এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব -৩২

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
[২য় পরিচ্ছেদ]

৩২.
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। একটি পবিত্র সম্পর্কের নাম। যেথায় একজন নারী, পুরুষ একই সুঁতোয় আটকে পরে। উপরওয়ালার আদালতে এবং সমাজের আলাদতে এই নারী – পুরুষ অচেনা, অজানা থেকে হয়ে ওঠে স্বামী-স্ত্রী। কাউকে না জানিয়ে হোক কিংবা জানিয়ে হোক! বিয়ে তো বিয়েই।

হ্যাঁ, ইরা’দ তাঁর কথা রেখেছে। স্টেশন থেকে সোজা তাঁরা গেছিলো কাজী অফিস। নওরি এ বিষয়ে খুব আ!ত!ঙ্কিত ছিলো। কিন্তু ইরা’দ তাঁর ত্যাড়ামি এবং সিদ্ধান্ত থেকে কিছুতেই পিছু হাঁটবে না। নওরি আবার পালাবে না তাঁর গ্যারান্টি কী? একবার হারিয়েই তো ইরা’দ বিধ্বস্ত হয়ে গেছিলো। পরবর্তীতে হারানোর দুঃসাহস ইরা’দের নেই। এবার সে বিয়ে করে-ই ছাড়বে। সেও দেখবে তাঁর বন্ধন থেকে নওরি কীভাবে পালানোর সাহস পায়! একবার বিয়ে হয়ে গেলে একজন প্রিতম কেন, হাজার প্রিতমও তাঁর বউকে নিয়ে যেতে পারবে না। কখনোই না! তখন নওরি শুধু হবে ইরা’দের। নওরি এবং ইরা’দ দুজন দুজনাতে পরিপূর্ণ হবে। ভেতরকার ভালোবাসার দায়িত্ব নাহয় সে একাই নিবে। তাও না থাকুক কোনো হারানোর ভয়।

নওরি ইরা’দকে নানানভাবে বুঝিয়েছে, কিন্তু ইরা’দ কী বোঝার ছেলে? সে চোখ গরম করে নওরির দিকে তাকিয়ে বলে,
–“বহুত জ্বালিয়েছো! এখন আর অনুমতি দিবো না জ্বালানোর! বিয়েটা হোক, তখন নতুন করে জ্বালানো শুরু করিও। কোনো অভিযোগ করবো না।”

যখন দেখলো ইরা’দ নাছোড়বান্দা, তখন নওরির চোখ ফেটে অশ্রু বের হতে চাইলো। বড়োদের পারমিশন না নিয়ে বিয়ে করা কতটা যুক্তিযুক্ত? এছাড়া ইরা’দের মা-ও যে নওরিকে পছন্দ করে না। ইরা’দের মায়ের অসন্তোষ নিয়ে থাকবে কী করে সে? নওরি মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো,
–“পরিবারের অনুমতি ছাড়া কেন বিয়ে করছেন?”
–“যেখানে তোমার অনুমতি-ই নেইনি সেখানে ওদের অনুমতি দিয়ে কাজ কী? চিন্তা করো না, বিয়েটা গোপনে হচ্ছে। সময় হোক, আমি নিজে জানিয়ে দিবো!”
নওরি মাথা নিচু করে ফেললো। বিয়ে আটকানোর কোনো পন্থা-ই কী নেই?
—-
ঘন্টাখানেক পূর্বের কথা নওরির চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ইরা’দ পিছ থেকে আবার বলে ওঠে,
–“রাগ করেছো? কথা বলবে না? দেখো, আমি কিন্তু তোমার হাসবেন্ড। তো, আমার সাথে কথা না বলে যাবে কোথায় শুনি?”

নওরি আয়না থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচের দিকে মাথা নামালো। থুঁতনি গলায় গিয়ে ঠেকেছে। এই অদ্ভুত, অস্বস্তিকর অবস্থায় কী করণীয় তাঁর? ইরা’দ তো নতুন কেউ নয়, তাহলে এত বিব্রত, ইতঃস্ততা অনুভব হচ্ছে কেন? বিয়ে হয়েছে বলে? নওরির এ-রূপ দেখে ইরা’দ ফিক করে হেসে দিলো। হাসি বজায় রেখে বলে,
–“লাজুক রাণী আমার। বিয়ে করলে এমন লাজুক রাণীকে দেখবো জানলে প্রথমদিন-ই তোমায় বিয়ে করে ফেলতাম!”

নওরি চোখ বড়ো বড়ো করে ইরা’দের দিকে তাকালো। অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–“মানেহ?”
ইরা’দ পুণরায় প্রাণখোলা হাসি দিলো। তবে এবারের হাসির শব্দ খুব-ই ক্ষীণ। নওরি বো!কা চাহনিতে চেয়ে আছে ইরা’দের দিকে। আজ যেন ইরা’দের মধ্যে চাপা উৎসব চলছে। তাইতো কমভাষী মানুষটি আজ হাসছে। শুধুই হাসছে। মানুষটা বুঝি এতটা ভালোবাসে নওরিকে? হঠাৎ-ই বক্ষের বা-পাশে চিনচিন ব্যথা অনুভূত হলো। কী করে পেরেছে এই মানুষটাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করতে? নওরি মুহূর্তে-ই মাথা নিচু করে ফেললো। ইরা’দ আর কিছু বলার পূর্বেই নূরজাহানের ডাক পরলো।

খাবার টেবিলে ইরা’দ এবং নওরি মুখোমুখি বসেছে। ইরা’দ তো বারংবার এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। নূরজাহান বা সৈকত সাহেব সেভাবে এসব খেয়াল না করলেও সারিফা ঠিক-ই খেয়াল করেছে। নওরির পাশেই বসেছে সে। এসব দেখে সারিফা কখন থেকে মিটিমিটি হেসেই চলেছে। সারিফার হাসির চাপা শব্দ যতবার কানে প্রবেশ করছে ততবার তাঁর কান এবং গাল গরম হয়ে যাচ্ছে। ইরা’দের কান্ড গলায় কাঁটা হয়ে ঢুকেছে। এতটা লজ্জিত নওরি কখনো হয়নি।

ওদিকে বুয়া চোখ পাকিয়ে নওরিকে বারবার লক্ষ্য করছে। এই মেয়ে পালিয়েছে, এই খবর কতক্ষণ ভেতরে পুষে রাখা যায়? চার ঘরে এই খবর পাচার না করলে তো পেটের ভাত হজম হবে না। বরং পেটে যত ভাত আছে তা উপচে এসে ব!মির মতো বেরোবে।

–“কী হলো, কী দেখছো? খাও!”
ইরা’দের এরূপ কথায় নওরির ধ্যান ভাঙে। ঘনঘন পলক ফেলে খেতে মনোযোগী হলো। নূরজাহান হঠাৎ বলে ওঠে,
–“কী রে নওরি, রুটি এবং ভাঁজি ভালো হয়নি?”
নওরি অপ্রস্তুত হলো। অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–“না, না আন্টি। সব ঠিকাছে!”

কথা শেষ হতেই নওরি পায়ে স্পর্শ পেলো। যার ফলস্বরূপ নওরির খাবার গলায় আটকে গেলো। খুক খুক শব্দে কেশেও ওঠে। ইরা’দ পানি এগিয়ে দিতে দিতে ক্ষীণ স্বরে বলে ওঠে,
–“আন্টি কোনো ডাক হলো? চাচী ডাকবা। তোমার চাচা শ্বশুরের বাড়ি না! এখন কী আর অবিবাহিত আছো?”

————–
সবে নওরি তাঁর রুমে এসে শুয়েছে। তৎক্ষণাৎ সারিফা তাঁর ফোন নিয়ে হন্তদন্ত ভঙ্গিতে রুমে এসে হাজির হলো। নওরিকে জোর করে উঠিয়ে বলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
–“ভাইয়া, কথা বলো!”
নওরি ভ্রু কুচকালো। সারিফা পুণরায় বলে ওঠে,
–“আরে, ইরা’দ ভাই! দ্রুত, রেগে আছে!”

নওরি তড়িঘড়ি ফোনটা হাতে নিয়ে কানে দিলো। ঘন্টাখানেক আগেই তো হাসি-খুশি বের হলো, হঠাৎ কী এমন হলো যার কারণে এমন রাগ তাঁর? নওরি “হ্যালো” বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে ইরা’দের কর্কশ কন্ঠস্বর শুনতে পেলো!
–“ফোন কই তোমার? ফিরে তো এসেছোই তাহলে সুইচড অফ রাখার মানে কী?”
নওরি কিছুটা ভীত হলো ইরা’দের এরূপ ধমকে। মিইয়ে গিয়ে আশেপাশে চেয়ে মৃদু স্বরে বলে,
–“সিম পাল্টেছি!”

ওপাশ থেকে নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ এলো। দাঁতে দাঁত চেপে ইরা’দ বলে ওঠে,
–“নির্বোধ!”

পরমুহূর্তে আবারও এও বলে ওঠে,
–“এখুনি নতুন সিম দিয়ে কল করো। দুই মিনিট সময় দিলাম!”
নওরিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দেয় ইরা’দ। নওরি কান থেকে ফোন নামাতেই সারিফা মিটিমিটি হেসে বলে,
–“ক্যারি অন!”

বলেই সারিফা ফোন নিয়ে চলে গেলো। এদিকে নওরি একরাশ লাজ নিয়ে ফোন হাতে নিলো। ফোনের ডিভাইসে ইরা’দসহ বাকিদের নম্বর সেভ করা আছে। তাই সিম ঢুকানোর পরেও খুব একটা সমস্যা হলো না। নওরি কল দিতেই ইরা’দ সাথে সাথে রিসিভ করলো। যেন নওরির কলেরই অপেক্ষায় ছিলো। ইরা’দ কল রিসিভ করেই উচ্ছ্বাস ভঙ্গিতে বলে ওঠে,
–“তোমাকে ছোট পাথরের নথেই মানাবে তাই না?”

নওরি চমকালো।
–“আপনি তাহলে সত্যি কিনবেন?”
–“অবশ্যই! বউরূপে দেখার আকাঙ্খা যে মিটে না!”
নওরির গাল জোড়া গরম হয়ে গেলো। ইরা’দের কথাগুলোর উদ্দেশ্য-ই যেন নওরিকে লজ্জায় লাল করে দেওয়া৷ নওরির নিরবতাকে তোয়াক্কা না করে ইরা’দ পুণরায় বলে ওঠে,
–“রাতে বারান্দার দরজা খোলা রাখিও! আমি আসবো। বাসর রাতে কী একা থাকা যায় বলো? জীবনে প্রথমবার বিয়ে করেছি বলে কথা!”

—————–
–“কী রে লতিফা! তুই সত্যি কইতাছোস? উপরের ওই ঢংগী পলাইছে?”
মাজেদার সন্দিহান কন্ঠস্বর। লতিফা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
–“আল্লাহ্’র কসম মাওই! কসম কাইটা ক্যানো মিথ্যা কমু কন?”
–“পলাইছে কোন নাগরের লগে তা কী জানোস?”
–“তা তো কইতে পারি না, তবে ইরা’দ বাবায় ওরে ধরে নিয়ে আসছে!”
–“আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ! আমার নাতির কথা উঠাস কেন? মৌসুমি! ওই মৌসুমি!”

মৌসুমির কোনো সাড়াশব্দ নেই। হয়তো পাশের বাসায় গিয়েছে। হঠাৎ নিদ্র এসে হাজির হয়। কোলে তাঁর ফ্রিশা। দুজনকে দেখেই মাজেদা বেগমের র!ক্ত মাথায় উঠে গেলো।
–“আমার বি!য়াদব দুইটা আমার ঘরে আসছিস! বের হ! সর!”

নিদ্র মাজেদা বেগমের কথা উপেক্ষা করে সন্দিহান নজরে তাকালো লতিফার দিকে। চওড়া কন্ঠে বলে ওঠে,
–“কী গো বিবিসির অফিস। তোমার চুগলি করা হলো? না মানে বিবিসি নিউজ পাচার হলো?”

®লাবিবা ওয়াহিদ
——————————
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here