এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব -৪৫+৪৬

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৪৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

ঘড়ির কাটায় রাত দু’টো ছুঁই ছুঁই।হঠাৎ করে-ই তানহা উঠে বসলো।শরীর’টা বড্ড খারাপ লাগছে।নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না।ইফাদ’কে ডাকতে শুরু করল।

–এই উঠো না,আমার খুব খারাপ লাগছে।তানহা’র ডাক শুনে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো ইফাদ।দু-চোখ ডলে,রুমের আলো জ্বালিয়ে দিল।তানহা’র পাশে বসে নরম কণ্ঠে বলল।

–কি হয়েছে তোমার?খুব বেশি খারাপ লাগছে?ডক্টর ডাকতে হবে।

–ডক্টর তোমার শশুর হয়।এই রাত দু’টোর সময় তোমার জন্য বসে থাকবে।

–হসপিটালে গেলে,ডক্টরের অভাব আছে।তানহা কোনো কিছু না বলে,উঠে চলে যেতে লাগলে,ইফাদ তানহা’র হাত ধরে বলল।কোথায় যাচ্ছে’?তানহা কোনো উওর দিল না।এক হাতে মুখ চেপে ধরে আছে।এক হাত দিয়ে ইফাদে’র হাত ছাড়িয়ে,নেওয়া’র চেষ্টা করছে।ইফাদ কিছু বলতে যাবে।তার আগেই তানহা হলহল করে বমি করে দিল।ইফাদে’র পা-সহ পুরো বিছানা মাখিয়ে ফেলেছ।তানহা অসহায় দৃষ্টিতে ইফাদে’র দিকে তাকালো।ইফাদ তানহা’র কপালে হাত দিয়ে দেখলো।শরীরের তাপমাত্রা একদম ঠিকই আছে।তাহলে মেয়েটা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে কেনো?ইফাদ তানহা’র মাথায় হাত রেখে বলল।

–কিছু হয় নাই পাখি।যাও তুমি চেঞ্জ করে আসো।আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।

–ছিঃ তোমাকে এসব করতে হবে না।আমি করে দিচ্ছি।তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।

–ইফাদ রেগে গেলে,কি জানো তো’।কথা কম বলো।আর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।তানহা আর কথা বাড়ালো না।এমনিতে-ই শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে।একটা শাড়ি নিয়ে,ফ্রেশ হতে চলে গেল।

ইফাদ বিছানার চাদর তুলে,রুমের এক কোণে রেখে দিল।আলমারি থেকে নতুন একটা চাদর বের করে,
বিছানায় মেলে দিল।নিজে-ও ফ্রেশ হতে চলে গেল।তানহা রুমে এসে ইফাদ’কে দেখতে পেল না।কোনো কথা না বলে,বিছানায় উঠে শুইয়ে পড়লো।একটু পরে ইফাদ এসে তানহা’র পাশে শুইয়ে পড়লো।

–তোমার শরীর’টা এমনিতে-ই খারাপ।এই অসুস্থ শরীর নিয়ে,তুমি আমার জন্য কতটা কষ্ট করলে,আমার খুব খারাপ লাগছে।বলল তানহা।

–আমার খেয়াল রাখতে রাখতে,নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েছো?সে,দিকে কি তোমার খেয়াল আছে।কাল’কে সকালে আমরা ডক্টরের কাছে যাচ্ছি।আম্মু’কে বলে দিয়েছি।একটা কাজের লোকের ব্যবস্থা করে দিতে,
আশা রাখছি।দু-এক দিনের মধ্যে পেয়ে যাবে।বলল ইফাদ।

–আমি কোথাও যাচ্ছি না।ডক্টরের কাছে গেলে বলবে,
এই টেস্ট করো।ঐ’ টেস্ট করো।খালি টাকার খেলা।আমার টাকা এত বেশি হয় নাই।ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাব।ইফাদ তানহা’কে টেনে নিজের বুকের মধ্যে আগলে নিল।তানহা’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।

–ঘুমাও।তানহা আর কোনো কথা বলল না।সে-ও ইফাদ’কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল।

পরের দিন সকাল বেলা,ইফাদের আগে ঘুম ভাঙলো।উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমের বাহিরে আসলো।আজকে রোকেয়া বেগম,রান্না করেছেন।সেজন্য ইফাদ তানহা’কে বিরক্ত করল না।মেয়েটা অনেক দিন,ভালো করে ঘুমোতে পারে নাই।রুমে এসে,কাল রাতের কাপড় আর বিছানার চাদর নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।সেগুলো ধুইয়ে ছাদে মেলে দিয়ে আসলো।ইফাদ’কে দেখে রোকেয়া বেগম ক্রোধিত কণ্ঠে বলল।

–আমাকে বা চৈতালি’কে বললে-ই পারতি।এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কাপড় ধুইতে গেলি কেনো?ডক্টর তোকে ছয় মাস বেড রেস্ট থাকতে বলেছে।এক মাস-ও হয় নাই।আর তুই যা ইচ্ছে খুশি করছিস।আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে,তুই বাঁচবি।এই শরীরটা’কে আর কত কষ্ট দিবি।

–আম্মু আমি তোমাদের ছেলে বুঝছো?এত অল্প আঘাতে আমার কিছু হবে না।আল্লাহ তায়ালা আমাকে আঘাত সহ্য করার অসীম ক্ষমতা দিয়েছে।সেজন্য এতকিছুর পরে-ও বেঁচে আছি।আলহামদুলিল্লাহ।

–হয়েছে আর বড় বড় কথা বলতে হবে না।আচ্ছা ওরা যে,মেয়েটা’র বাড়িটা নিয়ে নিল।এটা নিয়ে কিছু বলবি না।ওদের কি কোনো শাস্তি হবে না।

–আম্মু আমি ভেবেছি,আমি ওদের সবার নামে মামলা করবো।এর জন্য আমার যতদুর যাওয়া লাগে,আমি যাব।

–দেখিস বাবা।বেশি কিছু করতে যাস না।নিজের ক্ষতি হয়।এমন কোনো কাজ করবি না।

–তুমি চিন্তা করো না আম্মু।আমি তানহা’কে ডেকে নিয়ে আসি।ওর শরীর’টা প্রচন্ড খারাপ যাচ্ছে,আজকে ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব।

–আমি একটু পাশের বাসা থেকে ঘুরে আসি।বলেই রোকেয়া বেগম চলে গেল।

ইফাদ এসে তানহা’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাকতে শুরু করল।

–বউজান উঠেন,সূর্য মামা উঠে পড়লো।এখনো আপনি উঠতে পারলেন না।আমি খাবার নিয়ে আসতে যাচ্ছি।এসে দেখি তুমি উঠে পড়েছো।বলেই ইফাদ চলে গেল।তানহা উঠে ঘড়ির দিকে তাকালো।দশটা বেজে গেছে।তানহা চোখ বড় বড় করে,ঘড়ির দিকে তাকালো।দ্রুত উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো।ইফাদ খাবার নিয়ে বসে আছে।এক লোকমা ভাত মেখে তানহা’র মুখের সামনে ধরলো।তানহ এক লোকমা ভাত মুখে নিয়ে বলল।

–আমি বুঝতে পারছি না।অসুস্থ তুমি না আমি।যেখানে আমার তোমাকে সেবা করার দরকার,সেখানে তুমি আমার সেবা করছো।

–তুমি আমাকে সেবা করে সুস্থ করে তুলেছো।এখন আমি তোমাকে সেবা করে,সুস্থ করে তুলবো।খাবার সময় এত কথা বলতে হবে না।চুপচাপ খেয়ে নাও।খাওয়া শেষ হলে,আমরা ডক্টরের কাছে যাব।তারপরে দু’জন মিলে ঘুরতে যাব।

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।সুস্থ থাকতে কখনো কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাও নাই।অসুস্থ অবস্থায় ঘুরতে গিয়ে,আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি।

–সমস্যা নেই।তুমি আর আমি অসুস্থ হয়ে পাশাপাশি শুইয়ে থাকবো।হাউ রোমান্টিক।তানহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।ইফাদ তানহা’র তাকানো দেখে,হেসে দিল।ইফাদে’র হাসি দেখে,তানহা-ও হেসে দিল।

তানহা আর ইফাদ গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে।সময়ে’র সাথে রোদের প্রখরতা বেড়েই চলেছে।দু’জনেই ঘেমে অস্থির হয়ে গেছে।অবশেষে একটা গাড়ির দেখা মিলল।গাড়িতে উঠে,যথা সময়ে হসপিটালে এসে, পৌঁছালো।টেস্ট করিয়ে,দু’জন ঘুরতে চলে গেল।টেস্টের রিপোর্ট গুলো,ইফাদ বাসায় দিয়ে আসতে বলেছে।রিপোর্ট দিতে দেরি হবে।তাই ইফাদ গরমের মধ্যে অপেক্ষা করতে পারলো না।

পার্কের মধ্যে দিয়ে,হাতে হাত রেখে হাঁটছে তানহা আর ইফাদ।চারদিকে মানুষের কোলাহল।সবাই তার পরিবার,প্রিয়জনদের নিয়ে ঘরছে।কেউ কেউ ছবি তুলছে।তানহা আর ইফাদ-ও কিছু ছবি তুলল।শরীর খারাপ থাকায় বেশি ঘুরলো না।বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে আসলো।রাস্তায় এসে ফাইয়াজে’র সাথে দেখা।ফাইয়াজ ইফাদ’কে খেয়াল করে নাই।তাসফিয়া’র সাথে দোকানে দোকানে ঘুরছে।ইফাদ ফাইয়াজ’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–আরে ফাইয়াজ যে,কেমন আছো তুমি?শুনলাম আমাকে খুঁজে বের করার জন্য,তানহা আর চৈতালি’কে অনেক সাহায্য করছো?তোমার কাছে ঋণী হয়ে গেলাম।আমার কাছে তোমার কিছু চাওয়া’র থাকলে,
বলবে আমি পূর্ণ করে দেওয়া’র চেষ্টা করবো।

ইফাদে’র কথা শেষ হবার আগেই,ফাইয়াজ কোনো ভনিতা না করে বলল।

–আমার চৈতালি’কে চাই।চৈতালি’কে আমার কাছে দিয়ে দাও না।খুব যত্ন সহকারে রাখবো।কখনো কষ্ট পেতে দিব না।সর্বদা ভালো রাখার চেষ্টা করবো।

ফাইয়াজে’র কথা শুনে,ইফাদে’র মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসলো।দীর্ঘ সময় চুপ থেকে বলল।

–আজকে যে,কথা বলেছো?দ্বিতীয় দিন যেনো আর না শুনি।একবার ভাইয়া’কে হারিয়েছি।নতুন করে আর বোন’কে হারানো’র ইচ্ছে নেই।অন্য কিছু চাওয়া’র থাকলে বলবে,আজকে আসছি।আবার পরে কথা হবে।বলেই চলে গেল।ফাইয়াজ মুখটা মলিন করে,বোনের দিকে এগোতে লাগলো।

রোকেয়া বেগম,তানহা আর ইফাদ বাসায় একসাথে কথা বলতে বসেছে।চৈতালি বাসায় নেই।অফিসে গিয়েছে।নিরবতা ভেঙে ইফাদ বলল।

–আম্মু আমি চৈতালি’র বিয়ে দিতে চাই।এখন তোমার মতামত চাই।বলল ইফাদ।

–আলহামদুলিল্লাহ।আমি তোকে আগেই বলেছিলাম।চৈতালি’কে বিয়ে দিতে,তুই আমার কথা শুনিস নাই।মেয়ের বয়স হয়েছে।এখন বিয়ে দিয়ে দেওয়ায় উত্তম।মরে গিয়ে-ও শান্তিতে থাকতে পারবো।মেয়েটার আমার একটা কুল হবে,মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে মরলে,ভেতরে একটা অশান্তি নিয়ে মরে যাব।আমি না থাকলে আমার মেয়ের কি হবে?

–আম্মু এসব কি কথা বলছো?একটা ভালো কথা বলতে বসেছি।আর তুমি আজে-বাজে কথা বলছো?তোমার আগে আমি’ও মারা যেতে পারি?

–এখানে আলোচনা করতে বসেছো?নাকি কে আগে মারা যাবে।সে-সব নিয়ে তর্ক করতে বসেছো।বলল তানহা।

–আমার হাতে কয়টা ছেলে আছে।ইফাদ চাইলে তুই যাচাই বাছাই করতে পারিস।খোঁজ খবর নিয়ে দেখা শুরু কর।বলল রোকেয়া বেগম।

–আম্মা চৈতালি’র মতামত নেওয়া আবশ্যক।আর যাই হোক কেনো,জোর করে কখনো সংসার করা যায় না।বলল তানহা।

–চৈতালি’র কোনো মতামত নেই।আমরা যা’ বলবো।চৈতালি তাই মেনে নিবে।বলল ইফাদ।

–আমার মনে হয় তুমি ভয় পাচ্ছো।চৈতালি যদি আবার এক ভুল দ্বিতীয় বার করে বসে।আমার চৈতালি’র ওপরে বিশ্বাস আছে।চৈতালি এক ভুল বারবার করবে না।বলল তানহা।

–তুমি বুঝতে পারছো না তানহা।মানুষের মন আল্লাহ তায়ালা কখন কোন দিকে ঘুরিয়ে দিবে।তুমি নিজে-ও বুঝতে পারবে না।আল্লাহ তায়া’লা চাইলে সবকিছু পারেন।চৈতালি যদি ফাইয়াজে’র ওপরে দুর্বল হয়ে পড়ে,তাহলে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবে না।আমি জানি ফাইয়াজ খুব ভালো ছেলে।কিন্তু ফাইয়াজে’র বাবা মোটে-ও ভালো মানুষ না।ওদের সম্পর্ক কখনো মেনে নিবে না।পরে ইয়াদ ভাইয়া’র মতো চৈতালি’কে-ও হারাতে হবে।তা’ আমি এটা একদম-ই চাই না।যত দ্রুত পারি চৈতালি’র বিয়ে দিয়ে দিব।বলল ইফাদ।

–বিয়ে দাও।তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।এভাবে নিজের মতামত চৈতালি’র ওপরে চাপিয়ে দিও না।চৈতালি’র থেকে মতামত নিও।ও কি চায় এটা জেনে নিও।তাহলেই হবে।বলল তানহা।

–ইফাদ তানহা একদম ঠিক কথা বলেছে।তুই আজকে চৈতালি’র সাথে কথা বলবি।বলল রোকেয়া বেগম।

–আচ্ছা চৈতালি আসলে,চৈতালি’র থেকে মতামত নেওয়া হবে।বলল ইফাদ।কথা শেষ হলে,যে যার রুমে চলে গেল।সন্ধ্যায় চৈতালি বাসায় আসলো।দেখে মনে হচ্ছে মনটা খুব ভালো।ফ্রেশ হয়ে এসে,সবার সাথে বসলো।সবাই কেমন চুপচাপ হয়ে আছে।চৈতালি আড়চোখে সবাই’কে পরখ করে নিল।চা হাতে নিতে নিতে বলল।

–তোমরা সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

–ভাইয়ের ওপরে তোর বিশ্বাস-ভরসা আছে চৈতালি?

–আমার ভাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাই।আমি আমার ভাইয়া’কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি।

–তোর কাউকে পছন্দ আছে।বা তুই কাউকে পছন্দ করিস।কারো প্রতি তোর কোনো দুর্বলতা আছে।

চৈতালি ভাইয়ের কথা মাথা নিচু করে ফেলল।নিম্ন স্বরে বলল না।

–আমরা ঠিক করেছি।তোর বিয়ে দিব।এখন তুই বল।তুই আমাদের পছন্দ মতো বিয়ে করবি।নাকি তোর পছন্দ মতো।তুই যেটা বলবি।সেটাই হবে।তুই কষ্ট পাবি।আমরা এমন কোনো কাজ করবো না।বলল ইফাদ।

–আমি তোমাকে কালকে বলি ভাইয়া।আজকে আমার ভালো লাগছে না।বলেই উঠে চলে গেল চৈতালি।চৈতালি’র যাওয়া’র তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইফাদ।ইফাদ তানহা’র দিকে তাকিয়ে বলল।

–বয়স আমার এমনি এমনি হয় নাই।দেখেছো চৈতালি ফাইয়াজে’র প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।যেটা কোনোদিন সম্ভব না।সেটা বলে-ও লাভ হবে না।আমি চৈতালি’কে কিছুতে-ই চৌধুরী বাড়িতে বিয়ে দিব না।আমার বোনটা’কে ওরা মেরে ফেলবে।

–আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না।তুমি কষ্ট পাবে,এমন কোনো কাজ চৈতালি কখনো করবে না।ইফাদ কিছু বলল না।উঠে নিজের রুমে চলে গেল।চৈতালি নিজের রুমে এসে,ফোনটা হাতে নিল।বিয়ের কথা উঠতে-ই সর্ব প্রথম ফাইয়াজে’র কথা মনে হলো চৈতালি’র।মনের মধ্যে খুব করে কষ্ট অনুভব করছে।চৈতালির পরিবার চৈতালি’র কাছে বড্ড আদরের,চাইলে-ও কষ্ট দিতে পারবে না।একবার যে,কষ্ট দিয়েছে।দ্বিতীয়বার সে,কষ্ট দিতে চায় না চৈতালি।রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।ভাইয়ে’র রুমে এসে বলল।

–ভাইয়া আমি রাজি।তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারো।আমি জানি তোমরা কখনো আমার খারাপ চাইবে না।যেটা করবে আমার ভালো জন্য-ই করবে।বলেই চলে গেল।কথা গুলো বলার সময় চৈতালি’র গলা ধরে আসছিল।চোখের পানি গুলো বৃষ্টি হয়ে,ঝরে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে।নিজের রুমে এসে,দরজা লাগিয়ে দিল।বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করতে লাগলো।এত কষ্ট কেনো হচ্ছে,চৈতালি নিজে-ও জানে না।হয়তো পরিবার’কে ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট,নয়তো অজানা কোনো কষ্ট।

পরের দিন সকাল বেলা চৈতালি অফিসে চলে গিয়েছে।রোকেয়া বেগম ১৭ বছর বয়সের একটা মেয়ে’কে নিয়ে আসলো।তানহা’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–তানহা মা ওর নাম মিনু।বাবা-মা কেউ নেই।নানির সাথে থাকে।আজ থেকে,মিনু তোমাকে কাজে সাহায্য করবে।মিনু দেখতে খুব মিষ্টি।তানহা মিনু’কে কাছে ডেকে ভালো মন্দ প্রশ্ন করতে লাগলো।রোকেয়া বেগম মিনু’কে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে,কাজ বুঝিয়ে দিতে লাগলো।তানহা খাবার আর ঔষধ নিয়ে নিজের রুমে আসলো।আজকে ইফাদ ঘুম থেকে উঠে নাই।তাই তানহা খাবার নিয়ে রুমে আসলো।ইফাদ’কে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিয়ে,বিছানা গুছিয়ে দিল।তানহা বিছানায় বসে,ইফাদে’র জন্য অপেক্ষা করছে।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।ইফাদ ফ্রেশ হয়ে আসছিল।তানহা’কে উঠতে দেখে বলল।

–তুমি বসো।আমি দেখছি।বলেই চলে গেল।দরজা খুলে দেখলো,তানহার রিপোর্ট গুলো চলে এসেছে।

–রিপোর্ট গুলো কালকে দেওয়ার কথা ছিল।দিতে এত দেরি করলেন কেনো?

–আসলে স্যার একটু সমস্যা কারনে দেরি হলো।ইফাদ কোনো না বলে,রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে ভেতরে আসলো।বিছানায় বসে একটা একটা করে রিপোর্ট খুলে দেখেছে।তানহা উসখুস করছে,রিপোর্ট কি আছে।তা জানার জন্য,কিন্তু ইফাদ গম্ভীর মুখ করে রেখেছে।তা দেখে তানহার অস্থিরতা দিগুণ বেড়ে গিয়েছে।রিপোর্ট গুলো দেখে শান্ত চোখে তানহা’র দিকে তাকালো।ইফাদে’র দৃষ্টি এতটাই শান্ত ছিল।ভয়ে,
তানহা’র কলিজা ছুঁইয়ে গিয়েছে।

চলবে…..#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৪৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

পুরো রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা কাজ করছে।কারো মুখে নেই কোনো কথা।হঠাৎ করেই ইফাদ কোনো কিছু না বলে,উঠে চলে গেল।বাহিরে গিয়ে কিছু একটা দেখে আসলো।রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিল।ধীর পায়ে তানহা’র কাছে এগিয়ে আসলো।তানহা ইফাদে’র দিকে-ই তাকিয়ে আছে।তানহা এবার মুখ খুলে,বলেই ফেলল।

–কি হয়েছে,এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?রিপোর্টে কি এসেছে,আমাকে বলছো না কেনো?তানহা’র কথা শেষ হবার আগেই’ ইফাদ তানহা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তানহা’র মুখশ্রীতে অজস্র বার,অধর ছুঁইয়ে দিচ্ছে,তানহা সবকিছু চুপচাপ উপলব্ধি করছে। আদরে,
আদরে ভরিয়ে তুলেছে তানহা’কে,স্বামীর এমন পাগলামি’তে এতটুকু-ও বিরক্ত হচ্ছে না তানহা।এই মানুষটা-ই তার ভালো থাকার কারন।তার মানসিক শান্তির কারন।মানুষটা’র কোনো কিছুই বিরক্ত লাগে না তানহা’র।মানুষটা’র মুখের দিকে তাকালে,অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করে তানহা,যে শান্তি পৃথিবীর কোথাও নেই।তানহা এবার ইফাদে’র দু’গালে হাত রেখে করে বলল।

–কি হয়েছে আমাকে বলবে না।আমার খুব চিন্তা হচ্ছে,ভেতরে খুব অস্থিরতা কাজ করছে।

–তুমি জানো তানহা তুমি আমাকে কত বড় উপহার দিয়েছো?পৃথিবীর সমস্ত সুখ তুমি আমাকে এনে দিয়েছো।

তানহা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ইফাদে’র দিকে তাকিয়ে আছে।তানহা’র দৃষ্টি বুঝতে পেরে,ইফাদ তানহা’র একা তানহা’র পেটে চেপে ধরলো।তারপরে কানের কাছে গিয়ে বলল।

–আপনি আম্মু আর আমি আব্বু হতে,চলেছি বউজান”।ইফাদে’র শুনে কিছু সময়ে’র জন্য থমকে যায় তানহা’।আল্লাহ তায়া’লার কাছে নামাজ পড়ে,একটা বাচ্চা কত করে চাইতো।আল্লাহ তায়া’লা তার চাওয়া পূর্ণ করে, দিয়েছে।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল।খুশিতে দু-চোখ ভরে এলো।এক বাচ্চার জন্য ভেতরে ভেতরে কম কষ্ট পায় নাই তানহা।ইফাদ’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।মনের মধ্যে চেপে রাখা কষ্ট গুলো,আজকে হালকা হবে।ইফাদ-ও বুঝতে পারতো।তানহা একটা বাচ্চার জন্য কতটা কষ্ট পেত।কিন্তু তার কিছু করার ছিল না।ইফাদ তানহা’কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,দু-চোখের অশ্রুকণা গুলো মুছিয়ে দিয়ে বলল।

–এভাবে কেউ কান্না করে।এতদিন একটা বাচ্চার জন্য কতটা কষ্ট পেয়েছো।আল্লাহ তায়া’লা তোমার মনে আশা পূর্ণ করে দিয়েছে।তার কাছে শুকরিয়া আদায় করো।আর কান্না করতে হবে না।আজকের পর থেকে আর কখনো কান্না করতে না দেখি।

তানহা ইফাদে’র কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল।এখনো কান্না করছে।ইফাদ তানহা’র মুখ তুলে কপালে অধর ছুঁইয়ে দিল।দু’হাতে নিজের বুকে আগলে নিল।

–আজ থেকে একটা কাজ-ও তুমি করবে না।দরকার পড়লে তোমার সব কাজ আমি করে দিব।নিজের একদম অযত্ন নেওয়া চলবে না।মা’কে তো আগেই বলা হয়েছে।কাজের লোক ঠিক করতে,আম্মু নিশ্চয়ই খুঁজে বের করেছে।তোমার যা যা খেতে ইচ্ছে করবে।আমাকে বলবে,আমি সবকিছু এনে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

তানহা মুগ্ধ হয়ে ইফাদে’র দিকে তাকিয়ে আছে।কান্না থামিয়ে ইফাদে’র হাসি-খুশি মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে।মানুষটা’কে দেখে মনে হচ্ছে,পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ইফাদ।তানহা’র চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুকণা গুলো শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে।ইফাদে’র পাগলালি দেখে তানহা হেসে দিল।তানহা’কে হাসতে দেখে ইফাদ বলল।

–আমাকে দেখে তোমার পাগল মনে হয়।তানহা আমি সিরিয়াস।

–তুমি তো পাগল-ই।তোমাকে পাবনা রেখে আসবো।বলেই দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলল।তানহা’কে মুখ ঢাকতে দেখে,ইফাদ বলল।

–তুমি এভাবে মুখ আড়াল করছো কেনো?

–এই যে,আমি তোমাকে পাগল বললাম।এখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।আমার শরম করবে না, বুঝি।তানহা’র কথা শুনে,ইফাদ শব্দ করে হেসে ফেলল।ইফাদ’কে হাসতে দেখে তানহা বলল।

–তাহলে চলো বাহিরে যাই।আম্মাকে তুমি বলবে,আমি কিন্তু কিছু বলতে পারবো না।আমার লজ্জা লাগে।দুপুরের রান্না করতে হবে আবার।

তানহা’র শেষের কথা শুনে,ইফাদ রেগে গেল।মুখটা গম্ভীর করে বলল।

–কোনো রান্না করবে না।যতদিন না বাচ্চা হচ্ছে,ততদিন
তোমাকে যেনো রান্না ঘরে না দেখি?

–আজব রান্নার সাথে বাচ্চা হবার সাথ কি?এমন ভাব করছো?যেনো এই প্রথম তোমার বউয়ের বাচ্চা হবে।আর কোনোদিন কারো বউয়ের বাচ্চার হয় নাই।

–দেখো অন্যদের সাথে একদম আমার তুলনা দিবে না।এটা আমি একদম পছন্দ করি না।আম্মুর কাছে যাব চলো।বলেই বাহিরে আসলো।রোকেয়া বেগম ইফাদ’কে দেখে বলল।

–আজকে বিকেলে চৈতালি’কে দেখতে আসবে।

–আম্মু তাড়াতাড়ি টাকা-পয়সা জোগাড় করো।আমার মেয়েকে,কিন্তু সোনার গহনা দিয়ে মুখ দেখতে হবে।বলে দিলাম।

ছেলের কথা শুনে,রোকেয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকালো।ইফাদ মায়ের কাছে গিয়ে বসে,মায়ের গলা ধরে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল।

–তুমি দাদি হতে যাচ্ছো আম্মু।নিজেকে তৈরি করো।ঔষধ খেয়ে সুস্থ হয়ে যাও।ক’দিন পরে তোমাকে আমার মেয়ের পেছনে ছুটতে হবে।ইফাদে’র কথা বুঝতে পেরে রোকেয়া বেগম বলল।

–আলহামদুলিল্লাহ।সত্যি আমাদের বাসায় নতুন সদস্য আসতে চলেছে।তানহা মা আমার কাছে আসো।তানহা লাজুক মুখ করে।শাশুড়ীর কাছে বসলো।রোকেয়া বেগম তানহা’কে বুকে আগলে নিয়ে,অনেক দোয়া করে দিল।

–আম্মু আজ থেকে একটা কাজ-ও তানহা’কে দিয়ে করাবে না।সব কাজ মিনু করবে।বলল ইফাদ।

–তুই কি করে মিনুকে চিনলি।বলল রোকেয়া বেগম।

–তুমি মিনুকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলে,আমি আসতে আসতে শুনেছি।বলল ইফাদ।

–দেখেন আম্মা আপনার ছেলে কি শুরু করেছে।আমদের এলাকার বউরা পেটে বাচ্চা নিয়ে কত কাজ করে।রান্না থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ করে।কলসি করে পানি বইয়ে নিয়ে যেতে-ও দেখেছি।আমি নাকি।আজ থেকে কোনো কাজ করতে পারবো না।আপনি বলেন,এটা কোনো কথা।বলল তানহা।

–ইফাদ ঠিকি বলেছে।এমনিতেই তোমার শরীর খারাপ।তুমি সারাবছর কাজ করো।তোমার সংসার হারিয়ে যাচ্ছে না।তোমার সংসার তোমারই থাকবে।একটা বছর কাজ না করলে কিছু হবে না।বাচ্চার কথা চিন্তা করে হলে-ও,তোমাকে সব সময় চাপ মুক্ত থাকতে হবে।বলল রোকেয়া বেগম।

–আম্মা আপনি-ও শুরু করে দিয়েছেন।বলল তানহা।

–আমার ইফাদ একদম বাবার মতো হয়েছে জানো।আমার ইফাদের বাবা-ও এমন ছিল।আমি অসুস্থ থাকলে আমার খুব খেয়াল রাখতো।আমার তিনটা ছেলে-মেয়ে।ওরা যখন পেটে ছিল।আমাকে একটা কাজ করতে দেয় নাই।সব কাজে নিজে করেছে।আমার জন্য দু’টো কাজের লোক রেখেছিল।আমার ছেলে তা-ও একটা রেখেছে।বলল রোকেয়া বেগম।

তানহা আহত দৃষ্টিতে ইফাদ আর রোকেয়া বেগমে’র দিকে তাকালো।তানহা’র আহত দৃষ্টি দেখে দু’জনেই হেসে দিল।

–অনেক হাসাহাসি হলো,বিকেলে চৈতালি’কে দেখতে আসবে,সবকিছুর আয়োজন তো’ করতে হবে।বলল রোকেয়া বেগম।

–সমস্যা নেই।আমি আপনাকে সাহায্য করছি আম্মা।বলল তানহা।

–পাগল নাকি,তোমাকে একটা কাজ-ও করতে দিব না।আমি আম্মুকে সাহায্য করবো।বলল ইফাদ।

–কাউকে সাহায্য করতে হবে না।আমি আর মিনু মিলে করে নিব।বলল রোকেয়া বেগম।

–আমার আম্মুকে একা কাজ করতে দিব না।তানহা বসে থাকবে।আমরা তিনজন কাজ করবো।বলল ইফাদ।

–কিন্তু তোরা দু’জনেই অসুস্থ।আমি এভাবে তোদের দিয়ে,কাজ করাতে পারি না।বলল রোকেয়া বেগম।

–আম্মু আমি একদম সুস্থ আছি।বলল ইফাদ।বলেই রান্না ঘরের দিকে গেল সবাই।চৈতালি’কে ফোন করে,
আজকে আগে আসতে বলা হয়েছে।

চৈতালি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাইয়াজে’র রুমের দিকে হাঁটা শুরু করল।দরজার সামনে এসে,
ফাইয়াজে’র থেকে অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল।ফাইয়াজ মনযোগ দিয়ে কাজ করছিল।চৈতালি’কে দেখে দৃষ্টি চৈতালি’র দিকে দিল।গম্ভীর মুখে বলল।

–কিছু বলবে?

–স্যার আজকে আমার আগে ছুটি লাগবে।

–হঠাৎ আগে ছুটি নেওয়া’র কারন কি?

–স্যার আমার বিয়ে,আজকে ছেলের বাসা থেকে,
আমাকে দেখতে আসবে।কথা গুলো মাথা নিচু করে বলল চৈতালি।চৈতালি’র কথা শুনে,ফাইয়াজে’র বুকের ভেতরটা’য় মোচড় দিয়ে উঠল।বুকের বা পাশে,চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল।নিজকে স্বাভাবিক রেখেই বলল।

–কংগ্রাচুলেশনস।সমস্যা নেই।তুমি চাইলে আগে যেতে পারো।তোমাকে এখনই ছুটি দিয়ে দিলাম।বাসায় গিয়ে পরিপাটি হয়ে নাও।বিয়ে তো’ মানুষের একবার-ই হয় তাই না।বিয়েটা যদি মনের মতো করে না হয়।তাহলে সারাজীবন অক্ষেপ থেকে যাবে।কোনো আক্ষেপ রাখবে না।আমাকে নিজের বন্ধু মনে করতে পারো।বিয়ের ক’টাদিন যত ছুটি লাগে,আমাকে বলে,আমি তোমাকে ছুটি দিব।সবকিছু যেনো তোমার মনের মতো হয়।

–স্যার আপনার গলা কাঁপছে?বলল চৈতালি।

–তোমার ছুটি লাগবে।ছুটি চেয়েছো।ছুটি দিয়ে দিয়েছি।এবার তুমি আসতে পারো।আমার অনেক কাজ আছে।বলেই ল্যাপটপে মনোযোগ দিল।চৈতালি আর কথা বাড়ালো না।ফাইয়াজে’র রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।ফাইয়াজে’র চোখ দু’টো নিমিষেই লাল হয়ে উঠেছে।নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে,আর থাকতে পারলো না।উঠে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিল।আপন মনে,গাড়ি চালাচ্ছে ফাইয়াজ।মনে মনে ভাবলো।

–ভালোবাসলে-ই কি তাকে পেতে হবে।কিছু প্রিয় জিনিস হোক না অন্য কারো।তুমি ভালো থেকো চৈতালি।আমি না হয়,দীর্ঘশ্বাস আর নির্ঘুম রাত নিয়ে,আমার বাকি জীবন টা পার করে দিব।

বাসায় এসে মায়ের কাছে গেল ফাইয়াজ।মায়ের কোলে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো করে কান্না করে দিল।রাহেলা চৌধুরী ধরেই নিলেন,ছেলের আজকে-ও বোনের কথা মনে হয়েছে।তিনি আদৌও কি জানতে পারবেন।তার ছেলের আঘাতটা অন্য কোথাও গিয়ে লেগেছে।না পাওয়ার যন্ত্রণা তার ছেলেকে,জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।রাহেলা চৌধুরী ছেলের মাথায় স্নেহর হাত রাখলেন।বেশ কিছুক্ষণ পরে,রাহেলা চৌধুরী টের পেলে,তার ছেলে ঘুমিয়ে গিয়েছে।হঠাৎ করে রাহেলা চৌধুরী বুক কেঁপে উঠল।তার ছেলে কি অন্য কিছু নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে।এই কয়দিনে ছেলের দিকে একবারো ভালো করে নজর দেওয়া হয় নাই।ছেলের এমন বিধ্বস্ত চেহারা হলো কি করে।দেখে মনে হচ্ছে,
ছেলেটার কত রাত ঘুম হয় নাই।মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে ফাইয়াজ।পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ স্থান মায়ের কোল।যা’ ফাইয়াজে’র ঘুম বলে দিচ্ছে।রাহেলা চৌধুরী একটা বালিশ টেনে ছেলেকে শুইয়ে দিয়ে বাহিরে চলে গেল।ঠিক সেই সময় ফাইয়াজে’র বাবা বাসায় আসলো।রাহেলা চৌধুরীর কড়া আদেশ।তার ছেলে তাদের রুমে আছে।সেখানে গিয়ে ছেলে’কে যেনো বিরক্ত করা না হয়।ফাইয়াজে’র বাবা কোনো উওর না দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।ফাইয়াজ’কে নিজের রুমে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে,দু-চোখ ভরে এলো।ছোট্ট ফাইয়াজ’টা কত বড় হয়েছে।বাবার ওপরে তার কি রাগ।কতগুলো বছর হয়ে গেল।তার মুখ থেকে বাবা ডাক শোনা হয় না।ফাইয়াজে’র কাছে এসে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।কতদিন পরে ছেলেকে এভাবে কাছে থেকে দেখলো।জেগে থাকলে,নিশ্চয়ই তাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে চলে যেত।ফাইয়াজে’র বাবা উঠে বাহিরে চলে আসলো।যে,করেই হোক স্রুতির সাথে ফাইয়াজে’র বিয়েটা দিতে হবে।

ফাইয়াজে’র মা ছেলের রুমে এসে,বাকরূদ্ধ হয়ে গেল।ছেলেটা আমার ভেতরে ভেতরে এতটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।আর আমি মা হয়ে টের পেলাম।ছেলেটা আমার মেয়েটা’কে কতটা ভালোবাসে,তাকে নিয়ে কত-শত স্বপ্ন বুনেছে।আমি থাকতে তোকে কষ্ট পেতে দিব না বাবা।চৈতালির সাথে তোকে বিয়ে দেওয়ার জন্য,আমার যতটা ছোট হওয়া লাগে,আমি হব।আজকেই ইফাদে’র কাছে যাব।

পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে চৈতালি।ছেলে দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ।সবার পছন্দ হয়েছে।চৈতালি কেমন পাথরের ন্যায় হয়ে বসে আছে।চৈতালি’কে আর পাত্রকে এক সাথে কথা বলার জন্য ছাদে পাঠানো হলো।সবাই ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে।এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল।চৈতালি ছাদ থেকে ফাইয়াজে’র আম্মু’কে দেখতে পেল।ভেতরে খুব অস্থিরতা কাজ করছে।খুব করে জানতে ইচ্ছে করছে।ফাইয়াজে’র আম্মু এখানে কেনো এসেছে।লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।

ইফাদ দরজা খুলে ফাইয়াজে’র আম্মুকে দেখে চমকে উঠল।ফাইয়াজে’র আম্মু বলল।

–বেশি সময় নেব না।দু’টো কথা বলে চলে যাব।বাহিরে থেকে বলবো।নাকি ভেতরে আসতে বলবে।

–ছিঃ আন্টি আপনি এভাবে বলছেন কেনো?বলল ইফাদ।তারপরে ফাইয়াজে’র আম্মু’কে নিয়ে ইফাদ নিজের রুমে গেল।ইফাদে’র সাথে তানহা’ও আছে।

ফাইয়াজ ঘুম থেকে উঠে যখন জানতে পারলো।তার আম্মু চৈতালিদে’র বাসায় আসছে।ফাইয়াজে’র মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।ফ্রেশ না হয়েই ছুলে চলল ইফাদে’র বাসার উদ্দেশ্যে।

–আম্মু না জানি সবকিছু শেষ করে দেয়।চৈতালিদে’র নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার আছে।নিজের ছেলের জন্য এতটা স্বার্থপর হলো কি করে আম্মু।

নিরবতা ভেঙে রাহেলা চৌধুরী বলল।

–আমার ছেলেটা তোমার বোনকে অনেক ভালোবাসে,
তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে ফাইয়াজ।মা হয়ে ছেলের কষ্ট কিভাবে সহ্য করবো।প্লিজ বাবা তুমি আমার ছেলেটা’কে বাঁচাও।তোমার বোনকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না।আমার ছেলেটা খুব চাপা স্বভাবের,
খুব সহজে নিজের মনের কথা গুলো কাউকে বলতে পারে না।

–আন্টি আমি আপনাকে মায়ের মতো ভালোবাসি।আপনি সবকিছু জানেন,তারপরে এমন কথা কিভাবে বলতে পারলেন।

–আমি আমার ছেলের জন্য স্বার্থপর হয়ে গেছি।তোমার বোনকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে,রাজি হয়ে যাও।এর জন্য যা করা লাগে আমি করবো।তোমার পা’ ধরতে হলে,তাই ধরবো।তবু-ও আমার ছেলেকে,শেষ করে দিও না ইফাদ।

–আন্টি আজকে চৈতালি’কে দেখতে এসেছে।আশা রাখছি,কোনো সমস্যা তৈরি করবেন না।আপনি যেমন আপনার ছেলের,ভালো চান।ঠিক তেমনই আমি আমার বোনের ভালো চাই।

ঝড়ের গতিতে ফাইয়াজ রুমে প্রবেশ করল।অস্থির হয়ে বলল।

–আম্মু তুমি এখানে এসেছো কেনো?আসার আগে আমাকে বলে এসেছিলে,এখনই বাসায় যাবে।ইফাদ ভাইয়া তুমি কিছু মনে করো না।আম্মু কি বলতে কি বলে দিয়েছে।বলেই নিজের মায়ের হাত ধরে টেনে তুলল।

চলবে…..

(সবাই’কে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here