এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব -৪৩+৪৪

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৪৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চৈতালি আর তানহা থানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।একটু সকাল হবার কারনে,লোকজন খুব কম।চৈতালি তানহা’র হাত ধরে থানার ভেতরে গেল।

–স্যার আমরা ভেতরে আসতে পারি?বলল চৈতালি।

ফাইয়াজ রাফিনে’র সাথে দেখা করতে এসেছিল।চৈতালি’কে এত সকালে থানায় দেখে অবাক হলো।চৈতালি রুমের মধ্যে প্রবেশ করে বলল।

–স্যার আমার আপনাদের সাহায্য চাই।

–ভাবি আপনার মুখ এমন লাগছে কেনো?কোনো সমস্যা হয়েছে?বলল ফাইয়াজ।

–আপনি এত সকালে থানায় কি করছেন।বলল চৈতালি।

–আমি আজকে বাহিরে চলে যাব।তাই রাফিনে’র সাথে দেখা করতে এসেছি।ফাইয়াজে’র কথা শুনে,চৈতালি’র ভেতরে ধক করে উঠল।কিন্তু নিজের অনুভুতি’কে মাটি চাপা দিয়ে বলল।

–কাল থেকে ইফাদ ভাইয়া’র কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

–এসব কি বলছো?ভাইয়া’কে ফোন দাও নাই?

–দিয়েছি ভাইয়া’র ফোন বন্ধ।ভাবির অবস্থা খুব খারাপ।তাই পুলিশে’র সাহায্য নিতে এসেছি।

–তুমি চিন্তা করো না।রাফিন আমার ফ্রেন্ড হয়।তোমাদের যতদূর সাহায্য লাগে।রাফিন নিজের সবটুকু দিয়ে তোমাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবে।

–আপনি আপনার বন্ধু’কে বলে,যদি একটু তাড়াতাড়ি ভাইয়া’কে খুঁজে বের করে দিতে পারেন।তাহলে সারাজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।

–চিন্তা করো না।আমি আছি।তোমার ভাইয়া’কে ঠিক খুঁজে বের করবো।তার আগে তোমাদের একটা মিসিং ডায়েরি করতে হবে।চৈতালি ফাইয়াজে’র কথা মতো সবকিছু পূর্ণ করল।

–চৈতালি চলো আমরা নিজেরা চেষ্টা করি।উনারা তো’ কোনো কাজই করছেন না।বলল তানহা।

–ভাবি আপনি একটু শান্ত হন।বললে-ই তো’ আর একটা নিখোঁজ মানুষ’কে খুঁজে বের করে নিয়ে আসা যায় না।ওরা ভাইয়া’র কল লিস্ট চেক করছে।ফাইয়াজে’র কথা মতো রাফিন নিজের কাজে লেগে পড়েছে।একটু পরে রাফিন এসে জানালো।ইফাদে’র ফোন কোথায় থেকে বন্ধ হয়েছে।

–আপনি যে,জায়গার নাম বলছেন।ওখানে ভাইয়া’র অফিস।চৈতালি’র কথা শুনে কেউ দেরি করল না।সবাই মিলে বেড়িয়ে পড়ল।

আজকে এক মাস পনেরো দিন কেটে গিয়েছে।পুলিশ এখনো ইফাদে’র খোঁজ দিতে পারে নাই।শহরের অলিতে-গলিতে,ইফাদ’কে খোঁজা হয়েছে।ফাইয়াজ নিজের সর্বস্ব দিয়ে চৈতালিদে’র সাহায্য করছে।বেশিরভাগ সময় চৈতালিদে’র সাথে থাকছে।বিনা স্বার্থে ক’জন মানুষ বিপদে’র সময় পাশে থাকে।ইফাদে’র চিন্তা করতে করতে,তানহা’র অবস্থা পাগল প্রায়।মেয়েটা’র দিকে তাকানো যাচ্ছে না।আজকে হঠাৎ করে-ই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।ফাইয়াজ বাসায় ডক্টর নিয়ে এসেছে।ডক্টর হাতে স্যালাইন করে দিয়ে,কিছু ঔষধ লিখে দিল।দিয়েই চলে গেল।এক হাতে স্যালাইন
,এক হাত কপালে,দু-চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।মেয়েটা’র অর্ধেক শরীর শুকিয়ে গিয়েছে।এভাবে চলতে থাকলে,মেয়েটা’কে আর বাঁচানো যাবে না।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না।চৈতালি এসে তানহা’র পাশে বসলো।চৈতালি’কে পাশে বসতে দেখে,তানহা মলিন মুখ করে বলল।

–উনার কোনো খোঁজ পেয়েছো চৈতালি?তানহা’র কথা শুনে,চৈতালি মাথা নিচু করে ফেলল।

–ভাবি আপনি চিন্তা করবেন না।আজকের মধ্যে ভাইয়া’র একটা খোঁজ পাওয়া’র আশা রাখা যায়।যারা ভাইয়া’কে ধরে নিয়ে গিয়েছে।তারা সবাই গভীর জলের মাছ।আমার মনে হয়।এর সাথে বড় বড় লোক জড়িত আছে।ফাইয়াজে’র কথা শুনে,সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

অন্ধকার রুমে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে ইফাদ’।শরীরে তৈরি হয়েছে হাজার রকমে’র আঘাতের চিহ্ন।শ্যামবর্নের পুরুষের শরীরটায় কালচে ভাব চলে এসেছে।চেহারায় মলিনতা বিদ্যামান।শরীর একদম শুকিয়ে গেছে।দেখলে যে,কারো আত্মা কেঁপে উঠবে’।অন্ধকার রুমে একরাশ আলো নিয়ে,প্রবেশ করল আবির।ইফাদ চোখ পিটপিট করে তাকালো।

–তা’ ইফাদ ভাইয়া।বলুন আপনার এক মাস পনেরো দিনের যাত্রা কেমন লাগলো।আমাকে মেরে ছিলেন না।বলে ছিলাম।এর প্রতিশোধ একটু একটু করে নিব।তিলে তিলে শেষ করে দিব।আবির তার কথা রেখেছে।আপনার দম আছে।মানতে হবে,এত মার খাওয়া’র পরে-ও বেঁচে আছেন।তানহা’র ভাগ্য আছে বলতে হবে।তানহা’র কথা শুনতেই ইফাদে’র বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল।ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলল।

–আবির ভাই একবার তানহা’র সাথে কথা বলিয়ে দিবে।আমাকে তোমরা মেরে ফেলো।না হলে তানহা’র কাছে দিয়ে আসো।তাকে কাছে না পাওয়ার অসহ্য যন্ত্রনায় আমি হাজার বার মরে গিয়েছি।তানহা আমার চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।আমি কথা দিচ্ছি।তোমাদের বিষয়ে একটা কথা-ও বলবো না।শুধু বলবো।আমি ভালো আছি।ঠিক আছি।ওর কণ্ঠস্বর একটু শুনতে চাই।আমার তোমার দুটো হাত ধরে বলছি।একটা বার কথা বলিয়ে দাও।

–একটা মেয়ে কতটা ভাগ্যবান হলে,এমন স্বামী পায়।আজকে তোমার জন্য মন থেকে ভালোবাসা আসছে।বিশ্বাস করো ইফাদ।আজকে আমি নিরুপায়।আমি চাইলে-ও তোমাকে সাহায্য করতে পারবো না।তুমি ওদের শর্তে রাজি হয়ে যাও।এখানে তুমি-ও বেঁচে যাবে।আর আমি’ও বেঁচে যাব।আমি যতদূর শুনেছি,তানহা তোমার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।কথাটা শোনা মাত্রই ইফাদ কেমন জানি শান্ত হয়ে গেল।দু’টো বেড়ে অশ্রু কণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল।

–বেশ তানহা’কে ফোন দাও।আর তোমাদের শর্তের কথা জানাও।আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি।তানহা সবকিছু নিয়ে ছুটে চলে আসবে।

–এই তো’ সোজা পথে চলে এসেছো।তুমি অপেক্ষা করো।আমি ফোন নিয়ে আসছি।বলেই আবির বাহিরে চলে গেল।

তানহা’র স্যালাইন মাত্রই শেষ হয়েছে।ফাইয়াজ যত্ন সহকারে তানহা’র হাতের স্যালাইন খুলে দিয়েছে।রোকেয়া বেগম ফাইয়াজে’র উদ্দেশ্যে বলল।

–দেখো বাবা ফাইয়াজ।তুমি আমাদের সাহায্য করছো?এটা তোমার বাবা জানে?যদি না জেনে থাকে,তাহলে তুমি আর আমাদের সাহায্য করতে আসবে না।আমি চাই না।তোমার জন্য আমার পরিবারের ওপরে নতুন করে কোনো বিপদ আসুক।

–আম্মু তুমি উনার সাথে এমন করে কথা বলছো কেনো?উনি আমাদের কতটা সাহায্য করেছে জানো?

–তুই চুপ কর,কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে।সেটা তুই এখন আমাকে শিখিয়ে দিবি।

–আন্টি আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।আমার জন্য আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না।ইফাদ ভাইয়া’কে খুঁজে পেলে-ই আমি বাহিরে চলে যাব।বলে এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না।দ্রুত গতিতে রুম ত্যাগ করল।চৈতালি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।রোকেয়া বেগম নিজের রুমে চলে গেল।

–চৈতালি তুমি নিজের রুমে যাও।আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

–সবাই’কে তাড়িয়ে দিয়ে,এখন কান্না করবে।আমি থাকতে তোমাকে কান্না করতে দিব না।তানহা রাগী কণ্ঠে বলল।

–আমি তোমাকে রুমে যেতে বলেছি।চৈতালি মাথা নিচু করে চলে গেল।চৈতালি চলে যাওয়া’র ত্রিশ মিনিট পরে,তানহা’র ফোনে ফোন এলো।তানহা তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করল।ওপাশ থেকে আবিরের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

–আমার কিউট বনুটা কেমন আছিস?তানহা কোনো কথা ছাড়াই কল কেটে দিল।আবিরের সাথে ফালতু কথা বলে,সময় নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না।

–তোমার বউয়ে’র এত শিক্ষা হচ্ছে,তবু-ও তেজ কমছে না।দেখলে কেমন করে কল কেটে দিল।আমি পারবো না,তোমাকে সাহায্য করতে।

–তানহা একটু এমনই,একটু সহ্য করো।আর একবার ফোন দাও।

–ও হ্যালো আমি ইফাদ না।আমি আবির,কারো ভাব দেখার সময় নেই।ইফাদে’র আবির’কে জ্যান্ত পুতে ফেলতে ইচ্ছে করছে।তবু-ও নিজেকে দমিয়ে নিল।আবির’কে বুঝিয়ে রাজি করালো।আবির আবার কল দিল।দুইবার বেজে যাওয়ার পরে,তানহা বিরক্ত হয়ে ফোন তুলে বলল।

–কি হয়েছে সমস্যা কি?এভাবে রাত-বিরেতে অন্যের বউকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছো কেনো?তানহা’র কণ্ঠস্বর শুনে,ইফাদ অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করল।ধীর কণ্ঠে বলল।

–তানহা আস্তে আমি ইফাদ’।অন্যের বউকে বিরক্ত করি নাই।আমি আমার বউকে-ই বিরক্ত করেছি।ইফাদে’র কণ্ঠস্বর শুনে,তানহা তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়ে কুঁকড়িয়ে উঠল।হাতের ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে, অস্থির হয়ে বলল।

–তুমি কোথাছিলে এতদিন।একবারো কি আমার কথা মনে হয় নাই।এতটা পাষাণ কেমনে হয়ে গেলে।তুমি ঠিক আছো।সুস্থ আছো।এই কয়টাদিন ঠিকমতো খাওয়া করছো?তুমি এতগুলো দিন কি করে আমাকে ছাড়া,পার করে দিলে,তোমার কোনো বিপদ হয় নাই তো’।তুমি কোথায় আছো।আমাকে বলো,আমি চৈতালি’কে সাথে নিয়ে,তোমার কাছে যাচ্ছি।ইফাদ কিছু বলতে যাবে।তার আগেই কেউ ইফাদে’র হাত থেকে ফোন নিয়ে নিল।আবিরের ফোনটা কানে ধরে বলল।

–ইফাদ অনেক ভালো আছে।খুব যত্ন সহকারে ইফাদ’কে রেখেছি।আমার কাছে ইফাদ কখনো খারাপ থাকতে পারে বলো।তানহা ধীর কণ্ঠে বলল।

–স্রুতি?

–তোমার মাথার ব্রেন খুব ভালো দেখছি।একদিন আমার কথা শুনেছিলে,এতদিন পরে-ও চিনতে পারলে।

–তুমি ইফাদ’কে কি করেছো?

–বেশি কিছু না।ইফাদ’কে বিয়ে করেছি।ইফাদ আর তোমার কাছে যাবে না।তুমি ইফাদে’র আশা ছেড়ে দাও।বলেই কল কেটে দিল।তানহা কেমন অস্থির হয়ে উঠল।চিন্তায় পুরো শরীর গরম হয়ে আসছে।তবে কি’ সত্যি-ই ইফাদ তাকে ছেড়ে চলে গেল।

আবির নিস্তব্ধ হয়ে ইফাদে’র মুখ ধরে রেখেছে।ইফাদ’কে সাহায্য করতে গিয়ে,নিজের চোখে নিজের মায়ের মৃত্যু তো’ আর দেখা যায় না।

–আমি জানতাম।তুমি ঠিক ইফাদ’কে সাহায্য করবে।হাজার হলে-ও ইফাদ তোমার বংশের মেয়ের জামাই।রক্তের একটা টান আছে না।আবির আগন্তুকে’র দিকে তেরে গেল।

–আপনার সাহস কি করে হয়?আমার আম্মু’কে এখানে নিয়ে আসার।

–তোমার সাহস কি করে হয়?আমার কাজে বাঁধা দেওয়া’র।

–দেখুন ইফাদ খুব ভালে ছেলে,এভাবে ইফাদ’কে কষ্ট দিয়ে কিছুই পাবেন না।বরং যার জিনিস তাকে দিয়ে,নিজের কাজ সফল করুন।

–কথাটা মন্দ বলোনি।

–আমি কিছুতে-ই ইফাদ’কে তানহা’র কাছে যেতে দিব না।ইফাদ শুধু আমার।বলল স্রুতি।

–নির্লজ্জ মেয়ে কথাকার বিবাহিত ছেলের পেছনে,ঘুরতে লজ্জা করে না।বলল আবির।

–দুলাভাই আপনি’ও বিবাহিত হয়ে,অন্য মেয়েদের সাথে কি করে বেড়িয়েছেন।সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।

–আমি তোমার মতো কারো সংসার ভাঙতে চাই নাই।কারো ক্ষতি-ও করি নাই।

–মন তো’ ভেঙেছেন।আবির রেগে স্রুতির গাল চেপে ধরলো।

–তুই যদি আর একবার আমার বোনের সংসার ভাঙার চেষ্টা করিস।তাহলে তোকে এখানে-ই শেষ করে দিব।তানহা’র সাথে অনেক অন্যায় করেছি।বাবা-মা মরা মেয়ের পানি অনেক ঝরিয়েছি।আর একটা অন্যায় করবো ওর সাথে,কিন্তু তানহা’র ভালোবাসার মানুষটা কে কেঁড়ে নিব না।মেয়েটা দিন শেষে শান্তিতে থাকতে পারে।সেই ব্যবস্থা-ই করবো।বলে-ই তানহা’র নাম্বারে মেসেজ করল।আবিরের নাম্বার থেকে মেসেজ পেয়ে,
তানহা একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে,কাউকে কিছু না বলে বেড়িয়ে গেল।চৈতালি জেগেই ছিল।রান্না ঘরে আসছিল এক কাপ চা তৈরি করার জন্য,তানহা’কে বেড়িয়ে যেতে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।নিজে-ও তানহা’র পেছনে ছুটলো।

–আবির স্রুতিকে ছেড়ে দাও।না হলে তোমার আম্মুর মাথায় গু*লি* করে দিব।

–আপনারা কতটা নিচে নেমে গিয়েছেন।আমার ভাবতে-ও ঘৃণা হচ্ছে,আবির নিজের ভুলটা ঠিকি বুঝলি।এখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে বাবা।বলল হাসনা বেগম।মায়ের কথা শুনে,আবিরের মাথা নিচু হয়ে আসলো।স্রুতি দ্রুত গতিতে ইফাদে’র হাত পায়ের বাঁধন খুলতে লাগলো।

চলবে…..#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৪৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

হঠাৎ করে-ই স্রুতি মাথায় ব্যথা অনুভব করল।অতিরিক্ত আঘাত পাওয়া’র ফলে,সাথে সাথে স্রুতি সেন্সলেস হয়ে গেল।প্রিয়া ক্রোধিত কণ্ঠে বলল’।

–ছিঃ বাবা।টাকা তোমাদের এতটা নিচে নামিয়ে দিয়েছে।মনুষ্যত্ব-বিবেক সবকিছু ভুলে গিয়েছো?তোমার মেয়ে একটা মেয়ের সংসার ভাঙার জন্য,পাগল হয়ে গিয়েছে।তুমি তোমার মেয়ে’কে শাসন করতে পারলে না।বলল প্রিয়া।

–তুই আমাকে ভুল বুঝছিস মা।আমি স্রুতির ভালোর জন্যই করেছি।আমি ইফাদে’র কোনো ক্ষতি করতে চাই নাই।আমার শুধু ইফাদে’র বউয়ের ঢাকা শহরে,যে বাড়িটা আছে।ঐ’ বাড়িটা আমার চাই।আবিরের জন্য আমি পথে বসে গিয়েছি।এখন আবিরকে-ই আমাকে উদ্ধার করতে হবে।ফাইয়াজ স্রুতি’কে কতটা ভালোবাসতো।বোকা মেয়ে ফাইয়াজ’কে ঠকিয়ে,
ইফাদে’র পেছনে পড়ে আছে।চৌধুরী সাহেব আমাকে স্রুতি আর ফাইয়াজে’র বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।তুই বুঝতে পারছিস,এখন আমার টাকা পয়সার কতটা প্রয়োজন।

–তাই বলে কাউকে ঠকিয়ে বাবা।

–তাহলে তুই তোর স্বামীকে বল,আমার টাকা ফিরিয়ে দিতে।বাবার কথা শুনে,প্রিয়ার মাথা নিচু হয়ে গেল।

–আপনি আমার আম্মু’কে ছেড়ে দিন।আমি আপনার টাকা শোধ করে দিব।আমি তানহা’কে জানিয়েছি।তানহা আসছে।একটু সময়ে’র মধ্যে চলে আসবে।

চৈতালি রাস্তায় বের হয়ে তানহা’কে দেখতে পেল না।আবার বাসার মধ্যে চলে আসলো।তানহা’র জন্য চিন্তা হচ্ছে,রাত করে কোথায় গেল।কয়েকবার ফোন-ও করেছে চৈতালি।কিন্তু তানহা ফোন তুলে নাই।

আবিরে’র কথা মতো তানহা নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গেল।তার চাচি’কে সবার সাথে দেখে,একটু অবাক হলো।কিন্তু প্রকাশ করল না।তানহা’কে দেখে বলল আবির বলল।

–চলে এসেছিস।আম্মু’কে দেখে ভুল বুঝিস না।আমার পাপের ফল।তুই সহ আম্মু-ও ভোগ করছে।সবকিছু সাথে করে নিয়ে এসেছিস।বলল আবির।

–দেখো মা তানহা।তোমাদের সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই।তুমি যদি আমাদের কথা মতো কাজটা করে দাও।তাহলে কোনো ক্ষতি ছাড়া-ই তোমাকে আমরা ছেড়ে দিব।বলল স্রুতির বাবা।

–আপনি যে,আর ওদের কোনো ক্ষতি করবেন না।তার কি নিশ্চয়তা আছে।আপনি লিখিত ভাবে উল্লেখ করে দিন।এই কয়দিনে ইফাদ ও তার পরিবারের কোনো রকম ক্ষতি হলে,তার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।বলল আবির।

–আমি ওদের কোনো ক্ষতি করবো না।তাই লিখিত দিতে আমার কোনো সমস্যা নেই।

তানহা অশ্রু ভেজা নয়নে,ইফাদে’র দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ ইশারা করে বুঝিয়ে দিচ্ছে,তানহা যেনো তাদের কথা না শুনে,তানহা আবির’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–আবির ভাই আমি কাগজ নিয়ে এসেছি।ইফাদ’কে আগে আমার হাতে তুলে দিন।তারপরে আমি কাগজে সাইন করবো।বলল তানহা।

আবির ইফাদ’কে নিয়ে এসে তানহা’র পাশে দাঁড় করিয়ে দিল।তানহা’র হাত থেকে কাগজটা নিয়ে একটা টেবিলে রাখলো আবির।তানহা’র দিকে একটা কলম এগিয়ে দিয়ে বলল।

–তাড়াতাড়ি সাইন করবি।আমাদের এখানে থেকে চলে যেতে,হবে।ফাইয়াজ পুলিশের লোকদের বলে রাখছে,
ওরা আমাদের পাগলের মতো খুঁজছে।বলল আবির।

–তানহা তুমি সাইন করো না।তোমার বাবা কতটা কষ্ট করে টাকা রোজগার করেছে,তোমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে,নিজের সারাজীবনে’র পরিশ্রমের টাকা দিয়ে একটা বাড়ি করেছে।সেই বাড়িতে তোমার বদলে,অন্য কেউ রাজত্ব করবে।আমি কিছুতেই হতে দিব না।আমি ভাবতে-ও পারি নাই।তুমি আবির ভাইয়ের কথায়, এখানে চলে আসবে।এখন মনে হচ্ছে,তোমাক ফোন করাটাই ভুল হয়ে গিয়েছে।আমার যা খুশি হয়ে যাক।তবু-ও তুমি তোমার বাড়ি ওদের নামে লিখে দিবে না।আমি না থাকলে-ও তোমাকে কারো কাছে যেতে হবে না।বলল ইফাদ।

–আমি বাড়ি দিয়ে কি করবো।যে,বাড়িতে তোমার সাথে,থাকতে পারবো না।এমন বাড়ি আমার লাগবে না।আমার তোমাকে লাগবে।তোমার শরীরে’র অবস্থা কি করে ফেলছে।তোমাকে এরা অনেক কষ্ট দিয়েছে।তাই না।তুমি ঠিক মতো দাঁড়িয়ে-ও থাকতে পারছো না।আমি সাইন করে দিয়ে,তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাব।বলেই কাগজে সাইন করে দিল।আবিরে’র শশুর দ্রুত, কাগজটি উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল।হাসনা বেগম ছেলের দিকে,ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,চলে গেল।

তানহা দু’হাতে শক্ত করে, ইফাদ’কে আঁকড়ে ধরলো।ইফাদ ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।প্রিয়া স্রুতির জ্ঞান ফেরালো।যতই হোক নিজের মায়ের পেটের বোন।এভাবে ফেলে রেখে চলে যেতে পারে না।তানহা’কে ইফাদে’র পাশে দেখে,স্রুতি মাটিতে পড়ে থাকা লোহার রোডটা হাতে তুলে নিল।ছুটে এসে ইফাদ’রে মাথায় আঘাত করে বসলো।ঘটনা এত দ্রুত ঘটলো।সবাই বুঝতে উঠার আগেই শেষ হয়ে গেল।ইফাদ আঘাতটা সহ্য করতে পারলো না।সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।প্রিয়া এসে স্রুতি’কে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।রাগে পুরো শরীর কাঁপছে প্রিয়ার,নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে,আরো চারটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।তানহা রেগে স্রুতির গলা চেপে ধরলো।

–তোর সাহস হয় কি করে,আমার স্বামী গায়ে হাত দেওয়া’র।তোকে আজকে খুন করে ফেলবো।নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে স্রুতির গলা চেপে ধরে আছে তানহা।স্রুতি বাঁচার জন্য ছটফট করছে।অদ্ভুত ভাবে ভেতর থেকে আলাদা শক্ত কাজ করছে তানহা’র,এমন করে চলতে থাকলে,স্রুতি শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাবে।প্রিয়া তানহা’কে ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।স্রুতির মুখ দিয়ে,হালকা রক্ত আসতে শুরু করেছে।তা’ দেখে তানহা আরো শক্ত করে স্রুতির গলা চেপে ধরলো।তানহা’র ভেতরে জেদ কাজ করছে।শেষে আবির এসে তানহা’কে ছাড়িয়ে দিল।তানহা তেড়ে আবার স্রুতির দিকে গেল।শ্রুতির কিছু চুল নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিল।স্রুতি ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠল।অনবরত কেশে চলেছে স্রুতি।আবির অনেক কষ্ট করে,তানহা’কে শ্রুতি থেকে ছাড়াল।প্রিয়া স্রুতির ঘাড় ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল।রাগের মাথায় এতক্ষণ ইফাদে’র কথা ভুলেই গিয়েছিল।দ্রুত ইফাদে’র কাছে আসলো।ইফাদে’র মাথা নিজের কোলে তুলে নিল।অনবরত ইফাদ’কে ডাকতে লাগলো।কিন্তু ইফাদে’র কোনো হুস নেই।তানহা অসহায় দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালো।

–আবির ভাই আমাকে একটু সাহায্য করো না।তোমাকে বেশি কিছু করতে হবে না।শুধু হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসবে।বলল তানহা।

–তুই আমাকে মাফ কর বোন।আমি এমনিতেই অনেক ঝামেলা’র মধ্যে ফেঁসে আছি।তোকে সাহায্য করতে গিয়ে,আমি নিজে বিপদে পড়তে পারবো না।তোকে সাহায্য করতে গিয়ে,নিজের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলছি।এবার নিজের’টা নিজে বুঝে নে’।এখানে যেকোনো সময় পুলিশ আসতে পারে।আমি চলে গেলাম।দেখে শুনে ইফাদ’কে হসপিটালে নিয়ে যা’।ইফাদে’র শরীরে’র অবস্থা খুব একটা ভালো না।বলেই আবির চলে গেল।শহর থেকে অনেকটা দূরে ইফাদ’কে নিয়ে আসা হয়েছে।এখন তানহা একা একা কি করবে।আজকে নিজেকে সবচেয়ে অসহায় মনে হচ্ছে,তানহা কোনো উপায় না পেয়ে,চৈতালি’কে ফোন করল।তানহা’র ফোন পেয়ে দ্রুত ফোন তুলল চৈতালি।

–ভাবি তুমি কোথায় গিয়েছো?তোমার জন্য আম্মু খুব চিন্তা করছে,তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো।বলল চৈতালি।

–এখন কথা বলার সময় নেই।আমি তোমাকে একটা ঠিকানা দিচ্ছি।যত তাড়াতাড়ি পারবে,একটা গাড়ি নিয়ে চলে আসো।তোমার ভাইয়া’র অবস্থা খুব একটা ভালো না।তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।চৈতালি কেমন জানি স্তব্ধ হয়ে গেল।তানহা’র কথা শুনে,এক মুহুর্ত দেরি করল না।হাতে কিছু টাকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।

তানহা’র পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে।চিন্তা মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।এত দূরে একটা গাড়ির দেখা-ও মিলছে না।পাগলের মতো হয়ে,চারদিকে ঘুরছে।হঠাৎ করে বাহিরে গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেল তানহা।চৈতালি’র এত দ্রুত আসা সম্ভব না।তাহলে কে আসলো?তাদের কেউ মেরে ফেলতে আসে নাই তো’ আবার।তানহা’কে অবাক করে দিয়ে,চারজন পুলিশ আর ফাইয়াজ প্রবেশ করল।ফাইয়াজ’কে দেখে তানহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।দ্রুত ফাইয়াজে’র কাছে আসলো।

–আপনারা সাথে গাড়ি নিয়ে এসেছেন।তাড়াতাড়ি উনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।তানহা’র কথা শুনে,কেউ দেরি করল না।ইফাদ’কে গাড়িতে তুলে,
হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো।তানহা চৈতালি’কে ফোন করে আসতে নিষেধ করে দিল।চৈতালি’কে সোজা হসপিটালে যেতে বলল।

ইফাদ’কে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে।তানহা,
চৈতালি,ফাইয়াজ বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।তানহা’কে ছটফট করতে দেখে,চৈতালি তানহা’কে নিজের পাশে বসিয়ে নিল।

–ভাবি চিন্তা করো না।ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।বলল চৈতালি।

–তুমি আম্মা’কে কিছু বলো না।আম্মা এমনিতে-ই অসুস্থ।সারারাত জেগে চিন্তা করবে,সকালে এসে একবারে দেখবেন।তুমি আম্মাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দাও।উনি ঠিক আছেন।

তানহা মাথা নিচু করে,বসে আছে।মাথায় হাজার রকমের চিন্তা।এক ঘন্টা হয়ে গেছে।এখনো ডক্টররা বের হচ্ছে না কেনো?তানহা’কে এভাবে শক্ত হয়ে বসে থাকতে দেখে,ফাইয়াজে’র বেশ ভালো লাগছে।বিপদের সময় নিজেকে শক্ত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ,বিপদের সময় ক’জনই বা নিজের শক্ত রাখতে।একটু পরে ডক্টর বেড়িয়ে আসলো।এসেই সবাই’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–উনাকে প্রচন্ড ভাবে শারীরিক ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে।শরীর বিভিন্ন রকমের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না,করার ফলে শরীরে অপুষ্টির অভাব দেখা দিয়েছে।মানসিক ভাবে-ও তিনি ভেঙে পড়েছিলেন।এত কিছুর পরে-ও উনি বেঁচে আছেন।আল্লাহ তায়া’লার কাছে,লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করুন।টানা ছয়মাস উনাকে বেড রেস্টে রাখবেন।বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন।যত পারবেন চিন্তা মুক্ত রাখবেন।ওনার শরীরটা প্রচন্ড দুর্বল।উনি এতকিছু কিভাবে সহ্য করেছে,ভাবতেই অবাক হচ্ছি।উনার ঘুমের প্রয়োজন আছে।তাই ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিয়েছি।সকালে দেখা করতে পারবেন।বলেই ডক্টর চলে গেল।ডক্টরের কথা শুনে,সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।ফাইয়াজ চলে আসতে চাইলে চৈতালি বলল।

–আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

–বাসায় চলে যাচ্ছি।এখানে আমার আর কোনো কাজ নেই।তোমার আম্মু আমাকে এখানে দেখলে কষ্ট পাবে।আমি চাই না।আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক।বলেই চলে গেল।

আজকে পনেরো দিন পরে ইফাদ’কে বাসায় নিয়ে আসা হলো।ইফাদ আগের থেকে অনেকটা’ই সুস্থ হয়েছে।শরীরে’র দাগ গুলো মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে।ইফাদে’র যত্নের কোনো কমতি রাখে নাই তানহা।আল্লাহর রহমতে আর তানহা’র যত্নে ইফাদ এখন অনেক ভালো আছে।কিন্তু তানহা’র শরীর দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।আগের থেকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।এখন মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।আজকে-ও মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল।ডক্টর কিছু টেস্ট দিয়েছে।সময় করে তানহা’কে করে নিতে বলেছে।ইফাদে’র খেয়াল রাখতে গিয়ে,নিজের কথাই ভুল গিয়েছে তানহা।বাসায় এসে আবার কাজে লেগে পড়েছে।কয়টা দিন ভালো মতো ঘুম হয় নাই তানহা’র, ইফাদ কত করে বলল।একটু ঘুমিয়ে নিতে,মহারানী বাসায় এসে,কাজ করতে লেগে পড়েছেন।তানহা ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে,ইফাদ তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তানহা’র দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ রেগে তানহা’র হাত থেকে ঝাড়ুটা নিয়ে ফেলে দিল।

–কি হয়েছে?বলল তানহা।

–তুমি আমার বাড়ির বউ নাকি কাজের লোক।এটা আমি বুঝে উঠতে পারি না।বলল ইফাদ।

–আজব নিজের সংসারের কাজ করলে কেউ কাজের লোক হয়ে যায়।আমার সংসারের কাজ আমি করবো না।তাহলে কে করবে শুনি?

–সারাদিন কাজ করলে হবে।নিজের শরীরের কি হাল করেছো,দেখছো?

–শরীর থাকলে এমন হবেই।জ্বালাবে না।আমাকে কাজ করতে দাও।

–এতদিন দূর ছিলাম।আমাকে কত ভালোবাসতে,এখন কাছে এসেছি।সব ভালোবাসা উবে গিয়েছে।মনে হচ্ছে,আবার দূরে চলে যাই।ইফাদে’র কথার কোনো উওর না দিয়ে,হঠাৎ করেই তানহা দৌড়ে রুমের বাহিরে চলে গেল।ইফাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

রুমের বাহিরে এসে তানহা’কে বমি করতে দেখে,ইফাদ অস্থির হয়ে উঠল।দু’হাতে তানহা’কে আগলে নিয়ে বলল।

–কি হয়েছে তোমার কয়দিন হলো দেখছি।একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছো।বমি করতে করতে মেয়েটা একদম ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।আহত চোখ ইফাদে’র দিকে তাকালো।ইফাদ পানি দিয়ে তানহা’র মুখ ধুইয়ে দিল।তারপরে রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দিল।

–আমার অনুমতি ছাড়া রুম থেকে বের হলে,আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আমি ভাবছি বাসায় একটা কাজের লোক রাখবো।সবকিছু তোমার পক্ষে একা কাজ করা জুলুম হয়ে যায়।তাই তো’ অসুস্থ শরীর নিয়ে-ও,তোমাকে কাজ করতে হয়।তানহা কিছু বলতে যাবে।তার আগেই ইফাদ তানহা’র মুখ হাত রেখে,
তানহা’র কপালে অধর ছুঁইয়ে দিল।তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।

–তুমি একটু বসো।আমি আম্মুর রুম থেকে আসছি।বলেই মায়ের রুমে চলে গেল।ইফাদ মায়ের রুমে এসে,মায়ের পাশে বসলো।কোনো ভনিতা না করেই বলল।

–আম্মু তানহার শরীরটা একদমই ভালো না।আমি চাইছি একটা কাজের লোক নিতে,যে তানহা’কে সব সময় কাজে সাহায্য করবে।আমি টাকা দিয়ে,কি করবো আম্মু।যদি আমার বউকে অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে হয়।তুমি একটা ভালো কাজের লোক খুঁজো।

–আমি তানহা’কে আগেই বলেছিলাম।তানহা বলেছে,
আমার সংসারের কাজ,আমি নিজেই করতে পারবো।তুই বল বাবা,তাহলে আমি কি করবো।

–তুমি ওর কথা কানে নিও না।খুব তাড়াতাড়ি একটা মেয়ে খুঁজে বের করো।

–তুই অসুস্থ শরীর নিয়ে,আসতে গেলি কেনো?তুই চিন্তা করিস না।আমি কালকে খোঁজ খবর নিব।ইফাদ কোনো কথা বলল না।উঠে চলে গেল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here