#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_২০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–কোথায় গিয়েছিলে চৈতালি।
–ভাবি আমি আসলে,হাঁটতে গিয়ে ছিলাম।
–কোনোদিন তো’ হাঁটতে যাও না।আজকে হঠাৎ কি মনে করে গেলে।আর গেলেই যখন একা গেলে কেনো?আমাকে ডাক দিতে-ও তো’ পারতে।শীতের সকালে মেয়ে মানুষ একা কখনো বের হয়।
–স্যরি ভাবি আর হবে না।
–তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো চৈতালি।আগের মতো কথা বলো না।আমাদের সম্পর্ক টা কিন্তু আগের মত নেই।তুমি বদলে গিয়েছো চৈতালি।
–ভাবি আমার ঠান্ডা লাগছে।পরে কথা বলি তোমার সাথে,বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেল চৈতালি।
তানহা চৈতালির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।চুলগুলো হাত খোপা করে রান্না ঘরের দিকে গেল।
সকাল সকাল ছেলেকে দেখে,ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল রাহেলা চৌধুরী।কতগুলো বছর পরে ছেলের মুখ দেখল।পুরো মুখে ভালোবাসার পরশ একে দিচ্ছেন রাহেলা চৌধুরী।মায়ের পাগলামিতে বাধা দিচ্ছে না ফাইয়াজ।বহু বছর পরে মায়ের স্নেহ পেয়েছে।কঠিন মনটা গলতে শুরু করেছে।চোখের কোণে অশ্রু এসে হানা দিয়েছে।মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।
–আম্মু তুমি কান্না করো না।তোমার ফাইয়াজ তোমার কাছে চলে এসেছে।তোমাকে রেখে আর কোথায় যাব না।
–তুই চাইলে-ও তোকে আমি যেতে দিব না।আমার টাকার দরকার নেই বাবা।তুই মায়ের ছেলে,মায়ের বুকে থাকবি।তোকে আর বাহিরের মাটিতে পা রাখতে দিব না।তোর বাবা যা’ টাকা রোজগার করে।তা দিয়ে আমাদের চলে যাবে।
–এসব তুমি কি বলছো আম্মু।ফাইয়াজ একদম ঠিক কাজ করে,টাকাই সব।টাকা ছাড়া এই যুগে,কারো দাম নেই।যার যতবেশি টাকা।তার ততবেশি দাম।বলল তাসফিয়া।
–তাসফিয়া তুই একদম বাজে কথা বলবি না।তোর আস্কারা পেয়ে,ছেলেটা আমার বিগড়ে যাচ্ছে।একদম ছেলেটার মাথার মধ্যে এসব দিবি না।ছেলেটা কতদূর থেকে এসেছে।কোথায় ভেতরে প্রবেশ করতে দিবি।তা-না করে ছেলেটার মাথা খাচ্ছিস।
–আম্মু তুমি আপুর সাথে এমন করছো কেনো?আপু বাস্তবতা দেখেছে জন্যই আপুর মনে এসব তৈরী হয়েছে।আপু কতটা কষ্ট থেকে কথাগুলো বলছে।আমার আপু তো’ এমন ছিল না।তুমি আমার বোনকে একদম বকা দিবে না।
–দেখেছে আম্মু আমার ভাই চলে এসেছে।তুমি আমাকে বকা দিবে।আমি ভাইকে সব বলে দিব।
–ফাইয়াজ বাবা ভেতর আয়।ফ্রেশ হয়ে নিবি।আমি তোর জন্য রান্না করছি।ফাইয়াজ কতদিন পরে তার নিজ বাসায় প্রবেশ করল।দুই তলার বাসাটা দশতালার বিল্ডিংয়ে পরিনত হয়েছে।নামি-দামি ফার্নিচার দিয়ে পুরো বাসা সুন্দর করে সাজানো।রাজ প্রাসাদের মতো গড়ে তুলেছে চৌধুরী বাড়িটাকে।ফাইয়াজ এই রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি চায়নি।তবে যা চেয়েছে তা’ পায়নি।ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।ফাইয়াজের বাবা রফিকুল চৌধুরী।সোফায় বসে গতকালের খবরের কাগজ পড়ছিলেন।বাবাকে দেখে ঘৃণায় চোখ ঘুরিয়ে নিল ফাইয়াজ।রফিকুল চৌধুরীর সাথে কোনো কথা না বলে,সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে গেল।কোথায় যাবে,কোন রুমে যাবে ফাইয়াজ জানে না।তবে এই মানুষটার মুখের সামনে থাকতে চায় না ফাইয়াজ।মানুষটার মুখ দেখলেই ঘৃণায় শরীর রি রি করে উঠে।
ইফাদ উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে।এভাবে শুইয়ে বসে থাকতে তার ভালো লাগছে না।তানভীরের সাথে কথা বলে,আবার কাজে জয়েন করব। ইফাদ ফোন হাতে নিতে যাবে।তখনই তানহা রুমে আসলো।
–এই দেখুন আমি আপনার জন্য আপনার পছন্দের পায়েস বানিয়েছি।খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে।ইফাদ বরাবরই পায়েস খেতে পছন্দ করে,পায়েস দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল।তানহার হাত থেকে বাটিটা নিয়ে দুচামচ খেয়ে থেমে গেল।তানহা অধীর আগ্রহে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
–আমি রাগ করেছি।তোমার কোনো জিনিস আমি খাব না।নিয়ে যাও।
–আমার ভুলটা কোথায় একটু বলবেন।
–তুমি আমার সাথে কথা না বলে,অন্য ছেলের মেসেজ পড়ছিলে,হোক সে তোমার ভাই।নিজের ভাই তো’ আর না।তা-ও আবার কার মেসেজ পড়ছিলে,যে কি না তোমাকে ভরা রাস্তার মধ্যে মেরেছিল।আমি রাগ করেছি।তুমি কাল রাতে আমার রাগ ভাঙাতে-ও আসো নাই।
–আপনি কাল রাতে রেগে গিয়েছিলেন।আপনাকে আমি যতই বোঝাতাম না কেনো,আপনি কোনো কিছুই বুঝতেন না।ফলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতো।আমি সকালের অপেক্ষায় ছিলাম।সকালে মানুষ ঠান্ডা মাথায় থাকে।সারারাত ঘুমানোর ফলে,মাথা ফ্রেশ থাকে।কিছু বললে সুন্দর ভাবে বুঝবেন।সেজন্য রাতে বিরক্ত করি নাই।
–রাতে যদি আমি মারা যেতাম।
তানহা ইফাদের মুখে হাত রেখে বলল।
–ছিঃ বাজে কথা বলতে হয় না।আপনার মুখে এমন কথা আমি সহ্য করতে পারি না।আমার অনেক কষ্ট হয়।
–তুমি অন্য ছেলের সাথে কথা বলা তো দূর কোনো ছেলের ছায়ার ওপরে দিয়ে-ও যদি হেঁটে যাও।বিশ্বাস করো তানহা।আমার বুকের মাঝখানে ব্যথা অনুভব করি।আমার অনেক কষ্ট হয়।আমি সহ্য করতে পারি না।
–আমি তো’ আপনাকে ভালোবাসি।আপনি ছাড়া আমার মনে,অন্য কারো স্থান নেই।আপনার রাগ ভাঙাবো বলে,শীতের সকালে উঠে এত কষ্ট করে,আপনার পছন্দের পায়েস রান্না করলাম।তার কোনো মূল্য নেই।খেয়ে একটু প্রসংশা তো’ করলে-ও তো পারেন।
–কি বললে শুনি নাই।
–আমি আপনাকে ভালোবাসি।
–শুনি নাই।
–আমি আপনাকে ভালোবাসি।
–আবার!
–আমি আপনাকে ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।
তানহার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনে,ইফাদের মনে খুব আনন্দ হচ্ছে।ভেতরে প্রচন্ড ভালোলাগা কাজ করছে।ছোট একটা কথা ভালোবাসি।এই ছোট কথাটার মধ্যে কি এমন জাদু আছে।যে,শুনলেই মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়।ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার মতো স্নিগ্ধ অনুভূতি কোথাও নেই।
তানহা ইফাদের হাসোজ্জল মুখের দিকে তাকিয়ে,তৃপ্তির হাসি হাসলো।মানুষটার হাসি মুখখানা তানহাকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে দেয়।ইফাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হাজার বছর কাটিয়ে দিচ্ছে ইচ্ছে করে তানহা’র।
–তানহা ঠিক করেছি।আমি কাল থেকে অফিসে যাব।
–আপনি পাগল নাকি।এই অবস্থায় কোথাও যেতে দিব না।
–তুমি তো আমার কাছে থাকো না।সারাদিন একা একা থাকতে হয়।
–এখন তাহলে কে বসে আছে।
–এতদূর বসে আছো।
–কাছে গেলে আপনার শরম করে।
–ছেলে মানুষের কিসের শরম আমি মজা করি।
–আমি’ও মজা করে আপনার থেকে দূরে দূরে থাকি।
–আবিরের সাথে একদম কথা বলবে না।আমার একদম ভালো লাগে না।বিছানায় উঠে এসে আমার পাশে বসো।
–কিন্তু রান্না?
–আমি আগে নাকি তোমার রান্না আগে,দরকার পড়লে আজকে সবাই দেরি করে খাবে।
–আম্মা কি মনে করবে।
–যাও আম্মার কাছে চলে যাও।আমি তোমাকে ধরে রাখছি।
–আচ্ছা বাবা যাচ্ছি না।খালি রাগ আর রাগ ।তানহা বিছানায় উঠে কম্বলের মধ্যে দুই ঢুকিয়ে ইফাদের বুকে মাথা রেখে শুইয়ে দু’টো বন্ধ করে নিল।এই আলিঙ্গনের মাঝেও ইফাদ অদ্ভুত ভাবে শান্তি অনুভব করল।দু’হাতে তানহা’কে আবদ্ধ করে নিল।পৃথিবীর সমস্ত ভালোলাগা ইফাদের মনে এসে ধরা দিয়েছে।এত ভালোবাসাও কি তার কপালে ছিল।চোখ দু’টো অশ্রুতে ভরে এলো,তানহাকে বুঝতে না দিয়ে।একহাতে অশ্রুকণা গুলো মুছে নিয়ে,পরম আদুরে ভাবে তানহাকে নিজের সাথে মিলিয়ে নিল।
ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁই ছুঁই।ইফাদ ঘুমিয়ে গিয়েছে।তানহা আস্তে করে ইফাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করল।
–আল্লাহ আম্মা কি মনে করল।কি জানি আম্মা একা একা কি করছে।ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরে আসলো।রোকেয়া বেগম আলু কাটছিলেন।তানহাকে দেখে বলল।
–তুমি আসতে গেলে কেনো?কয়টাদিন তোমার ওপরে দিয়ে যা ধকল গিয়েছে।আজকে একটু ঘুমিয়ে নিতে।
–তা কখনো হয় নাকি আম্মা।আপনি অসুস্থ আপনাকে দিয়ে কাজ করাবো।যখন আমি খুব বেশি অসুস্থ থাকবো।তখন আপনাকে বলবো।আমি সুস্থ থাকতে কিছুতেই আপনাকে কাজ করতে দিব না।
–তানহা তুমি আমার বাড়ির বউ না।তুমি আমার বাড়ির মেয়ে।আমি আমার মেয়েকে দিয়ে এত কাজ করাতে পারি না।আমার মেয়ের কিছুটা কাজ কম করতে হয়।তার জন্য আমি আমার মেয়েকে কাজে সাহায্য করব।
শাশুড়ীর কথা শুনে মনে প্রশান্তির হাওয়া বইয়ে গেল।কতটা ভাগ্যবান হলে,এমন একটা পরিবার পাওয়া যায়।
সকালে খেয়ে চৈতালি কলেজে উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে।আনমনে হেঁটে যাচ্ছে চৈতালি।আবির আজকে জরুরি তলব করে ডেকেছে।কলেজ শেষ করে দেখা,করতে বলেছে।আবিরের পাল্লায় পড়ে পড়াশোনার বেশ ক্ষতি হচ্ছে।চৈতালি হারে হারে টের পাচ্ছে।কথায় আছে না,ভালোবাসলে নাকি বেহায়া হতে হয়।আবিরের এত অপমান সহ্য করার পরে-ও আমি আবিরকে ভালোবাসি।এতটাই বেহায়া হয়ে গেলাম।নিজেকে কতটা নিচু নামিয়েছিস চৈতালি।বেহায়া মনটা বুঝে না।তাকে পাওয়ার জন্য মনটা আকুল হয়ে আছে।ভাবতে ভাবতে রাস্তার মাঝখানে চলে আসে চৈতালি।চৈতালি সামনে চলে আসায় দ্রুত ব্রেক কষলো ফাইয়াজ।গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো ফাইয়াজ।চৈতালিকে কিছু বলতে না দিয়ে বলল।
–এই আপনার মাথায় কি সমস্যা নাকি চোখে সমস্যা।রাস্তার মাঝখানে দিয়ে হাঁটছেন কেনো?কিছু একটা হলে,তখন গাড়ি আলার দোষ হয়ে যায়।কই থেকে যে,আসে এসব।রাগ দেখিয়ে চলে গেল ফাইয়াজ।
চৈতালি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার হয়েছেটা কি?এভাবে অন্যমনস্ক হয়ে গেল কেনো?ভাইয়াকে কত কথা শুনালাম।তবে ভাইয়া’ও কি আমার মতো কোনোকিছু নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করছিল।ভাবতে ভাবতে কলেজের কাছে পৌঁছে গেল চৈতালি।
কলেজ ছুটি হয়েছে।চৈতালি প্রাইভেটে না গিয়ে আবিরের সাথে দেখা করতে গিয়েছে।বেশকিছু দিন ধরে,চৈতালি প্রাইভেট পড়তে যায় না।চৈতালির শিক্ষক চৈতালির বাসায় ফোন করল।ইফাদ ফোনের কাছেই ছিল।ফোন আসছে দেখে রিসিভ করে সালাম দিল।ওপাশ থেকে সালামের উত্তর দিয়ে বলল।
–আপনি চৈতালির ভাই ইফাদ তাই না।আচ্ছা চৈতালির কি কোনো সমস্যা হয়েছে।চৈতালি কি কোনোভাবে অসুস্থ।আজ বেশ কয়টা দিন হলো মেয়েটা পড়তে আসছে না।দেখুন চৈতালি পড়তে না আসলে-ও আমার কোনো সমস্যা নেই।আমি মাস গেলে টাকা পাব।কিন্তু আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক ভালোবাসি।আমি চাই সবার ভবিষ্যৎ উজ্জল হোক।কেউ না আসলে আমি এভাবেই সবার খবর নেই।কারন আমার কাছে যারা পড়েছে তারা কেউ খারাপ রেজাল্ট করে নাই।আমি চাই না চৈতালি ইচ্ছাকৃত ভাবে পিছিয়ে পরুক।আর যদি চৈতালি অসুস্থ থাকে।তাহলে আমি ওকে আলাদা করে আবার বুঝাবো।
চৈতালির শিক্ষকের কথা শুনে ইফাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।চৈতালি তো’ প্রতিদিন কলেজে যায়।কলেজে গেলে প্রাইভেটেও নিশ্চয়ই যায়।কিন্তু চৈতালির স্যার তো’ অন্য কথা বলছে।ইফাদ চৈতালির শিক্ষককে বলল।
–আসলে স্যার আমি এক্সিডেন্ট করে ছিলাম তো।তাই চৈতালি কয়টাদিন টিউশনে যেতে পারে নাই।কাল থেকে অবশ্যই যাবে।
–এখন তুমি কেমন আছো বাবা।দেখেশুনে রাস্তাঘাটে চলবে না।নিজের খেয়াল রেখো।আমার বাচ্চারা চলে এসেছে।পড়াতে হবে।আজকে রাখছি।আল্লাহ হাফেজ।
বিশাল পার্কের বড় গাছের ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে আছে আবির।সামনে ছোট একটা পুকুর।খুব দক্ষতার সাথে বানানো হয়েছে পুকুরটি।তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে নিয়ে আসছে চৈতালি।আবিরের পাশে এসে দাঁড়ালো।আবির পেছনে থেকে একটা কাগজ বের করে বলল।
–এই কাজগটা’তে তানহা’কে দিয়ে সাইন করিয়ে নিয়ে আসবে।
–কি আছে এই কাগজের মধ্যে আমাকে দেখান।
–পড়ার দরকার নেই।তুমি সাইন করিয়ে নিয়ে আসবেন।
–আমাকে আপনার পাগল মনে হয়।
–আমার কথা না শুনলে ফলাফল ভালো হবে না চৈতালি।
–কি করবেন আমাকে মারবেন।ব্ল্যাকমেল করবেন।কিন্তু আফসোস আমাকে ব্ল্যাকমেল করার মতো কোনো কিছুই আপনার কাছে নেই।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি চৈতালি।আমি কেনো তোমাকে ব্ল্যাকমেল করতে যাব।তোমার মন মানসিকতা কতটা খারাপ।তুমি যদি সাইন করিয়ে নিয়ে না আসো।তাহলে আমি আর তোমার সাথে থাকতে পারবো না।
–আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো?আমার মন মানসিকতা আপনি নিজেই এমন বানিয়ে দিয়েছেন।আমাকে বললেই তো’ পারেন।তাহলে আমি দ্বিমত করি না।
–আমার বাবার অর্ধেক সম্পত্তি তানহার নামে করে দিবে।আম্মু তানহাকে অনেক ঠকিয়েছে।তাই আব্বু তানহাকে বলতে বলেছে।কিন্তু আমি তানহার সাথে কথা বলবো না।সেজন্য তোমাকে বলছি।আমি চাই না আমার জন্য ইফাদ আর তানহার মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হোক।
চৈতালি হেসে বলল এই ব্যাপার আমাকে আগে বললেই পারতেন।চৈতালি কাগজটা হাতে নিল।পাশে থেকে কিছু কথা কানে এলো চৈতালি আর আবিরের।
–জানিস অভি আমরা সাধারণত টিচার আর স্টুডেন্টদের স্কুলে বা কলেজে দেখি।কিন্তু আজকাল টিচার আর স্টুডেন্টকে ফাঁকা রাস্তায় পার্কের আড়ালে দেখা যায়।বলেই ফাইয়াজ ও তার বন্ধুরা শব্দ করে হেসে ফেলল।
–আবির আবার কোন মেয়েকে ধংস করতে নামছে।
–ওয়েট একজনকে ফোন দেই।বলেই ফাইয়াজ কাউকে ফোন দিল।ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসলো’।ফাইয়াজ কিছু একটা বলল।মেয়েটি রেগে বলল ওর সময় শেষ।আমি আসছি।ফাইয়াজ হাসতে হাসতে আবির আর চৈতালিকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
তানহা কাজ করে এসে ইফাদের পাশে বসলো।ইফাদের মুখে গম্ভীর্য ভাব।কেমন চুপ হয়ে আছে।
–তানহা চৈতালি বাসায় এসেছে।
–না তো’ কেনো?চৈতালি বিকেলে আসে।
–চৈতালি আসলে আমার সাথে দেখা করতে বলবে।
–আচ্ছা,কালকে সকালে হাঁটতে যাবেন।
–এখানে থেকে যাও তানহা।পরে কথা বলবো তোমার সাথে।
–কি হয়েছে আপনার।এমন করে কথা বলছেন কেনো।
ইফাদ কিছুটা ধমকে উঠলো।
–তোমাকে যেতে বলেছি না।এত প্রশ্ন করো কেনো?বেশি প্রশ্ন করা আমার একদম পছন্দ না।তানহা এক মুহুর্ত বসলো না।উঠে রুম ত্যাগ করল।সারাদিন ইফাদের রুমে আসে নাই।দুপুর থেকে ছেলের খেয়াল রোকেয়া বেগমই রেখেছেন।
বিকেলের দিকে চৈতালিকে বাসায় প্রবেশ করতে দেখে,রোকেয়া বেগম বলল।
–তোর ভাইয়ের রুমে যা’ তোকে দেখা করতে বলছে ইফাদ।
–আম্মু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
–ইফাদ অনেক রেগে আছে চৈতালি।
কথাটা শুনে চৈতালি মনে মনে ভয় পেতে শুরু করলো।সমস্ত চিন্তা এসে মাথায় হানা দিল।রোকেয়া বেগম তানহাকে সাথে নিয়ে ইফাদের রুমে আসলো।রোকেয়া বেগম চেয়ারে বসে আছেন।তানহা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।চৈতালি ইফাদের সামনাসামনি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ইফাদ কিছু বলছে না।পরিবেশটা কেমন জানি থমথমে হয়ে আছে।সবাই ইফাদের দিকে তাকিয়ে।চৈতালির হৃৎপিণ্ডের গতিবেগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।ইফাদ এবার চৈতালির দিকে চোখ তুলে তাকালো’।ভয়ে চৈতালির আত্মা কেঁপে উঠলো।
চলবে…..