এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ৫১+৫২+৫৩

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫১.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter
“আপনি আমাকে খাসি বললেন কেনো বিহান ভাই?আমি কি পুরুষ মানুষ যে খাসি হতে যাবো।”

“তোর যে কানেও সমস্যা আছে এটা তো জানতাম না দিয়া।আচ্ছা তুই মানে কি সমস্যার গোডাউন।এত সমস্যা তোর কি হবে তোর জামাইয়ের।বেচারার জীবন টাই ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে।”

“আমার কানে সমস্যা মানে।আমার কানে কবে সমস্যা ছিলো বিহান ভাই।আমি কানে খুব ভালো শুনতে পাই।”

“আমরা কথায় বিশ্বাসী না প্রমানে বিশ্বাসী।কিছুক্ষণ আগেই কিন্তু আমি তোকে মহিলা খাসি বলেছি শুধু খাসি বলিনি।তোকে ওই খোয়াড়ে আজ রাতে বেঁধে রাখবো।আহা!যে আমৃত পারফিউম তোর শরীরে লেগে যবে আজন্ম কাল আর পারফিউম মাখা লাগবে না।এমনিতেও তো শীতকালে খুব একটা গোসল করিস না তুই।গায়ে যে বাজে গন্ধ হয় তোর। শুনেছি তোদের বাড়ির পাশের যে দোকান টা আছে কি জানি নাম ভাই ভাই স্টোরস শীতকালে তোর জন্য পারফিউমে গত উইন্টার সিজনে ৩০০০ টাকা লাভ করেছে।তুই নাকি গোসল না করে রোজ একটা করে পারফিউম মাখিস।তাইতো বলি দিয়া তো গরমে এত পারফিউম মাখে না শীতকালে এত পারফিউম ক্যানো ইউজ করে ক্যানো?তাতে তোরা যা কিপ্টার কিপটা যেখানে একটা পারফিউমে কয়েক বছর কাটিয়ে দিস বংস ধরে সেখানে শীতকালে এত পারফিউম।তাও তো শুনলাম সবাই চাঁদা তুলে একটা পারফিউম কিনিস।”

“বিহান ভাই উনার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করলে বললাম,আপনার কি বলা শেষ হয়েছে। খুব ই কম বললেন না বিহান ভাই।দুলাভাই,বিভা আপু,রিয়া,বিভোর ভাই সবাই মুখে হাত দিয়ে বিহান ভাই এর লম্বা আমাকে করা অপমানের লাইন গুলা শুনছে।তারা আসলেই অবাক বিহান ভাই এত এত কথা কোথায় পান।উনার মাথায় এত আধ্যাতিক কথা কোথা থেকে আসে।”

“বিহান ভাই আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে ভ্রুক্ষেপ করে বললেন,খুব কম বলেছি কি আমি?আসলে বলার অনেক কিছুই ছিলো কিন্তু আফসোস বলতে পারলাম না একজন পেত্নীদের রুপ ধারণ করছে। বুঝলেন দুলাভাই এক্ষুণি বোম ব্লাস্ট হতে পারে।”

“আমি উনার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে মনে মনে বলছি,একটা মানুষ কতটা বিরক্তিকর আর বাজে হলে এত জঘন্য কথা বলতে পারে।অনিচ্ছাকৃত হাসি দিয়ে বললাম আপনাকে গরুর-ছাগলের ডাক্তার বলেছি বলে আমাকে এখন এইসব বলছেন তাইনা?”

“উহু!গবাদী পশুর সেবাযত্ন করতে আমার ভালোই লাগে?তার উপর যদি সেখানে কিছু মহিলা খাসি থাকে আহা চিকিৎসার জন্য বার বার গবাদী পশুর ডাক্তার হতে চাই আমি দুলাভাই। দিয়া রেডি হয়ে নে তোকে আজ ওখানেই রেখে আসবো।আহা কি সুগন্ধি তোর মন প্রাণ মাতোয়ারা হয়ে যাবে।”

“দুলাভাই উনার সাথে মোটেও কথা বলতে চাইছি না আমি।দয়াকরে উনি যেনো আমাকে বিরক্তিকর কথা না বলে।”

“দুলাভাই আমার তো খাসি খুব ই ফেভারিট আর দিয়া ও খাসি হয়ে গিয়েছে। ভাবছি দিয়াকে কুচি কুচি করে কেটে আমি একাই খাবো।রান্না ছাড়াই খাবো ভাবতেছি।দিয়া নিশ্চয়ই অনেক টেস্টি হবে তাইনা।”

“বিভোর ভাই বললেন,এই ছিলো তোর মনে বিহান।মানুষের মাংস খেতে চাস তাও আমাদের দিয়া।”

“এমনি এমনি কি রাক্ষস বলি আজ প্রুভ পেলেন তো।
দুলাভাই আমি যে গোসল করি না এই অপবাদের বিচাই চাই আমি।”

“অপবাদ আমি কি অপবাদ দিচ্ছি।তুই তো সত্যি গোসল করিস না।প্রুভ দিবো গোসল করিস না তার।”

“কিসের প্রুভ?”

“দেই তাহলে?”

“দেখুন আজে বাজে জিনিস দেখাবেন না।কোনো প্রুভ লাগবে না।উনাকে তো হাড়ে হাড়ে চিনি।প্রচন্ড কুয়াশা পড়লে মাঝে মাঝে গোসল করি না দুই এক দিন।সেই জিনিসের না জানি কি কি প্রুভ রেখেছে তার ঠিক নেই।উনার সাথে বেশী টক্কর নিয়ে বাঁশ খেতে চাই না আমি।”

বিভা আপু বললো বিহান আল্লাহ আমারে বাঁচাইছে তোর মতো আমার কোনো মামাতো ভাই নেই।তাহলে জীবন টা তেজপাতা হয়ে যেতো।তুই যেভাবে দিয়ার পিছে লাগিস আমি হলে পাগল হয়ে যেতাম।চিন্তার বিষয় তোর বউ এর কি হবে বিহান।দিয়া কে এই পরিমান বিরক্ত করিস দিয়া বলে সহ্য করে কিন্তু তোর বউ সহ্য করবে না।পৃথিবীর কোনো মেয়েই সহ্য করবে না।তোর কপালে বউ নেই রে ভাই।একদিন পরেই পালাবে।

দুলাভাই বললেন,ছেলেরা আবার বউ পাগল হয়।আমাকে দেখো না আমি এখন কেমন হয়ে গেছি।আগে আমি কি এমন ছিলাম নাকি।তাই আমার শালাবাবু বউ এর কাছে জব্দ হয়ে যাবে।

বিভোর ভাই বললেন,আসলেই এই যে বিয়ে না করেই রিয়ার জন্য কেমন হয়ে গেছি আমি।চারদিকে শুধু যা দেখি তাই রিয়া লাগে।যে মেয়ে দেখি ভালবেসে ফেলি মনে হয় এটাই বুঝি রিয়া।রিয়া অগ্নিচোখে তাকিয়ে বললো,কি বললেন যে মেয়ে দেখেন ভালবেসে ফেলেন।

‘আরে না না বেশী ভালবাসা দেখাতে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে থুক্কু।দুলাভাই আমি কি বুঝাতে চাইছি বলেন না ক্যানো?’

বিহান ভাই এর কপালে দুইটা ভাজ পড়ে আছে সে কপাল কুচকে বললো,কি বুঝাতে চাইছিস আমি বলি বিহান।

বিভোর ভাই দুই হাত জোড় করে বললো তোর হাতে পায়ে সব ধরি ভাই তোর দোহাই লাগে আল্লাহর ওয়াস্তে তোর বোঝানো লাগবে না।তুই যা বুঝাবি তাতে আজন্ম কালের জন্য ব্রেক আপ হয়ে যাবে।বিহান ভাই এর ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি।রিয়া বললো বিহান ভাই যা বুঝার বুঝেছি আমি এর ব্যাবস্হা নিবো।
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বললেন বিভা আপু তাহলে কি আমার বিয়ে হবে না।
বিভা আপু বললো,বিয়ে হবে বউ টিকবে না।তোর যে রাগ তা দেখলে স্টোক করে হসপিটালে যাবে তোর বউ।সবাই তো আর দিয়া না বিহান।
বিভোর ভাই হেসে বললেন,এমনিতেও ওর বউ টিকবে না কারণ ওর শারিরীক কিছু সমস্যা আছে।
আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,বিহান ভাই এর কি কোনো রোগ হয়েছে বিভোর ভাই।বিভোর ভাই বললেন,সে রোগ বড়ই জটিল ফিলিংস চিন্তিত বিহানের ফিউচার নিয়ে।রিয়া বললো বিহান ভাই আপনার কি হয়েছে?বিহান ভাই মুহুর্তে রেগে গিয়েছেন বিভোর ভাই এর উদ্দেশ্য বললেন,বিভোর ভালো হবি নাকি তোর সব রিয়াকে দেখাবো।

‘কি দেখাবি তুই।’

‘তোর নুড যা মেয়েদের দিয়েছিস আমার ফেইক আইডি দিয়ে তোর সাথে প্রেম করেছিলাম।’

‘বিভোর ভাই আশ্চর্যজনক হয়ে বলে উঠলেন নাউজুবিল্লাহ বিহান তুই তাহলে গে হয়েছিস।হ্যান্ডসাম ছেলেদের দেখলে আকৃষ্ট হস তাইতো।ছিঃছি আমাদের কাজিন দের মান সম্মান সব শেষ হয়ে গিয়েছে।শেষ মেষ ফেইক আইডি দিয়ে নুড আদান প্রদান।এইজন্য মেয়েদের প্রতি তোর ফিলিংস আসে না।জন্মের পর থেকে সিঙ্গেল।’

‘আমি গে নাকি আমার বউ ভালো ভাবেই জানে।তোর বিরুদ্ধে প্রমান রাখার জন্য এত কষ্ট করা।টাইম মতো পাব্লিক করে দিবো ডোন্ট ওরি ব্রো।’

দুলাভাই বিভা আপু আমি রিয়া হেসে গড়াগড়ি গেলাম।

দুলাভাই এর প্রশ্ন দিয়া যখন সহ্য করে বিহানের বিয়ে দিয়ার সাথে দিয়ে দেই।হুট করে হাসাহাসির মাঝে এমন কথায় আমার কাশি শুরু হলো।বিহান ভাই ঝুকে এসে বললেন করবি আমায় বিয়ে? আমি অবাক হয়ে গেলাম সবার মাঝে এ কি প্রশ্ন।বিভা আপু বললো দিয়ার উত্তর না। না মানে না।বিহান কে বিয়ে করে মরবে নাকি।মনে মনে বললাম ওই রাগি মানুষ টা আস্ত ভালবাসার একটা ডিব্বা।
___________________________________
কয়েক দিন পর পায়ের ব্যাথা ঠিক হয়ে গেছে।দুলাভাই আমাদের লোহাগড়া নিরিবিলি পার্কে নিয়ে যাবেন।কয়েকদিন যাবত খুব শখ হয়েছে আমি টিকটক ভিডিও করবো।ভাবনা কে সত্যি করতে আজ প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।ভীষণ সাজুগুজু করে টেবিলের উপর ফোন রেখে ডান্স করছি আর গান গাইছি “কতই আদর করছো তোমায় ভুলতে পারিনা” বেশ কয়েক বার প্রাক্টিস করেই যাচ্ছি।ডান্স করতে করতে ক্লান্ত আমি।ঘেমে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটার ছড়াছড়ি।পানির পটের মুখ খুলে খাটে বসে পানি খাচ্ছি এমন সময় তাকিয়ে দেখি ব্লু জিন্স, গায়ে ব্রাউন কালারের শার্ট গায়ে হাজির বিহান ভাই।প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন আমার দিকে তাকিয়ে।উনাকে দেখে চমকে গেলাম।উনিও আমাদের সাথে পার্কে যাবেন নাকি।এমন সময় ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দে উনার পকেট সহ কাঁপছে।চোখ আমার দিকে রেখেই উনি ফোন টা বের করে রিসিভ করে কথা বলছেন।এক হাত প্যান্টের পকেটে আরেক হাত ফোন সহ কানে।উনার দৃষ্টি সোজাসুজি আমার বরাবর।কথা বলছেন আর আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছেন।ফোন টা কেটে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন আদর আর কোথায় করতে পারলাম দিয়ারাণী।আদরের আগেই তো তোমার সুড়সুড়ি বিরক্ত করলো।আদর করতে পারিনি তাই ভুলতে পারছো না।আদর করতে পারলে কি হতো তাই ভাবছি।

আশ্চর্য ব্যাপার নাহ।আমি তো গানের কথা বলেছি আর উনি কি বুঝলেন?#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫২.
#WriterঃMousumi_Akter

নীল আর কালো রং মানেই আমার কাছে শুভ্র প্রেমের রং।যে রং আমার মন ভালো করে দেয়,যে রং মনের কোনে সুপ্ত অনুভূতির সংমিশ্রণ সৃষ্টি করে।।এই দুইটা রং এ আমার বেশীর ভাগ ড্রেস আর জিনিস পত্র।যেখানেই যায় পছন্দ হিসাবে এই রং দুইটা পছন্দ করি।আজ ও আমি ব্লু স্কার্ট প্লাজু, আর সাদা কামিজ পরেছি, গায়ে ব্লু ওড়ণা, কপালে ব্লু টিপ,হাত ভর্তি ব্লু আর সাদা কাঁচের চুড়ি পরেছি,এক পায়ে কালো সুতা পরি তাই আর পায়েল পরি নি। বিহান ভাই আজ এশ কালারের শার্ট আর কালো জিন্স প্যান্ট পরেছেন উনার সৌন্দর্য আলাদা ভাবে প্রকাশ করার কিছুই নেই আজ উনি কালো সানগ্লাস ও পরেছেন লুকিং পুরাই ড্যাশিং উনি।

বাবা দেখি আম্মুকে বলছে,আচ্ছা দিয়ার আম্মু তুমি কেমন মা বলোতো।মেয়েটা যে শাড়ির অভাবে পেটিকোট পরে কামিজ এর উপরে তোমার চোখে যায় না।এত শাড়ি কি করবা মেয়েকে দিতে পারো না ওর শখ করে শাড়ি পরতে।অনেক দিন ধরেই দেখি দিয়া পেটিকোট পরে প্রায় প্রায়।বাবার কথা শুনে হোচট খেলাম আমি।আম্মু বলছে শাড়ি আর তোমার মেয়ে ভাবা যায়।আমি তো কোনদিন দিয়াকে পেটিকোট পরতে দেখলাম না তুমি কবে দেখলে বলোতো।বাবা শান্ত কন্ঠে আমার দিকে ইশারা করে দেখালেন,ওইযে দেখো তোমার মেয়ে।আম্মু তো বিশ্রি ভাবে বলে উঠলো ওটা পেটিকোট না প্লাজু মানে সালোয়ার।আজকাল যে কি সব সালোয়ার উঠেছে আমার কাছে বিশ্রি লাগে দেখতে।কেনো নরমাল সালোয়ার আর কামিজ কি খারাপ লাগে।নরমাল সালোয়ার পরলে কত সুন্দর লাগে দেখতে তা না কিসব পরে।রাস্তা ঘাট যেখানে যাবো এই প্লাজু পরা সব মেয়ের।বুড়ো বুড়ো মহিলারাও দেখি এখন এসব পরে মানুষ তো বয়সের সাথে মানিয়ে পোশাক পরবে তাইনা।আম্মুকে বললাম আম্মু প্লাজুর মান সম্মান আর রাখলে না তুমি।তুমিও পরো একদম কিউট লাগবে তোমাকে একদম হিরোইন লাগবে কথাটা বলেই হাসিতে পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম আমার।বাবা হেসে দিয়ে বললেন, তোমার আম্মু স্ট্রোক করবে এক্ষুণি। এমনি অন্যরা পরে তা নিয়ে যে ক্ষোভ। দূরে বিহান ভাই দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছেন।আম্মু বললো আমার সাথে ইয়ার্কি হচ্ছে ফাজিল মেয়ে।আম্মু আর বাবার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলাম।

টার্মিনাল থেকে বাসে উঠলাম আমরা সবাই।আজ শুভ ভাইয়া ও যাচ্ছে আমাদের সাথে।ভাইয়া থাকলে বিহান ভাই তো আরো বিরক্তিকর কথা বলেন যেনো ভাইয়া বুঝতে পারে উনি আমাকে ফুফাতো বোনের নজরেই দেখেন।আমি আর রিয়া এক সিটেই বসেছি,মেহু আপু আর তোহা আপু এক সিটে,বিহান ভাই আর শুভ ভাইয়া এক সিটে,আলিপ ভাইয়া আর বিভোর ভাই এক সিটে, বিভা আপু আর দুলাভাই এক সিটেই বসেছে।আজ আর কপোত কপোতিরা পাশাপাশি বসে নি কেউ ভাইয়ার সামনে আমি আর বিহান ভাই ব্যাপার টা কেমন দেখায় আবার তোহা আপুর সামনে শুভ ভাইয়া আর মেহু আপু বাড়ি গিয়েই কুট কাচারী করবে তাই এভাবেই বসা সবাই।বাসের মধ্য বিহান ভাই আর আমার সাথে কথা বলার সুযোগ পান নি তবে চোখাচোখি হয়েছে বেশ কয়েকবার।বাসের মধ্য বাদাম বিক্রি করছে একটা ছেলে। বাদাম কিনে শুভ ভাইয়ার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললাম ভাইয়া বাদামের খোসা গুলো ছড়িয়ে দাও।বিহান ভাই বাদামের প্যাকেট টা ক্যাচ ধরে বললেন শুভ দিয়াকে এমন ছেলে দেখে বিয়ে দিতে হবে যে বাদামের খোসা ছড়িয়ে দিতে পারে।বলেই উনি বাদাম গুলো খাওয়া শুরু করলেন।আমি উনার খাওয়া দেখছি আর লুচির মতো ফুলছি আমার বাদাম উনি এইভাবে খাচ্ছেন।খাওয়া শেষে খোসা গুলো প্যাকেটে ভরে আমার দিকে ছুড়ে মারলো।আমি একটু মুখ কালো করে রইলাম।

পার্কের সামনে গিয়ে বাস থামতেই সবাই ধাক্কাধাক্কি করে নামছে যা দেখে বিহান ভাই ভীষণ বিরক্ত।এত ধাক্কাধাক্কি উনার ভাল লাগছে না।যদিও উনার বিরক্ত হতে বেশী টাইম লাগে না।সেকেন্ডের মাঝে বিরক্ত হয়ে পড়েন।এইদিকে আমার চিন্তা ভাবনা ক্লাস ফাইভের বাচ্চাদের মতো যে আমি সবার আগে নামবো অনেক ধাক্কাধাক্কি করে কয়েকজনের পরেই নামলাম।সারারাস্তা গাছে গাছে লাগানো ওয়ালে ওয়ালে লাগানো পোষ্টার পড়তে পড়তে এসেছি তাও বেশ জোরে জোরেই পড়তে পড়তে এসছি যা নিয়ে বিহান ভাই ইশারায় কয়েকবার চোখ রাঙানি দিয়েছেন।উনার চোখ রাঙানির ফলে মনে মনে পড়েছি বাকিটা।

পার্কে ঢুকেই দেখি আরিফ ভাইয়া উপস্হিত।উনাকে আমিই বলেছিলাম যে আমরা পার্কে এসছি।উনাকে দেখে বিভা আপু বিভোর ভাই সহ বাকিরা ভীষণ খুশি হলেও বিহান ভাই মারাত্মক অখুশি কারণ আলিপ আর আরিফ ভাই কে উনার পছন্দ হচ্ছে না।উনি জেলাস ভীষণ জেলাস উনি উনার বউ এর পাশে কাউকে পছন্দ করেন না।পার্কে সবাই ঘুরাঘুরি করছি আরিফ ভাইয়া আমাকে একটু আড়ালে ডেকেছেন বিকজ উনি তোহা আপুর সাথে একটু ভাব ভালবাসা করতে চাইছেন বাট তোহা আপু তো বিহান ভাই এর প্রতি ক্রাশড।এইদিকে বিহান ভাই ভাবছেন আরিফ ভাইয়া আমার সাথে প্রেম করবেন।যদিও আমি এখনো উনাকে কিছুই বলি নি কারণ উনি জিজ্ঞেস না করেই শুধু রাগ দেখান।আমাকে আর আরিফ ভাইয়াকে দেখে বিহান ভাই দূরে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন।উনার রাগের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আগে আমি বিহান ভাই এর কাছে গিয়ে বললাম শুনুন না বিহান ভাই।উনি কোনো কথার উত্তর দিয়ে কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।বুঝলাম উনি রাগের দেশে প্রবেশ করছেন।

‘তাই বলে উঠলাম ওইযে আলিপ ভাইয়া না বিহান ভাই তোহা আপুকে ভালবাসে আমাকে সেটাই বলতে ডেকেছিলো।’

‘আমার কথা শুনে বিহান ভাই আশ্চর্য বনে গেলেন। আমাকে বললেন হোয়াট?ও তোকে নয় তোহা কে লাইক করে সিরিয়াসলি।’

‘আরে হ্যাঁ বিহান ভাই সত্যি।’

‘ভালবাসুক আর যায় করুক সেটা তোকে বলছে কেনো?দুনিয়ায় কি আর মানুষ নেই?’

‘আমি কি বলতে বলেছি নাকি,উনি যদি বলেন আমি কি করবো?’

‘উনি?হোয়াট দ্যা হেল।আরিফ কে উনি বলছিস কেনো?’

‘দেখুন আপনি এত কথার ভুল টুল ধরবেন নাতো।আমি কি অত বুঝে বলেছি নাকি।’

‘হ্যাঁ তুই তো খুকি।দুনিয়ার অসভ্য কাজে তোকে পাওয়া যায়।অসভ্য মহিলা কোথাকার।’

‘এইযে দেখুন আপনি আবার শুরু করেছেন কিন্তু।’

‘তুই কি ঘটক হয়েছিস দিয়া।একটা কাঠের বাটওয়ালা লম্বা বড় ছাতা কিনে দেই।ওইটা নিয়ে ঘুরবি আর ঘটকালি করবি।পেশা হিসাবে খারাপ না।মাসে যদি চার পাঁচ টা বিয়ে দিতে পারিস এমনিতেই বিশ হাজারের উপরে ইনকাম হবে।আরো যদি কোনো সমস্যা থাকা পাত্র পাত্রীর বিয়ে দিতে পারিস হিউজ ইনকাম।হিউজ ইনকাম দিয়া ভেবে দেখ।তুই তোর বাবা,তোর কাকারা,তোর দাদা সবাই মিলে এই ব্যাবসায় লেগে পড় ভালো ইনকাম।’

‘দেখুন আপনি কোথায় চলে গেলেন।আমি জাস্ট হেল্প করছি একজন ভালবাসার মানুষকে। ‘

‘তোর হেল্প এর চক্করে আরিফ আমার বউ এর প্রেমে পড়ে যাবে।ঘটকালি থেকে অনেক কিছু হয়ে যাবে।দেখি তোর ফোন টা দে।’

‘ফোন টা উনার হাতে দিতেই আরিফ কে ব্লক করে দিলেন আর বললেন নাউ টেনশন ফ্রি হলাম।’

‘ছিঃছিঃ আরিফ ভাইয়া কি ভাববেন উনাকে এইভাবে ব্লক দিয়ে দিলাম।’

‘আরিফ কি ভাববে তাতে তোর কি?
আরিফের ভাবনা নিয়ে তোকে কে ভাবতে বলেছে।একটা থাপ্পড় মেরে দাঁত এর মাড়ি ফেলে দিবো যাতে মাছের মাথা আর গরুর হাড্ডি খেতে না পারিস।’

‘আপনি সব সময় এমন আধ্যাতিক কথা কেনো বলেন? ‘

‘মুখে একটা ফু দিয়ে কপালে পড়া চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বললেন,আমি মানুষ টাই আধ্যাতিক যে তাই।’

‘উনি আমার দিকে তাকিয়ে গালে একটা আঙুল ঢুকিয়ে দুই দাঁতের মধ্য দিয়ে কামড়ে ধরে রেখে দুই মিনিট আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর বলে উঠলেন প্রেম কি ক্যান্সারের থেকেও ডেঞ্জারাস?এই রোগে আকৃষ্ট মানুষ আর কখনো প্রেমের মরণ ব্যাধি থেকে বাঁচতে পারে নি।’

‘সত্যি কি প্রেম মরণ ব্যাধি বিহান ভাই?’

‘হ্যাঁ।’

‘মরণ ব্যাধি ই যদি হবে তাহলে আমার হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছা করে কেনো?’

‘সব সময় ই কি বাঁচতে ইচ্ছা করে?’

‘না আপনার সাথে মনোমালিন্য হলে তখন আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না।তখন মরে যেতে ইচ্ছা করে।’

‘হুম পিচ্চি প্রমের মরণ ব্যাধি মানে জীবনের মৃত্যু বোঝায় না,প্রেমে পড়ে বার বার তার প্রমেই আসক্ত হওয়াকে বোঝায় যেখান থেকে চাইলেই আর ফিরে আসা যায় না।প্রেমে পড়া একটা দরূণ নেশা,যে নেশা যে কোনো নেশা জাতীয় পণ্যর থেকে ভয়ংঙ্কর।পৃথিবীর সব নেশা থেকে চাইলেই বের হওয়া যায় কিন্তু প্রেমের নেশা থেকে আর বেরোনো যায় না।আমি যদি আগে বুঝতাম এ নেশা আমাকে এভাবে ঘায়েল করবে,রাতের ঘুম কেড়ে নিবে,সারাক্ষণ তার ভাবনায় ঘিরে রাখবে আর বের হতে দিবে না আমি প্রমে পড়ার আগে আরো পাঁচবার ভাবতাম।কিন্তু সমস্যা হলো আমি জীবনে সব সিদ্ধান্ত অনেক বার ভেবে ঠান্ডা মাথায় নিয়েছি শুধু প্রমে পড়ার ব্যাপার টা না ভেবেই নিয়েছি।এই প্রেম আমার অনুমতি ছাড়া আমার ভেতরে প্রবেশ করেছে।এই সর্বনাশা প্রেম আমাকে একটা পিচ্চির কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে।’

‘উনার এত সুন্দর ভালবাসার বর্ণনা শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম হে আকাশ তুমি তাকে আমার নামে লিখে দাও।হে আকাশ তোমার প্রতিটা বর্ষনে জানিয়ে দিও সে আমার,তোমার প্রতিটা গর্জনে জানিয়ে দিও সে আমার।অভিশপ্ত হোক সে যার নজর আমার একান্ত নিজের মানুষটার উপর পড়বে।’

উনি আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন,আমি আমাকে লিখে দিয়েছি তোমার নামে।তোমার নামে রোদ্দুর নামে রোজ আমার আঙিনায়।

এমন সময় বিভোর এসে বললেন,এই দিয়া আয় আমরা একটা গেম খেলবো।

সবাই গোল হয়ে বসে আছি এখন ট্রুথ আর ডেয়ার গেম খেলা হবে।আমি ভীষণ এক্সসাইটেড এই গেম খেলা নিয়ে।প্রথমেই আমি ডেয়ার নিলাম।আমাকে কানে কানে ডেয়ার দিলো মেহু আপু যে বিহান ভাই কে মেসেজ দিয়ে ৫০০ টাকা নিতে হবে।তাহলেই ডেয়ারে জিতে যাবো।

বিহান ভাই কে মেসেজ করলাম শুনুন না বিহান ভাই বাসা থেকে টাকা আনতে ভুলে গিয়েছি।আমার বিকাশে ৫০০ টাকা দেন তো বাড়ি গিয়ে দিয়ে দিবো।

উনি সিন করে চুপ আছেন?

আবার মেসেজ দিলাম দিবেন টাকা?

উনি বললেন হুম দিবো.৫০০ টাকা।

আমি খুশি মনে বললাম ওকে দিন।

টুং টাং করে মেসেজের সাউন্ড এসছে আমি লাফিয়ে উঠে বললাম,গেম এ জিতে গেছি আমি মেহু আপু।মেহু আপু বললো কই দেখি দেখি।মেহু আপুর দিকে ফোন এগিয়ে দিতেই মেহু আপু বললো দিয়া এটা তো.৫০ ভালো ভাবে দেখ?আমি তাকিয়ে দেখি সত্যি ৫০০ টাকা দেন নি?আমি ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে বললাম,আপনি বললেন দিবেন এখন দেন নি কেনো?

উনি বললেন সমস্যার গোডাউন ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখ আমি ৫০০ লিখি নি।আমাকে ডেয়ার গেম এ হারানো অত সোজা নয় বুঝলি।

মানে একটা মানুষ বিকাশে. ৫০ টাকা ও দিতে পারে।এসব উনার পক্ষেই সম্ভব।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫৩.
#WriterঃMousumi_Akter

মানুষ মানুষকে মাত্র(.৫০)পয়সা কিভাবে দিতে পারে ভাবা যায়।এটা এক মাত্র ওই আধ্যাতিক মানুষ টার পক্ষেই সম্ভব।উনার জন্য গেম টা নিশ্চিত হেরে গেলাম আমি।আসলে উনাকে বোকা বানানো এতটা সোজা নয়।এর পর বিভোর ভাই বিহান ভাই কে ডেয়ার দিলেন যে কাউকে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারতে হবে?মেহু আপু জিজ্ঞেস করলো বিহান ভাই থাপ্পড় মারলে আপনি কাকে মারতে চান আপনার মনের ইচ্ছা কি?কাকে মারতে চান?বিহান ভাই কপাল কিঞ্চিত ভাজ করে বললেন,কেনো আবার নিঃসন্দেহে দিয়া কে মারবো।তাতে কোনো সন্দেহ নেই?আমি কোমরে হাত বেঁধে বললাম,কি বললেন আপনি আমাকে থাপ্পড় মারতে চান?এখানে এত মানুষ থাকতে আপনার নজর আমার দিকে কেনো?আমি আপনার হাতের থাপ্পড় খেতে পারবো না।রিয়া বললো বিহান ভাই ডেয়ার কিন্তু পূরণ করতে হবে আপনার সাহসের পরীক্ষা চলছে।বিহান ভাই শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে উঠে এলেন আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।উনার হাতের থাপ্পড় খেলে আমার গাল ভেঙে যাবে এটা নিশ্চিত। উনি কি মানুষ না অন্য কিছু সেটাই বুঝি না।আমি কি উনার শত্রু নাকি যে এমন করেন আমার সাথে। কেউ নিজের বউ কে এভাবে মেরে আনন্দ পেতে পারে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম ই না।আজ আমাকে থাপ্পড় মারুক উনার একদিন আর আমার যেকদিন লাগে লাগুক।বিহান ভাই হাত কচলাচ্ছেন আর আমার দিকে তাকাচ্ছেন।আমি তো তো করে বললাম দেখুন আমাকে যদি থাপ্পড় মারেন আপনার একদিন আর আমার যে ক’দিন লাগে লাগুক।বিহান ভাই কপাল কুচকে বললেন এই সাহস নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করছিস তুই আমার বিরুদ্ধে। ওড়ণার মুড়ো দুই হাত দিয়ে কচলাচ্ছি উনার দিকে তাকিয়ে।বিহান ভাই হাত উঠাতেই আমি চোখ খিচে অফ করলাম।ঠাসসস শব্দ হয়ে উঠলো শব্দ টা এতই জোরে ছিলো আমার গালে সত্যি মনে হয় মাড়ি নেই। গাল হাত পা অবস হয়ে গিয়েছে।কি হলো বুঝলাম না আমি এখন অনুভূতি শুণ্য। চারদিক যেনো বিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে, সব কিছু থমকে গিয়েছে।এত জোরে শব্দ হলো অথচ কোনো ব্যাথা অনুভব হলো না।তাকিয়ে দেখি বিভোর ভাই আর শুভ ভাই আলিপ ভাইয়ার গাল ধরে মালিশ করে দিচ্ছে।মানে কি থাপ্পড় টা কি আলিপ ভাইয়ার গালে পড়েছে।খানিক টা জোরে লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বললাম কি হয়েছে আলিপ ভাইয়া।বিহান ভাই আলিপ ভাইয়ার হাতে একটা ক্যান টাইগার দিয়ে বললেন,আলিপ লাগে নিতো ভাই।আলিপ ভাইয়া হাসি দিয়ে বললেন আরে ভাইয়া না লাগে নি।এত টুকুতে লাগে নাকি।অথচ আলিপ ভাইয়ার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে উনার আসলেই লেগেছে খুব।আমি স্হির নয়নে তাকিয়ে আছি বিহান ভাই এর দিকে।বিহান ভাই টাইগার ক্যান এর মুখ খুলে উচু করে খাচ্ছেন।উনার খাওয়ার স্টাইল টা আরো সুন্দর। এই মুহুর্তে আমি উনার ক্যান খাওয়ার প্রতি ক্রাশড।আমি আলিপ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম কি হয়েছে ভাইয়া আপনার চোখ মুখ এমন ফ্যাকাসে লাগে কেনো?তোহা আপু বললো,আরে দিয়া বিহান ভাই তো তোকেই থাপ্পড় মারতে গেছিলো কিন্তু তোর পাশে আলিপ ভাইয়া থাকাতে স্লিপ করে আলিপ এর গালে লেগেছে।দুলাভাই বললেন,যাক দিয়া বেঁচে গিয়েছে না হলে এই চড় টা দিয়ার গালেই লাগতো।বিহান ভাই বলে উঠেলন,আরে আলিপ বলো না আর এই দিয়া তো পলিটিক্যাল বংশের মেয়ে।ও পলিটিক্স করেই তোমাকে থাপ্পড় টা খাইয়েছে।ও ইচ্ছা করে ঘাড় কাত করেছিলো যাতে থাপ্পড় টা তোমার গালে লাগে।আসলে দিয়ার রাগ ছিলো ও চাইছিলো তুমি যেনো কারো কাছে ভীষণ মার খাও।

‘দিয়া আমাকে কেনো মার খাওয়াবে ভাইয়া।’

‘ওইযে দিয়াকে গতকাল প্রপোজ করেছিলে সে রাগে হয়তো।বুঝলে আলিপ দিয়া কিন্তু এমন ই ভয়ানক মহিলা।একটা ছেলে প্রপোজ করতেই পারে তাই বলে মার খাওয়াবে।এবার বুঝলে আলিপ পাক্কা রাজাকার আমাদের দিয়া। ‘

আলিপ ভাইয়া কখন আবার আমাকে প্রপোজ করলো।কি বলছেন উনি এসব।এইভাবে আন্দাজে কিসব বলছেন বিহান ভাই।আলিপ ভাইয়া কোনো রিয়্যাক্ট করছেন না ক্যানো?বিহান ভাই মিথ্যা বললে আলিপ ভাইয়া তো কিছু বলবেন তাইনা?আলিপ ভাইয়ার চোখে মুখে কেমন লজ্জা লজ্জা ভাব।ভাইয়া দেখলাম রাগান্বিত চোখে আলিপ ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে।বিভা আপু আর দুলাভাই বললো এসব প্রপোজ ট্রপজ ব্যাপার নাহ এই বয়সে এগুলা হয়েই থাকে।তোহা আপু বললো কিরে আলিপ এই ছিলো তোর মনে আগে বলিস নিতো।তিয়াস ভাইয়া,মেহু আপু,রিয়া সবাই আলিপ ভাইয়াকে বিভিন্ন কথা বলেই যাচ্ছে।আমি ব্যাপার টা বুঝে উঠতে ই পারছি না আসলে কি হচ্ছে।আলিপ ভাইয়া কিছুক্ষণ পর আমাকে বললো ছিঃছিঃদিয়া আমি ভাবতেই পারি নি তুমি এমন একটা কাজ করবে।আলিপ ভাইয়ার দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে বললাম কি করেছি আমি আলিপ ভাইয়া।কি করেছো জানোনা।কাল আমি যে তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম সেটা বিহান ভাইকে বলে আমার নাক না কাটলেও পারতে।

“আপনি প্রপোজ করেছিলেন?”

“তাহলে কি ইয়ার্কি করেছিলাম।তুমি আমার ইমোশন নিয়ে খেলা না করলেও তো পারতে দিয়া।”

“দেখুন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“কাল কি ঘুমোনোর পর সব ভুলে গিয়েছো? রাতে যে মেসেঞ্জারে তোমাকে মেসেজ করেছিলাম আর তুমি না বললে বিহান ভাই কিভাবে জানলো ব্যাপার টা।তোমাকে না বলেছিলাম কেউ যেনো না জানে ব্যাপার টা।”

আলিপ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কি বলবো বুঝতেই পারছি না আমি।নিশ্চয়ই আমি ঘুমিয়েছিলাম তখন বিহান ভাই আলিপ ভাইয়ার মেসেজ দেখেছে এটা আমি সিওর।

বিহান ভাই কে বললাম এদিকে আসুন তো বিহান ভাই।

“বিহান ভাই আমার সাথে এসে বললেন,কিরে তোর মতলব তো ভাল লাগছে না এভাবে নির্জনে ডেকে কি আমাএ ইজ্জত হরন করবি নাকি।”

“নাকি রোমান্স করতে চাই।”

“সিরিয়াসলি।আমার কোনো আপত্তি নেই প্লিজ হাগ মি বেবি।”

“আপনি আলিপ কে ওসব উলটা পালটা বললেন কেনো?”

“কি বলেছি”

“আমাকে প্রপোজ করেছে কখন আলিপ।”

“আমার বউ কে প্রপোজ করে সাহস কি?কাল রাতেই একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা হচ্ছিলো বাট আজ কায়দা করে রাগ টা মিটিয়ে নিলাম।আচ্ছা আলিপের কি লজ্জা করে না এভাবে আত্মীয়ের বাসায় বছর বছর পড়ে থাকতে।”

“মানে আপনি ইচ্ছা করেই চড় মারলেন।আর আমাকেও কালারিং করলেন।”

“হ্যাঁ সাপ ও মরলো না লাঠি ও ভাঙলো না।”

“পাশে থাকা দোকান দার বললো ভাই ভাবি কি রাগ করেছে নাকি।কিছু সাজুগুজু কিনে দিন রাগ কমে যাবে?অনেক সুন্দর জিনিস আছে এখানে।”

“এখন দিলেও ছুড়ে ফেলে দিবে।”

দোকানদার কে বললাম কয়েক জোড়া কানের দুল,মালার সেট,আর চুড়ি দিন তো প্যাক করে।এমন সময় হুড় মুড় করে মেহু আপু,তোহা আপু আর রিয়া এসে ইচ্ছা মতো জিনিস নেওয়া শুরু করলো।এইদিকে লজ্জায় নাক কাটা যাচ্ছে আমার।এইভাবে একজনের পকেট খালি করানো টা লজ্জাজনক আমার কাছে।বিহান ভাই বিভা আপুকে ডাক দিয়ে বললেন আপু এসো তুমি নাও পছন্দ মতো।এমনিতেই বিহান ভাই এর এখন টাকার সমস্যা নেই।উনি একজন নামকরা ডাক্তার সাথে ফ্রিল্যান্সার।চারজনে প্রায় আট হাজার টাকার জিনিস নিলাম।তবে আমি নিয়েছি শুধুই একপাতা কালো টিপ আর কিছুই নেয় নি।উনার টাকা খরচ হচ্ছে দেখে খুব খারাপ লাগছে আমার। প্রচুর ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরলাম।বাসায় ফেরার পর তোহা আপু বললো জানিস দিয়া আমি কি ভাবছি বিহান ভাই এর গফ টা না জানি কত লাকি।আমি নিশ্চিত বিহান ভাই উনার গফ কে গিফট এ গিফট এ মুড়িয়ে রাখবেন।ইস উনার গফ যদি আমি হতে পারতাম।মনে মনে বললাম উনি দামি দামি গিফট দিয়ে ভালবাসা প্রকাশ করেন না।উনি চাইলেই অনেক কিছু পারেন দিতে বাট দেন না।

রাতে ঘুমোনোর সময় রিয়া আমার হাতে একটা প্যাকেট দিলো।প্যাকেট টা খুলে দেখি প্রচুর সাজুগুজুর জিনিস। আমার চোখে তাক লেগে গেলো দেখে।সাজুগুজুর এত গুলা আইটেম দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।উনি তাহলে খেয়াল করেছেন আমি আসলে কিছুই নেয় নি দোকান থেকে।নেল পালিশ,পায়েল,গাজরা,চুড়ি,মালার সেট,লিপিস্টিক।

কেটে গেছে অনেক গুলো দিন।হালকা হালকা শীত ও পড়েছে।মেডিকেল এক্সাম ও হয়ে গিয়েছে আজ রেজাল্ট দিবে।ভীষণ মন খারাপ দুঃচিন্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ছাদের রেলিং ধরে।ভাল লাগছে না পৃথিবীর কোনো কিছুই সব কিছু যেনো বিষন্ন লাগছে।কাল রাত থেকে বিহান ভাই এর ফোন ও রিসিভ করিনি আমি।মনের আকাশে জমেছে ভীষণ অন্ধকার।কি হবে না হবে ভেবে পৃথিবীর কিছুই ভাল লাগছে না।বাবা আর আম্মু ছাদে এসছে আমার চোখ পানিতে টই টুম্বর হয়ে আছে।বাবা আমাকে বললো মা দিয়া এতটা ভেঙে পড়ো না।আমাদের দোয়া আছে তুমি অনেক চেষ্টা করেছো ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে মা।আম্মু বললো দিয়া একদম মন খারাপ করো না।যা হবে সব ভাল হবে।মা বাবার দিকে তাকিতে ফিকে হাসি দিলাম।যে হাসির মধ্য কোনো প্রাণ নেই।আম্মু বললো আমরা একটু বাজারে যাচ্ছি একদম চিন্তা করোনা।

মা বাবা চলে যাওয়ার পর আকাশের পানে তাকিয়ে আছি।আকাশে সাদা মেঘের খেলা চলছে কি চিন্তাহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেঘ গুলো।ছাদ থেকে রুমে গেলাম সোফায় বসে আছি চোখ নিচের দিক দিয়ে।

কারো উপস্হিতি অনুভব হলো পেছনে তাকিয়ে দেখি হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে এগিয়ে আসছেন বিহান ভাই।উনার চোখে মুখে ভীষণ হাসি আর আনন্দ।আমি বিষন্ন নয়নে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।প্রিয়রা সব সময় ম্যাজিকের মতো কল্পনাতে এসে দেখা দিয়ে মন খারাপ করে চলে যায় কেনো?আমার মনের কোনে যে সারাক্ষণ বিচরণ করছে সে সব সময় আমার কল্পনায় বিরাজমান।উনি কি কল্পনা তে এলেন নাকি বাস্তবে।উনি আমার কাছে এসে কোনো কথা না বলেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন।উনার পরণে সাদা এপ্রণ ও রয়েছে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।হাঁটু গেড়ে বসে আমার দিকে ফুল গুলো ধরে বললেন কনগ্রাচুলেশন ডিয়ার বউ।ফিউচার ডাক্তার মিসেস বিহান।আজ আমি ভীষণ খুশি মিসেস বিহান।জীবনের আজকে যতটা খুশি এতটা খুশি আগে কখনো হই নি আমি।উইল ইউ ম্যারি মি বউ বলেই হাতে একটা চুমু দিলেন।দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস টেনে সব ক্লান্তি আকাশ পানে উড়িয়ে দিলাম।উনার হাত থেকে ফুলের স্টিক নিয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরে উনার নাকের সাথে নিজের নাকের ঘষা দিয়ে বললাম আরো এক কোটি বার আপনাকেই বিয়ে করতে চাই।আপনি এসেছেন এই মুহুর্তে আপনাকেই ভীষণ প্রয়োজন ছিলো আমার।

আমি ভাবতেই পারিনি এভাবে উনি আসবেন আর আমাকে সারপ্রাইজ দিবেন।উনাকে দেখে মনের ক্লান্তি সব দূর হয়ে গেলো।

উনি আমার গায়ে একটা সাদা এপ্রণ পরিয়ে দিলেন আর বললেন রোজ অসুস্থ হবো আর তোমাকে দিয়ে হার্ট বিট চেক করাবো।এপ্রণে তোমাকে দারুণ মানিয়েছে দিয়ে।আই লাভ ইউ বউ।

বাইরে হই হুল্লোল শুরু হয়ে গিয়েছে।নিউজ টা সব জায়গা ছড়িয়ে গিয়েছে।রিয়া ও চান্স পেয়েছে আমার সাথে ঢাকা মেডিকেল এ।ফ্যামিলিতে সবার খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।আম্মু আর বিহান ভাই আমার থেকেও বেশী খুশি।আম্মু আর বাবা এসে আমার কপালে চুমু দিলেন।নিউজ টা শুনে রাস্তা থেকেই ফিরে এসছে।রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

বিহান ভাই এর চোখে মুখে এত আনন্দ আগে দেখি নি।আমাকে দরূন সারপ্রাইজ।দিতে ঢাকা থেকে ছুটে আসা উনার।

“ভালবাসার আরেক নাম ই বিহান ভাই”
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫৪.
#WriterঃMousumi_Akter

সময় টা শীত কাল।কচুপাতার নিচে শীতের আগমণ মাত্রই শুরু হয়েছে।কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে শীত একটু একটু করে প্রবেশ করছে শহরে।সকালে দূর্বাঘাসের উপরশিশিরের বিন্দু বিন্দু জল জমতে শুরু শুরু হয়েছে, রোজ সকালে প্রকৃতি কুয়াশার স্রোতে গোসল করে স্নিগ্ধ হচ্ছে।সময় টা বড্ড ই মিষ্টি।ছয়তলাবিশিষ্ট বাড়িটার তিনতলার পশ্চিমপাশের ফ্যাট টা ভাড়া নিয়েছি আমরা।নিজের স্বপ্ন সত্যি করতে নিজের স্বপ্নের শহর নড়াইল ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছি আমি আর রিয়া।কত শত স্মৃতির সাক্ষি নড়াইল শহর।কোলাহলপূর্ণ যান্ত্রিক শহর টা এসেই মানিয়ে নিতে পারছি না।ভীষণ মিস করছি ফেলে আসা গাছে বাঁধা দোলনা টা,ছুটে ছুটে মামির কাছে চলে যাওয়া,কাজিন দের নিয়ে বিশাল আড্ডার আসর, ঘোরাঘুরি। এখানে এসছি সাতদিন হয়েছে আম্মু আর কাকিমনি ও এসছে কিছুদিন থাকার জন্য।হঠাত করে নতুন জায়গা এক থাকা সম্ভব হবে না আর সব কিছু গুছিয়ে নিতেও কষ্ট হবে আর হুট কফ্রি অচেনা শহরে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার ও আছে। চারপাশের মানুষ গুলাকে দেখে মাঝে মাঝে লজ্জা ও পাচ্ছি আবার লজ্জায় ও পড়ছি মানুষ এখানে কত স্মার্ট তাদের সাজ গোজের ধরণ ই আলাদা সেখানে রিয়া আর আমি অতি সাধারণ দুইটা মেয়ে।কিছু কিছু আল্ট্রা মডার্ণ মেয়ের পোশাক দেখে লজ্জায় নাক কাটা যাচ্ছে।দুনিয়ায় কত ধরণের রুচির মানুষ আছে তা এই রঙিন শহর ঢাকায় না আসলে বুঝতাম না।আমাদের ফ্ল্যাটের পাশেই বিহান ভাই এর ফ্ল্যাট।পাশাপাশি একটা বিল্ডিং এ উনি থাকেন।আমাদের বেলকণি থেকে উনাকে দেখা যায় উনার বেলকণি।খুব একটা দূরত্ব না।কথা বললে শুনতে পাবেন বেলকণি থেকে চোখাচোখি হয় উনার সাথে।

আজ প্রথম মেডিকেল কলেজে আমাদের ক্লাস।রিয়া গোসল করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে গিয়েছে আমিও রেডি হয়ে গিয়েছি।অনেক এক্সাইটেড দুজনেই প্রথম ক্লাস দুজনেই ভীষণ নারভাস।বাসার পাশেই কলেজ।ক্লাস শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগেই রওনা হয়েছি আমরা দুজন।রাস্তায় যেতেই রিয়া বিভোর ভাই কে ভিডিও কল দিলো।বিভোর ভাই এর মন টা ভীষণ খারাপ।সাত দিন রিয়াকে দেখে না বিভোর ভাই।সারাদিন দেখা হয়েছে ঝগড়া করেছে আবার প্রেম করেছে অনেক ভাল ভাল স্মৃতি রয়েছে দুজনের।এই কষ্ট টা হওয়াটা স্বাভাবিক।বিভোর ভাই এর মুখ টা মেঘাচ্ছন্ন কালো গুমট আকাশের মতো।মনে হয় রুমেই সুয়ে আছেন বিভোর ভাই।

রিয়া শান্ত কন্ঠে বললো,ভাল আছেন আপনি?

বিভোর ভাই চাপা কাঁন্না আটকে বললেন হুম।তুমি?

আপনি ছাড়া আমি কেমন থাকি জানেন না।কথাটা বলেই রিয়া চোখের পানি ছেড়ে দিলো।গত সাতদিনে রিয়ার ও ভীষণ কষ্ট হয়েছে বিভোর ভাই এর জন্য।দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া আর মান অভিমানের গল্প ওদের দুজনের।

বিভোর ভাই এক নজরে তাকিয়ে আছেন রিয়ার দিকে।রিয়া আবার ও বললো আপনি কি কিছুই বলবেন না।এইভাবে থাকলে আমি প্রথম ক্লাস টা করতে পারবো নাহ।প্লিজ কিছু বলুন।

তোমায় ভীষণ মিস করছি রিয়া।গত সাত দিন মনে হয়েছে এ শহর অনুভুতি হীন।এ শহরের প্রাণ নেই।ভালবাসাহীন হয়ে পড়েছে এ শহর।তোমার শূণ্যতা আমাকে কাঁদাচ্ছে রিয়া।তোমাকে দেখার এই ভীষণ ইচ্ছা নিয়েই বোধহয় আমার মৃত্যু হবে।আমি যেদিকে তাকাচ্ছি মনে হচ্ছে এই বুঝি তুমি এসেই কোমরে হাত বেঁধে ঝগড়া শুরু করবে।চোখ অফ করলেই তোমাকে দেখছি।তোমাদের বাড়িতে যত বার গিয়েছি প্রতিটি কোনায় কোনায় মনে হয়েছে তুমি দাঁড়িয়ে হাসছো।

রিয়া বললো আমি আছি কখনো একা ভাববেন না নিজেকে।আমি বাস্তবেও আছি আর কল্পনাতেও আছি।আপনাকে ঘিরে আমার যে অনুভূতি তা কখনো শূন্য হবে না।প্লিজ মন খারাপ করবেন না।

তোমার মুখ টা দেখার পর সব মন খারাপ শেষ হয়ে গিয়েছে।তুমিও কখনো মন খারাপ করো না।মন দিয়ে লেখাপড়া করবে রিয়া।আমি তোমার পাশে আছি অলওয়েজ আছি রিয়া।খুব শিঘ্রই ঢাকা আসবো রিয়া।

আই লাভ ইউ বিভোর

আই লাভ ইউ ঠু রিয়া।

ফোন টা কেটে রিয়া আমার দিকে তাকাতেই বললাম,আমার মতো সিঙ্গেল এর সামনে এইভাবে প্রেম করিস না রিয়া।আমার খুব ই জ্বলে।

“তুই সিঙ্গেল দিয়া।”

“আমাকে দেখে বুঝিস না।”

“বিহান ভাই কে তাহলে।”

“তোদের বিহান ভাই ওর সাথে রিলেশন এ থাকা আর কলাগাছের সাথে রিলেশন এ থাকা এক ই কথা।আমাকে কি তার প্রেমিকা বলে কোনো কেয়ার করে।সে এখন মারাত্মক বিজি।আচ্ছা রিয়া বয়ফ্রেন্ড হবে বয়ফ্রেন্ড এর মতো সে এত বিজি থাকবে কি জন্য। দেখ আমাদের রুমের পাশের রুমে যে একটা আপু আছে সারাদিন উনার বয়ফ্রেন্ড এসে দাঁড়িয়ে থাকে।আর বিহান ভাই কে দেখ এই যে এসছি সাত দিন আম্মুর সাথে কথা বলছে, বাসায় আসলো আমার সাথে কি একটু পারসোনাল কথা বলেছে।আমি যে ঢাকায় এসছি তার মধ্য বাড়তি ফিলিংস কই।”

“বিহান ভাই আনকমন মানুষ। উনি দেখিয়ে কিছু করেন না।যা করেন উনার সময় মতো।তোর চান্স পাওয়াতে উনি যে ভাবে সেলিব্রেশন করলেন বাবাহ।দশ পাউন্ড কেক আনলেন সবাইকে খাওয়ালেন, কত মানুষ কে ইনভাইট করলেন কত খুশি ছিলেন দুই দিনে ভুলে গিয়েছিস।”

“ভুলি নি উনাকে মিস করছি তাই রাগ করছি।”

“বিহান ভ্যাই ম্যাজিকের সাহায্য রাগ পানি করে দিবেন।”

কলেজে প্রবেশ করেই চোখে তাক লেগে গেলো।ওয়াও এত টা সুন্দর বিহান ভাই এর শহর।এই কলেজ টা মানেই আমার কাছে বিহান ভাই এর দেশ।ক্লাস রুমে প্রবেশ করেই শুনি এখানে একজন প্রফেসর আছে অনেক হ্যান্ডসাম আর ইয়াং।প্রফেসর টা নাকি নতুন এবং এই কলেজের ই স্টুডেন্ট ছিলেন।ঠিক বুঝতে পারছি না কোন প্রফেসর এর কথা বলাবলি হচ্ছে।লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসলাম আমি আর রিয়া।ক্লাস রুমের সবাই তাদের হ্যান্ডসাম প্রফেসর কে নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে।কেউ কেউ বলছে জীবনে কোনো হিরোকেও এতটা কিউট দেখিনি আমি।স্যার তো না পুরাই ড্যাশিং আগুন একটা।উনি কি ম্যারেড উনার কি গফ আছে বিভিন্ন সমালোচনা চলছে।আমি আর রিয়া অবাক হয়ে প্রফেসর কে নিয়ে তাদের এই অদ্ভুত সমালোচনা শুনে যাচ্ছি।

এমন সময় ক্লাস রুমে ম্যাম এসে প্রবেশ করলেন।এই ম্যামকে দেখে আমার মাথা চক্কর মেরে উঠলো প্রেয়সী আপু।উনি আমাদের ক্লাস নিবেন।ওহ মাই গড। রিয়া আর আমি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই প্রেয়সী আপুতো আমাকে সহ্য ই করতে পারেন না।উনার ক্লাসে দেখে না জানি কত রিয়্যাক্ট করবেন।প্রেয়সী আপু সবার নাম জিজ্ঞেস করে পরিচয় নিলেন।সবার লাস্টে আমার কাছে এলেন আমার দিকে ঈর্ষাত্মক নয়নে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে রইলেন।আমি উঠে দাঁড়িয়ে রইলাম উনি আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করছেন না।বাকিরা হা করে তাকিয়ে আছে। সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন তোমার নাম?

ম্যাম দিয়া খাঁন।

ক্লাস শেষে দেখা করো আমি লাইব্রেরীতে থাকবো।

স্বভাবসুলভ একটা হাসি দিয়ে বললাম জ্বী ম্যাম ঠিক আছে।

প্রেয়সী ম্যাম ক্লাস টা নিয়ে বেরিয়ে গেলে আমি রিয়াকে বললাম উনি আবার আমাকে উলটা পালটা বলবেন নাতো।

আরে বললেই বা কি।হাইয়ার অথোরিটি বিহান ভাই এর কাছে অভিযোগ দিবো না।চিন্তা কিসের।

এমন সময় ক্লাসে প্রবেশ করলেন প্রফেসর বিহান ভাই।পরণে কালো জুতা,কালো জিন্স, কালো শার্ট,গায়ে সাদা এপ্রোণ, এক হাতে ঘড়ি বাঁধা আরেক হাতে একটা বই।ক্লাসে ঢুকেই সালাম দিলেন।আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি কয়েকশ ভোল্টেজ এর ক্রাশ খেয়ে ফেল্লাম তার ঠিক নেই।মুহুর্তের মাঝেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম আমি।উনার ক্লাস আছে উনি তো বললেন না।উনার ক্লাসে তো ফাঁকি ও দেওয়া যাবে না।ক্লাসের ছেলে মেয়ে উভয় ই হা হয়ে তাকিয়ে রইলো বিহান ভাই এর দিকে।মেয়ে গুলোর চোখে মুখে কি এক্সপ্রেসন সব টাই যেনো বিহান ভাই দিকে।মেয়েরা কি ক্লাসে মন দিতে পারবে।সবাই বলাবলি করছে এই সেই স্যার।মানে তারা বিহান ভাইকে নিয়ে এত কিছু বলছিলো।এইদিকে বিহান ভাই এর কোনো পাত্তাই নেই কে তার দিকে কিভাবে তাকিয়েছে সে ব্যাপারে।উনি উনার গম্ভীর মুডেই আছেই।বিহান ভাই সবাইকে সালাম দিলেন।বাকিরা সালামেএ উত্তর দিলো।আমার সামনে বেঞ্চের মেয়েটা যেনো আল্ট্রা মডার্ণ।উনি বিহান ভাইকে বলছেন হাউ কিউট,সো হট,আই লাইক ইট।বিহান ভাই সমার নাম জিজ্ঞেস করে আমার সামনে বেঞ্চের মেয়েটার কাছে এসে বললেন,আপনার নাম কি?

অনিকা সিকদার স্যার?সবাই অনি ডাকে আপনিও প্লিজ অনি ডাকবেন।কথা টা শুনেই বিহান ভাই ভীষণ বিরক্ত হয়ে গেলেন।বিহান ভাই রাগান্বিত মুডে তাকিয়ে বললেন সবাই কি আপনার কলেজের প্রফেসর। সবাই কি বলে ডাকলো সেটা কি আপনার কলেজের প্রফেসর ও ডাকবে?নেক্সট টাইম আমার ক্লাসে অযাযিত কথা বলবেন না।নাউ সিট ডাউন।

“এরপর ই বিহান ভাই আমার সামনে এলেন।এপ্রোনের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন।ভ্রু যুগল কিঞ্চিত উঁচু করে বললেন স্ট্যান্ড আপ।”

“উনার দিকে হা করে তকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি।”

“আপনার নাম কি?”

“দি দি দিয়া স্যার।”

“দি দি দিয়া?”

“না স্যার শুধুই দিয়া।”

“এত নারভাস কেনো আপনি?কিছু হয়েছে।”

“না না না স্যার কিছু হয় নি।এমনি নারভাস।”

“টিচার ক্লাসে আসলে আর টিচারের সাথে কথা বলার সময় উঠে দাঁড়াতে হয় জানেন না।”

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here