পর্ব ১৬+১৭
#এক_ফাগুনের_গল্প
#পর্বঃ-১৬
– আমি মোবাইল কানের কাছে নেওয়া মাত্রই অপর প্রান্ত থেকে বললোঃ- চিনতে পারছেন সজীব সাহেব?
– আমি বললাম, ইন্সপেক্টর তামিম হাসান।
– বাহহ দারুণ চমৎকার, আপনার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছি না সজীব সাহেব। মাত্র অল্পকিছু দিনে আপনি আমার সন্ধান বের করে ফেলেছেন, আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আপনাকে পেশাদার গোয়েন্দা বানিয়ে দিতাম।
– আমার বিষয় আপনাকে চিন্তা করতে হবে না মিঃ তামিম হাসান, আপনি আপনার লোভ আর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
– হাহাহা হাহাহা, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবো না বলে তো আপনার ব্যবস্থা করলাম। এতদিনের তৈরি করা প্ল্যান এত সহজে কীভাবে বিফলে যেতে দেই বলেন?
– আমি মরে গেলেও কোন সমস্যা নেই, যতদুর তথ্য সংগ্রহ করেছি সেগুলো সব একজনের কাছে জমা দিয়ে এসেছি। আমার অনুপস্থিতির শূন্যস্থান সেই তো পূরণ করবে তাই প্রস্তুত থাকবেন সবসময়।
– আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই সজীব সাহেব।
– জানিনা জবাব দেবো কিনা কারণ শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। আমার ইচ্ছে ছিল সবার সামনে সবকিছু উন্মুক্ত করবো, কিন্তু সামিহার মত আমাকেও চলে যেতে হচ্ছে।
– হ্যাপি জার্নি সজীব সাহেব।
– আপনিও তৈরি থাকেন, শুধু সামিহা নয় তার মা বাবার খুনের শাস্তিও পেতে হবে আপনাকে।
– ওমা তাও আপনি জেনে গেছেন?
– হ্যাঁ জানি আমি। তামিম সাহেব, সামিহার বাবার সাথে আপনার মোটামুটি ভালো পরিচয় ছিল। সেই সুবাদে আপনার সাথে সামিহার পরিচয়, সামিহার বাবার অনেক গুলো টাকা আপনি একটা এনজিওর মধ্যে রাখার পরামর্শ দেন। বেশি লাভের আগ্রহে তিনি রাজি হয়ে যায়, আপনি তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তার নমিনি হয়ে যান। তিনিও আপনাকে বিশ্বাস করে এবং টাকা গচ্ছিত রাখে। আপনি সামিহার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন আর তলে তলে তার মা-বাবা কে হত্যার পরিকল্পনা করেন। অবশেষে আপনি সফল হলেন, কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আপনাদের সম্পর্কের কথা কেউ জানলো না কেন?
– বাহহ সজীব সাহেব আপনি এতকিছু বের করে ফেলেছেন? সত্যিই জিনিয়াস ম্যান।
– এমন কি দরকার হলো যে সামিহাকে হত্যা করা দরকার পরলো?
– টুট টুট টুট।
মোবাইল কেটে গেল, আমি সেভাবেই শুয়ে আছি। লোকটা আমার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে আবার কল দিয়ে নিজেই হু হা করে কথা বললো। ততক্ষণে তার কাছে আরো দুটি মানুষ দেখতে পাচ্ছি, তারা তিনজনই মনে হয় একসাথে। আমি এই মুহূর্তে একটা সাহায্যের হাত অনুসন্ধান করছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না কোন যায়গা। চারিদিকে দু একজন হাটাহাটি করে যাচ্ছে কিন্তু তারা কিছু বুঝতে পারছে না। ওরা আমাকে ধর দাঁড় করিয়ে সাইডে নিয়ে গেল। তারপর একজন বললোঃ- ” হাত পা বাঁধার দরকার নেই কারণ এ এমন দুর্বল হয়ে গেছে যে পানি থেকে আর উঠতে পারবে না। শুধু শুধু রিস্ক নিয়ে বাঁধার দরকার নেই। ”
– আরেকজন তার সাথে একমত হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে বললো, ” এখনই ফেলে দাও কেউ এদিকে তাকিয়ে নেই, তাড়াতাড়ি করো। ”
আমি অস্ফুটে চিৎকার চেচামেচি করলেও কেউ শুনতে পাচ্ছে না। কি এমন খাওয়ালো সেটাই বুঝতে পারছি না আমি, এখন শুধু অপেক্ষা।
ওরা আমার শরীর উঁচু করে আরেকবার এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল, তারপর সব শেষ। আমি অনুভব করলাম আমার চতুর্পাশে পানি, পানিতে পরার সাথে সাথে পেটের মধ্যে কিছুটা পানি ঢুকে গেল। চলন্ত লঞ্চ মোহনা, আন্টি আর ফাহিমসহ সকল যাত্রী নিয়ে ছাঁদের উপর কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে যাচ্ছে।
চলবে… (পর্ব ছোট বলিয়া লজ্জা দিবেন না।)
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
#পর্বঃ-১৭
নদীর মধ্যে বেশিক্ষণ টিকে থাকার প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে পানির সাথে বেশি জোরাজোরি না করা। যদি ভেসে থাকার মতো কিছু পাওয়া যায় তাহলে সেটাই অবলম্বন করতে হবে। নদীর মধ্যে তীর খুঁজে বের করা বেশি অসম্ভব কিছু না কিন্তু শরীরের মধ্যে যদি শক্তি না পাই তাহলে কি করার? সামান্য স্রোতের সাথে ভাসতেছি, কিছু একটা করা দরকার কারণ হঠাৎ করে যদি নদীর মোড় পরিবর্তন হয় তাহলে পানির ঘোরের মধ্যে পরতে হবে। তাছাড়া বেশিক্ষণ টিকতে পারবো বলে মনে হয় না, হঠাৎ করে পায়ের সঙ্গে জালের অস্তিত্ব অনুভব করলাম। যদি সত্যি সত্যি কোন জেলের পাতা জাল হয় তাহলে বাঁচার একটা ক্ষীণ সম্ভবনা আছে। হাত দিয়ে জাল ধরার চেষ্টা করছি, এসব জাল সাধারণত নদীর মধ্যে লঞ্চ চলাচলের পথে ফেলে কেন বুঝতে পারছি না। জাল ধরে ধরে এগিয়ে যাচ্ছি কারণ জাল ভাসিয়ে রাখার জন্য জেলেরা ড্রাম জাতীয় কিছু ব্যবহার করে। যদি সেরকম কিছু পাওয়া যায় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ।
কিছুক্ষণ এগিয়ে গিয়ে একটা ২০ লিটারের তেলের ক্যান পেলাম, সেটা দেখে ভালো লাগলো। আমার শরীর ভাসিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট, আমি আমার শরীর থেকে শার্ট খুলে নিলাম। তারা শার্টের হাতা দিয়ে ক্যানের হাতলের মধ্যে ঢুকিয়ে নিজের শরীরে বেঁধে নিলাম। যদি অজ্ঞান হয়ে যাই কিংবা মৃত্যু ঘটে তাহলে অন্তত জালের মালিক আমাকে খুঁজে পাবে।
অনেকটা দুরে একটা চলন্ত নৌকা দেখা যাচ্ছে, সেই নৌকায় হারিকেন কিংবা মশাল জ্বলছে। যদি আমার চিৎকার করার শক্তি থাকতো তবে হয়তো তাদের কানে আওয়াজ পৌঁছাতে পারতাম। বিখ্যাত সিনেমা “টাইটানিক” এর শেষ মুহূর্তের নায়িকার মতো আমি উদ্ধার করার কাউকে দেখতে পেয়েও কিছু বলতে পারছি না। আকাশে পূর্ণ চাঁদ আরো বেশি করে আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে। আকাশটা এখন সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে, এরকম তো কখনো মনে হয় নাই। নাকি এভাবে মনোযোগ দিয়ে কখনো আমি উপভোগ করি নাই?
||
||
চোখ বন্ধ অবস্থায় বুঝতে পারছি চোখের সামনে সূর্য আলো ছড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে চোখ মেলে যখন তাকালাম তখন দেখি সত্যি সত্যি একটা জানালা দিয়ে সম্পুর্ণ সূর্য দেখা যাচ্ছে। আমি একটা বিছানার উপর শুয়ে আছি, গায়ের উপর কাঁথা দিয়ে আবৃত। সূর্যের সাইজ আর তীব্রতা দেখে মনে হয় বেলা প্রায় দুপুর হয়ে গেছে, চারিদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। টিন আর বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা রুমের মধ্যে আমি এক কোণে পরে আছি। বাম দিকে একটা চেয়ার রাখা এবং তার উপর একটা জগ আরেকটা গ্লাস। জগ-গ্লাস দেখে সাথে সাথে পানির পিপাসা অনুভূত হলো, সম্মুখে আছে, হাত বাড়িয়ে টেনে নিলেই হয় কিন্তু ইচ্ছে করে না। শরীরের কাপড় কেউ সযত্নে পরিবর্তন করে দিয়েছে, সেই ব্যক্তি পুরুষ নাকি মহিলা সেটাই বুঝতে পারছি না।
আরো ঘন্টা খানিক পরে একটা কাঁচাপাকা দাড়ি সম্মিলিত লোক প্রবেশ করলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি হাসি হাসি ভাবে আমাকে দেখে যাচ্ছেন।
– আপনার জ্ঞান ফিরেছে তাহলে?
– জ্বি, এটা কোন যায়গা?
– হাতিয়া, নোয়াখালী।
– কিন্তু আমি তো বরিশাল থেকে ফিরছিলাম আর সম্ভবত কীর্তনখোলা নদীতে পরেগেছিলাম। তাহলে এত দুরে কীভাবে আসলাম?
– আমিও বরিশাল থেকে ট্রলার নিয়ে ফিরছিলাম, আপনাকে অন্য একটা জেলে গ্রুপ তাদের জালের ড্রামের সাথে পেয়েছে। আমি যখন রাতে ফিরি তখন তারা সিগনাল দিয়ে দাঁড়াতে বলে। তারপর বিস্তারিত জানার পরে আমি আমার ট্রলারে করে নিয়ে এসেছি আমার বাড়িতে। কিন্তু দুদিন পর আপনার জ্ঞান ফিরেছে, গত দুদিন আপনার প্রচুর জ্বর ছিল।
– আমি পানি খাবো।
– হ্যাঁ অবশ্যই অবশ্যই।
– পানি শেষ করে বললাম, আমার পকেটে মোবাইল ছিল সেটা কি আছে নাকি নদীতে চলে গেছে?
– জ্বি আছে কিন্তু নষ্ট হয়ে গেছে মনে হয় কারণ আমি অনেক চেষ্টা করছি আপনার পরিচিত কারো নাম্বার বের করে যোগাযোগ করার জন্য।
– আপনার কাছে যদি মোবাইল থাকে তাহলে সেই মোবাইলটা একটু দিবেন? আর আমার নষ্ট মোবাইল টা নিয়ে আসুন, সিম পরিবর্তন করে আমি নিজেই যোগাযোগ করবো।
– সেটা তো মাথায় আসে নাই, আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।
দরজা পর্যন্ত গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, আপনি তো মনে ক্ষুধার্ত তাই আগে কিছু খেয়ে তারপর নাহয় যোগাযোগ করবেন।
– সমস্যা নেই আপনি আমার কাছে এনে দিয়ে নাহয় ব্যবস্থা করবেন। আমি ততক্ষণে ফোনে কথা বলে নেবো, আমার পরিচিত জন খুব টেনশনে থাকবে। যেহেতু দুদিন ধরে আমার কোন খবর তারা জানে না তাই চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।
– ঠিক আছে যাচ্ছি আমি।
লোকটা ফিরে আসে একটা খারাপ খবর নিয়ে।
আমার মোবাইল নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তার একটা নাতি আছে সেই নাতির হাতে নাকি দেখেছে কিছুক্ষণ আগে। কিন্তু নাতি সেটা কোই রাখলো সেটা আর পাওয়া গেল না, লোকটা লজ্জিত হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি তাকে আস্বস্ত করে বললাম তেমন কোনো সমস্যা নেই।
সন্ধ্যা বেলা সামান্য জ্বর নিয়ে লোকটার ছেলের সঙ্গে বেরিয়ে পরলাম। ঢাকা চলে যেতে হবে, লোকটার কাছ থেকে পথের খরচ নিয়ে বের হলাম। ঢাকা গিয়ে তাদের টাকা পরিশোধ করে দেবো বলে কথা দিলাম তবে আমাকে সেবা করার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো না।
বাসে করে ঢাকা আসতে আসতে পরদিন সকাল প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেছে। আর বাসায় যখন পৌঁছলাম তখন সকাল দশটা বাজে। বাড়ির মধ্যে যখন ঢুকলাম তখন আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম কারণ মুল দরজা খোলা ছিল। ড্রইং রুমে ৫/৬ জন পুলিশ বসে আছে, আমাকে দেখে তারা সবাই যে অবাক হয়ে গেছে সেটা সকলের চোখের দিকে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে।
পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজটি তে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। গ্রুপের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে
চলবে…
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)