এক_মুঠো_রঙ পর্ব ২+৩

#এক_মুঠো_রঙ
#ফারজানা_আফরোজ
#দ্বিতীয়_পর্ব_তৃতীয়_পর্ব

চকোলেট চিবুতে চিবুতে নওশীন কলেজের গেট ধরে ক্লাসের উদ্দেশ্য হাঁটছে। তার আজ খুব খুশি লাগছে। হটাৎ এত খুশি লাগার কারণ সিমরানের কাছে অজানা। সন্দিহান নজরে সে নওশীনের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। কোনো কিছু বুঝতে না পেরে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল

—” আমার ব্রেকআপ হয়েছে সেইজন্য তুই এত খুশি কেন? মনে হচ্ছে তুই চাইছিলি আমার এত বছর পর গড়ে উঠা নতুন প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটুক।”

চকলেটের কাগজ জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে মেরে পুরো চকোলেট মুখে পুরে কি যেন বলল সে, সিমরান কিছু বুঝতে না পেরে বই দিয়ে গায়ে বারী দিয়ে রাগী কণ্ঠে বলল…..

—” আগে খা পরে উত্তর দে। তোর চকোলেট খাওয়া আর কথা বলা একই সাথে হওয়ায় কিছু বুঝিনি।”

—” বলেছি গতকাল এক ছেলে রাস্তায় আমায় প্রপোজ করেছে। ছেলেটির হাতে ছিল সাদা গোলাপ, তিন বক্স চকোলেট, আর ঘর সাজানোর জন্য সুন্দর অনেকগুলো কার্ড।”

নওশীন কিছু বলার আগেই সিমরান বলে উঠলো…..

—” তারমানে তুই প্রেম করছিস?”

—” আজব তো! আমি কেন প্রেম করবো। আমি ছেলেটির হাত থেকে গিফট গুলো নিয়ে আপন মামা বানিয়ে এসেছি। জানিস-ই তো আমার কোনো মামা নাই। আমি খুব অভাব বোধ করছিলাম একজন মামার তাইতো ছেলেটার হাতের গিফট গুলো নিয়ে মামা বানিয়ে এসেছি। আমি তো আবার খুব দয়ালু। সহজে কেউ কিছু বললে না বলে থাকতে পারি না।”

নওশীনের কথা শোনে হাসি যেন থামছেই না সিমরানের। ক্লাস কাঁপিয়ে সে হাসছে। মনটা আজ তার ভালো হয়ে গেছে। তিন বক্স চকোলেট থেকে একটা বক্স সিমরানকে দিয়ে বলল নওশীন…..

—” এই নে এক বক্স। আমার মামা আর তোর মামা একই কথা। আর শোন, আজ আমার এক দূর সম্পর্কের মামার জন্য নাকি মেয়ে দেখতে যাবে। শুনেছি পছন্দ হলেই নাকি কাবিন পড়িয়ে আসবে।”

—” তুই যাবি না?”

—” উহু । দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আব্বু যেতে পারে।”

দুইজন কিছুক্ষণ কথা বলে ক্লাসে মনোযোগ দিল।

___________

তীব্র রোদে পা বাড়িয়ে হাঁটছে সিমরান। মাথার উপর দিয়ে পাখি উড়ছে। গাছের নিচে দাড়িয়ে হাতকে দূরবীন বানিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই মনটা তার নেচে উঠলো। মুক্ত আকাশে আজ কি সুন্দর ভাবেই না পাখিগুলো উড়ছে। পশু কিংবা পাখি কেউ কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না মানুষের মতো। মানুষ সব কিছু বুঝা সত্বেও স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সব কিছু করতে পারে কিন্তু এই পশু পাখি গুলো কোনোদিন এমন কাজ করবে না। সিমরানের কাছে মনে হলো প্রকৃতির সেরা সৌন্দর্য হলো ফুল আর পাখি আজ যদি পাখি ফুল না থাকতো তাহলে প্রকৃতির সৌন্দর্য একেবারেই বেমানান হয়ে যেতো। হটাৎ গাছের পাশে একটি কোকিল পাখি কু-উ কু-উ সুরে ডাকতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। কোকিল পাখির সাথে যদি কেউ কু-উ কু-উ বলে তাহলে সে রেগে আরো বারবার ডাকতে থাকে। সিমরান কোকিলকে রাগানোর জন্য কু-উ কু-উ বলতে লাগলো। পিছন থেকে একটা বাচ্চার কণ্ঠ শোনে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সিমরান। বাচ্চাটি আর কেউ না নিবিড়। নীল টি-শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট মাথায় টুপি চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস। কোমরে হাত রেখে সিমরানকে উদ্দেশ্য করে নিবিড় বলল……

—” কোকিলের সাথে সাথে যদি কেউ ডাকে তাহলে তার প্রেম খুব শীগ্রই হয়। কোকিল হলে ভালোবাসার পাখি। কোকিলের কণ্ঠে সব সময় প্রেমময় সুর থাকে। সেই সুরে যদি কেউ মোহিত হয়ে যায় তখন সেও প্রেমে পড়ে। তুমিও খুব তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়বে ভাবী।”

সিমরানের মুখ হা হয়ে আছে। এইটুকু ছেলে বলে কি? কথা শোনে মনে হচ্ছে প্রেম বিষয় নিয়ে সে পিএসডি কমপ্লিট করে ফেলেছে। কিন্তু আজ মনকে শক্ত করে কঠোর হয়ে এই পিচ্ছি ছেলেকে বকা দিবে। কঠিনতম বকা দিবে, আজ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল….

—” এখনও দুধের দাঁত পরে নাই আর তুমি কিনা প্রেম নিয়ে কথা বলছো। এখন তো কার্টুন দেখার বয়স তোমার। যাও বাসায় গিয়ে ভাব কমিয়ে কার্টুন দেখো।”

সামনের দুইটা দাঁতের দিকে আকর্ষণ বাড়িয়ে সিমরানকে বলল……

—” ভাবীইইই আমি দুইটা দাঁত জন্মের সময় থেকেই নিয়ে আসছি তাই এই দুইটা দাঁত দুধের দাঁত না তাছাড়া একা একা কার্টুন দেখতে বোরিং লাগে সেই জন্যই তো বলছি তোমার কোনো বোন আছে? আপন বোন না থাকলেও চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো আছে এমন কোনো বোন?”

সিমরান এইবার নিবিড়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুটা ঝুঁকে চোখ মুখ কুঞ্চিত করে বলল…..

—” তোমার সেই অসভ্য, ফাজিল ভাইয়া তোমাকে এইসব শিখাচ্ছে তাই না? এই তোমার বাড়ির ফোন নাম্বার দেও তো তোমাদের দুই ভাইয়ের নামে বিচার দিবো।”

আইস-ক্রিম নিয়ে এগিয়ে আসছে নীর। সিমরানের কথা শোনে বলল…..

—” নাম্বার দেই আর আপনি প্রতিদিন বিরক্ত করুন তাইতো। সকালে বিকালে রাতে ফোন দিয়ে জ্বালাতন করার জন্যই তো নাম্বার নিচ্ছেন। লজ্জা করে না একটা ছেলের ফোন নম্বর চাইতে? বাসায় কি বাবা ভাই নাই?ইভটিজিং করা দণ্ডনীয় অপরাধ জানেন না মিস?”

হকচকিয়ে উঠলো সিমরান। কোন কথা থেকে কোন কথাতে চলে গিয়েছে সব। দুই ভাই যে কথা বলার হেড মাস্টার খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে সে। সিমরানের ইচ্ছা করছে পায়ের উপর পা তুলে ঝগড়া করতে কিন্তু এই ছেলে দুইটা মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না তাই মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।

সিমরান চলে যাবার পর নীর নিবিড়ের কান ধরে টান দিয়ে রাগী কণ্ঠে বলল…..

—” তোকে আর আমার সাথে কোথাও নিয়ে যাবো না। যেখানেই যাবি যে মেয়েকেই দেখবি আমার বউ বানিয়ে ফেলবি। বলি বাংলাদেশ জুড়ে সব মেয়েই কি আমার বউ? আমার বউ হবে শান্ত শিষ্ট বোকা টাইপের কোনো মেয়ে। এই বোম্বে মরিচ আমার বউ? ইম্পসিবল! ভাবতে নিলেও তো শরীর কেঁপে উঠে আমার।”

নীরের হাত সরিয়ে কান ঢলতে ঢলতে বলল নিবিড়……

—” ওকে যাও তাহলে এই বোম্বে মরিচ ভাবীকে আমিই বিয়ে করবো যখন ভাবীর মতো বড় হবো হূহহহ।”

_____________________

সিমরান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে চুলের পানি মুছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। মুখে তার এক চিলতে হাসি। নিজেকে দেখে নিজেই বলে উঠলো……

—” এইভাবে যদি বরের সামনে যাই বেচারা বর তো দেখেই আহত হয়ে যাবে যেখানে আমার চোখেই সরছে না।”

ড্রেসিং টেবিল থেকে কাজল নিয়ে চোখে পড়িয়ে দিলো। কানের নিচে একটু কাজল দিয়ে আবারও বলল……

—” কারো নজর যেন না লাগে মিস সিমরান। বাচ্চা ছেলেটি কিন্তু ঠিকই বলেছে তুমি দেখতে পুতুলের মতো। কি পাকা ছেলে সত্যিই যদি ছোট বোন থাকতো তাহলে ছোট বোনের জন্য ঘর জামাই করে নিয়ে আসতাম হিহিহিহি।”

দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে মিসেস পাপিয়া তড়িগড়ি হয়ে বলতে লাগলেন……

—” তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।”

হটাৎ এমন কিছু শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সিমরান। ভেবেছে মায়ের দুষ্টুমি তাই দুষ্টু হেসে বলল….

—” ওহ মাদার কুইন বিকাল বিকাল মজা না করলে হয় না। জানোই তো বিয়ের কথা শুনলে আমার খুব বিয়ে বিয়ে পায় কিন্তু তোমরা তো বিয়ে দিবে না তাহলে কেন লোভ দেখাচ্ছো?”

সিমরানের কথা শোনে মিসেস পাপিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। চুপ থাকার কারণ অবশ্য আছে, কারণ উনার পাশে ছেলের ফুফু দাঁড়িয়ে আছেন। ছেলের ফুফু দরজার আড়াল থেকে কাশতে শুরু করলেন। সিমরান উনাকে দেখে ওরনা নিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন।

পরিবেশ ঠিক করার জন্য মিসেস পাপিয়া বেগম বলে উঠলেন…..

—” ও একটু এমনি। সব সময় মজা করে মেয়েটা আমার। আপনি কিছু মনে করবেন না।”

মহিলাটি সিমরানের দিকে তাকিয়ে থেকে উচ্চ সুরে বললেন……

—” মেয়েদের সাথে এমন ফ্রী হওয়া ঠিক না। দেখেছেন তো কিভাবে নির্লজ্জের মত করে কথা বলছে। আমাদের বাড়িতে আবার এইসব কথা একদম অ্যালাউ না।”

সিমরান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর আম্মু বলে উঠলেন…..

—” নিচে সবাই ওয়েট করছে আমাদের যেতে হবে। সিমু কালো শাড়িটা পরে নিচে আয়। আর কোনো কথা না।”

কথাটা বলে হনহন করে চলে গেলেন তারা। সিমরানের মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। হটাৎ করে কিসব হয়ে যাচ্ছে। মায়ের কথা তো অমান্য করা যাবে না সেই জন্য আলমারি থেকে শাড়ি বের করে পড়তে লাগলো।

হটাৎ……..

চলবে………

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ রি-চেইক করা হয় নাই।

#এক_মুঠো_রঙ
#ফারজানা_আফরোজ
#তৃতীয়_পর্ব

পাত্রপক্ষের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে সিমরান। এক ঝাঁক মানুষ এসেছে। কমছে কম পনেরো জনের কম হবে না। মাথাটা উচু করে একবার আশে পাশের লোক গুলো দেখে আবারও মাথা নিচু করে রাখল। এত লোকের মাঝে অস্বস্তি লাগছে তার। কিন্তু ছেলেটিকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করছে শুনেছে খুব ভালো জব করে, দেখতে অনেক লম্বা, গায়ের রঙ শ্যামলা, স্বাস্থ্য ভীষণ ভালো। একজন মহিলা জিজ্ঞাসা করলো…..

—” কোন ক্লাসে পড়াশোনা করছো?”

—” অনার্স তৃতীয় বর্ষে।”

—” বাংলা পড়ায় তো খুব ভালোই এগিয়ে গিয়েছ। তো অন্যান্য পড়াগুলো সম্পর্কে কিছু জানো?”

সিমরান অন্যান্য পড়া বলতে বুঝতে পারলো না। প্রথম বার সে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে। এইসব প্রশ্ন আগে কোথাও শুনেনি। মনের ভিতর না বুঝা প্রশ্নকে সে নিজের আরেকটি প্রশ্ন বানিয়ে বলল….

—” অন্যান্য পড়াশোনা বলতে বুঝিনি আমি। আরো পড়া বাকি আছে?” শান্ত গলায় বলল

খুব বয়স্ক করে একজন লোক বলে উঠলো….

—” আরেহ মাইয়া তো দেখছি খুব বেয়াদব। আমরা মাইয়া দেখতে আসছি এখন দেখি মাইয়া নিজেই আমাদের প্রশ্ন করে।”

ভদ্র দেখতে একজন মাঝ বয়সী লোক বলে উঠলেন….

—” চাচা কি বলছেন এইসব? মেয়েটি বুঝতে পারেনি তাই জিজ্ঞাসা করছিল। ওকে বুঝিয়ে বললেই তো উত্তর দিয়ে দিতো। আমি বলছি, মা তুমি কুরআন তেলাওয়াত করতে পারো?”

—” জ্বি।”

বয়স্ক লোকটি বিরক্তি ভাব নিয়ে আরেকজন মহিলাকে কি যেন ইশারা করলেন। মহিলাটি তখন ফাটা বাঁশের সুরে বলল…..

—” ইয়াসিন সূরার ছয় নম্বর মুবিন বলো তো?”

সিমরানের ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সে ইয়াসিন সূরার তিন নাম্বার পর্যন্ত মুখস্ত করেছে কিন্তু এখন ছয় নাম্বারটি বলতে হবে। যদি জানতো পাত্রপক্ষরা এমন হয় তাহলে নিশ্চয় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতো।

সিমরানের নিরবতা দেখে সবাই বুঝতে পেরেছে। ওই ভদ্রলোকটি পরিবেশ ঠিক করার জন্য বলল….

—” মা তুমি যেকোনো সূরা বলো, যেটা পারো সেইটাই।”

সিমরান মনে মনে লোকটিকে ধন্যবাদ দিলো। লজ্জার হাত থেকে সে কিছুটা হলেও বাঁচতে পেরেছে। তাই ইয়াসিন সূরার প্রথম দুইটা মুবিন বলল।

ছেলেটিকে বসানো হলো সিমরানের পাশে। পুরো শরীর কাঁপছে তার। এত ছেলে নয় যেনো জলহস্তী। এত লম্বা, কমছে কম সাড়ে ছয়, ওজন একশোর নিচে হবে বলে মনে হচ্ছে না। ছেলেটি বেশ কিছু প্রশ্ন করলো। প্রশ্ন করা শেষ হলে সিমরান চলে গেলো তার রুমে।

প্রায় এক ঘন্টা পর খবর এলো আজকেই বিয়েটা হয়ে যাবে। তবে মেয়ের বয়স বেশি সেই জন্য নাকি বেশ মত বিরোধ হয়েছে। ভদ্রলোকটি নাকি বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছে।

সিমরানের আত্মীয়র মধ্য কয়েকজন কে ডাকা হলো। আজ কাবিন পড়িয়ে পরে বিয়ে ঠিক করবে। সিমরানের বাবা মা এমন হুটহাট বিয়েতে রাজি নয় । তারা তাদের একমাত্র মেয়ের বিয়েতে আনন্দ উল্লাস করবে। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো জাস্ট কাবিন হবে। শুরু হলো সাজগোজ।

কাবিন পড়ানোর ঠিক দশ মিনিট আগে আবারো ভেঙ্গে গেলো সিমরানের বিয়ে। ছেলে পক্ষরা কিছুতেই বিয়ের পর মেয়েকে পড়াবে না। কিন্তু সিমরানের বাবা কিছুতেই এই শর্তে রাজি হবে না এরফলে যদি মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যায় তাহলে যাক তবুও তার কোনো আফসোস নেই। বিয়েটা অবশেষে ভেঙ্গে গেলো। মানুষ ভর্তি লোক নিমিষেই চলে গেলো। কথাটা শোনে সিমরান কিছুক্ষণ লুঙ্গি ড্যান্স দিতে লাগলো। ভয়ানক ফ্যামিলিতে সে কিছুতেই বিয়ে করতে চাইছিল না কিন্তু পরিবারের জন্য মুখ ফোটে কিছু বলিনি তবে ছেলেটি তার পরিবারের মতো ছিল না আড়ালে সে বলে গিয়েছিল……

—” আপনাকে আমার খুবই পছন্দ হয়েছিল কিন্তু পরিবারের বাধ্য ছেলে থাকায় আমার পছন্দ শুধু পছন্দই থেকে গেলো। আমার আম্মু অসুস্থ তাই উনার সেবা যত্ন করার জন্য কাওকে দরকার। আমিও চাই না আমার জন্য আপনার ক্যারিয়ার নষ্ট হোক। ভালো থাকবেন আর যদি পারেন আমার মত খারাপ লোকটিকে ক্ষমা করে দিবেন। আমার পরিবার বউ নয় বুয়া খুঁজছে। অল্প বয়সী আর কম শিক্ষিত মেয়ে যার সাথে যেমনই আচরণ করা যাক সে যেন সব সহ্য করতে পারে মুখ ফোটে যেন কিছুই বলতে না পারে।”

ছেলেটির কথায় কষ্ট ও লজ্জা দুইটাই ছিল। কেন যেন খুব ভালো লাগছিল ছেলেটিকে সিমরানের কাছে। কিন্তু মুখে কিছু না বলে মিষ্টি হাসিতে বিদায় দিয়েছিল সেদিন।

এইভাবে চলে গিয়েছিল দশ দশটা দিন। সিমরানের পরিবার নিজেদের নিজেই দোষ দিচ্ছিলো। বার বার অনুতাপ করছে কেন তারা প্রথম বারেই ‘না’ কেন বলেনি। আবার এইটাও ঠিক করে নিয়েছে আজকের পর আগে ছেলের খুঁজ নিবে তার পরিবারের খুঁজ নিবে পরে মেয়েকে দেখাবে।

_______________

গ্রন্থগারে বসে আছে নওশীন আর সিমরান। হ্যারি পটার সিরিজের তৃতীয় বইটি পড়তে ব্যাস্ত নওশীন। সিমরান পড়ছে বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘হলুদ বসন্ত’ । হটাৎ কয়েকটি লাইন পড়ে সে বইটা রেখে দিল।

ভালোলাগা আর ভালোবাসার পার্থক্য টা কোথায়? ভালো লাগলে মানুষ সেই ভালো লাগাকে তার ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে, কিন্তু ভালবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালোবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। তার নিজের কোনো নিজস্ব সত্তা থাকে না। ভালোবাসা তাকে যা বলে পোষা পুষ্যির মতো সে তাই করে।”

লেখাগুলো বার বার পড়ে বিরক্তি নিয়ে বলল……

—” ভালোবাসা কেন স্বাধীন হবে না? কেন একজন আরেকজনের ইচ্ছা মতো চলবে? তাহলেই তো খুব সহজেই ভাঙন ধরবে। ভালোবাসা হওয়া উচিত মুক্তি পাখির মত। পাখিরা যেমন নিজ আপন মনে আকাশে ডানা মেলে উড়ে ঠিক তেমনি ভালোবাসার মানুষরা তাদের ইচ্ছা মত উড়বে।”

নওশীন চট করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। চেয়ারের শব্দ শোনে সিমরান তার দিকে তাকাতেই নওশীন বলে উঠলো…..

—” আমিও আজ জাদুর দেশে চলে যাবো। দেখছিস ওই দেওয়ালটা চোখ বন্ধ করে দৌঁড় দিবো আর চলে জানো হ্যারি পটারের মতো।”

সিমরান কিছু বলতে যাবে তার আগেই দৌঁড় দিলো নওশীন। দেওয়ালে বারী খেয়ে মেঝে পরে আছে সে। সিমরান হাসতে হাসতে হটাৎ চেয়ার থেকে পড়ে গেলো। গ্রন্থাগারে বসে থাকা লোকজন সবাই অবাক চোখে দুইজনকে দেখতে লাগলো। হটাৎ করে একটা বাচ্চার হাসি শোনে সবাই হাসতে শুরু করে দিলো। বাচ্চাটি এসে সিমরানের হাত ধরে টানতে টানতে বলল…..

—” অপরের দুঃখে যে হাসে তার দুঃখে পুরো লাইব্রেরি হাসে, ভবিষ্যত্ ছোট মিয়ার বউ।”

—” এই আবারও তুমি এইখানে? আমাকে ফলো করছো তুমি?”

বসা থেকে উঠে হাত পা ঝেড়ে বলল সিমরান। নিবিড় তখন বলল…..

—” তুমি আমায় ফলো করছো। আমি তো সব সময় আসি এইখানে ভাইয়ার সাথে। বলি পছন্দ করো ভালো কথা সরাসরি বলতে পারো না। আমার মত কিউট, হ্যান্ডসাম, সুপুরুষ ওহহ সরি সু-আট বছরের ছেলেকে যে কেউ দেখলেই বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যাবে। জানো প্রতিদিন কোটি কোটি মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসে আমার জন্য কিন্তু আম্মু আব্বু বারণ করে দেয়। আমি নাকি ছোট তাই। এখন তুমিই বলো কোন এঞ্জেল দিয়ে আমাকে ছোট দেখা যায়?”

চোখ বড় বড় করে বলল সিমরান…..

—” হাইটে ছোট্ট হলেও কথায় পাকা। কেন যে তোমার আব্বু আম্মু তোমার বিয়ে দিচ্ছে না। এত বড় বুড়া ছেলের বিয়ে তো আরো পাঁচ বছর আগে দেওয়া উচিত ছিল। তিন বছর বয়সে বিয়ে করা উচিৎ ছিল তাহলে আজ তোমার চার বছরের একটা বাচ্চা থাকতো। ”

সিমরানের কথাটা ভীষণ মনে ধরলো নিবিড়ের। সিমরানের হাত ধরে টানতে টানতে বলল…..

—” আসো যাই তাহলে আমরা বিয়ে করে ফেলি। জানো আব্বু আম্মু বডিগার্ড ছাড়া রাস্তায় যেতে দেয় না যদি কোনো সুন্দরী মেয়ে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় সেই জন্যই তো বডিগার্ড হিসেবে ভাইয়াকে পাঠায়।”

নিবিড়ের কথা শোনে পাশ থেকে নীর বলে উঠলো…..

—” আমি তোর বডিগার্ড? অংকে ফেল করেছিস তাই স্যার মেরেছে সেই জন্য হিসু করেছিস আবার নেকা কান্না । স্যার ফোন দিয়েছে তোকে স্কুল থেকে নেওয়ার জন্য সেই জন্যই তো গিয়েছিলাম এখন আমি বডিগার্ড? যা এখন থেকে স্যার মারলেও যাবো না। ”

সিমরানের হাত ছেড়ে দিয়ে নীরের হাত ধরে বলল….

—” পাবলিক প্লেসে এইসব কথা না বললেই নয়। চলো তো আমরা বাসায় যাই পরে না হয় কথা বলব। এই এই যে সুন্দরী আপু আমি যাচ্ছি অন্য একদিন কথা হবে কেমন।”

নীর হাসতে হাসতে নিবিড়কে নিয়ে চলে যায়। সিমরান তো হাসতে হাসতে প্রায় মাটিতে গড়াগড়ি খাবে তখন হটাৎ নওশীনের কথা মনে পড়াতে গিয়ে দেখলো বেচারি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। লোকজনকে বলে বাহিরে বেঞ্চে বসিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগল।

চলবে…….

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্ব পড়ে আমি নিজেই খুব হেসেছি। আর বিয়ের ব্যাপারটি কিন্তু সত্য। চিনা জানা একজনের সাথে ঘটেছে এমন তাই লিখে ফেললাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here