কি হবে??”

নিভ্র অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
—” কিছু বলবে মানে?আর দেখলে দেখুক।নিভ্রনীলকে কিছু বলবে এটা আদো পসিবল বলে তোমার মনে হয়??নো চান্স।চিললল বাবু।”

সাফা রাগি গলায় বললো,
—” কয়বার বলেছি বাবু ডাকবেন না।আমি কি বাবু নাকি??আজব।”

নিভ্র হাঁসে কিছু বলেনা।সাফার এমন কুঁচকানো মুখ, গালের সেই ভয়ংকর টোল তার দেখতে বরাবরি ভালো লাগে।সে দেখতে ভালোবাসে।তাই সে সাফাকে বিরক্ত করতে চায়।কিন্তু সাফা আগের মত আর চঞ্চল নেই।এটা নিভ্রর খুব খারাপ লাগে।তার তো চঞ্চল সাফাকেই বেশি ভালো লাগতো।পরক্ষনেই আবার ভাবে সাফা তার কাছে থাকলেই হবে।সেটা যেভাবেই থাকুক।নিভ্র আর একটু জড়িয়ে সাফাকে কোলে নেয়।

সাফা বসে আছে ছাদের ফ্লোরে। আর নিভ্র সাফার কোলে মাথা রেখেছে।সাফা বসে বসে নিভ্রর চুলে বিলি কাটঁছে।নিভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।ঠান্ডা বাতাস হচ্ছে। পাশেই সমুদ্র।সমুদ্রের ঢেউয়ের উত্তাপের শব্দ হচ্ছে। সেই শব্দে চারপাশ মোহনীয় হয়ে উঠেছে।সাফার মাথার কাপড় উড়ছে।নিভ্র উঠে বসে।সাফার মুখের দিকে তাকায়।সাফা ও তাকায়।চোখে চোখে দৃষ্টির মিলন হয়।নিভ্র সাফার কাছে এসে বললো,
—” তোমার চুল আগের থেকে অনেক বড় হয়েছে সাফা।”
সাফা হাঁসে কিছু বলে না।নিভ্র সাফার মাথার উড়না সরিয়ে বেণী করা লম্বা চুলগুলো সামনে এনে হাত বুলিয়ে দেয়।একটা চুমু খায়।আবার সরিয়ে দেয়।মাতাল করা ঠান্ডা চোখে সাফার দিকে তাকায়।একটু কাছে এগিয়ে এসে নেশাতর কন্ঠে শীতল গলায় বললো,
—” সাফারানী একটা চুমু খাই??”
সাফা বিষম খেলো।চোখের পাতা বার কয়েক ফেলে বড় বড় চোখে নিভ্রর দিকে তাকালো।নিভ্র ঠোঁট কামড়ে হাঁসে।চোখেমুখে দুষ্টুমি ভাব।সাফা বুঝেও না বুঝার ভাবে নিয়ে বললো,
—” সেটা তো আপনি যখন তখনই দেন।দিয়ে দেন।কপাল বাড়ালাম।”
নিভ্র আর একটু কাছে এসে চুল কানের পাশে গুঁছিয়ে দিতে দিতে বললো,
—” আরে আজ কপালে না অন্য গভীরতায় চুমু দিবো।”
সাফা নিভ্রকে ঠেলে পাশে ফেলে নিভ্রর বুকে কয়েকটা ঘুষি দিয়ে বললো,
—” হার্টের সাথে সাথে আপনার চরিত্রও দূর্বল হয়ে পড়েছে মনে হয়।যান ভাগেন।”
নিভ্র শব্দ করে হেঁসে উঠে আবার বসে। সাফাকে এক হাতে জড়িয়ে বলে,
—” মজা করছিলাম।এত হাইপার হওয়ার কিছু নেই কুল।”
সাফা নিভ্রর বুকের একপাশে মাথা করে।গভীর ভাবে নিভ্রর বুকের ধুকপুকুনির শব্দ শুনে।নিভ্র সাফার মাথায় উড়না পরিয়ে দিতে দিতে ক্ষীণ কন্ঠে বলে,
—” ভালোবাসি।”
সাফা প্রতিবারের মতই নিরব হয়ে সেই মধুর কথা শুনে।চারপাশের পরিবেশের সাথে মিশে কথাটা এক মাতাল করা সুরে রূপ নিচ্ছে।সাফা বললো,
—” আবার একবার বলবেন??”
নিভ্র সাফাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে আবার বললো,
—” ভালোবাসি আমার সাফারানীকে। খুব খুব খুব বেশি।”

দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে বাতাসের ঘ্রাণ নেয়।শুনে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।গভীর রাত চলে।সব দিকে নিরবতা।কিন্তু দুটি মন উষ্ণতায় এক হয়ে আছে।সাফা এক পাশে বসে আর নিভ্র অপর পাশে।সাফার চোখ চাঁদের দিকে।আর নিভ্রর চোখ সাফার দিকে।নিভ্র একবার চোখ বুজে আবার খোলে।সাফাকে তার মনে হচ্ছে সে সব জায়গায় দেখে।চোখ বন্ধ করলেও চোখ খুললেও।নিভ্রর নিঃশ্বাস দ্রুত চলে।সাফার হাত ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,
—” অনেক দিন পরে আজ একটা ছন্দ মাথায় ঘুড়ছে শুনবে??”
সাফা গভীর চোখে নিভ্রর দিকে তাকায়।মিনমিনে গলায় বলে,
—” আপনার সব কথা শুনতেই আমার ভালো লাগে।আর আপনার ঠান্ডা গলায় কথা গুলো বরফের মত শীতল।আর হাওয়ার মত প্রাণবন্ত। তাই আমি সারা জীবন আপনার মুখ থেকে বেরিয়ে আশা সব কথা শুনতে চাই।অনুভব করতে চাই।বলেন।”
নিভ্র সাফার হাতটা নিজের হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ভাঁজে নেয়।হালকা হেসেঁ নিভ্র বললো,
—” 🍁
প্রেম নামক ভয়ংকর পিড়ায় আমি দগ্ধ
তোমার সৃষ্ট আগুনে আমি বিষাক্ত
মুক্তি চাই আমি সকল কষ্টের অবসান ঘটিয়ে
বাড়িয়ে নেও তোমার দুহাতে আমাকে আগলে।”

সাফা নিভ্রকে জাপ্টে জড়িয়ে নেয়।নিভ্র হাঁসে।সাফার কোমড় জড়িয়ে তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
—” ভালোবাসি।তাই ভয়ে থাকি।তুমি হিনা আমি নিঃশ্ব সাফারানী।তোমাকে ছাড়া আমার দমবন্ধ লাগে।তোমাকে ছাঁড়া আমি বাচঁতে পারবো না।তোমাকে ছাড়া আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো সাফারানী।”

সাফা মাথা তুলে তাকায়।নিভ্রর নিঃশ্বাস তার চোখে মুখে বাড়ি খায়।সাফার নীলাভ চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে।চোখে অশ্রু ভরা।একটু ছুঁয়ে দিলেই টপকে পড়বে।সাফা নিভ্রর দু’গালে হাত রাখে।চোখে চোখ রেখে বলে,
—” আমি তোমাকে ছাঁড়া বাচঁবো না এটা তো অনেকেই বলে। খুবই কমন কথা।আপনি তো অনকমন। সবার থেকে আলাদা।আমার ডাক্তার।আমার ভিলেন। আমার মডেল-ফডেল। একান্ত আমার নিভ্র।আপনি সবার মত কেনো বলছেন??আপনার তো আলাদা হওয়া উঁচিত।”

নিভ্র কিছু বুঝলো না।সবুজ চোখে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে সে।সাফা ছোট কিছু শ্বাস ফেলে আবার বললো,
—” আপনার তো বলা উঁচিত ভিন্ন মাত্রায়।আপনি না হয় আলাদা ভাবে বললেন আমি তোমার জন্য বেচেঁ থাকবো।ভালোবাসলে সবাইকে রোমিও হতে হয় না। সে ইতিহাসে নিজেকে প্রমান করেছে।আপনি কেনো সে হতে চাইবেন??আপনি হবেন নিভ্র।ভালোবাসা মানুষকে বাচঁতে শিখায়।তাহলে কেনো আপনি আমি হিনা মরে যাবেন??আমার কিছু হলেও আপনি বেচেঁ থাকবেন।নিজেকে শক্ত রাখবেন। কারন আমার অস্তিত্বের কিছু হলেও আমাদের ভালোবাসা ঠিক থাকা চাই।আমি নাই তো আপনার মাঝে বেচেঁ থাকবে আমাদের ভালোবাসা।ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখাই প্রেমিক প্রেমিকার কাজ।বুঝলেন??”
নিভ্র বুঝতে চাইলো না।তাই নাছোড়বান্দার মত বললো,
—” এসব কথা বলার মানে কি??ছাড়ো এসব।কত রোম্যান্টিক একটা পরিবেশ।আর তুমি আছো আজগোবি কথা নিয়ে।চুপ করো তা না হলে আমার কাছে অন্য রাস্তা আছে চুপ করানোর।”
কথাটা বলেই নিভ্র চোখ মারে।সাফা রেগে সরে গিয়ে নিভ্রর সামনের চুল টেনে বললো,
—” এই আপনি মদ, সিগারেট, গাঁজা,ইত্যাদি ইত্যাদি খাওয়ার সাথে সাথে পবিত্র চরিত্রটাও খেয়ে ফেললেন নাকি?? কি সব বলছেন??দুর হন।নির্লজ্জ একটা।”
নিভ্র হেঁসে চুল সরাতে সরাতে বলে,
—” প্রেমিক মানুষকে একটু নির্লজ্জ হতে হয় বাবু। সবই প্রেমের লিলা খেলা।”
সাফা নিভ্রর হাতে জোড়ে জোড়ে ঘুষি দেয়।নিভ্র সাফার দু’হাত ধরে হাঁসতে হাঁসতে বললো,
—” তোমার এই ধুম ধাম মারামারির রোগ হলো কিভাবে বলবে?? হাতটাও কত শক্ত করে ফেলেছো।
বলেই নিভ্র নিজের চাপা দাড়িতে সাফার হাত ঘোঁষতে লাগলো।এমন কান্ডে সাফা হেঁসে দেয়।
.
.

#চলবে________________

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

®হাফসা_________________

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৫০.
___________________
সাফা বসে আছে অভ্রর সামনে।ভয় ভিতী আর এক অজানা জড়তা কাজ করছে সাফার মাঝে।অভ্রর ফিলিংস জানার পরে সাফার আর আগের মত অভ্রর সাথে ফ্রি ভাব আসে না।আগে যেমন মজা আর হুল্লুর করতে ইচ্ছে হত তা এখন আর করে না।অভ্র আজ সকাল সকালই সাফাকে তার সাথে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলেছে।তখন থেকেই সাফার হাঁসফাঁস লাগছে।সব জানার পরে সাফা সেভাবে অভ্রর মুখামুখি হয় নি।নিভ্র সব জানার পরে কখনই সাফাকে বা অভ্রকে এসব নিয়ে কিছু বলে নি।কিন্তু আজ এভাবে সামনাসামনি বসে থাকতে সাফার প্রচন্ড জড়োতা কাজ করছে।সাথে এক অদ্ভুত অনুভুতি।আগের মত হেঁসে হেঁসে চোখে চোখ করে কথা বলতে পারছে না কেউই।সাফা নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাচ্ছে।আর অভ্র পাশের কাঁচের দেয়াল দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ভাবছে কিভাবে কথা শুরু করবে।কিন্তু কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।ছাত্রী স্যারের সেই সম্পর্কও এখন আর তাদের মাঝে নেই।তার সাথে আবার…. তাই কেনো যেনো অসস্তি হচ্ছে।অনেকসময় নিয়ে দুজনেই চুপ করে নিজেদের জায়গায় বসে ছিলো।অভ্র পাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে বললো,
—” কেমন আছো সাফা??”
সাফা চমকে তাকালো।হঠাৎ করেই প্রশ্নটা করেছে যে সে হকচকিয়ে গেলো।ভালো করে বুঝতেও পারলো না।তাই বললো,
—” স্যরি স্যার বুঝলাম না।”
অভ্র সোজা হয়ে সাফার বরাবর বসল।তারপর আবার বললো,
—” কেমন আছো জিজ্ঞেস করেছি??”
সাফা মিনমিনে গলায় বললো,
—” ভালো স্যার।”
দীর্ঘ করে কিছু নিঃশ্বাস ফেলে অভ্র বললো,
—” দেখো যা হওয়ার হয়েগেছে। আমি তেমন ভণিতা করে কথা বলতে পারিনা।আমি আর নিভ্র এক কথায় সমবয়সী টাইপের।ওকে আমি নিজের বোনের চেয়েও বেশি ভালোবাসী।ওর প্রতি ভালোবাসার আমার কাছে কোনো বর্ণনা নেই।আর তুমি…

কথাটা বলেই অভ্র থামলো।গলায় কেমন যেনো আঁটকে আছে কথাটা।সাফা এবার আগ্রহের সাথে মনোযোগী হলো।নিভ্র একটু থেমে বললো,
—” তোমার প্রতি আমার যে ফিলিংস আছে তা একান্ত নিজের।আমি চাইনা এগুলো নিয়ে নিভ্র কখনোই কষ্ট পাক।ব্যাপারটা নিভ্রর সাথে জড়িত না হলে আমি কখনোই হয় তো তোমাকে আলাদা ভাবে দেখার চেষ্টা করতাম না।নিভ্র আমার কাছে সব কিছুর উর্ধ্বে। ওর সব কিছু আজীবন আমাকে দিয়ে এসেছি।তাই আমি ওর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসে কখনোই চোখ দিতে চাই না।কিন্তু সবই ভাগ্য।ভালোবাসা বলে আসেনা কথাটা কতটুকু সত্য তা আমি বুঝে গেছি।তাই এতে আমার হাত নেই।কিন্তু তবুও আমি দুঃখীত তোমাদের এত দিনের দূরত্বের জন্য।শত হোক আমি কিছুটা হলেও দায়ি।”
সাফা চট করেই বললো,
—” না স্যার।আমিও দোষি।ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে আসা আমার উঁচিত হয়নি।”
নিভ্র নিচে থেকে চোখ তুলে সাফার দিকে একবার তাকায়।মুচকি হেঁসে বলে,
—” নিভ্রকে খুব ভালোবাসো না??”
সাফা আমার অপ্রস্তুত হয়ে পরে।মাথা নামিয়ে নেয়।অভ্র হাঁসে। তারপর বলে,
—” ওকে সব সময় এভাবেই ভালোবাসবে।তোমাকে এতটাই ভালোবাসেছি যে নিভ্র না থাকলে আমি সত্যি তোমাকে ছাড়তাম না।হ্যা নির্লজ্জ মনে হতেই পারে তবে এটাই সত্য।শুধু নিভ্রর সাফা বলেই অভ্র পিছিয়ে এসেছে।আমি তোমাকে ছাড়া বেচেঁ থাকতে পারবো।কষ্ট একটু হবেই।সবাই বিরহে কাতর হয়।আমিও হয়েছি আরো হবো।কিন্তু নিভ্র??সে তোমাকে ছাড়া বাচঁবে না।তোমাকে ছাড়া ওর নিঃশ্বাস বন্ধের মত অবস্থা হয়।আমি কখনোই চাই না নিভ্রর জীবনে আবার কখনো এমন পরিস্থিত আসুক।তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কিছু বছরের।কিন্তু নিভ্রর প্রতি তা যুগের।তাই ওকে আমি খুবই ভালোবাসি।ও নিজেও আমাকে অনেক ভালোবাসে।যদিও মুখে শিকার করে না।আমি চাই না আমার জন্য তোমাদের মাঝে কখনো কোনো সমস্যা হোক।”

অভ্র থামলো।টেবিলের উপড়ের পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে সব পানি এক নিমিষে খেয়ে নিলো।সাফা শুধু অবাক হয়ে ভাবছে।এত ভালোবাসা এদের দুই ভাইয়ের মাঝে যা তাকে ক্রমশ অবাক করে।নিভ্র জানে অভ্রর ফিলিংসের কথা অভ্রও যানে তাদের কথা।কিন্তু এ নিয়ে তাদের দু’জনের কোনো মাথা ব্যথা নেই।যে যার মত।এমনকি অভ্র যখন তাকে দেখা করতে বলেছে তখন নিভ্র তার সামনেই ছিলো। তাকে বলতেই সে সাফাকে রেস্টুরেন্টে দিয়ে গেলো।কোনো রাগ হলো না।কত গভীর তাদের ভালোবাসা কত বিশ্বাস একের প্রতি অপরের।সাফা শুধু অবাক হয়ে সব দেখে।যখন গল্প করতে বসে সাফা অসস্তিতে পরে।দূরে বসে থাকে কিন্তু নিভ্র আর অভ্র বিন্দাস গল্প করে মজা করে একে অপরকে নানা কথা দিয়ে খোঁচায়।সাফা তো এমন অনেক ভাইয়েদের দেখেছে এক ভাই আর এক ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ডকে জোড় করে বিয়ে করে।ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ডকে নিজের বউ করে।ভাইকে ধোঁকা দেয়।মারামারি করে।আবার যখন কেউ জানতে পারে তার বউকে বা তার গার্লফ্রেন্ডকে তার নিজের ভাইও পছন্দ করে তখন সম্পর্কে কত সন্দেহ কত ঝগড়া কত কিছু হয়।কিন্তু অভ্র আর নিভ্র সবার থেকে আলাদা। এদের আসলেই তুলোনা হয় না।অভ্র ভিতর থেকে কিছু দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বললো,
—” দেখো এখন কিন্তু আমি তোমার ভাশুর হবো তোমার জামায় থেকে আমি ছয় মাসের বড়।তাই ভুলেও আমাকে মার্বেল দিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে না।”

সাফা হেঁসে দেয়।অভ্র মাথা নিচু করে হাঁসে। সাফার হাসি সে দেখবে না।এটা তো নিভ্রর। তারই দেখার অধীকার।সাফার প্রতি ফিলিংসকে তো সে মারতে পারবে না।কিন্তু দুজনের মাঝে আলাদা সম্পর্ক তৈরি করা তো যেতেই পারে।তাই সাফার সাথে কথা বলা।সাফা অভ্রকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে চুপ করে যায়।অভ্র সাফাকে বললো,
—” তা কি খাবে বলো??”
—” খাবো না কিছু।”
—” আরে তা বললে হবে না।আমি কিন্তু তোমার বড় ভাশুর।আমার কথা তো শুনতেই হবে।”
সাফা হাঁসে। অভ্র ওয়েটারকে কিছু খাবার আর কফি দিতে বলে।
—” তা লেখাপড়া কেমন চলে??”
সাফা নিচু স্বরে বলে,
—” ভালো।”
—” এখনো ইংলিশকে ভয় পাও??”
সাফা রাগি চোখে তাকায়।তেজি গলায় বলে,
—” মোটেও না।আমি কখনোই ইংলিশকে ভয় পাই না।”
অভ্র ভারী অবাক হওয়ার মত বললো,
—” তাই!!”
—” হুম।আচ্ছা আপনারা দুই ভাই এমন ঘাসপুস নিয়ে পড়ালেখা কেনো করলেন বলেন তো??একজন ডাক্তার আর একজন ইংলিশের প্রফেসার।আপনাদের জন্য কি দেশে সাবজেক্টের অভাব পড়েছে নাকি??হুহ।”
অভ্র শব্দ করে হেঁসে ফেলে।মনে মনে খুশি হয়।সাফা আগের মত তার সাথে ফ্রি হতে পেরেছে এটাই অনেক।সে এটাই চেয়েছে তাই সাফার সাথে কথা বলতে চেয়েছে।অভ্র বললো,
—” তোমার কাছে ঘাসপুস মনে হয় কেনো??তুমি তো ইংলিশকে ভয় পাও না।”
অভ্র হাঁসে। সাফা রাগে কটমট করে মুখ বাঁকায়।
______________
বাহিরে এসে অভ্র সাফাকে তার বাসায় নামিয়ে দিতে চায়।কিন্তু সাফার নাকি কাজ আছে।অভ্র সেখানেও দিয়ে আসতে চেয়েছে।সাফা না করেছে।অভ্র কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে আসে।তারপর বলে,
—” আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা এমনই থাকুক আগের মত।তা না হলে নিজের কাছেই খুব অসস্থি লাগবে।আশা করি তুমি বুঝেছ।”
সাফা মুচকি হেঁসে মাথা নাড়ে যার অর্থ সে বুঝেছে।অভ্র আবার কিছু দূর যেতেই সাফা ডাকে।অভ্র পিছিয়ে আসে।সাফার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডান হাতে চশমা ঠিক করে।সাফা শীতল কন্ঠে বললো,
—” পৃথিবীতে সকল নারী পুরুষের জন্য আল্লাহ জুটি তৈরি করে পাঠায়।আমি শুনেছি ছেলেদের পাঁজরের হাড় দিয়ে তাদের জীবন সঙ্গীকে তৈরি করেছে।আমরা যে যাকেই পছন্দ করি„ ভালোবাসি„ বা পেতে চাই না কেনো!!পাবো না।যদি তিনি না চায়।আপনার জন্যও এমন কাউকে আল্লাহ বানিয়ে রেখেছে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।সেও আপনার জীবনে ঠিক সময়ে চলে আসবে।যাকে আপনার পাঁজর দিয়ে বানিয়েছে সে আসবেই। আজ না হয় কাল।কিন্তু আপনার জিনিস আপনারই থাকবে।আপনি নিজেই পাঁজরের সন্ধানে তার কাছে চলে যাবেন।হয় তো সে চলে আসবে।কিন্তু আসবে নিশ্চিত। তাই আপনিও জমিয়ে রাখুন।লুকিয়ে রাখুন।সব ভালোবাসা গোপনে রাখুন।সে যখন আসবে তখন যেনো আপনি শূন্য হাতে না থাকেন।তাকে যাতে উজাড় করে দেওয়ার মত বুক ভর্তি ভালোবাসা আপনার থাকে।

অভ্র গভীর মনোযোগী হয়ে সাফার কথা গুলো শুনলো।তারপর বললো,
—” দু’জনকে কি একজীবনে ভালোবাসা যায়??”
সাফা হেঁসে বললো,
—” হুম যায়।আপনি হয় তো আগের জনের মত করে পরের জনকে ভালোবাসতে পারবেন না কিন্তু হয় তাকে আগের জনের চাইতে বেশি বা কম বাসতে পারবেন।আর দ্বিতীয় কেউ যখন আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভালোবাসা হয়ে আসে তখন বুঝবেন আগের জনের চাইতে আপনি তাকেই বেশি ভালোবাসেন।আগের জনকে যদি আপনি বেশি ভালোবাসতেন হলে দ্বিতীয়জন আপনার কাছে অধীক গুরুত্বপূর্ণ হত না।আশি।”
অভ্র মোড় ঘুড়িয়ে গাড়িতে বসে।সাফার চোখের সামনে থেকে তার পালাতে ইচ্ছে করছে তাই দ্রুত গাড়ি চালিয়ে এখান থেকে সরে যায়।
________________________
সাফা রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাঁটছে।তার নিজেকে খুব হালকা লাগছে।কাউকে কষ্ট দিয়ে সর্বোচ্চ সুখ পাওয়া যায় না।সাফার মনেও একটা ভীতি ছিলো।কিন্তু অভ্রর সাথে কথা বলে এখন ঠিক লাগছে।রাস্তার পাশেই একটা পার্ক।পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে শুনে একটা মেয়ে বলছে,
—” আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”

সাফা চট করেই তাকালো।মেয়েটা ছেলেটার কাধে মাথা দিয়ে আছে।চেহারা দেখা যাচ্ছে না।সাফা হঠাৎ করেই এই কথাটা নিভ্রকে বলতে ইচ্ছে হলো।সাফা ফোন বের করলো।নিভ্রর ফোনে কল দিলো।নিভ্র সাফারানী লেখা দেখেই অবাক।সাফা এই প্রথম তাকে কল করেছে।নিভ্র চিন্তিত হয়ে কল রিসিভ করে বললো,
—” তুমি ঠিক আছো সাফা??”
—” হুম ঠিক আছি। আমাকে নিয়ে আপনার এত চিন্তা কিসের বলেন তো??এত চিন্তা করেন কেনো??”
—” এমনেই।তা আজ কি সূর্য নিজের গতি পথ পাল্টেছে নাকি??”
সাফা লাজুক হেঁসে বললো,
—” না।”
নিভ্র যেনো ও পাশ থেকেই বুঝতে পেরেছে।তাই বললো,
—” বাহ আজ দেখি লজ্জাও পাওয়া হচ্ছে। কেনো?? কেনো??বলো??”
সাফা কিছুসময় চুপ করে থাকে।নিভ্রর বুক হঠাৎই ধুকপুক ধুকপুক করে।সাফার চলন্ত নিঃশ্বাসের শব্দ তার কানে এসে লাগছে।সাফা ঠান্ডা গলায় নিচু স্বরে বললো,
—” মিস্টার ভিলেন!!”
নিভ্র কান খাড়া করে।অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে তার।সাফা আবার বললো,
—” মিস্টার মডেল-ফডেল!!”
নিভ্র নিঃশব্দে হাঁসে। সাফা অনেক সময় চুপ করে থাকে।কিছু নিঃশ্বাস ফেলে সাফা বললো,
—” আমি আপনাকে ভালোবাসি ডাক্তার।”
নিভ্র বসা থাকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।তার কান যেনো স্তব্ধ হয়েগেছে। সে ভাবতেই পারছে না সাফা নিজের মুখে এটা বলছে।নিভ্র বুক কাঁপে।খুশিতে উত্তেজনায়।কি বলবে খুঁজে পায় না।সাফা মুখ টিপে হাঁসে। তার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।দুজনেই চুপ করে আছে।নিভ্র বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সাফার কান গরম হয়ে উঠে।লাল হয় গাল।প্রথম ভালোবাসি বলার ফিলিংসটাই অন্যরকম। তার মনে হচ্ছে এটা এক কাঁপানো ফিলিংস।

সাফা ফোন কানেই রাস্তার পাশে দিয়ে হাঁটছে। আশেপাশের কিছুই তার নজরে পরছে না।নিভ্রর দ্রুত গতির নিঃশ্বাস সে নিঃশব্দে গুনছে।রাস্তার পাশ দিয়েই দ্রুত একটা বাইক সাফার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাফাকে প্রচন্ড জোড়ে ধাক্কা দিয়ে এক পাশে ফেলে দেয়।সাফা ছিটকে রাস্তার পাশে পড়ে যায়।তার মাথা ফেঁটে টিপ টিপ করে রক্ত বের হচ্ছে। এক পাশ নাড়াতে পারছে না।সব কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে।মানুষের ভিড় জমে যায় সাফাকে ঘিড়ে।তার পাশেই ফোনটা পরে গেছে।সাফার চোখবুজে আসছে।সব ধোয়াঁশা লাগছে।মানুষের গিজগিজ শব্দ তার মাথায় আরো আঘাত করছে। মনে হচ্ছে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে সবার তৈরি শব্দে।

নিভ্র সাফাকে অনেক সময় নিয়ে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু সাফার কোনো শব্দ আসছে না।উল্টা মানুষের শব্দ আসছে।নিভ্রর বুক কেঁপে কেঁপে উঠছে।ভয়ে তার প্রান উবে যাচ্ছে। নিভ্র চেঁচিয়ে ডাকছে।কিন্তু সাফার একটা শব্দও শুনতে পাচ্ছে না।হঠাৎ কেউ ফোনটা ধরে বললো,
—” আপনি এই মেয়ের বাড়ির কেউ??”
নিভ্র বিস্ময়ে হতভম্ভ। কিছু মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।লোকটা আবার বললো,
—” আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি উত্তর দেন??”
নিভ্র দ্রুত ধরা গলায় বললো,
—” হ্যাঁ। ও ঠিক আছে তো??কি হয়েছে?? আপনি কেনো ফোন ধরলেন??ওকে দেন!!”
—” উনি ধরার পরিস্থিতিতে থাকলে তো ধরবে??এক্সিডেন্ট হয়েছে তাও বাইক।মাথা ফেঁটে গেছে।অবস্থা খারাপ।বুঝিনা বাপু এত জোড়ে বাইক চালানোরই বা কি আছে আর ফোনে কথা বলে রাস্তা দিয়ে হাটাঁরই বা কি আছে।যে সব রাস্তা দিয়ে অনেক গাড়ি চলে সে সব রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা না বললে হয় না।আজ কালকার পোলাপাইন। এদের বলেও লাভ নাই।”

লোকটা নিজের মত বকবক করেই চলেছে কিন্তু যাকে বলছে সে অলরেডি ফ্লোরে বসে পরেছে।নিভ্রর সারা শরীর কাপঁছে।সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।উঠে দাড়াঁতে পারছে না।কাউকে ডাকতেও পারছে না।নিভ্রর সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।অভ্র মাত্র বাসায় এসেছে।নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় নিভ্রর রুমে চোখ যায়।অভ্রর চোখ কপালে।হলো কি??দৌড়ে নিভ্রর কাছে গেলো।নিভ্রর শরীর কাপঁছে। অভ্র ঝাঁকালো।প্রশ্ন করলো,
—” নিভ্র কি হয়েছে?? নিভ্র??”

নিভ্র অঙ্গুল উঁচিয়ে মোবাইল দেখিয়ে দেয়।অভ্র দ্রুত ফোন কানে নেয়।নিভ্র বিছানায় ভর দিয়ে উঠে দাড়ায়।পায়ের সেন্ডেল আগেই খুলে গেছে।এভাবেই রুম থেকে বেরিয়ে পরে।তার মাথা কাজ করছে না।অভ্র ফোন কানে নিয়েই বুঝতে পেরেছে কি হয়েছে।ভয়ে তারও হাত পা কাপঁছে। মনে হচ্ছে আবার একবার সে ভুল করলো।সাফাকে নিজে নিয়ে আসলে কি এমন হতো??অভ্র সাফাকে যে হসপিটালে নেওয়া হচ্ছে সেটার ঠিকানা নিলো।নিজের চুল অভ্র নিজেই টেনে ধরে।সে এত বড় ভুল আবার কেনো করলো??সাফার যদি কিছু হয় অভ্র নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করবে??আর নিভ্র??অভ্র দ্রুত দৌড় দেয়।নিভ্রর মাথা ঠিক নেই না জানি কি করে??

নিভ্র হাঁটতে পারছে না।তার শরীর কাপঁছে। সিঁড়িতেই নিভ্র বসে পরে।অভ্র দ্রুত নিভ্রকে ধরে।গাড়িতে নিয়ে যায়।নিভ্রর অবস্থা ভায়াবহ।সে বুক চেঁপে বসে আছে।কাপঁছে, বুক ধুকধুক করে।নিভ্র চোখে পানি।মুখে আতংক।অভ্র দ্রুত ড্রাইভ করছে।অনেক ট্রাফিক সিগনাল ভেঙেই অভ্র হসপিটালে পৌছালো।ঘন্টা খানেক লেগেছে পৌছাতে।সে মনে প্রানে দোয়া করছে সাফার যেনো বেশি কিছু না হয়।নিভ্র হসপিটালে এসেই দৌড়ে ভিতরে ডুকে।এত সময়ের সব শক্তি যেনো হঠাৎ করেই বেরে গেছে।তার মাথা ঘুড়ছে।দৌড়ে সামনে গিয়ে যাকে পাচ্ছে ধরে প্রশ্ন করে সাফার কোথায়??কয়েক জন এগিয়ে এসে বললো,
—” ওই তো ওই ওয়ার্ডে আছে সেই মেয়েটা।আর এটা ওর ব্যগ আর ফোন।”
নিভ্র নিলো না।দৌড়ে সেদিকে গেলো।ডাক্তার মাত্র বের হয়েছে।নিভ্র কাপাঁ গলায় প্রশ্ন করে,
—” সাফা, ও ঠিক আছে??”
—” সাফা কে??”ডাক্তার বললো।
—” যে মেয়েটাকে কিছুক্ষণ আগে এনেছে।এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর।ও ঠিক আছে??বেশি ব্যথা পেয়েছে??কতটুকু পেয়েছে??খুব লেগেছে না??আচ্ছা ওকে ইনজেকশন দিবেন না আমি নিজে দিবো।ও ভয় পায় এগুলো।আরে আপনি কিছু বলছেন না কেনো??”
—” আপনি বলতে দিলো তো বলবো??”
—” বলেন না প্লিজজজ দ্রুত!!”
ডাক্তার অবাক নিভ্রর উম্মাদিপনা দেখে।নিজেকে সামলে বললো,
—” ডান হাত আর ডান পা ভেঙে গেছে।আর মাথা ফেটে রক্তক্ষরন হয়েছে।তবে ডেঞ্জারাস ব্যাপার না।বাইক পাশ থেকে মেরেছে তা না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি ছিলো।এখনো বেডে দেওয়া হয় নি।সব ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে নার্সরা।আপনি মি.নিভ্রনীল তাই তো??”

নিভ্র কেবিনে উঁকি দিয়ে দেখে।নার্সরা পায়ে প্লাস্টার করছে।নিভ্র সব শক্তি হারিয়ে পাশের বেঞ্চে বসে পরে।খুব ক্লান্ত লাগছে।ভয়ে তার সব কেমন এলোমেলো হয়েগেছিলো।তারপর বলে,
—” হুম।”
—” পেসেন্ট আপনার কি হয়??”
নিভ্র নির্বিঘ্নে বললো,
—” বউ।”
—” ওও।”
ডাক্তার নিভ্রর পিঠে হাত বুলিয়ে হালকা হাঁসে। তারপর সামনে চলে যায়।অভ্র নিভ্রর পাশে বসে পরে।বাসার কাউকে বলা হয় নি তাই ফোন করে সবাইকে আসতে বলছে।আর সাফার বাবাকেও।এত ভয় পেয়েছিলো যে মাথাই কাজ করছিলো না।অভ্র সিটে হেলান দিয়ে বসে।নিভ্রর এখনো শরীর কাপঁছে।নিভ্রর মনে হচ্ছে সাফাকে এভাবে ঘুড়তে দেওয়া মানে নিজের প্রান হাতে নিয়ে বসে থাকা।না এটা আর সে করবে না।ভাগ্য বার বার তাকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে মানে এই না যে সব সময় দিবে।আজই সাফার বাবাকে বলবে সাফা তার সাথে তাদের বাড়িতেই থাকবে।প্রচন্ড ভয় পেয়েছে আজ।মনে হচ্ছে প্রান যায় যায়।
______________________
বাসার সবাই এসে অবাক হয়েছে সব শুনে।সবাই সাফাকে দেখি নেয়।সাফার জ্ঞান ফিরেনি।নিভ্র ডুকার কিছুক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরে।নিভ্র কেবিনে ডুকেই দেখে সাফা ঠোঁট উল্টে কাদঁছে। পা দেখছে হাত দেখছে।নিভ্র ধপ করে নিচে বসে পরে।শব্দ করে মুখ ঢেকে হাঁসে। সাফা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।নিভ্রর তো কাঁদার কথা সে হাসছে কেনো??সাফা কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে আবার কান্নায় মন দেয়।ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে সে কাদঁছে। নার্স ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে নিভ্রকে দেখছে।এত হাসির কি হলো??রোগী দেখতে এসে কেউ হাঁসে নাকি??নিভ্রকে দেখে সাফা কাদঁতে কাদঁতে বললো,
—” আপনার সমস্যা কি?? হাসেন কেনো??আমার পা!!আমার হাত!!! আমি এখন কিভাবে খাবো??কিভাবে হাটঁবো??”
নিভ্র উঠে দাঁড়ায়। হাঁসতে হাঁসতে সাফার সামনে এসে দাঁড়ায়। সাফা তাকিয়ে দেখে।নিভ্রর চোখে পানি চিকচিক করছে।গালে পানির দাগ শুকিয়ে গেছে।তবুও সে হাসছে।নিভ্র টুল টেনে বসে।তারপর বললো,
—” এতদিন আমি ভাবছিলাম তুমি হয় তো সিরিয়েস হয়েগেছো।কিন্তু না সাফা আর সিরিয়েস?? ইম্পসিবল। তুমি এত দিন হাত পা কাটঁতে এবার একদম ভেঙেই ফেললে??বাহ্। এটাই পুরোনো সাফার রূপ।খুবই ভালো।কিন্তু এক পা আর এক হাত কেনো ভাঙ্গলে?? আর একটা কি দোষ করেছে??”
সাফা ঠোঁট উল্টে নাক টেনে টেনে বললো,
—” আপনি কিভাবে পারলেন আমাকে এগুলো বলতে??এ্যা এ্যা।”
—” রাস্তায় হাটার সময় চোখ কোথায় ছিলো সাফারানী??”
—” মাথায়।” রাগ দেখিয়ে বলে সাফা।
নিভ্র হাঁসে। উঠে সাফার কপালে চুমু দেয়।সাফা ওওহ বলে উঠে।নিভ্র বসে পরে সাফার হাত নিজের হাতে নেয়।তারপর করুন সুরে বলে,
—” তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম??”
সাফা মুখ ঘুড়িয়ে বলে,
—” নেকা।ভয় পেলে হাসলেন কেনো??”
—” ভয় পেয়েই হেঁসেছি।তোমাকে দেখে হেসেছি।তুমি হাত পা ভাঙ্গাবে না এমন তো হতেই পারে না তাই হেঁসেছি।তা এবার তুমি খুশি!!”
সাফা বাম হাতে নিভ্রর বুকে ঘুঁষি মেরে বলে,
—” আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।তা না হলে এভাবে হাঁসতে পারতেন না!!”
—” আবার আমার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন??একদম আমার ভালোবাসা নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবে না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।এটাই সত্য।”
—” তাহলে ওই সময় বললেন না কেনো??”
—” শক্ট হয়ে গিয়েছিলাম তোমার মুখে শুনে।কিন্তু পরে যা হলো??বাদ দেও। আমার দম বন্ধ না করা পর্যন্ত তোমার শান্তি নেই।ভালোবাসায় এত পরীক্ষা হয়??এত ভয়ংকর কেনো আমার জীবন আল্লাহ ভালো জানে।এতটা ভয় আমি আগে কখনো পাইনি।আহহহ্।”

নিভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাফার চোখমুখ মুছে দিচ্ছে। আর বিড়বিড় করছে।জীবনটা ইতিহাস করে রাখা যাবে।
_____________________
রাফা মনোযোগের সাথে সাফাকে ধূসর রং এর শাড়ি পড়াচ্ছে।নিভ্র সাফার জন্য ধূসর রং এর শাড়ি চুড়ি এনেছে।আজ রাতে সমুদ্রবিলাসে যাবে সাফাকে নিয়ে।রাফা খুব সাবধানে শাড়ি পড়াচ্ছে।একটা পা একটা হাত সাফার ভাঙা।উল্টাপাল্টা হলেই বিপদ।সাফা বার বার বলছে সে যাবে না।তবুও নিভ্রর আদেশ।যেতেই হবে।হুইলচেয়ারে করে সমুদ্র ঘুড়বে ব্যাপারটা ভাবী বিরক্তির মনে হচ্ছে সাফার।সে বার বার বলছে,
—” আপু আমি এভাবে কিভাবে যাবো??আর উনার মাথা কি গেলো নাকি??”
রাফা হাঁসতে হাঁসতে শাড়ির আচঁল কাধে দিতে দিতে বললো,
—” মিষ্টির দোকান আমার তো কিছু করার নেই।ভাই বলেছে মানে যেতে হবে ব্যস।
সাফা নিরাশ হয়ে বসে থাকে।রাফা সুন্দর করে সাফার চুলগুলো ছেড়ে দেয়।

নিভ্র আর সাফা বিশাল সমুদ্রের পাড়ে রয়েছে।সাফা হুইলচেয়ারে বসে দীর্ঘ করে শ্বাস নিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে। কাল এই সমুদ্র থেকে চলে যাবে।তাই বিদায় নিয়ে যাচ্ছে। নিভ্র সাফাকে কোলে তুলে নেয়।ভাঙা পা আর ভাঙা হাতে সাফাকে নিভ্রর মায়া মায়া লাগছে।মনে হচ্ছে বেচারা বাচ্চাটা একটু সমুদ্রের কাছেও যেতে পারছে না।তাই নিভ্র তাকে কোলে নিলো।সাফা অবাক হয়ে বলে,
—” ব্যান্ডেজ সহ আমি অনেক ভারী তো।নামান!!”

নিভ্র কিছু বললো না।আকাশে থালার মত বিশাল চাঁদ।চাঁদের আলোতে সাফাকে স্নিগ্ধ লাগছে।মাথার পাশে ছোট ব্যান্ডেজ।বিশাল চুল নিচে ঝুলছে।সাথে শাড়ির আচঁল। নিভ্র সাফার দিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে। সাফা বাম হাতে চুল মুখ থেকে সরাচ্ছে।একের পর এক বিশাল ঢেউ আছঁড়ে পড়ছে সমুদ্রের তীরে।সামনে বিশাল আকারের মন কাড়া সমুদ্র।কালো আকাশ জুড়ে জ্যােৎস্নার মেলা বসেছে।যা আকাশ টাকে মুক্ত ধারা বানিয়ে দিয়েছে।সাফা চোখবুজে ঘ্রাণ নেয়।নিভ্র বুক ঘেঁষে মাথা রাখে।সাফার মনে হচ্ছে নিভ্রর গায়ের ঘ্রাণ আর সমুদ্রের বাতাসের ঘ্রাণ মিলে এক অদ্ভুত মতালতা সৃষ্টি করেছে।সাফা চোখ খুলে তাকায়।নিভ্র সাফাকে বালির উপড় বসিয়ে দেয়।সাফার পাশে বসে।পিছনে দু’হাত ফেলে আকাশের দিকে তাকায়।সাফা ভ্রু কুচঁকে বললো,
—” আপনি আমাকে ধূসর রং এর শাড়ি কেনো দিলেন??সাদা বা নীল দিলেই পারতেন।”
নিভ্র সাফার দিকে তাকালো।সাফার চুল ঠিক করে দিলো তারপর বললো,
—” 🍁……..
শুনেছি কবি বলেছে নীল শাড়ি আর সাদা ব্লাউজে মেয়েদের আকাশ আকাশ লাগে।তাই সবাই প্রিয়তমাকে আকাশ কিনে দেয়।কিন্তু আমি তো তা করবো না।আকাশ তো বহু দূরে।আমি বরং তোমাকে সাগর কিনে দিয়েছি।ধূসর রংয়ের শাড়ি..কেমন হয়েছে??
সাফা কিছু বলছে না হা হয়ে শুনছে।নিভ্র আবার বললো,
—” ভালোই।তুমি ধূসর রংয়ের সাগর জোড়িয়ে নিবে আর আমি সে সাগরে ভাসব…বেশ হবে।আমি তোমার সাগরে ভিজেঁই না হয় আকাশ দেখব।মনে হবে তোমার ভালোবাসা আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছি। সবাই তো ভালোবাসতে পারে।কয়জনেই বা ভালোবাসা ছুঁতে পারে বলো??কিন্তু আমি পারবো।একটু আকাশ দেখব আর সাগর ছুঁয়ে দিব..সাগরের ভালোবাসায় নিজেকে ডুবাব………….

সাফা মুগ্ধ হয়ে শুনছে।নিভ্র এত সুন্দর করে কিভাবে কথা বলে??সে জানে না।কিন্তু এই সুন্দর কথা বলা লোকটা তার নিজের।এটা ভাবতেই তার মনে শীতলতা বিরাজ করে।সাফা নিভ্রর বুক জড়িয়ে বলে,
—” হুম আমি আপনার সাগর।”
নিভ্র হাঁসে আবার সামনে তাকায়।আজ কোনো কথা না সমুদ্রের সাথে তাদের নিঃশ্বাসের কথা হবে।
.
.

#চলবে________________
কালকে লাস্ট পার্ট দেওয়া হবে।জানি আমার গল্প মানেই অপেক্ষা।আগের গল্প গুলোও আপনাদের অপেক্ষা করে করেই পড়তে হয়েছে।এর জন্য দুঃখীত হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।সরি অপেক্ষা করানোর জন্য

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

®হাফসা_________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here