এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ৫৪+৫৫+৫৬+৫৭

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫৪.
#WriterঃMousumi_Akter

সময় টা শীত কাল।কচুপাতার নিচে শীতের আগমণ মাত্রই শুরু হয়েছে।কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে শীত একটু একটু করে প্রবেশ করছে শহরে।সকালে দূর্বাঘাসের উপরশিশিরের বিন্দু বিন্দু জল জমতে শুরু শুরু হয়েছে, রোজ সকালে প্রকৃতি কুয়াশার স্রোতে গোসল করে স্নিগ্ধ হচ্ছে।সময় টা বড্ড ই মিষ্টি।ছয়তলাবিশিষ্ট বাড়িটার তিনতলার পশ্চিমপাশের ফ্যাট টা ভাড়া নিয়েছি আমরা।নিজের স্বপ্ন সত্যি করতে নিজের স্বপ্নের শহর নড়াইল ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছি আমি আর রিয়া।কত শত স্মৃতির সাক্ষি নড়াইল শহর।কোলাহলপূর্ণ যান্ত্রিক শহর টা এসেই মানিয়ে নিতে পারছি না।ভীষণ মিস করছি ফেলে আসা গাছে বাঁধা দোলনা টা,ছুটে ছুটে মামির কাছে চলে যাওয়া,কাজিন দের নিয়ে বিশাল আড্ডার আসর, ঘোরাঘুরি। এখানে এসছি সাতদিন হয়েছে আম্মু আর কাকিমনি ও এসছে কিছুদিন থাকার জন্য।হঠাত করে নতুন জায়গা এক থাকা সম্ভব হবে না আর সব কিছু গুছিয়ে নিতেও কষ্ট হবে আর হুট কফ্রি অচেনা শহরে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার ও আছে। চারপাশের মানুষ গুলাকে দেখে মাঝে মাঝে লজ্জা ও পাচ্ছি আবার লজ্জায় ও পড়ছি মানুষ এখানে কত স্মার্ট তাদের সাজ গোজের ধরণ ই আলাদা সেখানে রিয়া আর আমি অতি সাধারণ দুইটা মেয়ে।কিছু কিছু আল্ট্রা মডার্ণ মেয়ের পোশাক দেখে লজ্জায় নাক কাটা যাচ্ছে।দুনিয়ায় কত ধরণের রুচির মানুষ আছে তা এই রঙিন শহর ঢাকায় না আসলে বুঝতাম না।আমাদের ফ্ল্যাটের পাশেই বিহান ভাই এর ফ্ল্যাট।পাশাপাশি একটা বিল্ডিং এ উনি থাকেন।আমাদের বেলকণি থেকে উনাকে দেখা যায় উনার বেলকণি।খুব একটা দূরত্ব না।কথা বললে শুনতে পাবেন বেলকণি থেকে চোখাচোখি হয় উনার সাথে।

আজ প্রথম মেডিকেল কলেজে আমাদের ক্লাস।রিয়া গোসল করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে গিয়েছে আমিও রেডি হয়ে গিয়েছি।অনেক এক্সাইটেড দুজনেই প্রথম ক্লাস দুজনেই ভীষণ নারভাস।বাসার পাশেই কলেজ।ক্লাস শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগেই রওনা হয়েছি আমরা দুজন।রাস্তায় যেতেই রিয়া বিভোর ভাই কে ভিডিও কল দিলো।বিভোর ভাই এর মন টা ভীষণ খারাপ।সাত দিন রিয়াকে দেখে না বিভোর ভাই।সারাদিন দেখা হয়েছে ঝগড়া করেছে আবার প্রেম করেছে অনেক ভাল ভাল স্মৃতি রয়েছে দুজনের।এই কষ্ট টা হওয়াটা স্বাভাবিক।বিভোর ভাই এর মুখ টা মেঘাচ্ছন্ন কালো গুমট আকাশের মতো।মনে হয় রুমেই সুয়ে আছেন বিভোর ভাই।

রিয়া শান্ত কন্ঠে বললো,ভাল আছেন আপনি?

বিভোর ভাই চাপা কাঁন্না আটকে বললেন হুম।তুমি?

আপনি ছাড়া আমি কেমন থাকি জানেন না।কথাটা বলেই রিয়া চোখের পানি ছেড়ে দিলো।গত সাতদিনে রিয়ার ও ভীষণ কষ্ট হয়েছে বিভোর ভাই এর জন্য।দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া আর মান অভিমানের গল্প ওদের দুজনের।

বিভোর ভাই এক নজরে তাকিয়ে আছেন রিয়ার দিকে।রিয়া আবার ও বললো আপনি কি কিছুই বলবেন না।এইভাবে থাকলে আমি প্রথম ক্লাস টা করতে পারবো নাহ।প্লিজ কিছু বলুন।

তোমায় ভীষণ মিস করছি রিয়া।গত সাত দিন মনে হয়েছে এ শহর অনুভুতি হীন।এ শহরের প্রাণ নেই।ভালবাসাহীন হয়ে পড়েছে এ শহর।তোমার শূণ্যতা আমাকে কাঁদাচ্ছে রিয়া।তোমাকে দেখার এই ভীষণ ইচ্ছা নিয়েই বোধহয় আমার মৃত্যু হবে।আমি যেদিকে তাকাচ্ছি মনে হচ্ছে এই বুঝি তুমি এসেই কোমরে হাত বেঁধে ঝগড়া শুরু করবে।চোখ অফ করলেই তোমাকে দেখছি।তোমাদের বাড়িতে যত বার গিয়েছি প্রতিটি কোনায় কোনায় মনে হয়েছে তুমি দাঁড়িয়ে হাসছো।

রিয়া বললো আমি আছি কখনো একা ভাববেন না নিজেকে।আমি বাস্তবেও আছি আর কল্পনাতেও আছি।আপনাকে ঘিরে আমার যে অনুভূতি তা কখনো শূন্য হবে না।প্লিজ মন খারাপ করবেন না।

তোমার মুখ টা দেখার পর সব মন খারাপ শেষ হয়ে গিয়েছে।তুমিও কখনো মন খারাপ করো না।মন দিয়ে লেখাপড়া করবে রিয়া।আমি তোমার পাশে আছি অলওয়েজ আছি রিয়া।খুব শিঘ্রই ঢাকা আসবো রিয়া।

আই লাভ ইউ বিভোর

আই লাভ ইউ ঠু রিয়া।

ফোন টা কেটে রিয়া আমার দিকে তাকাতেই বললাম,আমার মতো সিঙ্গেল এর সামনে এইভাবে প্রেম করিস না রিয়া।আমার খুব ই জ্বলে।

“তুই সিঙ্গেল দিয়া।”

“আমাকে দেখে বুঝিস না।”

“বিহান ভাই কে তাহলে।”

“তোদের বিহান ভাই ওর সাথে রিলেশন এ থাকা আর কলাগাছের সাথে রিলেশন এ থাকা এক ই কথা।আমাকে কি তার প্রেমিকা বলে কোনো কেয়ার করে।সে এখন মারাত্মক বিজি।আচ্ছা রিয়া বয়ফ্রেন্ড হবে বয়ফ্রেন্ড এর মতো সে এত বিজি থাকবে কি জন্য। দেখ আমাদের রুমের পাশের রুমে যে একটা আপু আছে সারাদিন উনার বয়ফ্রেন্ড এসে দাঁড়িয়ে থাকে।আর বিহান ভাই কে দেখ এই যে এসছি সাত দিন আম্মুর সাথে কথা বলছে, বাসায় আসলো আমার সাথে কি একটু পারসোনাল কথা বলেছে।আমি যে ঢাকায় এসছি তার মধ্য বাড়তি ফিলিংস কই।”

“বিহান ভাই আনকমন মানুষ। উনি দেখিয়ে কিছু করেন না।যা করেন উনার সময় মতো।তোর চান্স পাওয়াতে উনি যে ভাবে সেলিব্রেশন করলেন বাবাহ।দশ পাউন্ড কেক আনলেন সবাইকে খাওয়ালেন, কত মানুষ কে ইনভাইট করলেন কত খুশি ছিলেন দুই দিনে ভুলে গিয়েছিস।”

“ভুলি নি উনাকে মিস করছি তাই রাগ করছি।”

“বিহান ভ্যাই ম্যাজিকের সাহায্য রাগ পানি করে দিবেন।”

কলেজে প্রবেশ করেই চোখে তাক লেগে গেলো।ওয়াও এত টা সুন্দর বিহান ভাই এর শহর।এই কলেজ টা মানেই আমার কাছে বিহান ভাই এর দেশ।ক্লাস রুমে প্রবেশ করেই শুনি এখানে একজন প্রফেসর আছে অনেক হ্যান্ডসাম আর ইয়াং।প্রফেসর টা নাকি নতুন এবং এই কলেজের ই স্টুডেন্ট ছিলেন।ঠিক বুঝতে পারছি না কোন প্রফেসর এর কথা বলাবলি হচ্ছে।লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসলাম আমি আর রিয়া।ক্লাস রুমের সবাই তাদের হ্যান্ডসাম প্রফেসর কে নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে।কেউ কেউ বলছে জীবনে কোনো হিরোকেও এতটা কিউট দেখিনি আমি।স্যার তো না পুরাই ড্যাশিং আগুন একটা।উনি কি ম্যারেড উনার কি গফ আছে বিভিন্ন সমালোচনা চলছে।আমি আর রিয়া অবাক হয়ে প্রফেসর কে নিয়ে তাদের এই অদ্ভুত সমালোচনা শুনে যাচ্ছি।

এমন সময় ক্লাস রুমে ম্যাম এসে প্রবেশ করলেন।এই ম্যামকে দেখে আমার মাথা চক্কর মেরে উঠলো প্রেয়সী আপু।উনি আমাদের ক্লাস নিবেন।ওহ মাই গড। রিয়া আর আমি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই প্রেয়সী আপুতো আমাকে সহ্য ই করতে পারেন না।উনার ক্লাসে দেখে না জানি কত রিয়্যাক্ট করবেন।প্রেয়সী আপু সবার নাম জিজ্ঞেস করে পরিচয় নিলেন।সবার লাস্টে আমার কাছে এলেন আমার দিকে ঈর্ষাত্মক নয়নে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে রইলেন।আমি উঠে দাঁড়িয়ে রইলাম উনি আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করছেন না।বাকিরা হা করে তাকিয়ে আছে। সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন তোমার নাম?

ম্যাম দিয়া খাঁন।

ক্লাস শেষে দেখা করো আমি লাইব্রেরীতে থাকবো।

স্বভাবসুলভ একটা হাসি দিয়ে বললাম জ্বী ম্যাম ঠিক আছে।

প্রেয়সী ম্যাম ক্লাস টা নিয়ে বেরিয়ে গেলে আমি রিয়াকে বললাম উনি আবার আমাকে উলটা পালটা বলবেন নাতো।

আরে বললেই বা কি।হাইয়ার অথোরিটি বিহান ভাই এর কাছে অভিযোগ দিবো না।চিন্তা কিসের।

এমন সময় ক্লাসে প্রবেশ করলেন প্রফেসর বিহান ভাই।পরণে কালো জুতা,কালো জিন্স, কালো শার্ট,গায়ে সাদা এপ্রোণ, এক হাতে ঘড়ি বাঁধা আরেক হাতে একটা বই।ক্লাসে ঢুকেই সালাম দিলেন।আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি কয়েকশ ভোল্টেজ এর ক্রাশ খেয়ে ফেল্লাম তার ঠিক নেই।মুহুর্তের মাঝেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম আমি।উনার ক্লাস আছে উনি তো বললেন না।উনার ক্লাসে তো ফাঁকি ও দেওয়া যাবে না।ক্লাসের ছেলে মেয়ে উভয় ই হা হয়ে তাকিয়ে রইলো বিহান ভাই এর দিকে।মেয়ে গুলোর চোখে মুখে কি এক্সপ্রেসন সব টাই যেনো বিহান ভাই দিকে।মেয়েরা কি ক্লাসে মন দিতে পারবে।সবাই বলাবলি করছে এই সেই স্যার।মানে তারা বিহান ভাইকে নিয়ে এত কিছু বলছিলো।এইদিকে বিহান ভাই এর কোনো পাত্তাই নেই কে তার দিকে কিভাবে তাকিয়েছে সে ব্যাপারে।উনি উনার গম্ভীর মুডেই আছেই।বিহান ভাই সবাইকে সালাম দিলেন।বাকিরা সালামেএ উত্তর দিলো।আমার সামনে বেঞ্চের মেয়েটা যেনো আল্ট্রা মডার্ণ।উনি বিহান ভাইকে বলছেন হাউ কিউট,সো হট,আই লাইক ইট।বিহান ভাই সমার নাম জিজ্ঞেস করে আমার সামনে বেঞ্চের মেয়েটার কাছে এসে বললেন,আপনার নাম কি?

অনিকা সিকদার স্যার?সবাই অনি ডাকে আপনিও প্লিজ অনি ডাকবেন।কথা টা শুনেই বিহান ভাই ভীষণ বিরক্ত হয়ে গেলেন।বিহান ভাই রাগান্বিত মুডে তাকিয়ে বললেন সবাই কি আপনার কলেজের প্রফেসর। সবাই কি বলে ডাকলো সেটা কি আপনার কলেজের প্রফেসর ও ডাকবে?নেক্সট টাইম আমার ক্লাসে অযাযিত কথা বলবেন না।নাউ সিট ডাউন।

“এরপর ই বিহান ভাই আমার সামনে এলেন।এপ্রোনের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন।ভ্রু যুগল কিঞ্চিত উঁচু করে বললেন স্ট্যান্ড আপ।”

“উনার দিকে হা করে তকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি।”

“আপনার নাম কি?”

“দি দি দিয়া স্যার।”

“দি দি দিয়া?”

“না স্যার শুধুই দিয়া।”

“এত নারভাস কেনো আপনি?কিছু হয়েছে।”

“না না না স্যার কিছু হয় নি।এমনি নারভাস।”

“টিচার ক্লাসে আসলে আর টিচারের সাথে কথা বলার সময় উঠে দাঁড়াতে হয় জানেন না।”
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫৫.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

“ক্লাসে স্যার আসলে বা স্যারের সাথে কথা বলার সময় উঠে দাঁড়াতে হয় জানেন না।”

“আমিতো দাঁড়িয়েই আছি বিহান ভাই সরি স্যার।”

“বিহান ভাই চারদিকে তাকিয়ে দেখেন সবাই মুখ চেপে হাসছে।আমার তো খেয়াল ই নেই এটা কলেজ এখানে ভাই টাই বলা যাবে না।স্যার বলতে হবে।কি একটা অবস্থা চারদিকে সবাই হাসাহাসি করছে তারা কি না কি ভাবছে তার ঠিক নেই।বিহান ভাই এর ও কি হাসি পাচ্ছে আমার কথা শুনে।মুখে মৃদু মৃদু হাসি উনার।অদ্ভুত চাহুনি তে তাকিয়ে আছেন দিকে।”

আমার পেছনের বেঞ্চের একটা মেয়ে বলে উঠলো তুমি স্যার কে ভাই বলছো বলেই হেসে দিলো।

নিজেকে যেনো ভীষণ বলদ মনে হচ্ছে।যাকে মিনিটে ৩৬ বার ভাই ডাকি তাকেই আজ ভাই ডাকার অপরাধে লজ্জা পেতে হচ্ছে।ফ্যাকাসে একটা হাসি দিয়ে বললাম আসলে উনার মতো আমার একজন ভাই আছে তার নাম ও বিহান তাই ভুলে ভাই ডেকে ফেলেছি।চারদিকে সবার হাসির ছড়াছড়ি।বিহান ভাই একটা ধমক দিয়ে বললেন সাইলেন্ট প্লিজ।মিস্টেক হতেই পারে এটা নিয়ে এত বিশৃঙ্খলা করার কিছুই নেই।আর হ্যাঁ আমার ক্লাসে অযাযিত কথা, হাসাহাসি,কোলাহল, পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো সিসুয়েশণ কেউ সৃষ্টি করবেন না।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন মিস দিয়া সিট ডাউন প্লিজ।আর এতটা নারভাস হবেন না প্লিজ।নেক্সট ক্লাস গুলোতে বুকে সাহস রেখে ক্লাসে ফোকাস করবেন।মনে রাখবেন আপনি এমন একটা জায়গা এসেছেন এখানে ভীতু হলে চলবে না নিজেকে স্ট্রং না করলে টিকে থাকা মুশকিল হবে।ডোন্ট আপসেট প্লিজ।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে নিজের সিটে বসে পড়লাম।আচ্ছা একটা মানুষ এতটা কেয়ারিং কিভাবে হতে পারে।আমাকে প্রতিটা ক্লাসে মনোযোগী হতে কিভাবে সাহস যুগিয়ে গেলেন।

বিহান ভাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন উনার টাইম শেষ।নেক্সট আরেকজন প্রফেসর প্রবেশ করলেন।এই প্রফেসর টাও কোনদিকে কম যায় না।দেখতে শুনতে বেশ সুন্দর খুব ফরসা না হলেও দেখতে ভারী মিষ্টি আর লম্বা সরু নাক এর অধিকারী। উনাকে দেখে সামনের বেঞ্চের মেয়ে গুলা বলাবলি করছে এই কলেজের সব স্যার রাই কি ড্যাশিং নাকি।দুনিয়ার সব কিউট কিউট ছেলে কি এখানে।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,এই মেয়েগুলা এত ছ্যাচড়া কেনো রে।দেখ একটা ভালো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না আশ্চর্য। রিয়া হেসে দিয়ে বললো বুঝেছি বিহান ভাইকে নিয়ে তখন কমেন্ট করাতে তোর খুব ফাটছে তাইনা দিয়া।বুঝিস না খুব রাগ হয় আমার আজ উনার খবর আছে।

প্রফেসর বলে উঠলেন হ্যালো আমি নির্বাণ চৌধুরী।আপনাদের সাথে সপ্তাহে তিনদিন আমার ক্লাস থাকবে।সবার পরিচয়পর্ব টা আগে নেই।উনি সবার সাথে হাই হ্যালো করে পরিচয় নিচ্ছেন।আমার সামনের বেঞ্চে বসা অনিকা মেয়েটি বললো হ্যালো স্যার আমি অনিকা সিকদার আপনি চাইলে অনি ডাকতে পারেন আমার ভাল লাগবে।স্যার হেসে উত্তর দিলেন নাইস নেইম সিট ডাউন।স্যার এবার আমার সামনে আসাতেই আমি উঠে দাঁড়ালাম।আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন উত্তর দিলাম স্যার আমার নাম দিয়া।স্যার হেসে বললেন অনেক পিচ্চি দেখতে আপনি।দেখে মনেই হয় না কলেজ পেরিয়ে গিয়েছেন।এত পিচ্চি মেয়ে আগে দেখি নি।স্যারের মুখে এমন কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।

“ক্লাস শেষ হতেই পেছনের বেঞ্চের একটা মেয়ে বললো পিচ্চি দিয়া আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি।আমি হেসে বললাম সিওর কি নাম তোমার।মেয়েটি বললো সিয়া।”

“কিউট নাম তোমার।”

“তুমি আর রিয়া ও অনেক কিউট।তার থেকে বেশী কিউট তোমার কথা বিহান স্যার কে তখন উনি বললে কেনো?একদিনেই উনি।”

“নারভাস হয়ে গেছিলাম তো তাই।”

“ওইযে অনিকাকে দেখছো।এক সাথে মেডিকেল কোচিং করেছি।এতযে গায়ে পড়া জানো না।কোচিং এ একটা হ্যান্ড সাম স্যার দেখলেই সেইম করতো হাই আমি অনিকা চাইলেই অনি ডাকতে পারেন।এটা ওই মেয়ের কমন ডায়লগ কি অসহ্য লাগে যে।নির্বাণ স্যার আর বিহান স্যারের দিকে নজর গিয়েছে লে স্যারদের অতিষ্ট করে ছাড়বে।”

“কি বলো সিয়া ওই অনিকা এমন মেয়ে।”

“আরে হ্যাঁ এমন ই।”

ক্লাস রুম থেকে বেরোতেই পেছণ থেকে কেউ একজন ডাকলেন তাকিয়ে দেখি প্রফেসর নির্বাণ।রিয়া আর আমি দুজনের থেমে গেলাম।উনি আমাদের কাছে এসে বললেন মিস দিয়া আপনাদের দুজনের জন্য ছোট্ট একটা গিফট। গিফট শুনেই অবাক হয়ে গেলাম গিফট কেনো?কোনো স্যার বুঝি গিফট ও দিতে জানে।রিয়া বললো স্যার কি গিফট। স্যার রিয়ার হাতে দুইটা পেন আর দুইটা চকলেট দিয়ে বললেন রিয়া একটা আপনার আরেকটা উনাকে দিবেন প্লিজ বলেই স্যার চলে গেলেন।রিয়া আমাকে বললো কিরে দিয়া ডাল মে কুচ কালা হে না।স্যার চকলেট তোকে না দিয়ে আমাকে দিয়ে দেওয়াচ্ছেন ক্যানো?কি কাহিনী?উনার চোখ মুখ সুবিধার লাগছে না কিন্তু।তোর দিকে কিভাবে যেনো তাকায় উনি।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম তোর কি সব সময় এসব উদ্ভট চিন্তা ছাড়া আসে না।উনি প্রফেসর আর প্রফেসর রা বাবার মতো হন জানিস না।রিয়া বললো তাহলে বিহান ভাই কি?উনি শুধু আমার দিল্লিকা লাড্ডু আর বাকিদের বাবার সমান বুঝলি।

এইদিকে প্রেয়সী আপু আবার লাইব্রেরিতে অপেক্ষা করছেন।রিয়াকে নিয়ে লাইব্রেরির দিকে রওনা হলাম।লাইব্রেরিতে প্রবেশ করার আগেই কেউ একজন হাত ধরে টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।বুকের মাঝে আচমকা দুরুম দুরুম সাউন্ড শুরু হলো।হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে খানিক টা ঝুঁকে চেয়ারের দুই হাতল ধরে আছেন বিহান ভাই।

“উনাকে দেখেই উঠতে গেলাম কিন্তু উনার হাতের বন্ধনীর জন্য উঠতে পারলাম নাহ।উনার কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গিয়েছে।ভ্রু নাচিয়ে বললেন কি ব্যাপার এত নড়ছিস ক্যানো?আর বসে থাকতে কি খুব অসুবিধা হচ্ছে। উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে কেনো?”

“আপনি না আমার স্যার আপনার সাথে কথা বললে তো উঠে দাঁড়িয়ে বলতে হবে তাই?”

“তাইনা পিচ্চি?সেটা ক্লাসরুমে।আমার পারসোনাল রুমে নয় মিসেস বিহান।”

“ছাড়ুন তো আপনি?সাত সাত টা দিন ঢাকায় এসছি কোনো খবর নিয়েছেন?”

“খবর নেই নি বলছো?”

“না বাসায় গিয়েছেন আপনার ফুপ্পির সাথে দেখা করতে আমার সাথে না।”

“তা ফুপ্পিকে অভারটেক করে তোর সাথে কথা বললে ফুপ্পি কি ভালো চোখে নিতো ব্যাপার টা।।”

“আপনি এমনিতেও আমাকে এখন গুরুত্ব দেন না।এত সুন্দরী মেয়েদের মাঝে আমাকে ভাল লাগে না বুঝি তো।আমি তো পুরাণ হয়ে গেছি তাইনা বিহান স্যার।”

“বিহান স্যার এর কাছে আপনি আজ ই প্রথম স্টুডেন্ট। তাই স্টুডেন্ট হিসাবে একেবারে নিউ আপনি?”

“আর বউ হিসাবে?”

“থাক এটা এখন বলবো না। এটা বলবো বাসর ঘরে।”

“এখনি বলেন আপনি?.”

“উহু এত ভয়ংকর প্রেমের বর্ণনা এইভাবে দিতে পারবো না।এনি ওয়ে এখানে কি অনেক সুন্দরী মেয়েরা দিয়া।”

“হ্যাঁ আমি বাদে সবাই খুব সুন্দরী। ”

“এখানে যে আগে মেয়েরা থাকতো সেটা জানতাম বাট সুন্দরীরা ছিলো সেটা জানতাম না।তবে দিয়া আজ ভীষণ সুন্দর একটা মেয়ে দেখে ক্রাশ খেয়েছে।মেয়েটা তোদের সাথেই পড়ে।বিলিভ নি এত সুন্দর মেয়ে আগে দেখি নি আমি।হাউ কিউট।”

” ক্ষীপ্ত নয়নে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,কে ওই অনিকা নাকি বিহান ভাই।”

“নাম বলবো না শুধু এটুকু বলতে পারি এ শহরে আজ ভালবাসা এসেছে।সে এসেছে এ শহরে।তার প্রবেশে এ শহরে প্রতিটি কোনায় কোনায় ভালবাসারা বাসা বেঁধেছে।এ শহর আজ আমার দিয়া।তার আগমন ঘটেছে আজ আমার শহরে।”

“বাহ বিহান ভাই বাহ!আমাদের এতদিনের রিলেশন আর আপনি এখন অন্য মেয়েতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।”

“পড়লে আর কি করার।যাক বাদ দে কিছু খেয়েছিস।”

“না খাই নি।”

“কেনো খাস নি।”

“তোর কিপটা বাপের টাকা বাঁচাচ্ছিস তাইনা?এত টাকা দিয়ে কি করবি।না খেয়ে টাকা জমিয়ে কি ওপারে গিয়ে জমি কিনবি।তোর দাদা ও হাড় কিপটা ছিলেন।তোদেএ বংশ ধরেই হাড়কিপটা। তুই তাদেএ মেয়ে দেখেই বোঝা যাচ্ছে”

“দেখুন বাজে কথা বলবেন না একটুও বলে দিচ্ছি।”

“না খেলে ঠিক ই বাজে কথা বলবো।ক্লাস কেমন লাগলো?”

“নির্বাণ স্যারের ক্লাস বেশ ভাল লেগেছে।”

বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে আর বললেন রিয়েলি।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫৬.
#WriterঃMousumi_Akter
“নির্বাণ স্যারের ক্লাস টা সত্যি সুন্দর ছিলো বিহান ভাই।”

“স্যারের পড়া বুঝতে অসুবিধা হয়নি তো।ক্লাসে যা পড়িয়েছে তাকি বুঝেছিস। ”

“হ্যাঁ অসাধারণ ছিলো বুঝবো না ক্যানো?”

“স্যারের পড়ানো টা অসাধারণ ছিলো নাকি নাকি স্যারের চেহারা দেখে বলছিস কোনটা।”

“দুটোই নির্বাণ স্যারের থেকে কম বয়স স্যার এর আগে দেখি নি।”

“আমার থেকে দুই ইয়ারের সিনিয়র নির্বাণ আর তুই ওর থেকে কম বয়সী স্যার দেখিস নি।আমাকে কি তোর চোখে যায় না ভ্রু কুচকে বললেন।”

“আপনি তো বুইড়া কাক্কু।লুকিং এ কাক্কু।”

“এক গোছা চুল টেনে ধরে বললেন,তোর মতো গভেট তো ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে কিছু বলতেও পারে নাহ।তুই যে বিভোর কে বুইড়া বললি আমি কি সেটা বলবো বিভোর কে।”

“কি বলবেন আপনি?”

“বলবো দিয়া তোকে বুইড়া কাক্কু বলেছে।”

“কখন বললাম। ”

“একটুও মিথ্যা বলবি না তুই মাত্রই বলেছিস।”

“সেটা বিভোর ভাই নয়।আপনাকে বলেছি।”

“এদিক ওদিক কোনদিক দিয়ে মেলালেও তো আমি তোর কাক্কু হচ্ছিনা।শরিয়ত মোতাবেক আমি তোর হাজবেন্ড।কাক্কু মানেই যে বয়স বেশী সেটা নয়।এইযে ধর আগামিকাল শোনা গেলো দিয়া বিহানের সন্তানের মা হতে চলেছে তাহলে বিভোর কাকু হয়ে যাবে।তাহলে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বিভোর কেই তো কাক্কু বললি।”

“আপনার এই কুটিল বিদ্যা আমার কাছে প্র‍য়োগ করবেন না।নিশ্চিত জিলেপির আবিষ্কারক আপনি?আপনি ছাড়া এমন কুটিল জিনিসের আইডিয়া আর কারো নেই।”

“হাই আমার শ্বশুরের মেয়ে তার একমাত্র জামাই কে কি ভাবে নির্যাতন করছে?”

“আবার মিথ্যা বলছেন?”

“এবার যা বলছি তা সত্যি?এইভাবে রোমান্টিক অত্যাচার করে আমাকে মেরে ফেলার ধান্দা তাইনা?বউ আমার অথচ এখনো কোলবালিশ নিয়ে ঘুমোতে হয়।এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় নিড বউ।আমার সামনে দিয়ে এমন কিউট কিউট ঢং করলে এবার তুলে নিয়ে আসবো।”

“কোল বালিশ নিয়ে তো আমি ও ঘুমোয়।”

“তুই পাশে থাকলে কোল বালিশ কে ভোমরা বর্ডার পার করে দিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবো।”

“রিয়া বাইরে অনেক্ক্ষণ ওয়েট করছে এবার যায়।”

“ওকে বাট খেয়ে বাসায় যাবি।আর হ্যাঁ নির্বান কে আমি বলেছিলাম তোর আর রিয়ার খেয়াল রাখতে।”

“কিহ আপনি?আর আমি ভেবেছি আমার জন্য স্যারের কত দরদ।”

“তো কি এমন সাহস কারো আছে যে তোর প্রতি দরদ দেখাতে যাবে।”

“উনার রুম থেকে বেরিয়ে দেখি রিয়া বাইরে অপেক্ষা করছে।আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় হাসি দিয়ে বললো কি হলো ভেতরে দিয়া?”

“মুড়ি ভাজি হলো শব্দ শুনিস নি?”

“মুড়ি ভাজি কে করলো?”

“আমাকে মুড়ির মতো ভাজি করেছে ভেতরে নিয়ে।আরেক টু হলেই প্রাণ টা যাচ্ছিলো আমার।গরম বালু তে দিয়ে যেভাবে মুড়ি ভাজি করে আমাকেও সেইম করেছে।”

“ওহ আচ্ছা আমি ভেবেছি অন্য কিছু?”

“সবাই কি বিভোর ভাই যে অল টাইম রোমান্টিক মুডে থাকবে।উনি থাকেন করলা ভাজির মুডে।”

“যাক বাবা আমি ভাবলাম বিহান ভাই ধীরে ধীরে তোর দিকে এগোচ্ছে আর তুই স্লো মেশনে পিছনে যাচ্ছিস।পাশেই মিউজিক হচ্ছে উউউউউউউউউ আশিক বানাইয়া, আশিক বানাইয়া আপনে।আহ কি ফিলিংস তোর বিহান ভাই ধীরে ধীরে লিপ নিয়ে আগাচ্ছেন।”

রিয়ার পায়ে একটা গুতা দিয়ে বললাম আমার সহজ সরল বিভোর ভাই কে এভাবে পাকা বানিয়ে ফেলছিস তাইতো রিয়া।এইবার বুঝেছি।

হ তোর বিভোর ভাই হেব্বি রোমান্টিক।আমাকে দেখলেই তার ইয়ে পায়।মানে হানিমুন পায়।

দুজনে কথা বলতে বলতে লাইব্রেরি প্রবেশ করলাম।লাইব্রেরিতে কত স্টুডেন্ট বসে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে।লাইব্রেরিতে তাকে তাকে বই সাজানো।চারদিক চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম।একটা ফাঁকা টেবিল আমরা দুজনে বসলাম।আশে পাশে তো প্রেয়সী আপুকে দেখা যাচ্ছে না উনি তো এখানেই আসতে বললেন।কিছুক্ষণের মাঝেই প্রেয়সী আপু প্রবেশ করলেন আর উনি সোজা আমাদের কাছেই এলেন।আমাদের সামনের চেয়ারে বসলেন।

“আমি বললাম আপু কেনো ডেকেছেন?”

“আপু।কে তোমার আপু?তুমি আমার স্টুডেন্ট রাইট নাউ।সো কলম মি ম্যাম ওকে।”

“সরি ম্যাম।আমাকে কি কিছু বলবেন?”

“হ্যাঁ বলবো।তুমি তাহলে শেষ অবধি ঢাকা মেডিকেল এ পা রাখলে।”

“জ্বী ম্যাম আপনাদের দোয়াতে চান্স পেয়েছি।”

“এতে তো তোমার ক্রেডিট নেই সবটায় বিহানের ক্রেডিট। বিহানের চেষ্টা আর সঠিক গাইড লাইন না থাকলে এখানে পা রাখার সৌভাগ্য হতো না তোমার।”

“হ্যাঁ আপু একদম ঠিক বলেছেন।উনি মানে বিহান উনার অনেক কেয়ার আমার প্রতি।অনেক গাইড করেছেন আমার।বাকি জীবন এভাবেই কেয়ার করে যাবেন উনি আমার।”

“বিহানের নাম ধরে ডাকো এখন?”

“এটা পারসোনাল ব্যাপার ম্যাম।”

“তোমার কথার ধরণ ই দেখছি বদলে গিয়েছে।মেডিকেল এ চান্স পেয়েই এই অবস্হা।আমাদের মতো এই পজিশন এ আসলে তো অহংকারে মাটিতে পা ই পড়বে না।”

“আমার ব্যাক্তিগত বিষয় শেয়ার না করাকে যদি আপনার অহংকার মনে হয় তাহলে মনে করবো এত লেখাপড়া শিখেও আপনার বোঝার ক্ষমতা অনেক কম।”

“চলে যাও দিয়া এখান থেকে।যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও বাট এই মেডিকেল কলেজ আর বিহান দুটো জিনিস ছেড়ে চলে যাও।আমি রিকুয়েষ্ট করছি চলে যাও।আমার রিকুয়েষ্ট কে হিংস্র রুপে পরিণত করতে বাধ্য করো না।টাকা লাগবে তোমার গাড়ি বাড়ি যা লাগে নাও বাট বিহান কে ছেড়ে দাও।আমি অনেক অপমানিত হয়েছি বিহানের কাছে শুধুমাত্র তোমার জন্য।বাবার একটাই মেয়ে আমি জন্মের পর থেকে ভালবাসা আর বিলাসিতা কোনোকিছুর ই কমতি ছিলো না আমার।সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম আমার।হুট করেই আমার জীবনে বিহান আসে।মানে এই মেডিকেল এ প্রথম দেখা হয় বিহান আর আমার।সেই প্রথম দেখাতেই মন হারিয়েছিলাম আমি বিহানের প্রেমে।বিহানের সাথে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয় আমার। আমি বিহান কে লাইক করতাম আমি মনে করতাম বিহান হয়তো এটা বোঝে। বাট পরে জানতে পারি বিহান কখনো বিষয় টা সিরিয়াসলি নেয় নি।আমি তাকে কোন চোখে দেখি এটা নিয়েও সে সিরিয়াস না।আমার চাওনি,আমার হাটা চলা আমার বিহানের প্রতি ফিলিংস কোনো কিছুই বিহান ভেবে দেখে নি।মানে সে অন্য মেয়েদের থেকে ভিন্ন কিছুই দেখে নি।পরে আমি বিহান কে জানিয়েছিলা আমি তোমাকে ভালবাসি বিহান তখন বিহান উত্তর দিয়েছিলো সে অন্য কাউকে ভালবাসে।সেই অন্য কেউ টা কে এটা খুজতে গোটা চারটা বছর লেগেছে আমার।অবশেষে আমি খুজেপেয়েছিলাম তোমাকে।সেদিন থেকে তোমাকে তুচ্ছ মনে হয় আমার।হিংসা হয়,রাগ হয় আমি সহ্য করতে পারি না তোমাকে।তুমি না থাকলে বিহান আমার ই হতো।কেনো তোমার জন্ম হলো দিয়া আমার জীবন টা অতিষ্ট করতে।আমার ৬ বছরের ভালবাসা বিহান।

আপনি মাত্র ছয় টা বছর ভুলতে পারছেন না আর বিহান ভাই এর ঊনিশ টা বছরের ভালবাসা আমি।উনি কিভাবে ভুলবে আমাকে ভেবেছেন।

আমি কিছুই জানিনা না দিয়া।তবে জানি তুমি না থাকলে বিহান আমার জীবনে আসবে।তাই তোমার না থাকাটা বেশী জরুরি।তোমার রেজাল্টের দিন বিহান আমার সাথে দেখা করেছিলো আর কি বলেছিলো জানো?
দিয়া অনেক জেদী একটা মেয়ে।আমার জিদ তুই দেখেছিস কিন্তু দিয়ার জিদ দেখিস নি।দিয়া আমার জন্য সব পারে।আমি দিয়ার জিদ।তোর করা সব অপমানের উত্তর দিয়া দিয়েছে চান্স পেয়ে।ওর এই চান্স পাওয়া কি প্রুভ করে না তুই যা বলেছিলি তা সম্পূর্ণ ভুল।দিয়ার সামনে কিভাবে মুখ দেখাবি তুই।তুই যেগুলা বলেছিস অন্য কেউ হলে লজ্জায় মারা যেতো হয়তো।দিয়া ইজ দিয়া প্রেয়সী।আজ দিয়া চান্স না পেলে আজ আমি তোকে আমাদের বিয়ের দাওয়াত দিতাম।দিয়া কে ছেড়ে দিতাম বা আমার যোগ্য না এসব ভাবতাম না।দিয়ার মতো তুই চাইলেও হতে পারবি না।ওই পিচ্চি আমার ডাক্তার হওয়ার অনুপ্রেরণা।আমার ভাল থাকার মেডিসিন।”
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫৭.
#WriterঃMousumi_Akter

একটা ছেলে একটা মেয়েকে এতটা ভালবাসে কিভাবে দিয়া? আমি ফিল্মে যা দেখেছি বাস্তবে সেটা বিহানের মাঝে দেখেছি।তাকিয়ে দেখো আমার দিকে দিয়া আমি চাইলে এই শহরে অর্ধেক কিনে ফেলতে পারি আমার বাবার এতটাই সম্পত্তি আছে।টাকার অভাব নেই আমার দিয়া।লুক এট মি তোমার থেকে সুন্দরে আমার কমতি নেই কোনোকিছু আমার গায়ের রং তোমার থেকে অনেক বেশী উজ্জ্বল। আমার হাইট দেখো তোমার আমার কাছে এই টুকু মাত্র।আমি বড় একজন ডাক্তার।ঢাকার মেয়ে স্মার্টনেস এ কমতি নেই ম্যাচুরিটিতে ভরপুর বিহানের বয়সের সাথে ও আমাকে যায় পুরাটা আর তুমি।তুমি এইটুকু একটা মেয়ে,বিহানের কোমর ও ছুতে পারবে না হাইট এর দিক থেকে নড়াইল থেকে আসা একটা আনস্মার্ট মেয়ে তবুও বিহান তোমাকে কেনো ভালবাসে দিয়া।বিহান আমার না হলে তোমার ও হবে না মাইন্ড ইট।জীবনে চেয়েছি পাই নি এমন কিছুই আমার জীবনে নেই তাই বিহান কেও আমার করে নিবো।

প্রেয়সী আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি উনার মুখ আর চোখ দিয়ে রাগের অগ্নিবর্ষণ ঝরছে।ভালবাসা মানুষকে এতটা ডেস্পারেট করতে পারে।উনার ভেতরের তীব্র যন্ত্রণা স্পষ্ট ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে।সেই সাথে প্রবল হিংস্রতা।ভালবাসার যন্ত্রণা আমি বুঝি তাই একদিক ভেবে কষ্ট পাচ্ছি যে প্রেয়সী আপু ভালবাসার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু এটা কেমন ভালবাসা যা মানুষকে অপমান করে ছোট করে হিংসা করে।নিজেকে নিয়ে অনেক অহংকার উনার।এর আগেও অনেক অপমান করেছে আমাকে।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে রিয়া বললো আচ্ছা আপনি না আমাদের ম্যাম।একটা স্টুডেন্ট কে ডেকে প্রেম ভালবাসা নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন।দিয়া থাকুক আর না থাকুক বিহান ভাই এর ভালবাসা দিয়ার জন্য ই ছিলো আর থাকবে।একজন ম্যাম হিসাবে আপনাকে এতটুকুও রেসপেক্ট করতে পারলাম নাহ সরি।

বিহান এখন আর তোমাদের ভাই হয় না।সো এই ঘন ঘন ভাই ডাকা অভ্যাস টা চেঞ্জ করো রিয়া।বিহান এর পজিশন টা দেখো এখন।

রিয়া বললো বিহান ভাই এর পজিশন আমাদের কাছে ওয়ানলি ভাই।ভাই মানে ভাই।আর দিয়ার কাছে বিহান ভাই এর পজিশন ওয়ানলি লাভার আন্ডারস্ট্যান্ড ম্যাম।

বেশী বেড়ো না তোমরা।তোমাদের ফিউচার কিন্তু আমার হাতে পড়ে আছে।আমি তোমাদের শত্রু হয়ে বিপক্ষে দাঁড়ালে কোনদিন এখান থেকে পাস করে বেরোতে পারবে।

রিয়া কে চুপ করিয়ে বললাম,এক্সকিউজ মি! আমরা নিজেদের যোগ্যতায় এখানে চান্স পেয়েছি। আপনি নিজেই নিজেকে শত্রু ভাবছেন।খাতায় সঠিক লিখলে ফেইল করাবে এমন ক্ষমতা কারো নেই।সো এসব ভয় দিয়া পাই না ম্যাম।আর যে বললেন এখানে চান্স পেয়েছি বিহানের ক্রেডিট। বিহান আমার ফ্যামিলি পারসন সে আমার প্রতি কেয়ারিং হবে নাতো কি অন্যর প্রতি হবে।আপনার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে আপ নার ফ্যামিলি তে কেউ কারো কেয়ার ই করে না।এইজন্য আপনি এটাকে স্বাভাবিক নিতে পারছেন না।এনি ওয়ে আপনি বার বার বিহান ভাই কে নিয়ে মাথা ঘামান কেনো?বিহান ভাই ভালো ডাক্তার,উনি দেখতে সুন্দর সব কিছু ঠিক আছে এগুলা নিয়ে আপনার ক্রেডিট নেওয়ার কি আছে।কি হয় বিহান ভাই আপনার। উনি আমার লাইফলাইন উনাকে নিয়ে গর্ব করলে আমি করবো। বেহুদা অন্যর জীবন নিয়ে ভেবে অশান্তি বাড়িয়ে লাভ কি?আদেও কিছু পেয়েছেন কি?আর পাবেন ও না।আর হ্যাঁ আপনিও তো বিহান ভাই এর থেকে কম না। আপনিও কারো দায়িত্ব নিয়ে চান্স পাইয়ে দেখান কিভাবে পারেন।আপনার ক্রেডিট ও দেখতে চাই আমরা।পরিশেষে বলতে চাই আপনার ব্যাক্তিগত জীবন টিচার স্টুডেন্ট এর মাঝে আনবেন না রিকুয়েষ্ট ইউ।

________________________________
এক কাপ কফি হাতে নিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি ভীষণ বিষন্ন লাগছে চারদিক।প্রেয়সী আপুর কথাগুলো কানে বাজছে। কফি থেকে ধোয়া উড়তে উড়তে কখন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারি নি।সামনের বেলকনিতে একটা পুরুষ কাপড় মেলছে কাপড় গুলো মনে হয় উনার স্ত্রীর ই।আচ্ছা উনার ওয়াইফ কোথায় উনি কেনো রোজ কাপড় মেলে দেন।কিছুক্ষণ পর দেখি উনার ওয়াইফ বেলকনিতে এসছে।মহিলাটির চোখের নিচে কালি জমেছে কিছু হয়েছি কি উনার।উনি আসতেই উনার হাজবেন্ড উনার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মেপে দেখছেন।ওয়াইফ এর গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিলেন।দৃশ্য টা রোজ ই দেখি আমি।

রুমে এসে বই নিয়ে নাড়াচাড়া করছি।আম্মু কাপড় ভাজ করতে করতে বললো বিহানের জন্য একটা ডাক্তার মেয়ে দেখেছে তোর ছোট মামা।তোর ছোট মামার বন্ধুর মেয়ে।এখন তো বিয়ে দিতেই হবে কিন্তু বিহানের সেদিকে তেমন তাড়া নেই।কথা হচ্ছে বিহানের সামনে কথা টা তুলতে হবে যে তোর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হয়েছে।আম্মুর চোখে মুখে এত আনন্দ দেখে মনে মনে বললাম আমি কি তোমার শত্রু আম্মু।নিজের মেয়ের ঘরে সতীন আসবে সেই খুশিতে মাতোয়ারা এই প্রথম কোনো মা।আম্মুর কথা শুনতে আমার একটুও ভাল লাগছে না কলম শেষ বলেই নিচে নেমে এলাম।

বাসার এই সাইড টাতে অনেক বড় মাঠ আছে এখানে বিকালে সবাই বাচ্চা নিয়ে এসে বসে।কেউ হাটাহাটি করে, বাচ্চারা খেলাধুলা করে।নিচে নেমেই দেখি নির্বান স্যার দাঁড়িয়ে আছেন।আমি চাইছিলাম যেনো চোখে চোখ না পড়ে কিন্তু প্রথম বার তাকাতেই উনি ভীষণ সুন্দর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন,হাই পিচ্চি দিয়া।

“স্বভাবসুলভ একটা হাসি দিয়ে বললাম স্যার আপনি এখানে।”

“আমার বাসা তো এখানেই ওইযে আকাশী কালারের বিল্ডিং ওর তিন তলায় আমি থাকি।”

“ওহ আচ্ছা স্যার। ”

“হোয়াট এ সারপ্রাইজ দিয়া এখানে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি আমি।”

“জ্বী স্যার আমিও ভাবতে পারিনি।”

“আমাকে আনইজি লাগছে ক্যানো দিয়া তোমার।এসো চা খাবে।”

“না স্যার আমি দুধ চা ছাড়া খাই না।”

“মামা একটা দুধ চা দেন।দুধ বেশী করে দেন।”

“স্যার এগুলোর কি প্রয়োজন ছিলো।”

“রিল্যাক্স দিয়া।দূর্ভাগ্যক্রমে আমি তোমার টিচার হয়েছি।আমাকে তোমার বিহান ভাই এর মতো ভাই ডাকতে পারো প্রব্লেম নেই।আমি অনেক আগে থেকেই তোমাকে চিনি।”

“চা এ চুমুক দিয়ে বললাম স্যার কিভাবে চিনেন।”

“বিহান যেদিন মেডিকেল এ টপার হলো সেদিন বিহানের খুব মন খারাপ ছিলো।ওর ফুফাতো বোন দিয়া মেডিকেল এ চান্স পায় নি।তখন থেকেই আমাকে বলতো আগামিবছর দিয়া নামে একজন এডমিশন হবেই অগ্রিম বলে রাখলাম।আমি বলেছিলাম সিওর কিভাবে এতটা তুই।বিহান বলেছিলো দিয়া ভীষণ জেদী,মেধাবী,ট্যালেন্ট। বলেছিলো চঞ্চল পাখির মতো প্রবেশ করবে দিয়া, দেখতে একদম ই পিচ্চি একটা মেয়ে।কথায় কথায় রেগে যাও, কেঁদে দাও পুরাই নাকি রাগ পরী।তোমাকে না দেখেই মনের ভেতরে অনেক কল্পনার ছবি একেছি।তখন থেকেই তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো।সত্যি তুমি চান্স পেলে বুঝেছিলাম আসলেই জেদী তুমি।”

“উনি আমাকে নিয়ে এত কিছু বলেছেন।না মানে উনার এত সময় আছে।”

“এটা ঠিক বলেছো ওর মুখে কোনো মেয়ের কথা শোনা যায় না তবে তোমার কথা শুনেছি।এইজন্য ই ইন্টারেস্ট বেশী ছিলো।”

“কই আমার সামনে তো উনি বলেন না আমাকে তো সময় চোখের রাগ দেখান।”

“হয়তো ভয় পাও বলেই ওর ভয় দেখাতে ভাল লাগে। ”

“এ কেমন ভাল লাগা স্যার।”

“বিহানের ব্যাপার টা জানিনা তবে তুমি সত্যি ভাল লাগার মতো।আরেক কাপ খাবে চা।”

“না না স্যার আর খাবো না।”

“একটা নোটস দিয়েছি সবাই কে।তোমাকে পায় নি তাই বিহানের কাছে দিয়েছি পরাটা কমপ্লিট করে যেও কাল ক্লাসে।”

“স্যার বিহান ভাই কেই কেনো দিলেন।দুনিয়াতে কি আর মানুষ পেলেন না।আমাকে জানালে আপনার বাসায় গিয়ে নিয়ে আসতাম। ”

“তুমি এত কষ্ট করবে কেনো যেখানে তোমার ভাই আছে?বিহান এখন বাসায় আছে যাও নিয়ে যাও।”

যেখানে যায় সেখানেই বিপদ। এই স্যার আমাকে এত বড় বিপদে না ফেললেও পারতেন।উফফফ কেনো যে বারবার এই সমস্যায় পড়তে হয়।দু ‘মিনিটের রাস্তা এখান থেকে বিহান ভাই এর বাসা।রাস্তার পাশের দোকান থেকে একটা ডং ডং চিপস কিনলাম। চিপস টা হাতে নিয়েই বিহান ভাই এর বাসায় গেলাম।কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিলেন উনি।উনাকে দেখেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।মনে হচ্ছে শাওয়ার নিয়ে মাত্রই এসেছেন গায়ে পানিতে টইটুম্বর।নাভির নিচে সাদা টাওয়াল এর গিট্ট।উনার নাভি এত সুন্দর ক্যান এক নজরে তাকিয়ে সেটাই ভাবছি।

“কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আমার হাত থেকে চিপস এর প্যাকেট ছো মেরে নিয়ে বললেন এত কিপটা কেনো তুই দিয়া।তোর বর তো আর ফকির না।”

“কিপ্টার কি করলাম আমি? ”

“এই আত্মীয়ের বাসায় এসছিস জাস্ট দশ টাকার চিপ্স নিয়ে।”

“আমি আপনার জন্য আনিনি।আমার জন্য এনেছি দিন আগে আমার চিপস।”

“আনিস নি কেনো সেটাই বলছি।তোর বর যে ফকির সেটা তো আর না।প্রতি মাসে তোর বিকাশ একাউন্টে ত্রিশ হাজার করে টাকা দেয়।তাছাড়া তোর বর এত নামকরা একজন ডাক্তার পেশেন্ট এর ফি তো আর কম না তাইনা।তাছাড়া একজন প্রফেসর ও সে সাথে ফ্রিল্যান্সিং ও করে।টাকা খরচ করে আবার তো বায়না ধরতে পারিস যে আমার টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু অন লাইনে সুন্দর একটা শাড়ি দেখেছি পেমেন্ট টা করে দাও প্লিজ।এটাকে কি কিপটামি বলবো নাকি বোকামি বলবো কোনটা বুঝলাম না।এইটুকু বয়স তোর কোথায় সাজুগুজু তে পূর্ণ মনোযোগ থাকবে যা দেখবি তাই কেনার বায়না ধরবি অথচ কিছু দিতে চাইলেও না না করিস। ঠিক ই নিজের মায়ের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করিস টাকার জন্য।”

উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি আমি আর উনি চিপ্স এর প্যাকেট খুলে খেতে খেতে দরজা লাগিয়ে দিলেন।এটা নাকি আত্মীয়ের বাসা কি আধ্যাতিক কথা।উনি হাতে টাকা দিলে আমি নেয় না বলে বিকাশে দেন আমি তাও খরচ করি না।এটা নিয়ে অনেক বার বলেছেন শোন দিয়া আমার এত বড়লোক হওয়ার ইচ্ছা নেই সারা মাস তুই খরচ করবি।খরচ করে যা থাকে থাকবে না থাকলে না থাকবে।

চিপ্স এর প্যাকেট শেষ করে আমার হাতে প্যাকেট টা দিয়ে বললেন এটা ময়লা রাখা বাকেট এ ফেলে দে।কিচেনে আছে দেখ বাকেট।প্যাকেট ফেলে দিতেই বললেন দিয়া বেগুন কাট ছোট মাছ দিয়ে রান্না করবো।ফ্রিজ থেকে বেগুন নিয়ে বেগুন কেটে পানিতে ভিজানো হলেই বললেন সকালে প্লেট রেখে গিয়েছিলাম ওগুলো ধুয়ে দে।বুঝলাম না কাজের অডার করেই যাচ্ছেন কেনো?প্লেট গুলো ধুয়ে রুমে এসে বসলাম।উনি রুমের মাঝে ঘুরছেন আর কি করছেন জানিনা।এবার বললেন,ওয়াশরুমে আমার প্যান্ট আর শার্ট আছে ধুয়ে বেলকনিতে মেলে দে।

এবার অধৈর্য হয়ে বললাম আমি কি আপনার বুয়া।

উনি শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলেন না আমার বউ।দ্রুত কাজ কর।বউ বউ এর মতো থাকবি।

ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখি প্যান্ট আর শার্ট ভেজানো।এত্ত ভারি জিন্স আমি ধুতে পারবো না এটা আমার থেকে ভারী চিল্লিয়ে বললাম।এত্ত ভারী কাপড় মানুষ পরে।

-যা পারিস তাই কর।প্যাক্টিস কর এসব ই করতে হবে তোকে।

প্যান্টের সাথে আন্ডারওয়ার দেখে মেজাজ খুব ই খারাপ হয়ে গেলো।আবার বললাম আপনার এসব ছোট কাপড় ধুতে পারবো না।

-কোন সব।

মুখের উপর আন্ডারওয়ার ফেলে দিয়ে বললাম এসব।

-উনি ক্যাচ ধরে বললেন,দিয়া গতকাল ই কিনেছি বেচারার সাথে এত অত্যাচার কেনো করছিস শুনি।

কোনো উত্তর না দিয়ে বেলকনিতে পানিসুদ্ধ প্যান্ট আর শার্ট নেড়ে দিলাম।উফফ এত ভারী কেনো এই জিন্স।

রুমে আসতেই দেখি অনেক গুলা ছোট মাছ।বললেন তিন কেজি ছোট মাছ কিনেছি বুয়া আসেনি কেটে দে।

আমার মন চাচ্ছে এখনি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয় উনার কথা শুনে।আমি এত্ত গুলা গুড়া মাছ কেমনে কাটবো।আমি তো ভাল মাছ ই কাটতে জানিনা।মানুষ মানুষ কে এতটা অত্যাচার কিভাবে করতে পারে।

চলবে,,
চলবে,,

( সবাই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here