পর্ব ১৯+২০
#এক_ফাগুনের_গল্প
#পর্বঃ-১৯
আমি আড় চোখে মোহনার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে চাতক পাখির মতো এক দৃষ্টিতে যেন তাকিয়ে আছে। এমন মুহূর্তে মোহনার বুকভরা আশা কে কষ্টে পরিণত করে দিতে ইচ্ছে করছে না। মোহনা আমাকে ভালবাসে, অর্পিতা শুধুমাত্র ছোট্ট একটা অজুহাত দিয়ে চলে গেছে। তাই মোহনার মনে কষ্ট না দেবার জন্য এতদিন পরে অর্পিতা কল দেবার পরও তাকে বললামঃ-
– চিনতে পেরেছি কিন্তু আমি একটু ব্যস্ত, তোমাকে ফ্রী হয়ে কল দেবো।
– সে বললো, এতদিন পর কথা বলতে তোমার কাছে কল দিলাম আর তুমি ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে রেখে যেতে চাও?
– আমি সত্যি সত্যি ব্যস্ত আছি, রাখলাম।
কল কেটে দেবার পরে আমি মুখ তুলে মোহনার দিকে তাকিয়ে রইলাম, তারপর দুকদম সামনে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে বললামঃ-
– এবার পাগলামি বন্ধ করে দরজা খুলে বাইরে চলে যাও, আমি কথা দিচ্ছি তোমার কথা আমার সর্বদা স্মরণ থাকবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার ভালবাসা আমি স্বীকার করবো, ভুলে যাবো না।
– মোহনা বললো, আমি ভালবাসা বিসর্জন দিয়ে সে ভালবাসা নিয়ে কষ্ট করতে চাই না। মন চেয়েছে বলে ভালবেসেছি আর যেকোনো মূল্যে সেই ভালবাসা আমি চাই।
– আগে আমি চট্টগ্রামে যাই তারপর তুমি আন্টির সাথে কথা বলে তোমার বাবাকে রাজি করানোর ব্যবস্থা করো। স্যারের বিরুদ্ধে গিয়ে তার মেয়ের সাথে প্রেম করার সাহস আছে ঠিকই কিন্তু সেই কাজ আছে করতে চাই না।
– প্রেম করতে হবে না, বিয়ে করো।
– সেই একই কথা, স্যার রাজি হলে আমার আপত্তি নেই।
– বাবাকে রাজি হতে হবে?
– হ্যাঁ অবশ্যই।
– ঠিক আছে তাই হবে, কিন্তু তুমি ঢাকা থেকে চলে গিয়ে আবার মতামত পরিবর্তন করবে না তো?
– না করবো না।
– গা ছুয়ে বলো।
– হাহাহা, এগুলো বিশ্বাসের সাথে রাখতে হয় কারণ সবকিছু বিশ্বাস দিয়ে চলে।
– একবার জড়িয়ে ধরবো?
– না, এমনিতে সেদিন জড়িয়ে ধরছো তাতেই আমি কত লজ্জা পেয়েছি জানো?
– হিহিহিহি, আচ্ছা কে কল দিয়েছিল?
– আছে একজন পরিচিত মানুষ।
অর্পিতা যে নাম্বার থেকে কল দিয়েছে সেই নাম্বারে কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে মনে হয় বন্ধ করে রেখেছে।
মেসেজ ছিলঃ-
” এত তাড়াতাড়ি তোমার জীবন থেকে আমার অস্তিত্ব বিলীন হবে সেটা কল্পনার বাইরে। ভালো থেকো ভালবাসা, শুভ কামনা রইলো তোমার প্রতি। ”
★★
নিজের সবকিছু নিয়ে চট্টগ্রামে পৌছলাম।
ইচ্ছে ছিল বন্ধুর বাসায় উঠে একদিনের মধ্যে একটা বাসা ঠিক করবো তারপর সেখানে একা একা বাস করবো। কিন্তু আমি চট্টগ্রামে আসতেছি সে কথা শুনে বাবা সরাসরি বাসায় যেতে বলেছে। এমনকি সৎ মা নিজে কথা বলে আমাকে বাসায় যাবার জন্য বারবার বলে দিলেন। টাকার জন্য মানুষ কত সহজে পরিবর্তন হয়ে গেল, ভালো চাকরি করি তাই এখন আমি বাসায় থাকলে তাদের সুবিধা হবে। সেজন্য কত সহজে আমাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, হাহাহা।
আমি যে রুমে থাকতাম সেটা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে, সবকিছু রেখে খাবার খেয়ে লম্বা ঘুম।
খাবারের বিষয় মায়ের যত্ন দেখে অবাক হলাম, সত্যি সত্যি কি সম্ভব এটা?
পরদিন সকালে অফিসে যাবার জন্য রওনা দিলাম, আগ্রাবাদ এর একটু আগে চৌমুহনী বাসস্ট্যান্ডে এর পাশেই অফিস। বাসা থেকে বেরিয়ে ১০ নাম্বার বাসে উঠে গেলাম চৌমুহনী বাসস্ট্যান্ডে। নতুন অফিসে গিয়ে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে যেটা সচারাচর প্রায় নতুন মানুষের হয়ে যায়।
ম্যানেজার সাহেব আমাকে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করে নিজের কেবিনে নিয়ে গেল। সেখানে তার সাথে বসে চা নাস্তা করলাম, তারপর তিনি টেলিফোনে একটা মেয়েকে ডাকলেন। মেয়েটার নাম শিমু, তার শরীরের পোশাক চমৎকার, সেজেগুজে থাকতে মনে হয় বেশি পছন্দ করে। মুখের মধ্যে হাসি সর্বদা দেখতে পাচ্ছি, মনে হয় সে কারণে অকারণে হাসে।
আমাকে মেয়েটার সাথে পাঠিয়ে দিয়াছে কারণ সে আমাকে কাজ বুঝিয়ে দেবে। মেয়েটা আমাকে নিয়ে তিনতলায় চলে এলো, তারপর একটা কক্ষে এসে বললো,
– এটা আপনার কাজের স্থান, আমি আপনার পাশের ডেস্কে বসবো। আমাদের দুজনের একই কাজ করার একজনের পক্ষে সম্ভব না তাই ম্যানেজার স্যার হেড অফিসে কথা বলে একজন বাড়ালো। ”
– আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই, আমার নাম সজীব আপনি আমাকে সজীব ভাই বলে ডাকবেন।
– যদি শুধু সজীব বলে ডাকি?
– মানে? মানে যেহেতু আমরা কলিগ তাই দুজনেই দুজনকে বন্ধু ভাবতে পারি। যদি বন্ধু ভেবে কাজ করি তাহলে আমাদের পক্ষে কাজটা সহজ হবে।
– ওহহ আচ্ছা সমস্যা নেই তবে আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে, সময় তো পালিয়ে যাচ্ছে না তাই না?
– হ্যাঁ তাই।
– আপনি তাহলে কিছু ফাইলপত্র থাকলে আমাকে দেন আমি বিসমিল্লাহ বলে একটু কাজ আরম্ভ করি।
– সে কি? প্রথম দিন আসলেন, সবার সাথে পরিচয় করেন তারপর কাজ করবেন। কাজ তো সারাজীবন করতে হবে।
– এসে যখন পরেছি তখন পরিচিত হয়ে যাবে তবে একটু সময় লাগবে এই আর কি।
– আপনি কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন তাই মনে হয় এমডি স্যার আপনাকে বেশি পছন্দ করে।
– হতে পারে, তবে আমি মনে করি যে আমাকে কাজ করার জন্য রাখা হয়েছে তাই কাজ করা উচিত। তবে আপনি প্রসঙ্গ ভিন্ন, আপনি মনে হয় কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন না তাই না?
– কীভাবে বুঝলেন?
– যদি পছন্দ করতেন তাহলে আপনাকে সাপোর্ট করতে আরেকজন দরকার ছিল না।
– হিহিহিহি তা ঠিক বলছেন।
– আপনার কাজ পছন্দ না করার বিশেষ কারণ আছে তাই না?
– কিরকম?
– যেই মেয়ে সাজগোছ করতে বেশি পছন্দ করে সেই মেয়ে কাজ করার সময় কম পাবে। সুন্দরী মেয়েরা সাজগোজ করে নিজেকে সদা সর্বদা রূপবতী করে রাখতে ব্যস্ত থাকে তাই তারা পৃথিবীর অন্য সকল কিছু তুচ্ছ মনে করে। সমস্ত পৃথিবী একদিকে আর তাদের সাজগোজ হচ্ছে একদিকে।
– আপনি বেশ সুন্দর করে কথা বলতে পারেন।
আমি কথা না বাড়িয়ে নিজেকে অন্য কিছু করতে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করছি। মেয়েটার গায়ে পরে কথা বলার পিছনে কিছু একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। কিন্তু সময় সবকিছু বলে দেবে তাই চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে আমাকে।
★★
বিকেলে আরেকটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে, সে হচ্ছে বিজন কুমার দাস। আমার বয়সী হবে কিন্তু সে অফিসে আমার জুনিয়র, ব্যবহার আচার-আচরণ অনেক ভালো লেগেছে। তার সাথেই লান্সের পর থেকে গল্প করলাম প্রায় এক ঘন্টার মতো। আমি তাকে বললামঃ-
– বিজন সাহেব, এতক্ষণ ধরে কথা বললাম কিন্তু আপনার গ্রামের বাড়ি কোন যায়গা জানা হলো না।
– স্যার আমার বাসা বাগেরহাট জেলা।
– বাগেরহাট? মানে খুলনা বাগেরহাট?
– জ্বি স্যার।
– আমি আপনাদের খুলনা শহরে গেছিলাম।
– তাই নাকি? কোন আত্মীয় আছে?
– আছে একটা বন্ধু, সে গল্প আরেকদিন হবে।
– ঠিক আছে স্যার, আরেকটা কথা বলবো যদি সে কথা কাউকে না বলেন।
– মানে?
– কাউকে বলবেন না তো?
– না বলবো না।
– শিমু মেয়েটির থেকে একটু দুরে থাকার চেষ্টা করে দেখবেন, কারণ সে বেশি সুবিধার নয়।
– মানে কি? চরিত্রে সমস্যা?
– না স্যার চারিত্রিক সমস্যা না সে এমনিতে অনেক ভালো একটা মেয়ে কিন্তু…!
– কিন্তু কি?
– আমার জানা মতে এমডি স্যার তাকে আপনার পিছনে রাখবে আপনাকে ইমোশনাল করার জন্য। শিমুর প্রতি আপনার একটা দুর্বলতা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে যেটা গোপনে জানলাম।
– মানে?
– স্যার এতো মানে মানে করেন কেন? শিমু মেয়েটা আপনার সাথে আস্তে আস্তে ক্লোজ হবে এবং প্রেম নামক বেড়াজালে আবদ্ধ করতে চাইবে। তবে আমি ভাবছি এতে এমডি স্যারের লাভ কি?
– ওহহ এই কথা? আমি জানি এমডি স্যারের লাভ আছে।
– কি লাভ স্যার?
– আরেকদিন বলবো, কিন্তু আপনি এগুলো কীভাবে জানতে পারলেন?
– সেটা বলা যাবে না স্যার, তবে মনে রাখবেন সব মানুষ নবাব সিরাজ্জুদ্দৌলা নয়, কিছু মীরজাফরও থাকে কিন্তু।
এমন সময় মোহনা কল দিল, আমি বিজন কুমার কে চলে যেতে বললাম তাই সে চলে গেল। তারপর কল রিসিভ করে বললামঃ-
– কেমন আছো?
– আমি কেমন আছি তাতে তোর কি? চট্টগ্রামে যেতে না যেতেই শুরু হয়ে গেছে? তুই এমন কেন?
– মানে কি? আর তুই তুকারি করছো কেন?
#পর্বঃ- ২০
– হঠাৎ এমন করে উল্টে গেলে কেন?
– ঢাকা থেকে যাবার পর এখন পর্যন্ত একবারও কল দিয়ে খবর নিয়েছো? চোখের সামনে থেকে আড়াল হয়ে বড় বাঁচা বেঁচে গেলে তাই না?
– সেরকম কিছু না মোহনা, আসলে আমি একটু ব্যস্ত সময় পার করলাম তাছাড়া আন্টির কাছে কল দিয়ে তো কথা বলেছি।
– মায়ের সঙ্গে কথা বলা যায় আর আমার সাথে কথা বলতে গেলে সময় নেই তাই না? সোজা করে বলে দিলেই পারো যে আমার সাথে কথা বলতে চাও না।
– এমনটা আমি কখনো ভাবিনি, বরং তোমার সাথে নতুন করে কিছু সাজানোর স্বপ্ন দেখি।
– কি বললে?
– না কিছু না।
– আরেকবার বলো না প্লিজ।
– হবে না।
– লক্ষি সোনা চকলেট দিমুনে এত্তগুলা।
– দুটো পাঁচ টাকা?
– ওই?
– কি?
– আমি শুধু একদিন চকলেট বিক্রি করেছি আর সেই কথা মনে রেখে বসে আছো?
– যে চকলেট বিক্রি করার জন্য তোমার সাথে সেই দিন পরিচয়, সেটা ভুলে যেতে বলছো?
– সেদিন যদি অন্য কোন মেয়ে থাকতো? তোমার বসের মেয়ে না হয়ে অন্য কেউ হলে কি করতে?
– যখন ভালো লেগেছিল তখন ঠিকই তাকেও আমি এমন করে কথা বলতাম।
– কি করছো?
– গল্প করছিলাম তার মধ্যে তুমি কল দিলে।
– বাবার কাছে বলে দেবো কিন্তু যে তুমি কাজ করো না বরং গল্প করো।
– হাহাহা, অফিসে প্রথম দিন তাই পরিচিত হচ্ছি।
– খেয়েছো?
– হ্যাঁ তুমি?
– আমিও।
– রাখলাম তাহলে? রাতে কথা হবে।
– এখন থেকে সবসময় সকাল বিকেল রাতে কল দিয়ে কথা বলতে হবে রাজি তো?
– আচ্ছা চেষ্টা করবো।
– গুড বয়।
★★
সপ্তাহ খানিক অফিস করেই বুঝতে পারছি যে শিমু মেয়েটির অবস্থা খারাপ। তার মাধ্যমে আমি যেকোন সময় বিপদের সম্মুখীন হতে পারি যেটা আমাকে শুধু মোহনার জীবন থেকে নয় বরং অফিস থেকে বের করে দিতে পারে। মোহনার বাবার উপর আমি সত্যি সত্যি অবাক হলাম কারণ তিনি আমাকে বিপদে ফেলার জন্য অনেক কিছু করছেন। বিজন কুমারের কথা শুনে ভেবেছিলাম স্যার হয়তো মোহনার কাছ থেকে আলাদা করতে চায়। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারছি যে তিনি সম্পুর্ণ আমাকেই নির্মূল করতে চায়। তবে আগে থেকে ভালো ব্যবহার করার জন্য মনে হয় সরাসরি কিছু বলতে পারে না। তাই কৌশলে প্ল্যান করে আমাকে একটা অপবাদ বা কাজের বিষয় এক সমস্যার মধ্যে ফেলে বের করবেন। যাতে করে আমি মোহনা এবং তার অফিস থেকে বিদায় হই।
শিমু সমস্যা তৈরী করতে পারতো না যদি আমার কাজ আছে নিজে করতাম। কিন্তু দুজনেই যেহেতু একই কাজ করি সেহেতু কোথাও ভুল হলে সেটা আমাদের দুজনের উপর পরে। দেখা যাচ্ছে সে ইচ্ছে করে একটা বড় ভুল করে ফাইল রেডি করলো আর সেই অপবাদ পরে গেল আমার কাঁধে তখন ব্যাপার টা কীভাবে দাঁড়াবে?
পরিস্থিতি খারাপ বিবেচনা করে আমি বিকল্প কিছু করার চেষ্টা করছি। এমন সমস্যার জন্য আপাতত দুটো কাজ করা জরুরি মনে হচ্ছে।
(১)
যেহেতু চাকরির ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে তাই নতুন চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। চাকরি করতে এসে এবং মোটামুটি যারা বেশ পরিচিত ছিল সবার কাছে এক রাতের মধ্যে সকল ডিটেইলস দিয়ে দিলাম।
(২)
মোহনার সাথে সবকিছু খুলে বলতে হবে যাতে করে পরবর্তীতে কোন ভুলবোঝাবুঝি না হয়। যদি সত্যি সত্যি বিপদে পরি তাহলে সমগ্র মানুষ আমার যদি বিপক্ষে থাকে তাহলে সেদিন মোহনাকে যেন পাশে পাই।
ভাবনা অনুযায়ী রাত দশটার পর কল দিয়ে মোহনার কাছে সবকিছু বললাম। মোহনা আমার কথা ঠিকই বুঝতে পেরেছে এবং এরকম কিছু সে ইঙ্গিত পেয়েছে তাও বললো। স্যার নাকি আমার বিষয় একটু একটু নেগেটিভ কথা বাসায় বলা শুরু করেছে। আমি কাজ তেমন মনোযোগ দিয়ে করছি না আগের মতো। আর নিজের শহরে এসে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করে যাচ্ছি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
– আমি বললাম, এখন আমি কি করবো?
– তুমি বাবার অফিস থেকে চাকরি ছেড়ে দাও।
– তাহলে তো নতুন করে চাকরি পেতে কষ্ট হবে।
– কিন্তু যদি বাবা কিছু করে ফেলে তাহলে?
– স্যারকে নিয়ে আমার তেমন ভয় নেই তবে শিমু মেয়েটির জন্য খুব ভয় হচ্ছে। না জানি হঠাৎ করে কোন বিপদে ফেলে দিয়ে আমাকে বিয়ের আসনে বসিয়ে দেয়।
– কি বললে?
– না কিছু না।
– তোর সাথে কোন কথা নেই, টুট টুট টুট।
মোহনা রাগ করে কল কেটে দিল, আমি আবার সাথে সাথে কলব্যাক করলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। মনে হয় রাগের মাত্রা বেশি হয়ে গেছে তাই মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে। রাতে যতক্ষণ জাগ্রত ছিলাম ততক্ষণে ফোন চালু করে নাই, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অনেকবার চেষ্টা করছি কিন্তু বন্ধ।
অফিসে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলাম মোবাইল বাসায় রেখে এসেছি, নাস্তা করে টেবিলে রেখেছি তারপর আর আনা হয় নাই। প্রথমে ভেবেছিলাম পকেটমার নিয়ে গেছে কিন্তু অন্য একজনের নাম্বার থেকে কল দিয়ে দেখলা মা (সৎমা) রিসিভ করেছে। তারপর নিশ্চিত হলাম যে মোবাইল বাসায় রেখে এসেছি। দিনটা উসখুস করে কাটতে লাগলো কারণ মোবাইল কাছে থাকলে একটু পর পর কল দিয়ে মোহনার নাম্বারে চেষ্টা করতাম যদি অন করে?
বিকেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে বাসায় পৌছলাম, আর রুমের দরজা নক দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু দরজা খুলে যিনি দাঁড়িয়ে আছে তাকে দেখে অবাক হলাম। কারণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মোহনা, তার পরনে নীল রঙের শাড়ি, দুহাত ভর্তি চুড়ি আরও নানা ধরনের সজ্জিত জিনিস।
আমি কিছু একটা বলতে যাবো তখন পিছন থেকে মা বললোঃ- সজীব এসেছিস তুই? তাড়াতাড়ি আয় ভিতরে, তোর বিচার আছে।
– বললাম, কি হইছে মা?
– আচ্ছা তুই যে তোর অফিসের স্যারের মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করেছিস, সেটা আমাদের জানালে কি খুব ক্ষতি হতো? আমি হয়তো তোর সৎমা কিন্তু তোর বাবার কাছে তো বলতে পারতি?
– কিন্তু মা…..!
– কোন কিন্তু নেই, মেয়েটা খুব মিষ্টি রে একদম মনের মতো পুত্রবধূ পেলাম।
– আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো মা।
– আচ্ছা ঠিক আছে যা তোর রুমে চলে গেছে মনে হয়।
আমি আমার রুমে গিয়ে দেখি মোহনা খাটের উপর মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি হাত দিয়ে তার মাথা উচু করে দেখি দুগাল বেয়ে পানি পরছে। কান্না করে চোখমুখ লাল করে ফেলেছে।
– বললাম, কি হইছে মোহনা?
. মোহনা আমার বাড়িতে কীভাবে আসলো আর কি হইছে ঢাকা শহরে? সেটা জানার জন্য পরবর্তী পর্বের অপেক্ষা করুন।
.
বিঃদ্রঃ- কথা দিয়েছিলাম এক ঘন্টার মধ্যে যতটুকু লিখতে পারবো ততটুকু পোস্ট করবো। কিন্তু মাঝে গ্রাম থেকে মা কল দিল তাই তার সাথে ২০ মিনিট কথা বললাম। নাহলে আরেকটু বেশি হতো তবে গল্প লেখার চেয়ে মায়ের সাথে কথা বলে আনন্দ বেশি পেলাম। মায়ের জন্য বাড়িয়ে লিখতে পারিনি বলে কেউ তাকে বকা দিও না। মনে রেখো, সেই মায়ের জন্য কিন্তু আজ আমি সজীবের অস্তিত্ব।
আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
.
.
.
.
চলবে….?
.
.
.
.
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)