এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব -৪৭+৪৮

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৪৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–আম্মু তুমি যদি চাও।আমি তোমার কাছে থাকি।তাহলে একটা কথা না বলে,চুপচাপ আমার সাথে যাবে।আমার কথা না শুনলে,কিন্তু আমি আজকে-ই দেশ ছেড়ে চলে যাব।বলল ফাইয়াজ।

ফাইয়াজে’র কথা শুনে,ফাইয়াজে’র আম্মু নিস্তব্ধ হয়ে গেল।আহত চোখে ছেলের দিকে তাকালো।তানহা আর ইফাদ মা-ছেলের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।ফাইয়াজে’র আম্মু আর কিছু বলতে পারলো না।ছেলের সাথে বেড়িয়ে আসলো।ইফাদ আর তানহা-ও আসলো।ফাইয়াজদে’র দেখে,পাত্রের মা’ বলল।

–ইফাদ এরা কারা বাবা?

–আমাদের বাসার মেহমান আন্টি।

–চলে যাচ্ছে কেনো?আজকে থাকবে না।

ইফাদ কিছু বলতে যাবে।তার আগে-ই চৈতালি নিচে নেমে আসলো।ফাইয়াজ একবার চৈতালি’র দিকে, তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল।লাল শাড়িতে মেয়েটা’কে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।ফাইয়াজে’র চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে।কেনো তুমি আমার হলে না?ফাইয়াজ’কে দেখে চৈতালির দু-চোখ ভরে এলো।দৌড়ে এসে,ফাইয়াজে’র হাত ধরে বলতে ইচ্ছে করছে।আমি এই বিয়ে করবো না।আপনি আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন।কিন্তু চাইলে-ই কি সব ইচ্ছে,পূর্ণ হয়।কিছু ইচ্ছে,থাকুক না অপূর্ণ।নিজের পরিবার’কে আর কষ্ট দিতে পারবে না চৈতালি।তাই নিজের ইচ্ছে টাকে মাটি চাপা দিয়ে দিল।চৈতালি’র পাশে অন্য ছেলে’কে দেখে ভেতর’টা ছারখার হয়ে যাচ্ছে ফাইয়াজে’র।সে,তো নিজের মন’কে বুঝিয়ে নিয়েছিল।তবে কেনো তার আম্মু তাকে,আবার কষ্ট দিল।এই কষ্টটা না দিলে-ও পারতে আম্মু।ফাইয়াজ আর দাঁড়ালো না।বাহিরে চলে গেল।ফাইয়াজে’র আম্মু সবার সাথে কুশল বিনিময় করল।সবার থেকে বিদায় নিয়ে,বাহিরে আসলো।ফাইয়াজ গাড়িতে মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল।ফাইয়াজে’র আম্মু গাড়িতে বসতে-ই ফাইয়াজ গাড়ি চালাতে শুরু করল।একটা কথা-ও বলছে না মায়ের সাথে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মায়ের ওপরে ভিষণ রেগে আছে।

–চৈতালি’কে আমাদের পছন্দ হয়েছে।আপনারা চাইলে,এই সপ্তাহের শুক্রবারে,ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করবো।এই কয়দিনে,আপনারা আমাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিবেন।আজকে তাহলে আমরা আসি।বলেই সবার থেকে বিদায় মিয়ে চলে গেল।পাত্র পক্ষ চলে যাবার।পরে-ই চৈতালি নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

ইফাদ গম্ভীর মুখ করে রুমে বসে আছে।তানহা ইফাদে’র পাশে বসে বলল।

–তুমি একবার ছেলেটা’র কথা ভেবে দেখতে পারো।ছেলেটা সত্যি চৈতালি’কে ভালোবাসে,তা’ ছেলেটা’র চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুকণা গুলো বলে দিচ্ছিলো।বলল তানহা।

–আমি’ও নিজে-ও জানি ফাইয়াজ চৈতালি’কে অনেক ভালোবাসে।আমি নিজ থেকে চৈতালি’কে,তার হাতে তুলে না দিলে,ফাইয়াজ কখনো জোর করে চৈতালি’কে নিয়ে যাবে না।ফাইয়াজে’র শিক্ষা এতটাই ভালো।কিন্তু ফাইয়াজে’র বাবা না চাইলে,আমি ওদের বিয়ে দিতে পারবো না।ফাইয়াজে’র বাবা যদি এসে বলতো।তাহলে আমি ভেবে দেখতাম।এখন যা হবার হয়ে গেছে।এসব কথা বলে লাভ নেই।আমি একটু বাহিরে যাব।দরজা’টা লাগিয়ে দাও।বলেই বাহিরে চলে গেল।

তানহা দরজা বন্ধ করে চৈতালি’র রুমের কাছে আসলো।রুমের কাছে আসতে-ই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল।মেয়েটা ভিষন করে কষ্ট পাচ্ছে।তানহা আর চৈতালি’কে বিরক্ত করল না।নিজের রুমে চলে আসলো।

পরের দিন সকাল বেলা,চৈতালি মলিন মুখ করে অফিসে প্রবেশ করল।চোখ-মুখ ফুলে আছে।হয়তো সারারাত কান্না করেছে,মেয়েটা।চৈতালি দরকারি ফাইল নিয়ে ফাইয়াজে’র রুমে আসলো।ফাইয়াজ’কে প্রতিদিনে’র মতোই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে,চৈতালি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।ফাইয়াজ ফাইল দেখছে।এমন সময় হঠাৎ করে স্রুতি আসে ফাইয়াজে’র রুমে।কোনো কথা না বলে,ফাইয়াজে’র কলার চেপে ধরে বলল।

–তোমার লজ্জা করে না।আমি তোমাকে আর কতবার বলবো।আমি তোমাকে ভালোবাসি না।তবু-ও কেনো আমার বাবার পেছনে পড়ে আছো?বলল স্রুতি।

ফাইয়াজ নিজের থেকে স্রুতি’কে ছাড়িয়ে বলল।

–মাথায় নতুন করে কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে।তোমার মতো বেয়াদব মেয়ের জন্য,আমি কেনো?তোমার বাবার পেছনে পড়ে থাকবো।বলল ফাইয়াজ।

–তাহলে বাবা তোমার সাথে আমার বিয়ে দেওয়া’র জন্য পাগল হয়ে গেছে কেনো?বলল স্রুতি।

–আমার বাবার টাকা দেখেছে না।তোমার বাবা শুধু টাকা চিনে,তোমার বাবাকে বলে দিও।আমাকে নিজের জামাই বানানো’র চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে।না হলে যে,মাথা দিয়ে কুবুদ্ধি আঁটছে।সেই মাথা আমি আলাদ করে দিব।আমার অফিস থেকে এখনই বেড়িয়ে যাও।আমাকে দ্বিতীয় বার ছোঁয়ার মতো দুঃসাহস দেখালে,তোমার হাত আমি ভেঙে দিব।

চৈতালি দু’জনের কথাবার্তা চুপচাপ শুনছে,স্রুতি ফাইয়াজ’কে স্পর্শ করাতে খুব রাগ হলো চৈতালি’র।কিন্তু বাহিরে তা’ প্রকাশ করল না।স্রুতি ফাইয়াজ’কে শাসিয়ে চলে গেল।

সময় চলছে সময়ে’র নিয়মে,কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না।ঠিক তেমন-ই সময়ে’র সাথে চৈতালি’র বিয়ের দিন চলে আসলো।আজকে চৈতালি’র বিয়ে।চারিদি’কে মেহমান গিজগিজ করছে।চৈতালি’র বিয়ে তো’ ঘরোয়া ভাবে হবার কথা ছিল।তাহলে,এত ধুমধাম করে হচ্ছে,কেনো সেটাই তানহা বুঝতে পারছে না।আজকে সকালে শুধু ইফাদে’র দেখা পেয়েছে।সারাদিন পেরিয়ে বিকেল হয়ে আসলো।এখনো ইফাদে’র দেখা নেই।”পার্লারের মেয়েরা চৈতালি’কে সাজাতে চলে এসেছে।মেয়েটা কেমন জানি পাথরের মতো হয়ে গেছে।ঠিক মতো খাওয়া করে না।কারো সাথে কথা বলে না।শরীরটা আগের থেকে প্রচুর শুকিয়ে গিয়েছে।চৈতালি বসে আছে।পার্লারে’র মেয়ে গুলো চৈতালি’কে সাজাচ্ছে।চৈতালি’র কোনো হেলদোল নেই।দেখে মনে হচ্ছে,একটা পুতুল বসে আছে।যাকে নিয়ে যা’ খুশি ইচ্ছে করা যায়।অধরে’র কোণে হাসির রেশটুকু নেই।

ফাইয়াজ নিজের রুমে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে।ফাইয়াজে’র বাবা ছেলের রুমে আসলো।ফাইয়াজে’র মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলো।ছেলেটা আবার ঘুমের ঔষধ খেয়েছে।আজকাল ঘুমের ঔষধ খেয়ে-ই নিজে’কে বাঁচিয়ে রেখেছে ফাইয়াজ।অন্যদিনের তুলনায়।আজকে তিনটা বেশি খেয়েছে।তা’ দেখে ফাইয়াজে’র বাবা একটু ভয় পেয়ে গেল।চোখ-মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই,চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল ফাইয়াজ।ঘুমের মধ্যে বলল।

–আমাকে তুমি পুতুল আপু ভেবো আব্বু।আমি ফাইয়াজ।আমি আত্মাহত্যা করার মতো ছেলেই না।আমি তোমাকে অনেক ঘৃণা করি আব্বু।দুনিয়ায় চৈতালি’কে পেলাম না ঠিকি।কিন্তু পরপারে আল্লাহর কাছে ঠিক চেয়ে নিব।সেদিন কারো ক্ষমতা হবে না।আমাকে আর চৈতালি’কে আলাদা করার।তোমার মতো বাবা,যেনো কাউকে না দেয় আব্বু।

ফাইয়াজে’র কথা শুনে,ফাইয়াজে’র বাবার দু-চোখ ভরে এলো।কতগুলো বছর পরে,ছেলেটা তাকে আব্বু বলে ডাকলো।আমার অহংকার কি আমার থেকে সবকিছু কেঁড়ে নিবে।সত্যি রে ফাইয়াজ।তোর আব্বু অনেক খারাপ।তা-না হলে সব সময় নিজের কথা ভাবে,এবার না হয় তোর কথা ভাববো।একটা মেয়ে’কে হারিয়েছি।তোকে হারাতে পারবো না।তোর সব কষ্ট আমি দূর করে দিব বাবা।বলেই দু-হাতে ছেলে’কে টেনে তুলল।লেবুর পানির গ্লাসটা মুখের সামনে ধরে জোর করে খাইয়ে দিল।লেবু পানি খেয়ে,ফাইয়াজ আবার শুইয়ে পড়লো।ফাইয়াজে’র বাবা কোনো কথা না বলে,রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

–রাহেলা তোমার ছেলে’কে ঘুম থেকে তুলো।গোসল করিয়ে ফ্রেশ করে দাও।যেভাবে ঘুমোচ্ছে,সারারাতে-ও উঠবে না।স্বামীর কথার কোনো উওর করল না রাহেলা চৌধুরী।সোজা ছেলের রুমে আসলো।প্রায় আধা ঘণ্টা ডাকার পরে ছেলে’কে তুলতে সক্ষম হলো,ছেলে’কে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে,ওয়াশরুমের ঝরনা ছেড়ে দিল।এবার ফাইয়াজে’র ঘুমের রেশ কিছুটা ভালো ভাবে কেটেছে।মায়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।

–তোমার মাথা হয়ে গেছে আম্মু।এভাবে কেউ ঝরনা ছেড়ে দেয়।

–মাথা আমার না তোর খারাপ হয়েছে।একটা মেয়ের জন্য নিজেকে আর কতটা কষ্ট দিবি।আমাকে কিছু করতে দিলি না।তুই নিজেকে এভাবে শেষ করে দিবি।আমি মা হয়ে বসে বসে দেখবো।ভদ্রলোকের মতো গোসল দিয়ে,বিছানায় তোর জামা-কাপড় রাখা আছে।সেগুলো পড়ে নিচে আয়।

সন্ধ্যা করে শরীরে পানি পড়াতে,ফাইয়াজে’র শরীরে কাঁপুনি উঠে গেল।কোনো কথা বলল না।ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিল।গোসল করে এসে,বিছানায় পাঞ্জাবি দেখে,ভ্রু কুঁচকে গেল।আম্মু জানে আমি পাঞ্জাবি পড়তে পছন্দ করি না।তবু-ও কেনো আমাকে পাঞ্জাবি দিয়ে গিয়েছে।বিরক্ত হয়ে পাঞ্জাবি পড়ে নিচে আসলো।নিচে এসে মহাবিপদে পড়লো ফাইয়াজ।একি তার বাসায় এত মানুষ আসলো কি করে?নিজের বাসায় নিজের-ই পা রাখার জায়গা নেই।সবকিছু মাথার ওপরে দিয়ে যাচ্ছে।ফাইয়াজে’র বাবা ফাইয়াজ’কে দেখে দ্রুত ছেলের কাছে আসলো।কোনো কথা না বলে,ছেলের হাত ধরে বাহিরে নিয়ে গেল।বাহিরে আসতে-ই,ফাইয়াজ তার বাবার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।রেগে বলল।

–আপনার সাহস কি করে হয়।আমার অনুমতি না নিয়ে,আমার হাত ধরার।ছেলের কথায় পাত্তা না দিয়ে,ফাইয়াজে’র বাবা বলল।

–তুমি আমার প্রেমিকা হও।যে তোমার হাত ধরতে হলে,অনুমতি নিতে হবে।আমি তোমার বাবা হই বেয়াদব।বাসায় তো সন্মান করো না।লোকজনের সামনে এসে বেয়াদবি শুরু করেছো?

বাবার কথা শুনে বোকাবনে গেল ফাইয়াজ।তার বাবার মতো মানুষ।তার সাথে রসিকতা করছে।নিজকে সামলে নিয়ে বলল।

–সন্মান পাবার মতো কোন কাজটা আপনি করেছেন।আপনাকে দেখলে আমার ঘৃণা হয়।আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধে।বলেই চলে যেতে লাগলো।ফাইয়াজে’র বাবা ফাইয়াজ’কে শক্ত করে ধরে গাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দিল।নিজে-ও গাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে গাড়ির দরজা লক করে দিল।এতে ফাইয়াজে’র রাগ দিগুণ বেড়ে গেল।রেগে বলল।

–এটা কেমন ধরনের ভদ্রতা?

–তুমি নিজেই বলো আমি ভদ্র মানুষ না।অভদ্র মানুষে’র কাছে ভদ্রতা আশা করা।নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না ফাইয়াজ।বলল ফাইয়াজে’র বাবা।

ফাইয়াজে’র বাবার কথায়,ফাইয়াজে’র ভ্রু কুঁচকে গেল।কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো।আজকে তার বাবার হয়েছে টা কি?এমন করছে কেনো?পুতুল আপু চলে যাওয়ার পরে,কোনোদিন ভালোবেসে ডাক দেননি।সেই বাবা আমার সাথে মজা করছে।ফাইয়াজে’র পাশে তাসফিয়া মুখ কালো করে বসে আছে।তাসফিয়া’কে দেখে বলল।

–আপু কি হয়েছে।আমরা কোথায় যাচ্ছি।বলল ফাইয়াজ।

–আজকে চৈতালি’র বিয়ে।আমাদের দাওয়াত করেছে।চৈতালি’র বিয়ের দাওয়াত খেতে যাচ্ছি।আর কোনো প্রশ্ন থাকলে বল।বলল তাসফিয়া।

তাসফিয়া’র কথা শুনে,নিমিষেই ফাইয়াজে’র মনটা খারাপ হয়ে গেল।মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট গুলো বেড়িয়ে আসতে চাইলো।চোখ গুলো লাল হয়ে আসতে শুরু করেছে।সে,যতই সবকিছু ভুলে যেতে চাচ্ছে,তার পরিবার কেনো তার ক্ষত স্থানে বারবার আঘাত করছে।খুব দরকার ছিল।তার কথা মনে করিয়ে দেওয়া’র।আজকে চৈতালি’র বিয়ে।মেয়েটা নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর করে সেজেছে।বাবা সবকিছু মেনে নিলে,চৈতালি আজকে আমার জন্য সাজতো।আমি দু-নয়ন ভরে তাকে দেখতাম।আমার পিপাসিত হৃদয়’কে শীতল করতাম।কিন্তু সে,যে আমার হলো না।অন্য কারো জন্য বধু রুপে সেজে উঠছে।একবার তাকে দেখে আসলে খুব বেশি অন্যায় হয়ে যাবে।আমি কেনো মেনে নিতে পারছি না।সে অন্য কারো হয়ে যাবে।ফাইয়াজ গাড়ির জানালা দিয়ে,দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।

–শুনেছি মন থেকে কিছু চাইলে,তুমি কাউকে ফিরিয়ে দাও না।তাকে মন থেকে এত করে চাইলাম।তবু-ও কেনো দিলা না।কথা গুলো বলেই চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুকণা গুলো মুছে নিল।

চলবে…..#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৪৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

বর এসেছে,প্রতিধ্বনি’তে পুরো বাড়ি মেতে উঠল।সবাই ছুটলো বর দেখতে।সময়ে’র সাথে চৈতালি’র হৃদপিণ্ডে’র গতিবেগ দিগুণ গতিতেছুটে চলেছে।মনের মধ্যেখানিতে অজানা হাহাকার পড়ে গিয়েছে।নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।কিন্তু বরাবরে’র মতো-ই ব্যর্থ হচ্ছে।

“বরের জায়গায় অন্য কাউ’কে দেখে,তানহা আর রোকেয়া বেগমে’র চোখ বড় বড় হয়ে এলো।প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে দু’জন ইফাদে’র দিকে তাকালো।ইফাদ দু’জনকে শান্ত হতে বলল।সে,পড়ে সবটা বুঝিয়ে বলবে।

ফাইয়াজ বরের জায়গায় নিজেকে,আবিষ্কার করে।গোল গোল হয়ে সবাই’কে দেখছে।ঠিক তখন-ই ফাইয়াজে’র বাবা।ফাইয়াজে’র মুখে রুমাল চেপে ধরে বলল।

–নতুন জামাই লজ্জা পেতে শিখো বেয়াদব।এভাবে নির্লজ্জে’র সবার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?আমার মান সন্মান ডুবিয়ে দিবে নাকি?

সবকিছু ফাইয়াজে’র মাথার ওপরে দিয়ে যাচ্ছে।সবকিছু স্বপ্নে’র মতো লাগছে।ঘুম ভাঙলে-ই স্বপ্ন’টা শেষ হয়ে যাবে।ফাইয়াজে’র মাথার মধ্যে একটা ঘোর কাজ করছে।ঘোরের মধ্যেই বলল।

–আব্বু আমরা এখানে কেনো এসেছি?বলল ফাইয়াজ।

–তোমাকে তোমার বিয়ের দাওয়াত খেতে নিয়ে এসেছি।তা’ বলো ফাইয়াজ চৌধুরী।নিজের বিয়ের দাওয়াত,খেতে এসে।তোমার কেমন অনুভূতি হচ্ছে।

ফাইয়াজ আর উত্তর দিতে পারলো না।তার আগেই রোকেয়া বেগম ফাইয়াজে’র সামনে মিষ্টি ধরলো।ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে,মিষ্টিটা খেয়ে নিল।খুব আদর যত্ন করে,ফাইয়াজ’কে বাসার মধ্যে নিয়ে আসা হলো।সবাই ফাইয়াজ’কে কতটা ভালোবাস’ছে।ফাইয়াজ’কে নিয়ে রসিকতা করছে।হাজার হলে-ও বাসার নতুন জামাই।এতক্ষণ একটা ঘোর কাজ করলে-ও এখন ফাইয়াজে’র ভিষণ লজ্জা করছে।অজানা এক ভালো লাগা মনে এসে ধরা দিয়েছে।খুশিতে মনটা ভরে উঠেছে।চৈতালি’কে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে।ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে দেখে আসতে।এর মধ্যে কাজি সাহেব চলে আসলো।বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিল।ফাইয়াজে’র কাছে থেকে বিদায় নিয়ে,চৈতালি’র কাছে আসলো।চৈতালি পাক্কা আধা ঘণ্টা সময় নিয়ে তিন বার কবুল বলেছে।কান্না করতে করতে মেয়েটা প্রায় শেষ।

বিয়ের সকল কার্যক্রম শেষ।এবার বিদায়ের পালা।ইফাদ চৈতালি’র হাত ফাইয়াজে’র হাতে দিয়ে বলল।

–নিজের কলিজা’র টুকরা টাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম।যত্ন সহকারে আগলে রেখো।তোমার প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস আছে।আশা রাখছি।আমার বিশ্বাসের মূল্য দিবে।কখনো আমার বোনটা’কে কষ্ট পেতে দিবে না।আমার বোন কষ্ট পেলে,তার কষ্ট গুলো ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করবে।আর যদি কখনো আমার বোনকে তোমার কাছে বোঝা মনে হয়,তাহলে
আমাকে বলবে।আমি নিয়ে চলে আসবো।আমার বোন’কে সারাজীবন বসিয়ে রাখিয়ে খাওয়াবার ক্ষমতা আমার আছে।আমি আমার বোনের জন্য স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি।তাই পুরনো সব ক্ষত ভুলে,আমার জান টাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম।আগলে রেখো।বলল ইফাদ।

–তোমার মতো করে ভালো রাখতে পারবো কি না জানি না।তবে তোমার মতো করে ভালো রাখার চেষ্টা করবো।সব সময় ওর মাথার ওপরে ঢাল হয়ে দাঁড়াবো।কখনো কোনো বিপদ চৈতালি’কে স্পর্শ করতে দিব না।নিজরে সবটুকু দিয়ে,চৈতালি’কে ভালো রাখার চেষ্টা করবো।আমি সর্বদা তোমার বিশ্বাসে’র মূল্য দেওয়া’র চেষ্টা করবো ভাইয়া।বলল ফাইয়াজ।

ইফাদ আর দাঁড়ালো না।ভিড় ঠেলে বেড়িয়ে আসলো।হয়তো কান্না লুকানোর জন্য পালিয়ে এলো।চৈতালি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।তার একটাই কথা,তাদের ছেড়ে কোথাও যাবে না।মাকে ছেড়ে তানহা’কে জড়িয়ে ধরে বলল।

–ভাবি মাকে বলো না।আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাব না।তোমরা-ও আমার সাথে চলো।প্রচুর পাগলামি শুরু করে দিয়েছে চৈতালি।ইফাদ এসে বোঝালো।তবু-ও কথা শুনছে না।চৈতালি এমন ব্যবহারে ফাইয়াজ খুব বিরক্ত হলো।বিরক্তি মাখা মুখে বলল।

–এত কষ্ট করে পেয়েছি।যাবে না বলছে।দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি মজা।বলেই চৈতালি’র কাছে আসলো।সবাই’কে অবাক করে দিয়ে,চৈতালি’কে কোলে তুলে নিল।ফাইয়াজে’র কাণ্ড দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে।অবশেষে চৈতালি’র বিদায়ে’র পালা শেষ হলো।চৈতালি’র বিদায় শেষ হতেই পুরো বাসা ফাঁকা হয়ে গেল।দশ-বারো জন আছে শুধু।পুরো বাসা একদম এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।রাতটা কোনো রকমে পার করে দিতে হবে।আজকে সবাই ক্লান্ত।খেয়ে যে,যার মতো চলে গিয়েছে।সকালে এসে কাজ করে দিবে।

তানহা রুমে মুখ ভার করে বসে আছে।এতকিছু হয়ে গেল।ইফাদ তাকে একটা বার বলার প্রয়োজন মনে করল না।আসুক আজকে একটা কথা-ও বলবো না।

গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সজ্জিত রমে বসে আছে চৈতালি।চারদিকে ফুলের সুবাস চৈতালি’কে মাতাল করে তুলছে।চৈতালি’র খালি মনে হচ্ছে,তার বিয়ে ফাইয়াজে’র সাথে হয়েছে।নাকি,ভিড়ের মাঝে অন্য মানুষের কণ্ঠেস্বর শুনে তাকে ফাইয়াজ ভাবছে।ঘোমটা তুলে বরের মুখটা দেখা উচিৎ ছিল।কিন্তু ফাইয়াজে’র সাথে বিয়ে হলে,বরের নাম ফারহাজ বলল কেনো?সবকিছু কেনো জানি গুলিয়ে আসছে।তখনই দরজা লাগানোর শব্দ ভেসে এসো।চৈতালি ভয়ে জড়সড় হয়ে বসলো।উসখুস করছে একবার বরের মুখটা দেখার।চৈতালি নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না।ঘোমটা একটু উঁচু করে তুলল।তার আগেই ফাইয়াজ জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।চৈতালি হতাশ হলো।আবার ঘোমটা টেনে বসলো।ফাইয়াজ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে,কোনো কথা না বলে,বিছানায় এক পাশে,শুইয়ে পড়লো।বড্ড অভিমান হয়েছে চৈতালি’র ওপরে।ভেবে-ই নিয়েছে,
চৈতালি কথা না বলা পর্যন্ত।সে আগে কথা-ও বলবে না।বরের এমন আচরণ চৈতালি’কে বড্ড ভাবাচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ বরের সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘোমটা তুলে ফেলল।নিজের পাশে কালো টি-শার্ট আর জিন্সের পেন্ট পড়া যুবকে’র মুখ দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে চৈতালি।ফাইয়াজে’র দিকে একটু এগিয়ে আসলো।একটু কাত হয়ে,যখনই ফাইয়াজে’র মুখ দেখতে যাবে।তখনই ফাইয়াজ চৈতালি’র দিকে ঘুরলো।চৈতালি তাল সামলাতে না পেরে ফাইয়াজে’র বুকের মধ্যে খানিতে গিয়ে পড়লো।ফাইয়াজ চৈতালি’কে সরিয়ে দিয়ে বলল।

–এমন অসভ্যের মতো করছো কেনো?আগে কখনো ছেলে দেখো নাই?ফাইয়াজে’র কথা শুনে চৈতালি চোখ বড় বড় করে তাকালো।মুহুর্তে-ই দু-চোখ ভরে এলো।কোনো কথা না বলে-ই দু’হাতে ফাইয়াজ’কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে আবদ্ধ করে নিল।ফাইয়াজ যতই নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়া’র চেষ্টা করছে।চৈতালি’র দু-হাতের বাঁধন দিগুণ ভাবে তীব্র হচ্ছে,চৈতালি ফাইয়াজ’কে জড়িয়ে ধরে শব্দ করেই কান্না করে দিল।চৈতালি’র কান্না দেখে ফাইয়াজ স্তব্ধ হয়ে গেল।কোনো কথা বলছে না।চুপচাপ সময়টা “কে অনুভব করছে।কান্না করতে করতে চৈতালি ঘুমিয়ে গেল।বেশ কিছুক্ষণ পরে ফাইয়াজ চৈতালি’কে বালিশে শুইয়ে দিল।চৈতালি’র গহনা গুলো খুলে,টেবিলে রেখে আসলো।চৈতালি’র কপালে অধর ছুঁইয়ে দিল।তারপরে চৈতালি’কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল।

পরের দিন সকাল বেলা,তানহার ঘুম ভেঙে ইফাদ’কে পাশে দেখতে না,পেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো।কাল রাতে ইফাদে’র জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুৃমিয়ে গিয়েছে।সে,নিজে-ও জানে না।তার মানে ইফাদ সারারাত রুমে আসে নাই।তানহা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসলো।বেশ কিছু মেহমান নতুন এসেছে।তাদের সাথে কালকে দেখা হয় নাই।মূলত তাদের বাসা দূরে হওয়ায়।বিয়েতে উপস্থিত হয়ে পারে নাই।রোকেয়া বেগম আর ইফাদ মেহমানদে’র আপ্যায়ন করছে।তানহা গম্ভীর মুখ করে সবকিছু দেখছে।ইফাদ তানহা’কে দেখে,একটা প্লেটে খাবার নিয়ে তানহা’র দিকে এগিয়ে আসলো।তানহা’র হাত ধরে নিজের রুমে চলে আসলো।তানহা এখনো মুখ গম্ভীর করে আছে।ইফাদ এক লোকমা ভাত তানহা’র মুখের সামনে ধরলো।

–স্যরি “বউজান”।আমি তোমাকে সবকিছু বলতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু সবকিছু এত দ্রুত হয়ে গেল।আমি তোমাকে আর আম্মু’কে জানাতে পারি নাই।কালকে রাতে অনেক কাজ ছিল।তিনটা’র সময় রুমে আসছি।দেখি তুমি ঘুমিয়ে গিয়েছো।তাই বিরক্ত করি নাই।আমি’ও তোমার সাথে ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলাম।সকালে উঠে কাজে লেগে পড়েছি।পুরো বাসা পরিষ্কার করতে।
জীবন শেষ হয়ে গেল।তোমার বর এত কাজ করল।একটু বরের সেবা করলে-ও তো পারো।

–আমার কোনো বর নেই।

–তাহলে আমি কে?

–কেউ না?

–চৈতালি’র বিয়ের দু’দিন আগে,ফাইয়াজে’র বাবা আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে ডেকেছিল?

তানহা আগ্রহ নিয়ে ইফাদে’র দিকে তাকালো।আগ্রহী কণ্ঠে বলল পরে?

–আমি কারো কেউ না।আমি কেনো কাউকে বলতে যাব।

–নিজে ভুল করেছে।আবার বড় বড় কথা বলছে।ভনিতা না করে বলো।ফাইয়াজে’র সাথে চৈতালি ‘র বিয়ে কি করে হলো?

–ফাইয়াজে’র বাবা চৈতালি’র বিয়ের দু’দিন আগে আমাকে নিয়ে,একটা রেস্টুরেন্টে বসে।আমি প্রথমে খুব অবাক হই।উনি আমার দু-হাত ধরে মাফ চেয়েছেন।উনি গভীর ভাবে অনুতপ্ত।আমার দু’হাত ধরে অনেক কান্না করেছিল।আমি প্রচুর অবাক হয়েছিলাম জানো?এত কঠিন একটা মানুষ এভাবে কান্না করছে।উনি পুতুল আপু আর ভাইয়ার জন্য অনেক আফসোস করেছে।বলেছেন তিনি এক মেয়েকে হারিয়েছেন।নতুন করে ছেলেকে তিনি হারাতে চান না।বলে তোমার বোনকে আমার ছেলের জন্য ভিক্ষা দাও।তোমার বোনকে ছাড়া আমার ছেলেটা বাঁচবে না।তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।আমার অহংকার দু’টো ছেলে-মেয়েকে শেষ করে ফেলছে।আমি চাই না আমার অহংকারের জন্য আরো দু’টো ফুল অকালে ঝড়ে যাক।

–চৈতালির বিয়ে ঠিক হয়েছিল।তাদের কি বলেছিলে?

–আমি উনাকে বলে ছিলাম।আমি আপনাকে কিভাবে “বিশ্বাস করবো।আপনি আমার বোন’কে নিয়ে গিয়ে, মেরে-ও ফেলতে পারেন।উনি বলে ছিলেন।উনি চৈতালি’কে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তারপরে নিয়ে যাবেন।উনি উনার কথা রেখেছেন।তার পরে উনাকে বললাম।চৈতালি’র বিয়ে তো’ আমরা ঠিক করে ফেলছি।উনারদের কি জবাব দিব।তারপরে ফাইয়াজে’র বাবা আমার সাথে,ছেলের বাসায় যান।ঐ ছেলের বাসার লোকজন আমাদের সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছে।ফাইয়াজে’র বাবা সবটা সামলে নিয়েছিল।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।চৈতালি’কে আমরা কোন পরিবারে বিয়ে দিতে যাচ্ছিলাম তানহা?আমি চৈতালি’র জন্য স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি তানহা।চৈতালি রোজ রাতে কান্না করতো।নামাজ পড়ে কান্না করতো।ভয়ে কিছু বলতে পারতো না।আমি তো’ ওর ভাই।আমি তো সবকিছু বুঝি।তাই পুরোনো ক্ষত ভুলে,
দু’জন মানুষের মুখ হাসি তুলে দিয়েছি।আমি কি খুব বেশি ভুল করেছি তানহা।

–তুমি কখনো ভুল করতেই পারো না।আমি জানি চৈতালি’র যেটায় ভালো হবে।তুমি সেটাই করবে।এতে আমার রাগ বা আক্ষেপ কোনো কিছুই নেই।আমার রাগ হয়েছে,তুমি আমাকে কিছু বলো নাই তাই।এই যে,এখন বললে,আর রাগ করে নেই।

–তাহলে এখন খেয়ে নাও।বলেই এক লোকমা ভাত তানহা’র মুখের সামনে ধরলো।তানহা আর রাগ করল না।চুপচাপ খেয়ে নিল।

“রাহেলা চৌধুরী চৈতালি’র মাথায় হাত বুলিয়ে চৈতালি’কে ডাকছে।সজাগ হতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো চৈতালি।চৈতালি’র ধড়ফড়ানি দেখে রাহেলা চৌধুরী বলল।

–এত উত্তেজিত হবার দরকার নেই মা।আমাকে ভয় পাবার দরকার নেই।এটা তোমার-ই তো, বাড়ি।সবাই নতুন বউ দেখার জন্য এসেছে।ফ্রেশ হয়ে নিচে চলো।বলল রাহেলা চৌধুরী।

–আমি ফ্রেশ হয়ে কি পড়বো?

–শাড়ি পড়বে।

–আমি শাড়ি পড়তে পারি না।আমার সালোয়ার কামিজ পড়ে অভ্যাস।বাসায় থাকতে ভাবি শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।

–তোমার চিন্তার কোনো কারন নেই।আমি আছি।আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিব।যাও এবার ফ্রেশ হয়ে এসো।ওয়াশরুম’টা দেখিয়ে দিয়ে বলল।

সন্ধ্যা বেলা চৈতালি আর ফাইয়াজ’কে ইফাদে’র বাসা থেকে নিয়ে যেতে,আসা হয়েছে।ইফাদ, তানহা,আরো দু’চার জন এসেছে।চৈতালি সারাদিন ফাইয়াজে’র দেখা পায় নাই।মনটা ভিষণ খারাপ।আচ্ছা ফাইয়াজ কি তার সাথে,তাদের বাসায় যাবে না।নাকি ফাইয়াজ বউ হিসেবে তাকে মেনে নিতে পারছে না।হাজার’টা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।চৈতালি গাড়িতে উঠে বসতে-ই চৈতালির চোখ কপালে উঠে গেল।ফাইয়াজ তার আগেই গাড়িতে উঠে বসে আছে।চৈতালি’কে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল।

–আগে কখনো ছেলে দেখো নাই।এভাবে তাকিয়ে থাকার কোনো মানে আছে?কেউ আমার দিকে এভাবে,তাকিয়ে থাকলে,আমি খুব অস্বস্তি বোধ করি।

–আপনি সারাদিন কোথায় ছিলেন।কালকে-ও আমার সাথে কথা বলেন নাই।আমাকে বউ হিসেবে আপনার পছন্দ না।

–না।

–কেনো?

–এই যে,তুমি স্বামীর অভিমান ভাঙাতে জানো না।বোকার মতো খালি তাকিয়ে থাকো।কোথায় একটু ভালোবেসে মানিয়ে নিবে।তুমি আমাকে রেখে বিয়ে করে,নিচ্ছিলে।আমি তোমার ওপরে খুব রাগ করেছি।আল্লাহর কাছে চেয়েছিলাম।তাই উনার রহমতে পেয়ে গেলাম।

–একা চাইলে হয় না।দু’জনকে-ই চাইতে হয়।দু’জনের মোনাজাত এক হলে,আল্লাহ তায়া’লা কখনো খালি হাতে ফেরায় না।

–তারমানে তুমি আমাকে চেয়েছিলে?

–আপনি-ও তো চেয়েছিলেন?

–আচ্ছা অভিমানে অভিমানে কাটাকাটি।বলেই দু’জনে হেসে দিল।তানহাদে’র বাসায় ফাইয়াজ আর চৈতালি দু’জনেই পাশাপাশি বসে আছে।চৈতালি ফাইয়াজে’র নিকনেম দিয়েছে সাদা বিড়াল’।তা’ দেখে ফাইয়াজ রেগে চৈতালি’র দিকে তাকালো।চৈতালি হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মিনু এসে চৈতালি আর ফাইয়াজ’কে নাশতা দিয়ে গেল।

ইফাদ গম্ভীর মুখ করে তানহা’র কাছে আসলো।গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

–তানহা আমি তোমাকে কতবার বলেছিলাম।আমরা ওদের নামে থানায় মামলা করবো।তুমি আমার কথা কানে নিচ্ছো না কেনো?

–তোমাকে একটা কথা বলা হয় নাই।আমি শিওর হয়ে কালকে তোমাকে জানাচ্ছি।রাগ করো না।

ইফাদ কোনো কথা না বলে চলে গেল,একটু পরে এতগুলো ফল দিয়ে আসলো।তানহা’র সামনে ধরে বলল।

–আমি এখানে বসে আছি।চুপচাপ সবকিছু শেষ করে ফেলো।

–এতকিছু আমি খেতে পারবো না।তানহা’র কথায় ইফাদ তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তানহা’র দিকে তাকালো।তানহা কোনো কথা না বলে,চুপচাপ ফল গুলো খেয়ে ফেলল।ইফাদ তানহা’র কপালে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে বলল।

–আমার লক্ষী বউজান তুমি একটু অপেক্ষা করো।আমি এখনই আসছি।বলেই ইফাদ চলে গেল।

চৈতালি আর ফাইয়াজ দু’দিন থেকেই চলে গেল।তানহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যাবে।তখনই ইফাদে’র ফোন বেজে উঠলো।তানহা কৌতুহল বশত ফোনের কাছে আসলো।আবিরের নাম্বার দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে,বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করল।ফোনের ওপাশ থেকে যা’ শুনলো।তা’ শুনে চিৎকার দিয়ে উঠলো তানহা।তানহা’র চিৎকার শুনে ইফাদ দৌড়ে আসলো।তানহা’কে দু’হাতে আগলে নিয়ে বলল।

–কি হয়েছে তুমি এভাবে চিৎকার করছে কেনো?তানহা কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।

–চাচি খুন হয়েছে।চাচিকে কারা জানি খুন করে রেখে চলে গিয়েছে।তুমি আমাকে তাড়াতাড়ি চাচিদের বাসায় নিয়ে চলো।

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here